এ আমার শহর। এ শহর প্রেমের শহর। এ শহরের প্রেমগুলো একটু অন্যরকম। খুব সুন্দর, মায়াময়, একটু বেশি আবেগী। এ শহরে সকলে ভালোবাসে-প্রেম করে। ব্যাস্ত রাস্তায় প্রেমিক প্রেমিকার হাত ধরে রাস্তা পার হয়। দুজনেই একেঅপরের উপর সতর্ক। এক মূহুর্তের জন্যও কেউ হাত ছাড়ে না। এ যেন স্বর্গীয় দৃশ্য।
পার্কের কোণে কিংবা কোন বট গাছের নিচে বসে তারা দুটো দুটো করে বাদাম মুখে ভরে চাবায়। একজন বাদামের খোসা ছাড়িয়ে খাইয়ে দেয়। সন্ধ্যা নেমে আসে। চলে যায় প্রেমিকা। প্রেমিক চিন্তিত মনে প্রেমিককে ফোন দিতে থাকে যতোক্ষণ না সে নিরাপদে বাসায় পৌঁছেছে। কেউ আবার বাসায় পৌঁছে দেয়। ফিরে পায় স্বস্তি। এ শহরের সন্ধ্যাবেলার প্রেমে কোন অভিযোগ নেই! শহরের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য বুঝি প্রেমিকাকে নিয়ে রিক্সা ভ্রমণ। শীতের মৌসুমে হালাকা ঠান্ডা বাতাস বইলে প্রেমিক রিক্সার হুড তুলে। গেরুয়া রঙের চাদরটা প্রেমিকার গায়ে জড়িয়ে দেওয়া কিংবা হাত দুটো নিজের দুহাতে পুরে উম দেওয়ার চেষ্টা। আবার গ্রীষ্মের মৌসুমে প্রেমিকা প্রেমিকের মাথায় ছাতা মেলে দেয়। প্রেমিকের মাঝে যেন প্রেমিকার অস্তিত্ব!
প্রেমিকা বটগাছটার নিচে অপেক্ষা করে প্রেমিকের জন্য। প্রেমিক রোদে পুড়ে হাপাতে হাপাতে প্রেমিকার সামনে হাজির হয়। প্রেমিকা বেশি না ছোট্ট একটু অভিমান করলে। প্রেমিক কান ধরে। প্রেমিকা রাগ-অভিমান ভেঙ্গে সাইড ব্যাগ হাতরে টিস্যু বের করে। প্রেমিকের মুখের ঘামের সাথে জমে থাকা শহরের যতো ধুলো সরিয়ে দিয়ে ভবিষ্যৎ প্লানিং করতে ব্যাস্ত হয়ে পরে। খুনসুঁটি থেকে আহ্লাদ, ছোট ছোট বায়না, বড় বড় অভিমান, চোখের কোণে চিকচিক করতে থাকা অনুভূতি নিয়ে প্রেম নামে এই শহরে
জন্ত্রমন্ত্রের কথা বলতে বলতে ফোনটা কানের নিচে রেখে ঘুমিয়ে যায় প্রেমিকা। প্রেমিক অনুভব করে ঘুমন্ত প্রেমিকার প্রত্যেকটি নিশ্বাস। যতোক্ষণ না ফোন ব্যালেন্স শেষ হয় ততোক্ষণ প্রেমিক থাকে অন্য একটা ঘোরে। মাথায় ঘুরে হারানোর ভয়। শহরের প্রেমগুলো অনেক রঙ্গিন আর অনেক অদ্ভুত। ছোট ছোট মূহুর্তগুলো জন্ম দেয় ছোট ছোট হলদে-নীল প্রেমের। সেই হলদে রাঙ্গা প্রেম ভরে দেয় কিশোরীর নোটবুক। শহরটা একটা নাট্যমঞ্চ আর এই নাট্যমঞ্চের সবচেয়ে সুন্দর নাটকটার নাম প্রেম।