সঙ্গম বাঙালির শাস্ত্রমতে পাপ। সেটা বিয়ের আগে হোক কিংবা পরে হোক। বিয়ের আগে হলে পরিবারের কাছে নিকৃষ্ট, ধর্মের আদালতে নরকের কীট আর সমাজের কাছে ঘৃণিত মানুষ।একবিংশ শতাব্দীতে কন্যা প্রেম করলে বাবা ভাবেন বংশের মুখে চুনকালি দিল শেষে।নিজেদের পছন্দে চল্লিশোর্ধ্ব বয়স্ক লোকের গলায় মেয়েকে ঝুলিয়ে দিতে দু’বার ভাবেন না। পাত্র টাকার কুমির হলে মাথার চুল, পাত্রীর সাথে বয়সের ব্যবধান সবকিছু নিমেষেই স্কিপ করা যায়।পাত্রীর মা কখনই ভাবেন না, আমার মেয়ে স্বামীর বুকে মাথা রেখে অন্য কারো কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলবে নাতো! না! এভাবনাটা একবারও মাথাতেই আসে না। মেয়ের জামাইয়ের ঢাকা দু-চারটা বাড়ি আছে, মেয়ে দামী শাড়ি,
ভারী গহনা পরে বাপের বাড়ি বেড়াতে আসবে এই স্বপ্ন দেখতে দেখতে ভুলেই যায় মেয়ের নিজেরও কিছু স্বপ্ন আছে।
ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে কিন্তু এটাই সত্যি। আমাদের দেশে শৈশবের সন্তানের প্রিয় খেলনা যেমন বাবা-মা কিনে দিতে চায় না অযথা টাকা খরচ হবে তাই। প্রাপ্তবয়স্ক হবার পরেও সন্তানের পছন্দের মানুষটার নানারকম ত্রুটি বের করে দুজনকে আলাদা করবার প্রয়াস চালায়। অাপনার চারটে ডিগ্রি অর্জন করতে জীবন থেকে পঁচিশ বছর চলে যাবে। তারপর চাকুরির প্রস্তুতি, জব ইন্টারভিউ আর বাজারদরের একটা জব খুঁজে নিতে আরো তিন থেকে পাঁচ বছর। তারপর আরো কয়েক বছরে বিয়ের জন্যে কিছু টাকা জমানো, হ্যান্ডসাম স্যালারি এসব করতে করতে আপনার পয়ত্রিশ বছরে পা। পয়ত্রিশ বছরে নিশ্চয়ই পঁচিশ বছরের মত প্রেম করবার আবেগ বেঁচে থাকবে না।
আপনি বড়জোর অর্নাস পড়ুয়া কোনো মেয়েকেই সঙ্গিনী হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তার রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা খাওয়া আপনার কাছে বেহেল্লপনা, নিশুতি রাতে আপনার হাত ধরে চুপি চুপি ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়া এতো পাগলের কাণ্ড। অথচ আপনিও কিন্তু এইবয়সে ঠিক এমনটাই পাগল ছিলেন। অল্পতেই রাগ করতেন, গাল ফুলাতেন। অকারণে অভিমান করে হাপুস নয়নে কাঁদতেন। পাশেরজনের এই আচরণে আজ আপনি বিরক্ত হবেন। পারিবারিক দায়িত্ব আর সংসারের যাঁতাকলে আপনার ভেতর সেই মানুষটাই আর জীবিত নেই।যে কী না ইয়ারফোনে বিরহের গান শুনে মাঝরাতে বালিশ ভেজাত।
তারপরও যদি বউয়ের সাথে প্রেম করার আবেগটা বেঁচে থাকে সমাজ তাতেও নানা বিপত্তি। বিয়ের পর নবদম্পতির হানিমুন মানে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি বাড়ি ঘুরে নিমন্ত্রণ রক্ষা করা। মামা-খালাদের বাড়ি পোলাও-কোরমা পর্ব শেষ হলে শুরু হবে আপনি কি রাঁধতে পারেন, কিভাবে চুল বাঁধতে পারেন এই পর্ব। ২২ বছরের মেয়ে পেয়াজ কাটতে পারে না তাই সে অর্কমা। ২২ বছরের মেয়ে জীবনের কোনো পরীক্ষায় সেকেণ্ড হয় নাই এ আবার এমন কি কঠিন কাজ! এরপর তিনমাস না ঘুরতে শ্বশুরবাড়ি-বাপের বাড়ির প্রত্যেকের নাতি-নাতনির মুখ দেখতে ইচ্ছা করবে। স্ত্রীর শরীরে ক’খানা তিল আছে, স্বামীর গায়ের ঘামের গন্ধ অভ্যস্ত হতে না হতেই দুজন মানুষ ব্যস্ত হয়ে যায় তৃতীয় একজন মানুষকে পৃথিবী আনতে। বাকি গল্পে দুজনে আর দম্পতি থাকে না হয়ে উঠে বাবা-মা।স্বামীর কাছে স্পর্শ তখন হয়ে উঠে শুধুই প্র্যাতাহিক কাজ, স্ত্রীর কাছে কর্তব্য। হুট করে মাঝ দুপুরে দরজা লাগিয়ে বলা যায় না,
-আমায় একটুখানি আদর করো। ভোরে ঘুম ভাঙার পর পাশের জনের চুলে বিলি কেটে বলা যায় না,
-আজ সারাদিন তোমায় ছুঁয়ে থাকব।
মাসের পর মাস স্বামীর সাথে না ঘুমালে সংসার টিকে থাকে কিন্তু একদিন উনুনঘরে খুন্তি না নাড়ালে শ্বশুরবাড়ি মান থাকে না। একজীবনে আপনার বাবা-মার প্রতি দায়িত্বপালন করতে হবে, আত্মীয়দের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখতে হবে,পরিবারের সবার ভরনপোষণ করে সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে হলে ভালো অঙ্কের টাকা কামাতে হবে আবার সন্তানদের জন্যে নিরাপদ ভবিষ্যতের লক্ষ্যে ফিক্সড ডিপোজিট ও করে যেতে হবে।
এত চিন্তা মাথায় নিয়ে প্রেম করা যায়! বউয়ের প্রতি ভালোবাসা, তাকে কাছে পাওয়ার ইচ্ছাটা স্কিপ করাই যায়! আর যেদেশে মেয়েদের পছন্দমাফিক বর খোঁজা টাই দৃষ্টিকটু সেদেশে মেয়েদের অর্গাজমের সুখ বলে কিছু নেই। রাঁধুনি থেকে সন্তানপালন তার বাইরে যদিওবা চাকুরি করো ঘর-সংসার সামলিয়ে তারপর বা করো।স্বামীর কাছ থেকে মিসেস উপাধি টুকু পেয়েছ এইতো অনেক তার প্রেমিকা হতে যেও না। কেননা, আমাদের দেশের রীতিই এমন, স্বামীর সাথে প্রেম করতে চাওয়াটা পাপনয়ত লজ্জাজনক অপরাধ!
গল্পের বিষয়:
গল্প