-“বাবু’টা তোমার?”
-“হুম।”
-“খুব তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে নিয়েছো দেখছি।”
-“আবেগ সামলাতে না পেরে তো অতীত’টা কালো অধ্যায় হয়ে গেলো।ভবিষ্যৎটা কালো করতে চাই না।”
-“অনেক গুছিয়ে কথা বলছো দেখছি।”
-“অগোছালো বলেই তো জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটা হারালাম!”
-“বাচ্চামো স্বভাবটাও আর নেই।”
-“নিজেরই একটা বাচ্চা হয়ে গেলো আর কতো বাচ্চামো করবো?”
-“কতো বছর হলো তোমার বাবু?”
-“৩ বছর।”
-“আমাদের ডিভোর্সও হলো চার বছরের কাছাকাছি।”
-“হুম।তিন বছর আট মাস ছয় দিন।”
-“আগের মতোই হিসাব করে রেখেছো দেখছি।”
-“শত আঘাত পেলেও কিছু কিছু অভ্যাস পরিবর্তন হয় না।”
-“তোমার স্বামী কী করে?”
-“ব্যাবসা করে।”
-“ওহ।” ভাঙ্গা গলায় অর্নব জিজ্ঞেস করলো,
-“ভালোবাসে?”
-“প্রথম স্বামী’র থেকেও বেশী কেয়ার করে।”
মৃধা’র কথা শুনে অর্নবের কথা বন্ধ হয়ে গেলো।সত্যিই কী সে মৃধার কেয়ার করতো না?তার উত্তর হয়তো না।নাহলে আজ দু’জন আলাদা থাকতো না।ভালোবেসে বিয়ে করা সত্যেও দুজন সুখি ছিলো না।তার অন্যতম কারণ হলো অর্নবের পরিবার।বিশ বছর বয়স হলেও মৃধার মধ্যে বাচ্চামো স্বভাব ছিলো।যেটা অর্নবের ফ্যামেলির কেউ পছন্দ করতো না।নিজেকে গুছাতে হুমড়ি খেয়ে পড়তো।তবে অর্নব’কে ভি-ষ-ন ভালোবাসতে জানতো।কিন্তু সবাই কী আর ভালোবাসা খুঁজে?সংসারী মেয়ে খুঁজে বেড়ায় সবাই।বিভিন্ন ভাবে টর্চার করতো অর্নবের পরিবারের লোক।যেটা মৃধার জন্য এক সময় সহ্যের বাইরে চলে যায়।সে সময় শুধু অর্নব’কে পাশে চেয়েছিলো।বিনিময়ে অর্নব ডিভোর্স দিলো।অবশ্য মৃধাও চেয়েছিলো ডিভোর্স।কারণ পরিবার আর মৃধা দুজনের মধ্যে যেকোনো একজনকে বেচে নিতে হয়েছিলো অর্নবের।
-“তুমি বিয়ে করেছো?”(মৃধা)
-“হুম।”
-“কে পছন্দ করেছে?”
-“মা!”
-“ওহ।আমার মতো বাচ্চা নই নিশ্চয়ই?”
-“নাহ।ও ভিতরে পুরাটাই বাচ্চা তবে মায়ের জন্য ভিতরের বাচ্চামো স্বভাবকে মৃত করে রাখে।কিন্তু এখন বাচ্চাদের মতো আবদার করে।”
-“কেনো?প্রেগন্যান্ট?”
-“প্রেগন্যান্ট নাহ।ব্রেইন টিউমার!”
-“অপারেশন করাও নিই?”
-“শেষ পর্যায়ে এসে জানতে পারি।সময় নেই হাতে!”
অর্নবের কথা শুনে মৃধা বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।”সময় নেই” মানে?আজ বা কাল যেকোনো সময় মারা যেতে পারে মেয়েটি?অর্নব?অর্নব কেমন আছে এখন?অর্নব-মৃধা’র ডিভোর্সের পেছনে মেয়েটার তো কোনো হাত ছিলো না।তাহলে সৃষ্টিকর্তা নির্দোষ কেনো শাস্তি দিচ্ছে?আচ্ছা অর্নবের কী কষ্ট হচ্ছে?ভালোবাসে তার বর্তমান বউকে?
-“ভালোবাসো তোমার ওয়াইফ’কে?”
-“ভালোবাসি কী না জানি না।কারণ আমি তো শুধু একজনকেই ভালোবাসি!”
মৃধা জানে অর্নব শুধু তাকেই ভালোবেসে।কিন্তু তার ভালোবাসা পরিবার নামক সম্পর্কের কাছে হার মানে।
-“তাহলে?”
-“মায়া!তিন বছর একটা সম্পর্কে ছিলাম।হঠাৎ করে মানুষটা নিরুদ্দেশ হয়ে গেলো জীবনটা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।”
-“মেয়েটা ভালোবাসে তোমাকে?”
-“হুম!চোখের আড়াল করতে চাই না।”
-“তোমার পরিবার কী বলছে?”
-“‘ভাগ্যের যা লিখন তাই হবে বাবা’–মা বলেছে”
-“ওহ।আমাদের ডিভোর্সের পরও এই কথাটা বলেছিলো?”
-“হুম।”
আর কী জিজ্ঞেস করবে ভেবে পাচ্ছে না মৃধা।অর্নবের স্ত্রী ব্রেইন টিউমার শুনে তার নিজের মন খারাপ হয়ে গেছে।যখন সে নিজে ছিলো না অর্নবের পাশে তখন মেয়েটা ছিলো।ডিভোর্সের পর মেয়েটিই হয়তো সামলিয়েছে অর্নবকে।মেয়েটাকে খুব দেখতে ইচ্ছে মৃধার।
-“তোমার ওয়াইফকে দেখতে ইচ্ছে করছে।দেখা করাবে?”
-“দুঃখীত আমি!তোমাকে আমার সাথে দেখলে নিজেকে সামলাতে পারবে না মেরী।সুখটা কোনোদিন দিতে পারিনি ওকে কষ্টটা দিতে চাই না।”
-“ওর নাম মেরী?”
-“হুম।”
-“ছবি তো থাকবে তোমার কাছে?”
-“হুম।”
অর্নব মোবাইল থেকে মেরীর ছবি দেখালো।তিনটা ছবি দেখেছে।প্রত্যেকটি ছবিতে মেয়েটি হাসছে,চোখ ভর্তি কাজল পরা।মৃধার নিজের কথা মনে পড়ে গেলো।অর্নব কাজল ভর্তি চোখ পছন্দ করতো বলে প্রতিদিন কাজল পরে থাকতো।তবে যেদিন তাদের ডিভোর্স হয়েছিলে সেদিনই কাজলের শেষ দেখা পেয়েছিলো।মেরীর ছবি দেখে মৃধা বললো,”যথেষ্ট সুন্দরী মেরী!”অর্নব মৃদু হাসলো।তবে হাসিটা আগের মতো না।মৃধার মনে হলো অর্নব শুধু ভদ্রতার হাসিলে হাসছে।
-“তোমার ছেলের নাম কী?”
-“আনন্দ!”
নামটা শুনে অর্নব মনে পড়ে গেলো মৃধাকে বলেছিলো তাদের প্রথম সন্তানের নাম আনন্দ রাখবে।কারণ তখন তারা দুজনে বিশ্বাস করতো প্রথম সন্তান সুখ হয়ে নেমে আসবে।অথচ ঠিকই মৃধার সন্তানের নাম আনন্দ রাখলো তবে অর্নবের সন্তান নই সে।
-“সাথে যে ছিলো সে কী তোমার বর?”
-“নাহ আয়ান।চিনোনি তুমি ও কে?আমার বড় মামা’র ছেলে?”
-“ওহ।সেভাবে খেয়াল করিনি।”
-“ও আজকে নিউ জব পেলো আমাকে বললো ট্রিট দিবে।আনন্দও জেদ ধরেছিলো ঘুরতে আসার।তাই রেস্টুরেন্টে আসলাম।”
-“ওহ।আমি মিটিংয়ের জন্য আসলাম।তোমার সাথে দেখা হয়ে গেলো।ওরা কোথায় গেলো এখন?”
-“আয়ান আর আনন্দ?”
-“হুম”
-“আশেপাশে কোথাও আছে।”
-“তারপর আর কী?জব করো?”
-“হুম।স্কুল টিচার!”
-“ওহ!”
মৃধা চেয়েছিলে বিয়ের পরও জব করতে কিন্তু অর্নব সেটা চাইনি।ওদের মাঝে ঝগড়ার অন্যতম কারণও ছিলো সেটা!
-“রাত হয়ে এলো আমার যেতে হবে।”(অর্নব)
-“তুমি তো খাওনি কিছু।”
-“মেরী অপেক্ষা করছে!”
-“ওহ।”
-“বাই!”
-“আবার দেখা হবে?”
-“হয়তোবা!আমরা কেউ জানতাম না এভাবে হুট করেই দেখা হয়ে যাবে আজ!এমনি হয়তো…”
-“বুঝলাম।”
অর্নব রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যেতেই মৃধা আয়ানকে কল করলো।আনন্দ এতোক্ষণে কান্না কটি শুরু করেছে হয়তো।মৃধা জানতো অর্নব বিয়ে করেছে কিন্তু মেয়েটার মেয়াদ যে অস্থায়ী সেটা জানতো না।মৃধার মনে ক্ষীণ আশার আলো জেগে উঠলো।আনন্দ বাবা ছাড়া বড় হয়েছে।মৃধা ভেবেছিলো তার প্রেগন্যান্সির কথা অর্নবকে একটি বিশেষ দিনে জানাবে।কিন্তু তার আগেই ডিভোর্স হয়ে যায়।মৃধা চাই নিই আর ওমন চাপে সংসার করতে।তাই অর্নবের কাছে সবকিছু অজানায় রেখে দিলো।ওমন একটা ফ্যামেলিতে মৃধা আর থাকতে চাইনি।মৃধা আর কাউকে বিয়েও করে নিই।অর্নব যাতে ভালো থাকে তাই সত্যিটা লুকিয়ে রাখলো।যেদিন অর্নব নিজ থেকে জানতে পারবে তার একটা ছেলে আছে সেদিন মৃধা সব সত্যি বলবে।কিন্তু এখন কী সে ভালো আছে?তখনি অর্নব রেস্টুরেন্টে ফিরে এসে বললো,
“তুমি এখনো যাওনি?”
“ওরা একটু দূরে আছে।আমি যাচ্ছি ওদের কাছে।তুমি আবার এলে যে?”
“মোবাইলটা তোমার কাছে ফেলে রেখে চলে গেলাম।”
“ওপস।আমারও মনে ছিলো না।নাও।”
অর্নবকে মোবাইল ফিরিয়ে দেওয়ার সময় স্কিনে টাচ হয়ে লকস্কীন দেখা গেলো।মৃধার হিজাবে আবদ্ধ করা চেহেরা এখনো ভাসছে।মৃধা ছবিটা খেয়াল করলো।
-“লকস্কীন পাল্টাওনি এখনো?”
-“ভালো শুধু একজনকেই বেসেছিলাম।”
-“মেরী?”
-“দায়ীত্ব!”
-“ও তোমার ফোন দেখে না?”
-“এটা আমার পারসোনাল ফোন।”
-“ওহ।”
-“তুমি এগিয়ে দিই একটু?”
-“আমাদের পথ আলাদা!”
মৃধার উত্তর শুনে অর্নব কিছু বললো না।আজ যদি অর্নব ফ্যামেলি চুজ না করে মৃধাকে চুজ করতো তাহলে হয়তো মেরী নামের মেয়েটা ওর জীবনে আসতো না।আজ গল্পটা অন্যরকম হতো!সত্যিই তাদের পথ আলাদা।”নিয়তি” তাদের আলাদা করেছে
গল্পের বিষয়:
গল্প