“ভাই আপনাদের স্বামী-স্ত্রীর এমন ভালোবাসা দেখে হিংসা হয়।বাসায় ফেরার পর আরও বেশি রাগ উঠে।বউকে দেখলেই রাগ উঠে।মনে হয় কেন যে বিয়ে করলাম” একবার পাশের কলিগ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে টিফিন বক্স খুলতে খুলতে কপাল ভাঁজ করে বলি।
– হিংসা হওয়ার কারণ কি? দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চেয়ার টেনে আমার কাছাকাছি বসলো।
– সবার বউ কি আর এমন হয়।যেমন আপনার বউ মাঝে-মাঝেই টিফিন বক্স দিয়ে যায়।কোনো দিন দেখেছেন আমার বউকে অফিসে এসে টিফিন বক্স দিয়ে যেতে।দেবেও না, হাসি মুখে একটা আলু সিদ্ধ পর্যন্ত খাওয়ালো না।ডিনার করার সময় কি বলে জানেন “নাও গেলো, আর আমাকে উদ্ধার করো” এই রকম ব্যবহার করলে রাগ তো উঠবেই। অনেক ভাগ্য করে একখান বউ পায়ছেন ভাই। কথা গুলো শুনেই ফিক করে হেসে দিলাম।একটুর জন্য গলায় রুটি আটকালো না।
– আজ আমার টিফিন বক্সে রুটি কিন্তু আমি রুটি পছন্দ করিনা।তবুও খেতে হবে বউয়ের মন জয় করতে।ভালো বউ পেতে ভাগ্য লাগেনা বানিয়ে নিতে হয়। ভ্রু-উচিয়ে তাকায় সে।
– কিভাবে?
– প্রতিটা মেয়েই প্রচন্ড পরিমাণ ভালোবাসা পাগল হয়।তারা চায় কেউ তাকে বুঝুক, নিজের কিছুটা সময় কাটানোর জন্য, কেয়ার নেবার মতো একটা মানুষ থাকুক তার জীবনে।ভালোবাসা দিলে দ্বিগুণ ভালোবাসা পাবেন।শুধু একটু কৌশল খাটাতে হবে। বিরক্ত হয়ে বলে সে।
– ধ্যাত! যত্তসব ফালতু কথা।
– ফালতু কেন হবে।আমার বউ টিফিন ভুলে আসায় সেটা নিজে এসে দিয়ে গেলো এর থেকে বড় প্রমাণ আর কি আছে।
– সেটা না হয় মানলাম কিন্তু আমার বউ আপনার বউয়ের মতো হতে পারবে না।গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি।আমার বউ যে পরিমাণ জেদি কখনোই তাকে কন্ট্রোলে আনা যাবেনা।মেয়েদের অতিরিক্ত জেদি হতে নেয় কারণ তাদের জীবনের বাঁকি সময় অন্যজনের সাথে কাটাতে হবে।একেবারেই অসম্ভব কথা বার্তা।জীবনের সব থেকে বড় ভুল হলো বিয়ে করা।ভাবছিলাম অনেক সুখে থাকবো কিন্তু সব উল্টো ঘটলো।
– আমি নিজেও প্রথম দিকে ভাবতাম বিয়ে করে ভুল করছি।সময়ের সাথে সব কিছু গুছিয়ে নিয়েছি এখন।চলেন আজ অফিস শেষ করে আমার বাসায় দাওয়াত রইলো আপনার। কিছু একটা চিন্তা-ভাবনা করার পর বলে।
– উঁম, গেলে মন্দ হবে না।আজও হয়তো আমার বউ ডাল ভাত ছাড়া অন্য কিছুই রান্না করে নায়। অফিস থেকে ফেরার পথে ৫ মিনিট আগে কল করে বলে দিলাম একজন নতুন কলিগকে সাথে নিয়ে আসতেছি ভালো কিছু রান্না করতে।বাসায় ফেরার পর দেখি এখনো রান্না করা শেষ হয়নি।রেগে বললাম
– সামান্য একটু রান্না করতেই এত সময় লাগে তোর।রান্নাটাও করতে পারিস না।
– ৫ মিনিটে রান্না হওয়া কি মুখের কথা।বললেই হয়ে গেলো।
বউও শাড়ীর আঁচলে চোখের জল মুছতে মুছতে ঝগড়া করা শুরু করে।মাঝ-খানে কলিগ ভাই ‘হা’ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।নিজেই বউয়ের মন জয় করার নিয়ম দেখাতে নিয়ে এসে ঝগড়া করছি।মিটিমিটি হেসে বলি…
– এবার দেখুন কিভাবে রাগ ভাঙ্গাতে হয়। টিপটিপ পায়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম বউকে।
– এই শোন না।স্যরি, আর এমন হবেনা।আমারই ভুল ঠিক হয়নি এভাবে রাগারাগি করা।তোমাকে ভালোবাসি বলেই একটু রাগ দেখায়।তুমি বোঝো না কেন? হাত সরিয়ে দেয়।
– এখন আর ভালোবাসা দেখাতে হবেনা যাও।বলতেই তো পারো আমার হাতের রান্না আর ভালো লাগেনা।
– স্যরি, এই দেখো তোমার জন্য এক গুচ্ছ লাল গোলাপ।এবার তো একটু হাসো।
খুশি হয়ে গালে চুমু দিলো।ডাইনিং টেবিলের মাঝ-খানে টপে ফুল গুলো সাজিয়ে।মুচকি হেসে রান্না করতে যায়।
– তোমরা দুজনে বসো আর মাত্র ৫ মিনিট লাগবে। অবাক হয়ে তাকায় কলিগ ভাইটা।
– বাহ, অনেক সুন্দর আইডিয়া তো।আমিও এখন থেকে এভাবেই বউয়ের রাগ ভাঙ্গাবো।
– মেয়েরা রাগলে ইমোশনাল হয়ে যায় কিন্তু আপনি রাগি হলে চলবে না।
বুদ্ধি ব্যবহার করে রাগ ভাঙ্গাতে হবে।স্যরি বললে কখনোই সম্মান নষ্ট হয়না বরং সম্মান বাড়ে ভালোবাসার মানু্ষটার কাছে।প্রথম যখন স্যরি বলবেন সে তখনো রাগ করে থাকবে।দ্বিতীয় বার রাগ না ভাঙ্গার কোনো প্রশ্নই আসেনা, যদি সে আপনাকে ভালোবেসে থাকে।বৃহস্পতিবার অফিস টাইম অর্ধেক থাকে। শুক্রবারের ছুটি এই সময়টা আপনার কাছের মানুষ গুলোকে দেবার জন্যই।সপ্তাহে দুই দিন যথেষ্ট।এক সাথে বসে চা খাবেন, বাইরে ফুচকা খাওয়াতে নিয়ে যাবেন তাহলেই খুশি মেয়েরা খুশি।যদি ফিরতে একটু দেড়ি হয় মেয়েরাই বেশি চিন্তিত থাকে। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে পা রাে।হাত মুঠো করে বললাম আমি…
– অল দ্যা বেস্ট।ফেরার পথে এক মুঠো নীল চুড়ি নিয়ে যাবেন।ভাবী দেখে অবশ্যই খুশি হবে।
গল্পের বিষয়:
গল্প