হুট করেই আমাদের দেশের একটা পরিবর্তন আসলো। আমাদের দেশের সকল নারীরা একত্রে সিদ্ধান্ত নিলো তারা আর বাহিরে কাজ করবে না। সংসার ধর্ম বড় ধর্ম এইকথায় অনুপ্রাণিত হয়ে দেশের সকল নারীরা একত্রে সংসারে মনোযোগী হলো। তারা আজ থেকে সিদ্ধান্ত নিলো তারা এখন থেকে শুধু সন্তান জন্মদিবে, স্বামী শ্বশুর শ্বাশুড়ির সেবা যত্ন করবে আর বাকি সময় ঘরে বসে বিশ্রাম নিবে। বাহিরে গেলে নানা জনের নানা কথা শুনতে হয়, কিছু হুজুর টাইপের মানুষের নতুন নতুন মাসালা শুনতে হয়, আবার মাঝেমধ্যে কিছু পুরুষের লালসার স্বীকার হতে হয়। তারচেয়ে বরং ঘরে বসে থাকায় ভালো রুমের ভিতর প্রসব ব্যথায় ছটফট করছে আব্দুল আলীর স্ত্রী রাবিয়া খাতুন৷ আব্দুল আলী রুমের বাহিরে মুখের দাড়ি চুলকাচ্ছেন আর সমানে পায়চারি করছেন। একটু পর ভিতর থেকে এক মহিলা এসে আব্দুল আলীকে বললো,
– আপনার স্ত্রীর অবস্থা খুব বেশি খারাপ। আমি কিছু করতে পারবো না। আপনি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান আব্দুল আলী স্ত্রীকে নিয়ে তাড়াতাড়ি সদর হাসপাতালে গেলেন। হাসপাতালে গিয়ে দেখলেন সব পুরুষ ডাক্তার কোন মহিলা ডাক্তার কিংবা মহিলা নার্স কেউ নেই। দুইজন ডাক্তার আর ৪-৫জন ওয়ার্ডবয় এসে আব্দুল আলীর সামনে দাড়ালো। তারপর একজন ডাক্তার বললো,
– আপনার স্ত্রীর অবস্থা খুবই খারাপ। এখনি ডেলিভারি করার ব্যবস্থা করতে হবে আব্দুল আলী কাঁপা গলায় বললেন,
— আপনারা ডেলিভারির ব্যবস্থা করবেন নাকি! এইখানে কি কোন মহিলা ডাক্তার কিংবা মহিলা নার্স নেই? ডাক্তার অবাক চোখে আব্দুল আলীর দিকে তাকিয়ে বললো,
— মহিলা ডাক্তার আসবে কোথা থেকে? আপনি না সব সময় ওয়াজ-মাহফিলে বয়ান করেছেন, মেয়েদের বেশি লেখাপড়ার দরকার নেই। মেয়েদের কাজ হলো সংসার দেখা। ওরা কখনো বাহিরে কাজ করতে পারবে না। যেসব মেয়েরা ঘরের বাহিরে থেকে পড়াশোনা করে, বাহিরে পুরুষের সাথে কাজ কর্ম করে তাদের জায়গা জাহান্নামে আর তাদের বাবা মা’র জায়গাও জাহান্নামে। আপনার এইসব কথা শুনে কোন বাবা মা তাদের মেয়েদের পড়াশোনা করায় না। আর মেয়েরাও পড়াশোনা করে না। মেয়েদের তো পড়াশোনা করে ডাক্তার নার্স হওয়ার দরকার নেই কারণ মেয়েদের একমাত্র কাজ হলো সংসার দেখা। তাই এখন থেকে মেয়েরা সবাই সংসারের কাজে মনোযোগী হয়েছে
কথাগুলো বলে ডাক্তার সাহেব ওয়ার্ডবয়কে বললেন তাড়াতাড়ি রোগীকে ভিতরে নিয়ে যেতে। আব্দুল আলী হাসপাতালে বারান্দার চেয়ারে বসে কাঁদছেন আর ভাবছেন, আজকে যদি উনি মানুষকে সঠিকভাবে বুঝাতেন। ওয়াজ-মাহফিলে উনি যদি সবাইকে বলতেন, আপনারা আপনাদের কন্যা সন্তানদের সঠিক শিক্ষাদেন।
মেয়েদের আখিরাতের শিক্ষার পাশাপাশি দুনিয়ার শিক্ষাতেও শিক্ষিত করে তুলেন। আপনাদের মেয়ে সন্তান যদি পর্দার হেফাজত করতে পারে তাহলে সে সংসারের কাজের পাশাপাশি বাহিরেও কাজ করতে পারবে৷ এই কথাগুলো বললে হয়তো আজকে উনার স্ত্রীর পাশে ৬-৭ পুরুষ না থেকে ৬-৭ মহিলা পাশে থাকতো। কোন বেগানা পুরুষের স্পর্শ তার স্ত্রীর পেতে হতো না একটা জরুরি কাজে রাজনৈতিক নেতা হামিদ সাহেব আর উনার স্ত্রীকে কয়েকদিনের জন্য দেশের বাহিরে যেতে হবে। এয়ারপোর্টে সিকিউরিটি গার্ড হামিদ সাহেবকে খুব ভালোভাবে চেক করলেন। আর হামিদ সাহেবের স্ত্রীকে চেক করার জন্য সিকিউরিটি গার্ড হামিদ সাহেবের স্ত্রীকে বললেন পর্দার আড়ালে যেতে। পুরুষ সিকিউরিটি গার্ড যখন পর্দার আড়লে যাচ্ছিলেন তখন হামিদ সাহেব চিৎকার করে বললেন,
— আরে! আপনি পুরুষ হয়ে কেন মেয়ে মানুষকে চেক করতে যাচ্ছেন? এইখানে কি কোন মহিলা সিকিউরিটি গার্ড নেই? পুরুষ সিকিউরিটি গার্ড লোকটা অবাক হয়ে বললো,
– আপনি মেয়ে গার্ড কথায় পাবেন? মেয়েরাতো এখন বাহিরে কাজ করে না৷ আপনার মনে আছে একবার রাত ৯টার সময় একটা মেয়ে কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরছিলো। তখন কিছু পুরুষ মেয়েটাকে ধর্ষিত করে। আপনার এলাকায় এই ঘটনাটা ঘটেছিলো। আপনি তখন সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, যে মেয়ে রাত ৯টার সময় ঘরের বাহিরে থাকে সে ধর্ষিত হবে এটাই স্বাভাবিক। এজন্যই মেয়েরা আর বাহিরে কাজ করে না। কারণ মাঝেমধ্যে কর্মস্থল থেকে বসায় ফিরতে মেয়েদের রাত ৯টা বেজে যায় তখন সে যদি ধর্ষিত হয় তখন এর দায়ভার এই সমাজ নিবে না। তাই মেয়েরা আর ঘরের বাহিরে কাজ করে না কথাগুলো বলে সিকিউরিটি পর্দার আড়ালে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর পর্দার আড়াল থেকে হামিদ সাহেবের স্ত্রী বের হয়ে আসলেন। হামিদ সাহেব তার স্ত্রীকে প্রশ্ন করলেন,
–তোমার চোখ মুখ এমন দেখাচ্ছে কেন? হামিদ সাহেবের স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে বললো,
– সিকিউরিটি গার্ডটা যখন চেক করছিলো আমার খুব খারাপ লাগছিলো আর খুব অপমান বোধ করছিলাম
হামিদ সাহেব তখন বুঝতে পারলেন, সেদিন যদি উনি এই কথা না বলে একটা মেয়ের সারারাতের সিকিউরিটির ব্যবস্থা করতে পারতেন তাহলে আজকে এইদিন দেখতে হতো না আর উনার স্ত্রীকে সিকিউরিটি গার্ডের কাছে অপমানিত হতে হতো না ৬টা ক্লিনিক ঘুরেও যখন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী আফজাল সাহেব কোন মহিলা গাইনী চিকিৎসক পেলেন না তখন শেষে পুরুষ গাইনী চিকিৎসক লুৎফর রহমানের কাছেই তার মেয়েকে নিয়ে গিলেন। কিছুক্ষণ পর যখন মেয়ে ডাক্তারের চেম্বার থেকে কাঁদতে কাঁদতে বের হলো তখন আফজাল সাহেব রাগে ডাক্তারের কলার চেপে বললো,
— তুই কি এমন বলেছিস যে আমার মেয়ে কান্না করে দিলো? ডাক্তার লৎফর রহমান বললো,
– আমি শুধু বলেছিলাম তোমার যেখানে সমস্যা সেই জায়গাটা আমার দেখতে হবে। না দেখলে অসুখটা আমি বুঝবো কি করে? আফজাল সাহেব বললো,
— মেয়েদের এইসব প্রাইভেট জায়গা দেখার জন্য মেয়ে মানুষ দরকার। তুই পুরুষ হয়ে দেখতে চাস কেন?
ডাক্তার লুৎফর রহমান অবাক হয়ে বললো,
– আপনি মেয়ে ডাক্তার কোথায় পাবেন? সব কর্মজবী পুরুষচাই তাদের স্ত্রী ঘরে থাকুক। আপনার মত প্রভাবশালী ব্যবসায়ী পুরুষরা বিয়ে করে শিক্ষিতা, ডাক্তার এইসব মেয়ে দেখে। তারপর বিয়ের পর মেয়েকে বলে, টাকা তো আমি ইনকাম করছি তোমার বাহিরে চাকরি করতে হবে না তুমি সংসার সামলাও। এইভাবে দেখা গেছে প্রতিটা শিক্ষিতা মেয়ে ঘরে আবদ্ধ হয়ে গেছে। এখন আর কোন মেয়ে সংসার বাদ দিয়ে বাহিরে কাজকর্ম করে না ডাক্তারের কথা শুনে আফজাল সাহেব যখন চুপচাপ চলে যাচ্ছিলো তখন পিছন থেকে ডাক্তার বললো,
– শুনেছিলাম আপনার স্ত্রীও মেডিকেলে পড়তো কিন্তু আপনার সাথে বিয়ে হবার পর আপনি আর উনাকে পড়তে দেন নি আফজাল সাহেব কিছু না বলে চুপচাপ চেম্বার থেকে বের হয়ে আসলো আর মনে মনে ভাবতে লাগলো, আজ যদি আমি আমার স্ত্রীকে সংসারের মায়াজালে আবদ্ধ না করে পড়াশোনার সুযোগ দিতাম তাহলে আজ আমার পাশাপাশি সমাজে আরো ১০টা মানুষের উপকার হতো…
একজন নারীর সংসার সবার আগে কিন্তু সংসার বাদেও একটা মেয়ে নিজের পর্দার হেফাজত করে বাহিরে কাজ করতে পারে। মেয়ে মানুষ যদি বাহিরে কাজ না করে তাহলে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে তার দুইটা উদাহরণ মাত্র আমি দিলাম। বর্তমান দেশের যে অবস্থা তাতে নারীর ঘর থেকে বের হওয়াটাই কাল হয়ে দাড়িয়েছে। আর আমরা এমন একটা দেশে বাস করি যেদেশে একটা মেয়ে নির্ভয়ে চলাচল করার সিকিউরিটি আমরা দিতে পারি না। আজ যদি গল্পের মত মেয়েরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে বলে আমরা আজ থেকে বাহিরে কোন কাজ করবো না তখন কিন্তু এই সমাজের অস্তিত্ব কয়েকদিনেই হারাবে
গল্পের বিষয়:
গল্প