সংসার বিড়ম্বনা

সংসার বিড়ম্বনা
মেয়েটি যখন রাত আড়াইটায় মেসেঞ্জারে ফোন দিলো, আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি তার পাশে একটি বাচ্চার কান্নার শব্দ। মেয়েটি তার বাচ্চার উদ্দেশ্যে বলছে, “কান্দিস না পুত, তোর বাপে আইবো।”
যদিও আমি জানি না, বাচ্চাটি কিসের জন্য কান্না করছে। ক্ষিধে পেয়েছে নাকি সত্যিই তার বাবার জন্য ওয়া ওয়া শব্দে তার আকুতির জানান দিচ্ছে। আমি মূলত রাতের এই সময়টাতে মুভি দেখি কিংবা উপন্যাসের পাতা উল্টাই। মেসেঞ্জারে ফোন পেয়ে রুমের বাইরে এসে রিসিভ করতেই বাচ্চার কান্না আর তার মায়ের শান্তনা দেয়ার ভাষা শুনতে পেলাম। আমি হ্যালো বলা থেকে বিরত থেকে পরিস্থিতী বুঝার চেষ্টা করছি। মেয়েটি হঠাৎ বুঝতে পারলো আমি ফোন রিসিভ করে অপেক্ষা করছি।
“আসসালামু আলাইকুম শ্রাবণ ভাই। বড় একটা বিপদে পড়ে আপনাকে ফোন দিলাম।”
আমি একটু শব্দ করেই সালামের জবাব দিলাম, যেন ঐ প্রান্ত থেকে মানুষটি শুনতে পায়। তারপর জানতে চাইলাম, “কিসের বিপদ?” মেয়েটি মনে হয় আমার প্রশ্ন করার অপেক্ষাতেই ছিল। সে জবাব দিলো, “ভাই আপনি আমার সংসারটা টিকিয়ে দেন। আমার সংসারটা ভেঙ্গে যাচ্ছে।” কিঞ্চিত ভয় আর কৌতূহল জন্ম নিলো মনের এক কোণে। আমি কী করে আরেকজনের সংসার টিকিয়ে দেব? মোবাইল কান থেকে নামিয়ে এক পলক আইডির নাম দেখে নিলাম। স্ক্রীনে ভাসছে, ‘হুমায়রা মীম’ এর নিচে মিনিট আর সেকেন্ড প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। আমি মোবাইল কানে নিয়ে প্রশ্ন করলাম, “দেখুন, আমি আপনার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না। আপনি আমাকে একটু বুঝিয়ে বলবেন?”
মেয়েটি বলল, “আমি খুব বিপদে আছি ভাই। আমার কোলে ঊনিশ দিনের বাচ্চা। আমার স্বামী ছয়দিন হয়ে গেল বাড়ি আসে না। আমার সংসারটা ভেঙ্গে যাচ্ছে ভাই। দয়া করে আমার সংসারটা বাঁচান। এবার আমার বেশ রাগ হলো। বিরক্তির চরমে পৌঁছে যাচ্ছি। এমন রাগ হলে নিজের মোবাইল আছাড় দিতে ইচ্ছে করে। ঐ মেয়ের স্বামী ছয় দিন বাড়িতে যায় না। এতে আমি কীভাবে সংসার টিকিয়ে দেব? এবার এই মধ্যি রাতে গলার স্বর চড়া করে বললাম, “ফাইজলামি পাইছেন? আপনার স্বামী বাড়ি যায় না। তো আমি কীভাবে আপনার সংসার টিকিয়ে দেব?” মেয়েটি এবার কেঁদেই দিলো। পাশে ওর বাচ্চার কান্নার শব্দ। এদিকে মেয়েটি নিজেও কান্না করে বলছে, “আমারে কেউ বুঝলো না। আমি কার কাছে যামু? কারে বুঝাই আমি?”
আমার বেশ মায়া হলো। আমি কারো কান্না সহ্য করতে পারি না। কেউ কান্না করলে আমার ইচ্ছে করে তার কাছ থেকে লুকিয়ে থাকি। নয়তো আমারও কান্না আসে ভিতর থেকে। আমি নরম স্বরে বললাম, “বোন না ভালো, তুমি না আমাকে ভাই ডাকছো? কান্না করো না। তুমি বলো আমাকে কী হয়েছে? আমি কীভাবে তোমার সংসার টিকাইতে পারি আমাকে বলো।”মেয়েটি তবুও আরো কিছুক্ষণ কাঁদলো। তারপর বলকে লাগলো, “ঊনিশ দিন হলো, সিজারে আমার ছেলে সন্তান হইছে। আমার স্বামী ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে আমার সন্তানের ছবি দেখিয়ে সাহায্য চেয়ে টাকা তুলেছে। যা আমার বা আমার বাচ্চার চিকিৎসার জন্য এক টাকাও খরচ হয়নি। সাহায্যের টাকা একসাথে পেয়ে কোথায় যেন চলে গেছে। ছয়দিন ধরে বাড়ি আসে না। আমার ফোনও রিসিভ করে না। তাই আপনার কাছে ফোন দিলাম, আমার স্বামীকে যদি বুঝিয়ে বলতেন আসার জন্য। তাহলে আমার সংসারটা টিকতো।”
আমি কিছু বলার আগে ভাবতে লাগলাম। এই কথাগুলোতেও অনেক প্রশ্ন তৈরী হয়েছে। বুঝা যাচ্ছে বিষয়টা এতোটা সহজও না। তার আগে আমার নিজেকে সহজ করে নিতে হবে। নিজেকে সামলে নিয়ে আমি প্রশ্ন করলাম, “তোমার স্বামীকে আমি পাব কোথায়? সে কি আমার পরিচিত? আর তোমার ফোন রিসিভ না করুক। তোমার আশে-পাশের কাউকে দিয়ে ফোন করাতে পারোনি? শ্বশুর শ্বাশুড়ী কোথায়?” হুমায়রা নামের মেয়েটি বলতে লাগলো, “আমার স্বামীকে আপনি চিনতেও পারেন। আপনার ফ্রেন্ডলিস্টে আছে। আইডির নাম ‘তানভীর আহমেদ’।” আমার স্বামী নিজেই আমাদের বিয়ের আগে আপনার আইডির নাম দেখিয়ে বলেছিল গল্প পড়তে। দেড় বছরের উপরে আমরা দু’জনই আপনার লিস্টে আছি। আমরা পালিয়ে কোর্টে বিয়ে করেছি। এখানে ভাড়া থাকি আমরা। আরো দুয়েকজনকে দিয়ে ফোন করিয়েছি। রিসিভ করে না।”
আমি একটা সিগারেট ধরিয়ে চিন্তা করতে লাগলাম। কাহিনীটা বেশ জটিল মনে হচ্ছে। রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি। মিসিরআলী স্যার হলে খুব সহজেই রহস্যের আধেকটা বের করে ফেলতে পারতেন। তবে মেয়েটির ভাষ্যমতে ছেলেটিকে ফটকাবাজ আর অকর্মা বলে মনে হচ্ছে। আমি পুরো ঘটনাটা শুনতে চাচ্ছি। তার আগে রুম থেকে ইয়ারফোনটা আনা জরুরী। আমি এক প্রকার দৌড়ে রুম থেকে ইয়ানফোন এনে কানে গুঁজে দিলাম। আর এদিকে ফ্রেন্ডলিস্টে ‘তানভীর আহমেদ’ নাম সার্চ দিলাম। এবং মেয়েটিকে বললাম, “তুমি পুরো বিস্তারিত আমাকে বলো। দেখি তোমার জন্য কী করতে পারি।”
মেয়েটি দীর্ঘশ্বাস নিতে নিতে আরেকবার তার বাচ্চাকে শান্ত করার জন্য বলল, “কান্দিস না পুত।” সিগারেটের আধেকটা শেষ। বাতির আলোতে ধোঁয়া উপরে উঠে যাচ্ছে। ইটাখোলার মতো ধোঁয়া উড়ছে। শুধু ইটভাটার অস্তিত্ব নেই। প্রতিটা ধূমপায়ীদের ভিতরটা ইটভাটার মতো। এখানে ইট পোঁড়ানো না হলেও দেহ পোঁড়ানো হয়। মেয়েটি বলতে শুরু করলো, “সবে এসএসসি পাশ করে সরকারী কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। তানভীর এর বাড়ি পাশের এলাকায়। কলেজ যাবার পথে একটি মেহগণি গাছের বাগান আছে। সেখানে তানভীর আর তার বন্ধুরা আড্ডা দিতো। স্কুল কলেজের মেয়েরা এই পথে যাতায়াত করে। তানভীর আর তার বন্ধুরা বখাটেদের মতো শীষ বাজায়। একে অন্যকে বলে, “এটা আমার ভালোবাসা, তোর ভাবী। এই মেয়েটাকে আমার পছন্দ।”
এসব বলতো আর মেয়েদের পিছু নিতো। কথা বলার চেষ্টা করতো মেয়েদের সাথে। আমার সাথেও এমনটি ঘটেছিল। আমি ভয়ে চুপসে যেতাম। তানভীরসহ তিন-চারজন আমার পেছন পেছন অনেকটা পথ এগিয়ে যেত। আমি কিছুই বলতাম না। তারা নিজেরাই একেকজনে একেক মন্তব্য করতো। তানভীর একেকদিন ফুল, চকলেট এগিয়ে দিতো আমার দিকে। আমি নেয়া তো দূরের কথা, পেছন ফিরেও তাকাতাম না। কিছুদিন পর তারা আর আমার পিছু নেয় না। হয়তো অন্য কোনো মেয়ের পেছনে লেগেছে। হাফ ছেড়ে বাঁচলাম ভেবে সস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারিনি। কয়েকটা দিন পর থেকে আবারো আমার পিছু নিলো। তবে এবার তানভীর একা। পেছন পেছন যেত আর বলতো, “প্লিজ, তোমার নামটা একটু বলো না। আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি। আর কেউ তোমাকে বিরক্ত করবে না।”আমি একদিন সাহস করে বলে ফেললাম, “আপনি তো এখনো আমাকে বিরক্ত করছেন।” ছেলেটি বলল, আমি তো ভালোবাসি তোমাকে। তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিও না। আমি আর কখনো অন্য মেয়েদের পিছনে যাব না। এই কান ধরে বললাম।”
তানভীর সত্যি সত্যি আমার সামনে এসে কান ধরলো। আমি ফিক করে হেসে দিলাম, তার কানধরা দেখে। আমার সাথে সেও হেসে দিলো। আমার সেই ক্ষণিকের হাসিটাই আজকের এই পরিণতির জন্য দায়ী শ্রাবণ ভাই।”
আমি মেয়েটির কাছে বিস্তারিত জানতে চেয়েছিলাম। এখন দেখি পুরো উপন্যাসই খুলে বসেছে। আরেকবার মোবাইল কান থেকে নামিয়ে দেখি চৌত্রিশ মিনিট অতিক্রম করেছে কথা বলার। আমি কথা সংক্ষিপ্ত করার জন্য অন্য প্রশ্ন করলাম। “তোমরা পালিয়ে বিয়ে করেছো কেন? আর তখন কি তোমার আঠারো বছর পূর্ণ হয়েছিল?”
মেয়েটি আবারো দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল, “কাঠবাগানের পাশে যারা আড্ডা দিতো, এই বখাটেদের আমাদের এলাকার সবাই চিনতো। তানভীর যেদিন বলল, আমার জন্য সে সব ছেড়ে দিবে। আড্ডায় পর্যন্ত জড়াবে না। একজন ভালো মানুষ হবে। তখন কেন যেন তাকে আমার ভালোবাসতে ইচ্ছে হলো।
আমার জন্য যদি একটি মানুষ ভালোর দিকে ফিরে আসে, মন্দ কী? অন্তত অন্য মেয়েরাও তো বিরক্তি থেকে বেঁচে যাবে। সত্যিই তার আকুতি, আমার পেছনে আঠার মতো ঘুর ঘুর করে লেগে থাকা তাকে ভালোবাসতে আমার মনকে বাধ্য করেছে। ভালোবেসেছি তাকে মন থেকে। কিন্তু বেশি দিন চাপা থাকলো না। এলাকার দুয়েকজন আমাকে তানভীরের সাথে দেখে ফেলল। বাবার কানে গেল, আমি বখাটে ছেলের সাথে ঘুরাফেরা করি। ব্যাস, বাবা উঠে পড়ে লাগলেন আমাকে বিয়ে দেয়ার জন্য। আর আমরাও পালিয়ে বিয়ে করে ফেললাম। আমার বয়স ছিল সতেরো। সতেরোকে আঠারো বানানোর কৌশল উকিল নিজেই করে দেয়। এটা বাংলাদেশ, টাকার কাছে কিছুই আটকে থাকে না।” আমি মনে মনে ভাবছি মেয়েটাকে বুদ্ধিমতি বলব না বোকা মেয়ে বলব। বুদ্ধিমতিই বলি। অনেক বুদ্ধি থাকলেও প্রেমে পড়লে তারা বোকার স্বর্গে বসবাস শুরু করে। আমি এবার মেয়েটির উদ্দেশ্যে বললাম, “এতোদিন পর্যন্ত বাসা ভাড়া নিয়েই থাকো?”
মেয়েটি উত্তর দিলো, “না। পালিয়ে বিয়ে করার পর আমার বাবা মা মেনে না নিলেও তানভীরের বাবা মা মেনে নেয়। কিন্তু তানভীর কোনো কাজকর্ম করতো না। তার বাবা মা অনেক বুঝিয়ে বলেছে, বিয়ে যখন করেই ফেলেছিস, সংসার তো করবি। কাজ কর্ম করে সংসার কর। কিন্তু তানভীর কোনো কাজ করতো না। আমাকে তার বাবা মা সরাসরি যৌতুকের কথা না বললেও অন্যভাবে ঘুরিয়ে বলতো, “বাবার বাড়ি থেকে কিছু টাকা এনে দিলেও তো তানভীর কিছু একটা করে সংসার চালাতো।”যেখানে আমাদের বিয়েটাই বাবা মা মেনে নেয়নি, সেখানে টাকা চাইবো কেমন করে? অবশেষে ছয়মাস পর তানভীরের বাবা মা আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিলো। তানভীর আমাকে নিয়ে এই এলাকায় এসে ঘর ভাড়া নিলো। প্রথম কিছুদিন এটা সেটা ভালোই কাজকর্ম করেছে। আমিও নকশি কাঁথা সেলাই করতাম। কিন্তু আমার বাচ্চার ছবি দিয়ে, বাচ্চার অসুস্থতার কথা বলে ফেসবুকের মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলবে।
এমনটা আমি কখনো ভাবিনি। নিজেদেরকে সস্তা বানিয়ে ফেলল। তার উপর চারআনা পয়সাও আমাদের জন্য খরচ করেনি। টাকা নিয়ে আজ ছয়দিন ধরে উধাও। আমি এখন কোথায় যাব? শ্বশুর বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। নিজের বাবার বাড়িতে তো কখনো ঠাঁই হবে না। ঊনিশ দিনের বাচ্চা নিয়ে কোথায় যাব আমি? এখানেই থাকবো কতো দিন? আমার সংসারটা টিকিয়ে দেন ভাই। আমার স্বামীকে ফিরিয়ে আনেন।” সার্চ দিয়ে তানভীর আহমেদকে খুঁজে পেয়েছি। আমার ফ্রেন্ডলিস্টেই আছে। তাকে সালাম দিয়ে একটি মেসেজ করে রেখেছি। অনলাইনে নেই বুঝা যাচ্ছে। আমি মেয়েটির উদ্দেশ্যে বললাম, “বাবা মায়ের জন্য খারাপ লাগে না? তাদের দোয়া দরকার ছিল না? তাদের কষ্ট দেয়াটা ঠিক হয়েছে?”
মেয়েটি হো হো করে কেঁদে দিলো। কান্নারত অবস্থাতেই বলল, “প্রেম মানুষকে অন্ধ করে দেয়। ভালো-মন্দ বুঝার উপায় থাকে না। বাবা-মা ক্ষমা না করলে কোনোদিন সুখী হবো না আমি। এবার যদি তানভীর ফিরে আসে, আমি আমাদের বাড়ি গিয়ে বাবা-মায়ের পায়ে ধরে বসে থাকবো। অন্তত আমার মাসুম বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে আমাকে মাফ করে দিবে। আমার যেমন ছেলে, আমার বাবারও তো নাতি। তাদের দোয়া অনেক দরকার আমার।” আমি বললাম, “তানভীরকে আমি মেসেজ করে রেখেছি। সে রিপ্লে দিলে তার সাথে আমি কথা বলবো। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো যেন সে বাড়ি ফিরে আসে।” মেয়েটির বাচ্চা এখনো কেঁদেই চলেছে। শান্ত হবার নামই নেই। আমি মেয়েটির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ফোন রেখে দিলাম।
পরেরদিন সন্ধ্যারাতে বিছানায় শুয়ে বই পড়ছিলাম। সবে মাত্র উপন্যাসটা শুরু করেছি। ফেসবুকে দুয়েকজন পোস্ট দিয়েছিল, “হুমায়ূন স্যারের ‘অপেক্ষা’ বইটি যতবার পড়ি ততো বার কাঁদি “আমার চোখ থেকে অনেকদিন কোনো বৃষ্টি ঝরে না। একটু কাঁদার লোভ সামলাতে না পেরে বইটি পড়া শুরু করেছি। মেসেজের টুংটাং শব্দে কারো উপস্থিতী জানান দিলো। তানভীর আহমেদ আমার মেসেজের রিপ্লে দিয়ে লিখেছে, “ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আমার কী সৌভাগ্য, শ্রাবণ ভাই আমাকে মেসেজ দিয়েছে।” মনে মনে ভাবলাম, “বেটা, বউ বাচ্চা রেখে পালিয়ে বেড়াচ্ছিস সেটা কোন ভাগ্য তোর?” মনের কথা চেপে মেসেজের রিপ্লেতে পর্যায়ক্রমে তার স্ত্রী সন্তানের কথা বললাম। তানভীর ভাবতে পারেনি তার স্ত্রী আমাকে মেসেজ করে তার কথা বলবে। ছেলেটি মেসেজ দিলো, ” ভাই আমি আপনাকে ফোন দিতে পারি?” আমি সম্মতি প্রদান করলাম। তানভীর ফোনে তার পালিয়ে বেড়ানোর কথা জানাচ্ছে।
“ভাই আমি ফেসবুকে আমার বাচ্চার ছবি দিয়ে কোনো টাকা তুলিনি। ফেসবুকে একটা গ্রুপে পোস্ট দেখেছিলাম। একটা বাচ্চার ছবি দিয়ে লেখা, ‘বাচ্চাটির চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার দরকার। একেকটি শেয়ারে বাচ্চাটির চিকিৎসার জন্য দশ টাকা জমা হবে।’ আমি ভাই আমার টাইমলাইনে সেই পোস্ট শেয়ার দিয়েছিলাম। আমার এক বন্ধু হুমায়রাকে মেসেজ করে বলেছে আমি ফেসবুকে বাচ্চার ছবি দিয়ে টাকা তুলছি। রাগে আমি সেই বন্ধুর সাথে মারামারি করেছি। এক পর্যায় কাঠের টুকরো দিয়ে সে আমার মাথায় আঘাত করে। মাথা ফেটে রক্তারক্তি অবস্থা। আমি এখনো হাসপাতালে ভাই। হুমায়রা কিছুই জানে না। কালই আমি বাসায় যাব। বিশ্বাস না হলে আমি এখনি ছবি তুলে আপনাকে দিচ্ছি।” কিছু কিছু মানুষ ফেসবুকটাকে কলংকিত করে ফেলেছে। আর মানুষ কোনো কিছু যাচাই না করেই যেকোনো পোস্ট শেয়ার দিতে থাকে। কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা, জানার চেষ্টা করে না।
ফোন রাখার কিছুক্ষণের মধ্যেই তানভীর তার ছবি পাঠালো। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে ছেলেটি। মাথায় সাদা ব্যান্ডেজ করা। যাক, মেয়েটাকে এখনি কোনো মেসেজ দেয়ার প্রয়োজন নেই। কাল তানভীর বাড়িতে গেলে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমি আবার বই পড়ায় মনোযোগ দিলাম। চব্বিশতম পৃষ্ঠার শুরুতে লেখা, “ইদানিং ফিরোজের একটা সমস্যা হচ্ছে, রিকশায় চড়তে পারে না। রিকশায় চড়লেই মনে হয়, রিকশা কাত হয়ে পড়ে যাবে।” একটু মুচকি হাসলাম। ভাঙ্গা কোনো রাস্তা দিয়ে রিক্সায় চড়লে আমারও তেমনটা মনে হতো। তানভীরেরও কি এমন মনে হয়েছে কখনো? ছেলেটা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে। কালই হয়তো তার আর হুমায়রার ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটবে।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত