কাঠবিস্কুট

কাঠবিস্কুট
দেয়াল ঘড়িটা ঢংঢং করে জানিয়ে দিলো এখন সময় ১১ টা। ডায়নিং টেবিলে খাবার সাজিয়ে চেয়ারে দুই পা তুলে হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে আছি।টেবিল ভর্তি তার পছন্দের খাবার। ভুনাখিচুড়ি, বেগুন ভাজা, ইলিশ ভাজা , গরুর মাংস আর পায়েশ।
আজকে তার সন্ধ্যাতেই ফেরার কথা। সারাদিন ই গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে,ভীষণরকম মন খারাপের আবহাওয়া যেমন হয়। কোন কারণ ছাড়াই এই ওয়দারে বিষণ্ণতার কালো মেঘে যেন মনপাড়া ছেয়ে যায় আকাশের সাথে পাল্লা দিয়ে। আমার ও বিষণ্ণতা ভর করেছিলো। বিশেষ কোন কারণ নেই, গতকাল তার নাইট ডিউটি ছিলো। সেই হিসেব মত আজ সকালবেলাতেই তার ঘরে ফেরার কথা। কিন্তু হসপিটালে আজ ডাক্তার কম থাকায় সে ফিরতে পারেনি।দুপুরে বলেছিলো,সন্ধ্যার আগেই ফিরবে। ভেবেছিলাম, সে যদি মাগরিবের আগেই ফিরে আসে তাহলে আজ একসাথে জামায়াতে মাগরিবের নামাজ আদায় করবো। সারাদিন কি খেয়েছে কি খায়নি সেটা ভেবেই আমি তার পছন্দের খাবার রান্না করেছিলাম।বৃষ্টিবেলায় খিচুড়ি তার ভিষণ পছন্দ।
খাবার নিয়ে বসে থাকতে থাকতে চোখ লেগে এসেছিলো। ঘড়ির আওয়াজে চোখ মেলতেই দেখি এগারোটা..
মেজাজ খারাপ হলো প্রচণ্ড। ইচ্ছে হলো সব এভাবেই রেখে ঘুমিয়ে পড়ি।দুপুরের রাগ টা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। দুপুরবেলা তাকে ফোন করলাম সে প্রথম দুইবার রিসিভ করলো না।আমি ফোন টা বিছানায় ছুড়ে দিয়ে জানালার গ্রিলে চোখ গলিয়ে শূন্যে চেয়ে থাকলাম কতক্ষণ। বেশ কিছুক্ষণ পর ফোন বেজে উঠলো.. আলাদা একটা চেনা রিংটোন। বুঝলাম সে ফোন করেছে।অভিমান হলো খুব, ধরলাম না ফোন টা।পরপর ৩ বার কল এসে কেটে গেলো।এবার চোখের পানি মুছে, তাকে ছোট্ট একটা টেক্সট করলাম
— শুনুন না,সাথে সাথেই রিপ্লাই এলো,
— শোনাও না..
— এই মুহুর্তে আপনাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে।
জানিনা কেন,খুব অস্থির লাগছে।মনে হচ্ছে যেন,আপনি এক্ষুনি যদি সামনে আসেন, আমার চোখে চোখ রাখেন, আমি ভেউভেউ করে কেঁদে ফেলবো।আচ্ছা, তখন কি আপনি আমাকে খুব করে জড়িয়ে ধরবেন? মেসেজ সেন্ড করার পর আরো ১০ মিনিট পার হয়ে গেছে, রিপ্লাই আসেনি।আমি নিশ্চিত, সে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে এবং আমি এটাও জানতাম সে পরে আর রিপ্লাই দেবেনা।ঠিক সেটাই হয়েছে।
রাঙামাটি সদর হসপিটালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে জয়েন করেছে বুখারী।আমরা এখানে এসেছি মাস পেরিয়ে গেছে।চাইলেই শহরেই বাসা নিতে পারতাম।কিন্তু পাহাড়ের শহরে থাকবো আর পাহাড়ের কাছাকাছি থাকবো না,রোজ দুইবেলা নিয়ম করে পাহাড়ের সাথে ভাব জমিয়ে গল্প হবে না সেটা ঠিক আমার মন মানতে চায়নি।তাই শহর থেকে একটু দূরে পাহাড়ের কোলের কাছে ছোট্ট দুই রুমের একটা ফ্ল্যাট পছন্দ করেছিলাম। জানালায় চোখ রাখলেই এখন দূরের পাহাড়ের হাতছানি দেখা যায়।একেক সময় সে পাহাড়চূড়ার একেক রূপ দেখতে পাওয়া যায়।সেসব রূপে মুগ্ধ হয়ে আমি পাহাড়ের নাম দিই কখনো উল্লাস, কখনো আহ্লাদ, কখনো অভিমান, কখনো আবার নিঃসঙ্গতা। এই মুহুর্তে আমার নাম দিতে ইচ্ছে করছে বেদনা।উঁহু, শুধু বেদনা নয়, রাগ মোড়ানো বেদনা।
বর্ষা এলে পাহাড় বুঝি পৃথিবীর সব সবুজ নিজের কাছে ডেকে নেয়।সবুজে সবুজে হৃদয় চঞ্চল হয়।এতো সবুজ কোথায় পায় পাহাড়েরা? সবুজ বুঝি তাদের খুব ভালোবাসে?!এক ই সাথে ধেয়ে আসে মেঘেরা।সবুজ আর পাহাড়ের সাথে মাখামাখি হয়ে যায় মেঘের দল। দূর থেকে দেখে মনে হয় যেন, পাহাড়ি কুয়াশা ঘিরে রেখেছে চারপাশ।কোথা থেকে আসে এরা?কোথায় এদের বাড়ি?জানিনা আমি,কেউ জানেনা। পাহাড়ের এমন রূপ, ঝিরিঝিরি বৃষ্টি আর হিমেল হাওয়া মনকে উদাস করে তোলে।তাকে পাশে পাওয়ার ইচ্ছেটা প্রবল হয় দমকা হাওয়ার মত। অথবা বাঁধভাঙা জোয়ারের মত।অস্থিরতায় মন ছটফট করে তাকে সামনে পেতে, নীরবে হৃদয়ের একান্ত গোপন কথাগুলো জানাতে। আমার অনুভূতিও একটু আগে ঠিক এমন টাই ছিলো।তাকে ডেকেছিলাম তাই। আমার সে ডাকের গভীরতা সে বুঝতে পারেনি হয়তো।তাই এখনো দূরেই। এই এক মাসে সে আমাকে একটা গোটা দিন দিতে পারেনি।চেয়েছিলাম আমি আর সে পাহাড়ের নিবিড় আলিঙ্গনে হারাবো। মেঘ, বৃষ্টি আর সবুজের সমীরণে।আমার সে ইচ্ছে এখনো অধরাই রয়ে গেছে।
গত সপ্তাহেও সে আমার সাথে এমন টাই করেছে।বাইরে লাঞ্চ করবে বলে আর আসলোই না।ভেবেছিলাম রান্না করে দুইজনে একদম একান্তে পাহাড়ে পাড়ি জমাবো,উল্লাসে, আহ্লাদে, প্রেমে মাতবো।লাঞ্চ তো দূরের কথা, ডিনার টাও সে ঠিকমতো আমার সাথে করতে পারেনি।এসেই খেয়ে আবার চলে গেছে।সেদিন ও আমার খুব অভিমান হয়েছিলো।কিন্তু সেসব তাকে কে বুঝাবে? তারপরেও, আমি তার চোখে খুশির ঝলক দেখে মাতবো বলে রান্না করতে গেলাম। কিন্তু এখনো তার কোন পাত্তাই নেই।মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম,আজকে ফিরলে আমি আর দরজাই খুলবো না।বাইরে থাকতেই যখন এত ভালো লাগে তবে আজকে বাইরেই থাকুক। খাবার টেবিল থেকে উঠে এসে শুয়ে পড়েছি বেশ অনেকটা সময়।কিন্তু ঘুম আসছে না কিছুতেই। হঠাৎ দরজার নব ঘুরানোর শব্দ পেলাম।বুঝে গেলাম, ঠিক কাঠবিস্কুট টা এসেছে।উফফ! শাস্তি দেওয়া আর হলো না।ভুলেই গিয়েছিলাম তার কাছে আরেকটা এক্সট্রা চাবি থাকে।
তাড়াতাড়ি চোখ বন্ধ করে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন এমন একটা ভাব ধরলাম।বেডরুমের দরজা খোলাই ছিলো।তবুও তার পা টিপে আসার মৃদু শব্দে বুঝতে পারলাম সে খাটের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। মনে মনে এটা ভেবে শান্তি পাচ্ছি, “ আহা ! এখন সে বুঝবে আমি না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছি আর তারপর সে একটা অস্বস্তি, একটা অপরাধবোধ নিয়ে ঘুমাবে। ” কিছুক্ষণ পর আমার মুখের উপর তার নিঃস্বাসের শব্দ পেলাম।সে হয়তো বোঝার চেষ্টা করছে আমি জেগে আছি না ঘুমিয়েছি। কিছুক্ষণের জন্য যেন হার্টবীট টা মিস করে ফেললাম। পরক্ষণেই সে জামাকাপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।আমি ভাবলাম, আহ! বাঁচা গেলো। কিন্তু ওয়াশরুম থেকে বের হয়েই সে লাইট অন করে দিলো।তারপর কিছু না বলেই পাঁজাকোলা করে নিয়ে গিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দিলো।ঘটনার আকস্মিকতায় আমি হতভম্ব! কি ব্যাপার? কাঠবিস্কুট টা বুঝলো কেমনে আমি জেগে আছি?
নিজে থেকেই খাবার প্লেটে নিয়ে সামনে দিলো।আমি মুখ ফিরিয়ে বসে রইলাম।খুব করে ঝগড়া করতে ইচ্ছে হলো। কিন্তু কথা না বলে চুপ করে রইলাম।সে খেতে শুরু করলো।আমি মনে মনে খুব করে চাইলাম, যেন সে আমাকে মুখে তুলে খাইয়ে দেয়।তাই না খেয়ে বসে রইলাম। কিন্তু তার মধ্যে কোন ভাবান্তর ই দেখতে পেলাম না।সে তার মত খেয়েই যাচ্ছে।খাওয়া শেষ করে উঠে গেলো।আমি তখনো ঠাঁই বসে আছি।ইচ্ছে করছে সামনের সব জিনিসপত্র ছুড়ে ফেলি।কিন্তু কিছুই করতে না পেরে দুইফোটা চোখের পানি চিবুক ভিজিয়ে দিলো আমার।সামলে নিলাম নিজেকে।উঠতে যাবো তখন আবার এলো বুখারী। ভাত মেখে মুখের সামনে ধরলো।মাথা নিচু করে রইলাম আমি। বাড়িতে ফেরার পর এতক্ষণে সে কথা বললো,
— শুকরিয়া, আমার কাজ, আমার দায়িত্ব সবটুকুই তো তুমি জানো।তোমার খুব কষ্ট হয় জানি আমি,তোমার ছোটছোট ইচ্ছেগুলোও রাখতে পারিনা। বুঝি সবটা আমি।কিন্তু তুমি যদি এমন করে মন খারাপের ঝুড়ি নিয়ে বসে থাকো আমি তো আরোও ভেঙে পড়বো।কাজে মনোযোগ দিতে পারবো না, দায়িত্বে অবহেলা করে ফেলবো। তুমি নিশ্চয় সেটা চাও না,তাই না? তার এই কথার পরে আমার সত্যিই আর কিছু বলার থাকে না।তার পেশাকে আমিও ভালোবাসি,শ্রদ্ধা করি।আমি জানি,অন্য সবার চেয়ে তার দায়িত্ব একটু বেশিই।সে যদি কাজে সামান্যতম ও অবহেলা করে তাহলে অগণিত অসহায় মানুষ কোথায় যাবে?কার থেকে চিকিৎসা নিয়ে হাসিমুখে প্রিয়জনের কাছে ফিরবে? নিমিষেই মন খারাপ কর্পুরের মত উড়ে গেলো।মুচকি হেসে তার হাত থেকে খাবার মুখে নিলাম। বললাম,
— পুরো কাঠবিস্কুট একটা!!
সে ও মৃদু হেসে আমার চোখ মুছিয়ে দিলো। খাওয়া শেষ হতেই সে আমাকে উঠতে না দিয়ে আমাকে আবার কোলে নিয়ে বেলকোনিতে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিলো। বেলকোনিতে আমি সখের কিছু গাছ লাগিয়েছি, লাইটিং এর ব্যবস্থাও করেছি।দেওয়ালের সাথে লাগোয়া ছোট্ট একটা ফ্লোরবেড ও আছে।সেখানে তার সাথে সময় কাটাতে ভালো লাগে আমার।যদিও ব্যস্ততার জন্য সে খুব একটা পারে না।রাতদুপুরে নীল আলোর জ্বলা নেভা দেখতে দেখতে অন্য জগতে হারাতে ইচ্ছে হয় খুব।তাই এই আয়োজন। আজ সারাদিন বৃষ্টির জন্য ওয়েদার বেশ ঠাণ্ডা। আর মাঝেমাঝেই হীমেল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।তখন শীতের একটা পরশ বেশ বোঝা যায়।বুখারী একটা চাদর আর দুই মগ কফি নিয়ে এলো।খুব ভালো কফি বানায় ও।ও বসে পড়তেই আমি দুটো মগ দেখে বললাম,
— আপনি সত্যিই কাঠবিস্কিট!!
ও আমার কথার অর্থ বুঝতে না পেরে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।আমি হেসে উঠে গিয়ে বড় আরেকটা মগ এনে দুই মগের কফি একটাতে ঢেলে ফেললাম। এইবার হাসি ফুটলো ওর মুখেও।আমাকে কাছে টেনে চাদরে জড়িয়ে নিলো। দুজনেই চুপচাপ, কেউ কোন কথা বলছিনা।নীরবতা আমার কাছে অসহনীয় লাগে।কিন্তু এখন মন্দ লাগছে না।গভীরভাবে আমি তার অস্তিত্ব অনুভব করছি।মনে হচ্ছে, এভাবেই যদি কেটে যায় জীবন, তো যাক না।ক্ষতি কি!
কফি শেষ হয়ে গেছে, সে আমার আরেকটুখানি কাছে এগিয়ে এসে বসলো।আমিও একটুখানি এগিয়ে গিয়ে তার কাঁধে মাথা রাখলাম। নীরবতা ভেঙে সে ডাক দিলো,
— শুকরিয়া!
— হুম..মুখ না তুলেই জবাব দিলাম।
–তুমি ভেবেছো আমি তোমার লাস্ট টেক্সট দেখিনি। তাই না?
— হ্যা..
— দেখেছিলাম,কিন্তু তখন ই ডাক পড়াতে আর রিপ্লাই দেওয়া হয়নি। ওহ হো,আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম, তোমার জন্য একটা জিনিস আছে।দাঁড়াও, নিয়ে আসি। কথা টা শেষ করেই উঠতে যাচ্ছিলো বুখারী। আমি তার টী শার্ট টেনে ধরলাম।বললাম,
— উঁহু, এখন থাক। পরে দেখবো। আবার কিছুক্ষণ চুপচাপ দুজনেই।একটু পর সে আমার মুখটা দুহাতে তুলে ধরে চোখে চোখ রেখে বললো,
— আজকাল মেসেজে একরকম আর সামনে এলেই তুমি অন্যরকম?! কেন শুনি?
— মানে? আমার সরল প্রশ্ন।
— মানেটা হলো, মেসেজ করে বললে, সামনে পেলে জড়িয়ে রাখবে।এখন এত দূরে কেন?
আরক্তিম মুখে চোখ নামিয়ে নিই আমি।তার ঠোঁটে শরত প্রভাতের শিউলি ফুলের মত স্নিগ্ধ মুচকি হাসি ভেসে বেড়ায়।সে হাসি থেকে চোখ ফেরানো দায়।কিন্তু তার চোখে খেলা করে দুষ্টুমি। আমার ঘোর লেগে যায়।তাকিয়ে থাকতে পারিনা আমি। সে আবার বলে,
— তোমার চোখে তো আমি গভীর সমুদ্র দেখতে পাচ্ছি, সেখানে তো বিশাল বিশাল অনুরাগের ঢেউ আছড়ে পড়ছে।। আমার সাঁতার জানা তো মনে হচ্ছে কোন কাজেই আসবে না। আমি আরো লজ্জা পেয়ে তার বুকে মুখ লুকাই। সে এবার শব্দ করে হাসে।সেই হাসিতে নীরবতার ভাষা আমি আরো বেশি করে উপলব্দি করতে পারি। কিন্তু মনে মনে ভাবতে থাকি,ইশশশ এই কাঠবিস্কুট তো দেখি আজকে পাউরুটি হয়ে গেছে।একটু ভালোবাসা পেলেই একদম গলে টলে একাকার হয়ে যাবে।নাহ,যতটা রসকষহীন কাঠবিস্কুট তাকে আমি ভাবতাম, আসলে সে ওতোটাও কঠিন না। তার আকুল আলিঙ্গনে আমার খুব ওম ওম পায়।আরামে ঘুম এসে ভর করে চোখের পাতায়। কখন যে ঘুমিয়ে পড়ি মনে নেই।
দূরের কোন মসজিদ থেকে ফজরের আজানের মিষ্টি ধ্বনি কানে আসতেই ঘুম ছুটে যায় আমার।চোখ মেলে দেখি।দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসে বসে ঘুমাচ্ছে সে।আর তার কোলে মাথা রেখে আরামে ঘুমিয়েছি আমি।তাকে দেখে এই মুহুর্তে আমার ভীষণ প্রেম প্রেম পাচ্ছে।কি ইনোসেন্ট লাগছে তাকে,ভাবনার খেই হারায় আমার!লুকিয়ে লুকিয়ে সব ভুলে হা করে দেখছি আমি তাকে।কাছেই কোথাও আজান শুরু হয়, চমকে উঠি, সম্বিৎ ফিরে পাই। উঠে গিয়ে ওজু করে তাকেও ডেকে তুলি। একসাথে নামাজ আদায় করে, সে কুর’আন তেলাওয়াত করে আমি মগ্ন হয়ে শুনি। এরপর আবার শুরু হয় রোজকার ব্যস্ততা। আজ তার লাঞ্চবক্সে চিরকুট রেখে দিই একটা।চিরকুট পড়ার পর তার মুখের অভিব্যক্তি কি হবে ভাবতেই হাসি পায় আমার।
চিরকুটে লিখেছিলাম, “ শুনুন,আপনাকে না আমি প্রেম ভর্তা করে খাওয়াবো।মিষ্টি মিষ্টি প্রেম খুব করে পোড়ানো শুকনা মরিচ,একগাদা ঝাঁঝালো পিয়াজ, কয়েক চামচ লবন, আর গোলমরিচের গুড়া দিয়ে ভালোকরে ভর্তা করবো।তারপর সেটা আমার অভিমান, অনুযোগের সাথে মিশিয়ে খেতে দিবো এরপর যখন আপনার সেই ঝাল ঝাল প্রেমভর্তা খেয়ে হার্টবার্ণ শুরু হবে,বুক জ্বলবে, গলা জ্বলবে,কিন্তু কিছু বলতে পারবেন না,সে জ্বলুনি দেখাতেও পারবেন না তখন আমি এন্টাসিড দিবো এই এন্টাসিড কিন্তু ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রোক্সাইড আর অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রোক্সাইড এর সাসপেনশন না এটা হবে আমার ভালোবাসার কিছু টুকরো দিয়ে বানানো এন্টাসিড ট্যাবলেট !! ও হ্যা,ট্যাবলেট টাতে আদরের প্রলেপ দিয়ে কোটিং করা থাকবে।এত ঘাবড়াবার কিছু নেই তাতেও না হলে আমার এক্সট্রা গ্লুকোজযুক্ত মিষ্টি মিষ্টি ভালোবাসার কথা তো রইলোই !আজ থেকে সব কিছুতে এই অনুরাগ ঢেলে দিবো। একটুকুও রাগ করবো না, প্রমিস।আমি এই কাঠবিস্কুট টাকে এমনতরই ভালোবাসবো।” গতকাল রাতে আমি আমার ভুল টা বুঝতে পেরেছি।তাকে ভালোবাসার আগে আমি তার পেশাকে ভালোবেসেছিলাম।অথচ এই কথাটাই ভুলতে বসেছিলাম।
এভাবে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠতে পারিনা আমি। আমাকে খুব ধীর, স্থীর, শান্ত হতে হবে।সে তো আর আমার থেকে পালিয়ে যাচ্ছে না।সে তো একান্তই আমার, আমার নিজের। তাকে হাত ধরে, সাথ দিয়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আমার ই তো কর্তব্য। আমি তো তার দূর্বলতার কারণ হতে পারিনা।আমাকে তো তার সবেচেয়ে বড় সাপোর্ট আর মনোবল হয়ে উঠতে হবে।আমি তার কাজের জন্য,তার দায়িত্ব পালনে সবেচেয়ে বড় ইন্সপিরেশন হবো।তবেই না তার সহধর্মিণী হওয়ার পাশাপাশি যোগ্য সহযোগী, সহযোদ্ধা হতে পারবো।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত