কয়টা টাকা বাঁচানোর জন্য অফিসের কাছে বাসা নিইনি। ময়নার বাবার দেয়া ফ্লাটে থাকি। ফ্লাটটা যৌতুক নেইনি বা পাইনি। বন্ধুরা যদিও সারাক্ষণ আমাকে খোঁচা মারে এটা যৌতুক বলে।
আমাদের বিয়ের আগেই ময়নার বাবা ওর নামে ফ্লাটটা কিনে দিয়েছিলো। সে হিসেবে এটা ময়নার। আর ময়নার মানেই তো আমার। আমার সবকিছু যদি ওর হতে পারে, ওরটা কেন আমার হবে না। অফিস দূরে হওয়ায় ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায় আমার। পাবলিক বাসে ঝুলে ঝুলে আসি। শার্ট প্রতিদিন ঘেমে নষ্ট হয়। একটা শার্ট একদিন করে পরি মাত্র। বাসায় ফেরার সাথে সাথে ময়না ওগুলো ধুয়ে দেয়। এই রুটিনের ব্যতিক্রম হয় না। আমার অফিসের ড্রেস মোট নয় সেট। ময়নাই এগুলো জোর করে বানিয়ে দিয়েছে। রাতে ফিরলেই ময়না আমার কাজেই ব্যস্ত হয়ে যায়। আমি গোসল করে ফ্রেশ হতেই খাওয়া রেডি। আর খাওয়া শেষ করে আমি আর তাকাতে পারি না। ক্লান্তিতে নেতিয়ে পড়ি। এ নিয়ে ময়নার অভিযোগ নেই। ও আক্ষেপ করে। আমি শান্তিমতো বিশ্রাম নিতে পারি না। নিজের করে একটু সময় কাটাতে পারি না এজন্য।
এই যে রাতে ঘুমাই, আবার সকালে উঠেই দৌড়। এজন্য আমি শুয়ে পড়তেই ময়না আমার পা টিপে দেয়। এত আরাম লাগে। আরামের দ্বিগুণ লজ্জা লাগে। পা সরিয়ে ফেলি। নিষেধ করি। ময়না বোঝে আমি আরাম পাই, তাই জোর করেই পা টিপে দেয়। আমি না না করতে করতে ঘুমিয়ে যাই শিশুদের মতো। মাঝে মাঝে বাসায় ফিরে শার্ট, স্যান্ডো গেঞ্জি ময়নার সামনে রাখি না। রাখলেই ও সেগুলো ধুতে বসবে। আমার মায়া হয়। সারাদিন বাসায় কত কাজ করে। আবার আমার পোশাক ধোওয়া! আমি টুক করে বাথরুমে ঢুকে ওগুলো ধুয়ে বের হতেই ও রা রা করে ওঠে। যেন বাচ্চারা তার নিষেধের কোনো কাজ করে ফেলেছে। যা করাটা উচিত একমাত্র ময়নার। আমি ওকে বোঝাই। ও বোঝে না। বুঝতে চায় না আমার একটু শান্তির জন্য। আমিও ময়নার শান্তি খুঁজি।
কোনো কোনোদিন সকালে ময়না ঘুম থেকে উঠে দেখে আমি নিজেই ওর থেকে আগে উঠে গেছি। কাউকে কিছু না বলে পা ছড়িয়ে বসে হাড়িপাতিল ধুতে বসেছি। ও অবাক হয়। আমি লজ্জা পাই। বলি, “একদিন তুমি ঘুমাও না। আমি একদিন কাজ করি।” ময়না আমার হাত ধরে টেনে ওঠায়। বেসিনে নিয়ে ধমকে ধমকে হাত ধুতে বলে। আমি ফিরে যাই রুমে। কোমড়ে আঁচল গুঁজে ময়না সব করে। ওর কোমড়ে গোঁজা আঁচল দেখে মনে হয় সংসার নামের শিল্পটা যেন ওখানে বাসা বেঁধেছে। সারাক্ষণ দুজন দুজনার সুখ খুঁজি। কীভাবে ময়নাকে আনন্দ দেবো। শান্তি দেবো। ময়নাও এভাবে খুঁজতে থাকে। প্রায়ই বাসায় ফেরার পর একফাঁকে ময়না বলে- আজ কী এনেছো?
মনে পড়েছে এমন অভিব্যক্তিতে আমি আবার শোবার ঘরে যাই। ব্যাগ খুলে বাচ্চাদের হাবিজাবি খাবারের প্যাকেট ওর হাতে দেই। ও ওগুলো নিয়ে খেতে খেতে কাজ করে। কোনোদিন বাদাম। কোনোদিন চানাচুর, নিমকি, চালভাজা, চালতার আচার, আলুর মুচমুচে ভাজা চিপস, নারকেল চিড়া এইসব। ময়না কোনোদিন জিজ্ঞেস করে না ব্যাংকে কত রাখছি প্রতিমাসে। কোনোদিন বলে না চলো শপিঙে যাই। কোনোদিন বলে না ওর সোনার হার লাগবে। সুখ কোথায়? আমাদের সুখ এখানেই। আমাদের সংসার এমন সুখের।
গল্পের বিষয়:
গল্প