হঠাৎ একদিন

হঠাৎ একদিন

আমি শুভজিৎ । খুব অগোছালো এবং ভবঘুরে। নির্জন কোন পথে একাকী হাঁটতে খুব ভালো লাগে। তাই মাঝে মাঝেই হারিয়ে যায় কোন নির্জন রাস্তায় ( একদম বাস্তবের মতো ) । এমনি একদিন গোধূলি বিকেলে একটা বিশেষ কাজে বাজার থেকে ফিরছি। এমন সময় পিছন থেকে একটা মেয়ে ডেকে উঠলো,

-দাদা দাদা ভালো আছো?  মেয়েটা খুব মিষ্টি! বয়স আনুমানিক চার কি পাঁচ! আমি দাঁড়িয়ে বললাম, – হ্যা ভালো আছি! কিন্তু কে তুমি? – আমি মিথি! নার্সারি স্কুলে এ তে পড়ি!

– আমাকে চিনো কিভাবে? – ওই যে মা (হাতে দেখিয়ে) বললো, তোমাকে ডাকতে! আস্তে আস্তে মিথির মা আমার সামনে আসলো! মুখটা খুলতেই চমকে গেলাম!!! এতো মেঘলা!!!

– ভালো আছো ? (মেঘলা) – অনেক ভালো!
– কিরকম ভালো সেতো দেখতেই আছি! মুখ ভর্ত্তি দাড়ি, মাথার চুল এলোমেলো! মুখে বিষন্নতার ছাপ!

– হুম!
– আচ্ছা জীবনটাকে একটু সুন্দর করে সাজাতে পারো না?

– সাজিয়েছিলাম তো, হঠাৎ একটা ঝড় এসে সব তছনছ করে দিলো!

– মেঘলা আর কিছু বললো না! আসলে ওর বলার মত কিছু নেই।

ক্লাস 12 থেকে শুরু করে কলেজে সেকেন্ড ইয়ার পর্যন্ত আমাদের রিলেশন ছিলো! অনেক ভালোবাসতাম মেঘলাকে! একদিন বৃষ্টিতে ভিজে আমার জ্বর হয়ে যায়, ৩দিন কলেজে যেতে পারিনি! তারপর যখন কলেজে গেলাম, তখন মেয়েটা আমাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে গেল! অতঃপর এমন শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো যে ওর উষ্ণ পরশে আমার জ্বর একদম ভালো হয়ে গেল! জড়িয়ে ধরে মেঘলা কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো, – এই হারামি তুমি জানোনা, তোমাকে না দেখলে আমি একদিনও থাকতে পারিনা!

– সেদিনেই বুঝেছিলাম ভালবাসা মানে কি!!!

তারপর থেকে মেঘলার প্রতি আমি অসম্ভব দূর্বল হয়ে যায়! দুজন খুব ভালোই ছিলাম। খুব ভালোই চলছিলো আমাদের দিনগুলো। হঠাৎ একদিন খবর পেলাম, মেঘলার বিয়ে ঠিক। ফোন দিলাম, – মেঘলা কি শুনছি এসব? তোমার নাকি বিয়ে ঠিক?

– হুম!
– তুমি রাজি?
– হুম রাজি! রাজি না হয়ে কি করবো বলো?

– মানে?
– দেখো এ পর্যন্ত আমি অনেকগুলো বিয়ে ভেঙ্গেছি শুধু তোমার জন্য!

কিন্তু এখন পর্যন্ত তুমি কোনো চাকরি যোগার করতে পারোনি! আর কত???

– চাকরিটা ই কি সব?
– হুম চাকরিটা ই সব।

কারন আবেগ আর ভালবাসা দিয়ে জীবন চলে না। ফোন রেখে দিলাম, সাথে সাথে নাম্বারটাও ডিলিট করে দিলাম। আর কোনোদিন মেঘলার সাথে আমি যোগাযোগ করার চেষ্টা করিনি। বহুদিন পর আজ হঠাৎ দেখা!!! ঘোর ভেঙে দিয়ে মেঘলা বলে উঠলো, – ইদানিং কি করছো ?

– কিছুনা!
– কোনোরকম জব? – হয়েছিলো, ছেড়ে দিয়েছি!

– কেন?
– কার জন্য করবো বলো? আপন বলতে কেউ নেই!

একজন মানুষকে অনেক ভালোবাসতাম সেও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। এখন চাকরি দিয়ে কি হবে!!! . কথাগুলো শুনে মেঘলার চোখের কোণে জল চলে আসলো! এমন সময় তার স্বামীর আগমন! পরিচিতি পর্ব শেষে বিদায় দেখতে দেখতে আমাকে পার করে চলে গেল আমার প্রিয় মেঘলা । বুকের বাম পাশটা অসহ্য ব্যথায় চীন চীন করে উঠলো, দুজনের চোখে জল বেরোয় নি ঠিকই কিন্তূ, হৃদয় ঠিকই কাঁদছে – যে কান্নার আওয়াজ কারোর কানে পৌঁছবে না l মনে পড়লো কয়েক বছর আগের পরস্পরকে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো, মনে পড়লো একে – অপরকে ছেড়ে থাকতে না পরার মতো দিনগুলোর কথা আমিও মনে কালো মেঘ নিয়ে বাড়ি চলে গেলাম! আজ সারারাত ঘুম হবে না, কারন এ শহরে বৃষ্টি হচ্ছে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত