টিউশনির ঘটনা

টিউশনির ঘটনা
স্টুডেন্টের বাসায় পড়াতে গেলে স্টুডেন্টের মা খুব যত্ন করে আমার জন্য নাস্তা বানিয়ে নিয়ে আসেন।তিনি মনে করেন জগতের সকল মিষ্টি মেয়ের মধ্যে আমি একজন।আর সেই মায়ার টানেই আমার জন্য তার এতো আয়োজন।ছেলের পড়ার টেবিলে ট্রেতে করে নাস্তা সাজিয়ে আমার পাশে রেখে নানান গল্প করেন তিনি।মহিলা খুব আলাপ প্রিয় মানুষ।ছেলের টিউশন টিচার এবং আমাকে তার গল্পের সঙ্গী হিসেবে ভাবেন বলেই হয়তো এতোটা সম্মান আমি তার কাছ থেকে পাই।মহিলা নানান বিষয় নিয়ে আলাপ করেন।যেমনঃ ছেলের পড়াশুনা নিয়ে,তার বাগানের ফুল নিয়ে,কখনো আবার ভৌতিক আলোচনা হয়,কখনো বা পরামর্শ চেয়ে আলাপ জমিয়ে দেন।আমি অবশ্য সাচ্ছন্দ্য বোধ করি তার সাথে কথা বলতে।সেদিন পড়াতে আসা মাত্রই মহিলা এক গ্লাস শরবত বানিয়ে নিয়ে এসে বললেন-
-পরী মিস,তোমার সাথে একটা জরুরি কথা ছিলো।
-বলুন
-বুঝতে পারছি না সেটা তোমাকে বলা ঠিক হবে কিনা।কিন্তু তোমাকে আমি কখনো বাহিরের মানুষ ভাবি নি।তাই ব্যাপারটা সরাসরি বললাম।
-জি বলুন। এরপর মহিলা বিস্তারিত বলা শুরু করলেন-
-সেদিন কি হয়েছে জানো!আমার ছোট ভাইটা বেড়াতে এসেছিলো।সে অবশ্য আমার কাছে কমই আসে।সেদিন বাসায় এসে দেখলো তুমি অঞ্জুকে পড়াচ্ছ।আর তোমাকে দেখেই সে আমাকে পাগল করে ফেলছে আমি যেন ব্যাপারটা তোমাকে বলি।
-আমি এখনো বুঝতে পারছি না।কোন ব্যাপারটা আমাকে বলার জন্য সে আপনাকে পাগল করে ফেলছে!
-আমার ভাইটা নতুন ব্যবসা ধরেছে।তার জন্য মেয়ে খোঁজা হচ্ছিলো।সেদিন তোমাকে দেখেই সে তার পছন্দের কথা আমাকে জানালো।আশা করি তুমি বুঝতে পারছো যে আমি কি বলতে এবং বোঝাতে চাচ্ছি। আমি হ্যা সূচক মাথা নাড়ালাম।তিনি বললেন-
-তুমি ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করো।আমি অবশ্য জোর দিচ্ছি না। মহিলা এইবার থেমে গিয়ে উঠে পরলেন।আমি কি বলবো বুঝতে পারলাম না।বাসায় কাউকে কিছু বললাম না। পরদিন টিউশন করতে গিয়ে আমাকে বিপদে পরতে হলো।
মহিলা তার মা কে তাদের বাসায় নিয়ে আসলেন যাতে করে সে আমাকে দেখে যেতে পারে।শুধু যে তার মা এসেছেন এমনও না।তার মায়ের সাথে তার ভাইবোনও এসেছেন। অঞ্জুকে পড়াতে বসেছি আর ওমনি এই রুম ওই রুম থেকে একজন একজন করে অঞ্জুর আত্মীয়রা আসেন এবং আমাকে ‘পাত্রী দেখতে আসা’ টাইপ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে চলে যান। অথচ আমি এই সম্পর্কে আমার নিজের মতামত এখন পর্যন্ত দেই নি।তার উপর বাসায়ও এই সম্পর্কে কেউ কিছু জানে না।আমার জন্য মহা বিপদ ঘটে গেলো। অঞ্জুকে একটা অংক করতে দিয়েছিলাম।হঠাৎ তাকিয়ে দেখি সে লেখা থামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো-
-মিস,আপনাকে মামী বলে ডাকি? আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম-
-কেন ডাকবে?
-মামা যদি আপনাকে বিয়ে করে তাহলে আপনি আমার মামী।
আমি ধমক দিয়ে ওকে অংক করালাম।বাড়ির কিছু কাচ্চাবাচ্চাও রুমে উঁকি দিয়ে আমাকে দেখে দৌড়ে পালালো।এই মাসের অর্ধেক পড়িয়েছি।অঞ্জুর মাকে সেদিনই বানিয়ে বানিয়ে কিছু কথা বললাম-
-ভাবী,অঞ্জু খুব ভালো ছাত্র।ওকে যে আমার পক্ষে আর পড়ানো সম্ভব হবে না এমনটা কখনোও ভাবি নি।আসলে কাল রাতে হঠাৎ করে আমার এক দুঃসম্পর্কের আত্মীয়ের সাথে আমার কাবিন হয়ে যায়।আমার টিউশনি করানোতে তাদের খুব আপত্তি। মিথ্যেটা সত্যের মতো করে বলতে পেরেছি বলেই হয়তো মহিলা পুরোটা বিশ্বাস করে ফেললেন।তবে তিনি নিরাশ হলেন কিনা বোঝা গেলো না।সেদিন থেকে টিউশনি করা বাদ দিয়েছি।তবে দুঃখ শুধু ওই একটা কারনেই সেই মাসের অর্ধেক পড়ানো সত্ত্বেও বেতন আজও বকেয়া রয়ে গেছে।আমিও সেখানে আর যাই নি।এমনকি মহিলাও আমাকে পরে আর বেতনের কথা কখনো বলেন নি।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত