— “অনি আদ্রিয়ানরা আসছে আজকে প্লিজ এবার ওঠ। ওরা এক্ষুনি এসে পরবে।”
আপির বলা কথাটা শোনার সাথে সাথেই লাফিয়ে উঠে বসলাম আমি। শুক্রবারের সকাল। রাত তিনটে অবধি বায়োলজি প্রাকটিকেল করেছি ভাবলাম বেশ লম্বা সময় পর্যন্ত ঘুমাবো। সাইন্সের স্টুডেন্ট এমনিতে রোজ সেই ভোরবেলা সকালে উঠেই প্রাইভেটের জন্যে ছুটতে হয়। এরপর কলেজ তারপর আবার প্রাইভেট। সারাদিন চরম প্যারার মধ্যে কাটে।
সপ্তাহে এই একটা দিনি একটু রিল্যাক্স মুডে থাকা যায়। সেটাও আমার ওয়ান এন্ড অনলি আম্মুর জন্যে খুব একটা পসিবল হয়না। ঠিকই আপিকে বলে আমাকে আটটা থেকে ডাকাডাকি শুরু করে। কিন্তু আমার উঠতে উঠতে দশটা বাজে। ঘুম ভাঙা সত্যেও উল্টোদিকে ঘুরে শুয়ে রইলাম। আমিতো এখন উঠছিনা। যতো খুশি ডাকুক। হু কেয়ারস? কিন্তু আমার প্রাণপ্রিয় আপির জন্যে সেটা আর হলোনা। আপি হাত ধরে টেনে তুলে ডিরেক্ট বসিয়ে দিলো আমাকে। আমি একটা হাই তুলে চোখ পিটপিট করে আপির দিকে তাকিয়ে দেখি আপি হাত ভাজ করে ভ্রু কুচকে দাঁড়িয়ে আছে। আমি কোনরকম ভাঙা কন্ঠে বললাম,
— “কী হয়েছে আপি? এতো সকাল সকাল টেনে তুললে কেনো?” আপি বিরক্তি মিশ্রিত কন্ঠে বলল,
— “দশটা বাজে অনি আর তুই বলছিস সকাল?ময়নাপ্পি কখন থেকে বকছে।” আমি একটা ছোট্ট হাই তুলে বললাম,
— “আপি প্লিজ আর এক ঘন্টা।”
বলে আবারো শুয়ে পরতেই আপু সেই ভয়ংকর কথাটা বলল যেটা শুনে আমার ঘুম উড়ে গেলো। আমি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছি আপির দিকে। ঘুমের ঘোরে ভুল শুনেছি কী না সেটা সিউর হতে আবার জিজ্ঞেস করলাম,
— ” কী বললে? কারা আসছে?” আপি সেই আগের ভঙ্গিতেই বলল,
— ” আরে আদ্রিয়ানরা আসছে পুরো পরিবার মিলে।” আমি একটা শুকনো ঢোক গিলে উত্তেজিত কন্ঠে এক নিঃশ্বাসে বললাম,
— ” কেনো আসছে? কী দরকার? আসতে হবে কেনো হ্যাঁ? হোয়াই?” আপি আহম্মকের মতো তাকিয়ে রইলো আমার দিকে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে তারপর অবাক কন্ঠে বলল,
— ” আজব! মানিক আঙ্কেল তো প্রায়ই আসে। আর মানিক আঙ্কেলদের এই বাড়িতে আসতে কী দিন, সময় লাগে নাকি?” আমি আসাম করে বসে মুখ ফুলিয়ে বললাম,
— ” নাহ মানিক আঙ্কেল আসুক না। যতবার খুশি ততোবার আসুক। সারাদিন এখানেই থাকুক। কে বারণ করেছে? কিন্তু ওনার ঐ ছেলেকে নিয়ে আসার কী দরকার?” আপু ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” কী আবল তাবল বকছিস বলতো? আদ্রিয়ান সবে ইউ কে থেকে দেশে এসছে। লাস্ট এসছিলো তো আরো দুই বছর আগে। তোর ওকে নিয়ে এতো সমস্যা কীসের বলবি?” আমি আমার খোলা এলোমেলো চুলগুলো হালকা চুলকে বললাম,
— ” নাহ কিছুনা। তুমি যাও আমি ফ্রেশ হয়ে যাচ্ছি।”
আপি আমার দিকে তাকিয়ে একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে চলে গেলো। আপিকে আর কী বলবো? কীকরে বলবো যে কেনো ঐ আদ্রিয়ান আবরার জুহায়েরকে আমার এতো অসহ্য লাগে। এতো ইরিটেটিং ছেলে আমি আমার জীবণে দেখিনি। দুই বছর আগের এর করা কাহিনীগুলো মনে পরলে এখনো গায়ে কাটা দেয়।
মানিক আঙ্কেল আব্বুর ছোটবেলার বন্ধু। তবে ওনাদের কলেজ লাইফে পর থেকে মানিক আঙ্কেলরা চট্টগ্রাম থাকতেন। তিন বছর আগে ঢাকা এসছেন। তখন থেকেই ওনাদের চিনি আমি। আর আদ্রিয়ান ভাইয়ার সাথে দেখা হয়েছে ওনারা ঢাকায় আসার কয়েকমাস পর, আদ্রিয়ান ভাইয়ার বার্থ ডে এর দিন। অনুষ্ঠান সন্ধ্যার পর থাকলেও আমাদের সবাইকে দুপুর ওখানে খাওয়ার জন্যে করা নির্দেশ দিয়ে দিয়েছে মানিক আঙ্কেল। আমার এমনিতেই বিভিন্ন প্রোগ্রামে যেতে ভালো লাগে। কতো মানুষ, আনন্দ, মজা খুব বেশি ইনজয় করি আমি। তাছাড়া আঙ্কেল আন্টি, আদ্রিয়ান ভাইয়ার বোন জাবিন ওরাও খুব ভালোবাসে আমাকে। আপি আর আমি রেডি হচ্ছি আর আম্মুও তখন থেকে তাড়া দিচ্ছে। আপি আমার চুলটা সেট করে দিয়ে বলল,
— ” হয়ে গেছে চল তাড়াতাড়ি।”
আমিও আয়নায় একবার নিজেকে দেখে নিয়ে চলে গেলাম। আম্মু কিছুক্ষণ তার মহা মূল্যবান বাণী দিলো। আমিও দুই কানের পূর্ণ ব্যবহার করে ব্যাপারটা কানে নিলাম আবার ওপর পাশ দিয়ে বেড় ও করলাম । এরপর সবাই মানিক আঙ্কেলের বাড়িতে গিয়ে পৌছলাম। আমার মধ্যে একটা এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে, মানিক আঙ্কেলের ছেলেকে এখনো দেখিনি আমি। শুধু নামই শুনেছি। তো বাড়িতে ঢূকতেই মানিক আঙ্কেল আসলেন আমাদের এগিয়ে নিতে। আন্টি এসে আমাকে জরিয়ে ধরলেন। ওনারা বরাবরই আমাকে স্পেশালভাবে ট্রিট করে যার কারণটা আমার সত্যিই অজানা। ওনারা এসে আমাদের ভেতরে নিয়ে গেলেন। ভেতরে যেতেই জাবিন এসে আমাকে জরিয়ে ধরে বলল,
— ” কেমন আছো আপু?” আমিও মুচকি হেসে বললাম,
— ” ভালো তুমি?” জাবিনও মুখে সেই ভুবন ভোলানো হাসি দিয়ে বলল,
— ” হ্যাঁ আমিও খুব ভালো। এসো ভেতরে এসো”
আমরা সবাই ড্রয়িরুমে বসে আছি। আমি এদিক ওদিক দেখছি আর ভাবছি কোথায় আদ্রিয়ান ভাইয়া? আর কেউ ওনার কথা তুলছেও না? ধ্যাত ভালোলাগে না। আম্মু আর আন্টি কিচেনে আছেন। আব্বু আর মানিক আঙ্কেলও কোথায় জেনো গেছে। আপি আর জাবিন ফোনে শপিং এর একটা অ্যাপে ঢুকে কীসব দেখছে আর আমি বসে বসে বোর হচ্ছি।এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ জাবিন বলে উঠল,
— ” কী আপু কাউকে খুজছো?” আমি হকচকিয়ে বলল,
— ” ন্ না কাকে খুজবো?” জাবিন একটা মেকি হাসি দিয়ে বলল,
— ” আমাদের বাড়িটা তো আর তুমি দেখোনি এখোনো চাইলে ঘুরে দেখতে পারো।” আপিও বলল,
— ” হ্যাঁ অনি তোর বোর লাগলে গিয়ে ঘুরে আসতে পারিস।”
আমিও মাথা নেড়ে সিড়ি দিয়ে ওপরে গেলাম। করিডোর দিয়ে হাটছি আর প্রতিটা রুমের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে যাচ্ছি। সব রুমের দরজাই খোলা। হাটতে হাটতে একটা রুমের দরজা বন্ধ দেখে থেমে গেলাম। ভ্রু কুচকে ভাবলাম যে রুমের দরজাটা বন্ধ কেনো? আমি ছোটবেলা থেকেই বেশি কৌতুহলি, আর নিজের কৌতূহল না মেটা পর্যন্ত শান্তি পাই না। তাই কৌতুহলবশত এগিয়ে গিয়ে রুমের দরজাটা হাত দিয়ে হালকা ঠেলতেই খুলে গেলো। আমি ভেতরে গিয়ে অবাক হলাম এতো সুন্দর গোছানো কোনো রুম হয়? সেই মানুষটাকে দেখার আগ্রহ বেড়ে গেলো যে নিজের রুমটা এতো সুন্দর করে গুছিয়ে রাখলো। রুমের সব জিনিসগুলো হাত দিয়ে ছুয়ে ছুয়ে দেখছি।
দেয়ালে টানানো একটা বড় ছবিতে চোখ আটকে গেলো। একটা ছেলে এক হাটু গুটিয়ে সেই হাটুর ওপর হাত দিয়ে রাখা, মুখে একেবারে হালকা একটা হাসি, চোখের চাহনীটা খুবই মারাত্মক, মনে হয় সহজেই যে কাউকে হিপনোটাইজ করতে পারবে ঐ চোখ দিয়ে।ছবিটাতে অসাধারণ সুন্দর লাগছে। কপালে পরে থাকা সিল্কি চুলগুলো সেই সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। হয়তো এটাই আদ্রিয়ান ভাইয়া। আমি পুরো একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ছবিটার দিকে। হঠাৎ করে কেউ পেছন থেকে আমার মাথায় টোকা মারতেই চমকে গেলাম আমি। পেছনে তাকিয়ে আমার চোখ চরাকগাছ, আমি তাড়াতাড়ি চোখ খিচে বন্ধ করে ফেললাম। আসলে আমার সামনে একটা লোক জাস্ট একটা সাদা টাওয়েল পরে দাঁড়িয়ে আছে। কয়েক সেকেন্ড পর তুরি বাজানোর আওয়াজ পেয়ে চোখ খুলে তাকালাম। তাকিয়ে আরেকদফা অবাক হয়েছি তখন সাথে সাথে চোখ বন্ধ করায় না বুঝতে পারলেও এখন দেখতে পাচ্ছি এই সেই ছবির ব্যাক্তি মানে আদ্রিয়ান ভাইয়া? এসব ভাবতে ভাবতেই উনি বলে উঠলেন,
— ” হ্যালো মিস শ্যামকুমারী? আমারই বাড়িতে, আমারই বেডরুমে এসে আমারই জিনিসপত্র নিয়ে নাড়াচাড়া করছেন। পরিচয়টা জানতে পারি?” আমি একটু চমকে গেলাম। শ্যামকুমারী? আমার গায়ের রং একটু শ্যামলা বলে এভাবে বলল? এটা কী আপমান করলো? এসব ভাবতে ভাবতেই আবারও মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলল,
— ” নিজের পরিচয় দিতে বলেছি। বায়োডেটা বানাতে বলিনি।” আমি অন্যদিকে তাকিয়ে আছি কারণ উনি শুধুমাত্র একটা টাওয়েল পরে আছেন। ইতস্তত করে বললাম,
— ” না আসলে আব্বুর সাথে এসছিলাম।” উনি ভ্রু কুচকেএকটু ভেবে বললেন,
— ” হাসান আঙ্কেলের মেয়ে তুমি?” আমি ভদ্র মেয়ের মতো হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লাম। আদ্রিয়ান একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,
— ” ও আচ্ছা আচ্ছা তুমিই তাহলে সেই অনিমা। ইন শর্ট অনি।” আমি অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে আবারও চোখ সরিয়ে নিয়ে বললাম,
— ” আপনি চেনেন আমাকে?” উনি আমার চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে বলল,
— ” তোমাকে না চিনে উপায় আছে? সারাদিন তো এই বাড়িতে তোমার নামই যপা হয়। আর তাছাড়াও আদ্রিয়ান আবরার জুহায়েরকে চাইলে সব জানতে পারে।” আমি একটু অবাক হলেও কিছু বললাম না। উনি আমার দিকে একটু ঝুকে বললেন,
— ” তো মিস সেলিব্রিটি হঠাৎ আমার রুমে এসে আমাকে ধন্য করার কারণ?” আমি ইতস্তত করে একটু পিছিয়ে বললাম,
— ” আসলে একটু ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম তাই..” আদ্রিয়ান বললেন,
— ” তো এভাবে অন্যদিকে তাকিয়ে আছো কেনো?” আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে তাকিয়ে আছি। উনি হয়তো কিছু বুঝতে পারলেন তাই বললেন,
— ” অনিমা, অনি হোয়াটএভার একটু বেড়োলে চেঞ্জ করতে পারতাম আরকি। নাহলে তোমার সামনেই..”
এটুকু বলতেই আমি ছুটে বেড়িয়ে গেলাম রুম থেকে, তবে পেছন থেকে ওনার অট্টহাসির আওয়াজ ঠিকই পেয়েছি।
সেদিন সন্ধ্যায় বার্থডে পার্টিতে একটা ছেলে আমাকে ডেকে কিছু কথা বলছিলো, কথার মাঝখানে হঠাৎ করেই উনি এসে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো। আমি পুরো অবাক হয়ে গেছিলাম। সেদিন সারা পার্টিতে উনি আমার হাত শক্ত করে ধরে ছিলেন। চুড়ির ওপর দিয়ে ধরায় হাতে খুব ব্যাথাও লাগছিলো আমার কিন্তু ভয়ে ওনাকে বলতে পারিনি।
অদ্ভুতব্যাপার উনি সবার সামনেই হাত ধরে ছিলেন কিন্তু কেউ অবাক হয়নি এমন মনে হচ্ছিলো যেনো এটাই স্বাভাবিক। সেদিনের পর আদ্রিয়ান ভাইয়াকে প্রায় আমার বাসায় এসছে, কখনো আমার স্কুলে আর বরাবরই ওনার সেসব অদ্ভুত আচরণের স্বীকার হয়েছি আমি। সেসব আচরণের কারণ আমার কাছে আজও অজানা। তবে উনি ইউ কে চলে যাওয়ার পর একটু শান্তিতে ছিলাম। তখন থেকে ওনার নাম শুনলেও আমার ভয় ভয় লাগে। আম্মুর ডাকে নিজের কল্পণা থেকে বাইরে বেড়িয়ে এলাম। আম্মু হালকা চেঁচিয়ে বলল,
— ” অনি এক্কেবারে গোসল করে তারপর বাইরে আসবে কিন্তু। আর লেট কোরোনা।” আমি একটু বিরক্ত হলাম। এখন আবার গোসল করতে হবে? ধ্যাত। ভেবে উঠে গেলাম গোসল করতে। প্রায় একঘন্টা পর শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে এসে অবাক হয়ে গেলাম। অবাক মানে অবাকের চরম সীমায় পৌছে গেছি। কারণ আদ্রিয়ান ভাইয়া আমার রুমে আমারই বেডে বসে আমারই ফোন ঘাটছে। আমার আসার শব্দে উনি আমার দিকে একপলক তাকিয়ে আবার ফোন দেখায় মন দিলো। আমি অবাক হয়ে টাওয়েল টা রেখে বললাম,
— ” আপনি আমার রুমে কী করছেন?” উনি আমার প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে ফোন দেখতে দেখতেই বললেন,
— ” নো ফোন লক? আই লাইক ইট।” আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
— ” আমার ফোন দিয়ে আপনি কী করছেন?” আদ্রিয়ান ভাইয়া ফোনটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে মেকী হেসে বলল,
— ” তোমার ফেসবুক আইডিটা অনেক পুরোনো হয়ে গেছে তাই ওটা ডিএক্টিভেট করে দিলাম। নতুন আইডি খুলে দিয়েছি আজ থেকে ওটাই ইউস করবে।” ওনার কথা শুনে আমি তো চরম শকে আছি। আমি তাড়াতাড়ি ফোনটা নিতেই উনি বললেন,
— ” খবরদার আগের আইডি টা একটিভ করার চেষ্টাও করবেনা। তাহলে ফোন ইউস করা বন্ধ হয়ে যাবে।” আমার এবার জোরে জোরে কাঁদতে ইচ্ছে করছে ঐ আইডি তে কতো সুন্দর সুন্দর ছবি ছিলো আমার সব শেষ করে দিলো। তবুও আমি কিছু বললাম না। কারণ আমি জানি কিছু বলে কোনো লাভ নেই। এর আগেও এরকম হয়েছে। উনি যেটা বলেছেন আমার লাইফে সেটাই হয়েছে ইনফ্যাক্ট আমার ফ্যামিলিও ওনাকে পুরোপুরি সাপোর্ট করে। আমার মতো এই অসহায় বাচ্চাটারকথা কেউ ভাবেই না। কেনো করেন উনি এরকম আমার সাথে? আমি মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। উনি সারারুম দেখতে দেখতে বললেন,
— ” রুমের অবস্হা এমন কেনো? এতো অগোছালো? কেউ দেখে বুঝবে এখানে কোনো মানুষ থাকে?” আমি এবার বিরক্ত হয়ে বললাম,
— ” তাতে আপনার কী? আপনাকে তো থাকতে হবেনা।” উনি একটা শ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
— ” বিয়ের পর বেড়াতে এলে তো আমাকে এখানেই থাকতে হবে তাইনা?” আমি অবাক হয়ে বললাম, ওনার কথার মানে বুঝতে না পেরে বললাম,
— ” মানে?”
— ” কিছুনা।” আমি কিছু একটা ভেবে ওনার পাশে বসে বললাম,
— ” আচ্ছা বিয়ের কথা বললেন? মেয়ে ঠিক আছে বুঝি? কারো প্রেমে পরেছেন?” উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
— “হ্যাঁ পরেছিতো। অনেক আগেই পরেছি।” আমি এক্সাইটেড হয়ে ওনার দিকে ঘুরে বললাম,
— ” সিরিয়াসলি? কার? ইজ শি অলসো লাভ ইউ?” উনি একটা ছোট্ট হাসি দিয়ে বললেন?
— ” ডোন্ট নো। বাট সত্যিই জানতে চাও কার?” আমি দুবার মাথা উপর নিচ নাড়ালাম। অর্থাৎ হ্যাঁ। উনি এবার অদ্ভুত এক ঘোর লাগা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। আমিও তাকিয়ে আছি উনি মুচকি এক হাসি দিয়ে বললেন,
— “এক শ্যামকন্ প্রেমে পরেছি। হঠাৎ খিচে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে মুগ্ধ হয়েছি। লজ্জায় চোখ সরিয়ে নেওয়া দেখে পাগল হয়েছি। তারপর ভয় পেয়ে জরিয়ে যাওয়া কন্ঠস্বর শুনে শুনে মাতাল হয়েছি। তারপর মুখের সেই অদ্ভুত মায়ায় নিজেকে জরিয়ে ফেলেছি। একটাই নাম মাথায় এসেছিলো মায়াবিনী। যে নিজেই মায়ায় পূর্ণ নয় চারপাশে নিজের মায়া ছড়াতেও পারে। সেদিনই ঠিক করে নিয়েছি যে আমার তাকে চাই যেকোনো কিছুর মূল্যে চাই আমার মায়াবিনীকে।” আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। এতোটা ভালোবাসে মেয়েটাকে? কে সেই ভাগ্যবতী যাকে কেউ এতো ভালোবাসে কে সেই মায়াবিনী। হঠাৎ করেই আপির ডাক পরলো। আদ্রিয়ান ভাইয়া চেঁচিয়েই বললেন,
— ” আরে ভাই আসছি। অদ্ভুত তো হবু বউয়ের সাথে প্রেম আলাপটাও করতে দিচ্ছেনা” আমি চমকে তাকালাম। ওনার কথার মানেটা বুঝতে আমার কয়েক সেকেন্ড লাগলো। কথাটার মানে বুঝলেও বলার কারণটা বুঝলাম না তাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। উনি উঠে দাঁড়িয়ে পেছনে ঘুরে আমার দুপাশে হাত রেখে আমার খোলা ভেজা চুলে নাক নিয়ে একটু ঘ্রাণ নিয়ে বললেন,
— ” আর এখন এই ভিজে চুলে তার ঘ্রাণ আর সিগ্ধ মুখের প্রেমে পরেছি।” বলে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে গেলেন। আমি ফ্রিজড হয়ে বসে আছি। সারা শরীর মৃদু কাঁপছে। নড়ার শক্তিও নেই আমার মধ্যে। ওনার কোনো কথার বা কাজের মানে কোনোদিন ক্লিয়ারলি বুঝতে পারিনি আমি । কিন্তু আজ ওনার কথা শুনে এক মুহূর্তের জন্যে মনে একটা অসম্ভব প্রশ্ন অবশ্যই উঠেছে। আমি ওনার সেই মায়াবিনী?
গল্পের বিষয়:
গল্প