কলেজ থেকে বাসায় ফেরার সময় খেয়াল করলাম ছোট বোন মারিয়া কে কয়েকজন ছেলে বিরক্ত করছে।আমি রিকশাওয়ালা ভাইকে থামতে বললাম। সেখানে উপস্থিত হয়ে ছোট বোনকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। বাসায় আসার পর জিজ্ঞেস করলাম ছেলেগুলো তোর সাথে এমন আচরণ করছিলো কেনো?
“দেখ ভাইয়া তুই যেমন আমার বান্ধবীদের বাসার সামনে ঘুরঘুর করিস।তোর বোন বড় হয়েছে তোর বোনের পেছনে ছেলেরা ঘুরাঘুরি করায় তোর যতটা কষ্ট লেগেছে তেমনি আমার বান্ধবীদের ভাইয়াদেরও ততটা কষ্ট লাগে।
এই কথা শোনার পর থেকে আর কোনোদিন আমার ছোট বোনের কোনো বান্ধবীদের বাসার সামনে যাই নি। রাতে একটা পার্টিতে উপস্থিত হয়েছিলাম আমি।প্রায় সময় এমন করে থাকি বন্ধুরা মিলে। ছেলে মেয়ে সবাই একসাথে মেতে উঠি আনন্দে। ড্রিংকস তো আছেই।কিন্তু হঠাৎ খেয়াল করলাম বড় আপুর জামাই রায়হান সাহেবও এই পার্টিতে উপস্থিত। বিষয়টা আমাকে বিস্মিত করেছে।পার্টি সেন্টার থেকে সোজা আপুর বাসায় চলে গেলাম।দড়জা নক করায় আপু অবাক। ‘কি রে হিমু এতো রাতে তুই?
–হুম আপু আমি।সব বলছি তোকে। আগে বল রায়হান ভাইয়া কোথায়? ‘আছে অফিসের কাজে কোথাও না কোথাও।আমাকে তো বলে গেছে অফিসের কাজে আজ রাতে বাসায় ফিরতে পারবে না।
–আপু তুই কি জানিস রায়হান ভাইয়া এখন একটা পার্টি সেন্টারে আছে। তুই জানলি কিভাবে?
–আপু আমিও ওই পার্টি সেন্টারে ছিলাম।
‘তোরা পুরুষ জাতি পারিসও খুব।প্রায় রাতেই ও বাসায় ফিরে না।বলে অফিসের কাজে বাহিরে থাকতে হবে।আমিও সহজ সরল নারী বিশ্বাস করি এক মনে। তুই আমার কাছে এসে বলছিস আজ।একদিন তুই ও কোনো এক নারীকে বিয়ে করবি তখন তাকেও বলবি অফিসের কাজে বাহিরে থাকতে হবে।তারপর রাত হলেই পার্টি সেন্টারে চলে যাবি।
–আপু কথাগুলো বলছিলো আর খেয়াল করলাম আপুর চোখে পানি।এই রাতের পর থেকে আর কখনো পার্টি সেন্টারে যাই নি।
ভাবীকে নিয়ে রিকশা করে হসপিটালে যাচ্ছিলাম।যাওয়ার সময় খেয়াল করলাম আমার ছোটবেলার কয়েকটা বন্ধু আমাকে দেখে হাসছে।বিকেলে বাসায় ফিরে যখন মাঠে ক্রিকেট খেলতে যাই তখন কয়েকটা বন্ধু বলছে কি রে তুই আবার প্রেম ও করিস।তাও একটা বোরকা পড়া মেয়ে দেখলাম তোর সাথে।তোর মতো ছেলের সাথে বোরকা পড়া মেয়ে মানানসই না।তুই তো যোগ্য ও না একজন ভালো নারীর বয়ফ্রেন্ড হওয়ার। আমি ওদের একটা কথা বললাম দোস্ত এটা আমার ভাবী ছিলো।ভাইয়া অফিসের কাজে বাহিরে থাকায় আমি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছিলাম।আর তোরা না বোঝে এইভাবে বলতে পারলি?
তাদের মধ্যে একজন বলতেছে কেনো তুমি যখন বিবাহিত নারীদের দেখে অনেক কিছু বলো তখন তো নিশ্চয়ই তাদেরও খারাপ লাগে আজকে যতটা তোমার খারাপ লাগছে। এইদিন বাসায় ফিরে সিদ্ধান্ত নিলাম আর কখনো কোনো বিবাহিত নারীদের দেখে কিছু বলবো না।কারণ ওরা কারো না কারো অর্ধাঙ্গিনী। আজ আমার বিয়ে করা বউ নীলাকে নিয়ে রিকশা করে পুরো ঢাকা শহর ঘুরে বেড়াচ্ছি।যতক্ষণ রিকশায় বসে ছিলাম ততক্ষণ নীলার হাতটা এক মূহুর্তের জন্য ছাড়ি নি।নীলাও আমার কাঁদে মাথা রেখেছিলো।সত্যিই অসম্ভব ভালো লাগা কাজ করছিলো। অন্যরকম একটা সুখ কাজ করছিলো। যেটা কোটি টাকা দিয়েও পাওয়া সম্ভব নয়।
সত্যিকার অর্থে আমরা রাস্তাঘাটে স্কুল কলেজে, নারীদের ইভটিজিং করে থাকি।একটা বার ভেবে দেখি না আমি আজ আবেগের বশবত হয়ে যে কাজটা করছি সেটা যদি আমার বোন অথবা আমার ভাবী অথবা আমার অর্ধাঙ্গিনীর সাথে অন্য কেউ করে তাহলে আমার কেমন লাগবে।আমরা নিজেদেরটা খুব ভালো বুঝি।কিন্তু পরের জায়গায় একবার নিজেকে বিচার বিশ্লেষণ করে দেখি না। নারী আল্লাহর সৃষ্টি অনেক সম্মানিত। নারীকে সম্মান করতে শিখুন।
গল্পের বিষয়:
গল্প