মিতুর মামাতো বোন শারমীন এসে মিতুকে বলল, “আপা আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, তোকে যে ছেলে আজ দেখতে এসেছিল, তাঁর মাথায় টাক আছে। চুলগুলো আসল না, নকল চুল লাগিয়ে এসেছে।” মিতু তখনও আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে। তাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে। নিজেকে হঠাৎ সুন্দর মনে হওয়াতে মনে মনে খুশি সে। শারমীন তাকে সাজিয়ে দিয়েছে। মেকাপের কারণে বুঝাই যাচ্ছে না যে, ফর্সা এই আবরণের নিচে শ্যামবর্ণ একটি চেহারা লুকিয়ে আছে।
মিতুর নিজেকে খুব অপরাধী লাগছে। মানুষ অপরাধ করলে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চায়। সে কী অপরাধ করেছে? নিজের অপরাধ সম্পর্কে মিতু কিছুই জানে না। শারমীন কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চলে গেছে। গতকাল যখন মিতুর মামী তার মামার সাথে কথা বলছিল, মিতু আড়াল থেকে সব শুনেছে। মিতুর মামী জোর দিয়ে বলছে, “একটা ছেলে দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকার কারলে বিয়ে করেনি। বয়স তো আর তেমন বেশি না। ত্রিশ বত্রিশ বয়স ছেলেদের জন্য কিছুই না। তুমি কিন্তু এবার অমত করতে পারবে না।” মিতুর মামা বলেছিল, “আগে তারা আসুক। ছেলে দেখি, কথা বার্তা বলি। না দেখে তো আর আমার ভাগনিকে যার সাথে খুশি বিয়ে দিতে পারি না।” মিতু তখন সেখান থেকে চলে এসেছিল। তাঁর মামা মামীর পরবর্তী কোনো কথাই সে শুনেনি। শোনার কোনো ইচ্ছেও হয়নি।
আয়নার সামনে আর দাঁড়াতে ইচ্ছে করছে না। রং মেখে সঙ সেজে থাকার কোনো মানে হয় না। মিদুল ভাইকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে মিতুর। মানুষটা আজকের দিনেও বাড়ির বাইরে। মানুষটা হয়তো জানে না, মিতু দিনের শুরুটা করে তাকে দেখে। অথচ আজ দেখতে পারেনি এক নজর। খুব সকালেই মিদুল কোথায় যেন গেল। মিদুল ভবঘুরে মানুষ। রাত্রি নিশীতে ঘরে ফিরে। দিনের বারোটা অবধি ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেবে। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে সকালের আর দুপুরের খাবার একসাথে খাবে। তারপর আবার সে পথে নামে। কোথায় যায়, কী করে কেউ জানে না। মিদুলের একমাত্র ছোট বোন শারমীনের ধারণা তার ভাই আজকাল কবি বা লেখক পর্যায়ে চলে গেছে। কোলাহল ভালো লাগে না হয়তো।
মনে হয় কোনো পার্কের বেঞ্চিতে বসে বা নদীর ধারে ঘুরে ঘুরে কাব্য-কবিতা লিখে বেড়ায়।
শারমীনের কাছে শুনে মিতু মুচকি হাসে। কারণ মিতুও এমনটা ভাবে, মানুষটা হয়তো প্রেমে ছ্যাকা খেয়ে কবি হয়ে গেছে। যে যত বড় ছ্যাকা খাবে, তার ভিতর থেকে ততো আবেগী কবিতা বেরিয়ে আসবে। দু’দিন আগে মিতু কাপড় ধোয়ার সময় মিদুলের শার্টের পকেট থেকে একটা ভাঙ্গা সিগারেট আর একটা কাগজ পেয়েছিল। কাপড় ভিজানোর আগে চেক করাতে কাগজটি অক্ষত পেল। মিদুল ভাই সিগারেট ধরেছে এটা মিতু আগে থেকেই জানে। তার কাপড় ধোয়ার সময় সিগারেটের গন্ধ পাওয়া যায়। মিতু কাগজটি সেদিন নিজের কাছে রেখে দিয়েছিল। এক বিকেলে ছাদের এক কোণে বসে মিতু কাগজটি খুলে দেখলো।
“তোমায় নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কিছুই দিতে পারিনি উপহার। দিতে না পারার কষ্ট আমার বুকের ভিতরে ভূমিকম্প তৈরী করে। কিছু একটা তোমাকে দেয়া খুব জরুরী ছিল। আমার পছন্দের বা আমার প্রিয় কিছু দিতে পারতাম তোমাকে। তবে আজ আমার খুব প্রিয় জিনিসটি দিতে চাই। দুইটা নদী তোমাকে দিয়ে দেব একেবারে। যখনই তৃষ্ণা পাবে তুমি পানি নেবে সেই নদী থেকে। যে নদী দুটোর উৎস আমার নিরবধি দুটো চোখ।” মিতু কাগজটি হাতে নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বলে, “মিদুল ভাই আমি এই জীবনে তোমাকে ছাড়া কাউকে এতো ভালোবাসিনি। কিন্তু তুমি বাসলে অন্য কাউকে। সেও হলো না তোমার, আর তুমিও হলে না আমার।
সন্ধ্যার পর মিতুর মামী তার ঘরে এলো। মুখে মুচকি হাসি। মিতু জানে এই হাসির আড়ালে কী লুকিয়ে আছে। এই মহিলা তাকে এই বাড়ি থেকে তাড়াতে পারলেই বাঁচে। সালেহা বেগম বিছানায় বসে মিতুর মাথায় হাত দিলেন। বললেন, “মিতু মা আমার। ছোটবেলা থেকে মায়ের আদরই দিয়েছি তোকে। আমরা তোর ভালোটাই চাইবো। ছেলে পক্ষ তোর ফোন নাম্বার নিয়ে গেছে। ফোন দিলে ভালো করে একটু কথা বলিস মা।” মিতু ঘাড় কাত করে সম্মতি জানালো। মুখ ফুটে কিছু বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। সালেহা বেগম আর কিছু না বলে চলে গেলেন। মিতু মোবাইলটা হাতে নিয়ে ভাবছে, একজন অপরিচিত মানুষের সাথে কী বলবে সে? লোকটি কী জানতে চাইবে? কারো সাথে সম্পর্ক আছে কি-না, কাউকে ভালোবাসে নাকি। এসব প্রশ্নের উত্তর কীভাবে দিবে সে? শারমীন এসে বলল, “আপা, মিদুল ভাই আসছে। পায়ে কাঁটা ফুটছে। কাঁটা মনে হয় কিছুটা ভিতরে আছে এখনো। তোর কাছে সুঁই আছে?”
মিতুর ভিতরটা কেমন করে উঠে। মানুষটা আজ সন্ধ্যা রাতে ফিরলো। প্রতিদিন সকালে মানুষটার ঘুমন্ত চেহারা দেখে মিতু তার কর্মদিবস চালু করে। আজ দেখতে পায়নি এখনো। মিতু ভয়াম থেকে সুঁই নিয়ে ছুটলো। মিদুল ঘরে একটি বাটিতে পানি নিয়ে পা ভিজিয়ে বসে আছে। পানি থেকে ধোয়া উঠছে। হালকা কুসুম গরম পানি। এতে কাটা নরম হবে। মিতু সুঁই নিয়ে ঘরে ঢুকে দাঁড়িয়ে আছে। মিদুল বলল, “সুঁই নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবি না কিছু একটা করবি?”
মিতু ফ্লোরে বসে মিদুলের পায়ের কাটা বের করার চেষ্টা করে। এর মধ্যে মিদুল বলে উঠলো, “তোকে না ছেলে পক্ষ দেখতে এসেছিল? তা বিয়ের তারিখ কবে ঠিক হলো?”
মিতুল আড়চোখে তাকালো মিদুলের দিকে। কেন যেন মিতুর চোখদুটো ছল ছল করছে। যেকোনো সময় গড়িয়ে পড়বে পানি। সে মিদুলকে সে পানি দেখাতে চায় না। মিতু সুঁই রেখে উঠে নিজের ঘরে চলে গেল। মিদুল বুঝেও না বুঝার ভান করে কাঁটা বের করার চেষ্টা করছে। মিদুল জানে মিতু তাকে ছোটবেলা থেকে পছন্দ করে, ভালোবাসে। তার ফুপু মারা যাবার পর মিতুর বাবা আরেকটা বিয়ে করেছিলেন। সৎ মায়ের ঘরে মিতু হয়তো ভালো থাকবে না, সেটা ভেবেই মিদুলের বাবা মিতুকে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন। মিদুলের বাবা চায়নি উনার ভাগনি সৎ মায়ের ঘরে কষ্টে লালিত হোক।
মিদুল অনার্স শেষ করে ভবঘুরে হয়েছে। মিতু আর শারমীন মনে করে মিদুল প্রেমে ছ্যাকা খেয়ে ভবঘুরে হয়েছে। কিন্তু আসল সত্য হলো, মিদুল যাকে পছন্দ করতো। সেই মেয়েটা মিদুলকে কখনো পাত্তাই দিতো না। তবুও মিদুল আশায় ছিল, হয়তো কোনো একদিন মেয়েটি তাকে ভালোবাসবে। কিন্তু মাস ছয়েক আগে ঘটা করে মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেল। সেই থেকে মিদুল ভবঘুরে। গাছের জীবিত পাতায় ছোট ছোট ছন্দে সে তার ভালোবাসার জানান দেয়। গাছ অন্তত সাক্ষী থাকুক মিদুল মেয়েটিকে ভালোবাসত। সে তার চোখের নদী দুটি মেয়েটিকে উপহার দিতে চায়।
কাঁটা বের করে সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মিদুল। রঙচটা দেয়ালটায় তাকিয়ে ভাবে, মিতুকে সে কখনো ভালোবাসতে পারেনি। ভালোবাসা জন্মেছিল পাত্তা না দেয়া মেয়েটির জন্য।
মিতু ফোন রিসিভ করে সালামের জবাব দিলো। অপর প্রান্ত থেকে ছেলেটি বলল, “আসলে বিয়ের আগে সব জেনে নেয়া ভালো। আমাকে যদি আপনার পছন্দ না হয়, বলতে পারেন। আমি চাই না অপছন্দের মানুষটি নিয়ে আপনি সারাজীবন সংসার করেন।” মিতু এই কথার উত্তর দিতে পারে না। তার মামী বলেছিল, ছেলেটি ফোন দিলে যেন ভালো করে কথা বলে। কিন্তু ছেলেটির প্রশ্নের জবাবে ভালো কথা কী হতে পারে মিতু ভেবে পায় না। তবুও সে বলল, “আপনাকে অপছন্দের কোনো কারণ নেই। মামা মামী আমাকে যেখানে বিয়ে দিতে চান, আমি সেখানেই রাজী।” অপর প্রান্ত থেকে ছেলেটি বলল, “তাহলে ধরে নিতে পারি আপনি এই বিয়েতে রাজী।” মিতু বলল, মামা-মামীর মত’ই আমার মত।
মিতু ফোন রেখে দরজা বন্ধ করে কাঁদতে বসলো। তার আগে দুই চোখে কাজল দিলো। কাজল দেয়ার পর কাঁদলে মিতুর ভালো লাগে। চোখের পানিতে কাজল গড়িয়ে পড়লে সে চোখ-মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলে। তার মায়ের কথা মনে পড়ছে খুব। সেই ছোটবেলা এক সাধারণ জ্বর নিয়ে মা মারা গেলেন। মায়ের চেহারাও তার মনে নেই। তবুও চোখ বন্ধ করে মায়ের চেহারা মনে করার চেষ্টা করে। অন্তত মায়ের কাছে বলতে পারতো, মা আমি এই বিয়ে করবো না। আমি মিদুল ভাইকে ভালোবাসি। মিদুল তার বাবার সাথে ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। আফজাল হোসেন তার ছেলেকে ডেকে এনেছেন ছাদে। মিদুল কিছু বলার আগে তার বাবা বললেন, “তোমার মা মিতুর জন্য এক পাত্র ঠিক করেছে। পাত্রের বয়স পঁয়ত্রিশের কাছাকাছি। আমার এখানে মত নেই। এটা নিয়ে তোমার মায়ের সাথে দুইবার ঝগড়াও করেছি। তুমি বুঝতে পারছো বিষয়টা?”
-হ্যাঁ বাবা আমি বুঝেছি। তাহলে বিয়েটা ভেঙ্গে দাও। মিতু তো ফেলনা নয়, অন্য ছেলে দেখো।
-এই বিষয়টাই তোমার মা’কে বুঝাতে পারছি না। ঝগড়া করছে তোমার মা।
-তুমি মা’কে এতো ভয় পাও কেন বাবা? তুমি বলবে এই বিয়ে হবে না। মায়ের এতো সাহস নেই যে মিতুকে সেই ছেলের সাথেই বিয়ে দিয়ে দিবে।
আফজাল হোসেন ছেলের দিকে একবার তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, “মিতুর মা মারা যাবার পর মিতুকে এই বাড়িতে নিয়ে আসলাম। একটা সময় ভেবেছিলাম, মা মরা মেয়েটাকে দূরে কোথাও যেতে দেব না। তোমার বউ করে এই বাড়িতেই রেখে দেব। কিন্তু শারমীনের কাছে শুনলাম তুমি অন্য একটি মেয়েকে পছন্দ করো। তাই তোমাকে কিছু বলার সাহস পাইনি। আসলেই আমার সাহসের অভাব রয়েছে। নয়তো তোমার মা মিতুর জন্য বয়ষ্ক পাত্র ঠিক করতে পারতো না।”
মিদুল মাথা নিচু করে আছে। সে লজ্জা পাচ্ছে তার বাবার কাছে। বাবা জেনে গেছে, সে অন্য একটি মেয়েকে পছন্দ করে। মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেছে, এই কথা মনে হয় শারমীন বাবাকে বলেনি। আরো লজ্জা পাচ্ছে মিতুর ব্যাপারটা জেনে। বাবার ইচ্ছে ছিল মিতু এই বাড়িতেই থাকুক। মিতুও চায় মিদুলের বউ হতে। শুধু মিদুল কেন যেন মিতুকে ভালোবাসতে পারেনি। মেয়েটাকে সত্যিই ভালোবাসা উচিত ছিল। আফজাল সাহেব বললেন, “কাল বাড়িতে থেকো। ছেলে পক্ষ বিয়ের তারিখ করতে আসবে। কাল কী ফয়সালা করবো, এখনো জানি না আমি।” মিতু শারমীনের চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। মিদুল এসে বলল, “শারমীন তুই বাবার কাছে যা তো একটু। তোকে মনে হয় কিছু বলবে।”
শারমীন উঠে চলে গেল। মিতু মাথা নিচু করে আছে। যখন থেকে বুঝতে পারে সে মিদুলকে ভালোবাসে। সেই থেকে আজ অবধি মিদুলের চোখের দিকে তাকাতে পারেনি মিতু। মিদুল একটু এগিয়ে গিয়ে বলল, “তোর পাত্র পছন্দ হয়েছে? কাল বিয়ের তারিখ ঠিক করতে আসবে।” মিতু মাথা নিচু করেই জবাব দিলো, “হ্যাঁ, আমার কোনো আপত্তি নেই।” মিদুল আরেকটু কাছে এগিয়ে গেল। মিতু মিদুলকে সামনে এগুতে দেখে কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে সামনে তাকালো। মিতুর ছলছল চোখ দেখতে পেয়ে মিদুল আর কোনো প্রশ্ন করেনি। মনে হচ্ছে প্রশ্ন না করেই সে উত্তর পেয়ে গেছে। মিদুল দ্রুত গতিতে বাবা মায়ের ঘরে ঢুকলো। আফজাল সাহেব মিদুলকে দেখে অবাক না হলেও সালেহা বেগম অবাক হলেন। জানতে চাইলেন, “কিরে কিছু বলবি?”
মিদুল বলল, “হ্যাঁ মা বলব, এই বিয়ে বন্ধ করে দাও। তাদের ফোন করে বলো কাল যেন না আসে। মিতুর এই বিয়েতে মত নেই।” সালেহা বেগম বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “বিয়ের আগে সব মেয়েরাই এমন বলে, পরে সব ঠিক হয়ে যায়। ভালো ছেলে, মিতু সুখে থাকবে।” মিদুল আবার বললো, “শুধু মিতুর না, এই বিয়েতে আমারো মত নেই।” সালেহা বেগম অবাক হয়ে জানতে চাইলেন, “তোর মত নেই মানে? কী বলতে চাস তুই?” মিদুল অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল, “আমারো মত নেই বলতে বুঝাচ্ছি আমি মিতুকে পছন্দ করি। মিতুকে আমি বিয়ে করতে চাই।”
সালেহা বেগম চোখ বড় করে মিদুলের সামনে গিয়ে বলল, “তোর মাথা ঠিক আছে? লজ্জা করলো না বলতে তোর?”
আফজাল সাহেব এতক্ষণ চুপ করে ছিলেন। মিদুলের কথা শুনে খুশিতে বসা থেকে একপ্রকার লাফিয়ে উঠলেন। তারপর সালেহা বেগমের সামনে এসে সাহস সঞ্চয় করে বললেন, “তুমি শুনোনি আমার ছেলে কী বলেছে? আমার ছেলে মিতুকে বিয়ে করতে চায়। আমিও চাই মিতু এই বাড়িতেই থাকুক। আমি এক্ষুনি ঐ পাত্র পক্ষকে না করে দিচ্ছি। মিদুল আর মিতুর বিয়ে আমি দিয়েই ছাড়ব।”
সালেহা বেগম কিছু বলতে গিয়েও বললেন না, শুধু দাঁতে কিড়মিড় করছেন। মিদুল বাবার ঘর থেকে বেরিয়ে আবার গেল মিতুর কাছে। মিতু তখন বিছানায় পাশ ফিরে কান্না করছে। মিদুলের কাশির শব্দ শুনে তাড়াতাড়ি চোখ মুছে শোয়া থেকে বসলো। মিদুল বলল, “তোর বিয়েটা ঠিক করেই ফেললাম।” মিতু বলল, “একটু আগে না বললে কাল আসবে তারিখ ঠিক করতে। এখন ফোনেই ঠিক করলে নাকি? কবে তারিখ পড়ছে?” মিদুল মুচকি হেসে বলল, “বিয়ে ঐটা ঠিক করিনি। ঠিক করেছি আমারটা। আমার আর তোরটা। বাবা বলেছিলেন, উনার ইচ্ছে তুই সারাজীবন এই বাড়িতেই থাক। আমিও চাই তুই এই বাড়ি ছেড়ে যেন না যাস। তাই আগের বিয়ে বাদ দিয়ে তোর আর আমার বিয়েটা ঠিক করে ফেললাম।”
মিতু হা করে আছে। কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না। কোনো শব্দও বের হচ্ছে না গলা দিয়ে। সে মনে হয় এখনো স্বপ্নের মধ্যে আছে। এর মধ্যে মিদুল আবার বলল, “তারিখ কবে পড়ছে আমি জানি না। এবারের তারিখটা না হয় তুই-ই ঠিক করিস।” কথাটুকু বলে মিদুল বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। মিতু দেয়ালে হেলান দিয়ে এখনো বিছানায় বসে আছে। তার চোখদুটো আবারো ছলছল করছে। আবারো গাল বেঁয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি। তবে মিতু জানে এই অশ্রু দুঃখের নয়, এটা আনন্দঅশ্রু।
গল্পের বিষয়:
গল্প