কানাই খৈনীর প্যাকেট খানা বার করে একটুখানি হাতের তালুতে নিল। তারপর সেটা চুন দিয়ে বার কয়েক বুড়ো আঙুল দিয়ে কচলে ঠোঁটের নিচে রেখে বলল—“বেশী চুন দিলে মুখ পুড়ে যায়।” সিংজী পাশে দাঁড়িয়ে ওর রকম সকম দেখছিল। বলল—“এবার দিয়ে চুন না দিয়ে খয়ের দিয়ে খাবি।” সে বলল—“ধুর পাগল,খৈনী খাচ্ছি না পান খাচ্ছি বে।”
ঠিক এই সময় নেপাল সাহা বাইক নিয়ে এসে দাঁড়ালো। সিংজীকে বলল—“পেনটা দে তো ব্যাঙ্কে যাবো।” সিংজী পকেট থেকে নীল রংয়ের পেনখানা বার করে খাপটা খুলে প্যান্টের পকেটে ঢোকালো। তারপর পেনখানা দিয়ে বলল—“কাজ হয়ে গেলে ফেরত দিয়ে যাবে।” নেপাল সাহা পেনের দশা দেখে বলল—“পুরো ল্যাংটো করে হাতে দিলি।” সে বলল—“কতবার এই করে পেন হারিয়েছে জানো?এই তোমরাই পেন নিয়ে যাও আর সুযোগ পেলে ঝেপে দাও। খাপ আমার কাছে থাকলে তোমার মনে থাকবে।” নেপাল সাহা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল—“তা বলে ল্যাংটো করে দিবি।” সিংজি বলল—“ওটা পেন। আমার জাঙ্গিয়া নয়। যাও কাজে যাও।”
নেপাল সাহা অদ্ভূত পিনবাজ লোক। বলল—“অন্যের জাঙ্গিয়া আমি পড়ি না।” কানাই একটা পিচিক করে থুতু ফেলে বলল—“নিজেরটা পরো তো?” নেপাল একবার নিজের দিকে তাকিয়ে বলল —“আজকে পরেছি।” সিংজি বলল—“যাও তোঃ। পেন,জাঙিয়া নিয়ে মাথা চেটে দিল!” নেপাল কথা না বাড়িয়ে বাইকটা স্টার্ট দিয়ে চলে গেল। কানাই সিংজিকে বলল—“একটা বিড়ি খাওয়া তো।” সিংজি পকেট থেকে একটা বিড়ি দিয়ে বলল—“খৈনী খাবি,বিড়ি খাবি। সব নেশা একসাথে করে মরবি রে নেশারি।” কানাই ওর কথাটা না শুনে বলল—“তোর পেনটা ফেরত আসবে না মিলিয়ে নিস।” সিংজি পেন খুব যত্ন করে রাখে। এমনিতেই ভীষণ যত্নশীল লোক। শুধু নিজের বউটাকেই যত্ন করে রাখতে পারেনি। অন্যলোকে নিয়ে পালিয়ে গেছে। আর ফেরত দেয় নি।
এই থেকে সিংজি কেমন একলসেরে মার্কা হয়ে গেছে। কানাই বলল—“দ্যাখ নেপালের কত টাকা তবুও একটা পেন কিনতে পারে না। পরের মেরে যতটা হয়।” সে বলল—“ভুলে গেছে হয়তো।” কানাই একটা তাচ্ছিল্যভরা হাসি হেসে বলল—“হঃ। নিজের পাশবইটা তো ঠিক পকেটে নিয়েছে। পেনটাই ভুলে গেল। এটা ওর চাল! তোর পেনটা ঝেড়ে দেবে দ্যাখ।” সে বিরক্ত হয়ে বলল—“হাটা তো। পেনই তো নিয়ে গেছে। কিডনি তো নিয়ে যায়নি।” কানাই অবাক হবার ভান করে বলল—“তোর কিডনি আছে?” সে বলল—“কি বলছিস রে ভাই!” কানাই খ্যাঁক খ্যাঁক করে হেসে বলল—“তোর তো কোষ্ঠকাঠিন্যের ধাত। সকালবেলা চাপ দিয়ে ইয়ে করতে গিয়ে পেছন দিয়ে বেরিয়ে গেছে হয়তো!” সিংজি খেপে গিয়ে বলল—“যাবি এখান দিয়ে।” কানাই বলল—“রাগ করিস না ভাই ইয়ার্কি করলুম। হ্যাঁ রে নেপাল তো এখনও পেন নিয়ে এলোনি রে?”
—“আবার শুরু করলি হতচ্ছাড়া। শান্তি দে একটু।” কানাই সঙ্গে সঙ্গে পকেট থেকে শান্তি নামক গুটখার প্যাকেটটা হাতে দিয়ে বলল—“এনে শান্তি।” সিংজি হাঁ করে ওর মুখের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল। তারপর বলল—“কি নেশারি রে তুই! চাইলাম মনের শান্তি! তুই দিলি চেবানোর শান্তি!”
এই সব বলতে বলতে নেপাল সাহা এসে উপস্থিত। বাইকটা সিংগেল স্ট্যান্ড করে বলল—“হারামজাদা তোর ল্যাংটো পেনের নিব ভেঙে গেছে। দ্যাখ আমার জামার পকেট পুরো কালিতে কালিতে হয়ে গেছে।” সিংজি দেখলো সত্যিই নেপালের সাদাজামার পকেটে পুরো নীল কালির দাগ লেগে গেছে। নেপাল জামাখানা খুলে সিংজির হাতে দিয়ে বলল
—“কেচে দিবি। একফোঁটাও যেন দাগ না থাকে।” এই বলে স্যান্ডো গেঞ্জি পড়ে বাইক চালিয়ে সিদে বাড়ি চলে গেল। কানাই হো হো করে হেসে বলল—“তোর ল্যাংটো পেনের কালি!