কলকাতা থেকে তার বাড়ির রাস্তা ওই এদিক ওদিক করে দেড় ঘন্টার মতো। আজকের দিনেও ঘন্টায় একটিমাত্র বাস। প্রীতম দাঁড়িয়ে তার বাড়ির সামনে বাস স্ট্যান্ডে। কখন বাস আসবে সেই অপেক্ষায়। এদিকে বৃষ্টি নামবে নামবে করছে বেশ অনেকক্ষন ধরেই, তবে নামছে না আর। সাবধানতামূলক সে একটা কালো ছাতা তার জিন্সের পকেটে ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঘন ঘন হাতঘড়িতে চোখ রাখছে সময়ের খেয়াল রাখতে। প্রীতমের অবস্থাটা এই মুহূর্তে কিছুটা চাতক পাখির মতো। প্রচন্ড গরমের দাবদাহে চাতক পাখি যেমন ঘোরে একটু পানীয়র খোঁজে, প্রীতমও যেন এক মরীচিকার পেছনে দৌড়ে যাচ্ছে। কেন যাচ্ছে। সে নিজেও জানে না। কি’ই বা পাচ্ছে? হয়তো কিছুই না। তাও তার যাওয়া চাই। হয়তো কিছুক্ষনের মনের পানীয় পাওয়ার আশায়। সে বলেছিল “আমি তোমায় বৃষ্টিতে পেয়েছি। বৃষ্টিই দেব সারাজীবন।”
কিন্তু সারাজীবনের সময় নিয়ে তো প্রীতম আসেনি! সে এসেছিল ক্ষনিকের তেষ্টা মেটাতে। তেষ্টা তেষ্টাই থাকে যখন নিজের মধ্যে আগ্নেয়গিরির উৎস। প্রীতম কিছু মাস আগেই এক আবদ্ধ, স্ব’ইচ্ছাবিরুদ্ধতামূলক বহুদিনের সম্পর্ক থেকে বেরিয়েছে। তার রেশ এখনো কাটেনি। কিছু মাস হলো সে মোবাইলে একশটা মতো রবীন্দ্রসংগীত ডাউনলোড করে দিবারাত্র সেই গানই শুনে চলেছে।বলা যেতে পারে লুপে চলছে। হঠাৎ সেই গানগুলো তার কাছে নতুন রূপে নতুন মানে খুঁজে পেয়েছে। আগেও শুনেছে, তবে এত গভীর ভাবে কখনোই নিজের সাথে সামঞ্জস্যতা খুঁজে পায়নি। এখন যেন প্রত্যেকটি মিনিটের পথ চলা রবীন্দ্রনাথ সমীচীন করে তুলেছে। অদ্ভুত। বড়োই অদ্ভুত। কোনো বিকল্পও নেই। মাঝে মাঝে মনে হয় কি দরকার এই নারীরূপের রাক্ষসীদের? কি প্রয়োজন চাহিদার? আর সত্যিই কি এক নারী প্রাক্তনের চাহিদা মেটাতে পারে? এই প্রশ্নের সব উত্তরগুলোই বাঁধনহীন হয়ে প্রকাশ পাচ্ছিল তার কাছে। ধুস্, কি হবে এত আকাশকুসুম ভেবে, মাথা খারাপ করে। এই ভেবে আবার এক’ই পথে হেটে চলেছে প্রীতম। যা হবে দেখা যাবে।।
২০ মিনিট পর তার বাড়ি যাওয়ার বাস আসছে দেখে একটু স্বস্তি হলো। বাস থামতেই উঠে পড়লো সে।কপাল ভালো, উঠেই পেছনের দিকে একটা কোণের সিট্ সে পেয়ে গেল। পকেট থেকে ই’য়ারফোনটা বের করে কানে গুঁজে এফ এম চালিয়ে জানালার কাঁচে মাথা হেলিয়ে শুনতে থাকতে থাকতে পথ অতিক্রমন করতে লাগলো সে। আজকে যেন পথটা বড্ড লম্বা। শেষই হতে চাইছে না। হাতঘড়িতে আবার নজর দিলো। স’বে আধঘন্টা হয়েছে। একটা মেসেজ করা যাক্ তাকে। ফোনের কন্ট্যাক্ট্ খুলে বের করলো তার নাম। টাইপ্ করা শুরু করলো। “তানি, বাস-এ উঠে পড়েছি। এবার রেডি হও। এক’ই সময় পৌঁছব তাহলে দুজনে।”
মাঝরাস্তায় ঝমঝম করে বৃষ্টি নামলো। বাইরের কিছু দূরে দেখা যাচ্ছে না। সব সাদা হয়ে গেছে। বাসের ভেতরে বসে আরো’ই কিছু দেখা যাচ্ছে না। এত লোকের বাষ্পে আর বাইরের তীব্র বৃষ্টির কারণে, জানালার কাঁচে ভীষণ বাষ্প জমছে ক্রমশ। যতই বৃষ্টির তীব্রতা বাড়ছে, ভেতরের কাঁচে বাষ্প জমছে আরো বেশি। আরো বেশি।
তানি তখন কলেজে ছাত্রী। প্রীতমের সাথে আলাপ ফেসবুকেই। আর চার পাঁচটা সম্পর্ক গড়ে উঠ্ছে যেমন চারিদিকে ঠিক্ তেমনই আর কি! বিশেষ কিছু বিশেষত্ব নেই। দেড় ঘন্টার রাস্তা পেরিয়ে গিয়ে সেই নয় সিনেমা দেখা, নয়তো পার্কে বসা, অথবা কোনো রেস্তোরাঁয় বসে চাউমিন খাওয়া। তানির আবার এসব বৈষয়িকতার প্রেমে খুব বিশ্বাস ছিল। যখনই প্রীতমের সাথে দেখা করতে আসতো, তখনই বেশ টিপ্টাপ্ হয়ে গুছিয়ে সেজে আসতো। বেশ ভালো লাগতো দুজনের দুজনের সঙ্গকে। সেই প্রথমবার যখন প্রীতম গেছিলো তানির সাথে দেখা করতে। বাঙালি ছেলে, বাঙালিয়ানা দেখিয়ে পাঞ্জাবি পরে গেছিলো। পৌঁছে দেখে সে’ও শাড়ি পরে এসেছে। তাও আবার টুকটুকে লাল রঙের। চুলটা উঁচু করে খোঁপা করা। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। শুধু বাঁ’হাতে চুড়ি। কপালে একটা ছোট্ট কালো টিপ। চোখের পাতায় হালকা গোলাপি আভা। টুকটুক করছে গায়ের রং, আর তাতে একটুও খুঁত নেই। আর প্রীতমকে দেখেই একগাল হাসি হেসে বললো কোথায় যাওয়া হবে মি:? উত্তরটা অবশ্য কিছুক্ষন পর এসেছিল প্রীতম মুখ থেকে। সে বিস্ময়ে বেশ অনেকক্ষন তাকিয়ে ছিল তানির দিকে। তানি তার বিস্ময় ভরা চাহনি ভেদ করে ডেকেছিল,
– এই’যে, কোথায় হারিয়ে গেলেন স্যার? বলেই মুচকি হাসি। হাসির সাথেই পড়লো এক গালে সুসজ্জিত টোল। বিস্ময়, ভালোলাগা, আকর্ষণ, চক্ষু কেঁড়ে নেওয়া এক অবিশ্বাস্য মানবী তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে দেখে, কোনো কথাই বেরোলো না প্রীতমের মুখ থেকে। সে বেশ আমতা আমতা করেই বললো,
– যে–খানে ইচ্ছা। তো—মার জায়গা তো। তুমি যেদিকে প—থ দেখাবে সে—দিকেই চলবো আমি।
– আচ্ছা?
– একদম।
– চলুন অটোতে উটে পড়ুন দেখি এবার।
অটো তে উঠে তানি চালককে কি যেন বললো, কর্ণধার ঘেঁষে বেরিয়ে গেল। প্রীতম একবার সোজা তাকাচ্ছে, একবার তানির দিকে। কি যে হচ্ছে তার ভেতর নিজেই বুঝতে না পেরে হাসি হাসি মুখ করে চুপচাপ বসে রইলো বাধ্য ছেলের মতো। যেখানে ওরা নামলো সেখানটা অচেনা প্রীতমের। সামনে একটা বিরাট অট্টালিকা। তানি দ্রুত হেটে ঢুকে পড়লো সেখানে। প্রীতম তার পিছু নিলো। কিছুটা হেটে সিঁড়ি দিয়ে উঠে, তারা এলো একটা ফুড-কোর্টে। তখন মালুম হলো যে সেটা একটা মল। সম্বিত ফিরলো প্রীতমের। বললো,
– এখানে কেন? এত লোকের মাঝে?
– যদি আপনি আমায় অপহরণ করার চেষ্টা চালান তাই আর কি। বলে মুচকি হাসলো।
– তা ঠিক। কিন্তু কিছু অপহরণ যে আমি করব’ই।
– তাই?
– আলবাত।
– তা কিসের শুনি?
– এই তোমার হাসির তলায় যে আরো সুন্দর হাসি আছে তার।
– বাবাঃ। তা এরমটা আর কজন কে বলেছেন?
– এই! এত আপনি আপনি করবে না তো একদম। কিরাম জেঠু জেঠু মনে হচ্ছে নিজেকে।
– তাহলে কি বলবো বলে দিন?
– আবার? উফফফ।
– চা না কফি খাবেন?
– কফি।
– তা নিয়ে আসুন। কাউন্টার তো চোখের সামনেই আছে। বলে আবার মুচকি হাসি।
প্রীতম কথায় পরাজিতর ধ্বনি শুনতে পেয়ে, কথা না বাড়িয়ে উঠে পড়লো অর্ডার দিতে। দু-কাপ কফি এনে বসে বলল,
– একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
– দুটো করুন। একটা কেন!
– তো শাড়ি পরে এলে কেন?
– তা আপনি পাঞ্জাবি পড়েছেন কেন? যে কারণে আপনি সেজেছেন সে কারণেই আমিও সেজেছি আপনার জন্য।
– আমার জন্য? সত্যি?
– ওমা। না না। ওই কফি শপের লোকটার জন্য।
– হুস্। কি বাজে কথা!
– জাগ্গে। বাদ দিন। তো বলুন আসবেন আবার এতটা পথ পেরিয়ে আমার কাছে?
– নিশ্চই এসব। তুমি ডাকলেই আসবো।
– বেশ।
তারপর অনেক্ষন এদিক ওদিক করে ফোনের ক্যামেরা নাড়িয়ে চাড়িয়ে বেশ পঞ্চাশের কাছাকাছি নিজেদের ছবি তুলে হাঁপিয়ে গিয়ে বেশ লাজুক হাসি হাসতে হাসতে, প্রীতম তানির হাত ধরে বসলো। হাসি সব বন্ধ। তানি চোখ ছোট ছোট করে বললো,
– কি? কি ব্যাপার?
– কিছুনা।
বলে আরো শক্ত করে হাতটা ধরলো প্রীতম। তানি বললো,
– ওঠা যাক?
– চলো।
আজ বাস থেকে নেমে প্রীতম দৌড়ে গিয়ে একটা ছাউনির তলায় গাদাগাদি করে দাঁড়ালো বৃষ্টি থেকে নিজেকে শুকনো রাখতে। কিন্তু যা জোরে বৃষ্টি পড়ছে তাতে কি আর ছাউনি মানে? বেশ ভিজে গেলো সে। একটু পরে বৃষ্টি কমে গেলে দেখলো তানি রাস্তার ওপর থেকে পার হয়ে হেঁটে আসছে। এসেই বললো, চলো তোমায় আমার এক বন্ধুর বাড়ি নিয়ে যাবো। একটু দূরেই তার বাড়ি। হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছল তারা কিছুক্ষনের মধ্যে। ব্যাগ থেকে চাবি বের করে দরজা খুললো তানি। ঢুকলো তারা দুজনে। ঢুকেই প্রীতম জিগেস করলো,
– এ কোথায় নিয়ে এলে। বন্ধু কই তোমার।
– কেন বন্ধুর সাথে দেখা করার কি প্রয়োজন তোমার?
– না। মানে। কি করে আয়োজন করলে এসব?
– ওসব জানতে নেই। এখন চার দেয়ালের মধ্যে শুধু আমি আর তুমি।
প্রীতমের কিছু মুহূর্তের জন্য আল্পনার কথা মনে পড়ে গেল। সে’ও তো একসময় ঠিক এই কথাই বলেছিল তাকে। সে কোথায় আজকে? ছেড়ে চলে গেছে বহুদূরে। খুঁজে পাবে না তাকে আর। সে’ও তো একবার এরম এক বন্ধুর বাড়ির চাবি ম্যানেজ করে নিয়ে গেছিলো প্রীতমকে। বাকরুদ্ধ হয়ে বিছানায় বসে বসে শুধু আল্পনার সারা শরীরে নিজের হাতে জল্পনার আঁকিবুকি করেছিল। শরীরের প্রত্যেকটি ভাঁজ খুব ভালো করে চিনেছিলো সেদিন। স্তনের নীচে কতটা সময়ের পর ঘাম জ’মে সেটাও তার মুখস্থ ছিল। যখন আল্পনা প্রীতমের কোলের ওপরে উঠে বসত, তখন যে শিহরণী বইতো সারা শরীর মন প্রাণ জুড়ে, আজ কই সেসব? চোখের সামনে পলক ফেলার বিবর্তনে তানি সেই রূপেই তার সামনে দাঁড়িয়ে। লাজুক মুখে, কান লাল হয়ে যাওয়া, চক্ষু নিচের দিকে নামানো, হাতের আঙুলের ফাঁকে এক রাশ চুল নিয়ে খেলা করে যাচ্ছে তানি। বিবস্ত্র। শরীরের নিটোল মেদের ভাঁজে ভাঁজে জমে থাকা প্রত্যাশা, চাহনি, উষ্ণতামিশ্রিত সেই একই ঘাম জমে আছে। কিছু কিছু ঘামের ফোঁটা একসাথে জমে তার কোমরে আল্পনা টেনে নিচের দিকে নেমে চলেছে ক্রমশ। সেই এক’ই ভাবে। কিছু কাছে এগিয়ে এলো তানি। প্রীতমের বুকের কাছে জামাটা মুঠো করে ধরে টেনে নিলো তার কাছে। প্রীতম অনেকটা হতবাক্, বিভ্রান্তসম্পন্ন, নিরুত্তর হয়ে বাধ্যতামূলক ভাবে এগিয়ে গেল। লাল লালসাযুক্ত ঠোঁট নিয়ে এগিয়ে এলো তানি।
প্রীতমের বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলো বেশ ভালো ছিল। কোনো চিন্তা নেই, ভাবনা নেই। সন্ধ্যে হলেই হোস্টেলের টেবিল-টেনিস চলতো প্রায় মাঝরাত অবধি। আর এই সময় প্রীতমের কাছে শুধু গুরুত্ত্বপূর্ণ ছিল তার ব্যাট, স্টি্গার পিংপং, আর সবুজ দু’হাতের কোর্ট। সার্ভিসের পর তার প্রতিদ্বন্দ্বীর রিটার্ন দেওয়াটাই ছিল একমাত্র লক্ষ। আল্পনা তার রুমে বসে জানতো, প্রীতমকে এই সময় ছোঁয়ার কোনো চেষ্টা করেও লাভ হবে না। প্রাধান্যটাই পাবেই না। মনে মনে প্রীতমের খেলার প্রতি ভালোবাসার কথা ভাবে মাঝে মাঝে খুব সুখ পেত। ভাবতো, যে ছেলে খেলা ভালোবাসে, তার মন সত্যিই ভালো হয়। এমনটাই তার বাবা বলতো সব সময়। যদিও অল্পমেয়াদি সময় পেত তার বাবাকে। তাও। আর ঠিক তাই ছিলো তার কাছে প্রীতম। এই চলবলে, উদ্দীপনা সমৃদ্ধ, স্ব’পরায়ণ ও সুন্দর মানসিকতার এই প্রীতম’ই, আজ কেন অজানা অপরিচিত নারী শরীর ভোগে লিপ্ত? কেন এরম হলো বলতে পারেন আপনারা? আপনাদের হয়তো এরম পরিস্থিতি কখনো আসেনি। তাই অজ্ঞাত। আর যাঁরা খুব পরিচিত এই মুহূর্তগুলো সাথে, তাঁরাই বোঝেন যে কতটা দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে পড়তে হয় নিজের বিবেকের কাছে। আস্তরণে মানুষ তো নিজেকে রাজা’ও ঠাওড়াতে পারে। তবে বিবেকের তাড়না থাকে সর্বদা। প্রীতমের কিছুটা এমনই হলো তানিকে চোখের সামনে দেখে। কিছু করতে পারলো না অবশ্য। আপনা হতেই যেন নিজেকে বিকিয়ে দিলো লালসার কাছে।
– কিগো! প্রথমবার নাকি?
– হ্যা? মা—নে….তোমার কি অগুন্তিবার?
– কয়েকবার তো বটেই। বলেই একটু হাসলো তানি।
তারপর বেশি কথা হয়নি। ঘঙ-ঘঙে সিলিং ফ্যানটা যেন আপত্তি জানাচ্ছিলো মুহূর্তগুলোর। ঘরের চার দেয়ালে কিছুক্ষনের মধ্যেই ভরে উঠলো শীৎকারের ধ্বনি। ঘাম ঝরতে থাকলো দুজনের দেহ থেকে। মিষেগেল দুই উষ্ণতা, দুই চাহিদা, দুই পশু। মানবিক স্তরে কোনো মিল নেই। নেই কোনো চেনা গন্ধ নাকে। নেই কোনো ভালোবাসা। নেই কোনো আদর। যান্ত্রিক সহবাস চললো কিছুক্ষন। প্রীতম নির্বাক হয়ে যন্ত্রমানব হয়ে উঠলো। তবে বেশিক্ষন নয়। একটু সম্বিত ফিরতেই, সে একটানে, হ্যাঁচকা মেরে, এক ধাক্কায় তানিকে নিজের ওপর থেকে বিছানায় ফেলে দিলো। পারলো না আর প্রীতম। আল্পনাকে কিছুতেই খণ্ডাতে পারলো না। তার ভালোবাসা চির ওমর। এর পরিমাপ বোধয় তার কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ। তার ভালোবাসার কাছে হারতে দেবে না সে নিজেকে। কিছুতেই না। কিছুতেই না। বেড়িয়ে গেল ঘর থেকে। জুতোজোড়া পায়ে গলিয়ে হাটা লাগলো দ্রুত। পেছন থেকে তানি ডেকে চলেছে। দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল প্রীতম। তখনো ডেকে চলেছে তানি। যতদূর যাচ্ছে আস্তে আস্তে ক্ষীণ হয়ে এ’লো পিছু ডাকের স্বর। চললো সে তার নিজের কাছে আবার। আর ফিরবে না লালসার কাছে। আর নয়।
মাসখানেক কেটে গেল এই দিনের পর। আর সম্পর্ক রাখার চেষ্টাও করেনি প্রীতম। তবে তানি অনেকবার ফোনে চেষ্টা করেছিল। অনেকবার জিজ্ঞেস করেছিল যে কেন অমন বেরিয়ে গেল সে সেদিন। প্রীতমের প্রতিবারই এক’ই উত্তর, “আর নয়, তানি। আর নয়। তোমার দোষ নেই কোনো। দোষটা আমারই। মানতে পারবো না তোমায়।” যাইহোক, আজ প্রীতমের কাছে একটা হোয়া্টস্এপ্ মেসেজ ঢুকলো। তানি’র মেসেজ। একটি পি.ডি.এফ ফাইল। খুললো সে। তাতে লেখা –
“Tani Das Weds Avishek Dutta.
You are cordially invited.”
পরবর্তী লাইনগুলো আর পড়ার দরকার ছিল না। ফিরে গেল সে নিজের কাছে আবার। যাক্, ভালোই হলো বলে, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মোবাইলের স্ক্রিনটা লক্ করলো, তার সাথে এই অধ্যায়ও।
ও হ্যাঁ, দেখেছেন, এত কথা বলতে গিয়ে একটা কথা তো বলতেই ভুলে গেলাম। সেদিন তানির সেই বন্ধুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়, দরজা বন্ধ করে, জুতোটা পায়ে গলাতে গলাতে প্রীতম একটা হাত দরজার পাশের দেয়ালে রেখেছিল। একটু সময়ের জন্য দরজার দিকে চোখ পড়েছিল তার। দরজার ওপরে সোনালী হরফে লেখা, “GF2″। জুতো পড়া শেষ হলে অন্য পায়ে জুতো পড়ার সময় খেয়াল করেছিল দরজার দান দিকে কিছু দূরে একটা ছোট্ট নিজস্ব ডাকবাক্স। লেখা আছে তিনটি নাম পরপর,
“Mr. Anirban Dutta
Mrs. Nirmala Dutta
Mr. Avishek Dutta
Flat no. – GF2″।।