চার ভাই

চার ভাই

এক জমিদারের চার ছেলে ছিল। জমিদার এদের অনেক টাকা পয়সা দিয়ে ব্যবসা করতে দিলেন। কিন্তু এরা ব্যবসা করতে পারল না। সব টাকা পয়সা ও ডুবলো। জমিদার আবার দ্বিতীয় বার তাদের টাকা পয়সা দিলেন ব্যবসা করতে। কিন্তু এবার ও সব ডুবলো। জমিদারের ছেলেরা খারাপ ছিল না তবে কেন বারে বারে এমন হচ্ছে ? জমিদার এর কারণ ভাবতে লাগলেন। তবে কিছুই খুঁজে পেলেন না। শেষে তিনি গুরুদেবের কাছে গিয়ে মনের চিন্তা খুলে বললেন।

যথা সময়ে গুরুদেব জমিদারের বাড়ীতে এলেন। জমিদারের চার পুত্রকে ডাকলেন তারপর তাদের সাথে এক আজব খেলায় মেতে উঠলেন। খেলার পুরস্কার হিসাবে রাখা হল অনেক টাকা। ফলে জমিদারের চার ছেলে চট-জলদী খেলায় রাজী হয়ে গেল।

খেলাটি ছিল এ রকম, চার ভাই আর গুরুদেব দুপুরের খাওয়ার পর বিকাল পর্যন্ত একটি ঘরে থাকবেন। বাইরে থেকে সেই ঘরের দরজা তালা দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হবে। বিকালের আগে যে ঐ ঘর থেকে বের হতে পারবে তাকে সেই পুরস্কার দেওয়া হবে। তবে দরজা জানালা ভাঙ্গা চলবে না , কোন হাতিয়ার বা যন্ত্র ও ব্যাবহার করা চলবে না।পর পর তিন দিন এ খেলা চলবে।

খেলা শুরু হল। গুরুদেব আর চার ভাইকে একটি ঘরে রেখে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেওয়া হল। বাইরে থেকে দরজায় গট-গট শব্দ করে লোহার তালা পড়ল। শুরুতে সব ভাই দরজা-জানালা ঠেলা-ঠেলি করল কিন্তু এই মোটা লোহার দরজা জানালা তেমন সাড়া দিন না। খুব তাড়াতাড়ি এক ভাই বলল “ না। দরজা জানালা আর খোলা গেল না। ” এই বলে সে কয়েকটা হাই তুলে সুন্দর বিছানাতে শুয়ে পড়ল আর কিছুক্ষণের মধ্যেই নাক ডাকতে শুরু করল।

তার কিছুক্ষণ পর আরেক ভাই হার মানল। সে বলল “ দূর। আর হল না।” এই বলে সে একটা বই নিয়ে পড়তে শুরু করল। আরেক ভাই বলল “ এই টাকা পয়সাতে কি হবে। একদিন মরতে তো হবেই।” এই বলে সে ঠাকুরের নাম জপে লেগে গেল। শুধু বিমল শান্তিতে বসে নেই। সে বার বার গিয়ে একবার এ দরজায় আরেক বার ও জানালায় ধাক্কা মারছিল। তারপর বসে আবার নতুন ফন্দি আঁটছিল। গুরুদেব সব লক্ষ করছিলেন। পরদিন ও তেমনি হল। বাইরে থেকে দরজায় গট-গট শব্দ করে লোহার তালা পড়ল। এক ভাই এমনি এসে শুয়ে পড়ল , এক ভাই সোজা আগের দিনের বইটা নিয়ে বসে পড়ল, আরেক ভাই নাম জপতে থাকল। কিন্তু আজকে ও বিমল চেষ্টার পর চেষ্টা করে যাচ্ছে , কিন্তু ফল হচ্ছে না। দিনটা এমনি গেল।

পরদিন সবাই যখন ঘরে ঢুকল, বাইরে থেকে দরজায় গট-গট শব্দ করে লোহার তালার বন্ধের শব্দ তো হল কিন্তু লোহার তালা লাগানো হল না। তালা বন্ধের শব্দ হতেই এক ভাই হাই তুলে বিছানাতে , এক ভাই বই নিয়ে পড়তে শুরু করল, এক ভাই নাম জপতে শুরু করল। বিমল কয়েকটা জানালাতে ধাক্কা-ধাক্কি করে যেই দরজায় ধাক্কা দিল অমনি দরজা খুলে গেল। সবাই লাফিয়ে উঠল , গুরুদেব হা হা করে হেসে উঠলেন। জমিদার গুরুদেবের আদেশে আজ দরজার বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি ও ভীতরে এলেন। গুরুদেব জমিদারকে বললেন “ হে জমিদার , তুমি বিমলকে ব্যবসার কাজে লাগাও। এর ধৈর্য্য আছে, চেষ্টা ও আছে। সে ব্যবসাতে সফল হবেই।”

যে বই নিয়ে বসে ছিল তাকে দেখিয়ে বললেন “ তোমার এই ছেলেকে তোমাদের হিসাব-পত্রের কাজে, বই-পত্রের কাজে লাগাও।” যে নাম জপছিল তাকে দেখিয়ে বললেন “ একে কিছু দিনের জন্য আমার কাছে পাঠিয়ে দাও।” আর যে শুধুই ঘুমাচ্ছিল তাকে দেখিয়ে বললেন “ একে আজ থেকেই তোমার খেতে এক জন কৃষকের মত কাজ করতে পাঠাবে। তাকে পরিশ্রম করতে শিখতে হবে।” কিছু দিনের মধ্যেই চার ভাই যার যার কাজে অনেক দূর সফল হয়ে গেল।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত