নামহীন ঠিকানা

নামহীন ঠিকানা
-মেয়েটা আমার থেকে দু ব্যাচের সিনিয়র ছিলো।
একই ডিপার্টমেন্ট এর ছিলাম, আমি খুব পছন্দ করতাম ওনাকে,যদিও আমার থেকে সিনিয়র ছিলো মেয়েটা। এমন ও দিন ছিলো ওনাকে দেখার জন্য ক্লাস শেষ হওয়ার পর ও দাড়িয়ে থাকতাম ঘন্টার পর ঘন্টা। মুসা,তুমি হয়তো অন্য কিছু ভাববে কিন্তু সত্যি বলতে এটা আমার ভালোবাসা ছিলোনা এটা ছিলো মোহ আর ভালোলাগা। হাসিব ভাইয়ের কথাগুলো শুনে হা করে তাকিয়ে থাকলাম তার দিকে, রাজশাহী যাওয়ার ট্রেনটা অজগড়ের মতই ছুটে চলছে, নামটাও বেশ সুন্দর, “পদ্না এক্সপ্রেস ” হাসিব ভাইয়ের সাথে পরিচয়টা ওনার মেয়ের মাধ্যমে এই ট্রেনের মধ্যই, দাড়িয়ে ছিলাম টিকিট না কেটেই ট্রেনে উঠছি। গন্তব্য রাজশাহী, হঠাৎ একটা মেয়ের কন্ঠস্বর
-“আংকেল আংকেল, আপনার পকেট থেকে এই কাগজটা পড়ে গেছে”
হাতের খোচা আর আংকেল ডাক শুনে ধীরে ধীরে তাকালাম মেয়েটার দিকে, না আমাকেই বলছে, চরম বিরক্তিতে মেয়েটার হাত থেকে কাগজটা নিলাম, আংকেল ডাকটা শুনলে বেশ ভালই বিরক্তি লাগে, বিরক্তি লাগার একটা শক্তপোক্ত কারন ও আছে, আংকেল ডাকটার মধ্যে একধরনের বয়স্ক বয়স্ক ভাব আছে, মাত্রই বিশ্ববিদ্যালয় উঠা একটা ছেলে এই ডাকটা শুনতে কিছুটা হলেও অপ্রস্তুত থাকে, হুট করে চকিতে আরেকবার তাকালাম মেয়েটার দিকে, খাড়া নাক আর উজ্জল চোখদুটোতে এক প্রকার বুদ্বির ঝিলিক, পাশে বসা লোকটার বয়স আর না হলেও পঁয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ এর কাছাকাছি হবে। না জানলেও বলে দেওয়া যায় মেয়েটার বাবা, আমার দিকে তাকিয়ে আছে, চোখাচুখি হতেই আচমকা লোকটা প্রশ্ন ছুরে দিলো
-আপনি কই যাবেন ভাই ? আমি বললাম
-ঠিক নাই,প্রথমে রাজশাহী যাবো এরপর ওখান থেকে যেখানে মন চায় যাবো,
-হে হে মজা করছেন তাইনা??
-না আমি মজা করছিনা, আমি এভাবেই ঘুরে বেড়াই, চাঁদ ঘুরে পৃথিবী ঘুরে আমিও ঘুরি একা একা,
বেশ ঘটা করেই বললাম লোকটাকে। অবাক হয়ে লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন এরপর বললেন “না আপনার কথার যুক্তি আছে আপনার সাথে কথা বলে ভালই লাগবে, আপনি বসুন! ” ঢাকা থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত দারিয়ে থাকতে থাকতে পা টানটান করছিলো হাসিব সাহেবের এমন আমন্ত্রণে বসে পড়লাম ওনার পাশের সিটে, ভদ্রলোক যদিও একটু মধ্যবয়সী টাইপ তবুও আমি ভাই বলেই কথা বলতে শুরু করলাম, এভাবেই ঘন্টা খানেক আগে পরিচয় হাসিব ভাইয়ের সাথে। এরপর আপনি থেকে তুমি সম্পর্কে চলে আসা, বেশ ইন্টারেস্টিং লাগছে তার কথাগুলো তাই আগ্রহী হয়েই জানতে চাইলাম
-আচ্ছা তো এরপর কি ঘটলো?? আপনি নিশ্চয় সেই আপুর প্রেমে পড়েন নি?? বেশ কিছুক্ষন ভাবলেন হাসিব ভাই, একটা লম্বা করে শ্বাস নিয়ে বললেন হু প্রেমে পড়েছিলাম হালকা হালকা, তবে সেখানে বাধাও ছিলো, সেই আপুর সাথে আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর মোস্ট সিনিয়ার ব্যাচের এক ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক ছিলো, ওনার নাম ছিলো রাকিব, ক্যাম্পাসের ডাকসাইট ছাত্রনেতা, আট দশটা ক্যাম্পাসের ছাত্রনেতাদের মত তার নামেও বেশ কয়েকটা মামলা চলমান ছিলো, সরকারী দলের ছাত্রনেতা হিসাবে বেশ ভালই সাপোর্ট পেতেন অপরাধ করেও। তমা আপু এমন একজন মানুষের সাথে কি করে সম্পর্ক করলেন ঠিক বুঝতে পারছিলাম না,
-আপুর নাম ছিলো তাহলে তমা?? বেরসিকের মতই জানতে চাইলাম,
-হু,জান্নাতুল ফেরদাউস তমা, কি যেনো ভাবলেন হাসিব ভাই এরপর বিরবির করে বললেন
– বুঝলে মুসা, ইন্টার পাশ করার পর প্রেম রোমাঞ্চ এগুলোর প্রতি ছেলেদের আবেগ থাকে অনেক, এরপর যতই বয়স বাড়ে আস্তে আস্তে ফিকে হয়ে আসে, আমার, তমা আপুর প্রতি এক ধরনের দুর্বলতা কাজ করতো, আমি ছিলাম গ্রাম থেকে উঠে আসা ছেলে, চান্স পেলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, ভর্তি হওয়ার পর রাজশাহী ভার্সিটীর সেই দুর্ভাগা রেগিং এর শিকার হতাম বোকার মত ।
সহজ সরল পেয়ে সবাই মজা নিতো, তখন আপু আমাকে বাচিয়ে নিতেন, অনেক খোজ খবরও নিতেন, আমাকে দেখলেই নাকি তার মায়া লাগতো তাই আমার খোজ খবর নিতেন, আর এই খোজ খবর নিতেন বিধায় আস্তে আস্তে তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ি, এটা ঠিক ছিলো না আমি জানি কিন্তু কি করবো বলো নিজেকে অনেক ভাবে বুঝিয়েছিলাম, এটা হয় না এটা সম্ভাব নয়,আপু বয়সে বড় তার ও একজন পছন্দের মানুষ আছে কিন্তু তবুও মন মানতে না। তমা আপুর হাসি, চোখ দুটোর মায়া,শেষ বিকালের দীঘল চুলগুলো সারাক্ষণ চোখের সামনে ভাসতো, আমি ছিলাম অনেক অভিমানী একটা ছেলে, কেউ কষ্ট দিলে খুব অভিমান করতাম,তার সাথে কথা বলতাম না তাই যখনই তমা আপুর সাথে রাকিব ভাইকে দেখতাম তখন খুব কষ্ট পেতাম, রাগে আপুর সাথে আর কথাই বলতাম না এক সপ্তাহ দুই সপ্তাহ ধরে।
আপুই আমাকে ডেকে বলতেন কি ব্যাপার হাসিব তুমি কথা বলো না কেন আমার সাথে। একদিন রাগের মাথায় বলেই দেই যে তাকে আমার ভালো লাগে তার সাথে রাকিব ভাইকে দেখলে হিংসা হয় আমার, তাই অভিমান আর রাগ করে কথা বলিনা, আপু আমার কথা শুনে কি ভাবলেন জানিনা এরপর আর কথাই বলেন নি আমার সাথে, ওনার ও খুব অভিমান ছিলো, এরপর ছয় মাস আর কোন কথা হয়নি, তাকে দেখতাম রাকিব ভাইয়ের সাথে হেটে হেটে কথা বলতে, হাসতে, একসাথে বসে গল্প করতে। আমি চুপচাপ থাকতাম, টিউশনি করাতাম ওখান থেকে ভালো টাকা পেতাম এরপর আরো কিছু কাজ করতাম, পড়াশুনা নিয়ে ব্যাস্ত সময় কাটতো,এভাবেই প্রথম বর্ষ শেষ করে দ্বিতীয় বর্ষে উঠি,
একদিন খবর পাই তমা আপুর সাথে রাকিব ভাইয়ের বিয়ে হয়ে গেছে, বিশ্বাস করবে না মুসা, সেদিন আমি অনেক কাদঁছিলাম অঝোর ধারায়, কেন কাদঁছিলাম জানিনা। এর একমাসের মাথায় খবর পেলাম বাবা মারা গেছে, অসহ্য যন্ত্রনা আর কষ্ট আমাকে চেপে বসছিলো। সবকিছু ছেরে দিয়ে গ্রামে আসলাম, অধিক শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিলাম, বাবা মারা যাওয়ার পর ফ্যামীলির হাল ধরতে হয়েছিলো যার কারনে দশ মাস ক্যাম্পাসেই আসতে পারিনি, ১০ মাস পর আবার ক্যাম্পাসে আসলাম এত দিনে অনেক কিছু বদলে গেছে, বোনটার বিয়ে দিছি, এরপর জমি জমার হিসাব নিয়ে মাকে বোনের কাছে রেখে ফিরে আসলাম রাবির ক্যাম্পাসে। এসে দেখলাম এখানেও অনেক কিছু বদলে গেছে। একটু ঢোক গিললেন হাসিব ভাই, একটা পট বের করে পানি খেলেন, সামনেই টঙ্গাইল রেলওয়ে জংশন। হাত ঘরিটার দিকে তাকিয়ে খেয়াল করলাম রাত এগারটা আটচল্লিশ বাজে।
-এরপর কি হলো?? বেশ উৎসাহিত হয়েই জানতে চাইলাম।
-তেমন কিছুই না আমার ব্যাচমেটরা আমার থেকে ৬ মাস এগিয়ে গেলো, আর একটা পরিবর্তন ছিলো সেটা হলো তমা আপুর ডিভোর্স হয়ে গেছিলো
-ওয়াট! ডিভোর্স?? বিষ্মিত হয়েই বললাম, জাবাবে মাথা নেড়ে হাসিব ভাই বললেন,
-হ্যা ডিভোর্স,রাকিব ভাই তমা আপুর থেকে সাত ব্যাচ ছিনিয়ার ছিলো,
ছাত্রনেতা হিসাবেই তিনি ক্যাম্পাস ছারেননি দলীয় ক্ষমতায়, দখলদারিত্ব ক্ষমতা আর ভার্সিটির টেন্ডার নিয়ে পড়ে থাকতেন, এর আগেও একটা বিয়ে করেছিলেন তিনি, এরপর আগের বউয়ের কথা গোপন রেখেই তমা আপুকে দ্বিতীয় বিয়ে করলেন, আগের বিয়েটার খবর জানতেন না আপু, পড়ে যখন জানছিলেন তখন মেনেও নিছিলেন আপু, কিন্তু রাকিব ভাইয়ের শারীরিক অত্যাচার গুলো মানতে পারেন নি।
মদ, গাজা খেয়ে তাকে প্রায়ই মারতেন, এরপর বাধ্য হয়েই ডিভোর্স নিয়ে নেন আপু, ক্যাম্পাসে এসে মনমরা দেখাতাম ওনাকে, প্রায় এক বছর পর আপুর সাথে কথা হয় আমার, আপু ততদিনে আগের সেই আপু নেই, চেহারায় কালো দাগ চোখের নিচে কালি, তবুও হাসলে মনে হতো মুক্তা ঝরে। খুব মায়া লাগছিলো আমার। আমার বাবা মারা গেছেন এটা শুনে তিনিও কষ্ট পেয়েছিলেন, থার্ড ইয়ারে উঠলাম আপু তখন অনার্সের শেষ বর্ষে,তারও এক বছর লস গেছিলো, তার ফ্যামীলি তাকে নিয়ে বেশ হতাশ কারন রাকিব ভাইয়ের সাথে বিয়েটা তারা মেনে নিতে পারেনি, আর একটা বিয়ে হয়েছে বা ডিভোর্স খাওয়া মেয়ের জন্য ভালো পাত্রও পাওয়া যায়না, এরপর আপুর সাথে প্রায়ই কথা হতো দেখা হতো, আমার মনে হতো এই ক্যাম্পাসে আপুই আমাকে বেশি বিশ্বাস করতেন। এরপর জানুয়ারির এক শীতের বিকালে আপুকে বললাম তাকে আমি সেই প্রথম বর্ষ থেকেই ভালোবাসি এবং তাকে বিয়ে করতে চাই
-বাবা আমি ঘুমাবো হঠাৎ বাচ্চা সেই মেয়টি হাসিব ভাইকে বললো কথাটি,
-ওহ হো তোমার কথা তো ভুলেই গেলাম গল্প বলতে বলতে ওকে মা তুমি আমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাও,
-বাবা আর কতক্ষন লাগবে??
-ওই তো মা সামনেই উল্লাপাড়া ওখানেই নেমে পড়বো আমরা,
-আমার মেয়ে, আমার দিকে তাকিয়ে হাসিব ভাই বললেন,
-কি নাম ওর??
-আমার নাম নিলীমা,
আমি পড়ি ক্লাস টু তে,হাসিব ভাইয়ের উত্তরের আগেই আমার দিকে তাকিয়ে উত্তরটা দিলো নিলীমা, চোখে মুখে বুদ্বির ঝিলিক। মেয়েটা চোখ বুঝলেই বললাম এরপর তমা আপু আপনার বিয়ের প্রপোজাল শুনে কি বললেন?? কিছুক্ষন চুপ থেকে হাসিব ভাই বলতে শুরু করলেন,
-হাসলেন, অনেকক্ষন হাসলেন তমা আপু আমার প্রপোজ শুনে, এরপর অনেক বুঝালেন লজিক দিলেন, সমাজের কথা বললেন, আমিও নাছোরবান্দা, শেষমেশ বললেন ওকে তুই আমকে ভালোবাসিস, বিয়ে করতে চাস তাহলে আগামী তিন ঘন্টার মধ্যে যদি আমাকে বিয়ে করতে পারিস তাহলে বিয়ে করবো,
-মাত্র তিনঘন্টা!বেশ অবাক হয়েই জানতে চাইলাম, হাসলেন হাসিব ভাই, বললেন
– আপু ভাবছিলো আমি আবেগের কারনে বিয়ে করতে চাইছি, হয়তো এমন শর্ত শুনে পিছিয়ে পড়বো,কিন্তু না আমি সেদিন সহজ সরল থেকে বের হয়ে কঠিন দায়িত্ববান একটা ছেলেতে পরিনত হয়েছিলাম, আপুর কথা শুনেই খুব দ্রুত বন্ধুদের খবর দিলাম, সাক্ষি আনলাম, আপুর বাবা মাকে ফোন দিয়ে ম্যানেজ করলাম তারা বললেন তাদের এ নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই,তারা মেয়ে নিয়ে আর ভাবেন না ইত্যাদী ইত্যাদী। এরপর দেনমোহর খুব অল্পতে ধারন করেই বিয়ে করে ফেললাম, ক্যাম্পাসে আলোড়ন উঠার আগেই বিয়েটা হয়ে গেলো আমাদের। জানুয়ারীর ১১ তারিখ শীতের সন্ধায় আমার হাতের সাথে মিলিত হলো তমার হাত, খেয়াল করলাম এই প্রথম হাসিব ভাই আপুটা বাধ দিয়ে শুধু তমা নামটা বললেন, আমার কাজ দেখে তমা কোন শব্দই করতে পারেন নি। ও অবাক হয়ে দেখছিলো আমি কত দ্রুত সব কিছু ম্যানেজ করে ফেলছিলাম।
তিনঘন্টা নয় সেদিন বিয়ে শেষ হতে হতে সাত ঘন্টা লাগছিলো, রাত ১০ টা বেজে গেছিলো। নতুন বউ নিয়ে কোথায় উঠবো এই নিয়ে বেশ টেনশনে ছিলাম, তমার এক বান্ধুবী তার বাসায় উঠার কথা বললো, আমি কি যেনো ভাবলাম বললাম -না আজ আমরা কোথাও উঠবোনা, এরপর সবাইকে বিদায় দিয়ে তমাকে নিয়ে চলে আসলাম ভার্সিটির বিখ্যাত সেই প্যারিস রোডে, সারারাত আমরা হাটলাম, গল্প করলাম, সেদিন ছিলো অষ্টমী তিথীর পূর্নিমা, অপরুপ লাগছিলো আমার তমাকে, কখনো ঘাসের উপরে আমার কেলে মাথা রেখে ও শুয়েছিলো কখনো আমি গান গাইতাম ও খিলখিল করে হাসতো। খুব লজ্জা লাগছিলো আমাদের দুজনার ই, কত গল্প আর মনের কথাগুলো একে অপরকে বলছিলাম হাত ধরে হাটতে হাটতে প্যারীস রোডে। সেদিনের সেই পূর্নিমার রাত আর রাজশাহী ভার্সিটির প্যারিস রোডের গাছগুলো এক অদ্ভুত বাসর রাতের সাক্ষি হয়েছিলো।
এতটুকু বলেই লম্বা একটা দম নিলেন হাসিব ভাই এরপর বললেন “বুঝলে মুসা কাছাকাছি বয়সের সিনিয়ার মেয়ে বিয়ে করতে হলে ভাগ্যবান হতে হয়, যে সব ছেলেদের ভাগ্য ভালো থাকে তারা এমন বিয়ে করতে পারে, হাসলাম হাসিব ভাইয়ের কথা শুনে বললাম এরপরের ঘটনা কি?? এরপরের ঘটনা কিছুই না অদ্ভুত কিছু আনন্দ আমার জীবনে আসতে লাগলো, সারাদিন ক্লাস করা এরপর টিউশনি কোচিং করিয়ে যখন বাসায় আসতাম তখন সত্যি মনটা খুব ভালো হয়ে যেতো, ভার্সিটিতে আমাদের নিয়ে প্রচুর গল্প তৈরী হতো, আপনার মত আমিও ঘুরে বেরাতাম তবে সাথে থাকতো তমা, ভার্সিটি শেষ হলো, প্রথম হলাম পুরো ডিপার্টমেন্ট এ, এরপর আমার চাকরী হয়ে যায় আর্মিতে ক্যাপ্টেন হিসাবে সিগনাল কোরে, আপনি ডিফেন্সের লোক?? হেসে বললেন হুম কেন দেখে কি মনে হয় না, আমি বললাম হ্যা তা কিছুটা হলেও মনে হয়।
-এখন কোন পোস্টে??
-মেজর, মেজর হাসিব হাছান এই নামেই চিনে সবাই, এরপর চাকরী হওয়ার পরপরই আমাদের ভালোবাসার উপহার হিসাবে আল্লাহ আমাদেরকে দিলেন নিলিমাকে, চুপ হয়ে গেলেন কিছক্ষন এর জন্য এরপর আবার বললেন এটাই আমার গল্প মুসা,
-কেমন লাগলো গল্পটা?? বেশ লম্বা একটা সময় চুপ করে থেকে বললাম
-ইন্টারেস্টিং তবে আমার কেন যেনো মনে হচ্ছে গল্পটার এখনো কিছু বাকি আছে। ট্রেনটা লম্বা হুইসেল বাজিয়ে প্লাটফর্মে দাড়ালো উল্লাপারা জংশন, যমুনা ব্রীজের পরেই যমুনা নদীর একদম তীরে জংশনটা।
পরিশিষ্ট :- রাত তিনটা বিশ পাক্কা পঁয়তাল্লিশ মিনিট ধরে দারিয়ে আছি কবরের ফলকটার সামনে, হাসিব ভাই পাশে দাড়িয়ে আছেন,দোয়া করছেন চোখের পানিতে তার দাড়ি ভিজে যাচ্ছে, নিলীমা কবরটার মাটিটা হাতে নিয়ে চুমু খাচ্ছে। ফলকে গোটা গোটা অক্ষরে একটা নাম লিখা “মরহুমা জান্নাতুল ফেরদাউস তমা,” হাসিব ভাইয়ের আর্মিতে জয়েনের ৩য় বছরে একটা ট্রেনিং এ দেশের বাইরে যেতে হয় তাকে, নিলীমা তখন ছোট, তাকে বাবার বাড়ি থেকে আনতে যাওয়ার সময় একদল দুর্বৃত্তদের হাতে অপহরন হন তমা আপু,
অনেক খুজাখুজির পর তার লাশ পাওয়া যায় রাজশাহীর শহর থেকে অদুরে এক গ্রামের নষ্ট হয়ে যাওয়া কালভার্টের নিচে, প্রতিবেদনে বলা হয় মৃত্যুর পূর্বে অসংখ্যাবার গনধর্ষন আর নির্যাতনের শিকার হন তিনি, এবং প্রমান ঢাকতে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। আমরা হেটে চলছি যমুনার তীর ধরে, একটু পর ই ফজরের আজান দিবে, উল্লাপাড়া হাসিব ভাইয়ের শশুর বাড়ি, হালকা বাতাস বইছে নীলিমা ছোট ছোট পা ফেলে আমার হাত ধরে হাটছে, হাসিব ভাই একটু সামনে সামনে হাটছেন আর গুন গুন করে গাইছেন, “তুমি আর আমি, আমি আর তুমি , দারুন অভিমানী। দুজনার চোখে ঢল নেমেছে নীল যমুনার পানি”
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত