ট্রেন টা ছেড়েই দিয়েছিল, দৌড়ে গিয়ে কোনোমতে উঠে পড়লাম। ভোরের প্যাসেঞ্জার ট্রেন, সকাল ৫.৪৫ এ অভয়াপূরী থেকে গুয়াহাটি যায়। আমার এমনিতেই ঘুম খুব বেশি, তার উপর জানুয়ারির সকাল। যাইহোক ট্রেনে একটা খালি জায়গা দেখে বসে পড়লাম। এত্ত সকালেও এই ট্রেন টায় বেশ ভালই ভিড় হয়। আমি হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে একটু ঘূমোনোর চেষ্টা করছি। কিন্তু একে তো ঠান্ডা, তার উপর ভাঙা জানালা দিয়ে শিরশির করে আসা বাতাস। কবে যে আমাদের দেশে ইউরোপ আমেরিকার মত ট্রেন হবে।
ট্রেন টা স্লো হতেই বুঝলাম পরের ষ্টেশন গোয়ালপাড়া এসে গেছে, এখানে প্রচুর লোক এই ট্রেন টায় ওঠে। ট্রেন টা দাঁড়াতেই বাঁধ ভাঙা জলের মতো লোক উঠে পড়লো। আমি যে জায়গায় বসে ছিলাম বেশ কয়েকজন লোক (শ্রমিক ) বসে পড়লো। ওরা রোজ এভাবেই শহরে যায় পেটের দায়ে। আর রাতের ট্রেনে ফিরে আসে। আমার পরিচয়, আমি (নাম টা ওটাই থাক) Geography তে MA কমপ্লিট করার পর আমি পড়া কলেজেই Guest Lecturer হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করি আর সাথে ভালো একটা চাকরির জন্য চেষ্টা করছি। আমি আজকে Gauhati University তে আমার একটা কাজে যাচ্ছিলাম।
চা, চা, চা – হকারের ডাক শুনে একটু ভালো লাগলো কারন আমি ভাবছিলাম কখন চা আসবে। সকাল সকাল লাল চা বেশ ভালই লাগে। চা খেয়ে একটু ঘুম ভাবটা কাটছে। এবার আমি আমার সামনে ও পাশে বসা লোক গুলোকে ভালো করে দেখছিলাম। ওদের সরঞ্জাম দেখে বুঝলাম এরা সবাই নির্মান শ্রমিক। কিন্তু আমার চোখ টা আটকে গেল জানালার পাশে বসা একজন বয়স্ক ব্যক্তির দিকে। ওরা সবাই গল্পে ব্যস্ত। ওদের মাঝে এই বয়স্ক মানুষ টা ছাড়া সবাই আমার মতো যুবক। সবাই এনাকে দাদু বলছে, কেন বলছে বুঝলাম না কারণ লোকটা অতটাও বুড়ো না। খুব বেশি হলে ৬০ বছর হবে।
বয়স হলেও আমার বয়সে উনি যে মেয়েদের রাতের ঘুম হারাম করতেন তা কিন্তু বেশ বোঝা যায়। বেশ আভিজাত্যের ছাপ চোখে মুখে কিন্তু পোশাক দেখলে আবার বোঝা যায় উনি বেশ গরীব। একটু ভালো করে দেখতেই বুঝলাম লোকটার দুটো পাই নেই। ঘুমের ঘোরে ছিলাম বলে ভালো করে বুঝতে পাই নি। আর যা বুঝলাম এই ছেলে গুলো নির্মান শ্রমিক কিন্তু এই লোক টা কিন্তু কাজে নয় হয়তো অন্য কোনো কারণে যাচ্ছে ওদের সাথে। শিক্ষকতার দরুন আমার গ্রামের মানুষদের সাথে বেশ ভালই জমে। ওনারা অনেকেই আসেন ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার খবর নিতে। আমি অনেকটা ছোট হলেও বেশ সন্মান করেন। স্যার বলেই ডাকতেন দেখা হলেই। আমিও গ্রামের ছেলে জানি যে গ্রামের মানুষদের মন কতটা সহজ সরল হয়। যাইহোক আমি ভাবলাম এতটা জার্নি এনাদের সাথে গল্প করলে বেশ ভালই লাগবে।
আমি: সবাই আপনাকে দাদু বলছে তো আমিও কি দাদু বলেই ডাকবো আপনাকে? আমার কথা শুনে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে রইল।
দাদু: হ্যাঁ বলতে পারো। (হাঁসি)
আমি: কোথায় যাবেন আপনি?
দাদু: গুয়াহাটি বাবা। তা তুমি কোথায় যাচ্ছ?
আমি: আমিও ঐ গুয়াহাটি যাচ্ছি।
দাদু: বাবা তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতাম। অনেকক্ষন থেকেই ভাবছি কিন্তু সাহস পাচ্ছিলাম না।
আমি: হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই জিজ্ঞেস করবেন।
দাদু: বাবা আমাকে একটু বলবে কিভাবে Gauhati University যাবো।
আমি: দাদু আমিও University যাচ্ছি, চিন্তা করবেন না আমি নিয়ে যাব আপনাকে। (দাদুর মুখে স্বস্তি দেখতে পেলাম)
আমি: দাদু University যাচ্ছেন, ওখানে কেউ আছে আপনার?
দাদু: হ্যাঁ বাবা।
আমি: কে আছে?
দাদু: আমার এক আত্মীয় বাবা।
(ওনার কথা শুনে মনে হল উনি কিছু লুকাচ্ছেন) আমি ভাবছি ওনাকে কিভাবে জিজ্ঞেস করবো যে ওনার পা দুটো কেমন করে এমন হলো। সাহস পাচ্ছিলাম না। আমার নজর ওনার পায়ের দিকে বুঝতে পেরে উনি নিজেই জিজ্ঞেস করলেন।
দাদু: কি বাবা তুমি কি ভাবছো আমি পা দুটা কিভাবে হারালাম? ওনার কথায় সম্বিত ফিরে পেয়ে তাড়াতাড়ি বললাম
আমি: না মানে হ্যাঁ । আপনাকে দেখে মনে হয় না যে আপনি জন্ম থেকেই এরকম। মনে হয় কোন অঘটন এ আপনার এরকম হয়েছে।
দাদু: হ্যাঁ বাবা সে অনেক কথা। পরে একদিন যদি আবার দেখা হয় বলবো। (আমি সুযোগ পেয়ে গেছি বুঝে একটু আগ্রহের সাথে অনুরোধ করলাম)
আমি: দাদু জানি না আবার দেখা হবে কিনা। আর এখনোও অনেক রাস্তা বাকি। বলুন না। (উনি আমার দিকে তাকিয়ে কি ভাবলেন জানি না)
দাদু: বাবা তোমাকে দেখে খুব আপন মনে হয় জানি না কেনো। ঠিক আছে বলছি। (আমাকে অনেকেই বলে আমি
নাকি বেশ সরল লোক। তা জানি না কিন্তু অনেকেই আমাকে অনেক ওনাদের কথা আগেও বলেছেন। তাই আমার ও বিশ্বাস ছিল উনি হয়তো বলবেন) তারপর উনি শুরু করলেন আর যা বললেন আমি অবাক হয়ে গেলাম। এতটা ভারাক্রান্ত মন আগে আমার কারো জন্য হয়নি। আমি আমার অস্তিত্ব খুঁজছিলাম আর ভাবছিলাম কেন ভগবান এমনটা করলেন ওনার সাথে আর এত কিছুর পরেও লোকটা এভাবে কিভাবে বেঁচে আছেন। এতটা ত্যাগ মানুষ কি ভাবে করতে পারে। কখন Guwahati Station এসে পরেছি বুঝতেই পারিনি। ওনার হাতের ছোঁয়ায় যেন আবার ফিরে এলাম।
দাদু: বাবা চলো এসে পড়েছি।
আমি: হ্যাঁ দাদু চলেন নেমে পড়ি। (আমি দাদুকে অল্প সাহায্য করলাম ট্রেন থেকে নামতে। নেমেই দাদুকে বসিয়ে চা আনতে গেলাম।)
***ওনার কথাগুলো উনি হিসেবেই লিখছি****
আমি ইন্দ্র রায় চৌধুরী, আদি বাড়ি বাংলাদেশের রংপুর জেলায়। আমার জন্ম ১৯৬০ সালে। আমার বাবা ওখানে জমিদার ছিলেন। আমি পরিবারের বড় আর আমি ছাড়া আমার এক ভাই ও দুই বোন ছিল। তখন আমার বয়স ১০ বছর, সালটা ১৯৭০। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর অত্যাচারে ওখানে থাকা খুবই মুশকিল হয়ে উঠছিল। আমার মা আমার বাবাকে বার বার বলতে শুনেছি চলো ওপারে যাই। না থাক জমিদারী, প্রান টা তো থাকবে। আমার বাবা হরিশ চন্দ্র রায় চৌধুরী কিছুতেই এভাবে মুখ লুকিয়ে পালিয়ে আসবেন না। ওনার সোজা কথা এদেশে জন্মেছি, মরলে এদেশেই মরবো।
১৩ই নভেম্বর, ১৯৭১ । ঐদিনের কথা ভাবলে এখনো আমার রাতের ঘুম উরে যায়। ঘুমোতে পারি না। নভেম্বর এর সন্ধ্যায় শীত শীত ভাব শুরু হয়েছে। আমি মা আর আমার ভাই বোন সবাই উঠোনে। পায়েশ খাচ্ছিলাম। বাবা বাইরের কাছারি ঘরে কিছু লোক বসে কথা বলেছিলেন। হঠাৎ একটা বিকট শব্দে আমার হাতের বাটিটা পরে গেল। মা জোরে জোরে চিৎকার করছেন। ভাই বোনেরা মা কে জড়িয়ে কাঁদছে। হঠাৎ একটা মনোরম পরিবেশ বদলে যেনো যুদ্ধখেএ তৈরি হয়ে গেল। চারিদিকে কান্না, চিৎকার, বিকট শব্দ, আগুন। মা আমাকে আর ভাই বোনকে নিয়ে দৌড়ে পেছনের দরজা দিয়ে পালালেন। পেছনের বড় ধরলা নদীতে নৌকা বাঁধানো থাকে আমাদের। ঐ রাতেই আমরা সবাই বাবা ছাড়া এপার বাংলায় চলে এলাম। পরে শুনেছি বাবা ঐ দিন রাতে যুদ্ধ করতে গিয়ে মারা যান।
একটা যুদ্ধে হেরে এসেছি। এবার আর একটা যুদ্ধ। এটা জীবন যুদ্ধ। বেঁচে থাকার জন্য নিজের সাথেই যুদ্ধ। আমার বয়স ১১ বছর হলেও আমি যেন ঐ একদিনেই অনেক টা বড় হয়ে গেছি। এপারে হাজার হাজার লোক ওপার থেকে আসা। আশ্রয় শিবির বলতে মাথার উপর পলিথিন আর একবেলা একটু খাবার। আমি মেনে নিতে পারলেও আমার ভাই বোনেরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না। মা যেনো কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। উদাস মনে কি করছে মা বুঝতেই পারছে না। আমি মা কে বললাম যে এখানে এভাবে থাকলে হয়তো না খেতে পেয়ে সবাই মারা যাব। পরেরদিন ভোর হতেই আমারা আসাম এর দিকে রওনা দিলাম।
আসাম এর অবিভক্ত গোয়ালপাড়া জেলায় পূর্ব পরিচিত এক ব্যাবসায়ীর বাড়িতে আশ্রয় নিলাম। উনি আমাদের ওনার গ্রামের এক টুকরো জমিতে এক ঘর বানিয়ে দিলেন। কিন্তু ঐ যা। আর খবর ও নিলেন না। ওনারী বা কি দোষ। বাংলাদেশের খারাপ অবস্থার জন্য ওনারাও ব্যাবসা একদম নেই। শেষে ওপারের জমিদার এপারে ভিখারী হয়ে গেলাম। কোন রকমে মা আর আমি অন্যের বাড়িতে কাজ করে চলেছিলাম। কিন্তু এভাবে আর বেশি দিন চললো না। আমি পড়াশুনায় খুব ভালো ছিলাম কিন্তু পরিস্থিতি মেনে নিতে বাধ্য ছিলাম। কিন্তু আমি কখনোই চাইনি আমার ভাই বোনের অবস্থা আমার মতো হোক। আমার বয়স যখন ১৩ বছর ১৯৭৩ সাল, মানে ২ বছর পর ঐ ব্যাবসায়ী কাকু আমাকে ৫ টাকা বেতনে গুয়াহাটির এক মারোয়ারি ব্যাবসায়ীর বাড়িতে রেখে যান। আমার কাজ ছিল বাজার করা, দোকান ঝাড়ু দেয়া, আরো কিছু ছোট ছোট কাজ।
মারোয়ারি ব্যাবসায়ীরা Joint Family ছিল। ওনারা ৩ ভাই, সবার বৌ আর ওনাদের সন্তান। যিনি আমাকে রেখেছিলেন ওনার ২ ছেলে আর এক মেয়ে। বড় ছেলে টা আমার থেকে বড় ডাক নাম গুড্ডু, ছোট ছেলে আমার বয়সের ডাক নাম রাজু আর মেয়ে টা ছোট, গুরীয়া করে ডাকতো। রোজ সকাল ৬ টায় আমার কাজ শুরু আর রাত ৯ টায় শেষ হত। রাজু আমার সাথে বিকেলে করে খেলত সাথে গুরীয়া । আমি রোজ গুরীয়ার জন্য লজেন্স আনতাম। আমার বোনের মত লাগত ওকে। ঐ সময় খুব মন খারাপ করতো বাড়ির কথা ভেবে। রোজ কাঁদতাম কিন্তু কোনো দিন বাড়িতে আসতে চাইনি। জানতাম আমি এখন আমার বাড়ির ভরসা। যত কষ্টই হোক না কেন, আমার ভাই বোনের অবস্থা যেন আমার মত না হয়।
এভাবেই এক বছর কেটে গেল। আমার ভাই বোনেরা স্কুলে যাচ্ছে। সবাই বেশ ভালই পড়াশোনা করে মন দিয়ে শুধু আমি পারলাম না। বলতে বলতে মা কাঁদত। মা কে বোঝাতাম ওরা মানুষ হলে আমার নিজের সাফল্য। সেদিন Night Bus এ সকাল সকাল গুয়াহাটি এসে দেখি বাড়িতে বেশ হৈ হৈ । আমার মালিকের বৌ কাঁদছে। আর রাজু, গুরীয়া আর মালিক লাগেজ নিয়ে রেডি। শুনলাম রাজু আর গুরীয়া দিল্লি যাবে। এখন থেকে ওরা ওখানেই ওর মামা বাড়িতে থেকেই পড়বে। রাজু তবু ঠিক আছে কিন্তু গুড়ীয়া, ওতো ছোট মেয়ে মা কে ছেড়ে এত দুরে থাকবে কি করে।
১৯৮৩, অসম আন্দোলন। আমি জীবনে আবার এরকম একটা পরিস্থিতিতে পড়বো কখনো কল্পনাও করতে পারিনি। এখন আমার বয়স ২৩ বছর। আমার ভাই কলেজ পাশ করে Railway তে চাকরি পেয়েছে ৩ মাস হলো। শিলিগুড়ি Posting. বোনেরা কলেজে। মা গত ৩ মাস থেকেই বলে চলেছে বাড়িতে এসে বিয়ে করে সংসার করতে। ভাই এখন সরকারি চাকরি করে, এখন আমাদের আর দুঃখ নেই আগের মত। কিন্তু তবুও যেন আমার মন মানছিল না বিয়ে করতে। ২ বোন আছে, মা কে বুঝিয়েছি বোনেদের কিছু হয়ে গেলেই আমি বিয়ে করব। কিন্তু ঐ বলেনা ভাগ্য কেঁউ বদলাতে পারে না। অসম আন্দোলন সমস্ত আসামের ভীত কাঁপিয়ে দিল। আমার মালিকেরা অবস্থা ভালো নয় বুঝে দিল্লি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। এদিকে আবার গুরীয়া আসার কথা গুয়াহাটি। এখনকার মতো যোগাযোগ আগে ভাবাই যেত না। ঐ টেলিগ্রাম আর ল্যান্ড ফোন। কিন্তু অসম আন্দোলনে সব সার্ভিস বন্ধ। মালিক আমাকে কিছু দিন মানে ওনারা দিল্লি না যাওয়া পর্যন্ত গুয়াহাটিতে থাকতে বলে চলে গেল। আমি ঠিক আছে বলে গুয়াহাটিতে থেকে গেলাম। আমাকে আর এসবে ওত বেশি ভয় লাগে না। কিন্তু আমি আমার মা বোনেদের শিলিগুড়ি ভাইয়ের ওখানে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। মা অনেক বলেছিল কিন্তু আমি গেলাম না। আশ্বস্ত করলাম আমার কিছু হবে না।
তখন রাত ৮টা, আমি রাতের খাবার বানাতে যাব এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠল। একটু ভয় পেলাম এত রাতে আবার কে এলো। হঠাৎ মনে পড়ল গুঢ়িয়া আসার কথা ও আবার নয়তো। দৌড়ে গিয়ে গেট খুলেই দেখি গুড়িয়া। আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ভেতরে ঢুকে তাড়াতাড়ি গেট বন্ধ করে দিতে বলে নিজের ঘরে চলে গেল। আমি ভেতরে আমার ঘরে গিয়ে ভাবছি এখন করবো কি আমি। ঘড়িতে দেখি ৮:৩০ । না আর দেরি করা যাবে না। রান্না করতে হবে। কিন্তু রাঁধবো টা কি? আমি তো রান্না করতে জানি না। যদিও সব কাজ করতাম কিন্তু রাঁধতে হয়নি কোন কালেই। কিন্তু এখন উপায় ই বা কি আছে। উপায় না পেয়ে গুঢ়ীয়াকেই জিজ্ঞেস করা শ্রেয় মনে করলাম। ভয়ে ভয়ে গেলাম। ঐ ছোট্ট তেই যা একটু কথা হয়েছিল, পরে বাড়িতে আসলেও অল্প কখনো দেখা হলেও কথা কোনদিনো হয়নি। দরজায় নক করতেই রুঢ় গলায় জিজ্ঞেস করলো কি চাই?
ইন্দ্র: দিদিমণি আপনি কি জানেন সবাই দিল্লি চলে গেছে। গু(Short Name): হ্যাঁ জানি। গুয়াহাটি স্টেশন মাস্টার কে বলে গেছেন আমাকে জানাতে।
ইন্দ্র: দিদিমণি আমি রাতের খাবার বানাচ্ছি কিন্তু ভালো রাঁধতে জানি না।
গু: ঠিক আছে।
বুঝলাম না কি বোঝাতে চাইলো। কি না বুঝে রান্না ঘরে গেলাম। প্রায় ২ ঘন্টা পর আমি ভাত আর ডাল সেদ্ধ করলাম। বেশ যুদ্ধ জয় করেছি এমন একটা অনুভুতি হচ্ছিল। কিন্তু Taste করতে সাহস পাচ্ছিলাম না। ভাবলাম ডাকি। এত দুরে থেকে এল, অন্তত একটা কিছু খেয়ে ঘুমোক। ডাকতে গেলাম। বেশ কয়েক বার ডাকলাম কিন্তু কোনো সাড়া নেই। বাধ্য হয়ে ভেতরে গেলাম। গিয়ে দেখি ঘুমিয়ে পড়েছে। আরো ২ বাড় ডাকতেই কি হলো কি হলো বলে ধড়ফড়িয়ে উঠল। বললাম রান্না হয়েছে অল্প কিছু খেয়ে ঘুমাতে। আসছি বলে আমাকে খাবার রেডি করতে বললো। ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে আছি। গুঢ়ীয়া খেতে যাচ্ছিল আমাকে ওভাবে দেখে বললো
গু: আমাকে ওভাবে না দেখে তুমি ও বসে যাও।
ই: না দিদিমণি আপনি খান তারপর আমি খাবো।
গু: আমাকে দিয়ে Taste করিয়ে যদি রান্না ভালো হয় তারপর তুমি খাবে? আর আমাকে আপনি না বলে নাম ধরেই ডাকবে আমি তোমার থেকে অনেক ছোট। ( আমি লজ্জা পেলাম। কি করে বুঝলো আমি রাঁধতে জানি না। জিজ্ঞেস করতে বললো)
গু: তোমার এই ডাল ভাত যখন ২ ঘন্টা লাগলো আর তোমার মুখ দেখেই বুঝেছি যে তুমি রাঁধতে জানোই না।
(কথা না বাড়িয়ে ভাত নিয়ে বসে পড়লাম। মুখে দিতেই বুঝলাম এ অখাদ্য আমার পেটে যাবে না। গুঢ়ীয়ার দিকে তাকাতেই দেখলাম ও বেশ মন দিয়ে খাচ্ছে। আমি হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম। ওভাবে আমাকে দেখে বললো)
গু: হোস্টেলে এর থেকেও বাজে খাবার খেতে হয় আমাদের। বললো খাবারের জন্য ভালো খাবারের থেকে বেশী দরকার খাওয়ার ইচ্ছে আর খিদে। এদুটো থাকলে সব খাবার খাওয়া যায়। (অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছি সেদিনের ঐ টুকু মেয়ে এত বড়ো হয়েছে। এ তো আমার থেকেও বড়ো হয়ে গেছে। মনে মনে তারিফ না করে পারলাম না।)
– ঘুমোতে যাওয়ার আগে গুঢ়ীয়া বললো কাল একবার Police Station এ যেতে হবে, আজকের ট্রেন ঈ শেষ। কাল থেকে আর ট্রেন চলবে না। বুঝলাম ভালো দিন এখুনি আর আসছে না। (পরেরদিন সকাল ১০ টায় Police Station এ গেলাম। Inspector যা বললেন তাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গুয়াহাটি ছাড়তে বললেন। গুঢ়ীয়া বিড় বিড় করতে করতে রাস্তা দিয়ে আসতে লাগলো। হঠাৎ দাঁড়িয়ে আমার দিকে চোখ বড়বড় করে চিৎকার করে বললো যাইহোক না কেন আমি কোথাও যাবো না। আমি গুঢ়ীয়াকে আশ্বস্ত করলাম কিছু হবে না। কিন্তু বাড়ির সামনে আসতেই দেখি গেটে একটা জটলা। অনেক ছেলে দাড়িয়ে আছে। যেনো আমাদের ঈ অপেক্ষা করছিল।আসতেই একজন Leader type ছেলে আমাকে ধমকি দিয়ে বললো আজকেই যেন গুয়াহাটি ছাড়ি। গুঢ়ীয়া কিছু বলতে যাচ্ছিল আমি ওকে জোর করে বাড়িতে নিয়ে গেলাম। গুঢ়ীয়া কাঁদতে শুরু করলো। আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। সাহস করে বললাম
– দিদিমণি যদি খারাপ না পাও একটা কথা বলতাম। গুঢ়ীয়া আমার দিকে তাকিয়ে রইল। কিছু বললো না।
– বললাম যদি খারাপ না পান তবে আমরা আমাদের গ্রামের বাড়ীতে মানে গোয়ালপাড়াতে যেতে পারি। ওদিকে অসম আন্দোলন ওতটা মারাত্মক না। গুঢ়ীয়া কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপর বললো
গু: কিন্তু এত দুরে যাবো কেমন করে।
– ঠিক করলাম গুঢ়ীয়ার বাবার স্কুটার নিয়ে যাব। প্রায় ১৫০ কি মিঃ। ৪ ঘন্টার পথ। এতটা কষ্টেও দেখলাম গুঢ়ীয়ার একটু ভালো লাগছে। বললো
গু: ঠিক আছে আমরা এখুনি বেরিয়ে পড়বো।
– সব ঠিক করে যখন বেরিয়ে পড়বো দেখি ২ টো বাজে। বুঝলাম পৌঁছতে রাত হয়ে যাবে। হোক রাত তবু তো ভালো থাকবো।
গেট বন্ধ করতেই আমার মনে হল এত দুরে যাবো এই আন্দোলনের মাঝে যদি কোন বিপদ হয়। গুঢ়ীয়া কে বলতেই ও আমাকে Police Station এ যেতে বললো। আমার Police Station এ গিয়ে Inspector কে সব বললাম। উনি আমাদের একটা Pass দিয়ে বললেন যে Police এর থেকে কোন অসুবিধা হবে না। আমি আন্দোলনকারীদের কথা বলতেই কাজ আছে বলে অন্য দিকে চলে গেল। বুঝলাম আমরা যতটা ভেবেছি অতটা সহজ নয় এইসময় গুয়াহাটি ছেড়ে যাওয়া। গুঢ়ীয়াকে কিছু আর বললাম না। আমরা বেরিয়ে পড়লাম। আমি মনে মনে ঠাকুরের নাম জপ করতে শুরু করলাম।
Finally যখন আমারা বেরিয়ে পড়লাম তখন ৩ টে বেজে গেছে। আজ এই বিপদে Bajaj Chetak Scooter আমাদের ভরসা। ব্যস্ত শহরটি একদম শান্ত হয়ে গেছে। এ কি অবস্থা হয়েছে গুয়াহাটির। আমার চেনা শহর কেমন যেন অচেনা লাগছে। চারিদিকে টায়ার জ্বালানো, কালো ধোঁয়া, লাল কালো কালিতে দেয়ালে বিদেশীদের বিরুদ্ধে আগুন ঝড়াচ্ছে লেখা গুলি। যদিও গুয়াহাটিতে এরকম প্রথম বার তবু আমাকে মনে হচ্ছে আমি এই দিন গুলো পেরিয়ে এসেছি। আমার আবার সেই রাতে কথা মনে পড়ছে। ভাবছি আমি ঐ দিন যদি এতটা বড় থাকতাম তবে বাবাকে হারাতাম না। বাবাকে জোর করে হলেও এপারে নিয়ে আসতাম। হঠাৎ কাঁধে হাতের ছোঁয়া, ইন্দ্র। গুঢ়ীয়া ডাকছে। কি জিজ্ঞেস করাতে দাঁড়াতে বললো। পেছনে একটা Police এর Geep। দাঁড়াতেই এক Constable রুঢ় গলায় জিজ্ঞেস করল কোথায় যাওয়া হচ্ছে। আমি ওনাকে Pass টা দেখাতেই বললো বেশি দেরি না করে তাড়াতাড়ি গোয়ালপাড়া পৌঁছতে। গুঢ়ীয়া আমাকে একটু জোরে চালাতে বলে পেছনে বসে পড়লো।
২ ঘন্টা পর দাঁড়িয়ে পড়লাম। জায়গাটা বেশ ভালো লাগলো। আগে বাস এ এসেছি এ পথে, জায়গা টা দেখলেও কোনদিনো দাঁড়ানোর সুযোগ বা প্রয়োজন কোনটাই হয়নি। আজ হলো। যতদূর চোখ যায় শুধু চা বাগান, সবুজ। এত দুরের জার্নির পর এখানে দাঁড়িয়ে বেশ ভালই লাগছে। সুন্দর বাতাস বইছে। গুঢ়ীয়ার ডাকে সাড়া পেলাম। ও একটা জলের বোতল এগিয়ে দিয়ে বললো একটু জল খেতে। জলের বোতল টা এগিয়ে দিয়েই গুঢ়ীয়া বাগানের কাছে চলে গেল। তাকিয়ে রইল চা পাতা গুলোর দিকে। আমি বেশ খানিকটা জল খেলাম। সত্যি অনেক টাই তেষ্টা পেয়েছিল। ভাবলাম এ মেয়ে টা বেশ ভালই খেয়াল রাখতে পারে অন্যদের। বড়লোকের বেটি হলেও সেই অহং ভাবটা একদম নেই। এসব ভাবছি হঠাৎ দেখি আকাশ টা খারাপ হচ্ছে। এই সেপ্টেম্বরের আকাশ কখন কি হয় বলা মুশকিল। নাহ আর দেরি করা যাবে না। আমি গুঢ়ীয়াকে ডাকলাম।
– দিদিমণি চলেন যাই অনেকটাই না দেরি হয়ে যায়। গুঢ়ীয়া ঘুড়তেই দেখি ওর চোখে জল। চোখ দুটো দেখে বেশ মায়াই লাগলো। আহারে মেয়ে, এত আদরের মেয়ে আজ এই অবস্থা। আমার নিজেরও খারাপ লাগলো গুঢ়ীয়াকে এভাবে দেখে।
– দিদিমণি কাঁদবেন না সব ঠিক হয়ে যাবে। গুঢ়ীয়া শুধু হু বলে মাথা নাড়িয়ে স্কুটার এ বসলো।
আমি বেশ জোরেই স্কুটার টা চালাচ্ছি। রাস্তা টাও ওতো ভালো না। বেশ Jerking হচ্ছে। গুঢ়ীয়া আর ওভাবে বসে থাকতে না পেরে আমার কোমরটা শক্ত করে ধরলো। ( আমি এখানে একটা কান্ড করে বসলাম। আমার কাতুকুতু টা একটু বেশি। তাতে কেঁউ আমাকে কোনদিন ওভাবে কোমরে ধরেনি।) আমি খুব জোড়ে ব্রেক করে কোনরকমে স্কুটার টা দাঁড় করিয়ে ওর হাত টা কোমর থেকে সরিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। গুঢ়ীয়া আমাকে অবাক চোখে তাকাচ্ছে। বুঝলাম ওর অপমানিত বোধ হচ্ছে। গুঢ়ীয়া কিছু বলতে যাচ্ছিল আমিই বললাম-
– দিদিমণি আমার না কাতুকুতু টা একটু বেশি। আর কেউ আমাকে আসলে ওভাবে ধরেনি কোনো দিন তাই আমি বোঝার আগেই আমার বডি ওভাবে রিয়্যাক্ট করেছে। আমি আমতা আমতা করে বললাম।
– গুঢ়ীয়া হো হো করে হেঁসে উঠল। বাহ্ মেয়েটা হাসলে দেখি ওর হাসিতে মুক্ত ঝরে। কি সুন্দর হাসি তো মেয়েটার। আর যেটা সব থেকে বেশী ভালো লাগলো তা হলো অনেকক্ষন পর গুঢ়ীয়া হাসলো। আসার পর থেকে তো আমি ওর রাগ, কান্না ভরা মুখটি দেখেছি, হাসতে দেখে আমার খুব ভালো লাগলো। বলেই ফেললাম
– দিদিমণি আপনি হাসলে আপনাকে খুব সুন্দর লাগে। আপনি আর দুঃখ করবেন না। সব ঠিক হবে। দেখলাম গুঢ়ীয়া লজ্জা পেয়ে গেছে। লজ্জায় ওর গাল দুটো লাল হয়ে উঠেছে।
গু: তোমাকে না আমি বলেছি আমাকে আপনি না বলে আমার নাম ধরেই ডাকবে।
ই: কিন্তু দিদিমণি আমি কিভাবে আপনাকে
শেষ করার আগেই গুঢ়ীয়া আমাকে থামিয়ে বললো
গু: আমার নাম ধরে না ডাকলে আমি আর এখান থেকে এক পাও এগোচ্ছি না।
উপায় না দেখে আমি মাথা নাড়লাম। আমি স্কুটার স্টার্ট করলাম। গুঢ়ীয়া পেছনে বসে পড়লো। রাস্তা ভালো নয়। বুঝছি গুঢ়ীয়ার ওভাবে বসতে কষ্ট হচ্ছে। বেচারি আমাকে আর ধরতেও পাচ্ছে না। যা কান্ড টাই না করেছিলাম। বাধ্য হয়ে আমিই বললাম-
ই: দিদিমণি আমার কোমরটা শক্ত করে ধরুন আপনার কষ্ট হচ্ছে।
গু: হ্যাঁ ধরবো কিন্তু আমাকে আমার নাম ধরে বলো তাহলে ধরবো।
উপায় নেই দেখে আমি তাই বললাম। এবার গুঢ়ীয়া বেশ শক্ত করে ধরে বসলো। একটু কাতুকুতু লাগছিল ঠিকই কিন্তু এবার আর আগের মতো কোনো অসুবিধা হলো না।
বিকেল ৬ টা। আকাশ টা বেশ কালো হয়ে এসেছে। এই সময় অন্ধকার হবার কথা নয়। কিন্তু আকাশ টা বেশ কালো হয়ে গেছে। আমি গাড়ির হেডলাইট অন করলাম। গোয়ালপাড়ার প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছি। আর খুব বেশি ৪০ কিঃমিঃ বাকি। কিন্তু হঠাৎ হুরমুরিয়ে বৃষ্টি নেমে এলো। একটা গাছের তলায় দাঁড়ালাম। কিন্তু গাছ কি আর বৃষ্টির জল আটকাতে পারে। টুপ টুপ করে বৃষ্টি পড়ছে গায়ে। বুঝলাম এভাবে আর বেশিক্ষণ অপেক্ষা করা ঠিক হবে না। কখন বৃষ্টি থামবে তার কোন লক্ষন নেই। গুঢ়ীয়াকে বলতে ও বললো আমি যদি স্কুটার চালাতে পারি ও যেতে পারবে। অগত্যা বৃষ্টি মাথায় রওনা দিলাম। অন্ধকার, বৃষ্টি আর বাতাস। আমার একটু শীত শীত করছে। কিন্তু এখন আর দাঁড়ানোর উপায় ও নেই । বুঝতে পারছিলাম গুঢ়ীয়ার ও ঠান্ডা লাগছে। ও আমাকে আরও বেশি করে জড়িয়ে ধরেছে। ওর মাথাটা আমার পেছনে কাঁধের ওখানে। হঠাৎ আমার শরীরে যেন কারেন্ট বয়ে গেল। পিঠে কিছু নরম জিনিসের ছোঁয়া পেলাম। বুঝতে পারছিলাম এ জিনিষ কি। আমি যেন এই ঠান্ডায় ও ঘামতে শুরু করেছি। আর এমনটি হবে নাই বা কেন। এই ২৩ বছরে মা ছাড়া কোন মহিলার স্পর্শ পাইনি। গুঢ়ীয়া প্রথম মেয়ে যে আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে আছে। মনে হাজার টা কথা যেন ঝড় তুলতে লাগলো। ছিঃ আমি কি ভাবছি। একটা বাচ্চা মেয়ে আমার বোনের বয়সের বিপদে আমাকে ভরসা করে যাচ্ছে আমার সাথে আর আমি কি না। আমার নিজের উপরই ধিক্কার দিতে মন চাইলো। ঠিক করলাম যাইহোক না কেন আমি আর এমন টা কখনো ভাববো না।
রাত ৮ টায় আমি বাড়ি পেলাম। বাড়ি বলতে ঐ টিনের চাল দাওয়া দুটো ঘর। ভাই টা চাকরি পাওয়ায় নতুন ঘরের কাজ শুরু করছিল কিন্তু এই পরিস্থিতিতে আর ঘর বানানো হল না। টিনের গেট টা খুলে ভেতরে ঢুকলাম। ঘরের চাবি লুকানোই থাকে বাড়িতে যেনো আমরা অসময়ে বাড়িতে এলে বাইরে বসে থাকতে না হয়। ঘর খুলে গুঢ়ীয়াকে বসার একটা মোড়া দিয়ে টর্চ জ্বেলে হ্যারিকেন জ্বালালাম। (তখন কারেন্ট শুধু শহরেই ছিল) । হ্যারিকেনের আলোয় দেখি গুঢ়ীয়া ঠান্ডায় কাঁপছে। তাড়াতাড়ি বোনের কিছু ড্রেস দিয়ে বললাম চেঞ্জ করে নিতে। (বৃষ্টিতে যেটুকু কাপড় সাথে নিয়ে এসেছিলাম সব ভিজে গেছে।) আমিও পোশাক বদলে নিলাম।
এসে দেখি গুড়ীয়া মায়ের বিছানায় শুয়ে পড়েছে কাঁথা গায়ে দিয়ে। পাশে গিয়ে দেখি সর্বনাশ। যা ভেবেছি তাই। জ্বরে গুঢ়ীয়া কাঁপছে। মাথায় হাত দিয়ে দেখি প্রচন্ড গরমে যেনো মাথা পুড়ে যাচ্ছে। কি যেন বিড় বিড় করে বলে চলেছে গুঢ়ীয়া বোঝা যাচ্ছে না। দৌড়ে ওঘর থেকে আরো কাঁথা নিয়ে এসে ওর গায়ে দিলাম। আমারো যে শরীর টা খুব ভালো তাও নয়। বৃষ্টিতে ভিজে আমারো শীত শীত করছে। কিন্তু বুঝলাম আমি জ্বরে পড়লে সর্বনাশ হয়ে যাবে। এই রাতে আর এই সময় ডাক্তার পাওয়া দুঃসাধ্য। রান্না ঘরে গিয়ে এক বালতি জল আর কাপড় নিয়ে এসে ওর মাথায় পট্টি দিতে লাগলাম। একটাই আশা যদি জ্বর টা একটু কমে। খিদে পেলে ও আজ আর খাওয়া হবে না বুঝতে পারলাম।
রাত তখন ৩ টে। ওর জ্বর টা একটু নেমে এসেছে। সারাদিনের জার্নিতে আমার প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছিল। আবার ওকে এভাবে রেখে যেতেও পারছিলাম না। কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম টের ই পাইনি। ঘুম ভাঙ্গলো গুঢ়ীয়ার ডাকে। হরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি মায়ের বিছানায়। কাথা গুলো আমার শরীরে এলো কি করে। অবাক হয়ে ভাবছি গুঢ়ীয়া বললো যাও ফ্রেশ হয়ে আসো নাস্তা বানিয়েছি। বলেই চলে গেল। আমি তো অবাক। গুঢ়ীয়া আমার জন্য খাবার বানিয়েছে, আমি মা মানে গুঢ়ীয়ার বিছানায় ঘুমিয়ে। ধুর কিছুই মাথায় আসছে না বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।
ঘড়িতে দেখি ১১ বাজে। এত বেলায় ঘুম থেকে আমি উঠি না। কিন্তু কাল রাতে অনেক দেরিতে ঘুমোনো আর সারাদিনের পরিশ্রমের জন্য দেরি হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরে যেতেই অবাক হলাম। গুঢ়ীয়া ভাত, ডাল শাক আর ছোট মাছের ভাজি করেছে। ভাত বেড়ে আমাকে খেতে বললো। অনেক প্রশ্ন আমার চোখে। জিজ্ঞেস করবো গুঢ়ীয়া বললো আগে খেয়ে নাও পরে সব বলছি। আমি বুঝতে পারি না ও কিভাবে আমার মনের কথা বুঝতে পারে। আমি খেতে বসলাম। বললাম তুমিও খেয়ে নাও।
খাওয়া শেষ হলে গুঢ়ীয়া বলতে শুরু করল। ও সকালে উঠে দেখে আমি ওর পাশে শুয়ে আছি। ও বুঝতে পেরেছে যে আমি কাল রাতে ওর পাশেই ওর জ্বরের জন্য ছিলাম। আমি ঠান্ডায় ভাজ হয়ে শুয়ে আছি দেখে ও আমার গায়ে কাঁথা দিয়ে ঢেকে দেয়। সকালে গুঢ়ীয়া যখন বাইরের উঠোনে যায়, আমাদের পাশের বাড়ির জেঠি ওকে দেখতে পেয়ে ওর কাছে আসেন। গুঢ়ীয়া ওনাকে সব খুলে বললে উনি গুঢ়ীয়াকে আশ্বস্ত করে বলেন যে এখানে কোনো ভয় নেই। ওনারা থাকতে আমাদের কিছু হবে না। (এখানে একটা কথা বলা দরকার। ওনারা এদেশের ঈ লোক। রাজবংশী মানুষ। খুবি ভালো। মা বোনদের ও বলেছেন এখানেই থাকতে। কিন্তু আমিই রাজি ছিলাম না। ) তারপর উনি গুঢ়ীয়াকে ডাল, শাক আর মাছ দিয়ে পাঠান। কিন্তু সব বুঝলাম শুধু রান্না করলে কি ভাবে। আমার কথায় গুঢ়ীয়া হেসে বললো-
গু: মেয়ে হয়ে জন্মেছি আর রান্না জানবো না
ই: তাই বলে এত কিছু করতে শিখে গেছ ?
গু: হ্যাঁ আমি হস্টেলে থাকাতে আমরা সবাই মাঝে মাঝে রান্না করতাম। আমার একজন ভালো বন্ধু আছে। ওর বাড়িও গ্রামে। ওদের বাড়িতে গেলে আমি Aunty র সাথে রান্না ঘরেই কাটাতাম। ওখানেই আমার রান্নার হাতে খড়ি বলতে পারো।
– হঠাৎ গুঢ়ীয়া আমাকে ধন্যবাদ জানাল। বললো তুমি না থাকলে আমার যে কি হত।
ই: না দিদিমণি ধন্যবাদ বলো না। এটা আমার দায়িত্ব।
গু: (রেগে) আবার আমাকে দিদিমণি বলছো কেনো?
ই: ঠিক আছে আর বলবো না।
গু: ইন্দ্র আমি জানি তুমি কাল সারারাত জেগে আমাকে কিভাবে ঠিক করেছো আর সে জন্য তোমার ধন্যবাদ প্রাপ্য।
আমি এবার একটু লজ্জাই পেলাম। কিছু বললাম না।
গু: এবার বলো আমরা কি করবো। কবে আবার সব ঠিক হবে তা জানা নেই। আর সব আগের মত না হলে আমি বাড়িতেই বা যাব কি করে?
ই: হ্যাঁ কি করা যায় ভাবতে হবে। আচ্ছা গুঢ়ীয়া আমরা কি এই স্কুটার করে শিলিগুড়ি পর্যন্ত যেতে পারি। ওখানে গেলেই তো সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি ওখান থেকে খুব সহজেই দিল্লি যেতে পারবে।
গু: হ্যাঁ ঠিক কিন্তু আমি আর এটাতে উঠছি না। বাবা এত দুরে আর এভাবে যেতে পারবোনা। তার থেকে এখানেই ঠিক আছি।
এভাবেই কিছু দিন গেল। আমি বাজার করি আর ও রান্না করে। আমারা গ্রামের ভেতরেই এদিক ওদিক ঘুরছি কারণ গ্রামের সবাই আমাদের আশ্বস্ত করে গেছেন। তাই ওতো ভয় আর নেই। সেদিন পাশের বাড়ির জেঠি এসে বললো ব্রহ্মপুত্র নদে নাকি মাছের উজান এসেছে। সবাই মাছ ধরতে গেছে। তাই আমিও যদি যেতে পারি তাহলে ওনাদের বাড়ি থেকে জাল নিয়ে আমাকে যেতে বললো। গুঢ়ীয়া শুনে জেদ ধরে বসলো। ও মাছ ধরতে যাবে। আমি অনেক বোঝালাম, কিন্তু ও শুনলো না। শেষে জিজ্ঞেস করলাম সাঁতার জানে কি না? হ্যাঁ বলে আমার সাথে বেড়িয়ে পরলো। ( ও মিথ্যা বলেছিল যে ও সাঁতার জানে)।
গিয়ে দেখি অনেক লোক মাছ ধরছে। আমি জাল টা ফেলেছি মাএ ও চিৎকার করে উঠল। ই-ন-দ্র । ঘুরতেই দেখি ও পা পিছলে হুরমুরিয়ে নদে পড়ে গেল। (ব্রহ্মপুত্র নদ অনেক বড় ও খুবি বিপদজনক) । আমি কি করবো বুঝতে না পেরে সাথে সাথেই নদে ঝাঁপ দিলাম। ওদিকে আমাদের হৈচৈ শুনে সবাই দৌড়ে এলো। আমি কোনমতে ওকে ধরতে পেরেছি কিন্তু এর মাঝেই ও খানিকটা জল খেয়েছিল। কিন্তু আমি ওকে ধরে আর কিনারে ফিরতে পারছিলাম না। চোরা স্রোত আমাকে আর ওকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। ভাগ্য ভালো যে ওখানে অনেক লোক ছিল। পরে দুজন মাঝী সাথে সাথেই নৌকা নিয়ে আমাকে ওঠায়।
ওদিকে গুঢ়ীয়া জল খেয়ে আর ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। ডাঙায় উঠিয়ে আমি আস্তে আস্তে পেটে চাপ দিতে লাগলাম। মুখ দিয়ে অল্প অল্প জল বেরিয়ে এল কিন্তু ওর জ্ঞান ফিরেছ না। অনেকই অনেক উপদেশ দিতে লাগলো। শেষে আমি ওর মুখে হাওয়া দিতে গেলাম। এখানেই বোধহয় আমার জীবন টা বদলে গেল। আমি ওর মুখে মুখটা লাগিয়েছিলাম, ও তখুনি চোখ দুটো খুললো। আমার ঠোট দুটো তখন ওর ঠোঁট ছুঁয়ে। ধরফর করে উঠে বসলাম। আর ওদিকে Public কে কে পায়। এমন ভাবে ওরা জয়ল্লাশ প্রকাশ করলো যেন আমি অলিম্পিক থেকে সোনা জিতে ফিরছি। আমি ভয়ার্ত চোখে গুঢ়ীয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। ও চোখ দিয়ে ইশারা করে বললো ভয় পেয় না সব ঠিক আছে। এরপর ওনারা সবাই আমাকে এক ঝুড়ি মাছ জোর করে ধরিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিল।
সেদিন আমরা অনেক রাত পর্যন্ত গল্প করলাম। গুঢ়ীয়া আমার কাছে জানতে চাইলো আমি কি ভাবে ওদের বাড়িতে কাজ পেলাম। আমি কেন আমার ভাই বোনেদের মত পরাশুনা করলাম না? (আমি গুঢ়ীয়াকে প্রথম দিনেই বলেছি আমার ফ্যামিলি কোথায় আর কেন) গুঢ়ীয়ার প্রশ্নে আমি যেন অতীতে ফিরে গেছি। গুঢ়ীয়া কি হলো বলো বলতেই আমি সব বললাম। আমার জন্ম, আমার বাড়ি, কিভাবে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা, এখানকার জীবন যুদ্ধ, ওদের বাড়িতে কাজ। মাথা টা নীচু করেই বলছিলাম। ওর দিকে তাকাতেই দেখি ওর চোখে জল। আমি তাকিয়েই রইলাম। এই মেয়ে টা কে যত দেখছি ততই অবাক হচ্ছি। কত সহজেই অন্যকে আপন করে নেয়। ও হঠাৎ আমার কাছে এসে বসলো। আমার হাত টা ধরে বললো, তোমার দুঃখের দিন শেষ। আমি জানি আর তোমাকে কষ্ট পেতে হবে না। আমি হ্যাবলা রাম হয়ে ওর দিকে তাকিয়েই রইলাম। হাত টা ছেড়ে ও ওর মানে মায়ের ঘরে গেল। হঠাৎ দেখি ও আবার আমার ঘরে এল। এসে অন্য দিকের বিছানাটা ঠিক করতে করতে বললো, আমি আজ থেকে এই ঘরেই থাকবো। (আমাদের ২ টো ঘর। তাই প্রত্যেক ঘরে ২ টো করে বিছানা) আমি অবাক হয়ে বললাম,
– না না গুঢ়ীয়া এটা কি বলছো তুমি। লোক জানলে কি বলবে? গু: কেউ তো আসে না এ বাড়িতে। আর লোক কে কেই বা জানাতে যাবে। আর ওঘরে আমার একা থাকতে ভয় লাগে। আর মশাই আমি অন্য বিছানায় ঘুমোবো, তোমার বিছানায় তোমার সাথে নয়। বুঝলে।
– আমি এবার লজ্জা পেলাম। এটাও জানি এই মেয়ের জেদ বেশি। বলেছে যখন ও থাকবেই।
এভাবেই চলছিল। এখন রোজ রাতে আমরা অনেক রাত পর্যন্ত গল্প করি। ওর কথাও বললো। মেট্রিক পাশ করে কলেজে পড়ছে এখন। কলেজে পড়ার সময় থেকে হস্টেলে থাকে। আরও অনেক কথা। ওর বন্ধুদের কথা, ওদের বয়ফ্রেন্ডদের কথা। আমি বয়ফ্রেন্ড কি জিজ্ঞেস করতেই হো হো করে হেসে উঠলো। তারপর বুঝিয়ে বললো বয়ফ্রেন্ড কি। আমি ভাবলাম বাহ এ তো ভালই। কিন্তু তার পরেই বোকার মতো জিজ্ঞেস করলাম বিয়ের আগেই এসব করলে পাপ হবে না। আর ওকে কে পায়। হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে পড়লো। ও হাসলে আমারো খুব ভালো লাগে। খুব সুন্দর লাগে ওকে হাসলে। হাসি থামতেই আমি জিজ্ঞেস করলাম
– তা তোমার বয়ফ্রেন্ড টা কে??
গু: তুমি
ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা আমার। লজ্জায় লাল হয়ে গেছি। আমাকে এরকম দেখে বললো
গু: ভয় পেয়োনা। মজা করলাম। আর আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই।
ই: কেনো?
গু: ওরকম কাউকে পাইনি তাই। আমি মনে মনে ভাবলাম গুঢ়ীয়া তোমায় যে পাবে সে হবে এই দুনিয়ার সবচাইতে ভাগ্যবান পুরুষ।
– গুঢ়ীয়া আমাকে ওভাবে দেখে বললো
গু: তুমি বিয়ে করোনি কেন এখনো? আমি ওকে বললাম আমার বোনেদের কথা। ওদের কিছু হলেই আমি এটা ভাববো।
গু: আমাকে বিয়ে করবে ? আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। বললাম এটা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। কোথায় তুমি আর কোথায় আমি। তোমার জন্য রাজপুত্র আসবে গুঢ়ীয়া। আমার মতো ভিখারী তোমার মতো চাঁদকে দেখাও যে অন্যায়। এবার গুঢ়ীয়া রাগ করে বললো গু: আর বলতে হবে না। দেখা যাক কি হয়। এবার ঘুমিয়ে পরো।
– আমারা শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ঐ রাতে আমার আর ঘুম আসলো না। সারারাত এটা ওটা মাথায় আসতে লাগলো। ওর প্রথম ছোঁয়া, ওর পাশে ঘুমোনো, ওর ঠোঁটে আমার ঠোঁট। না আর ঘুমোতে পারলাম না। এটাও বুঝলাম যে ওর সাথে আমি আর যাইহোক এটা অন্তত সম্ভব নয়। পরেরদিন সকালে উঠেই ঠিক করলাম দিল্লিতে যে করেই হোক খবর দিতেই হবে। আজ ১০ দিন হলো আমরা এখানে। আর না। গুঢ়ীয়ার মতি ঠিক লাগছে না। আমি কোনভাবেই আমার মালিকের সাথে এরকম করতে পারি না। আর এটাও ঠিক করলাম যে গুঢ়ীয়াকে জানাবো না। নাহলে ও আমাকে হয়তো শহরে যেতে দেবেই না।
– দুপুরে খাওয়ার একটু পরেই রেডি হয়ে স্কুটার টা স্টার্ট করবো পেছনে গুঢ়ীয়া ডাকলো-
গু: ইন্দ্র ।
ই: হ্যাঁ বলো।
গু: কোথায় যাচ্ছ এখন?
ই: একটু শহরে যাবো।
গু: আমিও যাবো।
– হয়ে গেল সব কাজ আমার। মাথাটা ঝাকিয়ে একটু জোরেই বললাম যাও রেডি হয়ে আসো। কিন্তু ও গেল না। আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। বুঝলাম ওভাবে বলাটা ঠিক হয়নি। উপায় না পেয়ে একটু নরম করেই বললাম, যাও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসো।
– মাথা তুলে দেখি ও আসছে। আমি চোখ দুটো বড় বড় করে ওকে অবাক হয়ে দেখছি। গুঢ়ীয়া মায়ের একটা শাড়ি পড়েছে। ওকে শাড়ি পড়লে এও সুন্দর লাগে প্রকাশ করতে পাচ্ছি না। আমি মুগ্ধ হয়ে ওকে দেখে যাচ্ছি। ও কাছে এসে বলল গু: ওভাবে কি দেখছো আমাকে?
– তাইতো। লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি স্কুটার টা স্টার্ট করতে শুরু করলাম। কিন্তু শালা স্কুটার টা আজকেই স্টার্ট হচ্ছে না। গুঢ়ীয়া চাবি টা অন করে দিয়ে বললো ওটা অন ছিল না। আরো বেশি লজ্জা পেলাম। তাইতো ঘোরের মাঝে চাবি অন না করেই কিক মেরে যাচ্ছিলাম। এরপর ও পেছনে উঠে আমার কোমরটা ধরে বসলো।
– সারা রাস্তাটা হাজার টা কথা মাথায় আসতে লাগলো। একবার ভাবলাম দিল্লিতে খবর দেব না। কেমন জানি নিজেকে একটু স্বার্থপর হতে মন চাইলো। কিন্তু পরক্ষনেই ভাবলাম সারাজীবন বিরহ দেখলাম আর আজ আমার একটু সুখের জন্য অন্য আর একটা পরিবারকে কষ্ট দেব তাও কিনা সেই মানুষ যিনি আমাকে আমার দুঃসময়ে কাজ দিয়েছিলেন। নাহ, ঠিক করলাম যেমন করেই হোক, দিল্লিতে খবর টা দিতেই হবে।
_ শহরে পৌঁছতেই দেখি গুয়াহাটির মতো না হলেও অসম আন্দোলনের অল্প প্রভাব এই শহরেও পড়েছে। দোকান খোলা থাকলেও লোকের উপস্থিতি তেমন নেই। গুঢ়ীয়া বললো ও কিছু জিনিষ কিনতে চায়। আমি ওকে একটা স্টেশনারি দোকানে রেখে PCO Booth এর দিকে গেলাম। কিন্তু কপাল খারাপ লাইন ডেথ হয়ে আছে আজ ৭ দিন হলো। বুঝলাম ফোন করা হবে না। শেষে পোস্ট অফিস এ যাওয়াই ঠিক করলাম। পাশেই ছিল পোস্ট অফিস। গিয়ে শুনি ওখানকার ও সার্ভিস বন্ধ। যদি কিছু বার্তা থাকে জমা দিয়ে যেতে বললো, যখন আবার সার্ভিস চালু হবে ওরা আমার বার্তা নির্দিষ্ট ঠিকানায় পাঠিয়ে দেবেন। উপায় না পেয়ে তাই করলাম।
_ এসে দেখি গুঢ়ীয়া দাঁড়িয়ে আছে। ওর জিনিষ কেনা হয়ে গেছে। আমাকে দেখে বেশ রাগ করে বললো-
গু: কোথায় যাওয়া হয়েছিল যে এও দেরি হল? হ্যাঁ একটু বেশিই দেরি হয়ে গেছে। আসলে এদিক ওদিক করতেই কখন সময় টা পেরিয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি। বাধ্য হয়ে মিথ্যে বললাম। ই: ঐ এক বন্ধুর সাথে দেখা হল অনেক দিন পর। তাই এত দেরি হল। রাগ করো না।
_ ঠিক আছে বলে গুঢ়ীয়া আমাকে ওর পেছনে যেতে বললো। আমি স্কুটার টা ওখানেই দাঁড় করিয়ে ওর পেছন পেছন যেতে লাগলাম। ভাবছি মেয়ে টা নিয়ে যাচ্ছে কোথায়। এই নতুন শহরে ও কোথায় যাবে আর জানলোই বা কি করে। জিজ্ঞেস করবো ভাবছি দেখি গুঢ়ীয়া দাঁড়িয়ে পরলো। আমাকে একটা দোকান দেখিয়ে বললো চলো । দেখি ফটো স্টুডিও। আমি অবাক হয়ে গেলাম। ও কি করে জানলো এখানে একটা স্টুডিও আছে। আর ওর ফোটো উঠতেই বা হঠাৎ মন গেল কেন। জিজ্ঞেস করতেই গুঢ়ীয়া বললো আগে ফটো উঠি, পরে সব বলছি।
_ আমারা ফটো উঠলাম। জয়েন্ট ফটো। গুঢ়ীয়া কিছুতেই একা উঠবে না। আমাকে সাথে নিয়েই উঠবে। বাধ্য হয়ে আমি আর না করলাম না। ও আমার পাশে আমার হাত দুটো ধরে দাঁড়িয়ে পরলো। ও ওভাবে ধরে দাঁড়াতে আমার কেমন যেন লাগছিল যদিও বেশ ভালোও লাগছিল। ফটো ওঠা হয়ে গেলে দোকানদার আমাকে ৭ দিন পরে এসে ফটো নিয়ে যেতে বললো। এর পর কিছু বাজার মানে ঘরের খরচ করে আসতে লাগলাম। গুঢ়ীয়া পেছনে বসে আছে। আমি জিজ্ঞেস করতেই বললো-
গু: তুমি আসছো না দেখে আমি ঐ দোকান কাকুকে জিজ্ঞেস করাতে উনি ই দেখিয়ে দেন।
ই: তা হঠাৎ ফটো ওঠার কি মন হলো?
গু: এমনিতেই।
_কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম ও কিছু লুকোচ্ছে। ও পেছনে থাকায় আমি বুঝতেও পারলাম না।
_ বিকেল হয়ে এসেছে। হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই বৃষ্টি নেমে আসলো। রাস্তার পাশেই খেতের চাং ঘরে আশ্রয় নিলাম। (চাং ঘর হচ্ছে একধরনের উচু ঘর। বন্য প্রাণীদের থেকে ফসল বাঁচাতে এদিকে এই ধরনের ঘর কৃষকেরা বানান আর রাতে ঐ ঘরেই থাকেন।) চাং ঘর উঁচুতে হলেও ওখানে বসার জায়গা টা বেশ সংকীর্ণ। দাড়ানো তো যাই না, ভালো করে বসাও যায় না। যাইহোক ওখানে ওভাবেই বেশ জড়োসড়ো হয়ে বসলাম। দুজনেই ভিজে গেছি। গুঢ়ীয়া ওর শাড়ির আঁচল দিয়ে ওর মাথা, মুখ মুছে নিচ্ছে। আমি ওর দিকে তাকিয়েই রইলাম। ওকে আজ খুব সুন্দর লাগছিলো। আর বৃষ্টিতে ভিজে যেন ও আরো সুন্দরী হয়ে উঠল।
_ ও আমার দিকে তাকাতেই আমি অন্য দিকে তাকালাম আর নিজেকে গালি দিতে লাগলাম। দেখি ও আমার একদম কাছে এসে বসলো। বাইরে অঘোর শ্রাবণ যেন এই সেপ্টেম্বরেই এসে গেছে। হঠাৎ ও ওর আঁচলটা দিয়ে আমার মাথাটা মুছতে লাগলো। আমি যেন অবশ হয়ে যাচ্ছি। আমার হাত পা সব ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। আমি আর ওর দিকে তাকাতেই পারলাম না। মাথাটা নিচু করতেই আমি যেন একেবারে অবশ হয়ে গেলাম। ও শাড়ির আঁচল দিয়ে আমার মাথা মোছার সময় ওর বুক টা সামনে উন্মুক্ত হয়ে গেল। লাল ব্লাউজ টা যেন ওর বুক টা ভালো করে ঢাকতে পারেনি। বুকের উপরের অংশ বাইরে বেরিয়ে আসার জন্য বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে। গলা দিয়ে জল চুপসে চুপসে ওর বুকের মাঝ দিয়ে চলে যাচ্ছে। আমি এবার ঘামতে শুরু করলাম। চোখ দুটো বন্ধ করে নিলাম। আর কিছুই ভাবতে পারছি না।
_ এবার ও আমার মুখটা মুছে দিতে লাগলো। আমি চোখ বন্ধ করেই আছি। আমার হৃদস্পন্দন আমি শুনতে পাচ্ছি। হঠাৎ আমি আমার ঠোঁটে একটা গরম কিছু অনুভব করলাম। চোখ খুলতেই দেখি গুঢ়ীয়া আমাকে কিস করছে। আমি আর পারছি না। আমি আবার চোখ বন্ধ করে নিলাম। শরির টা হঠাৎ এলিয়ে দিলাম আর বসে থাকতে না পেরে। ও আমার মাথাটা ওর কোলে নিল। এরপর আমাকে আদর করতে লাগলো।
আমি মন থেকে না চাইলেও আমার শরীর উওর দেওয়া শুরু করল। আমি উত্তেজিত হতে লাগলাম। আমার মনে যে ভয়, সংকোচ ছিল বুঝতে পারছিলাম সেটা উধাও হচ্ছে। এবার আমি গুঢ়ীয়ার আহ্বানে সাড়া দেওয়া শুরু করলাম। আমি আমার অজান্তেই ওর গলা জড়িয়ে প্রত্যুত্তরে কিস করতে লাগলাম। আমি উঠে বসলাম। এবার আমার মন আর শরীর, দুটো দিক থেকেই সমান ভাবে রেসপন্স দিতে তৈরি হয়ে গেছে। ওর গাল দুটো দুহাত দিয়ে হালকা করে ধরলাম। ওর কপালে একটা আলতো কিস করলাম। তারপর ওর নাকে এবং শেষে ওর ঠোঁটে আমার ঠোঁট মিলিয়ে দিলাম। আমরা এক অজানা সুখে হারিয়ে যেতে লাগলাম।
_ নীচ থেকে আওয়াজ এলো কে ওখানে? হঠাৎ কারোর ডাকে আমাদের যেন জ্ঞান ফিরলো। ওকে ছেড়ে নিচে তাকাতেই দেখি চাং ঘরের মালিক জাপি (গ্রাম্য জীবনের এক ধরনের ছাতা) মাথায় দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টি টাও একটু কমে গেছে। আমি নিচে নেমে এসে বললাম বৃষ্টি থেকে বাঁচাতেই আপনার চাং ঘরে উঠেছিলাম। উনি ঠিক আছে বলে চলে গেল। ওদিকে গুঢ়ীয়াও ওর কাপড় ঠিক করে নিচে নেমে এল। আমরা আর কেউ কথা বললাম না। স্কুটার টা স্টার্ট করে বাড়িতে চলে এলাম।
_ বাড়িতে এসে কেউ কারোর দিকে তাকাচ্ছিলাম না। লজ্জা হচ্ছিল আমাদের। আমি আমার ঘরে ও ওর ঘরে চলে গেল। আমি পোশাক বদলে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। এক অজানা ভালো লাগা আমাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। হঠাৎ আমার মনে যে ভয়, সংকোচ ছিল, তার ছিটেফোঁটাও নেই এখন। আমি কিছু ভাবতেও পারছিলাম না। শুধু ওর কথাই মনে। ভাবলাম যা হয় হবে। ভগবান যদি এমনটাই চান, তবে এমনটাই হোক। ( আমি ভুল ছিলাম। এটা ভালোবাসা হলেও এটা ছিল আমাদের যৌবনের কাছে মাথা নত করা। যার মাসুল আমাকে ও গুঢ়ীয়াকে সারাজীবন ভুগতে হবে তখন বুঝতে পারিনি।) আমি কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম টের পাইনি।
ইন্দ্র । ইন্দ্র। গুঢ়ীয়ার ডাকে সাড়া পেলাম। দেখি রাত ৭ টা বাজে। তখনো বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। আমি উঠে বসলাম। গুঢ়ীয়া অন্য দিকে তাকিয়ে বললো চলো রান্না করতে হবে। বুঝতে পারছিলাম ওরো খুব লজ্জা হচ্ছিল। তাই আমার দিকে তাকাচ্ছে না। আমি ওকে যেতে বলে উঠলাম। একটু ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লাগছিল। শেষ বিকেল থেকে ওভাবে বৃষ্টি পড়েই চলেছে। হালকা একটা চাদর জড়িয়ে রান্না ঘরে গেলাম।
_ রান্না করে খাওয়া শেষ করতেই রাত ১০ টা বেজে গেল। আমরা এখানে কেউ কাউকে কথা বলিনি। যেন দুটো বোবা
লোক বাড়িতে আছে। খাওয়া শেষ করে আমি বিছানায় কাঁথা গায়ে বসলাম। গুঢ়ীয়া ফ্রেশ হয়ে ওর বিছানা ঠিক করে শুয়ে পড়লো। আমি আশা করছিলাম ও হয়তো কথা বলবে। কিন্তু সে আশার মুখে ছাই। বুঝলাম ও খুব লজ্জা পেয়েছে। ওদিকে বৃষ্টিটা আবার বেশী ধরেছে। আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। এদিকে আমার যৌবন আমার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। ভাবলাম আমাকেই এবার আগে যেতে হবে।
_ ওর পাশে গিয়ে বসলাম। মাথায় হাত দিয়ে ডাকলাম। ও আমার দিকে ঘুরে এলো। ওর চোখে চোখ রাখতেই আমি যেন কোথায় হারিয়ে গেলাম। ওর চাহনি আমায় পাগল করে তুলল। ওর অভিমানি চোখ যেন আমায় কাতর ভাবে আহ্বান জানাচ্ছে। ওর অভিমান আমি বুঝতে পারলাম। ও মেয়ে হয়ে এতটা করলো আর আমি ছেলে হয়েও কিনা। নাহ এবার আর আমি আমাকে আটকাবো না, মনে মনে ঠিক করলাম। সাহস করে জিজ্ঞেস করলাম-
ই: গুঢ়ীয়া তুমি কি আমাকে ভালো বেশে ফেলেছো। গু: হ্যাঁ ইন্দ্র। আমি তোমাকে ছাড়া আর কিছুই চাই না। ই: কিন্তু গুঢ়ীয়া তুমি জানোই আমি কে আর কি। গু: আমি তো তোমাকে জেনেই ভালোবাসে ফেলেছি গো। এবার গুঢ়ীয়া জিজ্ঞেস করলো গু: ইন্দ্র, তুমি আমাকে চাও তো। তুমি জানো না গুঢ়ীয়া আমি তোমাকে কতটা চাই। ইচ্ছে করে এমন এক দুনিয়ায় যাই যেখানে তুমি আর আমি। আমি মনে মনে কথাগুলো ভাবছিলাম।
গু: কি হলো ইন্দ্র, বলো তুমি আমাকে চাও কিনা? এবার আমি ওর প্রশ্নের উত্তর দিতে ওর কপালে আলতো করে চুমু খেলাম। উত্তেজনায় ওর নাক টা কাঁপছে। আমি ওকে ওর নাকে কিস করলাম। তারপর ওর ঠোঁটে আমার ঠোঁট রেখে আমার এক অজানা পথে হারিয়ে যেতে লাগলাম। আমি প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে উঠেছিলাম। পাগলের মত ওর গলায়, গালে ঠোটে কিস করতে লাগলাম। গুঢ়ীয়াও সমানভাবে রেসপন্স দিচ্ছিল। এরপর আমি ওর কাঁথার ভেতরে ঢুকে গেলাম। ওর আর আমার শরীর যেন এক হয়ে গেল। আমি ওকে খুব জোড়ে জড়িয়ে ধরে আদর করতে লাগলাম। আমি আর ও এতটাই উত্তেজিত হয়ে উঠেছিলাম যে কেঁউ আর কোনো বাধা ধরায় আটকাতে পারলাম না। এরপর আমরা দুজনে হারিয়ে গেলাম। ঐ রাতে আমারা আর ঘুমোলাম না। আমি ওকে আর ও আমাকে সারারাত আদর করলাম। পরেরদিন সকালে ও আর আমার সামনে এলো না। আমি ডাকলেও ও আসতে চাইলো না। বুঝলাম ওর খুব লজ্জা পেয়েছে। আমি এটাতে বেশ মজাই পেলাম। অনেক কষ্টে দুপুরের খাবার পর ও আমার সাথে কথা বললো। আমারা আবার যৌবনে হারিয়ে গেলাম। এভাবেই চলছিল আমাদের। বিয়ে না করেও যেন আমরা স্বামী স্ত্রী হয়ে গেছি।
__ এক সপ্তাহ হয়ে এলো। আমি সেদিন সকালে শহরে গেলাম। বাড়ির কিছু বাজার আর ঐ দিন ফটো উঠেছিলাম সেটা আনতে। গুঢ়ীয়া সেদিন বাড়িতেই থেকে গেল। বাজার শেষ করে দেখি ১২ টা বেজে গেছে। তাড়াতাড়ি আমি বাড়িতে ফিরে এলাম। বাড়ির কাছে আসতেই দেখি বাড়ির সামনে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। কে হতে পারে বুঝলাম না। স্কুটার দাঁড় করিয়ে গেট খুলতেই দেখি মালিক। আমার পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে গেল। নিজের মাঝে হঠাৎ এক শূন্যতা অনুভব করতে লাগলাম। দাঁড়িয়ে থাকতেই পাড়ছিলাম না। মালিক আমাকে দেখে ডাক দিলেন।
মালিক: ইন্দ্র। আমি তোমার টেলিগ্রাম গত ২ দিন আগেই পেয়েছি। তোমার টেলিগ্রাম পেয়ে দেরি না করেই বেড়িয়ে পড়লাম ভাই আর গুড্ডু কে নিয়ে। ইন্দ্র তোমাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দেব।
_আমি কিছু বলতে পারলাম না। বাজার নিয়ে রান্না ঘরে গেলাম। এক গ্লাস জল খেয়ে একটু শক্তি পেলাম। ঘর থেকে বেরিয়ে মালিক কে বললাম এত দুর থেকে এসেছেন, আজকে আমাদের বাড়িতে খাওয়া করে থেকে যান। কাল সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়বেন। মালিক বললো ওনারা আজকেই রওনা দেবেন তবে দুপুরে খেয়ে যাবেন। ওনার কথা শুনে আমার মন টা হু হু করে কেঁদে উঠলো।
_ ঘরে গিয়ে দেখি গুঢ়ীয়া বসে আছে। আমাকে দেখতেই উঠতে চাইলে আমি ইশারায় ওকে বসতে বললাম। দেখি ওর চোখে জল। আমি ওর কাছে গিয়ে আমাদের ওঠা ফটোর ২ কপি ওর হাতে দিয়ে বললাম কিছু ভেবনা সব ঠিক হবে। যিনি আমাদের মিলিয়েছেন, উনিই সব ঠিক করবেন।
_ দুপুরের খাওয়া শেষে সবাই গাড়িতে উঠলো। আমি ভেতরে ভেতরে ভেংগে পড়লেও শক্ত হয়ে রইলাম। হঠাৎ গুড়ীয়া গাড়ি থেকে নেমে বললো ঘরে কিছু রেখে এসেছি, নিয়ে আসছি। অনেকক্ষন হয়ে গেল আসছে না দেখে আমি মালিক বললাম ‘আমি গিয়ে দেখছি’ বলে ভেতরে গেলাম।
_ আমি ভেতরে যেতেই ও আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। আমাকে পাগলের মতো আদর করতে লাগল। আমি ওকে শক্ত করে ধরলাম। ওর কপালে আলতো করে একটা চুমু খেলাম। বললাম ভগবানে ভরসা রাখ, আবার সব ঠিক হবে।
_ গাড়ি টা স্টার্ট দিতেই আমি আর পারলাম না। আমার চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগলো। আমার ভেতর টা যেন দুমরে মুচরে ভেংগে যাচ্ছে। ওরা চলে গেল। আমি ঐ দিকেই তাকিয়ে রইলাম। কতক্ষন তাকিয়ে ছিলাম জানিনা। শুধু এটুকু বুঝতে পারছিলাম আমি যেন আবার আমার সব হারিয়ে ফেললাম।
সেদিন রাতে আর ঘুমোতে পারলাম না। সারারাত ছটফট করতে লাগলাম। ও আর আমার ফটো টাই দেখতে লাগলাম। কিন্তু শান্তি পাচ্ছিলাম না মনে। বার বার মনে আসতে লাগলো কেন যে ঐ দিন টেলিগ্রাম টা করলাম। কিন্তু আবার ভাবলাম আজ হোক কাল ওর বাড়িতে তো জানাতেই লাগতো। এক নিবিড় শূন্যতা আমাকে গ্রাস করে নিল। আর কিছুতেই কোনো কিছু ভালো লাগছিল না। ঘরে ঢুকলেই ঘর টা খালি খালি লাগে। ঘরের ভেতর একদম থাকতে পারছিলাম না। খাওয়া দাওয়ায় মন উঠে গেছে। না খেতে খেতে দুর্বল হয়ে যাচ্ছিলাম। জেঠি আমার এই অবস্থা দেখে জোর করে কিছু খাওয়ালেন। কিন্তু আমার কিছুতেই আর মন বসছিল না। কি করবো বুঝতে না পেরে স্কুটার টা নিয়েই শিলিগুড়িতে চলে গেলাম। মা বোন ভাই সবাই আমাকে দেখে অবাক। কি অবস্থা হয়েছে আমার। সবাই গল্প করলেও আমি যেন কোথায় হারিয়ে থাকি। আমি কিছুতেই ওর কথা এক মূহুর্তের ভুলতে পারছিলাম না। আমার এই অবস্থা দেখে মা সে রাতে কাঁদতে লাগলো। জোর করতে লাগলো কি হয়েছে বলতে। আমি কিছু হয়নি বোলে মাকে জোর করে ঘুমোতে যেতে বলে শুয়ে পড়লাম।
_ এক মাস হয়ে গেল ও কাছে নেই। একটা খবর ও পেলাম না। ফোন করেছিলাম কয়েকদিন। কিন্তু অন্য কেউ ওঠাতে কেটে দিই। কি বলে বলবো গুড়ীয়াকে ফোন টা দিতে। গুড়ীয়া আমাকে নিজের করে নিলেও আমি যে ঐ বাড়ির সবার কাছে কাজের লোক। আর একটা কাজের লোক হয়ে আমি কোন সাহসেই বা বলবো গুড়ীয়াকে ফোন দিতে। আচ্ছা ও তো পারে ফোনের কাছে বসে থাকতে। আমার ফোনের জন্য তো অপেক্ষা করতে পারে। ও আবার আমাকে ভুলে যায়নি তো ? না না এমনটা হতে পারে না। আমি এখন নিজেই যেন নিজের সাথে দ্বন্দ্ব করছি। এদিকে আমার অবস্থা দেখে মা বোনেরাও ভালো নেই বুঝলাম। এবারের দুর্গাপূজা কিভাবে চলে গেল বুঝলামি না। মা জোর করেই আমাকে পুজোয় নিয়ে গেলেও আমি বেশিক্ষণ থাকতে পারছিলাম না। ঘরে চলে এলাম। ঠিক করলাম আমি আর এখানে থাকবো না। আমার জন্য মায়েদের আর কষ্ট পেতে দেব না। আর এখানে না, গোয়ালপাড়া চলে যাব। যতই কষ্ট হোক ওখানেই থাকবো। আমার ঐ ঘরেই তো ওর আর আমার মধুর দিন গুলির স্মৃতি আষ্টেপৃষ্ঠে জড
গল্পের বিষয়:
গল্প