দীর্ঘ পাঁচ বছর আমার একমাত্র বন্ধু ছিল রিয়া নামে সেই মিষ্টি মেয়েটা। তার পর কোনো এক কালবৈশাখী ঝড়ে বন্ধুত্বের সম্পর্কে ফটল ধরে গেলো। ঝড়ো হাওয়ায় আলাদা হয়ে গেল আমাদের বন্ধুত্ব। বছর দু-এক আগে সময় টা 2018, হঠাৎ শুনতে পাই, রিয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে । আর দেখতে দেখতে একসময় রিয়ার বিয়ে ও হয়ে গেলো । তার পর রিয়ার সঙ্গে কথা বলা কমতে কমতে আজ এতটাই কমে গেছে যে , মুখে বলে বুঝানো যায় না। কত দিন যে তাকে দেখি নি সেটা ভাবলেও বুক ফেঁটে যায়।
“বন্ধুত্ব” খুব ছোট্ট একটা শব্দ। কিন্তু তার গভীরতা এবং তার ভেতর লুকিয়ে থাকা ভালোবাসা, স্নেহ, মমতা, বিশ্বাস এবং সম্পর্কের দৃঢ়তা থাকে অনেক বেশী। অন্য যে কোন সম্পর্ক থেকে ’বন্ধুত্বে’র সম্পর্ক সম্পূর্ন আলাদা। তাই হয় তো – আমার মনে রিয়া আজ ও সেই পুরনো বন্ধু রিয়া হয়েই আছে। আজ ও ভুলতে পারিনি তাকে ।যেগুলো ভাবতে ভাবতে চোখে জল এলো। বতর্মানে লক ডাউন চলছে , মেঘলা বাতাশ। বিকেলে নিশ্চুপ নিরবে হেটে চলেছি আনমনে শহরের গলিতে, চারদিকে মানুষের কোলাহল নেই , নেই কোনো যানজট। মনে হচ্ছে পুরো জলপাইগুড়ি ঘুমিয়ে আছে । ঘুমন্ত শহরে হাটতে হাটতে চলে এসেছি বাড়ির কাছেই । চারদিকে কোনো মানুষ নেই, একদম নিরব একটা স্থান। এসে বসলাম একটা কোনো এক লাম্প পোস্ট র তলায়। হঠাৎ চোখের কোণে জলবিন্দু এসে জমাট হলো। আকাশটাও আমার চোখের সাথে তাল মিলিয়ে ঝরিয়ে দিলো বৃষ্টি কণা।
দৌড়ে চলে আসলাম ঝাঁপ বন্ধ ছোট্ট একটি চায়ের দোকানে। বৃষ্টি খুব বেশি ঝরতে লাগলো। দেখতে দেখতে কেটে গেলো মিনিট দশেক। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করলাম আবার। বসে আছি মন খারাপ করে । কিন্তু বিরক্তকর মুহূর্তটা মুহূর্তের মধ্যে মনোমুগ্ধকর হয়ে উঠলো। একি রাস্তার ওপারে ছাউনি র মধ্যে সামনে দাঁড়িয়ে আছে অসম্ভব সুন্দর মেয়ে । পরনে চাপা জিন্স এই সবুজ কুর্তা। হাতে একটা বড় লেডিস ব্যাগ। দেখতে একেবারে রিয়ার মত একই ।কিন্তু , না রিয়া না। মেয়েটার হাতের ব্যাগে উল দিয়ে বড়ো বড়ো অক্ষরে লিখা। প্রিয়াঙ্কা । হাতে ঝোলানো ব্যাগ দেখে বুঝতে পারলাম মেয়েটার নাম প্রিয়াঙ্কা। নামটা দেখে মনে ভিতর কেমন জানি মোচড় দিয়ে উঠল। মনে দরজায় কড়া নাড়তে লাগলো সেই পুরোনো বন্ধুত্বের স্মৃতি। ক্রমে আমি ভাবুক হয়ে উঠলাম। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, একবার গিয়ে কথা বলব মেয়েটার সঙ্গে। ছাতা হাতে তাও ভিজে গেছে, চুলগুলোও হালকা ভিজে গেছে। সে ভেজা চুলগুলো শুকনো জন্য নাড়তেছে।
আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি, আর ভাবছি সামনে গিয়ে কি বলব ???? মনে খুশির জোয়ার শুরু হয়ে গেলো। চোখ ফেরাতেই পারছি না। অসম্ভব সুন্দর মেয়েটা যেনো স্বর্গের অপ্সরী নেমে এসেছে। বৃষ্টির ফোঁটা ভেদ করে তাকিয়ে আছি রাস্তার ওপারে। কিছু না বলেই প্রিয়াঙ্কা মুচকি হাসলো। মুচকি হাসিতে অসম্ভব সুন্দর লাগে। মুচকি হাসিতে মুখে টোল পড়ে, ঠিক রিয়ার যেমন টোল পরে একেবারে হুবহু আর মুখে টোল পড়া মেয়েগুলো এমনিতে অনেক কিউট হয়। কিন্তু প্রিয়াঙ্কা একটু বেশিই। আমি আরো অবাক হয়ে গেলাম। তার উপর মায়াবী চেহারা সত্যি ক্রাশ খাওয়ার মতোই। যে কেউ দেখলে ক্রাশ খাবে, আমিও কিন্তু বাকি ছিলাম না প্রথম দেখার পর থেকে ক্রাশ খেয়ে বসে আছি। এভাবেই তাকে দেখে কাটিয়ে দিলাম আরো কিছু সময়। আস্তে আস্তে বৃষ্টি থেমে গেল, আমি তাড়াহুড়া করে প্রিয়াঙ্কা সঙ্গে সামনে থেকে কথা বলার জন্য দৌড়ে গেলাম সেই রাস্তার ওপরের ছাউনি তে ।
গিয়ে দেখি কেউ নেই সেখানে। আমি এদিন ওদিক তাকাতে লাগলাম। নাহ, কেউ কে কোথাও দেখলাম না। আমার মন খুব খারাপ হয়ে গেলো। মনে গভীর প্রশ্ন আঘাত করলো । তাহলে আমি এতক্ষন কাকে দেখলাম ??? কাকে দেখলাম আমি তার পর , মুচকি হেসে চুপ করে বসে পড়লাম সেই ছাউনি র মধ্যে, কিছুক্ষন কোনো কথা বলিনি। আমি কিন্তু এমন চুপ করে থাকার ছেলে না কিন্তু কেন জানি কেন প্রিয়াঙ্কার সাথে কোনো কথাই বলতে পারলাম না। এতে একবারে চুপ হয়ে গেলাম কষ্টে। চারিদিকে সন্ধ্যা নেমেছে। রাস্তার লাইট গুলো নিজে থেকেই জ্বলে উঠল। এই আমি নীরব রাস্তা দিয়ে হাঁটতে লাগলাম।