বেশ কয়েক বছর পর আবার গ্যাংটক যাচ্ছে সহস্র। তবে এবার একা নয়, সাথে ওর ইউনিভার্সিটি লাইফের বন্ধুরা নিবেশ, অমিত আর অভি। এই ট্যুরটা ওদের স্টুড্যেন্ট লাইফ থেকেই পেণ্ডিং ছিল, কাজের চাপে হয়ে উঠছিলনা। একরকম অমিতের জোরাজুরিতেই ট্যুরটা সাক্সেসফুল হয়েছে। দুপুরের ফ্লাইটে বাগডোগরা, সেখান থেকেই গাড়ি রিজার্ভ করে রেখেছে গ্যাংটক হোটেল অব্দি। হোটেলে পৌঁছাতে প্রায় রাত্রি 9টা হয়ে গেল। হোটেলটা খুব বড়সর না হলেও বেশ সুন্দর এবং এম জি মার্গের কাছাকাছি।
ঢোকার রাস্তাটার দুপাশে কি যেন গুল্মজাতীয় ফুলের গাছ, ঘরগুলোও পরিপাটি সাজানো। আগের বার সহস্র যখন এসেছিল সেই হোটেলটা এমন সুন্দর ছিলনা। থাকবেই বা কিভাবে, ও তো এসেছিল মাত্র তিন দিনের নোটিশে একটা ব্যাংকে ইন্টারভিউ এটেইন করতে। ট্রেনের রিজার্ভেশনই কনফার্ম ছিলনা, ভাগ্যিস মূখার্জীদা ছিল, টিটিকে বলে একটা সীটের ব্যবস্থা না করে দিলে দূর্গতির সীমা থাকতনা। এবারে অবশ্য ওসব ঝক্কি পোহাতে হয়নি, প্ল্যানিংও অমিতই করেছে নিবেশকে সাথে নিয়ে। ওরা চারজন দুটো ডাবল বেডরুম বুকিং করেছে। তিনদিনের ট্যুর, একদিনে ছাঙ্গুলেক হয়ে নাথুলা, একদিন লোকাল সাইট শীইং, আর একটা দিনের প্ল্যানিং ইচ্ছকৃত ভাবে করেনি। ওয়েদারের কণ্ডিশান দেখে লোকেশন চ্যুজ করা হবে। এমনিতেই জানুয়ারী মাস, কখন যে ওয়েদার ড্যাম্প হয়ে যাবে কোনো ঠিক নেই।
রুমে পৌঁছে হিটারটা অন করে হাল্কা টিফিন করে নেয় ওরা, রাত্রের খাবার একটু দেরিতে দিতে বলা হয়েছে। দশটা বাজতেই কেয়ার-টেকার খাবার নিয়ে হাজির। ওদেরই বা দোষ কোথায়, বেচারা সারাদিন ডিউটি করে এবার একটু রেস্ট করবে, যা ঠাণ্ডা পড়েছে। ঠিক হল সহস্র-অমিত একটা রুমে থাকবে আর নিবেশ-অভি অন্যটায়। দেরি না করে এগারোটা নাগাদ রাত্রের খাবার খেয়ে আর এক রাউণ্ড আড্ডা দিয়ে জিনিসপত্র গোছাতে গেল। সকালেই যে রওনা দিতে হবে, হাতে তখন আর সময় থাকবেনা। ঘুমাতে যেতে রাত্রি একটা হয়ে গেল। শুতেই বেঘোরে ঘুম, যা ধকল গেছে সারাটা দিন। কিসের যেন একটা আওয়াজে হঠাৎ করে ঘুম ভেঙ্গে যায় সহস্রর। আওয়াজটা বাথরুম থেকে আসছে, মনে হচ্ছে কেউ শাওয়ার চালিয়ে স্নান করছে। তাহলে কি অমিত? রাত্রি 2:45, এত রাত্রে স্নান করছে কেন, ও কি এখন থেকেই রেডি হতে শুরু করে দিয়েছে? ‘যা ইচ্ছে করুক’ এই ভেবে পাশফিরে ঘুমানোর চেষ্টায় মনোনিবেশ করে সহস্র। প্রায় দশ মিনিট কেটে গেল, এখনো শাওয়ার বন্ধ না করে কি করছে ছেলেটা? এই ঠাণ্ডায় মাঝরাত্রে এতক্ষণ ধরে স্নান করছে, ঠাণ্ডা লাগিয়ে নিজের ট্যুরটা তো বিগড়াবে, আমাদেরটাও মাথায় তুলবে মনে হচ্ছে।
এবার আর না ডাকলেই নয়, “এই অমিত, কিরে আর কতক্ষণ স্নান করবি?” নাঃ কোনো উত্তর নেই। একপ্রকার বাধ্য হয়েই উঠে গিয়ে বাথরুমের দরজায় টোকা দেয় সহস্র। একি! দরজা তো খোলা, আর শাওয়ারটাও ফুল স্পীডে চলছে। তড়িঘড়ি শাওয়ারটা অফ্ করে সে। বাথরুমটা একটা নাম-না-জানা সুমিষ্ট ফুলের সুগন্ধে মৌ মৌ করছে। রুমের ডিমলাইটে দেখে অমিত তো অকাতরে ঘুমাচ্ছে। তাহলে শাওয়ার কে অন করল? হয়তো অন করাই ছিল ওরা শুনতে পায়নি, নাঃ ওরা সকলেই তো এই রুমে ছিল রাত্রি একটা অব্দি আর বাথরুমও ইউজ করেছে। তাহলে কি ট্যাংকে জল ছিলনা? যাইহোক কাল দেখা যাবে, এইভেবে ঘুমিয়ে পরে সহস্র।
পরের দিন সকালে ব্রেকফাস্ট্ করতে গিয়ে, সহস্রর ঠিক অপজিটে একটি মেয়ে বসে ব্রেকফাস্ট করছে। মেয়েটির দিকে কয়েকবার দেখতেই ব্যপারটা নিবেশের চোখে পড়ে, অমনি শুরু খিল্লী। বেচারা সহস্র তো বলতেও পারছেনা কোন কথা, কিন্তু মেয়েটিকে আগে দেখেছে বলে মনে হয় ওর। হোটেল থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠতেই সহস্রর মনে পরে যে সে ডিএসএলআর টা ব্রেকফাস্ট টেবিলে রেখে এসেছে, অমনি কাউকে কিছু না বলে গাড়ি থেকে নেমেই সোজা রিসেপশানে। সহস্রকে হন্তদন্ত দেখেই হোটেল ম্যানেজার মানে ঐ আগে দেখা মেয়েটি জানতে চায় “স্যার, কিছু প্রবলেম?”
“হ্যাঁ, মানে আমি ডিএসএলআরটা লবিতে রেখেছিলাম।”
“এই যে আপনার ডিএসএলআর, আমাদের একজন স্টাফ এটিকে এখানে জমা করে গেল এইমাত্র।” সহস্র ধন্যবাদ ঞ্জাপন করে আবার গাড়িতে ওঠে। কেমন যেন আনমনা দেখাচ্ছে সহস্রকে, কোনকিছুতেই তেমন এটেনশান নেই খালি রাস্তার দুপাশে তাকিয়ে থাকে, যেন কিছু খুঁজছে সে। অভি তো বলেই ফেলল “ভাই সহস্র, তুই কি ওই মেয়েটার প্রেমে পড়ে গেলি নাকি? প্রথম দর্শনেই তোকে যে রোমিও বানিয়ে ছেড়েছে দেখছি।” প্ল্যানিং মতো ছাঙ্গুলেক পৌছালেও নাথুলা অব্দি যাওয়া গেল না। ছাঙ্গুতেই টেমপ্যারেচার (-4)। রাস্তার ওপর বরফ জমে এমন অবস্থা হয়েছে যে আর্মির ট্রাকগুলোর টায়ারে লোহার শেকল পেঁচানো, যাতে স্লিপ না করে। অগত্যা ওখান থেকেই ব্যাক করতে হলো। দুপুর 2 টার পর ওয়েদার ড্যাম্প হতে শুরু করল, যদিও ওরা তখন কাছাকাছি নেমে এসেছে। সেদিন আর কোথাও বেরানো হল না, রুমের মধ্যেই আড্ডা, গপ্পো হইহুল্লোর করে শুতে প্রায় 12:30 হয়ে গেল।
আজ অবশ্য শোবার আগেই বাথরুমের ট্যাপ, শাওয়ার সবই চেক করে নিয়েছে, সবই ঠিকঠাক অফ করা আছে। শোয়া মাত্রই ঘুম। ঘুমের মধ্যে হঠাৎই মনে হলো শাওয়ারটা অন রয়েছে, ঘুমের ঘোর কাটতেই উঠে বসল সহস্র। এমনটা তো হওয়ার কথা নয়, আজ তো সে নিজে চেক করেছে ঘুমাতে যাবার আগেই। এমনিতে ও ভীষন সাহসী, তাও কেমন যেন ভয়ভয় করতে থাকে। আবার ভাবে, কিছু একটা যান্ত্রিক গণ্ডগোল রয়েছে, নাহলে বারবার এমনটা হবেই বা কেন। পাশের বেডে অমিতকে ঠেলে ওঠাতে চেষ্টা করে, অমিতের তো কোন সাড়াই নেই। বেহুশ হয়ে ঘুমিয়ে আছে। মনে সাহস জুগিয়ে সহস্র নিজেই গেল শাওয়ার অফ করতে। দরজা ঠেলে ঢুকবে, কিন্তু বাথরুমের দরজাতো ভিতর থেকে বন্ধ, আর ভিতরে লাইটও অন রয়েছে। দরজায় কয়েকবার টোকা দিতেই দরজা খুলে গেল। দরজা খুলতেই গত রাত্রের সেই নাম-না-জানা ফুলের সুবাষ। একি, এতো রিসেপশানের মেয়েটা! রুমের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ, তাহলে ভিতরে আসলো কিভাবে? আর কেনই বা এখানে স্নান করতে এসেছে, তাও এই মাঝরাতে?
“কেমন আছ সহস্র?” বলেই মুখটা ঘোরাল সে। আরে একি! এতো ধৃতি। যেন আকাশ ভেঙে পড়ল সহস্রর মাথায়।
“তুমি একটু বাইরে যাও, আমি চেঞ্জ করে নিই তারপর কথা হবে।”
যন্ত্রচালিত পুতুলের মতো বাইরে বেরিয়ে আসল সহস্র। মাথা যে আর কাজ করছেনা, হাত-পা গুলোও কেমন যেন কর্মক্ষমতা হারিয়েছে। ধৃতি দরজা খুলে একঝলক মনমোহিত করা হিমেল হাসি দিয়ে ইশারায় সহস্রকে তার পিছনে যেতে বলে। এই হাল্কা আলোয় অপূর্ব লাগছে ধৃতিকে, সদ্য স্নানের পর খোলা চুল, পরনে একটা অফ-হোয়াইট সালোয়ার তার ওপর সুন্দর বুটিকর নকশা আর সেই সুমিষ্ট গন্ধ। যথারীতি সহস্র রোবটের ন্যায় তাকে অনুসরণ করে রুমের অন্য দরজা দিয়ে ব্যালকনিতে পৌঁছায়। তীব্র ঠাণ্ডা, তাতেও কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই সহস্রর, সে যেন আর নিজের মধ্যেই নেই। ধৃতি নিজেই রুম থেকে মোটা চাদরটা এনে জরিয়ে দেয় সহস্রর গায়ে। এতক্ষনে যেন ও একটু সম্বিত ফিরে পেল, “তুমি এতরাত্রে এখানে কি করছ ধৃতি, আর বন্ধ রুমে আসলেই বা কিভাবে?”
“আগে বসো” ব্যালকনির সোফায় পাশাপাশি বসল দুজনে।
“আমি এত রাত্রে এই বন্ধ রুমে কিভাবে আসলাম, কেনই বা আসলাম, এরকম অনেক প্রশ্ন তোমার মাথায় ঘুরছে।”
হ্যাঁ। “ঠিক আছে, আমি বলছি শোনো। আমার কথার মধ্যে কোনো প্রশ্ন করবেনা, আশাকরি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর তুমি নিজেই পেয়ে যাবে। যদি কোনো উত্তর না পাও, আমার কথা শেষ হলে পরে তুমি প্রশ্ন করবে।” ঠিক আছে, বলো।
“সেবছর তুমি কলকাতা ফিরে যাবার পর আমি তোমারই অপেক্ষা করছিলাম, ভেবেছিলাম হয়তো তোমার এখানের চাকরিটা হয়ে যাবে, আর তাই তুমি আবার ফিরে আসবে। এভাবে দিন-সপ্তাহ পেরিয়ে যখন একমাস হয়ে গেল, তখন আমি বুঝলাম যে চাকরিটা হয়নি। তাও ওই ব্যাংকে গেলাম এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে তোমার খোঁজে যদি তুমি জয়েন করে থাকো। সামনের ডেস্কের একজন মহিলাকে জিঞ্জাসা করতে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারলেন না, তবে এটা বললেন, যারা নতুন জয়েন করেছে তাদের মধ্যে কলকাতার কেউ নেই, সকলেই সিকিমের। তোমার হোস্টেলের যে ফোন নাম্বার দিয়েছিলে সেখানেও অনেকেবার কল করেছি, কিন্তু তোমার ব্যপারে কেউই কিছু বলতে পারেনি। সেবছর এখানে প্রচণ্ডরূপে ভূমিকম্প হয়, আমার বোন দ্রুহি হোস্টেলে ছিল শিলিগুড়িতে আর আমি বোনকে কয়েকটা প্রয়োজনীয় জিনিস ও কিছু টাকা দিতে শিলিগুড়ি যাই সেদিন কারণ ওর এক্সাম চলছিল তখন। ওখান থেকেই ভূমিকম্পের খবর পাই, কিন্তু শিলিগুড়ি থেকে সেদিন কোন গাড়ি আসতে রাজী না হওয়ায় রাতটা বোনের কাছেই থাকতে হয়, ভীষণ উদ্বিগ্নভাবে রাতটুকু কোনওভাবে কাটিয়ে একটা গাড়ি জোগাড় করে এসে দেখি মা-বাবা আর বেঁচে নেই, আমাদের ঘরবাড়ি সবকিছু তছনছ হয়ে গেছে বিশেষ করে মা-বাবার ঘরটা পুরো গুঁড়িয়ে গেছে।
কয়কদিন সরকারি ত্রাণকেন্দ্রে আশ্রয় নেবার পর নিজকে একটু সামলে বাবা যে হোটেলে চাকরি করত হোটেল মালিকের সাথে দেখা করি। উনি আমার যোগ্যতা মতো একটা চাকরি দেন আমায়। বলা বাহুল্য একটা চাকরির খুবই প্রয়োজন হয়ে পরেছিল, কারণ দ্রুহির হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্স কম্প্লিট হতে তখনও এক বছর বাকী। চাকরিতে জয়েন করার পর বুঝলাম হোটেল ম্যানেজার মোটেও সুবিধার নয়, লোকটা ভীষণ চালক আর তেমনই চারিত্রিক দোষ তার। এও শুনলাম, হোটেল এবং হোটেলের বাইরে একাধিক মহিলার সাথে উনি সহবাস করেন। আমি ওনাকে বরাবরই এড়িয়ে চলতাম। তখন দ্রুহির ফাইনাল সেমিস্টারের এক্সাম চলছিল, মনে মনে নিজেকে বোঝতে শুরু করছিলাম আর তো মাত্র কয়েক মাস, বোনের কাউন্সেলিং হয়ে গেলে আমার ছুটি। কলকাতায় গিয়ে তোমার ঠিকানায় দেখা করব, ঠিক যেমনটা কথা হয়েছিল।
হঠাৎই একদিন এক ট্যুরিস্টের টাকা-পয়সার ব্যপার নিয়ে আমায় ব্ল্যাকমেল করে এবং কাজ শেষে ওনার রুমে ডেকে পাঠায়। শুরু হয় ব্ল্যকমেলিংয়ের চরম পর্যায়। আমি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার ভয় দেখতে থাকে। সেরাত্রে মদ্যপ অবস্থায় সারা রাত্রি ধরে শকুনের মতো আমায় ছিঁড়ে খেয়েছিল। আর আমি? দাঁতে দাঁত দিয়ে চেপে সহ্য করেছিলাম শুধু বোনটার জন্য, যেন ‘তীরে এসে তরী’ না ডুবে যায়। আমাকে ক্ষমা করে দিও সহস্র, আমি নিজের পবিত্রতাকে তোমার জন্য বাঁচিয়ে রাখতে পারিনি। ওই নরপশুটা আমার সবকিছু শেষ করে দিল, আর তা মুখবুজে সহ্য করতে হল আমায়।” কথাগুলো বলতে বলতে কেমন যেন ইমোশন্যাল হয়ে পড়ে ধৃতি। সহস্র লক্ষ্য করে ওর দুচোখ বেয়ে নেমে আসছে অশ্রুধারা।
নিজেকে সামলে আবার বলতে শুরু করে : “যাইহোক, দ্রুহির কাউন্সেলিং হলে এই হোটেলের জন্যই সিলেক্টেড হয়, তুমি নিশ্চয়ই আমার বোনকে দেখেছ হোটেলে। এরপর শুরু হল প্রতিশোধের খেলা, আমি তক্কে তক্কে রইলাম সুযোগের অপেক্ষায়, একদিন পেয়েও গেলাম। রাত্রি তখন 12:30, ম্যানেজার ওইদিন একটা পার্টি থেকে মাতাল অবস্থায় টলমল করতে করতে ফিরল হোটেলে। ও রুমে ঢুকে যেতেই আমি গেলাম ওই রুমে। ও তখন নেশায় বুঁদ হয়ে আছে। ওই অবস্হায় আমাকে রুমে দেখে তার চোখদুটো লালসায় চিকচিক্ করে ওঠে। নেশার ঘোরে আমার শরীরটা নিয়ে উন্মত্ত হয়ে খেলতে শুরু করবে এমন সময় আমি ফল কাটার ছুরিটা তুলে নিয়ে তার ওর গলায় সজোরে পরপর কয়েকটা কোপ বসালাম।
আর সে? তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে, চোখদুটো যেন তার বেড়িয়ে আসবে। এরপর নিশ্চিত হবার জন্য নালিটাই ছুরি দিয়ে কেটে ফেললাম। জানিনা কোন শক্তির বশবর্তী হয়ে সেদিন আমি এতটা দুঃসাহসী হয়ে গিয়েছিলাম, তবে তার ঠিক পরমুহূর্তেই আমার আপাদমস্তক কাঁপতে শুরু করল, আমি আর অপেক্ষা না করে দৌড়ে হোটেল থেকে বেড়িয়ে পাশের খাতে ঝাঁপ দিলাম।” কথাগুলো ধৃতি যত সহজে বলে গেল সহস্র ততটাই চমকে উঠলো। মাথার মধ্যে কেমন যেন একটা বিদ্যুৎ খেলে গেল তার। মুখ দিয়ে কোন আওয়াজ বের হলোনা আর স্থির দৃষ্টিতে ধৃতির দিকে চেয়ে রইল। ধৃতি আবার শুরু করে ” আমার কথা ভেবে নিজেকে কষ্ট দিওনা, এখনও একটা কাজ অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে আমার। দ্রুহিটা বড্ড একা হয়ে পড়েছে। ওকে গাইড করা, দেখাশোনা করা এবং সবশেষে ওকে সাথ দেওয়ার কেউই নেই। বোনটা আমার বড় আদরের, কখনও কোনো আঘাত আমি ওকে লাগতে দিইনি। আমার এই কথাটা যদি তুমি রাখো, তাহলে আমিও শান্তিতে মুক্তিলাভ করতে পারি।”
কিছুক্ষণ সবকিছু নিঃঝুম, কারোর মুখে কোনো কথা নেই শুধু দুজনে চেয়ে আছে দুজনের দিকে। নিস্তব্ধতা ভাঙল ধৃতি নিজেই ” এবার বলো, তোমার আর কি কিছু জানার আছে?” কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে এবার অর্ক সাহস করে মুখ খুলল, ” আচ্ছা আমি এটা মেনে নিলাম যে তোমার সাথে যা হয়েছে তা বীভৎস নোংরামি আর তেমনই ঘৃণ্য। কিন্তু কেউ যদি জোর করে বা কোন দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তোমার সাথে ভুল কিছু করে তাহলেই কি তোমার পবিত্রতা নষ্ট হয়ে যাবে? তোমার পবিত্রতা তো তোমার মনে, তুমি মন থেকেই যখন মেনে নিতে পারোনি তখন তুমি অপবিত্র কিভাবে হলে? আর শরীর, তোমার সাথে রিলেশনশিপের আগে অন্য কারোর সাথে আমারও রিলেশন হয়ে থাকতে পারে। তাহলে আমিও তো অপবিত্র।” “ওই সময় তুমি আমার পাশে ছিলেনা আর অন্য কারোর সাথে এগুলো আলোচনাও করা যায় না। আর আমি ওই কয়েক মাস যে কি দুর্বিসহ দিনযাপন করেছি তা কেবল আমিই জানি, তাই ওসব কথা থাক।”
ধৃতি সহস্রর হাতে সানগ্লাসের বক্সটা দিয়ে বলে “এবার আমায় যাওয়ার সময় হয়েছে, এটা সে’বছর তুমি আমায় কিনে দিয়েছিলে। ভেবেছিলাম তোমার সাথে যখন কোথাও বেড়োব তখনই এটা ব্যবহার করব, সেই সুযোগে আর হয়ে উঠলো না। তোমার পছন্দের কাউকে এটা দিও। তোমার জন্য কয়েকটা জিনিস রাখা আছে, দ্রুহির থেকে নিয়ে নিও।” এইকথা বলে ধৃতি ব্যালকনি থেকে বেরিয়ে ধীরে ধীরে দূর কুয়াশাচ্ছন্ন পাহাড়ের মধ্যে মিলিয়ে গেল আর ছড়িয়ে গেল সেই সুমিষ্ট নাম-না-জানা ফুলের সতেজ সুবাষ। সহস্রকে উপহার দিয়ে গেল তৃপ্তিতে পরিপূর্ণ একঝলক হাসি। আর সহস্র শুধু নিষ্পলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল তার মিলিয়ে যাওয়া পাহাড়ের দিকে।
প্রিয় পাঠকবর্গ,
সহস্র – দ্রুহির কি মিলন হবে, সহস্র কি পারবে তার হারিয়ে যাওয়া ধ্রুতির কথা রাখতে? জানতে হলে অবশ্যই পড়তে হবে পরবর্তী গল্প। আপনাদের পর্যালোচনা পরবর্তী রচনাগুলোকে আরও সমৃদ্ধ এবং প্রাণবন্ত করতে সহায়তা করবে।