মুরগিচোর

মুরগিচোর

শ্যামনগরের নেতাই খুড়ো লোক খারাপ না। এমনিতে ভালো। কিন্তু পাড়া পড়শির ছেলেপিলেরা তাকে নিয়ে এত ইয়ারকি মারে যে তাদের জ্বালায় নেতাই খুড়ো ঘর থেকে বেরোতে ভয় পায়। এইতো সেদিন নেতাই খুড়ো বাজার থেকে কালো পলিথিনে মুরগির মাংস কিনে নিয়ে বাড়ি যাচ্ছিল। পাড়ার একটা ফচকে ছেলে ফেউ লেগে পেছন থেকে বলে উঠল—“নেতাই মুরগিচোর!” খুড়ো ঘুরে দেখল কেউ নেই। সেও বেশ একটু চেঁচিয়ে বলল—“তোর বাপ মুরগিচোর হতভাগা।” পাশের মুদিদোকান থেকে হারুন বলল—“কি হল খুড়ো কেউ কিছু বলল?”

সে বললে—“চ্যাংরাগুলো মরেও না। পাঁঠাদেরকে যমেও নেয় না?” হারুন একটু সায় দিয়ে বলল—“যমেরও অরুচি!” নেতাই খুড়ো হারুনকে চেনে। এক্কেবারে মিচকেপোঁড়া। ওই সব ফচকেগুলোকে ওসকায়। সে দাঁত কড়মড় করে বলল—“কালামুখোগুলো, যে পিছনে লাগবি, নিঃবংশ হবি।” হারুনমুদি মুচকি হেসে বলল—“দেশের জনসংখ্যাটাও বেড়ে যাচ্ছে। কিছু মরলে ভালোই হয় বলুন।” খুড়ো বলল—“যাই বেলা হয়ে এল। মেলা ফ্যাচ ফ্যাচ করে লাভ নেই।” খুড়ো দু পা এগোতেই আবার সেই ফেউ—“নেতাই মুরগিচোর।” খুড়ো বুঝল এটা হারুনমুদির গলা। সে পেছন ঘুরে বলল—“ওলাউঠো তোর গুষ্টির ক্যাঁতায় আগুন। মরে যা কালামুখোগুলো।”

নেতাই খুড়োর এই গালাগালিতে হারুনের মজাই লাগে। দোল আসতে দিন দশেক বাকি। যাইহোক পাড়ার এই ছ্যাবলাগুলোর জন্যে খুড়ো দোলে ঘর থেকে বেরোয় না। একবার দোলে খুড়োকে একটা ছোঁড়া মজা করে মাথায় আবিরের জায়গায় হারুনের দোকান থেকে  লঙ্কাগুড়ো কিনে দিয়ে দিয়েছিল। লাল রং বুঝতে পারে নি। কিন্তু মিনিট দুয়েক পরে টাক জ্বলে যেতে খুড়ো শেতলা পুকুরে ঝাঁপ মেরে দেয়। এবার দোলে খুড়ো ঠিক করে নিয়েছে এক সপ্তাহ বাড়ি থেকে বেরোবেই না। খুড়ো বিয়ে করেনি। বাড়িতে একটা দুঃসম্পর্কের পাতানো ভাইপো আর ভাইপোর বউ থাকে। খুড়োকে রান্নাবান্না করে দেয়।যাইহোক দোলের দিন খুড়ো ঘরে বসে শুকনো মুড়ি খাচ্ছিল, এমন সময় ভাইপোর বউটা বলল—“কাকাবাবু একটু পেঁয়াজ এনে দেবেন।”

খুড়ো বিড়বিড় করে বললে—“আজ আমার সব্বনাশ না করে ছাড়বে না দেকচি।” কিছুক্ষণ পর বলল—“বউমা ভাইপোকে একটু পাঠাও না।” বউমা তখন মুচকি হেসে বলল—“আপনার ভাইপো তো কারখানার বন্ধুদের সাথে রং খেলতে গেছে। এনে দিন না কাকাবাবু কিচ্ছু হবে না।” খুড়ো কিছু বলল না। মনে মনে ভাবল গলি দিয়ে বেরিয়ে যাবে। এইভেবে বাজারের থলেটা নিয়ে গলি দিয়ে চুপিসারে মাথানিচু করে হাঁটতে লাগল খুড়ো। এমন সময় পাড়ার খেঁদি পিসি দেখতে পেয়ে বলে উঠল—“ও খুড়ো বলি দোলের দিন যাচ্ছ কই গো?” খেঁদির কথায় খুড়োর পিত্তি জ্বলে গেল বলল—“অ্যামেরিকা যাচ্ছি,যাবে?”খেঁদি ভাবল মরুক গে বুড়ো। যেচে পড়ে গালাগাল খেয়ে লাভ নেই।

খুড়ো ভাবে ফচকেগুলো না দেখলেই বাঁচি। কিন্তু যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যে হয়। ঝপ করে পেছন থেকে দুটো রং মাখা হাত এসে খুড়োর ফর্সা মুখ লাল করে দিল। খুড়ো রেগে গিয়ে রং মাখা হাতটা কামড়ে ধরল। খুড়োর বাঁধানো দাঁতের কামড়ে দাগ বসে গেল। এমন সময় ‘ওরে মুরগিচোর মরে গেলুম রে’ বলে লোকটা চেঁচিয়ে উঠল। খুড়োর কান সজাগ। বুঝল এটা পরিষ্কার হারুন মুদির গলা। সঙ্গে সঙ্গে ওর চুলের মুঠি ধরে খুড়ো বলল—“নেলোমুখো মুরগীচোর কাকে বললি রে?” হারুন বলল—“ছেড়ে দাও খুড়ো। তোমার দাঁতে বিষ আছে ইনজেকশন নিতে যেতে হবে।” খুড়ো ওর চুলের মুঠিখানা ধরেই বলল—“হারামজাদা বাঁধানো দাঁতের কামড়ে ইনজেকশন নেয় না রে হতভাগা।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত