আশিকের গ্রামে যাচ্ছি আজ,এবারই প্রথম। ওর বড় বোনের বিয়ে উপলক্ষে।রাজশাহী স্টেশনে নামলাম।আশিক তিনদিন আগেই চলে এসেছে।কিন্তু ব্যস্ততার কারণে আমি আশিকের সাথে আসতে পারিনি।তাই আজকে আসতে হল।স্টেশনে বসে আছি, ঘড়িতে ১২টা ২১ বাজে।কিন্তু আশিক আসে নাই এখনও।টুপটাপ বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছে।ঠান্ডা বাতাসের সাথে পাল্লা দিতে না পেরে অবশেষে ব্যাগ থেকে টেম্পোরারি জ্যাকেট বের করে পড়লাম। সবেমাত্র চা-এর কাপে চুমুক দিতেই আশিকের ফোন আসল।আশিক বলল,দোস্ত,আর দশটা মিনিট অপেক্ষা কর্।আমি এই চলে আসছি। আমি বললাম আচ্ছা, আয়।দশ মিনিট বললেও কাঁটায় কাঁটায় ২১ মিনিট পরে আসল।আমি রাগের স্বরে বললাম,এই তোর দশ মিনিট?
“কিছুই করার নাই দোস্ত,সাইকেলের চাকা মাঝপথে লিক হয়ে গেছে।৪ কি.মি. হেঁটে আসলাম।”
“এখান থেকে কত দূর?”
“৭ কি.মি. মাত্র।”
“বাহ্ বাহ্,,,৭ কি.মি. তোর কাছে মাত্র মনে হয়?যাকগে কোন গাড়িও তো দেখি না।তো কি পা’য় শেষ সম্বল?”
“সেটাই তো মনে হচ্ছে।”
“আচ্ছা চল,কোন ব্যাপার না।ঝিঁঝিপোকার ডাক শুনব আর মশাদের ফ্রি ফ্রি রক্ত সাপ্লাই দিতে দিতে যাব।কত উদার আমরা…!”
পাকা রাস্তা শেষে গ্রামের মেঠোপথ ধরে হাঁটছি।শনশনে বাতাস আর ঝিঁঝিপোকার ডাক মনের ভিতরে শিহরণ তুলছিল।রাস্তার দুইপাশে ধূ-ধূ মাঠ।প্রায় ১.৫ কি.মি.হাঁটার পর গ্রামের ভিতরে প্রবেশ করলাম।
আশিকদের মাটির দোতলা বাড়ি।রাত আড়াইটা বাজা সত্ত্বেও বাড়িতে তখনো শোরগোল।দুই -একটা পিচ্চি হারিকেন নিয়ে বসে আছে।আর কিছুক্ষণ পরে গরু জবাই করা দেখবে বলে বাচ্চাগুলো চোখের ঘুমকে পরাস্ত করেছে।জেগে থাকা সবার সাথে আশিক আমায় পরিচয় করিয়ে দিল।দোতলায় দক্ষিণদিকের একদম শেষ মাথায় আমার থাকার ব্যাবস্থা করা হল।খুব ক্লান্ত ছিলাম তাই ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লাম।কূপবাতি টিপটিপ করে জ্বলছে,মাঝেমাঝে নিভে যাওয়ার মত অবস্থা।লক্ষ করলাম জানালা খোলা ছিল।জানালা লাগিয়ে দিয়ে আবার শু’লাম। সবেমাত্র চোখে একটু ঘুম এসেছে তখনি দরজায় ঠকঠক শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। আশিক যে নয় তা বুঝতে পারছি।কেননা আশিক আমাকে ঘরে রেখে বলেই গেছে যে,দরজায় ছিটকিনি লাগিয়ে দিতে, সে আর দেখা করতে আসতে পারবে না। গরু জবাই হবে,মাংস কাটাকাটি করা লাগবে। এক হাতে কূপবাতি নিয়ে দরজা খুলে দিলাম।কূপবাতির সোনালি আলোতে এক পরীর মুখ দেখলাম।বয়স ১৯ কিংবা ২০ হবে।আশিক প্রায় সবার কথাই গল্প করত,কিন্তু তার গল্পে এরকম রূপবতী মেয়ের কথা কখনো শুনিনি।
-আমি লীনা।আপনি নিশ্চয় আশিকের শহরের বন্ধু?
-জি।
-বিরক্ত করলাম না তো?
-না না।
-একটা কথা বলার ছিল।একটু বাহিরে যেতে হবে, আপনি যদি সাথে আসতেন তাহলে বেশ ভাল হত।
রাত সাড়ে তিনটা বাজে,কি জন্য যাবে,কোথায় যাবে? ইত্যাদি প্রশ্ন করে বিব্রত করলাম না।লীনার সাথে যাচ্ছি গলির পথ ধরে। গলি শেষ করে আমরা একটি বাঁশঝাড়ে এসে পৌঁছলাম।আশেপাশে কোন বাড়ি নেই।আমি দাঁড়িয়ে বললাম,লীনা?আমরা কোথায় যাচ্ছি? “এই বাঁশঝাড়ের ওপারে একটা বাড়ি আছে,সেখানে।”
আমরা বাঁশঝাড় পেড়িয়ে একটি বাড়ির সামনে নয় বরং একটি পুকুরের সামনে আসলাম।আমি বললাম,লীনা?এটা কোথায়?বাড়ি কই? লীনা আমার প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে হড়হড় করে পানিতে নেমে গেল।আমি অবাক হলাম,লীনা পানিতে ডুবে যাচ্ছে না।পানির উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।আমি ডাকার সাহস পেলাম না।পা কাঁপছে।কিছুদূর যাওয়ার পরে পানিতে ঝাপ দিল লীনা।মুহূর্তের মধ্যেই যেন ঢেউ বিলীন হয়ে গেল।আমি কি করব,কিছু বুঝতে পারছি না।ফিরে যাওয়ার পথও যেন খুঁজে পাচ্ছি না।চিৎকার করে সাহায্য চাইব,এমন অবস্থাও নেই।ঘুমোর ঘোরে এখানে আসলাম নাকি সত্যিই অদ্ভূত কিছু একটা ঘটল মাথায় ঢুকছে না।এখানে দাঁড়িয়ে থেকে অপেক্ষা করার সাহসও হচ্ছে না।মোবাইল কিংবা বাতি কিচ্ছু নিয়ে আসা হয় নি।জোসনার আলোতে অবশ্য পথ দেখা যাচ্ছে।মিনিট দুয়েক পরে,পিছু না তাকিয়ে বাঁশঝাড় পেড়িয়ে আসলাম।
গলির মুখে এসে বুক ধড়পড় একটু কমল।গলি পেড়িয়ে বিয়ে বাড়ি।খলা’তে মাংস কাটাকাটির কাজ চলছে।আশিক চেয়ারে বসে কিছু একটা হিসেব করছে।আমাকে দেখে আশিক বলল,কিরে ঘুমাসনি?এত রাতে আবার বের হলি কেন?কিছু দরকার?ফোন দিতে পারতিস। একবারে এত গুলো প্রশ্ন শুনে আমার উদ্বিগ্নতা আরো বেড়ে গেল।আমি বললাম,নাহ্ কিছু না। বাড়ি ভর্তি লোকজন।সবাই হই-হুল্লোড় করছে,আনন্দ করছে।কিন্তু আমার সবকিছু বিরক্তিকর লাগছে।মনে শান্তি পাচ্ছি না।উঠতে,বসতে,খেতে সব জায়গায় গতরাতের ঘটনাটা মাথায় খেলা করছে।কোনরকমেই হিসেব মিলছে না। এখন পৌষ মাস চলছে,রোদের তেজ নেই বললেই চলে।ঠান্ডা বাতাস ক্রমশ বিরক্তির পরিমাণ বাড়াচ্ছে।ঘরে গিয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকতে বড্ড ইচ্ছে হচ্ছে।কিন্তু সে উপায় নেই।ঘরে অনেক মানুষের আনাগোনা।তাছাড়া বরপক্ষ এসেছে।আশিকসহ, সবাই ব্যস্ত।এই সময়ে তাঁদের গিয়ে সমস্যার কথা বলা যথেষ্ট মানানসইও না।
“পান খাবেন?”
“না, আমি পান খাই না।”
“তাহলে সিগারেট খান নিশ্চয়?সিগারেট এনে দিব?”
আমি কিছুটা অবাক হলাম। আমি সিগারেট খাই এবং এই মুহূর্তে যে আমার সিগারেট খাওয়ার প্রচন্ড ইচ্ছে হচ্ছে, ইনি কি করে বুঝলেন!আমি লজ্জ্বার মাথা কেটে বললাম,একটা সিগারেট হলে মন্দ হত না।লজ্জ্বা পাচ্ছিলাম এই জন্য যে,যিনি আমাকে সিগারেটের কথা বললেন, তিনি মেয়ে মানুষ। মেয়েটি দেখতে কেমন তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।কালো ওড়নায় মুখ ঢেকে রেখেছে।তবে চোখ দুটি’র প্রশংসা না করে থাকা যায় না।ছোট ছোট অসম্ভব সুন্দর দুটি চোখ।চোখে কাজল।চোখের মায়ায় যেকেউ বিনা দ্বিধায় হারিয়ে যাবে নিমিষেই।
“এই নিন,আপনার সিগারেট”
“ধন্যবাদ।আরেকটা হেল্প যদি করতেন…”
“সেটা কি?”
“আগুন”
“আগুনও এনে দিতে হবে?খেতে দিলে শুতে চায় তেমন হয়ে গেল না ব্যাপারটা?”
“না, তেমন হয় নি।সিগারেট,আগুন দুটি পরিপূরক বস্তু।সো, আপনি শুধু সিগারেট এনে দিয়ে ওমনটা বলতে পারেন না।”
“ঠিক আছে, এনে দিচ্ছি।”
অল্প কিছুক্ষণ পরেই মেয়েটি দিয়াশলাই নিয়ে আসলেন।সিগারেটে আগুন জ্বালানো শেষেই ছুটলেন।আমি সাহস
করে ডেকে বললাম,আপনার নামটা?
“নাম জানা কি জরুরী?”
“জ্বি,জরুরী।যাঁরা আমার উপকার করে তাঁদের নাম জানলে খুশির পরিমাণটা বেশি হয়।অজানা কৌতূহল বয়ে বেড়াতে হয় না।”
“আমার নাম লীনা।” আমি চমকে উঠে বললাম,লীনা?
“হ্যাঁ, লীনা।চমকে উঠলেন যে!কোন সমস্যা?”
“না কোন সমস্যা না।আচ্ছা মুখ থেকে এই পর্দা কি সরানো যাবে?একনজর দেখতাম আপনাকে।”
“ঝাঁকি সহ্য করতে পারবেন তো?”
“আপনি রূপনগরের রূপসুন্দরী বুঝি?যে আপনাকে দেখে জ্ঞান হারাব…”
“তার থেকেও বেশি কিছু।”
“বেশ,এবার পর্দা সরান।”
মুখ থেকে পর্দা সরাতেই আমি আবারও চমক খেলাম,গতরাতে কুপবাতির আলোতে দেখা লীনা আর এই লীনা হবুহ এক।আচ্ছা রাতের ঘটনার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করব!এটা উনার এক ধরনের রোগও তো হতে পারে।জিজ্ঞেস করলে শুধু শুধু লজ্জ্বা পাবেন।রোগের কথা কেন ভাবছি?রোগ হলে পানির উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া তো আর সম্ভব ছিল না।অন্তত পানিতে ঝাপ দেওয়ার পরে চিৎকার চেঁচামেচি করত।আবল-তাবল কি সব ভাবছি!মজাও তো করতে পারেন।
“এত মনোযোগ দিয়ে কি ভাবছেন, শুনি।”
“তেমন কিছু না”
“ওহ,আমি যাই।কিছু প্রয়োজন হলে বলবেন।”
“আচ্ছা,শুনুন।গতকাল রাতে আপনি আমাকে পুকুরপাড়ে নিয়ে গিয়ে ওমন ভয়ানক কান্ডটা না ঘটালেই পারতেন।”
“কি বলছেন এসব?আজকেই তো প্রথম আপনার সাথে কথা বললাম।উল্টোপাল্টা স্বপ্ন দেখে ভুল বকছেন মনে হচ্ছে। হিহিহি।আমি যাই।” বিয়ের পরের দিন সকাল এগারটায় সিগারেট হাতে ঘরের ভিতরে পায়চারি করছি।আশিক ঘরে এসে বলল,কিরে কি করছিস?আমি হাত উুঁচিয়ে সিগারেট দেখালাম।আশিক বলল,শোন,বাড়িতে অনেক লোকজন।টিউবওয়েল পাড়ে সুযোগ মেলা মুশকিল।আমি পুকুরে যাচ্ছি, তুই যাবি? ‘কেন নয়?অবশ্যই যাব।পুকুরে অনেকদিন গোসল করা হয় না।’
শানবাঁধানো বিশাল পুকুর।পুকুরের দুইপাশে দুটি ঘাট।খুব পরিচিত পুকুর।মনে হচ্ছে,এর আগেও এসেছি।আমি ভাবছি,সেদিনের পুকুরটা নয় তো? আশিকের কাছে জানতে পারলাম,এ পুকুরের একটি ঐতিহ্যবাহী নাম আছে,বউপুকুর।বউপুকুর নামের পিছনেও আছে অনেক রহস্য।মুরব্বীদের মুখে শোনা কথা,এখানে একসময় রাজা কাঞ্চনকুমার রায় নামে এক দুষ্টু রাজার রাজত্ব ছিল।তাঁর বিলাসবহুল জীবনের একটি অংশ ছিল, প্রতিবাসে নতুন বিয়ে করা এবং একমাস সংসার জীবন শেষে তাকে পুকুরে বস্তাবন্দি করে ফেলে দেওয়া। আশিক আরো বলল,এখানেই শেষ নয় রে!গ্রামের লোকজন আরো নানার কথায় বলে,রাত্রিবেলা শুনলে ঘুমোতে পারবি না।তবু দিব্যি সবাই পুকুরে গোসল করে,কই কিছু তো হয় না।যাকগে আমি ওসবে বিশ্বাস করিনা।এককান দিয়ে শুনি, অন্য কান দিয়ে বের করে দেয়। আমি বললাম,যাকগে সেসব কথা।তোর সাথে একটা বিষয়ে আলাপ করার ছিল।সুযোগের অভাবে বলা হয় নি।
“বল,শুনি।”
“তোদের পরিবারে লীনা নামে কেউ আছে?”
“আছে নয়,ছিল।”
“ছিল মানে?”
“বছর পনের আগে মারা গেছে।আমার ছোটফুপু।”
“কিভাবে মারা গেছে?”
“সে আমি জানিনা।আমি তখন অনেক ছোট ছিলাম।পরে এসব নিয়ে কারো সাথে কখনো কথাও হয়নি।”
“ওহ।”
“কিন্তু লীনা ফুপির কথা তোকে কে বলল?”
“লীনা বলেছে।”
“কি বললি?”
“যা শুনেছিস,তাই বলেছি।লীনাই বলেছে আমাকে।আমি লীনাকে দেখেছি,সে আমার সাথে কথাও বলেছে।”
“স্বপ্নে?”
“স্বপ্নে নয় বন্ধু,বাস্তবেই,স্বজ্ঞানে।”
সেদিন রাতের ঘটনা পুরোটা বললে,আশিক খিলখিল করে হেসে উঠে বলল,আজগুবি গল্প রাখ্ তো।তুই লীনা ফুপির কথা কোনভাবে জেনেছিস।তাই বানিয়ে বানিয়ে কথা বাড়াচ্ছিস।উনি মারা গেছেন,কতদিন আগে।এতদিনে কাউকে দেখা দিলেন না।আর মহারাজা আসা মাত্রই উনাকে দেখা দিয়েছেন। আমি বললাম,আশিক।ভুলে যাস না।তুই কিন্তু ভাল করেই জানিস।আমার একটা বিশেষ ক্ষমতা আছে।সেটা হচ্ছে, আত্মা আমায় দেখতে পায়,আর আমি আত্মাদের। আশিক হেসে বলল,সেটা আমি জানি।কিন্তু লীনা ফুপি অনেক আগে মারা গেছেন।কিছু হওয়ার থাকলে অনেক আগেই হত। আশিক ঘাড় থেকে গামছা শানে রেখে,পুকুরে লাফ দিলে,আমিও পুকুরে নামার জন্য প্রস্তুত হলাম।আমি বললাম,চল পুকুরের মধ্যে যাই।মরা লাশের গন্ধ শুকে আসি।
আশিক ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরে বলল,ঠিক আছে চল।পুকুরের মাঝে আসার পরে থেকেই আমার পা’য়ে কিছু একটা ঠেকছিল।কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার ডান পা খামছে ধরল একটি হাত।আমি প্রথমে ভেবেছিলাম আশিক,হয়তো মজা করছে।কিন্তু আশিক না।আশিক আমার থেকে প্রায় দশহাত দূরে ভাসছে।আশিককে ডেকে বললাম,দোস্ত কিছু একটা আমার পা জাপটে ধরেছে।ও আমার কথায় গুরুত্ব দিল না বরং হাসছে।পা ছাড়ানোর যতই চেষ্ঠা করছি,ততই আমাকে টেনে পানির গভীরে ঢোকানা হচ্ছে।প্রাণপণে চেষ্ঠা করছি, নিজেকে ছাড়ানোর।কিন্তু পারছি না।আমাকে টেনে পানির অনেক গভীরে নিয়ে যাওয়া হল।চোখ মেলে দেখি,চারিদিকে লাল রংয়ের ছড়াছড়ি।আমার সামনে ভেসে উঠল কাঁটাছেঁড়া বিভৎস এক নারী। আমি জিজ্ঞেস করলাম,কে তুমি? বিভৎস নারী চিৎকার করে বলল,লীনা।আমি লীনা।
“লী….লীনা?”
“হ্যাঁ, আমিই লীনা।”
“তো…তুমি আমার কাছে কি চাও?”
“তোমার শরীর।”
“আমার শরীর?আ—আমি তোমার কি ক্ষতি করেছি?আমার শরীর কেন নিবে?”
“প্রতিশোধ নিব।তোমার শরীরে ঢুকে আমি প্রতিশোধ নিব।”
“কিসের প্রতিশোধ?সব খুলে বললে,আমি আমার শরীর তোমাকে দিতে পারি।”
“চোখ বন্ধ করো।দেখ,মাটির দোতলা বাড়ি।বাড়িতে কেউ নয়।তুমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছ।বাহিরে অনেক বৃষ্টি হচ্ছে,দোতলার দক্ষিণ দিকের ঘর থেকে মেয়ে কন্ঠে গুণগুণে গানের আওয়াজ আসছে।কি শুনতে পাচ্ছ?”
“পাচ্ছি,তুমি বলতে থাক।”
“আওয়াজের দিকে যাও।দরজা খুলে ঘরের ভিতরে যাও।”
“একটি মেয়ে,জানালার গিরিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে।আকাশ মাঝেমাঝে ডাকছে আর মেয়েটি চমকে উঠছে বারবার।”
“আর কাউকে দেখতে পাচ্ছ?”
“না।”
“অপেক্ষা করো।”
”পাচ্ছি,একটি যুবক ছেলে ঘরে ঢুকল।ধীরে ধীরে পা ফেলছে।মেয়েটির দিকেই এগুচ্ছে।সে এখনো কিছু টের পায়নি।পিছন থেকে মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরল।মেয়েটি চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে থেমে গেল আর লোকটিকে বলল,হারুন তুই?এসব কি করছিস?ছাড়্ আমাকে।
ছেলেটির নাম হারুন।মেয়েটির কোন কথাই শুনছে না সে।জাপটে ধরে বিছানায় ফেলে দিল মেয়েটিকে।মেয়েটি রেগে গিয়ে বলল,হারুন।ভাল হবে না কিন্তু। ছাড়্ আমাকে।আমি তোর বোন হই।হারুন বলল,নিজের বোন তো আর নও।চাচাত বোন।মিছেমিছি ন্যাকামি করো না।মেনে নাও,তাহলে জোর করে আমাকে কিছু করতে হবে না।হারুনের বুকে জোরে ধাক্কা দিয়ে খাট থেকে ফেল দিল মেয়েটি।দরজা খুলতে যেতেই হারুন আবার তাকে ধরে ফেলে বলল,কোথায় যাবে?কাকে বলবে?বাড়িতে কেউ নেই। তোর পা’য়ে পড়ি হারুন।তুই আমার এমন সর্বনাশ করিস না। সর্বনাশ আর কই করব?একটু আদরই তো করব।মেয়েটিকে ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দিল।পরনের কাপড় একটানে ছিঁড়ে ফেলল।নাহ্,,,,” “কি-হল চোখ খুললে কেন?” “আমি আর দেখতে পারব না।মেয়েটি এখন নগ্ন।হারুণ হায়েনার মত কামড়ে কামড়ে খাচ্ছে।”
আমার সামনের বিভৎস চেহারার মেয়েটি কেঁদে কেঁদে বলল,ঐ অসহায় মেয়েটিই আমি।আমিই সেই নির্যাতিত লীনা।যে আপন চাচাত ভাইয়ের কাছে ধর্ষিত হয়েছিল।তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে?চুপ করে আছ, কেন?আমি কোন মানুষের শরীরে ঢুকতে পারিনা।কাউকে ছুঁতে পযর্ন্ত পারিনা।কেউ আমায় দেখতে পযর্ন্ত পারে না।কিন্তু সেদিন রাতে তুমি আমায় দেখতে পেলে।কথার জবাব পযর্ন্ত দিলে।আমি সেদিন অনেক অবাক হয়েছিলাম।সাথে খুশিও হয়েছিলাম এইভেবে যে,আমি এবার প্রতিশোধ নিতে পারব।তবে সমস্যা হচ্ছে আমি তোমাকে ছুঁতে পারছি।অথচ তোমার শরীরে ঢুকতে পারছি না।কিন্তু কেন?” “আমার চোখের দিকে তাকাও।বাম চোখের দিকে।কালো গোল অংশের মাঝে একটি তিল আছে।তিলের ছিদ্রপথে তোমাকে ঢুকতে হবে।”
আমার চারিপাশে পানির উথালপাতাল ঢেউ শুরু হয়ে গেল।মুহূর্তেই আমি অচেতন হয়ে গেলাম।তারপরে কি কি ঘটেছে,কিভাবে ঘটেছে।আমি কিচ্ছু জানিনা।যখন জ্ঞান ফিরে তখন দেখি,বাড়ির আঙিনায় আমার দূর্বল দেহ পড়ে আছে।অদূরে আশিক বসে আছে।বাড়ির অন্য সবাইও বসে আছে।সবার চোখেমুখে চিন্তার ছাপ।কান্নাকাটি করছে।মাথা তুলে উঠে বসতেই আমি চমকে গেলাম।আমার সামনে রক্তাক্ত ছিন্নভিন্ন নিথর একটি দেহ পড়ে আছে।তবে ইনিই কি সেই হারুন?
গল্পের বিষয়:
গল্প