অপরাধী

অপরাধী
রান্নাঘরে একটানা দুই ঘন্টা রান্না করার পর শরীরটা ভিজে জবজবে হয়ে গেছে। চুলের গোছা,শাড়ির আঁচল,পিছনের ব্লাউজের অংশটা একেবারে আষ্টেপৃষ্টে লেপ্টে আছে গায়ের সাথে। প্রচন্ড রকমের অস্বস্তি লাগছে ওসবে। চুলের গোছা খুলে দুহাত উঁচু করে আবার সেটা শক্ত করে খোপা বেঁধে নিলো হেনা। গত ছ’মাস ধরে মল্লিক বাড়িতে কাজ করছে সে। বারো বছরের ছেলে সেলিম আর সাত বছরের একটা মেয়ে সিঁথিকে নিয়ে ছ’মাস আগেও দ্বারে দ্বারে ঘুরেছে। স্বামী একটা আছে অবশ্য। কিন্তু তাকে কোনোদিনই স্বামী বলে মনে হয় না হেনার। বছর দুয়েক আগে একদিন হুড়মুড় করে ঘরের দরজা খুলে ঘরে ঢোকে হেনার স্বামী তমিজ। গায়ে গাঁজার বিচ্ছিরি গন্ধ। আখড়ায় গিয়ে মদও খায় মাঝে মাঝে। ঘরে ঢুকেই হেনাকে ধাক্কা দিয়ে তুলে গালিগালাজ করে চিৎকার দিয়ে বলে- আমি সারাদিন কাম কাজ করে মরি। আর তুই ঘুমাইস? ভাতারের চেয়ে ঘুম বড় হয়ে গেলো? সারাদিন কোন মরদের লগে কাটাইস যে স্বামীর জন্যি অপেক্ষা করতে সুখ পাস না?
কথাগুলো কাঁটার মতো শরীরে বিঁধে হেনার। চোখ ডলতে ডলতে কিছুক্ষণ নির্বাক হয়ে চেয়ে থাকে সে। তমিজের কথাগুলো আশেপাশের প্রতিবেশীর বাড়ি অব্দিও শোনা যাচ্ছে। হেনার চোখ দুটো টলমল। ধরা গলায় সেও জবাব দেয়- তোর মতো জানোয়াররে ভাতার হতে বলেছে কে? সারাদিন মদ জুয়ার আড্ডায় পড়ে মরিস। ছোট ছোট ছেলেমেয়ে দুটো আমার না খেয়ে আঁচল ধরে টানাটানি করে। কয়বেলা খবর নিস তাদের? তোর মতো ভাতার থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। তমিজ ক্ষেপে যায়। রাগে গজরিয়ে ওঠে। হেনার চুলের মুঠি ধরে বলে- তোরে থাকতে বলেছে কে রে বারোভাতারি। আমি ঘরে না থাকলে তো, তোর বেশ ভালোই হয়।
-আমি বারোভাতারি? বটে রে! মদের আড্ডায় ঘুরে ঘুরে আলতাফ শেখের মেয়ের কাছে রাইতে পড়ে থাকিস, সে খবর আমি জানি নে? তোর মতো অসভ্য চরিত্র দিয়ে তুই আমারে বিচার করিস? জানোয়ার একটা।
হেনার কথাগুলো যেন দিগ্বিদিকশূন্য করে দেয় তমিজকে। সত্যি কথা মানুষের শরীরে সহ্য হয়না। গায়ের চামড়ায় ধাক্কা দিয়ে ফিরে যেতে চায়। তমিজেরও তাই হলো। মুখের চামড়াগুলো ফুলে লাল টকটকে হয়ে উঠলো। হেনার চুলের মুঠি ধরে আচ্ছামত কিল ঘুষি মেরে ঘর থেকে সে বের হয় গেলো। হেনা সেভাবেই মাটিতে পড়ে আছে। কান্নার আওয়াজ নেই। কেবল গোঙানির শব্দ।
সেলিম বিছানা ছেড়ে উঠে এসে মায়ের পাশে বসে। প্রশ্ন করে না, কান্না করে না। কেবল মায়ের মুখে নরম হাতের পরশ বুলিয়ে দেয়। সেই ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পরেই তমিজ আলতাফ শেখের মেয়েকে নিয়ে কোথায় জানি উধাও হয়ে যায়। আর বাড়ি ফেরে না। স্বামীর আশায় পথ চেয়ে থাকে হেনা। মানুষটা বাড়ি ফিরবে। এইসব অশান্তি ঠিক থেমে যাবে। কিন্তু থামে না তিনটে পেট। তল্পিতল্পা গুছিয়ে দুটো নাদান ছেলেমেয়ের হাত ধরে পাড়ি জমায় বাপের বাড়ি। কিন্তু কথায় বলে, মেয়ের বিয়ে হয়ে গেলে বাপের বাড়ি হয়ে যায় পর। হেনাও বেশিদিন থাকতে পারে না। হেনার বাপের সাথে সাথে বাড়তি তিনটা পেটের দ্বায়িত্ব বেশিদিন নিতে পারে না হেনার দুই ভাই।
এইসব জঞ্জালকে মাথায় শাকের আঁটির মতো বোঝা বেধে বছর দেড়েক পরে আবার ফিরে আসে স্বামী নামক এক হারিয়ে যাওয়া সম্পর্কের ভিটেতেই। দুদিন, তিনদিন, এক সপ্তাহ পার হয়ে যায়। ভাইয়ের দেওয়া চালের ভাড়ারেও টান পড়তে শুরু করে। কাজ নেই, আয় নেই। অথচ অনবরত পেটে মোচড় বাড়ে। গরীবের পেটে যত অভাব দেখতে পায়,ততই ক্ষুধা বাড়ে। পেট আর মনের ক্ষিধের জন্যই তামাম দুনিয়ার তামাম চক্র। মনের ক্ষিধেটাকে সেই কবেই কবর দিয়ে দিয়েছে হেনা। কবর দিতে পারেনি কেবল পেটের ক্ষিধেটাকে। প্রায় মাসখানেক ভাদুবিলে মেয়ের সাথে শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে দুটো পয়সা পেয়েছিলো। গ্রামের মাঠে, জলে যে জিনিস বিনামূল্যে পাওয়া যায়, সে জিনিস কী আর মানুষ টাকায় কেনে? শাপলার কয় আঁটি বেচতেও যেতে হয় গঞ্জের বাজারে। সেই শাপলার মৌসুমও শেষ।
মঙ্গলবার বিকালে হেনা ধরনা দেয় কুলসুমের বাড়ি। সারা পাড়ার মানুষের ধান ভেনে দেয় সে। ওর কাছে গিয়ে ব্যবস্থা কিছু একটা করতেই হবে। হেনার মুখে সব শুনে আফসোসের সুরে দুই ঠোঁট এক করে চুকচুক শব্দ করে কুলসুম। আজ সকালেই তাহেরাকে সাথে নিয়ে ফেলেছে সে। হেনার জন্য ভারি আফসোস হয় তার। একরাশ হতাশা নিয়ে যখনই কুলসুমের ঘরের বারান্দা থেকে উঠতে যাবে, তখন কুলসুমের বাড়ি ঢোকে মল্লিক বাড়ির বড় বউ। বড় বউয়ের নাম এখন পর্যন্ত কেউই জানে না। তার পরিচয় শুধু, সে মল্লিক বাড়ির বড় বউ। এই পরিচয়েই তাকে চিনে অভ্যস্থ সে। হেনাকে দেখে চিনতে কষ্ট হয়না তার। বেশ কিছুদিন আগে মল্লিক বাড়িতে শাপলা বেচতে গেছিলো সে। বড় বউ মৃদু হেসে জিজ্ঞাসা করলেন- কী রে হেনা, ওপাড়া ছেড়ে এতদূরে কুলসুমের বাড়িতে তুই? বড়লোকেরা গরিবের দিনকালের কথা জিজ্ঞাসা করেনা। তারা জানে, গরীবের দিনকাল ভালো যায় না। ওদের জীবনে দিনকাল বলে কোনো শব্দ নেই। মাঝে মাঝে কথাও থাকে না। হেনা মাথা নিচু করে জবাব দেয়- কুলসুমের কাছে আসছিলাম কাম কাজের জন্যি।
-কাজ পেয়েছিস?
হেনা মাথা দুলিয়ে জবাব দেয়, সে কাজ পায়নি। বড় বউ এবার কিছুক্ষণ চুপ থেকে কী জানি ভাবলেন। তারপর হঠাৎ খুশিতে বলে উঠলেন- কাজ তো একটা আছে। রান্না ভালো করতে পারিস আগের মতো? সেই যে মন্ডলের মেয়ের বিয়েতে শুনেছিলাম, তুই নাকি রান্না করেছিস। অমন রান্না করতে পারলে মল্লিক বাড়িতে কাজ করার সুযোগটা তুই পেয়ে যেতে পারিস।
প্রায় কত বছর কেবল বন বাদাড়ের শাকসবজিই সিদ্ধ করে এসেছে সে। ওসব খাবারের রান্নার কাজও পায় না অনেকদিন। এই প্রশ্নের জবাব দেবার মতো কথা হেনার জানা নেই। সে চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। বড় বউ ভ্রু কুঁচকে বেশ কয়েক মুহুর্ত ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করলেন। তারপর হঠাৎই হেসে উঠে বললেন- আচ্ছা বুঝেছি। নারীর হাতের গুণ কখনো হারিয়ে যায় না। যোগ্য জায়গা পেলে নারীর সব গুণই খেটে যায়। তুই কাল থেকে মল্লিক বাড়ি কাজে আসবি। রান্নাবান্নার কাজ ছাড়াও দুই একটা কাজ করে দিবি। আমাকে যেনো বলে দিতে না হয়, “হেনা, এই কাজ কর, সেই কাজ কর।”
হেনা মাথা উঁচু করে তাকায়। খুশিতে গাল বেয়ে পানি ঝরতে থাকে। শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞতার জানান দেয় সেই পানি। বড় বউ সেদিকে আর দৃষ্টিপাত করেন না। মানুষের কান্না তার সহ্য হয় না৷ গত বিশ বছর ধরে তিনি কেঁদে আসছেন। নিজের বাচ্চা হয়নি। এরপর ছোট সতীন এসেছে অবশ্য। তার ঘরে এখন চার বছরের একটা পুত্র সন্তান। সেই নিয়ে মল্লিক সাহেবের আহ্লাদের শেষ নেই। বড় বউ তো ছেলেটাকে আদর করার সুযোগই পান না। এ গল্প কাউকে বলতে পারেন না। জগতের প্রতিটা মানুষেরই একটা করে অপ্রকাশিত গল্প থাকে, কেবল শ্রোতা থাকে না কারো। পরদিনই ছোট মেয়ে সিঁথির হাত ধরে মল্লিক বাড়িতে পা রাখে হেনা। কোমরে কাপড় গুজে বড় বউয়ের নির্দেশমতো লেগে পড়ে রান্নায়। হেনার হাতের জাদু আপনাআপনিই প্রকাশ পায়। সেই থেকেই মল্লিক বাড়িতে সফলতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে হেনা। তিনবেলা খাবার পায়। কিন্তু নিজে খায় না। সেলিম আর সিঁথির জন্য বাড়ি বয়ে নিয়ে আসে। ওবাড়িতে সিঁথি সাথে থাকলেও খেতে দেয় না সে।
বাড়ি ফিরে দুইভাইবোনকে পাশাপাশি বসিয়ে খাওয়ায়। কাজের সাপ্তাহিক মাইনে দিয়ে অল্প আধটু চাউল কেনে। যাচ্ছেতাই একটা শাক কিংবা সবজি দিয়ে নিজের উদরপূর্তি করে হেনা। সেলিমকে বাজারের সরকারী স্কুলে ভর্তিও করে দিয়েছে। অবশ্য এর আগেই সেলিম সেখানে পড়েছে। আর্থিক টানাটানির জন্য আর নিয়মিত করা হয়নি। সেলিম ভাবে, পড়াশোনা করে একটা ভালো মাইনের কাজ করবে। মায়ের জন্য বাজার থেকে ভালো মাংস কিনে খাওয়াবে। মা কতদিন ভালো কিছু খেতে পায় না! ভাবতে ভাবতে দূরের দিগন্তের পথে হারিয়ে যায়। কেবল সেই পথ ধরে তার বাবা তমিজ ফেরে না। আলতাফ শেখের মেয়ে অবশ্য ফিরে এসেছে ওর বাবার সাথে পাতানো নতুন সংসারে টিকতে না পেরে। ওই স্বামীকে কখনো স্বামী বলে মনে হয় না হেনার।টানা দুই ঘন্টা রান্না করার পর ঘর্মাক্ত শাড়িটা একবার ঝেড়ে নিয়ে ভেজা ব্লাউজটা ঢেকে নিলো।
তবু ভেজা অংশগুলো ঠিকঠাক মতো ঢাকে না তার। মল্লিক সাহেব বৈঠকখানার ঘরের বারান্দায় বসে এদিকেই চেয়ে চেয়ে কি জানি ভাবছেন। এপাশে রান্নাঘর, আর তার ডানদিকের ওই বৈঠকঘানা ছাড়া বাকিসব ঘরগুলোই ভিতরের দিকে। মল্লিক সাহেবের দিকে দৃষ্টি পড়তেই বড্ড অস্বস্তি অনুভব হলো হেনার। অমোঘ ভয়ে গ্রাস হয়ে রান্নাঘরের ভিতরের দিকে পা বাড়াতেই শাড়ির আঁচলে টান পড়লো হেনার। অকস্মাৎ কারো উপস্থিতিতে পিছন ফিরে তাকায় সে। সেলিম। বৃহঃস্পতিবারে স্কুল একটু তাড়াতাড়িই শেষ হয়। ঘর্মাক্ত মুখমন্ডল লাল হয়ে উঠেছে। সপ্তম শ্রেণীতে পড়ছে সে। বয়স অনুপাতে আরো এক দু ক্লাস উপরে পড়ার কথা যদিও। ছেলের মুখের দিকে চেয়ে হেনা বলল- আমার বাজান আইছে যে। স্কুল ছুটি হইয়ে গেছে বাজান?
সেলিম অভিমানের সুরে জবাব দেয়- এখন বেলা কত হয়েছে জানো তুমি? অথচ তোমার বাড়ি ফেরার নামগন্ধ নেই।
হেনা মুচকি হাসে। ঘর্মাক্ত শাড়ির আঁচল দিয়ে ছেলের মুখ মুছিয়ে দিয়ে বলে- বড় বউ ভাত দিয়েছে। গামলায় গামছা দিয়ে বানদোন লাগবো। বাইন্ধাই বাড়ি চলে আসতাম বাজান। চলো দেখি, কাম শেষ কইরে বাড়ি ফিরবো।
হঠাৎ বারান্দা থেকে মল্লিক সাহেব “হেনা” বলে ডেকে উঠলেন। হেনার আর রান্নাঘরে ঢোকা হয় না। মাথায় লম্বা ঘোমটা টেনে মল্লিক সাহেবের সামনে গিয়ে সালাম দেয়। মল্লিক সাহেব বললেন- তোর যেনো কয় ছেলেমেয়ে?
-জ্বে, দুইডা।
-কাজকর্ম কেমন করছিস?
-বড় বউয়ের তো ভালোই মনে হয়।
-অহ। আমিও শুনলাম। ভালো, ভালো।
তোর রান্নার হাতের প্রশংসা করতেই হয়। একটা কাজ কর, এই ভরদুপুরে বৈঠকখানায় তেমন কেউ আসে না। আমার আবার পান না চিবোলে চলবে না। দেখ তো, বৈঠকখানার ওই কোনার ঘরটায় পানের ডিব্বাটা আছে কিনা। পেলে নিয়ে আয়।
হেনা মাথা নাড়িয়ে ভিতরে ঢোকে। বড় ঘরটাতে সারি সারি চেয়ার পেতে রাখা। ছোট বড় আরো দুই তিনটা ঘর। কোনার ঘরটাতে গিয়ে পানের ডিব্বাটা খুজতে থাকে সে। পুরো ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোথাও নেই। হঠাৎ পিছন থেকে কাঁধের উপর কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করলো সে। চমকে উঠে পিছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পায় মল্লিক সাহেবের ভয়ংকর চেহারা। বিচ্ছিরি একটা হাসি দিয়ে মল্লিক সাহেব বললেন- পানের ডিব্বা এখানে পাবি না রে। তোর সাথে কিছু কথা আছে। হেনা নিজের কাঁধ থেকে মল্লিকের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। মল্লিক আবার বলে- তোর উপর আমার হাত পড়েছে মানে ধরে নে, তোর কপাল খুলেছে। আমাকে মাঝে মাঝে সময় দে। তোর ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোনো চিন্তাই করা লাগবে না আর। বরটা তো সেই কবেই ভেগেছে। তোরও তো একটা চাহিদা আছে। আমি বুঝি রে হেনা। হেনা কর্কশ গলায় বলে ওঠে- আপনে কিচ্ছু বোঝেন না। আমার কেবল আমার সন্তান দুইটোরে ভালো পথে মানুষ করার চাহিদা। আমারে ছাড়েন।
কিন্তু মল্লিক ওর কথায় কর্ণপাত করে না। পশুদের দৃষ্টি কোথাও পড়লে তারা হাতের কাছে শিকার পেয়ে ছেড়ে দিতে অভ্যস্ত নয়। পশুর মতোই নিজের শক্তি দিয়ে হেনাকে চেপে ধরে মল্লিক। জোর করেও নিজেকে ছাড়াতে পারেনা হেনা। কী বিভৎস অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে চলেছে সে! চিৎকার করতে পারছে না। মানুষজন শুনলে সম্মানটা তারই যাবে। হয়তো এবার গ্রামছাড়াও হতে পারে। ছলছল চোখে মল্লিকের কাছে অনুনয় করে- আমারে ছাইড়ে দেন। আমার ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। ওর ভারি খিদে পেয়েছে। মাফ করেন মল্লিক সাহেব। মল্লিক ছাড়ে না। সেলিমের পেটের খিদের চেয়েও তার ভিতরে ভয়ংকর খিদে জেগে উঠেছে। একটা দুর্বল অস্তিত্বের সাথে ধস্তাধস্তি শুরু হয় তার। সেই সাথে হেনার মৃদু কান্নার স্বর।
হঠাৎই মল্লিক “আহ” শব্দ করে মেঝেতে পড়ে যায়। পড়ন্ত মল্লিকের উপর এলোপাতাড়ি কোপ পড়ে অবিরত। হেনা ভয়ার্ত চোখে তাকায়। সেলিম! ওর হাতে রক্তাক্ত বটি। মল্লিক চিৎকার করে ওঠার সময় পায় না। কাটা মুরগীর মতো ছটফট করতে করতে মৃত্যুর কোলে পতিত হয়। হেনা বোবার মতো সেভাবেই স্থির দাড়িয়ে আছে। নিজের চোখ এবং বোধকে বিশ্বাস করাতে পারে না। এমন সময় বড় বউ ঘরে এসে ঢুকলেন। মেঝেতে মল্লিকের রক্তাক্ত লাশ। সেলিমের হাতে বটি। হেনার খসে যাওয়া শাড়ির আঁচল। সমস্তটাতে একপলক চোখ বুলিয়ে নিয়ে তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। তারপর উদাস হয়ে জানালার বাইরের দিকে তাকালেন।প্রকৃতির বিচার বড়ই অদ্ভুত!
হেনা ভেবে পায় না, এরপর কী হবে! ছেলের হাত ধরে পালিয়ে যাবে নাকি টুপ করে এখান থেকে কেটে পড়ে আর পাঁচটা মানুষের মতো স্বাভাবিক থাকবে,যেন কিছুই ঘটেনি। বড় বউয়ের মনে দুঃখবোধ হয়েছে? হলে অমন চুপচাপ কেনো তিনি? কোনো উত্তরই আসেনা ভিতর থেকে। তার শুধু একটাই কথা বারবার মস্তিষ্কে এসে জমা হচ্ছে।
” জগতের স্বেচ্ছায় অপরাধীদের মতো সবাই অপরাধী হয়না, কেউ কেউ অপরাধী হতে বাধ্য হয়। তার ছেলে সেলিম তাদেরই একজন।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত