এক হাতে চোখের অশ্রু মোছা আর অন্য হাতে মেসেজ টাইপ করে সেগুলো পূনরায় রিমোভ করে দেয়ার কষ্ট কেউ কাউকে কোনদিন বোঝাতে পারবে না।
—–প্রিয় মানুষটির হাস্যউজ্জল ছবি তার পোস্ট গুলো দেখার জন্য অন্য আইডি থেকে ঢুকে যখন দেখে প্রোফাইল লক দেয়া তখনের কষ্টটাই হয় সম্পূর্ণ আলাদা।
সারাক্ষণ অপেক্ষা করে ফোনের স্কিনে তাকিয়ে থাকা যে এই বুঝি প্রিয় মানুষটির ফোন থেকে একটা মেসেজ এলো একটা কল এলো এই রকম হাজারো স্বপ্ন নিয়ে বিভর থাকার দিনগুলির প্রতিটি রাতে বালিশ ভিজে যাওয়া দাগ কখনোই কারো দৃষ্টি গোচর হয় না। দিনের পর দিন যার সাথে কথার ফুলঝুরিতে পার হতো রাত সেই রাত গুলাই যেনো সব চেয়ে বড় শত্রু হয়ে ওঠে হঠাৎই। তারপরেও মানুষ আশায় বাধে বাসা খোঁজে সুখ পায় দুঃখ। অনেকেই ভাবি সেতো আমাকে প্রমিস করেছে যে কখনো যাবে না তাইলে আমি একটু আমার মতোই চলি। কিন্তু আসলে এটা ভূল ধারণা, আপনাকে যদি সে প্রমিস করে তার মানে এই নয় যে আপনি তার সাথে যেমন খুশি আচরণ করতে পারবেন বা করবেন।
—-সে যে বিশ্বাসে আপনাকে প্রমিস করেছে সেই বিশ্বাস ভেঙ্গে গেলে মাটি চাপা পরে যাবে এইরকম হাজারো প্রমিস নামের শব্দগুলো। নিমিষেই হারিয়ে যাবে হাজারো স্বপ্ন, আশা, আকাঙ্ক্ষা।
ভালবাসার মানুষটি সব চেয়ে বেশি আঘাত পায় যখন আপনি জানেন যে সে আপনাকে ভালবাসে তার পরেও ছোট খাটো কারণে বলেন “তুমি আমাকে কোনোদিনই ভালবাসতে পারোনি বা ভালবাসোনি।” যখন আপনি তার ব্যাস্ত সময় গুলো সম্পর্কে জেনেও বলবেন, “তুমি কোনোদিনই আমাকে ভালভাবে একটু সময় দাওনি।” কথা দুটি খুব অভিমানের হলেও প্রিয়ের কাছে অনেক আঘাতপ্রাপ্ত কথা। সে আপনাকে তাও মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবে ঠিকই কিন্তু তার মনে আঘাত বসে যাবে। তার মনের প্রশ্ন তখন একটাই, “ও কি এতোদিনেও আমাকে বুঝলো না? বিশ্বাস করতে পারলো না!”
হ্যাঁ আপনি হয়তো রাগে অভিমানে কথাটি বলবেন আর সেও এটা বুঝবে কিন্তু ওই যে! অবচেতন মন বলে একটি কথা আছে না? ওইটাই এসব কথা ভাবাতে বাধ্য করে অনেক সময় যখন সামনের তিক্ত ভবিষ্যৎ নজরে পরে তখন ভালবাসার মানুষটি বিনা কারণেও আপনার থেকে দূরে চলে যাবে সে চাইবে না আপনি এসব সহ্য করুন। সব প্রিয়েরা নিজেদের খুশির জন্য দূরে যায়না খুশিতে থাকার অভিনয় করে মাত্র। একটা ব্যাপার মনে রাখবেন, যে সময় কখনো কাউকে খালি হাতে ফিরায় না, শুধু সময়কে সময় দিতে হয়। আপনি যদি নিজের পিছে সময় দেন তবে দেখবেন এরকম হাজারো কষ্ট আপনার ধারে কাছে ঘেষতে পারবে না। প্রিয় মানুষটির কাছ থেকে দূরে এসে অহেতুক নিজের টাইমলাইন ভেজাচ্ছেন চাপা কান্নায় যা সে দেখেও না এরকম করলে ধরে নিবেন আপনি সারাজীবনের জন্য সুখ হারিয়ে ফেলেছেন ধীরে ধীরে। বিষন্নতা এমন একটা বিষয় যা একধরনের মরনব্যাধি রোগ যা সহজে ধরা যায়না।
আরে প্রিয় মানুষটির জন্য যদি অপেক্ষাই করবেন তাইলে তার জন্য হলেও তো নিজেকে ঠিক রাখতে হবে। মানুষ কিন্তু অসহায়কে ভালবাসে না তাদের প্রতি শুধু সমবেদনা জ্ঞাপন করে। আর সাফল্য প্রাপ্ত মানুষ গুলোর পূর্ব জীবন যেমনই থাকুক তাদেরকে মানুষ ভাল না বেসে পারে না। আমাদের দুনিয়ায় অনেক এরকম গল্প আছে যেখানে প্রিয় মানুষটি তাকে অসহায়ের কাতারে রেখে চলে গেছে কিন্তু সাফল্য অর্জন করতে দেখে আবার ফিরে এসেছে। হ্যাঁ হয়তো সে লোভীর পরিচয় দিয়েছে কিন্তু তাতে অন্তত এটা বুঝতে পারা গেছে যে ভালবাসার মানুষটি ভূল ছিলো তার জন্য। এসব চিন্তা চেতনা থেকে দূরে থাকতে সব সময় নিজের ভালো লাগার কাজ পছন্দনীয় কাজ গুলো করার চেষ্টা করবেন। সেগুলো অবশ্য করতে মন চাইবে না কিন্তু তাও করতে হবে, করতে করতেই আপনি নিজেকে ফিরে পাবেন। পিছে তাকিয়ে দেখুন একসময়
–আপনি গান করতে ভালোবাসতেন, –হয়তো আপনার লেখনীর প্রশংসায় সবার পঞ্চমুখ ছিলো, –ঘরের সবার চেয়ে আপনার রান্না কিন্তু বেশ হতো,
–আপনার তো অনেক শখ আছে রান্নার?
–আরে না আপনি তো ভালো আর্ট করতে পারেন? –বাবা আপনার কবিতা গুলো খুব মন দিয়ে শুনতো তাই না?
–বিষন্ন মন নিয়ে বসে থাকলে মা কিন্তু বার বার এসে জিজ্ঞেস করেন “কি হইছে তোর?”
–বন্ধুরাতো আপনার গিটারের সুরেরটান গুলো তাদের নাম বলে চালিয়ে দিতো! কি ঠিক তো নাকি আবার আপনি নিজেই অন্যের সুর চুরি করতেন?
–প্রতিদিন ফুসকা না খেলে কি ভাত খেতে পারতেন?
–আপনি কিন্তু ফুল গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগাতে আর ওগুলোর পরিচর্যা করতে খুব ভালই পারতেন।
–নাহ আপনি ভালো নাচতে পারেন তো,
–আর হ্যাঁ যেকোনো জায়গায় ঘুরতে গেলে সবার জন্য আপনার ঝুলিতে নিশ্চয়ই একটা মজার কথা থাকতো?
তবে আর দেরি কিসের? চলুন ফিরে যাই আবার সেই পুরনো দিনে যেখানে মন বসে আপন মনে। আমাদের নিজেদের হাতেই তো আমাদের চাবি, তা কি আর অন্যজনের হাতে ছাড়ি? এই যে আর কিভাবে বললে আপনি একটু হাসবেন বলেনতো??
গল্পের বিষয়:
গল্প