সারপ্রাইজড

সারপ্রাইজড
গত কিছুদিন আগে আমার স্ত্রীর বার্থডে ছিলো। আমার খুব শখ হয়েছিল ওর জন্যে ফুল আনতে। কিন্তু ভয়ে ফুল আনিনি। গত বছর বার্থডে তে ফুল এনেছিলাম বলে খুবই রাগ করেছিলো। ওর কথা তুমি এসব ফুল এনে টাকা কেন নষ্ট করো। গাছের ফুল গাছেই মানায়। ছেড়া ফুল দেখতে আমার খুব কষ্ট লাগে।
–আমি ওর ফুলের প্রতি আবেগ দেখে মনে মনে একটু দুঃখ করছিলাম বেচারা ফুলের ভাগ্যটাই ভালো।
আর আমার!! তারপরও বললাম, এত কষ্ট করে যখন এনেছি হাতে তো নাও “শুভ জন্মদিন “। কি বলো এসব তুমি কি জন্মদিন উইশ করো। আমি কি বাচ্ছা নাকি! আর এগুলো বললে আমার লজ্জা লাগে একথা বলে দৌড় দিলো।
–শোন মীরা!! তোমার জন্মদিনটা আমার জন্যে অনেক আনন্দের তুমি এই দিনে পৃথিবীতে না এলে আমার বউ হয়তো অন্য কেউ হতো।
–তাই ভালোবেসে দিলাম। ঢং করোনা কাব্য আমি একদম খুশি হইনি। তাহলে ফুলগুলো কি ফেলে দিবো!!
–এনেই যখন ফেলেছো ড্রেসিং টেবিলে রাখো ফেলতে হবেনা। মীরা আমাকে আর কোন আয়োজন করতে দিলো না। ওর কথা টাকা নষ্ট এগুলোতে নাকি! তো এবারের বার্থডে তে মীরাকে আর কিছুই দিইনি। আবার দিইনি বললেও ভুল হবে।
–একটা কালো পাড়ের লাল একটা শাড়ি এনেছিলাম তবে লুকিয়ে আলমারিতে কাপড়ের ভাঁজে রেখে দিয়েছিলাম।
–অন্য দিনের মত স্বাভাবিক অফিস করে বাসায় ফিরলাম।
–আমার কোন উৎসাহ না দেখে মীরারও একটু মন খারাপ হয়েছিল। কিন্তু মুখে হাসি রেখেই কথা বলছে।
–কাব্য একটা কথা বলবো ভাবছিলাম অনেকদিন। বলো কি বলবে? আমি!!
–বলো নাহ্ মানে তুমি এবার আমার জন্যে ফুল আনো নি কেন? বারেহ্ তুমি না বলতে ফুলের জন্যে তোমার মায়া হয় তাই আমি আর তাহলে তো অন্য কিছু আনতে পারতে কাব্য? তুমি বলছো, মীরা বিশ্বাস হচ্ছেনা! আচ্ছা বাদ দাও এমনিই বললাম কি এমন আর জন্মদিনই তো।
–ওর এই আপত্তি দেখে মনে মনে মজা পাচ্ছিলাম।
–ওর বার্থডের নয় দিনের মাথায় পহেলা ফাল্গুন আসে। আমি এবারও এই দিনের কোন উৎসাহ দেখালাম না।
আর আমার বউ তো চাপা স্বভাবের সে ও যে কিছু বলবেনা আমি জানি। আমি অফিস থেকে ফিরতেই দরজা খুলে মীরা বলল, কিছু কি এনেছো? কি আনবো? বাজার সদাই কিছু! আমি তো জানি সব কিছুই বাসায় আছে। মীরা বলল, দেখোনা কি বলতে কি বললাম! মীরার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। জানো মীরা গতকাল পহেলা ফাল্গুনে রাফি, সাজিদ, মাহিন সবাই বউদের নিয়ে ঘুরতে গিয়ে বেশ মজা করেছে। তুমি তো ওসব পছন্দ করোনা না হলে তোমাকেও ঘুরতে নিতাম। কাব্য আমি বাইরে যেতে পছন্দ করিনা কিন্তু তুমি তো অন্তত একটা কি বলো? কিছুনা। আমি অফিস থেকে ফেরার পর সেদিনও ঐ শাড়িটার সাথে ম্যাচ করে খুঁজে খুঁজে সব গহনা আনলাম এমনকি নেইল পলিশটাও।
–আর লুকিয়ে রাখলাম ঐ শাড়িটার সাথে।
–আমি বুঝতে পেরেছি মহারানী রাগ করেছেন। রাতে শুতে গেলাম কোন কথাই বলল না। আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম। সকাল হলো রেডি হয়ে অফিসে আসবো এমন সময় মীরা সামনে এসে দাড়ালো। কিছু বলবে?
–আজ তো ভালোবাসা দিবস! হুম।
–একটু তাড়াতাড়ি ফিরে এসো। বিশেষ কিছু আছে নাকি মীরা? এসো তখনই বলবো।
–আমি অফিস শেষে বাসায় আসলাম। খুব স্বাভাবিক প্রতিদিনের মতো আজও বিশেষ কিছুই দেখলাম না।
–মীরা খেতে বলল, আমি খাইনি। ও ভেবেছে আমি কোন কারনে রাগ করেছি তাই মীরাও খায়নি। প্রায় দশটার দিকে দু’জনে শুয়ে পড়লাম। মীরা এপাশ ওপাশ করছে। আমি ঘুমের ভান করে শুয়ে আছি মীরা ডাকছে। কাব্য ঘুমিয়ে পড়লে! আমি গভীর ঘুমে এমন ভান করলাম। মীরা পুরোপুরি শিওর আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে শোয়া থেকে উঠলো।
–রান্নাঘরে কি টুংটাং শব্দ বোঝাই যাচ্ছে কিছু একটা করছে। তারপর অনেকক্ষণ কোন শব্দ নেই। প্রায় বারোটার কাছাকাছি আবারও শব্দ শুনতে পেলাম তবে এবারের শব্দ ডাইনিং টেবিলে। আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। অন্যপাশ হয়ে আবার শুয়ে পড়লাম। কাব্য!”এই কাব্য!! ওঠো দেখো না। কি হয়েছে এই মাঝ রাতে বলে তাকাতেই আমি অবাক। সেই শাড়ি, গহনা, নেইলপলিশও পরে দাড়িয়ে । অবাক হয়ে বললাম, মীরা তুমি সব জানতে!! হ্যাঁ কিন্তু না বোঝার ভান করে থাকতাম। তোমাকে আশ্চর্য রকমের সুন্দর লাগছে। হয়েছে হয়েছে এবার উঠ তো। কই যাবো? টেবিলে এসো। কেনো এই রাতে টেবিলে?
–আজ যে আমরা খাইনি ভুলে গেছো! নাহ্ এতক্ষণ মনে ছিলো এখন তোমায় দেখে ভুলে গেছি।
–হুম হয়েছে উঠো তো। আমি টেবিলের পাশে যেতেই অবাক সব আমার পছন্দের খাবার এত কিছু কখন করলে? দুই ঘন্টা কম সময় এর মধ্যেই করেছি। আমরা দুজনে খাওয়া শেষ করে রুমে আসলাম। কাব্য একটা কথা বলতে চাচ্ছিলাম। কি বলো মীরা আমি না আমাদের না কি বলো?
–আমাদের না বেবি আসবে।
–কি বলছো মীরা এত খুশির খবর এতদিন বলো নি কেন?
–আমি একটা বিশেষ দিনের অপেক্ষায় ছিলাম। আজ “ভালোবাসা দিবস” তাই বিশেষ খবর দিলাম।
–তুমি না এসব দিবস পছন্দ করো না মীরা। করি না তো। ভাবলাম,আজকের বিশেষ দিনটা আমি না একান্তভাবে
নতুন করে শুরু করি।
–আমার যা খুশি লাগছে না মীরা। দাড়াও তোমার জন্যে একটা জিনিস এনেছি।
–চোখ বন্ধ করো তুমি। কেন কাব্য! করো বন্ধ। এরপর আমি ওর হাতে একটা হার্ট আকারের মাটির ব্যাংক ও ইসলামিক একটা বই দিলাম।
–মীরা চোখ খুলে অবাক এগুলো কেন হঠাৎ।
–তুমি না সঞ্চয় করার কথা বল! ব্যাংকে যখন যা পারো টাকা জমিয়ে রেখো সামনেই তো কাজে লাগবে।
–আর এই ইসলামিক বই কেন হঠাৎ?
–এখন এসব বই বেশি পড়বে আমল করবে সন্তানের জন্য ও আমাদের জন্য ভালো হবে।
–তুমি কি আগে থেকেই কিছু জানতে কাব্য!
সিক্রেট বলা যাবেনা। আই এম সারপ্রাইজড কাব্য। আমিও কিন্তু সারপ্রাউইজড হয়েছিলাম মীরা। তো কিচ্ছুনা এরপর বাকি রাত গল্প করে কাটালাম। ফজরের আযান শুনে মীরা আর আমি একসাথে নামাজ পড়লাম। মীরা বলল,সারারাত তো গল্প করেছো এবার একটু ঘুমাও। সকালে অফিস তো করতে হবে নাকি!!
বি:দ্র:ভালোবাসার সম্পর্কগুলো লোক দেখানো না হয়ে একান্ত নিজেদের হোক। আর যেখানেই বিশ্বাস লোকে দেখবে, কিন্তু ভরসা থাকবে একান্তই নিজের। ভালো থাকুক, পবিত্র ভালোবাসারা। আর ভালো রাখুন প্রিয় মানুষদের স্বপ্নের সত্যতায়।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত