আমার দ্বিতীয় বাচ্চা

আমার দ্বিতীয় বাচ্চা

আমার প্রথম বাচ্চা হওয়ার পর তার কানে আজান দেয় আমার শ্বশুর বিষয়টা খুব ইন্টারেস্টিং লেগেছিল দ্বিতীয় বাচ্চা হওয়ার আগে আগে ঠিক করলাম এবার আমি দিব হুজুরের কাছে শিখলাম পুরাটা আমি খুব এক্সাইটেড

বউকে ওটিতে ঢুকানো হলো ভোরের দিকে আমি দৌড়ে বাথরুম থেকে অজু করে এসে ওটির সামনে হাঁটছি আর বিড়বিড় করে আজান প্র্যাকটিস করছি এর মধ্যেই আমার বাবা মা শ্বশুর শাশুড়ি সবাই এসে পড়ল হাসপাতালে শ্বশুর আমার কাছে এসে বললেন, “তাড়াহুড়ায় আসতে যেয়ে টুপি আনতে ভুলে গেছি তোমার কাছে টুপি আছে বাবা?” আমি স্ট্রেইট মিথ্যা কথা বললাম, ‘না টুপি নাই’ যদিও আমি পকেটে টুপি নিয়ে ঘুরছি উনি ব্যস্ত হয়ে টুপি জোগাড় করতে হাঁটা দিল

একটু পরে নার্স এসে জানালো আমার বাচ্চা হয়েছে আমি খুশিতে বিড়বিড় করে আবার আজান প্র্যাকটিস করে নিলাম নার্স জানালো এখন বাচ্চাকে একটা কাঁচের রুমে অন্য বাচ্চাদের সাথে রাখা হবে জানালা দিয়ে দেখতে পারবেন কিন্তু কাছে যেতে পারবেন না আমি চান্স খুঁজছি কোন ফাঁকে কাঁচের রুমে ঢুকে আজানটা দিয়ে আসব রুমের গার্ড প্রচণ্ড কড়া কিছুক্ষনের মধ্যেই সেই রুমের গার্ডকে ২০০ টাকা দিয়ে সাইজও করে ফেললাম আমি যেই ঢুকতে যাব রুমে, দেখি শ্বশুর টুপি পরে হন্তদন্ত হয়ে এদিকে আসছে

আমি গার্ডকে ফিসফিস করে বললাম, ‘টাকা বাড়ায়ে দিবো এখন আমাদের কাউকে ঢুকতে দিও না’ গার্ড আমার শ্বশুর আব্বাকে কড়া ধমক দিলেন এর মধ্যেই খবর আসলো, ওটি থেকে ভিতরের দরজা দিয়ে এখন কেবিনে কন্যার মাকে নেয়া হবে আর বাচ্চা এই নার্সারিতেই থাকবে পরে পাব আমি শ্বশুরকে বললাম ‘আপনি এখানে না থেকে তাড়াতাড়ি রুমে জান’ উনি হন্তদন্ত হয়ে রুমে গেলেন আমি গার্ডের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘চলেন ঢুকি’ ঢুকে মনে হলো স্বর্গে এসে গেছি আমার পা আর চলছে না তারপরেও পা টিপে টিপে মেয়ের কানের কাছে যেয়ে চোখ বন্ধ করে আজান দিলাম সে এক চমৎকার মুহূর্ত আজান দেয়া শেষ করে বিজয়ের বেশে রুমে ফিরে এসে দেখি আমার বউয়ের কোলে বাচ্চা দুধ খাচ্ছে আমি বললাম, ‘এটা কে?’

শ্বশুর মাথা থেকে টুপি খুলতে খুলতে বলল, “বাবা তোমার টুপি লাগলে বলো, আমার টুপির কাজ শেষ” আমার এই গোপন পরাজয় আজ পর্যন্ত কেউ জানে না না অবশ্য সেই গার্ডটা জানে কারণ একটু পরে যখন তার সাথে দেখা হয়েছে, সে আমাকে বলছে “বস আপনার নামে কমপ্লেইন গেছে ম্যানেজমেন্টে আপনি নাকি কোন লোকের বাচ্চার কানে যায়ে বিড়বিড় করে কি বলে এসেছে। তার পিতামাতা সেটা জানালা দিয়ে দেখেছে। আপনাকে তারা খুঁজছে… আপনি কুইক আত্মগোপনে জান ওই যে তারা আসতেসে” আমি সাথে সাথে পাশের বেঞ্চে টুপি মুখের উপরে ধরে ঘুমের ভান করে মাথা এলিয়ে বসে পড়লাম

এভাবে টানা ৪ ঘণ্টা ছিলাম আশেপাশে কথা বার্তা সব শুনছি; আমার আম্মাকে বলতে শুনলাম ‘ছেলেটা একটু বাসায় যেয়ে ঘুমাক’ সেই ভদ্রলোক গার্ডকে জিজ্ঞেস করছে ‘শিশু পাচারকারিটাকে পেয়েছেন? আশ্চর্য গেলো কই?’ শ্বশুর বলছে ‘আজানের টাইম হয়ে গেলো জামাইয়ের মুখের উপরের টুপিটা নিয়ে নামাজে যাই’ শাশুড়ি বলছে, ‘আহ ছেলেটার চোখে রোদ লাগবে এভাবেই ঘুমাচ্ছে ঘুমাক তুমি যাও’ আমি টুপির কোণা দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে মটকার মতো পড়ে রইলাম আশেপাশে কথা বার্তা সব শুনছি

টানা ৪ ঘন্টা পর আশেপাশে সাড়াশব্দ নেই দেখে আস্তে করে মুখের টুপি সরিয়ে দেখি আমার সামনে সেই ভদ্রলোক বসে আছেন আমি ভাবছি দৌড় দিবো কি দিবো না উনি বললেন, “থ্যাংক ইউ ভাই” আমার মনে হলো রাজ্যের ঘুম আমার চোখে এসে নেমেছে আমি সাথে সাথে খুশিতে ঘুমিয়ে গেলাম সেই বেঞ্চেই আজ আমার সেই মেয়ের জন্মদিন আজকে বিকালে যে কয়েকজনকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে সেই মেয়েটিসহ তার পরিবারও আছে যার কানে আমি ভুল করে আজান দিয়েছিলাম লাইফটা ভয়ংকর রকমের সুন্দর না?

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত