ন্যায়

ন্যায়
“বল মেয়েটার কোথায় কোথায় হাত দিয়েছিস বল্ ? শালা, শুয়োরের বাচ্চা সব, কি কি করেছিস ওর সাথে বল।
ঘাড় ধাক্কা দিয়ে জিপ থেকে নামাতে নামাতে গর্জে উঠল কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারের গলা, থানার দেওয়ালের বড় ঘড়িটাতে রাত তখন সাড়ে বারোটা। সাদা রুমাল বাঁধা তিনটে ছেলের মুখের চেহারা বোঝা যাচ্ছে না, তবে হাঁটা-চলায় অনুশোচনার কোন ছাপ নেই। দুজন কনস্টেবল ঠেলতে ঠেলতে ওদের নিয়ে গেল লকআপের দিকে। কতই বা বয়স সব। বিশ-একুশ, বড়জোর তেইশ হবে। তার বেশি নয় কিছুতেই, কিন্তু কি উদ্ধত, ক্রিমিনাল সব এক একটা।
রাগে চোখ জ্বলতে থাকে সুমনার, ছোট থেকেই ইচ্ছা ছিল পুলিশ হবে তাই ভালোবেসেই এসেছে পুলিশের লাইনে। তবে নতুন চাকরি, আর সীতাকুণ্ড এলাকাটাও যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। আজই যেমন নাইট ডিউটি ছিল, ২নং রেলগেটের কাছ থেকে ট্র্যাফিক কন্ট্রোলার ফোন করে জানাল রুলস ভাঙা বেপরোয়া গাড়িটার কথা । সিগন্যালে না থেমে ফাঁকা রাস্তায় হু-হু করে ছুটছে দামি ক্রিমরঙের সিডান গাড়িটি, এক কিলোমিটারের মধ্যেই ছিল সুমনা, ধাওয়া করতেই হঠাৎ অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী হয়ে গেল সে। গাড়ির ভিতরের নীলাভ হালকা আলোটা মাঝে মাঝেই জ্বলে উঠছে । ধুন্ধুমার যুদ্ধ চলছে যেন সেখানে । হ্যাঁ, একটি মেয়ে, অবয়ব অস্পষ্ট হলেও দেখতে ভুল হয়নি তার, গাড়িটিও টাল খাচ্ছে এদিক ওদিক, কিন্তু থামছে না কিছুতেই। জোরে জোরে নাগাড়ে হর্ন বাজাচ্ছে পুলিশ জিপের ড্রাইভার আশিক। সুমনা খাপ থেকে টেনে বের করেছে রিভলবার, জানালা দিয়ে মাথা বার করে ট্রিগারে হাত রেখেছে, লক্ষ্য গাড়ির চাকা , থামাতে হবে সেটিকে।
হঠাৎ জোরে একটা ধাতব আওয়াজ, বাঁদিকের দরজাটা সজোরে খুলে গেছে চলন্ত গাড়িটির। একটা শরীর ছিটকে এসে পড়ল পিচরাস্তার পাশে এবড়ো খেবড়ো খোয়া আর ঘাসজমির ওপর। সুমনা মুহূর্তের মধ্যে নির্ভুল লক্ষ্যে গুলি করে থামিয়ে দিল গাড়িটির গতি, হুমড়ি খেয়ে মাঝরাস্তায় থমকে দাঁড়িয়ে গজরাতে লাগল সেটি, টানটান একটা সিনেমার দৃশ। আধ ঘন্টাখানেকের পরের দৃশ্য। দুটো গাড়ি রওনা হয়ে গেল দুদিকে । অ্যাম্বুল্যান্সটি সরকারি হসপিটালের দিকে,আর পুলিশ জিপ সীতাকুণ্ড থানায়। কষে একটা থাপ্পর বসিয়েছিল সুমনা লম্বা ছেলেটির গালে। একটু স্বাস্থ্যবান ও, চুল স্পাইক করা, দামি পারফিউমের গন্ধ গায়ে ছেলেটির।
চোখ পাকিয়ে সে সমানে তর্ক করে যাচ্ছিল— জানেন না আপনি আমার মাকে! একবার এলে আপনার চাকরি খেয়ে নেবে। ওঃ কী স্পর্ধা! ছয়মাসের ট্রেনিং করা শক্ত হাতে চড়টা জোরেই লেগেছিল ছেলেটির গালে।দু-পা পিছিয়ে গেছিল সে। দুমদাম পা ফেলে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসেছিল সুমনা, তখনই কৌতুহল হয়েছিল ছেলের “মাকে দেখার। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি, ওসির ফোনে ঘুম-জড়ানো গলায় তিনি যা নির্দেশ দিলেন, তার সারমর্ম এই-
কেসটা নিয়ে বেশি জলঘোলা করতে হবে না , মানে ঘোলানো তো পরের কথা, জলেই নামা যাবেনা। মা তো দাপুটে লিডার, স্বনামধন্যা সাংসদ, অতএব , তাড়াতাড়ি, প্রয়োজনে নাকখত দিয়ে তুলে নিতে হবে কেস। দাঁতে দাঁত চেপে গর্জন করে ওঠে সুমনা, অবশ্যই ফোনটা কেটে দিয়ে। শালা, এইসব বাঞ্চোৎগুলোর জন্যই মেয়েগুলোর এত দুর্দশা, সুরক্ষা, শৃঙ্খলাবিধি সব শিকায় হাতেনাতে ধরতে পেরেও করার কিছু নেই, পলিটিক্সের পা-চাটা কুকুর সব।”
রাগে চোখদুটো জ্বলতে থাকে ওর দপদপ করে,একটা নিষ্ফল ক্রোধ আর হতাশা, ধুর বালের চাকরি ছেড়েই দেবে, এত অসম্মান আর গ্লানি নিয়ে চলা যায় নাকি। অস্থির পায়ে পাইচারি শুরু করে সুমনা, দেওয়াল ঘড়িতে সময় দেখাচ্ছে রাত দুটো সবে সবে অতিক্রান্ত, পাশের দরজাটা ঠেলে ঢুকলেন বর্ষীয়ান সাবের খান।দু-একবার গলা খাকড়ি দিয়ে পানের খিলিটা ডান গালে ঠেসে দিয়ে বললেন, আবার পড়লেন নাকি এসব ঝামেলায়? কি দরকার ওসব উটকো উৎপাত ঘরে টেনে আনার, ওপরমহলে এর মধ্যেই ফোন চালাচালি শুরু হয়ে গেছে, বড় সাহেবও ফোন করেছে রেজিস্টারের কাছে, খুঁটিয়ে সব শুনে নিয়েছেন, ঠোঁটের কষ বেয়ে পানের পড়তে থাকা পিকটা মুছতে মুছতে বলেন দাসবাবু।
এই এক বিরক্তিকর সিনিয়র, না-কোন কাজ করাবে, না নিজে করবে, আবার শুধু নিখরচায় জ্ঞানদান। ভুরু কুঁচকে বিরক্তি নিয়েই তাকাল সুমনা, তা আপনি কি করতে বলেন, এই রকম একটা স্কাউনড্রেল, জঘন্য অপরাধীকে হাতে পেয়েও ছেড়ে দেব? ধীরে সুস্থে পকেট থেকে রুমাল বার করে চশমার কাঁচ মুছতে মুছতে গম্ভীর গলায় বলেন সাবের খান, ও মামুলি রোড অ্যাক্সিডেন্ট, গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তায় উল্টে যায়, মেয়েটা ছিটকে পড়ে, ছেলেগুলো অল্প বিস্তর জখম,সকলেরই প্রাথমিক চিকিৎসা চলছে। মেয়েটি হাসপাতালে, সুস্থ হলেই ছেড়ে দেওয়া হবে। সব বন্ধু বান্ধব মিলে একটু হাওয়া খেতে বেড়িয়েছিল।
ছিটকে ওঠা রাগটা মাথায় চড়ে বসছে সুমনার, মেয়েটার জড়িয়ে জড়িয়ে বলা কথা, আর স্কার্টের লালরঙের বিভীষিকাময় ছোপ সে ভুলতে পারছেনা কিছুতেই। না, এর শেষ দেখে ছাড়বে, নিজেই প্রেসকে ইনফরম করবে, কমিশনার কে জানাবে, দরকার হয় মিনিস্টার লেভেল পর্যন্ত যাবে। এর একটা শাস্তি হওয়া দরকার। এবার বেজে উঠল ওর সেলফোনটা, এস.পি স্বয়ং শান্ত ভাবে শুনলেন ওর প্রতিটা কথা। এত ঠান্ডা মাথা ভদ্রলোকের, কিছুতেই মেজাজ হারাননা, মাথা গরম করেননা সব শুনে বললেন, আমার নিজের ছেলে হলে ওকে তো আমি বুনো কুকুর দিয়ে খাওয়াতাম,অসভ্য, ইতর সব এগুলো জন্মায়ও বা কেন। সুমনার ভয়ংকর রাগ আর ঘেন্নাটা অনেকটাই আশ্বস্ত হল এতক্ষণে, যাক এখনো ডিপার্টমেন্ট তাহলে একেবারে ধ্বসে যায়নি।
তবে তার এই আশ্বস্ত ভাবটা আগামী মিনিট পাঁচেকের কথার মধ্যেই এইটটি পার্সেন্ট উবে গেল,উপসংহারে বলা এস.পি.র কথাগুলো খুবই যন্ত্রণাদায়ক, আসলে কি বলো তো মা,অনেককিছুই হজম করতে হয়।দোষীকে কয়েদ করেও বেকসুর খালাস দিতে হয়।আসলে সবাই তো আমরা সরকারের চাকর। আমরা তো আর সরকার নয়। অজান্তেই হাতের মুঠো শক্ত হয়ে যায় সুমনার বিদায়-সম্ভাষণ না জানিয়েই দুম করে ফোনটা কেটে টেবিলের ওপর প্রায় ছুড়ে ফেলে দেয় সে ওহ কি অসহ্য পরিস্থিতি। লকআপে ঢোকানোর আগে ছেলেটির উগ্র চিৎকার মনে পড়ছে তার, আপনি আমার কিচ্ছু করতে পারবেন না, একটা বালও সোজা করতে পারবেন না, ভোরের আলো ফুটবে না , আমি এখান থেকে বেড়িয়ে যাব। বাট্ আপনাকে দেখে নেব। উফ্ কি ঔদ্ধত্য চড়টা তখনি তার গালে বসিয়েছিল সুমনা, পাছায় দিয়েছিল গোটা কতক রুলের বাড়ি।
থমথমে মুখে নিজের চায়ের ফ্লাস্কটা নিয়ে ঘরে ঢুকল খাঁকি উর্দি পরা মিলি আর সীমা, ওরই সহকর্মী।কাগজের কাপে চা ঢালতে ঢাকতে সীমা তো বলেই ফেলল, অসভ্য মেয়ে এত রাতে নাঙ্ চরাতে, ফুর্তি করতে গাড়ি চেপেছ,আর এখন তার খেসারত দিতে হবে না?শালি আদমদ্দা হারামি, মিলি বিরক্ত গলায় বলে, হাওয়া খেতে বেড়িয়েছে, ছেলেগুলো বেরয়নি? একসঙ্গে মজা করেছে, তা বলে কি সর্বনাশ করে প্রাণে মারতে হবে, বিশ্বাস সততা,বন্ধুত্ব বলে কি তাহলে আর কিছু থাকবেনা। তুই চুপ কর আবেগীর বেটি, কি হলো ছেলেগুলোর?প্রাণে মারতে শুধু বাকি রেখেছে। নিজেরা তো দিব্যি গায়ে হাওয়া লাগিয়ে এখনই ড্যাং-ডেঙিয়ে বাড়ি চলে যাবে, মেয়েটার মা ওর পরিবার পাবে আর কিছু? সব তো হারাল ওদের। শালা যত দোষ ওই হারামি ব্যাটা ছেলেগুলোর, মনে হয়, ওইটা কেটে হাতে ধরিয়ে দেই।
ভোররাতে ফোন এল বাড়ি থেকে, শহিদ ঘুম জড়ানো গলায় জিজ্ঞাসা করল–ওর অবস্থা বিশদে শুনল সমস্ত ঘটনা, ক্লান্ত সুমনাকে উদ্বেগ-মাখা স্বরে বলল, আমি চিনি আমার সুমনাকে, সে কখনো ভুল হতেই পারেনা, তোমার যা ভালো মনে হয়, তুমি তাই করো। বিবেকের কাছে পরিষ্কার থেকো,তোমার সিদ্ধান্তই সবসময় স্বাগত, তাতে যা হবে হোক, কিন্তু তাতে যদি আমার চাকরি চলে যায় শহিদ, তখন কি হবে? যায় যাবে, আমারটা তো থাকল, আর তুমি তো থাকলে আমার, অন্যায়ের সাথে আপস না করা আমার তুমি। লাইনটা কেটে যাওয়ার পরেও অনেকক্ষণ ফোনটা হাতে নিয়ে বসে থাকল সে, এইজন্যই বাঁচতে ইচ্ছে হয়, ভালোবাসতে ইচ্ছে হয় পৃথিবীকে, বেঁচে থাকতে ইচ্ছে হয় এইসব ভালোবাসার মানুষগুলোকে সাথে নিয়ে। কয়েকটা মুহূর্ত কাটল, কিন্তু সুমনার মনে হল যেন একটা যুগ সরে গেল, ঝড়ে বিধ্বস্ত রেখাগুলো তার মুখে এখন স্পষ্ট পড়া যাচ্ছে। অনেক লড়াই করেছে সে নিজের সঙ্গে, না সিদ্ধান্তটা অবশেষে নিয়েই ফেলল। খুব কষ্ট হলো ভিতরে ভিতরে, অনেক ভাঙচুর কিন্তু বাস্তবটাকে মানতে হলো অবশেষে। পরাজয় পরাজয়ের সিদ্ধান্তটা সে নিল,রক্তাক্ত হলো মনের গহনে।
বাঁচতে চায় সে পরিবার নিয়ে তার ভালোবাসা নিয়ে, বারবার মনে ভেসে উঠল স্বামী আর নিষ্পাপ শিশুর মুখ, ঘুমন্ত চার বছরের আধফোটা ফুল। তাই পরাজয় তাই বিবেকের শ্বাসরোধ চাকরির সুস্থিতি। ভোরের আলো ফুটছে বোধহয়, বাইরের অন্ধকারটা কেমন ফিকে হয়ে আসছে। একটু পরেই পূবের আকাশ মেতে উঠবে অকাল – হোলিখেলায়। পাখিদের কিচির মিচির শুরু হলো। কাছের আমগাছটায় ডানা ঝাপটাচ্ছে রাত-জাগা পেঁচক-দম্পতি,ওদের এবার দিন-ঘুম দেবার পালা। অথৈ চিন্তার আচ্ছন্নতা কেটে গেল তার, বাইরে গাড়ির ব্রেক কষার শব্দ শুনে। উফফ, অবশেষে এসে পৌঁছল সেই ক্ষণ, অবধারিত ভাবেই ছেলেটির মুক্তির পরোয়ানা নিয়ে, তার পরাজয়ের শেষ সিলমোহর পড়বে এবার সাংসদ মায়ের তর্জনী-নির্দেশে। পরাজয় শুধু তার একার নয়, এ পরাজয় নারীদের, সমগ্র নারী-সত্তার অপমান।
পর পর দুটো গাড়ি এসে দাঁড়াল থানার সামনের ঢালাই করা রাস্তাটায়, অনেকগুলো পদশব্দ স্পষ্ট হল, গোটা পুলিশ স্টেশন জুড়ে শুরু হলো তৎপরতা। যেন নিমন্ত্রিতের পায়ের ধুলো পড়েছে অনুষ্ঠান বাড়িতে, আপ্যায়নে ব্যস্ত সকলে।
সুমনার ডাক এল অবিলম্বেই, মুখ্যভূমিকায় তো সেই, সুপারভাইজার, আই-উইটনেশ । প্রত্যক্ষদর্শীর জবান। কর্তব্যরত পুলিশ-প্রতিনিধি। ধীর পায়ে দাঁড়াল গিয়ে সে রঙ্গমঞ্চে, এক্ষুণি সেখানে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে সাড়ম্বরে একটি উৎকৃষ্ট নাটক, সে নিজেও ছোট্ট একটা রোল-প্লে করবে, অভিনেত্রী-দর্শকের দ্বৈত ভূমিকা। ভারী চেহারার স্বাস্থ্যবতী মহিলা, মাংসল মুখে চোখদুটো খুবই তীব্র, তীক্ষ্ণ নাক, আর ঠোঁটের গড়নে দৃঢ়তা। শ্যামাঙ্গী,গলাবন্ধ ব্লাউজ, দামি সিন্থটিক শাড়ি পরনে।চওড়া কপালে প্রকান্ড আকারের লাল টিপ। পুলিশ ইন্সপেক্টর আর ওসি দাঁড়িয়ে আছেন, সাথে থানার অন্যরাও, গদগদ ভঙ্গিতে চেয়ার এগিয়ে দিল কনস্টেবল মিজান। মহিলা কিন্তু বসলেন না, এসেই শুনেছেন অপরাধের বর্ণনা।
সুমনা ঘরে ঢুকতেই ওসি পরিচয় করিয়ে দিলেন তার সাথে। আপাদমস্তক তাকে দেখে নিলেন মহিলা ঘাড় ফিরিয়ে, মর্মভেদী চোখের দৃষ্টি, আগুন আছে সেই চোখে। স্তব্ধ ঘর এতগুলি লোক আছে ,কিন্তু সবাই শান্ত সমাহিত। হঠাৎ লকআপের ওপাশ থেকে ভেসে এল ফ্যাসফ্যাসে আওয়াজ, মম, তুমি এসেছ, তাড়াতাড়ি আমাকে নিয়ে চলো এখান থেকে। উঃ কি ভ্যাপসা রুম আর ডার্টি চারিদিকে, বসার জন্য একটা চেয়ারও দেয়নি এরা, রাবিশ। ঘরে উপস্থিত সবার জোড়ায় জোড়ায় চোখ মহিলার মুখের দিকে নিবদ্ধ। কোন উত্তর পাওয়া গেল না অবশ্য, শুধু চোয়ালের হাড় আরো দৃঢ় হলো। ঐ পুলিশটা, ঐ মেয়ে-পুলিশটা আমাকে চড় মেরেছে, ওর ব্যবস্থাটা ভালো মতো করো তো মা, এবার পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়ালেন মহিলা,গম্ভীর গলায় বললেন, নতুন চাকরি মনে হচ্ছে, এলাকাতেও নতুন, কতদিন এসেছেন এই লাইনে? উত্তর দেওয়ার বদলে সুমনা চুপ করেই থাকলো।
বেশ করেছেন মেরেছে, প্রয়োজনে আরো মারবেন, শুধু কথায় না-শুনলে চাবকে সবক শেখাবেন, আপনাদের নিয়ম মতোই ইনভেস্টিগেশন চলুক, আমার ছেলে বলে যেন আলাদা সুবিধা না দেওয়া হয়। পিন-ড্রপ সাইলেন্স ঘরে, তারপর সমস্বরে হাঁ-হাঁ করে উঠলেন অনেকেই, চলল উক্তি-প্রত্যুক্তির হিড়িক। কিংকর্তব্যবিমূঢ় সুমনা অলস পায়ে বাইরের বারান্দাটায় গিয়ে দাঁড়াল। তার মাথা বর্তমানে একেবারে অনুভূতি-শূণ্য, অনভিপ্রেত এই ঘটনায় তার বোধটাই হারিয়ে ফেলেছে। তার চটকা ভাঙল পিছনে ভারি শাড়ির খসখস শব্দে। ওঁরা ফিরতি পথ ধরেছেন, সসম্ভ্রমে রাস্তা ছেড়ে দাঁড়াল সুমনা। তার ঠিক পাশে এসে থমকে দাঁড়ালেন মহিলা, বললেন নিচু-স্বরে, এত লজ্জা জীবনে কখনো পাইনি, এমন সন্তান তো বাপ মায়ের কলঙ্ক, কিন্তু বিশ্বাস করুন, এরকম ছিল না ও, কবে তৈরি হলো এতবড়ো লম্পট।
একটু থেমে আবার যোগ করলেন, দোষটা যত বড়, আঘাতটাও তেমন বড় হওয়ারই দরকার, তবেই শুধরোবে। আর কখনও আমাদের লজ্জায় পড়তে হবেনা, জানেন, আমার ঘরেও একটা মেয়ে আছে, ছেলের মতো তাকেও আমরা একইরকম ভালোবাসি, একটুও কম না। অজান্তেই সুমনার হাত সালাম দেবার ভঙ্গিতে উঠে এসেছে কপালে, চলমান এক মা কে দেখতে পাচ্ছে সে, যার একচোখে সন্তান স্নেহের বন্যা, আর এক চোখে ধ্বংসের আগুন—ন্যায়ের সমিধে গড়া।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত