আত্মার সম্পর্ক

আত্মার সম্পর্ক
ম্যাডাম এই খিমারের সেট টা কার জন্য নিবেন, আপনার জন্য?
-না এটা আমার মায়ের জন্য।
দেখলাম মা আমার কথা শুনে কেমন একটা আবেগ আপ্লুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তাহিরও এতক্ষণ ধরে ফোন ঘাটাঘাটি করছিলো৷ আমার কথাটা শোনামাত্র তাহির ফোনটা রেখে বললো,
-এবার তোমাদের কেনাকাটাগুলো শেষ হলে বাসায় ফেরা যাক চলো।
আমি তাহিরকে বললাম এখনো হুজাফার বোরকাটা কেনাই হয়নি। ওরটা কেনা হলেই বাসায় ফিরবো। তাহির আর কিছু বললো না। আমি মার খিমার সেট টা নিয়েই অন্য দোকানে ঢুকলাম হুজাফার স্কুল ড্রেসের রংয়ের বোরকা নিতে। সব কেনাকাটা শেষে আমরা রাস্তার পাশে দাঁড়ালাম তাহিরের জন্য। দুইটা রিক্সা নিয়ে তাহির এসে হাজির। আমি আর মা একটা রিক্সায় উঠলাম, তাহির আর হুজাফা দুই ভাইবোন অন্য রিক্সাটাই বসলো। রিক্সা চলছে বাসার উদ্দেশ্যে। থেমে থেমে কিছু রাস্তা উঁচু নিচু থাকার কারণে বেশ ঝাকি লাগছে। আমি রিক্সাওয়ালাকে বলে হুডটা উঠিয়ে মার বাম হাতটা আমার দুই হাতের মাঝে শক্ত করে ধরে বসে রইলাম। মা কি মনে করে যেন আমার নিকাবের উপর দিয়ে মা’র ডান হাতটা ছুঁইয়ে সেটা মুখে নিয়ে একটা চুমু খেলো। এমনটা ছোটোবেলায় আমার মা’কে করতে দেখতাম।
আমি যখন স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হতাম মা তখন আমার মাথা থেকে থুতনি পর্যন্ত হাতটা ছুঁইয়ে সেই হাতটা তার মুখে নিয়ে চুমু খেতো। আমি কতবার বলতাম এমন করার মানে টা কি? মা হেসে হেসে বলতো ও তুই বুঝবি না এখন, আগে বড় হ তারপর বুঝবি। এখন বুঝি এটা অব্যক্ত ভালোবাসা। যেটা প্রকাশ করার প্রয়োজন পড়ে না, ওতটুকুতেই এতো সুন্দর অনুভূতিটা বুঝে নিতে হয়। মা চলে যাওয়ার পর বাবা যখন এমন করে আদর করতো আমি বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলতাম৷ বাবা তখন চশমার আড়ালে ঝাপসা চোখ দুটোর পানি আটকানোর বৃথা চেষ্টা করতো।
আমার মা মারা যায় আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। মা ছাড়া সন্তান মানুষ করা কতটা যে কঠিন আমার বাবা তা বুঝতো। আমার অযত্ন অবহেলা হবে বলে বাবা আর দ্বিতীয় বিয়ে করেনি। এমন বাবা কয়জন ভাগ্য করে পায় আমি জানি না। বাবা আমার মাকে খুব ভালোবাসতো। শুনেছিলাম মাকে পচ্ছন্দ করেই বাবা বিয়ে করে। কিন্তু বেশি সুখ যে কপালে সয় না আমার বাবা মায়ের বেলাতেও তাই হয়েছিলো। মা চলে যাওয়ার পর থেকে বাবাকে হাসতে দেখিনি। রোজ রাতে মায়ের ছবিটা বুকে নিয়ে ঘুমাতে দেখেছি। স্কুলে, কলেজে বান্ধবীদের মুখে শুনতাম ওদের মায়েরা রান্না শেখানোর জন্য কত বকাঝকা করে। আমারতো মা নেই আমায় কে বকবে আর রান্না শেখার জন্য? আর বাবা কখনোই রান্নাঘরে ঢুকতে দিতো না। কতবার বলতাম ‘ও বাবা তোমার মেয়ে রান্না না জানলে যে শ্বশুর বাড়িতে বকা শুনবে।’ বাবা গাল ফুলিয়ে বলতো এমন শ্বশুর বাড়ি আমার মা মরা মেয়ের কপালে যেন না জোটে।
সত্যিই হয়েছিলো আমার বাবার কথাগুলো। এতো ভালোবাসা পেয়েছি শ্বশুর বাড়িতে হয়তো জীবন এখানে থেমে গেলেও আমার ভেতর ভালোবাসায় পূর্ণ থাকবে। আমার শাশুড়ি মাকে যতবার দেখি ততোবারই মায়ের কথা মনে পড়ে। শাশুড়িও যে মা হতে পারে সেটা বোধহয় মাকে না দেখলে অজানাই রয়ে যেতো। হুজাফা আমার ননদ, তাহির’রা দুই ভাইবোন। তাহির যখন মাধ্যমিকের ছাত্র হার্ট অ্যাটাকে তখন আমার শ্বশুর পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। তখন থেকেই বাবা, ভাইদের কোনোরকম সাহায্য ছাড়াই একজন মা তার দুই সন্তানকে এত বড় করেছেন।
তাহিরের সাথে আমার বিয়ের আগে মা আমায় একদিন রাস্তায় দেখে ছোটো বাচ্চাদের সাথে। আমি সেদিন বাচ্চাদের সাথে বাসায় ফিরছিলাম। আমার ছোটো থেকেই বাচ্চাদের প্রতি অন্যরকম একটা ভালোবাসা কাজ করে৷ তাই যখন রাস্তায় কোনো বাচ্চাকে দেখি আগ পিছ চিন্তা না করেই ওদের পাশাপাশি কথা বলতে বলতে হাঁটতে থাকি, আদর করতে থাকি। সেদিনও কলেজ থেকে বাসায় ফেরার পথে একদল বাচ্চাকে দেখি রাস্তায়। ওরা স্কুল থেকে ফিরছিলো। আমি আমার বান্ধবীদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েই এক দৌঁড়ে ওদের মাঝে এসে ঢুকে পড়ি। মা তখন রিক্সা থেকে আমায় দেখেছিলো। জানি না নিকাবের আড়ালে থাকা মানুষকে দেখে পচ্ছন্দ অপচ্ছন্দের ব্যপারটা কিভাবে কেউ বোঝে? তবে মা বুঝেছিলো। মা আমায় ওইভাবে দেখেই পচ্ছন্দ করেছিলো। তারপর আমার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে আমার মা নেই। হয়তো মা’র খুব মায়া হয়েছিলো আমার জন্য।
তাই আর দেরি না করে এক শুক্রবারে তাহির আর হুজাফাকে নিয়ে মা আমাদের বাসায় আসে। বাবা তখন হুটহাট করে কি রেখে কি আয়োজন করবে সে নিয়ে দোটানায় পড়ে যায়। মা ওতো তাড়াহুড়ো না করে একটু ধীরে সুস্থে বসতে বলে৷ বাবা আমার রুমে এসে আমায় বলে যায় চা বানাতে৷ একজন মেয়ে হিসেবে এই কাজটাই শুধু আমি পারি৷ আমিও বাবার কথামতো চা রেডি করলাম। বাবা আমায় ডাকলে আমি সালাম দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করি। মা আর তাহির সালামের উত্তর নিয়ে আমায় বসতে বলে। কিছুক্ষণ পর হুজাফা আমার পিছন পিছন রুমে এসে আমায় বলে ওর ভাইয়ারও আমায় পচ্ছন্দ হয়েছে আর আজকেই বিয়ে হবে। বাবা তৎক্ষনাৎ আমার মামা মামি, চাচা চাচি-আম্মুদের বাসায় আসতে বলে। বাসার মহিলারা এসে রান্না-বান্নার সব আয়োজন করে। আর এদিকে তাহিরেরও কিছু ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের আসতে বলা হয় কাজীকে নিয়ে। খুব সাদামাটা ভাবে আমার আর তাহিরের বিয়েটা হয়।
রাতে আমায় বিদায় দেওয়ার সময় বাবা যে কতটা ভেঙ্গে পড়ে একজন বিবাহিত মেয়েই শুধু জানে সেই দিনটার কথা। বাবা ডুকরে কেঁদে ওঠে আমায় মা’র হাতে তুলে দেওয়ার সময়। বাবা সেদিন কাঁদতে কাঁদতে মা’কে শুধু একটা কথাই বলেছিলো, ‘বেয়াইন আমার এই মা মরা মেয়েটাকে কত কষ্ট করে যে এতো বড় করেছি আমিই শুধু জানি। আমার মেয়েটা খুব শান্ত প্রকৃতির ওকে আপনি হাজারটা কথা শোনালেও ও প্রতিত্তোর করবে না। ওকে একটু দেখে রাইখেন বেয়াইন বাবা আর কোনো কথা বলতে পারেনি। বাবার তখন দম আটকে গিয়েছিলো আমি শুনেছিলাম বাবার ভেতরে কষ্টের নিঃশ্বাস চলাচলের শব্দটা। আমি বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে কখন জ্ঞান হারিয়েছিলাম জানি না। যখন জ্ঞান ফেরে তখন আমি গাড়িতে মায়ের কাধে মাথা রেখে বসে আছি। আমার জ্ঞান ফেরামাত্র আবারো বাবা..বলে কেঁদে উঠি। মা তখন আমার চোখ মুছতে মুছতে বলেছিলো,
-আজ থেকে আমি তোমার মা, দেখো বাবার জন্য আর মন খারাপ করতেই দেবো না। অনেকদিনতো বাবার কাছে থাকলে এখন একটু মায়ের কাছে থাকো। আমি সেদিনই বুঝেছিলাম আমার শাশুড়ি শুধুই নামেই শাশুড়ি প্রকৃতপক্ষে সে আমার মা। হ্যা বিয়ের পর থেকেই খুঁজে পেয়েছিলাম আমার হারিয়ে যাওয়া সেই মা’কে।
মা হুজাফা আর আমাকে একটা দিনের জন্যও দু’চোখ করে দেখেনি। হুজাফাও আমার ছোটো বোনের চেয়ে কম না। হাসি, দুঃখ সবকিছু আমার সাথে ভাগ করে নিতো। একটা চকলেটও যদি স্কুলে গিয়ে কিনতো তবে সেটা আমার জন্য আনবেই। আর জামা-কাপড়, কসমেটিকসের কথা নাই বা বললাম। আমি কখনো একটা হেয়ার ব্যান্ডও বেজোড় কিনতাম না। সবকিছু এক জোড়া কিনতাম, তেমনি হুজাফাও আমার জন্য কিনতো। রোজ শুক্রবার করে আমি হুজাফার মাথায় তৈল দিয়ে দিতাম আর মা আমার মাথায়। জানি না মানুষ জীবনে কতটা ভালো কাজ করলে এমন ভালো মানুষগুলোর সান্নিধ্যে আসতে পারে। বাবা যখন আমায় দেখতে আসতো তখন মেয়ের প্রতি সবার এতো ভালোবাসা দেখে কত যে খুশি হতো তা বাবার চোখ মুখ দেখেই আমি আঁচ করতে পারতাম।
-ও বউমা নামো, এসে গেছিতো।
–ও হ্যা মা নামছি।
-কখন থেকে ডাকছি অন্যমনস্ক হয়ে গেছিলে যে? বাবার কথা মনে পড়েছে তাই না?
জানি না এই মানুষটা কিভাবে বোঝে আমার মনের ভাষা? আমিতো বাবার কথা মনে করেই মন খারাপ করেছিলাম। না বলাতেই মা আমার চোখ দেখে বুঝে নিলো। বাসায় ঢুকে ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে ঢুকতেই দেখি মা বিরিয়ানি রান্না করার জন্য রান্নার প্রণালীগুলো গুছিয়ে নিচ্ছে। হুজাফা, তাহির আর আমার আমাদের তিনজনেরই বিরিয়ানি অনেক পচ্ছন্দের। প্রতি শুক্রবারে যেভাবেই হোক মা সময় বের করে বিরিয়ানি রান্না করবেই। আজকের আকাশটাও বেশ মেঘাচ্ছন্ন যেকোনো সময় বৃষ্টি নামতে পারে। হুজাফা সেই কখন থেকে আমার দুই হাত ভরতি করে মেহেদী পড়িয়ে দিচ্ছে। আমিতো মাঝে মধ্যে বলেই উঠছি,
-কিরে পাকনা বুড়ি তোর ভাবীর-ভাইয়ার আজকেও আবার বিয়ে দিবে নাকি?
–বাহ মন্দ হয় না, দাঁড়াও ভাইয়াকে ডাকিতো। ওকেও একটু মেহেদী পড়িয়ে দেই। আমি হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছি হুজাফার কথা শুনে। হঠাৎ হাসি বন্ধ করে বললাম,
-আচ্ছা বুড়ি একটা জিনিস খেয়াল করেছিস তোর ভাইয়া রিক্সা থেকে নেমে বললো আমাদের বাসার ভেতর ঢুকতে। ওর নাকি বাইরে একটু কাজ আছে সেটা শেষ করেই ফিরবে। রাত হয়ে যাচ্ছেতো এখনো ফিরছে না কেন বলতো?
–ঠিকইতো বলেছো ভাবী, ভাইয়া এখনো আসছে না কেন? একটা কল দাও দেখো কোথায় গেলো? ছুটির দিন কিসের কি একটু আমাদের সাথে রাতে বসে গল্প করবে তা না ওর কাজ লেগেই থাকে হু। আসুক আজকে আম্মুকে দিয়ে যদি বকা না শোনাইছি ওরে।
আমি তাহিরকে কল দিলাম বার বার কিন্তু ও ফোনটা কেন কেটে দিচ্ছে? চিন্তাও হচ্ছে খুব। নাহ আর বসে থাকতে পারলাম না। হুজাফার কাছ থেকে হাতদুটো ছাড়িয়ে রান্নাঘরে গেলাম মা’কে বলতে। মা বললো, ‘দেখো হয়তো কোনো কাজে আটকে গেছে তাই দেরি হচ্ছে ফিরতে। আর একটু অপেক্ষা করো ঠিক চলে আসবে।’ বুঝলাম না মার চোখে মুখে তাহিরের জন্য কোনো চিন্তার ছাঁপ নেই। অথচ এই কাজটা অন্য কোনোদিন হলে এতক্ষণে মা চিন্তায় অস্থির হয়ে যেতো। আমি ভাবতে ভাবতে হুজাফার কাছে যেতেই কলিং বেলটা বেজে উঠলো। আমার দুইহাত ভরতি মেহেদী তাই হুজাফাকে ডাকলাম দরজাটা খোলার জন্য। হুজাফা দরজা খোলা মাত্রই দেখলাম তাহির দাঁড়িয়ে আছে। আমি তাহিরকে প্রশ্ন করতে যাবো কোথায় ছিলে এতক্ষণ তখনিই তাহির একটু সাইডে দাঁড়ালো দেখলাম পিছনে আমার বাবা দাঁড়িয়ে আছে। আমার খুশি দেখে কে? এক দৌঁড়ে বাবার কাছে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলাম। ওপাশ থেকে তাহির বলে উঠলো,
-উহু কি করছো বাবার পাঞ্জাবিতে এখন মেহেদী লাগাইবা নাকি? সবাই হেসে উঠলো। মা’র হাসির শব্দ পেয়ে পিছন ঘুড়ে দেখলাম মা দাঁড়িয়ে আছে। মা আমার বাবাকে প্রশ্ন করলো,
-আসতে কোনো সমস্যা হয়নিতো বেয়াই? আমি অবাক হয়ে মার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়লাম,
-মা তারমানে তুমিও তোমার ছেলের মতো জানতে যে আজকে বাবা আসবে?
–হ্যা তাহির আমায় বলে রেখেছিলো বেয়াই আসবেন আজ।
আর আমরা দুজন এটা তোমার কাছে গোপন রেখেছিলাম চমকে দেবো বলে। হুজাফাকে বলিনি ওতো তোমার বান্ধবী কখন জানি আবার বলে দেই তার জন্যই। আবারো সবাই হেসে উঠলাম। বাবাকে নিয়ে তাহির ভেতর রুমে প্রবেশ করলো। আমি বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে মেহেদী রাঙ্গানো হাতগুলো পরিস্কার করছিলাম। হুজাফা বার বার ডেকে যাচ্ছে,
-কইগো ভাবি তুমি? আসো তাড়াতাড়ি খুদা লাগছেতো নাকি? সবাই অপেক্ষা করছিতো।
–হ্যা রে বুড়ি আসছি আমি। পিছন ঘুরতেই দেখলাম তাহির দাঁড়িয়ে আছে।
-এইভাবে কেউ দাঁড়িয়ে থাকে? আর একটু হলেইতো ভয় পাচ্ছিলাম।
–প্রিয়তমা স্ত্রী, আপনি কি এখন খেতে আসবেন নাকি আরো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো? পেটে ইঁদুর দৌঁড়াচ্ছেতো।
–জ্বি প্রিয় চলুন।
রাতে বাবা আর তাহিরের জন্য বিছানা করে দিচ্ছিলাম। বাবা আমায় সামনে বসিয়ে আমার মেহেদী রাঙ্গানো হাতদুটো দেখে বললো,
-আমিতো একটু সুখ প্রার্থনা করেছিলাম আমার মেয়েটার জন্য। বুঝিনি আল্লাহ তায়ালা আমার মেয়ের জীবনের কানায় কানায় সুখ ভরিয়ে পূর্ণ করে দেবেন।
–তোমার দোয়া সাথে ছিলোগো বাবা, তাই সৃষ্টিকর্তা এত সুখ লিখেছিলেন আমার কপালে। তাহিরের মতো স্বামী আর নিজের মায়ের মতো শাশুড়ি কয়জন মেয়ে পায় বলো বাবা? হয়েছে হয়েছে অনেক বলেছেন এখন যান রুমে আপনার বুড়িটা মাথা খেলো ‘ভাবীকে পাঠাও, ভাবীকে পাঠাও’ বলে। তাহিরের কথা শুনে বাবা হেসে উঠলো। আমিও হাসতে হাসতে রুম থেকে বের হয়ে আসলাম।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে আমি চুল বিনুনি করছিলাম। হুজাফা শুয়ে শুয়ে এতক্ষণ মনোযোগ দিয়ে আমায়
দেখছিলো। আজকে আমরা তিনজন এক বিছানায় ঘুমাবো। তাহিরতো বাবার সাথেই ঘুমিয়েছে। আমি, হুজাফা বিছানায় শুয়ে মার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। ততোক্ষণে হুজাফা আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলছে, ‘তোমার আম্মুর কথা মনে পড়লে তুমি কি করো ভাবী? আমি তোমায় কষ্ট দিতে বলছি না, আমিওতো তোমাদের ছেড়ে আম্মুকে ছেড়ে কোনো একদিন চলে যাবো তাই বললাম।’ আমার গলাটা একটু ভারী হয়ে এলো। বললাম, ‘আগে মনে পড়লে আম্মুর ছবি দেখে কাঁদতাম, আর এখন মনে পড়লে মা’কে দেখি তাই আর কষ্ট হয় নারে। জানিসতো বুড়ি কোথায় যেন পড়েছিলাম, মাঝে মাঝে আত্মার সম্পর্কও রক্তের সম্পর্ককে অতিক্রম করে যায়।’ তোর ভাইয়া, মা আর তুই তোদের সাথে আমার আত্মার বন্ধন। যেটাতে রক্তের কোনো চিহ্ন না থাকলেও আত্মার টান টা গভীর ছুঁয়ে রয়েছে।
কথাটা শেষ করতেই খেয়াল করলাম মা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। চোখের মধ্যে তার শত অশ্রুর চলাচল। আমার কাছে এসে বসতেই আমি মা’কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলাম। হুজাফা পাগলিটাও কি যেন মনে করে আমাকে আর মা’কে দুইহাত দিয়ে ঝাপটে ধরে কাঁদছে। এই দৃশ্যটা নিঃসন্দেহে পৃথিবীর সকল সুন্দর দৃশ্যের মধ্যে একটা। যেখানে একজন মা জননী তার দুই প্রান্তের দুই সন্তানকে বুকের মধ্যে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিয়ে আছে। যা দেখে বোঝার উপায় নেই কে রক্তের আর কে রক্তের বাইরের।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত