“দাঁড়াও বলছি, কথা আছে।” ইদানিং একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছি আমি কেমন যেন হয়ে যাচ্ছি। অবশ্য এই বিষয়টা নিয়ে আগে কখনো ভাবিও নি। তিয়ানার ডাক শুনে একটু ওর দিকে তাকিয়ে হাটা দিলাম। শরীর টা কেমন করে যেন উঠলো। “এই দাঁড়াতে বললাম নাহ?
আমি কোন সাড়া না দিয়ে তারপরো হাটতে লাগলাম। ভার্সিটির গেটের কাছে চলে এসেছি। গেটের কাছে এসে বামে ডানে তাকিয়ে যেই রাস্তা পার হতে যাবো অমনি ও আমার হাতটা ধরলো। আমি ওর দিকে তাকালাম , তিয়ানাও চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো। ওর চোখ দুটো যেন আমাকে বলছে.. কি কথা কানে যায় না? দাঁড়াতে বলছি নাহ? শোনো নি?.. আমি হাতের দিকে তাকিয়ে তারপর একটা ঝাড়ি দিয়ে হাতটা ছাড়িয়ে নিলাম ওর হাত থেকে। একটু সরে গিয়ে রাস্তা পার হতে যাবো ও আমার সামনে এসে দাঁড়ায় তারপর বললো “আগে তো সারাক্ষন আমার পিছনে লেগে থাকতে, আমাকে পাওয়ার জন্য কত কিছুই করতে আর এখন? পরিবর্তন করেছো নাকি নিজেকে?
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। আসলে কথা সত্য তিয়ানাকে আমার ভালো লাগে। কিন্তু ওর সাথে যা করেছি তারপরো আমার সাথে কথা বলতে আসবে আমি ভাবিনি। আমার চুপ থাকা দেখে ও আবার বললো “চেহারার এ কি হাল করেছো? চুল এলোমেলো, মুখের কি অবস্হা ইয়া আল্লাহ। ও এমন ভাবে কথা বলছে যেন ওর সাথে আমার কিছুই হয় নি। আমি নিজেই তো এখনো নিজকে স্বাভাবিক করতে পারি নি। ঠিক মত খাওয়া দাওয়াও করি নি দু সপ্তাহ ধরে। মুখে কেমন খোচা খোচা দাঁড়ি উঠে ভরে গেছে। কিন্তু ও? একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললাম…
“কিছু বলার আছে আপনার?
“শুধু বলার না, করার ও আছে। আমি রাস্তার বাম আর ডান পাশে তাকিয়ে থেকেই বললাম…
“যা বলার তাড়াতাড়ি বলেন। কাজ আছে। মেয়ে মানুষের সাথে বেশি কথা বলি না।
“রাস্তার মাঝে আমি দাঁড়িয়ে কিছু বলতে পারবো না। অন্য কোথাও চলো।
এইটা বলেই ও আমার হাতটা আবার ধরলো। তারপর হাত ধরে টানতে লাগলো। আমি কিছু বলতে গিয়েও যেন থেমে গেলাম। আমি বেশ অবাক হলাম। চুপ চাপ ওর সাথে হাটতে লাগলাম। ও আমার হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি একটা আসামী পালিয়ে যেতে যেন না পারি কিন্তু ওর সাথে আমি যা করেছি ও কি তা ভুলে গেছে? তাছাড়া সাজিদ এর কাছে না গিয়ে আমার কাছে কেন? আমি কিছুই বুঝলাম না। পাঁচ মিনিটের মত হেটে যেতেই ও ফুটপাথের কয়েকটা ছেলে মেয়েকে ডাক দিলো। ওরা কাছে আসতেই ওদের বললো..
“কিছু খাবি?
ওরা প্রত্যেকেই হাসি দিয়ে আইসক্রীম ওয়ালাকে দেখিয়ে দিলো। আইসক্রীম ওয়ালার কাছে গিয়ে বললো.. ওদের প্রত্যেককে আইসক্রীম দেন। আমার পাশে বড় বাচ্চা ছেলেটাকেও দিবেন। এইটা বলেই একটা হাসি দিল। আইসক্রীম ওয়ালাও আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত গুলো দেখিয়ে একটা হাসি দিল। আইসক্রীম ওয়ালা নিশ্চয় ভাবছে আমি তিয়ানার কাছে আইসক্রীম খাওয়ার জন্য বায়না ধরেছি আর তিয়ানা আমাকে আইসক্রীম খাওয়াতে নিয়ে আসছে। আমাকে কি বড় বাচ্চার মত লাগে? আমাকে দিতে চাইলেও আমি নিলাম না আইসক্রীম। আমি যখন নিলাম না, ও ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বললো “না খেলে নাই। বড় বাচ্চাদের আইসক্রীম খেতে নেই। খাও আর আর না খাও আইসক্রীমের টাকা দিয়ে দাও। এমন ভাবে তাকিয়ে বললো আমি কিছু বলতে গিয়েও কিছু বলতে পারি নি। ছেলেমেয় গুলা আইসক্রীম পেয়ে খতে খেতে অন্য দিকে গেল আর তিয়ানাও একহাতে খেতে খেতে আর একহাতে আমার হাত ধরে হাটতে লাগলো। আমি শুধু এইটুকুই ভাবছি। ও কি ঐদিনের বিষয়টা ভুলে গেছে?
বাসার গেট থেকে বের হয়েই হাতের ডান দিকের রাস্তা দিয়েই ফাইজার কলেজে যেতে হয়। হাতের ডান পাশের রাস্তাটা দিয়ে হাটার আগে বাম পাশে চোখ যেতেই দেখলো পকেটে দু হাত ঢুকিয়ে আদনানা দাঁড়িয়ে আছে। ফাইজা ওর দিকে একটু তাকিয়ে ডান পাশের রাস্তায় কিছু দুর হেটে যাওয়ার পর থেমে দাঁড়ায়। তারপর পিছনে ফিরে দেখে আদনান এখনো পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ফাইজা কি করবে বুঝতে পারছে না। মুখের সামনে ছোট ছোট চুল গুলা কানে গুজে সোজা আদনানের সামনে এসে দাঁড়ায়। ফাইজা সামনে আসতেই আদনান মাথাটা নিচু করে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে। ফাইজা ওর সামনে এসে কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললো…
“আপনি কি চান বলুন তো? আদনান নিচের দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে না সূচক ইশারা দেয়।
“তো কি করছেন দাঁড়িয়ে থেকে? আদনান মাথাটা তুলে চোখের চশমাটা ঠিক করে বললো..
“আমি যাই।
“যাই মানে? আমি কিছু আস্ক করেছি।
“এমনিই এসেছিলাম এইদিক টায়।
“না আপনি এমনি এমনি আসেন নি।
আদনান চুপ করে রইলো। কি বলবে বুঝতে পারছে না। আদনানের চুপ থাকা দেখে ফাইজা আবার বললো “দেখুন আমি সব জানি আপনি কেন এখানে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন। আপনি যেটা চাচ্ছেন সেটার আশা ছেড়ে দিন। আপনাকে ভদ্র ছেলের মতই লাগছে তাই সোজা বলছি এখানে আর যেন না দেখি। দেখলে আমি কি করবো আপনি হয়তো ভাবতেও পারবেন না। আদনান চোখের চশমাটা আবার ঠিক করে চুপ হয়ে থাকে। ফাইজা আবার বললো…
“কি হলো আপনি এখনো দাঁড়িয়ে আছেন?
“আরো একটু থাকি? আপনি চলে যাওয়ার সময় এইখানে দাঁড়িয়ে থেকে আপনার চলে যাওয়াটা দেখেই চলে যাবো। কথাটা শুনেই ফাইজা একটু অবাক হয়ে চুপ হয়ে থাকে। ধমক দিয়ে কিছু বলবে সেই শক্তিটাও ফাইজার মাঝে কাজ করছে না। তবে ফাইজা এইসব মায়া লাগানো কথাবার্তায় আর কান দেয় না। নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে একটা জোরে ধমক দিল…
“গালে ঠাস ঠাস করে দুইটা থাপ্পড় লাগালে সব ঠিক হয়ে যাবে বুঝছিস? তুই এখনো এইখানে দাঁড়িয়ে আছিস। তোকে যেতে বলছি নাহ?
আদনান মাথাটা নিচু করে আস্তে আস্তে হাটতে থাকে। মুখটা কেমন ঝাপসা হয়ে যায়। ফাইজা দাঁড়িয়ে থেকে আদনানের চলে যাওয়াটা দেখে। আদনান চলে গেলেই ফাইজা ডান পাশের রাস্তাটার দিকে পা বাড়ায়। আর নিজেকে কেমন যেন মনে করছে। একবার ভাবছে এমনটা না করলেও হতো। বেশি বলে ফেলেছি। এই গুলা ভাবতে ভাবতেই ফাইজা হাটতে থাকে তিয়ানা এখনো আমার হাত ধরে হাটছে আর আইসক্রীম খাচ্ছে। ওর এইসব কান্ড দেখে একটু থেমে দাঁড়ালাম। ও আইসক্রীমে একটা কামড় দিয়ে আমাকে বললো..
“কি হলো দাঁড়ালে কেন?
আমি দাঁতে দাঁত চেপে হাতটা আবার ঝাড়ি দিয়ে ওর হাত থেকে ছাড়িয়ে নিলাম। আসলে সত্য বলতে কি ওকে এখন আমার কেমন যেন লাগে। ওকে আমার ভালো লাগে ওকে আমি সেটা বলেছিও কিন্তু ও আমায় বলে দিয়েছিল ও রিলেশনে জড়াবে না। ওর ফ্যামিলি শুনলে ওর খুব ভয়ানক অবস্হা হবে। যদি পারি ফ্রেন্ড হয়ে থাকতে। আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। তারপর কয়েকদিন কেটে যায়। আমার চেহারা একদম মন মরা হয়ে থাকতো। এইভাবে ফিরিয়ে দিবে আশা করি নি, কিন্তু এটাও মানতে হচ্ছে, কোন ফ্যামিলিই রিলেশন ব্যাপারটা সহজে মেনে নেয় না। আমার এমন অবস্হা দেখে ফারাবী একদিন বললো..
“দেখ জাহেদ ভুলে যাতো এসব। আমি কিছুই বলিনি। ফারাবী আমার ক্লাসমেট। আমার চুপ থাকা দেখে ও বললো..
“আচ্ছা তুই কি সত্যিই ওরে ভালোবাসিস? আমি মন মরা হয়ে হ্যাঁ সূচক ইশারা দিলাম। ফারাবী আমার কাধে হাত রেখে বললো..
“চল আমার সাথে।
“কোথায়?
“আরে বেটা এমন ভাবে কথা বলতেছিস মনে হচ্ছে তোর আর ওর সাথে অনেক দিনের সম্পর্ক ছিল।
এমন ছ্যাকা দিছে তাই এই অবস্হা হইছে। প্রেম ও করলি না, তার আগেই এই দশা। টঙ্গে চল চা খাইতে খাইতে বলমু। আমি চুপচাপ ফারাবীর সাথে গেলাম। ফারাবী দুইটা চা নিয়ে একটা আমাকে দেয় আর একটা ও নেয়। আমি চায়ের কাপটা ধরে রেখে চায়ের দিকে তাকিয়ে আছি। ও চুমুক দিতে দিতে বললো..
“শোন লাইগা থাক।
“মানে?
“আরে বেটা বুঝস না? সব মেয়েরাই প্রথম প্রথম এই গুলা বলে। মেয়েরা প্রথমে এক্সেপ্ট করে না।
“তো কি করে? ও একটু হাসলো। তারপর বললো..
“তুই আসলে একটা গাধা জানতাম নাতো। বেটা প্রেম কি হাতের মোয়া? যে চাইলাম আর পেয়ে গেলাম। ওর পিছনে লেগে থাক। সব সময় ওর আশে পাশে থাকবি। ওর খেয়াল রাখবি। ওর আবদার পূরণ করতে চেষ্টা করবি। দেখবি তোর প্রতি আস্তে আস্তে মায়া তৈরি হবে। ফারাবীর কথাটা আমি মনোযোগ দিয়ে শুনলাম। ও যা যা বলেছে আমি ঠিক তাই তাই করতে লাগলাম। প্রায় একমাস আমি ওর আশে পাশে আঠার মত লেগে থাকতাম। হুট করে একদিন ও সাজিদকে আমার সামনে এনে বললো “এই জাহেদ তোমার সাথে কিছু কথা আছে।
কথাটা শুনে আমার মনে একটা ভালো লাগা কাজ শুরু করলো। ভেবেছিলাম ও আমাকে ভালো লাগার কথা বলবে কিন্তু ও যা বললো যেন আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়েছিল। ও একটু চুপ করে সাজিদের দিকে তাকিয়ে বললো..
“ও সাজিদ। ইংলিশ ডিপার্টমেন্টে পড়ে।
“হ্যাঁ চিনি তো। আমাদের ভার্সিটিতে পড়ে চিনবো না কেন? ডিপার্টমেন্ট আলাদা হতে পারে তাই বলে কি চিনবো না?
“না মানে।
“কি?
“আসলে ও আমাকে লাইক করে। আমি সাজিদের দিকে তাকালাম। বুকটা কেমন করে যেন উঠলো। একটু স্বাভাবিক হয়ে বললাম..
“হ্যাঁ লাইক সবাই করতে পারে ব্যাপার না, বাট মানুষ তো একজন হবে। আর সে মানুষটা আমি তাই না?
“না আসলে আমি ওকে…
ও পুরো কথাটা বললো না। কিন্তু আমার বুঝতে একটুও বাকি রইলো না। মাথার মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। আমি তো আগে আমার ভালো লাগার কথা বলেছিলাম। তাহলে সাজিদের সাথে রিলেশনে জড়াবার আগে ফ্যামিলির কথা ভাবে নি? আমি আর কিছু না বলে ওদের সামনে থেকে চলে আসি। ঐদিন সারা রাত ঘুমাই নি। ভাবলাম একটা শায়েস্তা করবো। আমাকে ভালো লাগে না, বা আমাকে ওর সাথে মানায় না বললেই হতো। এইভাবে ফ্যামিলির অযুহাত দেখাবে কেন। এরপর দিনই ওকে আমি হেসে হেসে বললাম…
“আমরা না হয় ফ্রেন্ড হয়ে থাকি কি বলো। আমার সাথে তোমার কপালে মিল নেই তাই হয় নি। আচ্ছা রিলেশনে জড়ালে ট্রিট দিবে না?
ও একটু অবাক হয়ে গেল। আমি এই রকম স্বাভাবিকভাবে কথা বলবো হয়তো আশা করে নি। তারপর আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকলো। এর একটু পরই আমাকে খাওয়াতে নিয়ে যায় যেটার জন্য আমি সুযোগ খুঁজছিলাম। রিকশায় উঠে কিছু দুর যেতেই ওর মুখ আমি অজ্ঞান করা ঔষধ আর রুমাল দিয়ে চেপে ধরি। তারপর কয়েক সেকেন্ডেই ও অজ্ঞান হয়ে যায়। এরপর ওকে আমি একটা বিল্ডিং এ আটকে রাখি তাও একদিন। ঐ বিল্ডিং নিমার্ন কাজ চলছিল। কিন্তু মামলা জনিত কারনে নির্মান কাজ অফ ছিল। ওকে ওখানে এনে মুখে এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে সজাগ করলাম। তার আগে হাত পা একটা চেয়ারে বাধলাম। মুখে টেপ লাগালাম। ও চোখ খুলতেই হু হু করে চেচামেচি করতে শুরু করলো। কষে ওর গালে একটা থাপ্পড় মের বললাম চুপ। চুপ কর হারাম জাদি। ও ভয়ে চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমার মাথা একদমি ঠিক ছিল না। আমি ওকে কতটা লাইক করি কান্না করতে করতে বললাম। এটাও বললাম “হয়তো তুমি বলবে আমি যদি সত্যিই তোমাকে লাইক করতাম তাহলে তোমার সাথে এমন করতাম না। তোমার সুখই আমি চাইতাম। এই কথা গুলা হয়ত বলবে। তবে এইটুকু বলিই এই জাহেদ সত্যিই তোমায় লাইক করে। আমি চাইলে তোমার এখন অনেক কিছু করতে পারি। তুমি আমার সাথে তোমার ফ্যামিলির অযুহাতটা না দিলেই পারতে। আমাকে সরাসরিই বলে দিতা। ঠিকি তো প্রেমে পড়লা, ফ্যামিলির চিন্তা তখন মাথায় আসে নি?
একদিন আটকে রেখে ওকে ছেড়ে দি। তারপর দু সপ্তাহ নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিলাম। সবার থেকে আলাদা হয়ে দু সপ্তাহের জন্য গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়েছিলাম। আর আজকে সকালে শহরে এসে বাসায় আম্মার সাথে দেখা করে কিছুক্ষন থেকে ভার্সিটিতে আসি। আম্মাকে বলেই গিয়েছিলাম গ্রামে যাচ্ছি কেউ খুঁজলে বলার দরকার নেই। আম্মা প্রথমে একটু অবাক হয়েছিল। আর ভার্সিটিতে এসে ক্যাম্পাসে একটু গিয়েই আবার বের হয়ে আসি। কিন্তু আমার সাথে ও এমন ভাবে আচরণ করছে মনে হচ্ছে ওর সাথে আমার কিছুই হয় নি। আমি ওকে আপনি করে বলা শুরু করছি যেন ওকে চিনি না। কিন্তু ঠিকি আমি ওকে আইসক্রীম কিনে দিয়েছি না চিনার অভিনয় করলেও। আমার তাকানো দেখে ও আইসক্রীম খেতে খেতে আবার বললো…
“কি হলো? হঠাত্ মাঝ পথে দাঁড়ালে কেন?
“আপনি আমার সাথে কেন? আপনি আপনার সাজিদের কাছে যান। ও একটু হাসতে লাগলো। এখানে হাসার কি আছে কিছুই বুঝলাম না। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই ও বললো..
“যাবো না। না গেলে কি করবা?
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। ও এবার একটু ইতস্তত হয়ে বললো “আসলে সাজিদ আমার শুধুই ফ্রেন্ড। আমি যখন তোমাকে ফিরিয়ে দিলাম তুমি তারপরো আমার আশে পাশে সারাক্ষন লেগে থাকতে। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। সাজিদের কাছে বিষয়টা শেয়ার করতেই ও আমাকে একটু অভিনয় করতে বলেছিল ওর সাথে আমার রিলেশন এইটা নিয়ে। ভেবে ছিলাম তুমি সরে যাবে। কিন্তু তুমি যে এই রকম কান্ড করবে আমি ভাবতে ও পারি নি। পরে বুঝলাম তুমি আমায় কতটা লাইক করো। সাজিদ আর আমার রিলেশনের কথায় তুমি এইভাবে জ্বলে উঠবে ভাবি নি। তুমি যদি আমায় লাইক না করতে এইরকম জ্বলতে না। কিন্তু তুমি আমায় এইভাবে থাপ্পড় মারতে পারলে?
এইটা বলেই তিয়ানা থামে। আমি একটু অবাক হয়ে গেলাম। এই মেয়ে বলে কি? মাথার চুল চুলকিয়ে বললাম “আমার সাথে রিলেশনে জড়ানোর পর যখন ফ্যামিলি মানবে না, তখন নিশ্চয় বলবেন জাহেদ তুমি আমার থেকে ভালো মেয়ে পাবা। আমাকে ভুলে যাও। আমার ফ্যামিলির অবাধ্য হতে পারবো না এই রকম হলে আপনার সাথে আমি প্রেম করবো না। “তিয়ানা একটু চুপ হয়ে গেল। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। বেশির ভাগই রিলেশনে মেয়েরা ছেলেদের এই কথাটা বলে.. ভুলে যাও, আমার থেকে ভালো মেয়ে পাবা.. আমিও তিয়ানার দিকে চুপ করে তাকিয়ে রইলাম। ও হাতের আইসক্রীমের কাঠিটা ফেলে দিয়ে বললো “যাও প্রেম করতে হবে না। একেবারে বাসায় প্রস্তাব নিয়ে যাইয়ো। বিয়ে হলে বিয়ের পর প্রেম কইরো।
আমি চুপ করে রইলাম। ও মুখ অন্য দিকে করে তাকিয়ে আছে। ও অন্য দিকে তাকিয়ে থেকেই বললো “কেন দুজন চাইলে কি দুজনের পরিবারকে মানাতে পারি না? এমনভাবে দুজন গড়ে উঠবো যাতে আমার ফ্যামিলির কাছে গ্রহণ হও। আর আমি থাকতে গ্রহণ যোগ্য হবে না কেন? আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। আসলেই ঠিক দুজন যদি পরিকল্পনা করে ঠিক ঠিক পথে এগোই তাহলে ছক্কা। আমি একটু হাসলাম। তারপর ওর পাশে গিয়ে কানে ফিস ফিস করে বললাম.. চলো প্রেমের অধ্যায় শুরু করি। ও আমার দিকে কেমন করে যেন অভিমানের চোখে তাকিয়ে থাকলো। প্রেমের অধ্যায়টা এখান থেকেই শুরু…
চলে যাওয়াটাই তো দেখতে চেয়ছিল একটু দেখলে কি বা হতো। না একটু বেশি বলে ফেলেছে। আচ্ছা ছেলেটা কে কি একবার স্যরি বলা উচিত্? ফাইজার মনটা কেমন করে যেন উঠলো। এই তো গত মাসে বাসে আগ্রাবাদের দিকে যাওয়ার সময় আদনান বাসে উঠে সিট খালি পেয়ে কোন মতে বসে। মহিলা সিট গুলা ফিলাপ। এর একটু পরেই ফাইজা বাসে উঠে দাঁড়ায়। যদিও মহিলা সিট খালি ছিল না। ফাইজা মহিলা সিট গুলার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে একবার পিছনে দেখলো। আদনান বিষয়টা ভালো করেই লক্ষ্য করলো তবে চুপ করে বসে রইলো। ফাইজার সাথে আদনানের চোখাচোখি হতেই কি মনে করে যেন একটা হাসি দিল। হাসিটা দেখেই ফাইজা মনে মনে বললো বেয়াদব ছেলে। এর একটু পর যখন ফাইজা পিছনে তাকালো কোন সিট খালি হয়েছে কিনা তখনো আদনানের সাথে চোখাচোখি হয়। ফাইজা ভ্রু কুচকে মনে মনে বললো.. একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আর বেয়াদবটা বসে আছে। একটু বলবে আপনি এখানে বসেন। তা না বেয়াদবটা আমায় দেখে হাসে। এর একটু পরেই আদনান ফাইজাকে ডাক দিয়ে বললো..
“এই যে ম্যাডাম এখানে বসেন।
ফাইজা একটু অবাক হলো এযেন ছেলেটা ঠিক তার মনের কথাটা শুনতে পেরেছে। ফাইজা কিছু না বলেই আদনানের দিকে একটু তাকিয়ে চুপ করে বসে পড়ে। সিটে বসতেই আদনান বললো..
“কোথায় যাবেন?
“জ্বি আগ্রাবাদ।
“ও আমিও ঐদিকে যাচ্ছি।
এইটুকু বলেই চুপ করে থাকলো। বাস চলছে। জানালা দিয়ে আসা হালকা বাতাসে ফাইজার সামনের চুল গুলা যেন উড়ে বেড়াচ্ছে। আদনান চুপ করে তাকিয়ে থাকলো। আদনান একটু ঠিক করে দাঁড়িয়ে থেকে বললো..
“গরম কাল চলে এসেছে আবার তাই না? ফাইজা এমন কিছু শুনবে আশা করি নি। মনে মনে বললো ছেলে গুলা এমোনি বদমাশের হাড্ডি একটু উপকার করে কিভাবে কথা বলতেছে যেন আমি উনার কত পরিচিত।
“আপনি আমায় কিছু বলেছেন? ফাইজা আবার অবাক হলো আচ্ছা ছেলেটা কি আমার মনের কথা গুলা বুঝে?
“কই নাতো কিছু বলি নি। আসলেই গরম কাল এসে পড়েছে।
বাসে আগ্রাবাদে যতক্ষন পৌছায় নি ততক্ষন আদনান ফাইজার সাথে কথা বলেছিল। পাশের যাত্রী গুলা ওদের দিকে কেমন করে যেন তাকাচ্ছিল। ফাইজা বাস থেকে নামলেও আদনান কি মনে করে যেন ফাইজার পিছু পিছু গিয়েছিল। কেন গিয়েছিল আদনান নিজেও জানে না। ফাইজাও বিষয়টা লক্ষ্য করে। এরপর দিনই ফাইজার গেটের সামনে আদনান দাঁড়িয়ে থাকে খুব সকালে। ফাইজা যখন গেট থেকে বের হলো আদনানকে দেখে চমকে ছিল।
“কেমন আছেন? ফাইজা কি বলবে বুঝতে পারছে না। একটু চুপ করে থেকে বললো…
“কে আপনি? ফাইজা চিনেও না চিনার ভান করলো। আদনান চোখের চশমাটা ঠিক করে বললো..
“ঐ যে গতকাল বাসে কথা হয়েছিল।
“ও আচ্ছা হ্যাঁ হ্যাঁ। আপনি আমায় বসতে দিয়েছিলেন নিজের সিট থেকে উঠে। আপনাকে থ্যাংক্স দেওয়া হয় নি। থ্যাংক্স নিতে এসেছেন তাই না? আদনান মাথার চুল চুলকিয়ে একটা হাসি দিয়ে না সূচক ইশারা দিল। তারপর কাধের ব্যাগ থেকে একটা আর্টপেপার বের করে ফাইজাকে দিল। ফাইজা হাতে নিয়েই একটু অবাক হয়ে গেল। নিজের ছবি এইভাবে আকঁবে ভাবে নি। “কে একেঁছে এটা?
আদনান মাথা দিয়ে ইশারা দেয় যে ও একেছে। তারপর বললো “আসলে কাল রাতে ঘুম আসছিল না, আমার ঘুম না আসলে আকাঁআকিঁ করি, অন্য কিছু আকঁতে আকঁতে তারপরো যখন ভালো লাগছিল না, তখন আপনার মুখটা আমার চোখে ভাসছিল তারপর কি মনে করে যেন হয়ে গেল। আপনার ছবি তো আর আমার কাছে থাকা যাবে না। ভাবলাম আপনার ছবি আপনাকে দিয়ে দি। এইটা বলেই আদনান থামে। ফাইজা কি বলবে বুঝতে পারছে না। ফাইজা ছোট করে একটা থ্যাংক্স দিয়ে কলেজের দিকে চলে গিয়েছিল।
সেদিনের পর থেকেই আজকে একমাস রোজ আদনান ফাইজার ছবি একেঁ এনে ফাইজাকে দেয়। ফাইজা ছোট করে থ্যাংক্স দিয়ে চলে যায়। একদিন বল দিল.. কেন করেন এইগুলা? আর একেঁ আনতে হবে না। একটু বকাও দিয়েছিল। ফাইজা মায়ার বন্ধনে জড়িয়ে যাচ্ছিলো। এরপর থেকে আদনান আর ছবি একেঁ আনে না। এই তিন চার দিন এমনি এসে দাঁড়িয়ে থেকে দেখে চলে যায়। আর আজকে সকালে খুব বেশি বলে ফেলেছে ফাইজা। আচ্ছা আমার কি স্যরি বলা উচিত্? আচ্ছা আমার এমন লাগছে কেন? এইগুলা ভাবতে লাগলো ফাইজা। ফাইজা থেমে দাঁড়ায় তারপর ঘুরে ফিরে একটু তাড়াতাড়ি হেটে গিয়ে দেখে আদনান নেই। ফাইজা আরো একটু হেটে গেল বাম পাশের রাস্তাটায় তারপর আরো বামা পাশের রাস্তার মোড়ে এসে তাকাতেই দেখে পকেটে হাত ঢুকিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে হেটে যাচ্ছে। ফাইজা আরো একটু দ্রুত হেটে এসে আদানানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে একটু হাপাতে থাকে। হাপাতে হাপাতেই বললো..
“ঐ চার চোখ অনেক বেশি বলে ফেলেছি তাই না? আদনান চুপ করে রইলো। ফাইজা হাপাতে হাপাতে আবার বললো..
“আমায় লাইক করেন? আদনান নিচের দিকে তাকিয়ে বললো..
“না, ভালো লাগে।
“তাই? আদনান মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক ইশারা দেয়।
“বন্ধু হবেন?
আদনান ফাইজার দিকে তাকায়। আদনানের চুপ থাকা দেখে বললো “আমার সাথে বন্ধু হতে হলে রোজ ছবি একেঁ দিতে হবে। কি পারবেন? আদনান একটু হাসলো। ওর মনে একটা ভালো লাগা কাজ শুরু করলো। কি বলবে বুঝতে পারছে না। ভালোবাসা গুলা হয়তো এইভাবেই শুরু হয় এই শহরে…
গল্পের বিষয়:
গল্প