বিনি সুতোর টান

বিনি সুতোর টান
চারুর ভীষণ মন খারাপ। কেউ কথা দিয়ে না রাখলে খুব কষ্ট হয়। তখন নিজেকে খুব একা লাগে। নিজেকে খুব তুচ্ছ মনে হয়। কিন্তু চারু মোটেও তুচ্ছ নয়। রমজান সাহেব চারুর কোন ইচ্ছাই অপূর্ণ রাখেন না। রমজান সাহেবের দুই মেয়ে। চারু ও পারু। পারু এবার কলেজে উঠেছে। খুব চঞ্চল স্বভাবের মেয়ে। মুখে একদম কথা আটকায় না। ছোট মামা বেড়াতে এসেছিলেন কয়েকদিন আগে। কেজি পাঁচেক আপেল ও কমলা এনেছিলেন। ছোট মামাকে দেখেই পারু বলল, “মামা তুমি আপেল আর কমলা ছাড়া আর কিছু আনতে পার না? আমি এগুলো খাই না।” পারুর কথা শুনে মামা খুব লজ্জা পেলেন।
শুধু মামাকে যে লজ্জা দিয়েছে তা নয়, যার তার মুখের উপর কথা বলা যেন পারুর একটা স্বভাব। এ নিয়ে পারুর মা বেশ চিন্তিত। কিন্তু চারু এমন নয়। চারু শান্ত স্বভাবের মেয়ে। প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না। নিজের দুঃখ কষ্টকে সব সময় লুকিয়ে রাখে। চারুর জীবনে অবশ্য তেমন কোন দুঃখ কষ্ট নেই। যতটুকু আছে তা ফাহিমকে নিয়ে। আজকে ফাহিমের বাসায় আসার কথা কিন্তু এল না। তাই মুখ ভার করে বারান্দায় বসে আছে। পারু এসে বলল, “আপু চা খাবে? ” ‘না, খাব না।’ ‘প্লিজ খাও না!’ চারু খুব বিরক্ত হয়ে বলল, “যা এখান থেকে। আমাকে একটু একা থাকতে দে।” বড় বোনের কাছে পাত্তা না পেয়ে রেগে গজ গজ করতে করতে বেরিয়ে গেল পারু। যখন খুব রাগ হয় তখন একা থাকতে পছন্দ করে চারু। কারো সাথে একটা কথাও বলে না।
পারুকে এভাবে তাড়িয়ে দেওয়াটা ঠিক হয়নি। এক কাপ চা অফার করেছিল। মাথাটাও ব্যাথা করছে। চা খেলে হয়তো ব্যাথাটা কমতে পারে। তাই পারুকে চা খাওয়ার জন্য ডাকলো। কিন্তু পারু ডাক শুনছে না। আরেকটু জোরে ডাকলো, “পারু এদিকে এসো।” পারু এসে বলল, “মাথা ব্যাথা করছে , এখন চা খাবে তাই তো? “তুই বুঝলি কীভাবে? ” পারু হেসে বলল, “তোমার জন্য এটা তো কমন ব্যাপার।” বারান্দায় বসে চা খাচ্ছে চারু ও পারু। হঠাৎ পারু বলল, “যত রাতই হোক ফাহিম ভাই আজকে আসবেই। ‘তুই জানিস কীভাবে?’ পারু হেসে বলল, “জানি জানি আমি সব জানি।” চারু মনে মনে বলল, তোর কথাই যেন সত্যি হয়। ‘চা কেমন হল আপু?’ ‘একদম জঘন্য চা, ঔষধের মত লাগছে।’
চারুর কথা যে নিছক মজা ছিল তা পারু বুঝতে পেরেছে। এটা পারুর একটা গুন। মানুষের মনের কথা বলে দিতে পারে। কিন্তু চারু পারে না। কেন পারে না এ নিয়ে চারুর মধ্যে যথেষ্ট আক্ষেপও আছে। ফাহিম এসেছে। খবরটা শুনে পারু বারান্দা থেকে বেরিয়ে গেল। কিন্তু চারু বারান্দাতেই বসে রইলো। একটু অভিমান করেছে। ফাহিম যতক্ষণে এসে সরি না বলবে ততক্ষণে এখান থেকে এক চুলও নড়বে না চারু। কয়েকদিনের মধ্যেই ফাহিম ও চারুর বিয়ে হবে। দুই বছরের প্রেমের সম্পর্ক আজ পরিনতির দিকে। ফাহিম পড়ালেখা শেষ করে গ্রামের একটা কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেছে । আর চারুর পড়ালেখা শেষের দিকে। ফাহিম ইতোমধ্যে পারুর সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে। মনে হচ্ছে এ বাড়িতে পারুর জন্যই সে এসেছে। বারান্দায় বসে চারু তো রেগে মেঘে আগুন।
এ ব্যাপারটি পারু খুব উপভোগ করে। বড় বোনকে ক্ষ্যাপাতে খুব ভাল লাগে ওর। বাইরে বড় একটা চাঁদ উঠেছে। চাঁদের আলোয় যেন ঝলমল করছে সবকিছু। উঠোনের এক কোনে চেয়ার পেতে বসে আছে পারু ও ফাহিম। বারান্দায় বসে সবকিছু দেখছে চারু। ফাহিম বলল,” তোমার আপুকে ডাক। রাত অনেক হয়েছে , আমাকে ফিরতে হবে।” পারু হেসে বলল,” আপু আপনার সাথে রেগে আছে। যান রাগ ভাঙিয়ে নিয়ে আসুন। ” চারুর মা বাবা ভিতরের ঘরে বসে বড় মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান কীভাবে করা যায় তা নিয়ে কথা বলছেন। উঠোন থেকে বারান্দায় চলে এল ফাহিম। চাঁদের মৃদু আলো এসে পড়েছে বারান্দায়। চারুর চোখের কোনে যেন পানি
ছল ছল করছে। ফাহিম বলল, কী হয়েছে?
‘কিছু হয়নি’
‘তাহলে কাঁদছো কেন?’
‘আনন্দে কাঁদছি।’
আনন্দেও যে কান্না করা যায় তা ফাহিমের জানা নেই। তাই অবাক দৃষ্টিতে চারুর দিকে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ পারুর আগমন। এসেই বলল,”এই যে ক্রন্দণ কুমারী, আপনার কান্নাটা এখন থামাবেন ? উঠোনে আপনাদের জন্য চা দেওয়া হয়েছে। চলুন একসাথে চা খাই।” কোন কারণ ছাড়াই চারুর চোখ থেকে প্রায়ই পানি পড়ে । তাই পারু মজা করে ওকে ক্রন্দন কুমারী বলে ডাকে। পারুর কথা শুনে ফাহিম একটু হাসলো। উঠোনে চেয়ার পেতে বসে আছে দুজন। আর দাঁড়িয়ে আছে একজন। চাঁদের আলো যেন চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে। পাশেই একটা হাসনাহেনা গাছ। ফুলের গন্ধে যেন মাতোয়ারা চারদিক। পারু একটু এদিক ওদিক হাঁটতে লাগলো। ফাহিম বলল, “বাচ্চা মেয়েদের মত এখনো কেন কান্না কর?” ‘ঠিক আছে আর কাঁদবো না।’ ‘বিয়ের তো আর কয়েকদিন বাকি। কোন প্ল্যান তো করা হল না’ চারু কিছু না বলে হাসনাহেনা গাছটির ছায়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। ছায়াটি যেন ধিরে ধিরে বড় হতে লাগলো।
কিছুক্ষণ পর চারু বলল, “কোন প্ল্যান করতে হবে না, তুমি যেমন বলবে সবকিছু তেমন হবে। ” চারুর কথা শুনে ফাহিম ভাবতে লাগলো, ” একটা মেয়ে এতটা ভাল কী করে হয় ? ” এটাকে ভাল মন্দ যা কিছুই বলা হোক না কেন, এটা মূলত একধরনের নির্ভরতা। কারো প্রতি নির্ভরতা অনেক সময় সুখের কারণ হয়, আবার এটা দুঃসহ দুঃখের কারণও হতে পারে। ফাহিম চলে যাচ্ছে। চারু মনে মনে বলে , একটা রাত এখানে থেকে গেলেই তো পার! মনে মনে কথা বলার মধ্যে একধরনের প্রশান্তি আছে। যা ইচ্ছা তাই বলা যায়। চারুর মা বাবার সাথে দেখা না করেই চলে গেল ফাহিম। বাড়িতে পৌঁছাতে ঘন্টাখানেক সময় লাগবে। পাশের গ্রামেই ফাহিমদের বাড়ি। বাবা মার একমাত্র ছেলে। তাই অনেক বড় দায়িত্ব কাঁধের উপর। বছরখানেক আগে ফাহিমের বাবা চাকরী থেকে অবসর নিয়েছেন। প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। এখন ছেলেকে বিয়ে দিয়ে নাতী নাতনীর মুখ দেখতে চান।
ফাহিমের বিয়েটা দুই পরিবারের সম্মতিতেই হচ্ছে। চারুকে বেশ পছন্দ হয়েছে ফাহিমের মা বাবার। এমন শান্ত শিষ্ট মেয়েকে পছন্দ না করার কোন কারণ নেই। চারুর মা বাবাও খুব রুচিশীল মানুষ। দুই পরিবারের সাথে এসব ব্যাপারে বেশ মিল আছে। ফাহিমের মায়ের আর তর সইছে না। ছেলের বউকে কখন ঘরে তুলবেন! ফাহিমের মাঝে মাঝে খুব দুশ্চিন্তা হয়। বউ- শাশুড়ির মধ্যে প্রায়ই এটা সেটা নিয়ে ঝগড়া হয়। যদি চারু ও মায়ের সাথে এমনটা ঘটে তাহলে কী করবে? পরক্ষণে আবার ভাবে, চারু তো খুব ভাল মেয়ে। ও নিশ্চয়ই মায়ের খুব যত্ন নিবে। বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছে। দুই পরিবারেই দূরের সব মেহমানরা আসতে শুরু করেছে। বরযাত্রীদের জন্য গাড়ি ভাড়া করা হয়েছে। দুই বাড়িতেই রং বেরং এর লাইটিং করা হয়েছে।
আজ গায়ে হলুদ, কাল বিয়ে। বিয়ের আগের দিন মেয়েদের চেহারায় একটা দ্যুতি থাকে। এই দ্যুতিতে চারু যেন ঝলমল করছে। চারুর মা সেলিনা বেগম মেয়েকে শেখাচ্ছেন, কীভাবে শ্বশুর- শাশুড়ির মন জয় করা যায়? এটা অবশ্য একদিনে শেখা যায় না। দেখে দেখে শিখতে হয়। বিয়ে নিয়ে সকলের মধ্যে বেশ উৎসাহ কাজ করছে। পারুও অনেক ব্যস্ত। বড় বোনের বিয়ে , মাথায় কত দায়িত্ব ! শুধু চারুর কোন দায়িত্ব নেই। খুব অবাক হয়ে সকলের কর্মকান্ড দেখছে আর ভাবছে। এত আয়োজন সবকিছু আমার জন্য। ভাবতে ভাবতে চোখের কোনে জল এল। এসব ভেবে যদি চোখের কোনে জলই না আসে তবে ক্রন্দন কুমারীর নামটাই যে বিফলে যাবে! পরেরদিন দুপুরে , বরযাত্রী চলে এসেছে। আমজাদ মাস্টার গাড়ি থেকে নামলেন। একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা। কোন কিছুতে যেন কমতি না থাকে। বর যাত্রীর সংখ্যা ষাট জন। একে একে সবাই গাড়ি থেকে নামলেন।
ফাহিম এ বাড়িতে বহুবার এসেছে। প্রথমদিকে লুকিয়ে লুকিয়ে আসতো। রাতের আঁধারে বাড়ির পাশে এসে লুকিয়ে থাকতো। একসময় সবাই সবকিছু জেনে যায়। এরপর থেকে আর লুকোচুরি নয়। কিন্তু আজ কেন যেন নিজেকে আড়াল করে রাখতে ইচ্ছে করছে। কনে পক্ষ বর পক্ষকে গ্রহণ করলো। উঠোনের মধ্যে তাবু টানিয়ে সকলের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গ্রাম গঞ্জের বিয়ে এভাবেই হয়ে থাকে। এখানে কোন পার্টি সেন্টারের প্রয়োজন হয় না। পাঁচ লক্ষ এক টাকা দেন মোহরে বিয়ে হল ফাহিম ও চামিলি আক্তার চারুর। খাওয়া দাওয়া শেষে এবার ফেরার পালা। রমজান সাহেব মেয়েকে ফাহিমের হাতে তুলে দিয়ে বললেন, “আমার সবচেয়ে আদরের এবং সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটা আজ তোমার হাতে তুলে দিলাম। যত্ন করে রেখ।”
বাবার এমন কথা শুনে ক্রন্দন কুমারী হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো। চারুর মায়ের চোখেও পানি। মনে হচ্ছে যেন নিজের কলিজাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতির তো এটাই নিয়ম। মেয়ে হয়ে জন্মালে এক সময় স্বামীর সংসারে যেতেই হবে।
বউ নিয়ে গাড়িতে উঠলো ফাহিম। গাড়ি চলছে। বর যাত্রীরা বেশ আনন্দে আছে। ফাহিম একটু ইতস্তত বোধ করছে। চারু এখন আর কাঁদছে না। যার সাথে বিয়ে হয়েছে সে তো বহু দিনের চেনা। জীবনে তাঁর সাথে যদি সুখে থাকা না যায় তবে ধরে নিবে পৃথিবীতে সুখ বলতে কিছু নেই। ফাহিমদের বাড়ির সামনে গাড়ি থামলো। আসে পাশের লোকজন এসে ভিড় করেছে বউ দেখার জন্য। এটা গ্রাম বাংলার একটা সংস্কৃতি। এটাকে উপেক্ষা করার কোন সুযোগ নেই।
রাতের দিকে বাড়ির মেহমানরা অনেকে বিদায় নিয়েছে। ফাহিমের রুমটাকে নানা রংয়ের ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। বাসর রাত বলে কথা! মানুষের জীবনে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ রাত। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো হয়তো এ রাতেই নেয়া হয়। এ নিয়ে অনেকের আগ্রহের আর শেষ নেই। ফাহিম ও চারুও এর ব্যতিক্রম নয়। সাজানো গোছানো একটি রুমে বসে আছে দুজন। স্বস্তির নিঃশ্বাস না ফেলে কোন উপায় নেই। একটা সম্পর্ককে একটু একটু করে এই জায়গাটিতে নিয়ে আসা ছেলে খেলা নয়। যেখানে চারু ও ফাহিম সফল হয়েছে। হয়তো ভবিষ্যতে ছেলেমেয়েদেরকে এই সফলতার গল্প শুনাবে তারা। বাড়ির সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। জেগে আছে দুটি প্রাণ। তারা একসাথে চা খাচ্ছে। গভীর রাতে চা খাওয়ার মধ্যে একধরনের বিলাসিতার ভাব আছে।
বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। সাথে হিমেল হাওয়া বইছে। কুঁয়াশার চাদরে যেন ঢাকা পড়েছে সবকিছু। হঠাৎ ফাহিম বলল, “চল বাইরে যাই।” চারুও চট করে রাজি হয়ে গেল। নতুন বউকে নিয়ে এতরাতে বাইরে বের হওয়া ঠিক না বেঠিক তা একবারের জন্যেও চিন্তা করলো না ফাহিম।চারুর পরনে বিয়ের শাড়ি। ফাহিমের পরনে একটা লাল পাঞ্জাবি। শীত থেকে বাঁচার জন্য এই পোষাক যথেষ্ট নয়। তাই সাথে করে দুটি শাল নিল ফাহিম। উঠোনের কোনে একটি আম গাছ। চারু গাছটির দিকে তাকিয়ে রইলো। অন্ধকারে গাছটিকে ভয়ংকর সুন্দর দেখাচ্ছে। উঠোনের চারপাশে হাঁটছে দুজন। একটু একটু বাতাস বইছে। বাড়ি থেকে রাস্তার দিকে যাচ্ছে দুজন। ফাহিমের শালটা বেশ বড়। নিজের শালের মধ্যে চারুকেও জড়িয়ে নিল। এ এক অন্যরকম অনুভূতি। একসাথে থাকার মাঝে যে এত সুখ তা আগে কোনদিন বুঝে নি চারু। ফাহিম বলল, “চারু কিছু কথা বলি। ” “হ্যাঁ বল।”
“আমি মা বাবার একমাত্র সন্তান, আমাকে নিয়ে তাঁদের অনেক স্বপ্ন। আমি জীবনে কখনো মা বাবার মনে কষ্ট দেইনি। আমার স্ত্রীর কাছ থেকেও তাঁরা এমনটিই আশা করবে। আমি জানি , তুমি এ বাড়িতে বউ হয়ে আসনি, এসেছো মেয়ে হয়ে। আমার মা বাবা তোমাকে মেয়ে হিসেবেই গ্রহণ করেছে।” চারু ফাহিমের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে পানি ছল ছল করছে। এই পানি কোন দুঃখ কষ্টের পানি নয়। এটি আনন্দ অশ্রু। চারু বলল, “তুমি পাশে থাকলে আমি সবকিছু করতে পারবো। তুমিই আমার শক্তি।” চারপাশে ঘন অন্ধকার। অন্ধকারের বুক চিরে নব দম্পতি মনের সুখে হেঁটে বেড়াচ্ছে। জীবনের একটি স্মরনীয় রাতকে অন্ধকারের সাথে উপভোগ করছে দুজন।
পরেরদিন সকালে সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। নতুন বউয়ের কোন কাজ নেই। কেউ কেউ এসে জিজ্ঞেস করলো, “ভাবিসাব প্রথম রাত কেমন কাটলো? ” চারু মুচকি হাসলো। মনে মনে বলল, ” পুরো রাতটা অন্ধকারেই কেটেছে।” নতুন বউয়ের এরকম হাসিই বলে দেয়, সে বিয়ে করে সুখী হয়েছে। সবাই সারাজীবন এই হাসিটাই দেখতে চায়। ফাহিমের বাবা চারুকে ডাকলো, “বউমা, এদিকে এসো। তোমার সাথে ভাল করে কথাই বলা হল না।” চারু শ্বশুরের সামনে দাঁড়ালো। শ্বশুর বললেন, “মা, তুমি কিন্তু এ বাড়ির পুত্রবধূ নও, তুমি এ বাড়ির মেয়ে। আমার পাশে বসো।” চারু মাথা নিচু করে শ্বশুরের পাশে বসলো। নিচু গলায় চারু বলল, “দোয়া করবেন বাবা।” পুত্রবধূ ও শ্বশুরের কথার মাঝে শাশুড়ি এসে যুক্ত হলেন। এসেই বললেন, “এ বাড়িতে তোমার কেমন লাগছে মা?” “ভাল লাগছে মা”।
ফাহিম কলেজ থেকে কয়েকদিনের জন্য ছুটি নিয়েছে। হানিমুনে যাওয়ারও প্ল্যান আছে। জীবন যে এত সুন্দর তা আগে কখনো ভাবেনি ফাহিম। সুন্দর জীবন উপভোগের জন্য প্রথমে একজন সুন্দর মনের মানুষ প্রয়োজন , যা ফাহিমের আছে। তাহলে জীবন সুন্দর না হওয়ার কোন কারণ নেই। কিছুদিন পর একদিন সন্ধ্যায় সবাই মিলে গল্প করছে। ফাহিম, মা -বাবা ও চারু। শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করেছে। আকাশে একটা বড় সাইজের চাঁদ উঠেছে। চারু বলল, “বাবা সবাই মিলে বাইরে চলুন, চাঁদ দেখবো আর চা খাব।” বাবা বললেন, “বাহ্ দারুন তো! অনেকদিন চাঁদ দেখা হয় না। চল সবাই মিলে আম গাছের নিচে বসি। ” উঠোনের কোনে আম গাছের নিচে সব সময় দু একটি চেয়ার থাকে। প্রায়ই কেউ না কেউ এখানে বসে থাকে। মা বাবা আমগাছের নিচে বসলেন । চারু রান্নাঘরে চা বানাচ্ছে। ফাহিম চারুকে সাহায্য করার জন্য রান্নাঘরে ঢুকলো। চারু বলল, ” তুমি বাইরে যাও, আমি চা নিয়ে আসছি”।
 তোমার সাথে একটু থাকি না! একসাথে কাজ করলে ভালবাসা বাড়ে।” ফাহিমের কথা শুনে হাসলো চারু। যে হাসিতে মায়া ঘেরা। পৃথিবীতে এই হাসি যার মুখে আছে তাঁর প্রিয়জনরা সত্যিই অনেক ভাগ্যবান। ফাহিম নিজেকে ভাগ্যবান মনে করে। এমন একটি মেয়েকে বিয়ে করেছে যার আলোয় আলোকিত হচ্ছে পুরো সংসার। সবার জন্য চা চলে এসেছে। আম গাছের পাতা ভেদ করে চাঁদের আলো এসে পড়েছে উঠোনে। চারদিকে কেমন যেন একটা মায়াবী সৌন্দর্য্য। যা নিমিষেই সবাইকে মুগ্ধ করে। বিয়ে হল আজ সপ্তাহখানেক হল। এরি মধ্যে চারু যেন এ সংসারের মধ্যমনি হয়ে গেল। এমন লক্ষি মেয়েকে পেয়ে ফাহিমের বাবা -মা খুব খুশি। চা খেতে খেতে আমজাদ মাস্টার বললেন, “ফাহিম, তোর কলেজের ছুটি শেষ হবে কবে? বউমাকে নিয়ে কোথাও ঘুরে আয়।” ফাহিম বলল,” ছুটি আর বেশি নেই, চাইলে ছুটি পাওয়া যাবে।”
চারু বলল, ” আমরা বাইরে গেলে আপনারা থাকবেন কীভাবে? তারচেয়ে এক কাজ করি, সবাই মিলে কোথাও ঘুরে আসি।” পুত্রবধূর মুখে এমন কথা শুনে ফাহিমের মা খুব খুশি হলেন। এই খুশিতে তিনি যেন কেঁদেই ফেলবেন। বাবা বললেন,  এই বয়সে কোথাও গেলে ঝামেলা হয়ে যাবে মা, তারচেয়ে তোমরাই যাও। ফাহিম বলল, ” তোমরা তো কখনো ঘরের বাইরে যাওনি। এবার চল সবাই মিলে কক্সবাজার যাই।” চাঁদের আলো আরও গাঢ় হতে লাগলো। চায়ের টেবিলে গল্পও আরও জমে উঠলো। সবার সম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্তে উপনিত হল যে দু একদিনের মধ্যেই ফাহিমরা সপরিবারে কক্সবাজার যাবে। সাথে পারুও যাচ্ছে। সুযোগ পেলে পারুর মা বাবাও যাবে। এরচেয়ে আনন্দময় মুহূর্ত আর হতে পারে না।
ফাহিমের মা বললেন, “তোমরা বসে গল্প কর, আমরা ঘরে গেলাম।” পুরো উঠোনজুড়ে যেন চাঁদের আলোর ছড়াছড়ি। চারু ও ফাহিম কক্সবাজার ভ্রমনের প্ল্যান করছে। যাওয়া- আসা,হোটেলে থাকা -খাওয়া ইত্যাদিতে কত খরচ পড়বে – এসব হিসাব করছে। রাত বাড়ছে। ফাহিম ও চারু ঘরের মধ্যে ঢুকলো। রাতের খাবার রেডি করার জন্য চারু ব্যস্ত হয়ে পড়লো। ফাহিমের মা বাবা নামাজ পড়ছেন। ফাহিম রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো। হঠাৎশরীরটা কেমন যেন করছে। বুকে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করছে। চারুকে ডাকলো। চারু রান্নাঘর থেকে দৌড়ে এলো। ফাহিমের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। নামাজ শেষ করে মা বাবা এসে ফাহিমকে ধরলো। ফাহিম কিছুতেই এ ব্যাথা সহ্য করতে পারছে না। চারু বুঝতে পারে না এখন কী করা উচিত? ফাহিমের মা ছেলের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে কেঁদে উঠলেন।
আমজাদ মাস্টার বললেন, “বউমা, তুমি হাসপাতালে যাওয়ার ব্যবস্থা কর”। কিন্তু চারু যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। সুস্থ মানুষটার হঠাৎ কী হল? ফাহিমকে হাতে হাতে ধরে একটা অটোরিক্সায় করে হাসপাতালেরদিকে রওনা হল চারু। সাথে আমজাদ মাস্টার ও পাশের বাড়ির একজন লোক। ফাহিমের মা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। ছেলের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে জায়নামাজে বসে পড়লেন। বাড়ি থেকে সদর হাসপাতাল বেশি দূরে নয়। অটো রিক্সাটা বেশ বড়। পিছনের দিকে ফাহিমকে শোয়ানো হল। আর সামনে বসেছে আমজাদ মাস্টার ও বাড়ির পাশের লোকটি। চারুর কোলে ফাহিম মাথা রাখলো। চারুর চোখ থেকে দু ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। ফাহিম কোন কথা বলছে না। হয়তো জ্ঞান হয়ে হারিয়েছে।
আধাঘন্টার মধ্যে সদর হাসপাতালে পৌঁছলো। চারুর বাবার বাড়িতে ফোন করে জানানো হয়েছে। চারুর বাবাও ইতিমধ্যে হাসপাতালে পৌঁছেছেন। ফাহিমকে জরুরি বিভাগে নেয়া হল। রুমের সামনে সবাই দাঁড়িয়ে রইলো। বাবাকে দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো চারু। রমজান সাহেব জিজ্ঞেস করলো, “হঠাৎ কীভাবে কী হল? ” চারু কিছু বলতে পারছে না। আমজাদ মাস্টারের হাতে তসবি। উনি দোয়া পড়ছেন। বাড়িতে শাশুড়ি একা আছেন। তাঁর কথা মনে পড়লো চারুর। তিনি নিশ্চয়ই কান্নাকাটি করছেন । তাকে ফোন করে চারু বলল, “মা আপনি চিন্তা করবেন না, ডাক্তার ওকে দেখছে। একটু পরেই সুস্থ হয়ে যাবে। ” ফাহিম একজন তরতাজা যুবক। এরকম হঠাৎ করে কোনদিন অসুস্থ হয়নি। আমজাদ মাস্টার তাঁর পুত্রবধূকে বললেন, ” মা তুমি চিন্তা কর না, সব ঠিক হয়ে যাবে।”
সুস্থতা সৃষ্টিকর্তার একটি বড় পুরস্কার। যা কেবল অসুস্থ হলেই অনুভব করা যায়। জরুরী বিভাগ থেকে একজন ডাক্তার বের হলেন। তিনি কিছু না বলে আবার ভিতরে গেলেন। আপনজন যখন অসুস্থ থাকে তখন প্রতিটা ডাক্তারকে অনেক আপন মনে হয়। চারু জরুরী বিভাগের দিকে এগিয়ে গেল। একজন নার্স ভিতরে ঢুকতে বারণ করলো। কিছুক্ষণ পর, জরুরী বিভাগ থেকে আরেকজন ডাক্তার বের হলেন। তিনি এসে জানালেন, “রোগীর হার্ড এটাক হয়েছিল। রোগী আর বেঁচে নেই।” কঠিন কথাটিকে কত সহজ করে ডাক্তারসাহেব বলে ফেললেন! কঠিন কথাকে সহজ করে বলার মাঝে একধরনের স্বার্থপরিতা লুকিয়ে থাকে। পৃথিবীতে যা কিছু কঠিন তাকে কখনো সহজ করতে নেই। এতে কঠিনের কদর কমে যায়। মৃত্যু একটি নির্মম সত্য। এই সত্যকে উপেক্ষা করার শক্তি কারো নেই।
হাসপাতালের দেয়ালের সাথে গা এলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চারু। অনেক শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমজাদ মাস্টার হাসপাতালের ফ্লোরে বসে পড়লেন। রমজান সাহেব একবার মেয়ের কাছে যায়, একবার মেয়ের শ্বশুরের কাছে যায়। এত অল্প সময়ে কী হয়ে গেল! উঠোনের কোনে আম গাছের নিচে ফাহিমকে দাফন করা হয়েছে। ফাহিমের মা এখনো উঠোনে গড়াগড়ি খেয়ে কান্না করছে। তাকে থামানোর সাধ্য যেন কোরোর নেই। এ কান্না যেন সারাজীবনের সুখ বিসর্জনের কান্না। এ কান্না যেন অর্থবহ কান্না। আমজাদ মাস্টারের প্রেসার বেড়েছে। বেশ কয়েকবার অজ্ঞান হয়েছেন তিনি। আর চারু ভাবছে কক্সবাজার যাওয়ার কথা। পারুকে ডেকে বলল, “এই পারু তুইও কিন্তু আমাদের সাথে যাবি! তোর দুলাভাই, আমি আর তুই একসাথে সমুদ্রে ঝাপ দিব।” বাবাকে বলে, ” বাবা ফাহিমকে তুমি যতটা ভাল ছেলে ভেবেছিলে, ও তারচেয়েও অনেক ভাল। সারাদিন আমার সাথে সাথে থাকে। আমার অনেক খেয়াল রাখে।”
চারুর কথা শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েনি এমন কেউ এ বাড়িতে নেই। কিন্তু চারু একদম কাঁদছে না। কান্নার জন্য যাকে সবাই ক্রন্দন কুমারী বলে ডাকে তাঁর চোখে একফোটা জলও নেই। চারুর মা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বললেন, ” কী কপাল নিয়ে জন্মালি রে হতবাগি! ” বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হল, আমজাদ মাস্টারকে ঘুমের ঔষধ দিয়েছে ডাক্তার। তিনি ঘুমাচ্ছেন। ফাহিমের মা ছেলের দেয়া শাড়িটা বের করলেন আলমারী থেকে। চিৎকার দিয়ে বললেন, ” শাড়িটা আছে, আমার সোনামানিক আর নেই!” আকাশে বড় একটা চাঁদ উঠেছে । আমগাছের পাতা ভেদ করে চাঁদের আলো পড়েছে উঠোনে। ঠিক গতকালের মত। কিন্তু গতকাল আর আজকের মধ্যে কত পার্থক্য! এই দুঃখিনি মাকে গতকালটা ফিরিয়ে দেয়ার সাধ্য যেন কারো নেই।
সারাদিন চারু মুখে একফোটা পানিও দেয়নি। সবাই ওকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। ফাহিমের মা চারুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “তুই আমার পুত্রবধূ না, তুই আমার মেয়ে। এই কষ্ট তুই ভুলবি কী করে? আয় মা আমার বুকে আয়।” শাশুড়ির এমন আবেগঘন কথা শুনে চারু আর ঠিক থাকতে পারলো না। কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। যে কান্না আকাশ বাতাসকে ভারী করে তুলেছে। সবাই তাকিয়ে দেখছে দুজন নারীর বিলাপ। এই নারীই যেন আত্নার পরম আত্বীয়। একজনের রক্ত মাংশে মিশে আছে ফাহিম। অন্যজনের ভালবাসায় সিক্ত হয়েছে ফাহিম। কয়েকদিন পর, ফাহিমের মা- বাবা, চারু ও চারুর মা ছাড়া বাড়িতে আর কেউ নেই। ধিরে ধিরে সবকিছু স্বাভাবিক হতে লাগলো। তবে এখনো মাঝরাতে ফাহিমের মায়ের বিলাপ শোনা যায়। একদিন বিকেলে চারুর মা বললেন, “বিয়াইন সাহেব, “চারুকে আমি নিয়ে যেতে চাই। আপনি কী বলেন? “
ফাহিমের মা কিছু বলছেন না। ফাহিমের বাবা বললেন, ” অল্প বয়সে স্বামীকে হারানোর দুঃখ কোন কিছু দিয়ে শোধ হবার নয়। চারু এখানে থাকলে হয়তো আরো বেশি কষ্ট পাবে, তারচেয়ে আপনাদের সাথে কিছুদিন থাকুক। ” কথাটি বলে আমজাদ মাস্টার বুকে একটা ব্যাথা অনুভব করলেন। কিন্তু কাউকে কিছু বুঝতে দিলেন না। সেলিনা বেগম চারুকে নিয়ে রওনা হলেন। উঠোনে নামতেই চোখ পড়লো আমগাছের নিচে। যেখানে শুয়ে আছে চারুর ভালবাসার মানুষ। যাকে এক পলক না দেখে চারু থাকতে পারতো না । আজ তাঁর বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে যাচ্ছে চারু। জীবনের এ কেমন পরিনতি? যে পরিনতি কেউ মানতে পারে না। চারুর দিনকাটে বারান্দায় বসে। হাসনাহেনা ফুলের গন্ধে চারু যেন তাঁর অতীতকে ফিরে পায়। আজকাল পারুও কেমন যেন হয়ে গেছে। আগের মত আর মজা করে না।
ফাহিমের বাবার শরীরটা ভাল নেই। সারাদিন বিছানায় শুয়েই থাকেন। ফাহিমের মা দিনে অন্তত দুবার আমগাছের নিচে বসে কাঁদেন আর বলেন, “খোদা আমি আর পারছি না!” একদিন বিকেলে চারুদের বাড়িতে একটা লোক এসেছে। দূর সম্পর্কের আত্বীয়। চারুর জন্য সম্মন্ধ নিয়ে এসেছে। রমজান সাহেব বললেন, মেয়ের সাথে কথা বলে তিনি জানাবেন। সন্ধ্যারদিকে চারুর মা বললেন, “চারু এভাবে আর কতদিন! মাত্র সাতদিন সংসার করেছিস। এভাবে কারো জীবন চলতে পারে না। যা হওয়ার হয়ে গেছে, এবার বিয়ের জন্য তেরি হও।” চারু বলল, ” মা আমার বিয়ে হয়ে গেছে। আমি ফাহিমের বাড়িতে দুইজন বৃদ্ধ মানুষ রেখে এসেছি। তাদের কথা একবার ভাব। আমি ছাড়া তাদের তো কেউ নেই। তোমাদের তো আমি আছি, পারু আছে। তাদের কী হবে?” চারুর কথার কোন জবাব মায়ের কাছে নেই।
পরেরদিন সকালে চারু ফাহিমদের বাড়ির দিকে রওনা হল। মাকে বলল, ” মা আমি চলে যাচ্ছি , আমার জন্য দোয়া করবে যেন শ্বশুর শাশুড়ির সেবা করতে পারি।” মেয়ের কথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাঃস ফেললেন সেলিনা বেগম। সকালের স্নিগ্ধরোদ চিক চিক করছে। চারপাশে একটু একটু করে হিমেল হাওয়া বইছে। চারপাশটা কেন যেন হঠাৎ অচেনা মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে একটা শূন্য পৃথিবীতে একা একা পথ চলছে চারু। রিক্সা থেকে নামলো চারু। ফাহিমদের বাড়ির ভিতরে ঢুকলো। আমগাছের নিচে চোখ পড়লো। যেখানে চারুর স্বামী শুয়ে আছে।
আমজাদ মাস্টার বারান্দায় বসে আছেন। চারু কাছে গিয়ে সালাম করলো। ফাহিমের মা এসে চারুকে জড়িয়ে ধরলো। চারু তাঁর শ্বশুরের পায়ের কাছে বসে বলল, “বাবা আমি তো আপনার মেয়ে, মেয়েকে কীভাবে চলে যেতে বললেন? মা আপনি বলেন , আপনাদের ছাড়া আমি ভাল থাকি কী করে?” আমজাদ মাস্টার তাঁর পুত্রবধূকে জড়িয়ে ধরে কান্নাজড়িত কন্ঠে বললেন, “তুমি ছাড়া আমাদের আর কেউ নেই। তুমি তো আমাদেরই মেয়ে। ” বারান্দা থেকে আমগাছের নিচটা স্পষ্ট দেখা যায়। চারুর চোখ পড়লো সেদিকে, যেখানে তাঁর ভালোবাসা ঘুমায় যতনে।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত