প্রথম পরিচ্ছেদ
ভূপতির কাজ করিবার কোনো দরকার ছিল না। তাঁহার টাকা যথেষ্ট ছিল, এবং দেশটাও গরম। কিন্তু গ্রহবশত তিনি কাজের লোক হইয়া জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। এইজন্য তাঁহাকে একটা ইংরাজি খবরের কাগজ বাহির করিতে হইল। ইহার পরে সময়ের দীর্ঘতার জন্য তাঁহাকে আর বিলাপ করিতে হয় নাই।
ছেলেবেলা হইতে তাঁর ইংরাজি লিখিবার এবং বস্তৃতা দিবার শখ ছিল। কোনোপ্রকার প্রয়োজন না থাকিলেও ইংরাজি খবরের কাগজে তিনি চিঠি লিখিতেন, এবং বক্তব্য না থাকিলেও সভাস্থলে দ্য কথা না বলিয়া ছাড়িতেন না।
তাঁহার মতো ধনী লোককে দলে পাইবার জন্য রাষ্ট্রনৈতিক দলপতিরা অজস্র পতুতিবাদ করাতে নিজের ইংরাজি রচনাশক্তি সম্বন্ধে তাঁহার ধারণা যথেষ্ট পরিপষ্ট श्रेझा छेठिझाझिठ् । –
অবশেষে তাঁহার উকিল শ্যালক উমাপতি ওকালতি-ব্যবসায়ে হতোদ্যম হইয়া ভগিনীপতিকে কহিল, “ভূপতি, তুমি একটা ইংরাজি খবরের কাগজ বাহির করো। তোমার যেরকম অসাধারণ” ইত্যাদি।
ভূপতি উৎসাহিত হইয়া উঠিল। পরের কাগজে পত্র প্রকাশ করিয়া গৌরব নাই, নিজের কাগজে বাধীন কলমটাকে পরাদমে ছটাইতে পারিবে। শ্যালককে সহকারী করিয়া নিতান্ত অল্পবয়সেই ভূপতি সম্পাদকের গদিতে আরোহণ করিল।
অল্পবয়সে সম্পাদকি নেশা এবং রাজনৈতিক নেশা অত্যন্ত জোর করিয়া ধরে। ভূপতিকে মাতাইয়া তুলিবার লোকও ছিল অনেক।
এইরপে সে যতদিন কাগজ লইয়া ভোর হইয়া ছিল ততদিনে তাহার বালিকা বধ চারুলতা ধীরে ধীরে যৌবনে পদাপণ করিল। খবরের কাগজের সম্পাদক এই মস্ত খবরটি ভালো করিয়া টের পাইল না। ভারত-গবমেন্টের সীমান্তনীতি ক্রমশই সফীত হইয়া সংযমের বন্ধন বিদীর্ণ করিবার দিকে যাইতেছে, ইহাই তাহার প্রধান লক্ষের বিষয় ছিল।
ধনীগহে চারলতার কোনো কম ছিল না। ফলপরিণামহীন ফলের মতো পরিপণ অনাবশ্যকতার মধ্যে পরিস্ফুট হইয়া উঠাই তাহার চেটাশন্য দীঘ দিনরাত্রির একমাত্র কাজ ছিল। তাহার কোনো অভাব ছিল না। এমন অবস্থায় সযোগ পাইলে বধ স্বামীকে লইয়া অত্যন্ত বাড়াবাড়ি করিয়া থাকে, দাপত্যলীলার সীমান্তনীতি সংসারের সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করিয়া সময় হইতে অসময়ে এবং বিহিত হইতে অবিহিতে গিয়া উত্তীণ হয়। চারলতার সে সযোগ ছিল না। কাগজের আবরণ ভেদ করিয়া স্বামীকে অধিকার করা তাহার পক্ষে দরহ।
যাবতী পীর প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করিয়া কোনো আত্মীয়া তাহাকে ভংসনা করিলে ভূপতি একবার সচেতন হইয়া কহিল, “তাই তো, চারর একজন কেউ সঙ্গিনী থাকা উচিত, ও বেচারার কিছই করিবার নাই।” 86.8 গল্পগুচ্ছ শ্যালক উমাপতিকে কহিল, “তোমার স্মীকে আমাদের এখানে আনিয়া রাখো-না — সমবয়সি স্মীলোক কেহ কাছে নাই, চারর নিশ্চয়ই ভারি ফাঁকা ঠেকে।” সীসঙ্গের অভাবই চারীর পক্ষে অত্যন্ত শোকাবহ, সম্পাদক এইরুপ বঝিল এবং শ্যালকজায়া মন্দাকিনীকে বাড়িতে আনিয়া সে নিশ্চিত হইল । যে সময়ে স্বামী স্ত্রী প্রেমোন্মেষের প্রথম অর্ণালোকে পরস্পরের কাছে অপরাপ মহিমায় চিরন্তন বলিয়া প্রতিভাত হয়, দাপত্যের সেই বর্ণপ্রভামণ্ডিত প্রত্যুষকাল অচেতন অবস্থায় কখন অতীত হইয়া গেল কেহ জানিতে পারিল না। নতনত্বের বাদ না পাইয়াই উভয়ে উভয়ের কাছে পরাতন পরিচিত অভ্যস্ত হইয়া গেল। লেখাপড়ার দিকে চারুলতার একটা স্বাভাবিক ঝোঁক ছিল বলিয়া তাহার দিনগলা অত্যন্ত বোঝা হইয়া উঠে নাই। সে নিজের চেষ্টায় নানা কৌশলে পড়িবার বন্দোবস্ত করিয়া লইয়াছিল। ভূপতির পিসতুত ভাই অমল থাড ইয়ারে পড়িতেছিল, চারলতা তাহাকে ধরিয়া পড়া করিয়া লইত; এই কমাট কু আদায় করিয়া লইবার জন্য অমলের অনেক আবদার তাহাকে সহ্য করিতে হইত। তাহাকে প্রায়ই হোটেলে খাইবার খোরাকি এবং ইংরাজি সাহিত্যগ্রন্থ কিনিবার খরচা জোগাইতে হইত। অমল মাঝে মাঝে বন্ধাদের নিমন্ত্ৰণ করিয়া খাওয়াইত, সেই যজ্ঞ-সমাধার ভার গরদক্ষিণা স্বরপ চারুলতা নিজে গ্রহণ করিত। ভূপতি চারুলতার প্রতি কোনো দাবি করিত না, কিন্তু সামান্য একটু পড়াইয়া পিসতুত ভাই অমলের দাবির অন্ত ছিল না। তাহা লইয়া চারলতা প্রায় মাঝে মাঝে কৃত্রিম কোপ এবং বিদ্রোহ প্রকাশ করিত; কিন্তু কোনো-একটা লোকের কোনো কাজে আসা এবং সেনহের উপদ্রব সহ্য করা তাহার পক্ষে অত্যাবশ্যক হইয়া উঠিয়াছিল। অন্তঃপরের খাস হাতের বননি কাপোটের জতো পরে আসে, আমার তো সহ্য হয় না— একজোড়া কাপোটের জন্তো চাই, নইলে কোনোমতেই পদমর্যাদা রক্ষা করতে १iाद्भछि मा !” চার । হাঁ, তাই বই-কি। আমি বসে বসে তোমার জন্তো সেলাই করে মরি। দাম দিচ্ছি, বাজার থেকে কিনে আনো গে যাও। অমল বলিল, “সেটি হচ্ছে না।” চার জনতা সেলাই করিতে জানে না, এবং অমলের কাছে সে কথা স্বীকার করিতেও চাহে না। কিন্তু তাহার কাছে কেহ কিছু চায় না, অমল চায়–সংসারে সেই একমাত্র প্রাথীর প্রাথনো রক্ষা না করিয়া সে থাকিতে পারে না। অমল যে সময় কালেজে যাইত সেই সময়ে সে লুকাইয়া বহী যত্নে কাপোটের সেলাই শিখিতে লাগিল। এবং অমল নিজে যখন তাহার জন্তার দরবার সম্পণে ভুলিয়া বসিয়াছে এমন সময় একদিন সন্ধ্যাবেলায় চার তাহাকে নিমন্ত্রণ করিল। গ্রীমের সময় ছাদের উপর আসন করিয়া অমলের আহারের জায়গা করা হইয়াছে। বালি উড়িয়া পড়িবার ভয়ে পিতলের ঢাকনায় থালা ঢাকা রহিয়াছে। অমল কলেজের বেশ পরিত্যাগ করিয়া মাখ ধাইয়া ফিটফাট হইয়া আসিয়া উপস্থিত হইল। অমল আসনে বসিয়া ঢাকা খলিল; দেখিল, থালায় একজোড়া নতন-বাঁধানো পশমের জনতা সাজানো রহিয়াছে। চারলতা উচ্চৈঃস্বরে হাসিয়া উঠিল। নষ্টনীড় জতা পাইয়া অমলের আশা আরও বাড়িয়া উঠিল। এখন গলাবন্ধ চাই, রেশমের রামালে ফলকাটা পাড় সেলাই করিয়া দিতে হইবে, তাহার বাহিরের ঘরে বসিবার বড়ো কেদারায় তেলের দাগ নিবারণের জন্য একটা কাজ-করা আবরণ আবশ্যক। প্রত্যেক বারেই চারুলতা আপত্তি প্রকাশ করিয়া কলহ করে এবং প্রত্যেক বারেই বহয় যত্নে ও নেহে শৌখিন আমলের শখ মিটাইয়া দেয়। অমল মাঝে মাঝে জিজ্ঞাসা করে, “বউঠান, কতদর হইল।” চারলেতা মিথ্যা করিয়া বলে, “কিছই হয় নি।” কখনও বলে, “সে আমার মনেই झिळ ना ।” কিন্তু অমল ছাড়িবার পাত্র নয়। প্রতিদিন স্মরণ করাইয়া দেয় এবং আবদার করে। নাছোড়বান্দা অমলের সেই-সকল উপদ্রব উদ্রেক করাইয়া দিবার জন্যই চার ঔদাসীন্য প্রকাশ করিয়া বিরোধের সন্টি করে এবং হঠাৎ একদিন তাহার প্রার্থনা পরেণ করিয়া দিয়া কৌতুক দেখে। ধনীর সংসারে চারকে আর কাহারও জন্য কিছই করিতে হয় না, কেবল অমল তাহাকে কাজ না করাইয়া ছাড়ে না। এই-সকল ছোটোখাটো শখের খাটানিতেই তাহার হৃদয়বৃত্তির চর্চা এবং চরিতার্থতা হইত। ভূপতির অন্তঃপরে যে একখণ্ড জমি পড়িয়া ছিল তাহাকে বাগান বলিলে অনেকটা অত্যুক্তি করা হয়। সেই বাগানের প্রধান বনপতি ছিল একটা বিলাতি আমড়াগাছ। এই ভূখণ্ডের উন্নতিসাধনের জন্য চার এবং অমলের মধ্যে একটা কমিটি বসিয়াছে। উভয়ে মিলিয়া কিছুদিন হইতে ছবি আকিয়া, ল্যান করিয়া, মহা উৎসাহে এই জমিটার উপরে একটা বাগানের কল্পনা ফলাও করিয়া তুলিয়াছে। অমল বলিল, “বউঠান, আমাদের এই বাগানে সে কালের রাজকন্যার মতো নিজের হাতে গাছে জল দিতে হবে।” * চার কহিল, “আর ঐ পশ্চিমের কোণটাতে একটা কুড়ে তৈরি করে নিতে হবে, হরিণের বাচ্ছা থাকবে ।” অমল কহিল, “আর একটি ছোটোখাটো ঝিলের মতো করতে হবে, তাতে হাঁস চরবে।” চার সে প্রস্তাবে উৎসাহিত হইয়া কহিল, “আর তাতে নীলপদ্ম দেব, আমার অনেক দিন থেকে নীলপদ্ম দেখবার সাধ আছে।” অমল কহিল, “সেই ঝিলের উপর একটি সাঁকো বেধে দেওয়া যাবে, আর ঘাটে একটি বেশ ছোটো ডিঙি থাকবে।” চার কহিল, “ঘাট অবশ্য সাদা মাবেলের হবে।” অমল পেনসিল কাগজ লইয়া, রল কাটিয়া, কম্পাস ধরিয়া, মহা আড়ম্বরে বাগানের একটা ম্যাপ অকিল। উভয়ে মিলিয়া দিনে দিনে কল্পনার সংশোধন পরিবতন করিতে করিতে বিশপাঁচশখানা নতন ম্যাপ অাঁকা হইল। ম্যাপ খাড়া হইলে কত খরচ হইতে পারে তাহার একটা এসটিমেট তৈরি হইতে লাগিল। প্রথমে সংকল্প ছিল-চার নিজের বরাদ মাসহায়া হইতে কমে ক্ৰমে বাগান তৈরি করিয়া তুলিবে; ভূপতি তো বাড়িতে কোথায় কী হইতেছে তাহা চাহিয়া দেখে না; বাগান তৈরি হইলে তাহাকে সেখানে নিমন্ত্ৰণ করিয়া আশচষা করিয়া দিবে; সে মনে করিবে, আলাদিনের প্রদীপের সাহাষ্যে জাপান দেশ হইতে একটা আসত বাগান তুলিয়া আনা হইয়াছে। কিন্তু এসটিমেট যথেষ্ট কম করিয়া ধরিলেও চারীর সংগতিতে কুলায় না। অমল তখন পনরায় ম্যাপ পরিবতন করিতে বসিল। কহিল, “তা হলে বউঠান, ঐ ঝিলটা বাদ দেওয়া যাক ৷” চার কহিল, “না না, ঝিল বাদ দিলে কিছতেই চলবে না, ওতে আমার নীলপদ্ম থাকবে।” অমল কহিল, “তোমার হরিণের ঘরে টালির ছাদ নাই দিলে। ওটা অমনি একটা সাদাসিধে খোড়ো চাল করলেই হবে।” চার অত্যন্ত রাগ করিয়া কহিল, “তা হলে আমার ও ঘরে দরকার নেই— ও থাক।” মরিশস হইতে লবঙ্গ, কনট হইতে চন্দন, এবং সিংহল হইতে দারচিনির চারা আনাইবার প্রস্তাব ছিল, অমল তাহার পরিবতে মানিকতলা হইতে সাধারণ দিশি ও বিলাতি গাছের নাম করিতেই চার মুখ ভার করিয়া বসিল; কহিল “তা হলে অামার বাগানে কাজ নেই।” এসটিমেট কমাইবার এরপে প্রথা নয়। এসটিমেটের সঙ্গে সঙ্গে কল্পনাকে খব করা চারীর পক্ষে অসাধ্য, এবং অমল মুখে যাহাই বলকে, মনে মনে তাহারও সেটা রুচিকর নয়। অমল কহিল, “তবে বউঠান, তুমি দাদার কাছে বাগানের কথাটা পাড়ো; তিনি নিশ্চয় টাকা দেবেন।” চার কহিল, “না, তাঁকে বললে মজা কী হল। আমরা দুজনে বাগান তৈরি করে তুলব। তিনি তো সাহেব-বাড়িতে ফরমাস দিয়ে ইডেন গাডেন বানিয়ে দিতে পারেন– তা হলে আমাদের পল্যানের কী হবে।” আমড়াগাছের ছায়ায় বসিয়া চার এবং অমল অসাধ্য সংকল্পের কল্পনাসখ বিস্তার করিতেছিল। চারীর ভাজ মন্দা দোতলা হইতে ডাকিয়া কহিল, “এত বেলায় বাগানে তোরা কী করছিস।” চার কহিল, “পাকা আমড়া খাঁজছি।” লখো মন্দা কহিল, “পাস যদি আমার জন্যে আনিস।” চার হাসিল, অমল হাসিল। তাহাদের সমস্ত সংকল্পগুলির প্রধান সখে এবং গৌরব এই ছিল যে, সেগুলি তাহাদের দুজনের মধ্যেই আবদ্ধ। মন্দার আর যা-কিছর গণে থাক, কল্পনা ছিল না; সে এ-সকল প্রস্তাবের রস গ্রহণ করিবে কী করিয়া। সে এই দুই সভোর সকলপ্রকার কমিটি হইতে একেবারে বাজত। অসাধ্য বাগানের এসটিমেটও কমিল না, কল্পনাও কোনো অংশে হার মানিতে চাহিল না। সুতরাং আমড়াতলার কমিটি এইভাবেই কিছুদিন চলিল। বাগানের যেখানে ঝিল হইবে, যেখানে হরিণের ঘর হইবে, যেখানে পাথরের বেদি হইবে, অমল সেখানে চিহ্ন কাটিয়া রাখিল । তাহাদের সংকলিপত বাগানে এই আমড়াতলার চার দিক কীভাবে বাঁধাইতে হইবে অমল একটি ছোটো কোদাল লইয়া তাহারই দাগ কাটিতেছিল—এমন সময় চার গাছের ছায়ায় বসিয়া বলিল, “অমল, তুমি যদি লিখতে পারতে তা হলে বেশ হত।” অমল জিজ্ঞাসা করিল, “কেন বেশ হত।” চার । তা হলে আমাদের এই বাগানের বর্ণনা করে তোমাকে দিয়ে একটা গল্প লেখাতুম। এই ঝিল, এই হরিণের ঘর, এই আমড়াতলা, সমস্তই তাতে থাকত— আমরা দুজনে ছাড়া কেউ বুঝতে পারত না, বেশ মজা হত। অমল, তুমি একবার লেখবার চেষ্টা করে দেখো-না, নিশ্চয় তুমি পারবে । অমল কহিল, “আচ্ছা, যদি লিখতে পারি তো আমাকে কী দেবে।” চার কহিল, “তুমি কী চাও।” অমল কহিল, “আমার মশারির চালে আমি নিজে লতা একে দেব, সেইটে তোমাকে আগাগোড়া রেশম দিয়ে কাজ করে দিতে হবে।” চার কহিল, “তোমার সমস্ত বাড়াবাড়ি। মশারির চালে আবার কাজ ।” মশারি জিনিসটাকে একটা শ্রীহীন কারাগারের মতো করিয়া রাখার বিরুদ্ধে অমল অনেক কথা বলিল। সে কহিল, সংসারের পনেরো-আনা লোকের যে সৌন্দৰ্যবোধ নাই এবং কুগ্ৰীতা তাহাদের কাছে কিছুমাত্র পীড়াকর নহে, ইহাই তাহার প্রমাণ । চার সে কথা তৎক্ষণাৎ মনে মনে মানিয়া লইল এবং ‘আমাদের এই দলটি লোকের নিভূত কমিটি যে সেই পনেরো-আনার অন্তগত নহে? ইহা মনে করিয়া সে খুশি হইল। কহিল, “আচ্ছা বেশ, আমি মশারির চাল তৈরি করে দেব, তুমি লেখো।” অমল রহস্যপণভাবে কহিল, “তুমি মনে কর, আমি লিখতে পারি নে?” দেখাও।” অমল। আজ থাক, বউঠান। চার্য। না, আজই দেখাতে হবে- মাথা খাও, তোমার লেখা নিয়ে এসো গে। চারকে তাহার লেখা শোনাইবার অতিব্যগ্রতাতেই অমলকে এতদিন বাধা দিতেছিল। পাছে চার না বোঝে, পাছে তাহার ভালো না লাগে, এ সংকোচ সে তাড়াইতে পারিতেছিল না। আজ খাতা আনিয়া একটুখানি লাল হইয়া, একটুখানি কাশিয়া, পড়িতে আরম্ভ করিল। চার গাছের গড়িতে হেলান দিয়া ঘাসের উপর পা ছড়াইয়া শুনিতে লাগিল। প্রবন্ধের বিষয়টা ছিল ‘আমার খাতা। অমল লিখিয়াছিল-‘হে আমার শত্র খাতা, আমার কল্পনা এখনওঁ তোমাকে পশ করে নাই। সতিকাগহে ভাগ্যপরাষ প্রবেশ করিবার প্বে শিশর ললাটপট্রের ন্যায় তুমি নিম’ল, তুমি রহস্যময়। যেদিন তোমার শেষ পাঠার শেষ ছত্রে উপসংহার লিখিয়া দিব সেদিন আজ কোথায়। তোমার এই শত্র শিশপত্রগুলি সেই চিরদিনের জন্য মসীচিহিত সমাপ্তির কথা আজ বনেও কল্পনা করিতেছে না – ইত্যাদি অনেকখানি লিখিয়াছিল। চার তরচ্ছোয়ায় বসিয়া তবধ হইয়া শুনিতে লাগিল। পড়া শেষ হইলে ক্ষণকাল চুপ করিয়া থাকিয়া কহিল, “তুমি আবার লিখতে পার না।” সেদিন সেই গাছের তলায় অমল সাহিত্যের মাদকরস প্রথম পান করিল; সাকী ছিল নবীনা, রসনাও ছিল নবীন এবং অপরাহের আলোক দীঘ ছায়াপাতে রহস্যময় হইয়া আসিয়াছিল। চার বলিল, “অমল, গোটাকতক আমড়া পেড়ে নিয়ে যেতে হবে, নইলে মন্দাকে কী হিসেব দেব।” মঢ়ে মন্দাকে তাহাদের পড়াশনা এবং আলোচনার কথা বলিতে প্রবত্তিই হয় না, সতরাং আমড়া পাড়িয়া লইয়া যাইতে হইল। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ বাগানের সংকল্প তাহাদের অন্যান্য অনেক সংকল্পের ন্যায় সীমাহীন কল্পনাক্ষেত্রের মধ্যে কখন হারাইয়া গেল তাহা অমল এবং চার লক্ষও করিতে পারিল না। এখন অমলের লেখাই তাহাদের আলোচনা ও পরামশের প্রধান বিষয় হইয়া উঠিল। অমল আসিয়া বলে, “বোঠান, একটা বেশ চমৎকার ভাব মাথায় এসেছে।” চার উৎসাহিত হইয়া উঠে; বলে, “চলো, আমাদের দক্ষিণের বারান্দায়-এখানে এখনই মন্দা পান সাজতে আসবে।” চার কাশমীরি বারান্দায় একটি জীণ বেতের কেদারায় আসিয়া বসে এবং অমল রেলিঙের নিচেকার উচ্চ অংশের উপর বসিয়া পা ছড়াইয়া দেয়। বলা শক্ত। গোলমাল করিয়া সে যাহা বলিত তাহা পাট বুঝা কাহারও সাধ্য নহে। অমল নিজেই বার বার বলিত, “বোঠান, তোমাকে ভালো বোঝাতে পারছি নে ৷” চার বলিত, “না, আমি অনেকটা বুঝতে পেরেছি; তুমি এইটে লিখে ফেলো, দেরি কোরো না।” সে খানিকটা বুঝিয়া, খানিকটা না বুঝিয়া, অনেকটা কল্পনা করিয়া, অনেকটা অমলের ব্যক্ত করিবার আবেগের দ্বারা উত্তেজিত হইয়া, মনের মধ্যে কী-একটা খাড়া করিয়া তুলিত, তাহাতেই সে সুখ পাইত এবং আগ্রহে অধীর হইয়া উঠিত। চার সেইদিন বিকালেই জিজ্ঞাসা করিত, “কতটা লিখলে।” অমল বলিত, “এরই মধ্যে কি লেখা যায়।” চার পরদিন সকালে ঈষৎ কলহের স্বরে জিজ্ঞাসা করিত, “কই, তুমি সেটা লিখলে না ?” অমল বলিত, “রোসো, আর-একটা ভাবি।” চার রাঙ্ক করিয়া বলিত, “তবে যাও!” বিকালে সেই রাগ ঘনীভূত হইয়া চার যখন কথা বধ করিবার জো করিত তখন অমল লেখা কাগজের একটা অংশ রমাল বাহির করিবার ছলে পকেট হইতে একটুখানি বাহির করিত। মহাতে চারর মৌন ভাঙিয়া গিয়া সে বলিয়া উঠিত, “ঐ-যে তুমি লিখেছ ! আমাকে ফাঁকি ! দেখাও ” অমল বলিত, “এখনও শেষ হয় নি, আর-একটা লিখে শোনাব।” চার। না, এখনই শোনাতে হবে। অমল এখনই শোনাইবার জন্যই ব্যস্ত; কিন্তু চারকে কিছুক্ষণ কাড়াকড়ি না করাইয়া সে শোনাইত না। তার পরে অমল কাগজখানি হাতে করিয়া বসিয়া প্রথমটা একটুখানি পাতা ঠিক করিয়া লইত, পেনসিল লইয়া দুই-এক জায়গায় দটো-একটা সংশোধন করিতে থাকিত, ততক্ষণ চারর চিত্ত পলকিত কৌতুহলে জলভারনত মেঘের মতো সেই কাগজ কয়খানির দিকে ঝ:কিয়া রহিত। অমল দুই-চারি প্যারাগ্রাফ যখন যাহা লেখে তাহা যতটুকুই হোক চারকে সদ্য-সদ্য শোনাইতে হয়। বাকি অলিখিত অংশটুকু আলোচনা এবং কল্পনায় উভয়ের মধ্যে মথিত হইতে থাকে। এতদিন দুজনে আকাশকুসুমের চয়নে নিযুক্ত ছিল, এখন কাব্যকুসুমের চাষ আরম্ভ হইয়া উভয়ে আর সমস্তই ভুলিয়া গেল। একদিন অপরাহুে অমল কালেজ হইতে ফিরিলে তাহার পকেটটা কিছু অতিরিক্ত ভরা বলিয়া বোধ হইল। অমল যখন বাড়িতে প্রবেশ করিল, তখনই চার অন্তঃপরের গবাক্ষ হইতে তাহার পকেটের পণ্যতার প্রতি লক্ষ করিয়াছিল। অমল অন্যদিন কালেজ হইতে ফিরিয়া বাড়ির ভিতর আসিতে দেরি করিত না; আজ সে তাহার ভরা পকেট লইয়া বাহিরের ঘরে প্রবেশ করিল, শীঘ্ন আসিবার নাম করিল না। চার অন্তঃপুরের সীমান্তদেশে আসিয়া অনেকবার তালি দিল, কেহ শুনিল না। চার কিছ রাগ করিয়া তাহার বারান্দায় মন্মথ দত্তর এক বই হাতে করিয়া পড়িবার চেন্টা করিতে লাগিল । মন্মথ দত্ত নতেন গ্রন্থকার। তাহার লেখার ধরন অনেকটা অমলেরই মতো, এইজন্য অমল তাহাকে কখনও প্রশংসা করিত না ; মাঝে মাঝে চারার কাছে তাহার লেখা বিকৃত উচ্চারণে পড়িয়া বিদ্রুপ করিত। চার অমলের নিকট হইতে সে বই কাড়িয়া লইয়া অবজ্ঞাভরে দরে ফেলিয়া দিত। আজ যখন অমলের পদশব্দ শুনিতে পাইল তখন সেই মন্মথ দত্তর কলকণ্ঠ’নামক বই মাথের কাছে তুলিয়া ধরিয়া চার অত্যন্ত একাগ্রভাবে পড়িতে আরম্ভ করিল। অমল বারান্দায় প্রবেশ করিল, চার লক্ষও করিল না। অমল কহিল, “কী বোমল, কণী পড়া হচ্ছে।” চারকে নিরক্তের দেখিয়া অমল চৌকির পিছনে আসিয়া বইটা দেখিল। কছিল, “মন্মথ দত্তর গলগণ্ড !” চার কহিল, “আঃ, বিরক্ত কোরো না, আমাকে পড়তে দাও।” পিঠের কাছে দাঁড়াইয়া অমল ব্যঙ্গস্বরে পড়িতে লাগিল, “আমি তৃণ, ক্ষুদ্র তৃণ; ভাই রভাবয় মস্তক আমি আকাশে তুলিতে পারি না, বসন্তের কোকিল আমাকে আশ্রয় করিয়া কুহকবরে জগং মাতায় না—তব ভাই অশোক, তোমার ঐ পাপিত উচ্চ শাখা হইতে তুমি আমাকে উপেক্ষা করিয়ো না; তোমার পায়ে পড়িয়া আছি আমি তৃণ, তব, আমাকে তুচ্ছ করিয়ো না।” অমল এইটুকু বই হইতে পড়িয়া তার পরে বিদুপ করিয়া থানাইয়া বজিতে লাগিল, “আমি কলার কাঁদি, কাঁচকলার কাঁদি, ভাই কুমাণ্ড, ভাই গহচালবিহারী কুমাণ্ড, আমি নিতান্তই কাঁচকলার কাঁদি।” চার কৌতুহলের তাড়নায় রাগ রাখিতে পারিল না; হাসিয়া উঠিয়া বই ফেলিয়া দিয়া কহিল, “তুমি ভারি হিংসটে, নিজের লেখা ছাড়া কিছু পছন্দ হয় না।” অমল কহিল, “তোমার ভারি উদারতা, তৃণটি পেলেও গিলে খেতে চাও।” চার । আচ্ছা মশায়, ঠাট্টা করতে হবে না; পকেটে কী আছে বের করে ফেলো । অমল। কী আছে আন্দাজ করো। অনেকক্ষণ চারকে বিরক্ত করিয়া অমল পকেট হইতে সরোরহ-নামক বিখ্যাত মাসিক পত্র বাহির করিল। চার দেখিল, কাগজে অমলের সেই খাতা’-নামক প্রবন্ধটি বাহির হইয়াছে। চার দেখিয়া চুপ করিয়া রহিল। অমল মনে করিয়াছিল, তাহার বোঠান খব খুশি হইবে। কিন্তু খুশির বিশেষ কোনো লক্ষণ না দেখিয়া বলিল, “সরোরাহ পরে যে-সে লেখা বের হয় না।” অমল এটা কিছু বেশি বলিল। যে-কোনোপ্রকার চলনসই লেখা পাইলে সম্পাদক ছাড়েন না। কিন্তু অমল চারকে বুঝাইয়া দিল, সম্পাদক বড়োই কড়া লোক, এক শো প্রবন্ধের মধ্যে একটা বাছিয়া লন । শুনিয়া চার খুশি হইবার চেষ্টা করিতে লাগিল কিন্তু খুশি হইতে পারিল না। কিসে যে সে মনের মধ্যে আঘাত পাইল তাহা বুঝিয়া দেখিবার চেষ্টা করিল ; কোনো সংগত কারণ বাহির হইল না। অমলের লেখা অমল এবং চার দুজনের সম্পত্তি। অমল লেখক এবং চার পাঠক । তাহার গোপনতাই তাহার প্রধান রস। সেই লেখা সকলে পড়িবে এবং অনেকেই প্রশংসা করিবে, ইহাতে চারকে যে কেন এতটা পীড়া দিতেছিল তাহা সে ভালো করিয়া বুঝিল না। কিন্তু লেখকের আকাঙ্ক্ষা একটিমাত্র পাঠকে অধিকদিন মেটে না। অমল তাহার লেখা ছাপাইতে আরম্ভ করিল। প্রশংসাও পাইল । মাঝে মাঝে ভক্তের চিঠিও আসিতে লাগিল। অমল সেগুলি তাহার বোঠানকে দেখাইত। চার তাহাতে খশিও হইল, কস্টও পাইল। এখন অমলকে লেখায় প্রবত্ত করাইবার জন্য একমাত্র তাহারই উৎসাহ ও উত্তেজনার প্রয়োজন রহিল না। অমল মাঝে মাঝে কদাচিৎ নামস্বাক্ষরবিহীন রমণীর চিঠিও পাইতে লাগিল। তাহা লইয়া চার তাহাকে ঠাট্টা করিত কিন্তু সুখ পাইত না। হঠাৎ তাহাদের কমিটির রন্ধ বার খালিয়া বাংলাদেশের পাঠকমণ্ডলী তাহাদের দজনকার মাঝখানে আসিয়া দাঁড়াইল। ভূপতি একদিন অবসরকালে কহিল, “তাই তো চার্য, আমাদের অমল যে এমন ভালো লিখতে পারে তা তো আমি জানতুম না।” ভূপতির প্রশংসায় চার খুশি হইল। অমল ভূপতির আশ্রিত, কিন্তু অন্য আশ্রিতদের সহিত তাহার অনেক প্রভেদ আছে, এ কথা তাহার স্বামী বুঝিতে পারিলে চার যেন গবা অনুভব করে। তাহার ভাবটা এই যে, অমলকে কেন যে আমি এতটা স্নেহ আদর করি এতদিনে তোমরা তাহা বুঝিলে; আমি অনেকদিন আগেই অমলের মর্যাদা বঝিয়াছিলাম, অমল কাহারও অবজ্ঞার পাত্র নহে।’ চার জিজ্ঞাসা করিল, “তুমি তার লেখা পড়েছ ?” ভূপতি কহিল, “হাঁ—না, ঠিক পড়ি নি। সময় পাই নি। কিন্তু আমাদের নিশিকান্ত পড়ে খাব প্রশংসা করছিল। সে বাংলা লেখা বেশ বোঝে।” ভূপতির মনে অমলের প্রতি একটি সম্মানের ভাব জাগিয়া উঠে, ইহা চারর একান্ত ইচ্ছা। তৃতীয় পরিচ্ছেদ উমাপদ ভূপতিকে তাহার কাগজের সঙ্গে অন্য পাঁচরকম উপহার দিবার কথা বুঝাইতেছিল। উপহারে যে কী করিয়া লোকসান কাটাইয়া লাভ হইতে পারে, তাহা ভূপতি কিছুতেই বঝিতে পারিতেছিল না। . চার একবার ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিয়াই উমাপদকে দেখিয়া চলিয়া গেল। আবার কিছুক্ষণ ঘুরিয়া ফিরিয়া ঘরে আসিয়া দেখিল, দুইজনে হিসাব লইয়া তকে প্রবত্ত । উমাপদ চারীর অধৈয দেখিয়া কোনো ছতা করিয়া বাহির হইয়া গেল। ভূপতি হিসাব লইয়া মাথা ঘরাইতে লাগিল। চার ঘরে ঢুকিয়া বলিল, “এখনও বুঝি তোমার কাজ শেষ হল না ? দিনরাত ঐ একখানা কাগজ নিয়ে যে তোমার কী করে কাটে, আমি তাই ভাবি।” ভূপতি হিসাব সরাইয়া রাখিয়া একটুখানি হাসিল। মনে মনে ভাবিল, বাস্তবিক, চার্যর প্রতি আমি মনোযোগ দিবার সময়ই পাই না, বড়ো অন্যায়। ও বেচারার পক্ষে সময় কাটাইবার কিছুই নাই।’ ভূপতি স্নেহপণাস্তবরে কহিল, “আজ যে তোমার পড়া নেই! মাস্টারটি বুঝি পালিয়েছেন ? তোমার পাঠশালার সব উলটো নিয়ম— ছাত্রীটি পথিপত্র নিয়ে প্রস্তুত, মাস্টার পলাতক । আজকাল অমল তোমাকে আগেকার মতো নিয়মিত পড়ায় ব’লে তো বোধ হয় না।” চার কহিল, “আমাকে পড়িয়ে অমলের সময় নষ্ট করা কি উচিত। অমলকে তুমি বঝি একজন সামান্য প্রাইভেট টিউটার পেয়েছ ?” ভূপতি চারার কটিদেশ ধরিয়া কাছে টানিয়া কহিল, “এটা কি সামান্য প্রাইভেট টিউটারি হল। তোমার মতো বউঠানকে যদি পড়াতে পেতুম তা হলে–” চার। ইস ইস তুমি আর বোলো না ! স্বামী হয়েই রক্ষে নেই তো আরও কিছ! ভূপতি ঈষৎ একট, আহত হইয়া কহিল, “আচ্ছা, কাল থেকে আমি নিশ্চয় তোমাকে পড়াব। তোমার বইগুলো আনো দেখি, কী তুমি পড় একবার দেখে নিই।” চার । ঢের হয়েছে, তোমার আর পড়াতে হবে না। এখনকার মতো তোমার খবরের কাগজের হিসেরটা একটা রাখবে ? এখন আর-কোনো দিকে মন দিতে পারবে কি না বলো । ভূপতি কহিল, “নিশ্চয় পারব। এখন তুমি আমার মনকে যে দিকে ফেরাতে চাও সেই দিকেই ফিরবে।” চার । আচ্ছা বেশ, তা হলে অমলের এই লেখাটা একবার পড়ে দেখো কেমন চমৎকার হয়েছে। সম্পাদক অমলকে লিখেছে এই লেখা পড়ে নবগোপালবাব তাকে বাংলার রাস্কিন নাম দিয়েছেন। শনিয়া ভূপতি কিছু সংকুচিতভাবে কাগজখানা হাতে করিয়া লইল। খলিয়া দেখিল, লেখাটির নাম আষাঢ়ের চাঁদ। গত দুই সপ্তাহ ধরিয়া ভূপতি ভারতগবমেন্টের বাজেট-সমালোচনা লইয়া বড়ো বড়ো অঙ্কপাত করিতেছিল, সেই-সকল অঙ্ক বহুপদ কীটের মতো তাহার মস্তিকের নানা বিবরের মধ্যে সঞ্চরণ করিয়া ফিরিতেছিল— এমন সময়ে হঠাৎ বাংলা ভাষায় আষাঢ়ের চাঁদ প্রবন্ধ আগাগোড়া পড়িবার জন্য তাহার মন প্রস্তুত ছিল না। প্রবন্ধটিও নিতান্ত ছোটো নহে। লেখাটা এইরপে শরে হইয়াছে— ‘আজ কেন আষাঢ়ের চাঁদ সারারাত মেঘের মধ্যে এমন করিয়া লুকাইয়া বেড়াইতেছে! যেন বগলোক হইতে সে কী চুরি করিয়া আনিয়াছে, যেন তাহার কলঙ্ক ঢাকিবার স্থান নাই। ফালগন মাসে যখন আকাশের একটি কোণেও মুষ্টিপরিমাণ মেঘ ছিল না তখন তো জগতের চক্ষের সম্মুখে সে নিলজের মতো উন্মুক্ত আকাশে আপনাকে প্রকাশ করিয়াছিল— আর আজ তাহার সেই ঢলঢল হাসিখানি–শিশর সবনের মতো, প্রিয়ার সমতির মতো, সরে্বরী শচীর অলকবিলম্বিত মুক্তার মালার মতো— ভূপতি মাথা চুলকাইয়া কহিল, “বেশ লিখেছে। কিন্তু আমাকে কেন। এ-সব কবিত্ব কি আমি বুঝি।” চার সংকুচিত হইয়া ভূপতির হাত হইতে কাগজখানা কাড়িয়া লইয়া কহিল, “তুমি তবে কী বোঝ।” ভূপতি কহিল, “আমি সংসারের লোক, আমি মানুষ বুঝি ” চার কহিল, “মানুষের কথা বঝি সাহিত্যের মধ্যে লেখে না ?” ভূপতি। ভুল লেখে। তা ছাড়া মানুষ যখন সশরীরে বর্তমান তখন বানানো কথার মধ্যে তাকে খুজে বেড়াবার দরকার : বলিয়া চারুলতার চিবকে ধরিয়া কহিল, “এই যেমন আমি তোমাকে বুঝি, কিন্তু সেজন্য কি ‘মেঘনাদবধ কবিকঙ্কণচণ্ডী আগাগোড়া পড়ার দরকার আছে।” ভূপতি কাব্য বোঝে না বলিয়া অহংকার করিত। তব অমলের লেখা ভালো করিয়া না পড়িয়াও তাহার প্রতি মনে মনে ভূপতির একটা শ্রদ্ধা ছিল। ভূপতি ভাবিত, বলিবার কথা কিছুই নাই অথচ এত কথা অনগ’ল বানাইয়া বলা সে তো আমি মাথা কুটিয়া মরিলেও পারিতাম না। অমলের পেটে যে এত ক্ষমতা ছিল তাহা কে জানিত।’ ভূপতি নিজের রসজ্ঞতা অস্বীকার করিত কিন্তু সাহিত্যের প্রতি তাহার কৃপণতা ছিল না। দরিদ্র লেখক তাহাকে ধরিয়া পড়িলে বই ছাপিবার খরচ ভূপতি দিত, কেবল বিশেষ করিয়া বলিয়া দিত, “আমাকে যেন উৎসগ করা না হয়।” বাংলা ছোটো বড়ো সমস্ত সাপ্তাহিক এবং মাসিক পত্র, খ্যাত অখ্যাত পাঠ্য অপাঠা সমসত বই সে কিনিত । বলিত, “একে পড়ি না, তার পরে যদি না কিনি তবে পাপও করিব প্রায়শ্চিত্তও হইবে না।” পড়িত না, বলিয়াই মন্দ বইয়ের প্রতি তাহার লেশমাত্র বিদ্বেষ ছিল না, সেইজন্য তাহার বাংলা লাইব্রেরি গ্রন্থে পরিপাণ ছিল। অমল ভূপতির ইংরাজি প্রফ-সংশোধনকাযে সাহায্য করিত ; কোনো-একটা কাপির দবোধ্য হসন্তাক্ষর দেখাইয়া লইবার জন্য সে একতাড়া কাগজপত্র লইয়া ঘরে ঢাকিল। ভূপতি হাসিয়া কহিল, “অমল, তুমি আষাঢ়ের চাঁদ আর ভাদ্র স্বাসের পাকা নষ্টনীড় তালের উপর যত-খুশি লেখো, আমি তাতে কোনো আপত্তি করি নে— আমি কারও স্বাধীনতায় হাত দিতে চাই নে–কিন্তু আমার স্বাধীনতায় কেন হস্তক্ষেপ। সেগুলো আমাকে না পড়িয়ে ছাড়বেন না, তোমার বোঠানের এ কী অত্যাচার।” অমল হাসিয়া কহিল, “তাই তো বোঠান, আমার লেখাগুলো নিয়ে তুমি যে দাদাকে জলম করবার উপায় বের করবে, এমন জানলে আমি লিখতুম না।” সাহিত্যরসে বিমুখ ভূপতির কাছে আনিয়া তাহার অত্যন্ত দরদের লেখাগুলিকে অপদস্থ করাতে অমল মনে মনে চারর উপর রাগ করিল এবং চার তৎক্ষণাৎ তাহা বঝিতে পারিয়া বেদনা পাইল। কথাটাকে অন্য দিকে লইয়া যাইবার জন্য ভূপতিকে কহিল, “তোমার ভাইটির একটি বিয়ে দিয়ে দাও দেখি, তা হলে আর লেখার উপদ্রব সহ্য করতে হবে না।” ভূপতি কহিল, “এখনকার ছেলেরা আমাদের মতো নিবোধ নয়। তাদের যত কবিত্ব লেখায়, কাজের বেলায় সেয়ানা। কই, তোমার দেওরকে তো বিয়ে করতে রাজি করাতে পারলে না।” চার চলিয়া গেলে ভূপতি অমলকে কহিল, “অমল, আমাকে এই কাগজের হাঙ্গামে থাকতে হয়, চার বেচারা বড়ো একলা পড়েছে। কোনো কাজকর্ম নেই, মাঝে মাঝে আমার এই লেখবার ঘরে উকি মেরে চলে যায়। কী করব বলো। তুমি, অমল, ওকে একটা পড়াশুনোয় নিযুক্ত রাখতে পারলে ভালো হয়। মাঝে মাঝে চারকে যদি ইংরাজি কাব্য থেকে তজমা করে শোনাও তা হলে ওর উপকারও হয়, ভালোও লাগে । চারুর সাহিত্যে বেশ রচি আছে।” অমল কহিল, “তা আছে। বোঠান যদি আরও একট পড়াশুনো করেন তা হলে আমার বিশ্বাস উনি নিজে বেশ ভালো লিখতে পারবেন।” ভূপতি হাসিয়া কহিল, “ততটা আশা করি নে, কিন্তু চার বাংলা লেখার ভালোমন্দ আমার চেয়ে ঢের বুঝতে পারে।” অমল । ওঁর কলপনাশক্তি বেশ আছে, সত্ৰীলোকের মধ্যে এমন দেখা যায় না। ভূপতি। পরেষের মধ্যেও কম দেখা যায়, তার সাক্ষী আমি। আচ্ছা, তুমি তোমার বউঠাকরনকে যদি গড়ে তুলতে পার আমি তোমাকে পারিতোষিক দেব। অমল। কণী দেবে শুনি। ভূপতি। তোমার বউঠাকরনের জড়ি একটি খুজে-পেতে এনে দেব। অমল। আবার তাকে নিয়ে পড়তে হবে! চিরজীবন কি গড়ে তুলতেই কাটাব। দটি ভাই আজকালকার ছেলে, কোনো কথা তাহাদের মুখে বাধে না। চতুর্থ পরিচ্ছেদ পাঠকসমাজে প্রতিপত্তি লাভ করিয়া অমল এখন মাথা তুলিয়া উঠিয়াছে। আগে সে স্কুলের ছাত্রটির মতো থাকিত, এখন সে যেন সমাজের গণ্যমান্য মানুষের মতো হইয়া উঠিয়াছে। মাঝে মাঝে সভায় সাহিত্যপ্রবন্ধ পাঠ করে—সম্পাদক ও সম্পাদকের দত তাহার ঘরে আসিয়া বসিয়া থাকে, তাহাকে নিমন্ত্ৰণ করিয়া খাওয়ায়, নানা সভার সভ্য ও সভাপতি হইবার জন্য তাহার নিকট অনুরোধ আসে, ভূপতির ঘরে দাসদাসী 8总8 গল্পগুচ্ছ আত্মীয়স্বজনের চক্ষে তাহার প্রতিষ্ঠাসথান অনেকটা উপরে উঠিয়া গেছে। মন্দাকিনী এতদিন তাহাকে বিশেষ একটা-কেহ বলিয়া মনে করে নাই। অমল ও চারীর হাস্যালাপ-আলোচনাকে সে ছেলেমানষি বলিয়া উপেক্ষা করিয়া পান সাজিত ও ঘরের কাজকম করিত ; নিজেকে সে উহাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং সংসারের পক্ষে আবশ্যক বলিয়াই জানিত। অমলের পান খাওয়া অপরিমিত ছিল। মন্দার উপর পান সাজিবার ভার থাকাতে সে পানের অষথা অপব্যয়ে বিরক্ত হইত। অমলে চারতে ষড়যন্ত্র করিয়া মন্দার পানের ভাণ্ডার প্রায়ই লঠ করিয়া আনা তাহাদের একটা আমোদের মধ্যে ছিল। কিন্তু এই শৌখিন চোরদটির চৌয পরিহাস মন্দার কাছে আমোদজনক বোধ হইত না। আসল কথা, একজন আশ্রিত অন্য আশ্রিতকে প্রসন্নচক্ষে দেখে না। অমলের জন্য মন্দাকে যেটুকু গহকম অতিরিক্ত করিতে হইত সেটুকুতে সে যেন কিছু অপমান বোধ করিত। চার অমলের পক্ষপাতী ছিল বলিয়া মুখ ফুটিয়া কিছু বলিতে পারিত না, কিন্তু অমলকে অবহেলা করিবার চেষ্টা তাহার সর্বদাই ছিল। সুযোগ পাইলেই দাসদাসীদের কাছেও গোপনে অমলের নামে খোঁচা দিতে সে ছাড়িত না। তাহারাও যোগ দিত । কিন্তু অমলের যখন অভুত্থান আরম্ভ হইল তখন মন্দার একট চমক লাগিল। সে অমল এখন আর নাই। এখন তাহার সংকুচিত নম্রতা একেবারে ঘুচিয়া গেছে, অপরকে অবজ্ঞা করিবার অধিকার এখন যেন তাহারই হাতে । সংসারে প্রতিষ্ঠা প্রাপ্ত হইয়া যে পরষ অসংশয়ে অকুষ্ঠিতভাবে নিজেকে প্রচার করিতে পারে, যে লোক একটা নিশ্চিত অধিকার লাভ করিয়াছে, সেই সমথ পরিষে সহজেই নারীর দটি আকর্ষণ করিতে পারে। মন্দা যখন দেখিল অমল চারি দিক হইতেই শ্রদ্ধা পাইতেছে তখন সেও অমলের উচ্চ মস্তকের দিকে মুখ তুলিয়া চাহিল। অমলের তরুণ মুখে নবগৌরবের গবোজবল দীপিত মন্দার চক্ষে মোহ আনিল ; সে যেন অমলকে নতন করিয়া দেখিল। এখন আর পান চুরি করিবার প্রয়োজন রহিল না। অমলের খ্যাতিলাভে চারীর এই আর-একটা লোকসান ; তাহাদের ষড়যন্ত্রের কৌতুকবন্ধনটুকু বিচ্ছিন্ন হইয়া গেল ; পান এখন আমলের কাছে আপনি আসিয়া পড়ে, কোনো অভাব হয় না। তাহা ছাড়া তাহাদের দইজনে-গঠিত দল হইতে মন্দাকিনীকে নানা কৌশলে দরে রাখিয়া তাহারা যে আমোদ বোধ করিত তাহাও নষ্ট হইবার উপক্রম হইয়াছে। মন্দাকে তফাতে রাখা কঠিন হইল। অমল যে মনে করিবে চারই তাহার একমাত্র বন্ধ ও সমজদার, ইহা মন্দার ভালো লাগিত না। পবেীকৃত অবহেলা সে সদে আসলে শোধ দিতে উদ্যত। সুতরাং অমলে চারতে মুখোমুখি হইলেই মন্দা কোনো ছলে মাঝখানে আসিয়া ছায়া ফেলিয়া গ্রহণ লাগাইয়া দিত। হঠাৎ মন্দার এই পরিবতন লইয়া চার তাহার অসাক্ষাতে যে পরিহাস করিবে সে অবসরটকু পাওয়া শক্ত হইল। মন্দার এই অনাহত প্রবেশ চারার কাছে যত বিরক্তিকর বোধ হইত অমলের কাছে ততটা বোধ হয় নাই, এ কথা বলা বাহুল্য। বিমুখ রমণীর মন ক্রমশ তাহার দিকে যে ফিরিতেছে, ইহাতে ভিতরে ভিতরে সে একটা আগ্রহ অনুভব করিতেছিল। কিন্তু চার যখন দরে হইতে মন্দাকে দেখিয়া তীব্র মদ স্বরে বলিত, ঐ আসছেন তখন অমলও বলিত, তাই তো, জালালে দেখছি।’ পথিবীর অন্য-সকল নষ্টনীড় 896; সঙ্গের প্রতি অসহিষ্ণতা প্রকাশ করা তাহাদের একটা দস্তুর ছিল ; আমল সেটা হঠাৎ কী বলিয়া ছাড়ে। অবশেষে মন্দাকিনী নিকটবতিনী হইলে অমল যেন কল বাটপাড়ির লক্ষণ কিছু দেখলে!” মন্দা। যখন চাইলেই পাও, ভাই, তখন চুরি করবার দরকার! অমল। চেয়ে পাওয়ার চেয়ে তাতে সুখ বেশি। মন্দা। তোমরা কী পড়ছিলে পড়ো-না, ভাই। থামলে কেন । পড়া শুনতে আমার বেশ লাগে । ইতিপবে পাঠানরোগের জন্য খ্যাতি অজন করিতে মন্দার কিছুমাত্র চেষ্টা দেখা যায় নাই, কিন্তু ‘কালোহি বলবত্তরঃ। চারার ইচ্ছা নহে, অরসিকা মন্দার কাছে অমল পড়ে, অমলের ইচ্ছা মন্দাও তাহার লেখা শোনে । চার। অমল কমলাকাতের দপ্তরের সমালোচনা লিখে এনেছে, সে কি তোমার— মন্দা। হলেমই বা মলখা, তব শনলে কি একেবারেই বঝেতে পারি নে। তখন আর-একদিনের কথা অমলের মনে পড়িল। চারতে মন্দাতে বিন্তি খেলিতেছে, সে তাহার লেখা হাতে করিয়া খেলাসভায় প্রবেশ করিল। চারকে শনাইবার জন্য সে অধীর, খেলা ভাঙিতেছে না দেখিয়া সে বিরক্ত। অবশেষে বলিয়া উঠিল, “তোমরা তবে খেলো বউঠান, আমি অখিলবাবকে লেখাটা শুনিয়ে আসি গে।” চার অমলের চাদর চাপিয়া কহিল, “আঃ, বোসো-না, যাও কোথায়।” বলিয়া তাড়াতাড়ি হারিয়া খেলা শেষ করিয়া দিল । মন্দা বলিল, “তোমাদের পড়া আরম্ভ হবে বঝি ? তবে আমি উঠি।” চার ভদ্রতা করিয়া কহিল, “কেন, তুমিও শোনো-না, ভাই ।” মন্দা। না ভাই, আমি তোমাদের ও-সব ছাইপাশ কিছুই বুঝি নে ; আমার কেবল ঘমে পায় – বলিয়া সে অকালে খেলাভঙ্গে উভয়ের প্রতি অত্যন্ত বিরক্ত হইয়া চলিয়া গেল । সেই মন্দা আজ কমলাকাতের সমালোচনা শনিবার জন্য উৎসকে অমল কহিল, “তা বেশ তো, মন্দা-বউঠান, তুমি শনবে সে তো আমার সৌভাগ্য।” বলিয়া পাত উলটাইয়া আবার গোড়া হইতে পড়িবার উপক্ৰম করিল ; লেখার আরম্ভে সে অনেকটা পরিমাণ রস ছড়াইয়াছিল, সেটুকু বাদ দিয়া পড়িতে তাহার প্রবত্তি হইল না। চার তাড়াতাড়ি বলিল, “ঠাকুরপো, তুমি যে বলেছিলে জাহ্নবী লাইব্রেরি থেকে পরোনো মাসিক পত্র কতকগুলো এনে দেবে।” অমল । সে তো আজ নয় । চার। আজই তো। বেশ! ভুলে গেছ বুঝি ? অমল। ভুলব কেন। তুমি যে বলেছিলে— চার। আচ্ছা বেশ, এনো না। তোমরা পড়ো। আমি যাই, পরেশকে লাইব্রেরিতে পাঠিয়ে দিই গে।—বলিয়া চার উঠিয়া পড়িল। অমল বিপদ আশংকা করিল। মন্দা মনে মনে বঝিল এবং মহাতের মধ্যেই চার্যর প্রতি তাহার মন বিষাক্ত হইয়া উঠিল। চার চলিয়া গেলে অমল যখন উঠিবে কি 8心曾 গল্পগুচ্ছ না ভাবিয়া ইতস্তত করিতেছিল মন্দা ঈষৎ হাসিয়া কহিল, “যাও ভাই, মান ভাঙাও গে ; চার রাগ করেছে। আমাকে লেখা শোনালে মশকিলে পড়বে।” ইহার পরে অমলের পক্ষে ওঠা অত্যন্ত কঠিন। অমল চারীর প্রতি কিছ রন্টে হইয়া কহিল, “কেন, মশকিল কিসের।” বলিয়া লেখা বিস্তৃত করিয়া ধরিয়া পড়িবার উপক্ৰম করিল। মন্দা দই হাতে তাহার লেখা আচ্ছাদন করিয়া বলিল, “কাজ নেই ভাই, পোড়ো না।” বলিয়া, যেন অশ্র সম্বরণ করিয়া অন্যত্র চলিয়া গেল। পঞ্চম পরিচ্ছেদ চার নিমন্ত্রণে গিয়াছিল। মন্দা ঘরে বসিয়া চুলের দড়ি বিনাইতেছিল। “বউঠান” বলিয়া অমল ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিল। মন্দা নিশ্চয় জানিত যে, চারর নিমন্ত্রণে যাওয়ার সংবাদ অমলের অগোচর ছিল না ; হাসিয়া কহিল, “আহা অমলবাব, কাকে খজতে এসে কার দেখা পেলে। এমনি তোমার অদষ্ট।” অমল কহিল, “বাঁ দিকের বিচালিও যেমন ডান দিকের বিচালিও ঠিক তেমনি, গদ্যভের পক্ষে দুইই সমান আদরের।” বলিয়া সেইখানে বসিয়া গেল। অমল। মন্দা-বোঠান, তোমাদের দেশের গল্প বলো, আমি শনি। লেখার বিষয় সংগ্ৰহ করিবার জন্য অমল সকলের সব কথা কৌতুহলের সহিত শানিত। সেই কারণে মন্দাকে এখন সে আর প্রবের ন্যায় সম্পণে উপেক্ষা করিত না। মন্দার মনস্তত্ত্ব, মন্দার ইতিহাস, এখন তাহার কাছে ঔৎসক্যজনক। কোথায় তাহার জন্মভূমি, তাহাদের গ্রামটি কিরাপ, ছেলেবেলা কেমন করিয়া কাটিত, বিবাহ হইল কবে, ইত্যাদি সকল কথাই সে খটিয়া খটিয়া জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল। মন্দার ক্ষুদ্র জীবনবৃত্তান্ত সম্বন্ধে এত কৌতুহল কেহ কখনও প্রকাশ করে নাই। মন্দা আনন্দে নিজের কথা বকিয়া যাইতে লাগিল ; মাঝে মাঝে কহিল, “কী বকছি তার ঠিক নাই।” অমল উৎসাহ দিয়া কহিল, “না, আমার বেশ লাগছে, বলে যাও।” মন্দার বাপের এক কানা গোমস্তা ছিল, সে তাহার দ্বিতীয় পক্ষের মীর সঙ্গে ঝগড়া করিয়া এক-একদিন অভিমানে অনশনরত গ্রহণ করিত, অবশেষে ক্ষধার জালায় মন্দাদের বাড়িতে কিরূপে গোপনে আহার করিতে আসিত এবং দৈবাৎ একদিন সীর কাছে কিরাপে ধরা পড়িয়াছিল, সেই গল্প যখন হইতেছে এবং অমল মনোযোগের সহিত শনিতে শুনিতে সকৌতুকে হাসিতেছে এমন সময় চার ঘরের মধ্যে আসিয়া প্রবেশ कर्गद्रळ । গল্পের সত্র ছিন্ন হইয়া গেল। তাহার আগমনে হঠাৎ একটা জমাট সভা ভাঙিয়া গেল, চার তাহা পাটই বঝিতে পারিল। অমল জিজ্ঞাসা করিল, “বউঠান, এত সকাল-সকাল ফিরে এলে যে ?” চার কহিল, “তাই তো দেখছি। বেশি সকাল-সকালই ফিরেছি।” বলিয়া চলিয়া যাইবার উপক্ৰম করিল। नधग्नेनौछ् 8芭邻 অমল কহিল, “ভালোই করেছ, বাঁচিয়েছ আমাকে। আমি ভাবছিলাম, কখন না জানি ফিরবে। মন্মথ দত্তর সন্ধ্যার পাখি বলে নতন বইটা তোমাকে পড়ে শোনাব বলে এনেছি।” চার। এখন থাক, আমার কাজ আছে। অমল। কাজ থাকে তো আমাকে হুকুম করো, আমি করে দিচ্ছি। চার জানিত অমল আজ বই কিনিয়া আনিয়া তাহাকে শনাইতে আসিবে ; চার ঈষা জন্মাইবার জন্য মন্মথর লেখার প্রচুর প্রশংসা করিবে এবং অমল সেই বইটাকে বিকৃত করিয়া পড়িয়া বিদুপ করিতে থাকিবে। এই সকল কল্পনা করিয়াই অধৈৰ্যবশত সে অকালে নিমন্ত্ৰণগহের সমস্ত অননয়বিনয় লঙ্ঘন করিয়া অসখের ছাতায় গ্যহে চলিয়া আসিতেছে। এখন বারবার মনে করিতেছে, সেখানে ছিলাম ভালো, চলিয়া আসা অন্যায় হইয়াছে।’ মন্দাও তো কম বেহায়া নয়। একলা অমলের সহিত এক ঘরে বসিয়া দাঁত বাহির করিয়া হাসিতেছে। লোকে দেখিলে কী বলিবে। কিন্তু মন্দাকে এ কথা লইয়া ভৎসনা করা চারীর পক্ষে বড়ো কঠিন। কারণ, মন্দা যদি তাহারই দন্টাতের উল্লেখ করিয়া জবাব দেয়। কিন্তু সে হইল এক, আর এ হইল এক। সে অমলকে রচনায় উৎসাহ দেয়, অমলের সঙ্গে সাহিত্যালোচনা করে, কিন্তু মন্দার তো সে উদ্দেশ্য আদবেই নয়। মন্দা নিঃসন্দেহই সরল যবেককে মগধ করিবার জন্য জাল বিস্তার করিতেছে। এই ভয়ংকর বিপদ হইতে বেচারা অমলকে রক্ষা করা তাহারই কতব্য। অমলকে এই মায়াবিনীর মতলব কেমন করিয়া বঝাইবে বঞ্চোইলে তাহার প্রলোভনের নিবত্তি না হইয়া যদি উলটা হয় । বেচারা দাদা! তিনি তাহার স্বামীর কাগজ লইয়া দিন রাত খাটিয়া মরিতেছেন, আর মন্দা কিনা কোণটিতে বসিয়া অমলকে ভুলাইবার জন্য আয়োজন করিতেছে। দাদা বেশ নিশ্চিন্ত আছেন। মন্দার উপরে তাঁর অগাধ বিশ্বাস। এ-সকল ব্যাপার চার কী করিয়া স্বচক্ষে দেখিয়া সিথর থাকিবে। ভারি অন্যায়। কিন্তু আগে অমল বেশ ছিল, যেদিন হইতে লিখিতে আরম্ভ করিয়া নাম করিয়াছে সেইদিন হইতেই যত অনখ দেখা যাইতেছে। চারই তো তাহার লেখার গোড়া। কুক্ষণে সে অমলকে রচনায় উৎসাহ দিয়াছিল। এখন কি আর অমলের পরে তাহার পবের মতো জোর খাটিবে। এখন অমল পাঁচজনের আদরের বাদ পাইয়াছে, অতএব একজনকে বাদ দিলে তাহার আসে যায় না। চার পষ্টই বঝিল, তাহার হাত হইতে গিয়া পাঁচজনের হাতে পড়িয়া অমলের সমহে বিপদ। চারকে অমল এখন নিজের ঠিক সমকক্ষ বলিয়া জানে না ; চারকে সে ছাড়াইয়া গেছে। এখন সে লেখক, চার পাঠক । ইহার প্রতিকার করিতেই হইবে। আহা, সরল অমল, মায়াবিনী মন্দা, বেচারা দাদা। ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ সেদিন আষাঢ়ের নবীন মেঘে আকাশ আচ্ছন্ন। ঘরের মধ্যে অন্ধকার ঘনীভূত হইয়াছে বলিয়া চার তাহার খোলা জানালার কাছে একান্ত ককিয়া পড়িয়া কী-একটা 3ももf গল্পগুচ্ছ লিখিতেছে। অমল কখন নিঃশব্দপদে পশুচাতে আসিয়া দাঁড়াইল তাহা সে জানিতে পারিল না। বাদলার স্নিগ্ধ আলোকে চার লিখিয়া গেল, অমল পড়িতে লাগিল। পাশে অমলেরই দই-একটা ছাপানো লেখা খোলা পড়িয়া আছে ; চারার কাছে সেইগুলিই রচনার একমাত্র আদশ । “তবে যে বল, তুমি লিখতে পার না!” হঠাৎ অমলের কণ্ঠ শনিয়া চার অত্যন্ত চমকিয়া উঠিল ; তাড়াতাড়ি খাতা লুকাইয়া ফেলিল ; কহিল, “তোমার ভারি অন্যায়।” অমল ৷ কণী অন্যায় করেছি। চার্য। নাকিয়ে নাকিয়ে দেখছিলে কেন। অমল। প্রকাশ্যে দেখতে পাই নে বলে । চার তাহার লেখা ছি’ড়িয়া ফেলিবার উপক্ৰম করিল। অমল ফস করিয়া তাহার হাত হইতে খাতা কাড়িয়া লইল। চার কহিল, “তুমি যদি পড় তোমার সঙ্গে জন্মের মতো আড়ি ।” অমল। যদি পড়তে বারণ কর তা হলে তোমার সঙ্গে জন্মের মতো আড়ি । চার। আমার মাথা খাও, ঠাকুরপো, পোড়ো না। অবশেষে চারকেই হার মানিতে হইল। কারণ, অমলকে তাহার লেখা দেখাইবার জন্য মন ছটফট করিতেছিল, অথচ দেখাইবার বেলায় যে ৩হার এত লজ্জা করিবে তাহা সে ভাবে নাই। অমল যখন অনেক অননয় করিয়া পড়িতে আরম্ভ করিল তখন লজায় চারীর হাত-পা বরফের মতো হিম হইয়া গেল। কহিল, “আমি পান নিয়ে আসি গে।” বলিয়া তাড়াতাড়ি পাশের ঘরে পান সাজিবার উপলক্ষ করিয়া চলিয়া গেল । অমল পড়া সাঙ্গ করিয়া চারকে গিয়া কহিল, “চমৎকার হয়েছে।” চার পানে খয়ের দিতে ভুলিয়া কহিল, “যাও । আর ঠাট্টা করতে হবে না। দাও, আমার খাতা দাও।” অমল কহিল, “খাতা এখন দেব না, লেখাটা কপি করে নিয়ে কাগজে পাঠাব।” চার। হাঁ, কাগজে পাঠাবে বই-কি! সে হবে না। চার ভারি গোলমাল করিতে লাগিল। অমলও কিছতে ছাড়িল না। সে যখন বারবার শপথ করিয়া কহিল, “কাগজে দিবার উপযুক্ত হইয়াছে” তখন চার; যেন নিতান্ত হতাশ হইয়া কহিল, “তোমার সঙ্গে তো পেরে ওঠবার জো নেই! যেটা ধরবে সে আর কিছুতেই ছাড়বে না!” অমল কহিল, “দাদাকে একবার দেখাতে হবে।” শনিয়া চার পান সাজা ফেলিয়া আসন হইতে বেগে উঠিয়া পড়িল ; খাতা কাড়িবার চেষ্টা করিয়া কহিল, “না, তাঁকে শোনাতে পাবে না। তাঁকে যদি আমার লেখার কথা বল তা হলে আমি আর এক অক্ষর লিখব না।” অমল। বউঠান, তুমি ভারি ভুল বঝছ। দাদা মুখে যাই বলন, তোমার লেখা দেখলে খুব খুশি হবেন। চার। তা হোক, আমার খাঁশিতে কাজ নেই। নষ্টনীড় 8&> চার প্রতিজ্ঞা করিয়া বসিয়াছিল সে লিখিবে— অমলকে আশ্চর্য করিয়া দিবে ; মন্দার সহিত তাহার যে অনেক প্রভেদ এ কথা প্রমাণ না করিয়া সে ছাড়িবে না। এ কয়দিন বিস্তর লিখিয়া সে ছিাড়িয়া ফেলিয়াছে। যাহা লিখিতে যায় তাহা নিতান্ত অমলের লেখার মতো হইয়া উঠে ; মিলাইতে গিয়া দেখে এক-একটা অংশ অমলের রচনা হইতে প্রায় অবিকল উদ্ধত হইয়া আসিয়াছে। সেইগুলিই ভালো, বাকিগলো কাঁচা। দেখিলে অমল নিশ্চয়ই মনে মনে হাসিবে, ইহাই কল্পনা করিয়া চার সে-সকল লেখা কুটি কুটি করিয়া ছিড়িয়া পুকুরের মধ্যে ফেলিয়া দিয়াছে, পাছে তাহার একটা খণ্ডও দৈবাং অমলের হাতে আসিয়া পড়ে। প্রথমে সে লিখিয়াছিল ‘শ্রাবণের মেঘ’। মনে করিয়াছিল, ‘ভাবাশ্রজেলে অভিষিক্ত খুব-একটা নতেন লেখা লিখিয়াছি।’ হঠাৎ চেতনা পাইয়া দেখিল, জিনিসটা অমলের আষাঢ়ের চাঁদ’-এর এপিঠ-ওপিঠ মাত্র। অমল লিখিয়াছে, “ভাই চাঁদ, তুমি মেঘের মধ্যে চোরের মতো লুকাইয়া বেড়াইতেছ কেন। চার লিখিয়াছিল, সখী কাদম্বিনী, হঠাৎ কোথা হইতে আসিয়া তোমার নীলাঞ্চলের তলে চাঁদকে চুরি করিয়া পলায়ন করিতেছ’ ইত্যাদি। কোনোমতেই অমলের গণ্ডি এড়াইতে না পারিয়া অবশেষে চার রচনার বিষয় পরিবতন করিল। চাঁদ, মেঘ, শেফালি, বউ-কথা-কও এ-সমস্ত ছাড়িয়া সে কালীতলা বলিয়া একটা লেখা লিখিল। তাহাদের গ্রামে ছায়ায়-অন্ধকার পর্কুেরটির ধারে কালীর মন্দির ছিল ; সেই মন্দিরটি লইয়া তাহার বাল্যকালের কল্পনা ভয় ঔৎসুক্য, সেই সম্বন্ধে তাহার বিচিত্র সমতি, সেই জাগ্রত ঠাকুরানীর মাহাত্ম্য সম্বন্ধে গ্রামে চিরপ্রচলিত প্রাচীন গলপ— এই-সমস্ত লইয়া সে একটি লেখা লিখিল । তাহার আরম্ভ-ভাগ অমলের লেখার ছাদে কাব্যাড়শবরপণ হইয়াছিল, কিন্তু খানিকটা অগ্রসর হইতেই তাহার লেখা সহজেই সরল এবং পল্লিগ্রামের ভাষা-ভঙ্গী-আভাসে পরিপণ হইয়া উঠিয়াছিল। এই লেখাটা অমল কাড়িয়া লইয়া পড়িল। তাহার মনে হইল, গোড়ার দিকটা বেশ সরস হইয়াছে, কিন্তু কবিত্ব শেষ পর্যন্ত রক্ষিত হয় নাই। যাহা হউক, প্রথম রচনার পক্ষে লেখিকার উদ্যম প্রশংসনীয়। চার কহিল, “ঠাকুরপো, এসো আমরা একটা মাসিক কাগজ বের করি। কী বল।” অমল। অনেকগুলি রৌপ্যচকু না হলে সে কাগজ চলবে কী করে। চার । আমাদের এ কাগজে কোনো খরচ নেই। ছাপা হবে না তো– হাতের অক্ষরে লিখব। তাতে তোমার আমার ছাড়া আর কারও লেখা বেরোবে না, কাউকে পড়তে দেওয়া হবে না। কেবল দ কপি করে বের হবে ; একটি তোমার জন্যে, একটি আমার জন্যে { কিছুদিন পাবে হইলে অমল এ প্রস্তাবে মাতিয়া উঠিত ; এখন গোপনতার উৎসাহ তাহার চলিয়া গেছে। এখন দশজনকে উদ্দেশ না করিয়া কোনো রচনায় সে সুখ পায় না। তব সাবেক কালের ঠাট বজায় রাখিবার জন্য উৎসাহ প্রকাশ করিল। কহিল, “সে বেশ মজা হবে।” চার কহিল, “কিন্তু প্রতিজ্ঞা করতে হবে, আমাদের কাগজ ছাড়া আর কোথাও তুমি লেখা বের করতে পারবে না।” অমল। তা হলে সম্পাদকেরা যে মেরেই ফেলবে। 8Q Q গল্পগুচ্ছ চার। আর আমার হাতে বুঝি মারের অস্ত্র নেই ? সেইরাপ কথা হইল। দই সম্পাদক, দই লেখক এবং দই পাঠকে মিলিয়া কমিটি বসিল। অমল কহিল, “কাগজের নাম দেওয়া যাক চার্যপাঠ।” চার কহিল, “না, এর নাম আমলা।” এই নতন বন্দোবস্তে চার মাঝের কয়দিনের দুঃখবিরক্তি ভুলিয়া গেল। তাহদের মাসিক পত্রটিতে তো মন্দার প্রবেশ করিবার কোনো পথ নাই এবং বাহিরের লোকেরও প্রবেশের বার রন্ধ। সপ্তম পরিচ্ছেদ ভূপতি একদিন আসিয়া কহিল, “চার, তুমি যে লেখিকা হয়ে উঠবে, পাবে এমন তো কোনো কথা ছিল না !” চার চমকিয়া লাল হইয়া উঠিয়া কহিল, “আমি লেখিকা! কে বললে তোমাকে। কখখনো না।” ভূপতি। বামালসন্ধ গ্রেফতার। প্রমাণ হাতে হাতে!—বলিয়া ভূপতি একখণ্ড সরোরাহ বাহির করিল। চার দেখিল, যে-সকল লেখা সে তাহদের গুপ্ত সম্পত্তি মনে করিয়া নিজেদের হস্তলিখিত মাসিক পত্রে সঞ্চয় করিয়া রাখিতেছিল তাহাই লেখক-লেখিকার নামসন্ধ সরোরাহে প্রকাশ হইয়াছে। কে যেন তাহার খাঁচার বড়ো সাধের পোষা পাখিগুলিকে বার খলিয়া উড়াইয়া দিয়াছে, এমনি তাহার মনে হইল। ভূপতির নিকটে ধরা পড়িবার লজ্জা ভুলিয়া গিয়া বিশ্বাসঘাতী অমলের উপর তাহার মনে মনে অত্যন্ত রাগ হইতে লাগিল । “আর এইটে দেখো দেখি!” বলিয়া বিশ্ববন্ধ খবরের কাগজ খলিয়া ভূপতি চারুর সম্মুখে ধরিল। তাহাতে হাল বাংলা লেখার ঢঙ বলিয়া একটা প্রবন্ধ বাহির হইয়াছে। চার হাত দিয়া ঠেলিয়া দিয়া কহিল, “এ পড়ে আমি কী করব।” তখন অমলের উপর অভিমানে আর কোনো দিকে সে মন দিতে পারিতেছিল না। ভূপতি জোর করিয়া কহিল, “একবার পড়ে দেখোই-না।” চার অগত্যা চোখ বলাইয়া গেল। আধুনিক কোনো কোনো লেখকশ্রেণীর ভাবাড়ম্বরে-পাণ গদ্য লেখাকে গালি দিয়া লেখক খুব কড়া প্রবন্ধ লিখিয়াছে। তাহার মধ্যে আমল এবং মন্মথ দত্তর লেখার ধারাকে সমালোচক তীব্র উপহাস করিয়াছে, এবং তাহারই সঙ্গে তুলনা করিয়া নবীনা লেখিকা শ্ৰীমতী চারবালার ভাষার অকৃত্রিম সরলতা, অনায়াস সরসতা এবং চিত্ররচনানৈপুণ্যের বহল প্রশংসা করিয়াছে। লিখিয়ছে, এইরুপ রচনাপ্রণালীর অনুকরণ করিয়া সফলতা লাভ করিলে তবেই অমল-কোম্পানির নিস্তার, নচেৎ তাহারা সপণ ফেল করিবে ইহাতে কোনো সন্দেহ নাই । – ভূপতি হাসিয়া কহিল, “একেই বলে গরমোরা বিদ্যে।” চার তাহার লেখার এই প্রথম প্রশংসায় এক-একবার খুশি হইতে গিয়া তৎক্ষণাৎ পীড়িত হইতে লাগিল। তাহার মন যেন কোনোমতেই খুশি হইতে চাহিল না। প্রশংসার লোভনীয় সাধাপাত্র মুখের কাছ পৰ্যন্ত আসিতেই ঠেলিয়া ফেলিয়া দিতে নষ্টনীড় ৪৭১ লাগিল । সে বঝিতে পারিল, তাহার লেখা কাগজে ছাপাইয়া অমল হঠাৎ তাহাকে বিস্মিত করিয়া দিবার সংকল্প করিয়াছিল। অবশেষে ছাপা হইলে পর স্থির করিয়াছিল কোনো-একটা কাগজে প্রশংসাপণ সমালোচনা বাহির হইলে দুইটা একসঙ্গে দেখাইয়া চারার রোষশান্তি ও উৎসাহবিধান করিবে। যখন প্রশংসা বাহির হইল তখন অমল কেন আগ্রহের সহিত তাহাকে দেখাইতে আসিল না। এ সমালোচনায় অমল আঘাত পাইয়াছে এবং চারকে দেখাইতে চাহে না বলিয়াই এ কাগজগুলি সে একেবারে গোপন করিয়া গেছে। চার আরামের জন্য অতিনিভৃতে যে-একটি ক্ষুদ্র সাহিত্যনীড় রচনা করিতেছিল হঠাৎ প্রশংসা-শিলাবটির একটা বড়োরকমের শিলা আসিয়া সেটাকে একেবারে পথলিত করিবার জো করিল। চারর ইহা একেবারেই ভালো লাগিল না। ভূপতি চলিয়া গেলে চার তাহার শোবার ঘরের খাটে চুপ করিয়া বসিয়া রহিল ; সম্মখে সরোরহ এবং বিশ্ববন্ধ খোলা পড়িয়া আছে। খাতা-হাতে অমল চারকে সহসা চকিত করিয়া দিবার জন্য পশচাং হইতে নিঃশব্দপদে প্রবেশ করিল। কাছে আসিয়া দেখিল, বিশ্ববন্ধর সমালোচনা খলিয়া চার নিমগ্নচিত্তে বসিয়া আছে। পুনরায় নিঃশব্দপদে অমল বাহির হইয়া গেল। আমাকে গালি দিয়া চারীর লেখাকে প্রশংসা করিয়াছে বলিয়া আনন্দে চারীর আর চৈতন্য নাই।’ মাহতের মধ্যে তাহার সমস্ত চিত্ত যেন তিক্তস্বাদ হইয়া উঠিল। চার যে মুখের সমালোচনা পড়িয়া নিজেকে আপন গরের চেয়ে মস্ত মনে করিয়াছে, ইহা নিশ্চয় সিথর করিয়া অমল চারার উপর ভারি রাগ করিল। চারর উচিত ছিল কাগজখানা টুকরা টকরা করিয়া ছিড়িয়া আগনে ছাই করিয়া পড়াইয়া ফেলা। চারার উপর রাগ করিয়া অমল মন্দার ঘরের বারে দাঁড়াইয়া সশব্দে ডাকিল, “अञा-दसैँठान् ।” মন্দা। এসো ভাই, এসো। না চাইতেই যে দেখা পেলাম! আজ আমার কী ভাগ্যি। অমল। আমার নতন লেখা দু-একটা শুনবে ? মন্দা। কতদিন থেকে শোনাব শোনাব করে আশা দিয়ে রেখেছ কিন্তু শোনাও না তো। কাজ নেই ভাই— আবার কে কোন দিক থেকে রাগ করে বসলে তুমিই বিপদে পড়বে—আমার কী। অমল কিছু তীব্রস্বরে কহিল, “রাগ করবেন কে। কেনই-বা রাগ করবেন। আচ্ছা সে দেখা যাবে, তুমি এখন শোনোই তো।” মন্দা যেন অত্যন্ত আগ্রহে তাড়াতাড়ি সংষত হইয়া বসিল। অমল সরে করিয়া সমারোহের সহিত পড়িতে আরম্ভ করিল। অমলের লেখা মন্দার পক্ষে নিতান্তই বিদেশী, তাহার মধ্যে কোথাও সে কোনো কিনারা দেখিতে পায় না। সেইজন্যই সমস্ত মুখে আনন্দের হাসি আনিয়া অতিরিক্ত ব্যগ্রতার ভাবে সে শনিতে লাগিল। উৎসাহে অমলের কণ্ঠ উত্তরোত্তর উচ্চ হুইয়া छैठेळन । সে পড়িতেছিল—‘অভিমন্য যেমন গভবাসকালে কেবল ব্যহপ্রবেশ করিতে ৪৭২ গল্পগুচ্ছ শিখিয়াছিল, বাহ হইতে নিগমন শেখে নাই— নদীর স্রোত সেইরাপ গিরিদরীর পাষাণ-জঠরের মধ্যে থাকিয়া কেবল সমখেই চলিতে শিখিয়াছিল, পশ্চাতে ফিরিতে শেখে নাই। হায় নদীর স্রোত, হায় যৌবন, হায় কাল, হায় সংসার, তোমরা কেবল সম্মুখেই চলিতে পার— যে পথে সমতির বর্ণমণ্ডিত উপলখণ্ড ছড়াইয়া আস সে পথে আর কোনোদিন ফিরিয়া যাও না। মানুষের মনই কেবল পশ্চাতের দিকে চায়, অনন্ত জগৎসংসার সে দিকে ফিরিয়াও তাকায় না।’ এমন সময় মন্দার বারের কাছে একটি ছায়া পড়িল, সে ছায়া মন্দা দেখিতে পাইল। কিন্তু যেন দেখে নাই এইরুপ ভাণ করিয়া অনিমেষদটিতে অমলের মুখের দিকে চাহিয়া নিবিড় মনোযোগের সহিত পড়া শুনিতে লাগিল। ছায়া তৎক্ষণাৎ সরিয়া গেল । চার অপেক্ষা করিয়া ছিল, অমল আসিলেই তাহার সম্মখে বিশ্ববন্ধ কাগজটিকে যথোচিত লাঞ্ছিত করিবে, এবং প্রতিজ্ঞাভঙ্গ করিয়া তাহাদের লেখা মাসিক পত্রে বাহির করিয়াছে বলিয়া অমলকেও ভৎসনা করিবে । অমলের আসিবার সময় উত্তীণ হইয়া গেল তব তাহার দেখা নাই। চার একটা লেখা ঠিক করিয়া রাখিয়াছে ; অমলকে শনাইবার ইচ্ছা ; তাহাও পড়িয়া আছে । এমন সময়ে কোথা হইতে অমলের কন্ঠস্বর শন যায়! এ যেন মন্দার ঘরে ! শরসিদ্ধের মতো সে উঠিয়া পড়িল। পায়ের শব্দ না করিয়া সে বারের কাছে আসিয়া দাঁড়াইল। অমল যে-লেখা মন্দাকে শনাইতেছে এখনও চার তাহা শোনে নাই। অমল পড়িতেছিল— ‘মানুষের মনই কেবল পশ্চাতের দিকে চায়– অনন্ত জগৎসংসার সে দিকে ফিরিয়াও তাকায় না।’ চার যেমন নিঃশব্দে আসিয়াছিল তেমন নিঃশব্দে আর ফিরিয়া যাইতে পারিল না। আজ পরে পরে দই তিনটা আঘাতে তাহাকে একেবারে ধৈর্য চু্যত করিয়া দিল । মন্দা যে একবৰ্ণও বুঝিতেছে না এবং অমল যে নিতান্ত নিবোধ মঢ়ের মতো তাহাকে পড়িয়া শনাইয়া তৃপ্তিলাভ করিতেছে, এ কথা তাহার চীৎকার করিয়া বলিয়া আসিতে ইচ্ছা করিল। কিন্তু না বলিয়া সক্ৰোধ পদশব্দে তাহা প্রচার করিয়া আসিল। শয়নগহে প্রবেশ করিয়া চার বার সশব্দে বধ করিল। অমল ক্ষণকালের জন্য পড়ায় ক্ষান্ত দিল। মন্দা হাসিয়া চারর উদ্দেশে ইঙ্গিত করিল। অমল মনে মনে কহিল, বউঠানের এ কী দৌরাত্ম্য। তিনি কি ঠিক করিয়া রাখিয়াছেন, আমি তাঁহারই ক্রীতদাস। তাঁহাকে ছাড়া আর কাহাকেও পড়া শনাইতে পারিব না। এ যে ভয়ানক জলম। এই ভাবিয়া সে আরও উচ্চৈঃস্বরে মন্দাকে পড়িয়া শনাইতে লাগিল। পড়া হইয়া গেলে চারীর ঘরের সম্মখে দিয়া সে বাহিরে চলিয়া গেল। একবার চাহিয়া দেখিল, ঘরের বার রন্ধ। চার পদশব্দে বঝিল, অমল তাহার ঘরের সম্মখে দিয়া চলিয়া গেল—একবারও থামিল না। রাগে ক্ষোভে তাহার কান্না আসিল না। নিজের নতন-লেখা খাতাখানি সতপোকার করিল। হায়, কী কুক্ষণেই এই-সমস্ত লেখালেখি আরম্ভ হইয়াছিল। নষ্টনীড় 8a ○ অস্টম পরিচ্ছেদ সন্ধ্যার সময় বারান্দার টব হইতে জ:ইফলের গন্ধ আসিতেছিল। ছিন্ন মেঘের ভিতর দিয়া স্নিগ্ধ আকাশে তারা দেখা যাইতেছিল। আজ চার চুল বাঁধে নাই, কাপড় ছাড়ে নাই। জানলার কাছে অন্ধকারে বসিয়া আছে, মদ বাতাসে আস্তে আস্তে তাহার খোলা চুল উড়াইতেছে, এবং তাহার চোখ দিয়া এমন ঝর ঝর করিয়া কেন জল বহিয়া যাইতেছে তাহা সে নিজেই বুঝিতে পারিতেছে না। এমন সময় ভূপতি ঘরে প্রবেশ করিল। তাহার মুখ অত্যন্ত লান, হাদয় ভারাক্লান্ত। ভূপতির আসিবার সময় এখন নহে। কাগজের জন্য লিখিয়া, প্রফে দেখিয়া অন্তঃপারে আসিতে প্রায়ই তাহার বিলম্বব হয়। আজ সন্ধ্যার পরেই যেন কোন সান্ত্বনা-প্রত্যাশায় চারীর নিকট আসিয়া উপস্থিত হইল । ঘরে প্রদীপ জলিতেছিল না। খোলা জালনার ক্ষীণ আলোকে ভূপতি চারকে বাতায়নের কাছে অসপ্ট দেখিতে পাইল ; ধীরে ধীরে পশ্চাতে আসিয়া দড়িাইল । পদশব্দ শুনিতে পাইয়াও চার মুখ ফিরাইল না— মতিটির মতো সিথর হইয়া কঠিন হইয়া বসিয়া রহিল। ভূপতি কিছ আশ্চর্য হইয়া ডাকিল, “চার ” ভূপতির কন্ঠস্বরে সচকিত হইয়া তাড়াতাড়ি উঠিয়া পড়িল। ভূপতি আসিয়াছে সে তাহা মনে করে নাই। ভূপতি চারার মাথার চুলের মধ্যে আঙলে বলাইতে বলাইতে নেহাদুকণ্ঠে জিজ্ঞাসা করিল, “অন্ধকারে তুমি যে একলাটি বসে আছ, চার ? মন্দা কোথায় গেল।” চার যেমনটি আশা করিয়াছিল আজ সমস্ত দিন তাহার কিছুই হইল না। সে নিশ্চয় স্থির করিয়ছিল অমল আসিয়া,ক্ষমা চাহিবে—সেজন্য প্রস্তুত হইয়া সে প্রতীক্ষা করিতেছিল, এমন সময় ভূপতির অপ্রত্যাশিত কণ্ঠস্বরে সে যেন আর আত্মসম্বরণ করিতে পারিল না, একেবারে কাঁদিয়া ফেলিল। ভূপতি ব্যস্ত হইয়া ব্যথিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “চার কী হয়েছে, চার।” কী হইয়াছে তাহা বলা শক্ত। এমনই কী হয়েছে। বিশেষ তো কিছই হয় নাই। অমল নিজের নতন লেখা প্রথমে তাহাকে না শনাইয়া মন্দাকে শনাইয়াছে, এ কথা লইয়া ভূপতির কাছে কী নালিশ করিবে। শুনিলে কি ভূপতি হাসিবে না। এই তুচ্ছ ব্যাপারের মধ্যে গরতর নালিশের বিষয় যে কোনখানে লুকাইয়া আছে তাহা খাজিয়া বাহির করা চারীর পক্ষে অসাধ্য। অকারণে সে যে কেন এত অধিক কট পাইতেছে, ইহাই সমপণ বুঝিতে না পারিয়া তাহার কন্টের বেদনা আরও বাড়িয়া উঠিয়াছে । ভূপতি। বলো-না চার্য, তোমার কী হয়েছে। আমি কি তোমার উপর কোনো অন্যায় করেছি। তুমি তো জানই, কাগজের ঝঞ্জাট নিয়ে আমি কীরকম ব্যতিব্যস্ত হয়ে আছি, যদি তোমার মনে কোনো আঘাত দিয়ে থাকি সে আমি ইচ্ছে করে দিই নি। ভূপতি এমন বিষয়ে প্রশ্ন করিতেছে যাহার একটিও জবাব দিবার নাই, সেজন্য চার ভিতরে ভিতরে অধীর হইয়া উঠিল ; মনে হইতে লাগিল, ভূপতি এখন তাহাকে নিকৃতি দিয়া ছাড়িয়া গেলে সে বাঁচে। 83 S গল্পগুচ্ছ ভূপতি দ্বিতীয়বার কোনো উত্তর না পাইয়া পনবার স্নেহসিক্ত স্বরে কহিল, “আমি সবাদা তোমার কাছে আসতে পারি নে চার, সেজন্যে আমি অপরাধী, কিন্তু আর হবে না। এখন থেকে দিনরাত কাগজ নিয়ে থাকব না। আমাকে তুমি যতটা চাও ততটাই পাবে।” চার অধীর হইয়া বলিল, “সেজন্যে নয়।” ভূপতি কহিল, “তবে কী জন্যে।” বলিয়া খাটের উপর বসিল। চার বিরক্তির সবর গোপন করিতে না পারিয়া কহিল, “সে এখন থাক, রাত্রে বলব।” ভূপতি মহন্তকাল স্তব্ধ থাকিয়া কহিল, “আচ্ছা, এখন থাক।” বলিয়া আস্তে আস্তে উঠিয়া বাহিরে চলিয়া গেল। তাহার নিজের একটা-কী কথা বলিবার ছিল, সে আর বলা হইল না । ভূপতি যে একটা ক্ষোভ পাইয়া গেল, চারার কাছে তাহা অগোচর রহিল না। মনে হইল, “ফিরিয়া ডাকি।” কিন্তু ডাকিয়া কী কথা বলিবে। অনন্তাপে তাহাকে বিধ করিল, কিন্তু কোনো প্রতিকার সে খুজিয়া পাইল না। রাত্রি হইল। চার আজ সবিশেষ যত্ন করিয়া ভূপতির রাত্রের আহার সাজাইল এবং নিজে পাখা হাতে করিয়া বসিয়া রহিল। এমন সময় শুনিতে পাইল মন্দা উচ্চৈঃস্বরে ডাকিতেছে, “ব্রজ, ব্রজ।” ব্ৰজ-চাকর সাড়া দিলে জিজ্ঞাসা করিল, “অমলবাবরে খাওয়া হয়েছে কি ” ব্রজ উত্তর করিল, “হয়েছে।” মন্দা কহিল, “খাওয়া হয়ে গেছে অথচ পান নিয়ে গেলি নে যে ?” মন্দা ব্রজকে অত্যন্ত তিরস্কার করিতে লাগিল । এমন সময়ে ভূপতি অন্তঃপুরে আসিয়া আহারে বসিল, চার পাখা করিতে লাগিল । চার আজ প্রতিজ্ঞা করিয়াছিল, ভূপতির সঙ্গে প্রফুল্ল স্নিগ্ধভাবে নানা কথা কহিবে। কথাবাত আগে হইতে ভাবিয়া প্রস্তুত হইয়া বসিয়া ছিল। কিন্তু মন্দার কণ্ঠস্বরে তাহার বিস্তৃত আয়োজন সমস্ত ভাঙিয়া দিল, আহারকালে ভূপতিকে সে একটি কথাও বলিতে পারিল না। ভূপতিও অত্যন্ত বিমৰ্ষ অন্যমনস্ক হইয়া ছিল । সে ভালো করিয়া খাইল না, চার একবার কেবল জিজ্ঞাসা করিল, “কিছু খাচ্ছ না যে ?” ভূপতি প্রতিবাদ করিয়া কহিল, “কেন। কম খাই নি তো।” শয়নঘরে উভয়ে একত্র হইলে ভূপতি কহিল, “আজ রাত্রে তুমি কী বলবে বলেছিলে ।” চার কহিল, “দেখো, কিছুদিন থেকে মন্দার ব্যবহার আমার ভালো বোধ হচ্ছে না। ওকে এখানে রাখতে আমার আর সাহস হয় না ।” ভূপতি। কেন, কী করেছে। চার। অমলের সঙ্গে ও এমনি ভাবে চলে যে, সে দেখলে লঙ্কজা হয়। ভূপতি হাসিয়া উঠিয়া কহিল, “হাঁ, তুমি পাগল হয়েছ! অমল ছেলেমানষে। সেদিনকার ছেলে–” চার। তুমি তো ঘরের খবর কিছুই রাখ না, কেবল বাইরের খবর কুড়িয়ে বেড়াও । নষ্টনীড় 8《: যাই হোক, বেচারা দাদার জন্যে আমি ভাবি। তিনি কখন খেলেন, না খেলেন, মন্দা তার কোনো খোঁজও রাখে না, অথচ অমলের পান থেকে চুন খসে গেলেই চাকরবাকরদের সঙ্গে বকবিকি করে আনথ করে। ভূপতি। তোমরা মেয়েরা কিন্তু ভারি সন্দিগধ, তা বলতে হয়। চার রাগিয়া বলিল, “আচ্ছা বেশ, আমরা সন্দিগধ, কিন্তু বাড়িতে আমি এ-সমস্ত বেহায়াপনা হতে দেব না তা বলে রাখছি।” চারার এই-সমস্ত অমলেক আশংকায় ভূপতি মনে মনে হাসিল, খশিও হইল। গহ যাহাতে পবিত্র থাকে, দাম্পত্যধমে আনুমানিক কাল্পনিক কলঙ্কও লেশমাত্র পশ না করে, এজন্য সাধনী সত্রীদের যে অতিরিক্ত সতকতা, যে সন্দেহাকুল দৃষ্টিক্ষেপ, তাহার মধ্যে একটি মাধ্য এবং মহত্ত্ব আছে। ভূপতি শ্রদ্ধায় এবং স্নেহে চারীর ললাট চুম্বন করিয়া কহিল, “এ নিয়ে আর কোনো গোল করবার দরকার হবে না। উমাপদ ময়মনসিংহে প্র্যাকটিস করতে যাচ্ছে, মন্দাকেও সঙ্গে নিয়ে যাবে।” অবশেষে নিজের দচিন্তা এবং এই-সকল অপ্রীতিকর আলোচনা দর করিয়া দিবার জন্য ভূপতি টেবিল হইতে একটা খাতা তুলিয়া লইয়া কহিল, “তোমার লেখা আমাকে শোনাও না, চার ” চার খাতা কাড়িয়া লইয়া কহিল, “এ তোমার ভালো লাগবে না, তুমি ঠাট্রা করবে।” ভূপতি এই কথায় কিছু ব্যথা পাইল, কিন্তু তাহা গোপন করিয়া হাসিয়া কহিল, “আচ্ছা, আমি ঠাট্টা করব না, এমনি সিথর হয়ে শািনব যে তোমার ভ্রম হবে, আমি ঘামিয়ে পড়েছি।” কিন্তু ভূপতি আমল পাইল না— দেখিতে দেখিতে খাতাপত্র নানা আবরণআচ্ছাদনের মধ্যে অন্তহিত হইয়া গেল। নবম পরিচ্ছেদ সকল কথা ভূপতি চারকে বলিতে পারে নাই। উমাপদ ভূপতির কাগজখানির কমাধ্যক্ষ ছিল। চাঁদা-আদায়, ছাপাখানা ও বাজারের দেনা শোধ, চাকরদের বেতন দেওয়া, এসমস্তই উমাপদর উপর ভার ছিল। ইতিমধ্যে হঠাৎ একদিন কাগজওয়ালার নিকট হইতে উকিলের চিঠি পাইয়া ভূপতি আশ্চর্য হইয়া গেল। ভূপতির নিকট হইতে তাহদের ২৭০০ টাকা পাওনা জানাইয়াছে। ভূপতি উমাপদকে ডাকিয়া কহিল, “এ কী ব্যাপার। এ টাকা তো আমি তোমাকে দিয়ে দিয়েছি। কাগজের দেনা চার-পাঁচশোর বেশি তো হবার কথা নয়।” উমাপদ কহিল, “নিশ্চয় এরা ভুল করেছে।” কিন্তু, আর চাপা রহিল না। কিছুকাল হইতে উমাপদ এইরুপ ফাঁক দিয়া আসিতেছে। কেবল কাগজ সম্বন্ধে নহে, ভূপতির নামে উমাপদ বাজারে অনেক দেনা করিয়াছে। গ্রামে সে যে একটি পাকা বাড়ি নিমাণ করিতেছে তাহার মালমসলার কতক ভূপতির নামে লিখাইয়াছে, অধিকাংশই কাগজের টাকা হইতে শোধ করিয়াছে। 3qや গল্পগুচ্ছ যখন নিতান্তই ধরা পড়িল তখন সে রক্ষ বরে কহিল, “আমি তো আর নিরদেশ হচ্ছি নে। কাজ করে আমি ক্লমে কুমে শোধ দেব— তোমার সিকি-পয়সার দেনা যদি বাকি থাকে তবে আমার নাম উমাপদ নয়।” তাহার নামের ব্যত্যয়ে ভূপতির কোনো সাম্বনা ছিল না। অথের ক্ষতিতে ভূপতি তত ক্ষম হয় নাই, কিন্তু অকস্মাৎ এই বিশ্বাসঘাতকতায় সে যেন ঘর হইতে শন্যের মধ্যে পা ফেলিল । সেইদিন সে অকালে অন্তঃপরে গিয়াছিল। পথিবীতে একটা যে নিশ্চয় ব্যাকুল হইয়াছিল। চার তখন নিজের দঃখে সন্ধ্যাদীপ নিবাইয়া জানলার কাছে অন্ধকারে বসিয়া ছিল। উমাপদ পরদিনেই ময়মনসিংহে যাইতে প্রস্তুত। বাজারের পাওনাদাররা খবর পাইবার পবেই সে সরিয়া পড়িতে চায়। ভূপতি ঘণাপবেক উমাপদর সহিত কথা কহিল না— ভূপতির সেই মৌনাবস্থা উমাপদ সৌভাগ্য বলিয়া জ্ঞান করিল। অমল আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “মন্দা বোঠান, এ কী ব্যাপার। জিনিসপত্র গোছাবার ধমে যে ?” মন্দা। আর ভাই, যেতে তো হবেই। চিরকাল কি থাকব। অমল । যাচ্ছ কোথায় । মন্দা । দেশে । অমল। কেন। এখানে অসুবিধাটা কী হল। মন্দা। অসুবিধে আমার কী বল। তোমাদের পাঁচজনের সঙ্গে ছিলম, সখেই ছিলাম। কিন্তু অন্যের অসুবিধে হতে লাগল যে – বলিয়া চারীর ঘরের দিকে কটাক্ষ করিল। অমল গম্ভীর হইয়া চুপ করিয়া রহিল। মন্দা কহিল, “ছি ছি, কাঁ লজা। বাব কী মনে করলেন ।” অমল এ কথা লইয়া আর অধিক আলোচনা করিল না। এটুকু স্থির করিল, চার তাহাদের সম্বন্ধে দাদার কাছে এমন কথা বলিয়াছে যাহা বলিবার নহে। অমল বাড়ি হইতে বাহির হইয়া রাস্তায় বেড়াইতে লাগিল। তাহার ইচ্ছা হইল এ বাড়িতে আর ফিরিয়া না আসে। দাদা যদি বোঠানের কথায় বিশ্বাস করিয়া তাহাকে অপরাধী মনে করিয়া থাকেন তবে মন্দা যে পথে গিয়াছে তাহাকেও সেই পথে যাইতে হয়। মন্দাকে বিদায় এক হিসাবে অমলের প্রতিও নিবাসনের আদেশ- সেটা কেবল মখে ফটিয়া বলা হয় নাই মাত্র। ইহার করে কতব্য খুব সপেস্ট— আর একদণ্ডও এখানে থাকা নয়। কিন্তু দাদা যে তাহার সম্বন্ধে কোনোপ্রকার অন্যায় ধারণা মনে মনে পোষণ করিয়া রাখবেন সে হইতেই পারে না। এতদিন তিনি অক্ষয় বিশ্বাসে তাহাকে ঘরে স্থান দিয়া পালন করিয়া আসিতেছেন, সে বিশ্বাসে ষে অমল কোনো অংশে আঘাত দেয় নাই সে কথা দাদাকে না যঝোইয়া সে কেমন করিয়া যাইবে। ভূপতি তখন আত্মীয়ের কৃতঘ্যতা, পাওনাদারের তাড়না, উচ্ছৃঙ্খল হিসাবপত্র এবং শন্য তহবিল লইয়া মাথায় হাত দিয়া ভাবিতেছিল। তাহার এই শাক মনোদঃখের কেহ দোসর ছিল না-চিত্তবেদনা এবং ঋণের সঙ্গে একলা দাঁড়াইয়া যুদ্ধ করিবার छकनौक .# በጣጫ जमा छुनाउ धन्छूठ हऐष्ठदिन । . . . . ” ‘s ७धन नभन्न अभन्न करएन्न अटला ऋग्नग्न भाषा धावण कब्रिज । झुनौठ निबध्न अभाव छिन्ठाद्र भश एऐ७ ए*ा९ व्यकिब्रा अठिा काश्णि। कश्णि, “थवद्र की अवज ।” DDBB BBBBBS DDD BDDBSBDD BBBB BBBD DDD DDDS DDDD DDSDDS DD DBB BBDD D BDD BBBD DZD হয়েছে ৷” * ভূপতি আশ্চর্য হইয়া কহিল, “তোমার উপরে সন্দেহ!” মনে মনে ভাবিল, সংসার যেরপে দেখিতেছি তাহাতে কোনদিন অমলকেও সন্দেহ করিব আশ্চর্য নাই।’ অমল । ৰোঠান কি আমার চরিত্র সম্প্রবন্ধে তোমার কাছে কোনোরকম দোৰায়েপ করেছেন । ভূপতি ভাবিল, ও এই ব্যাপার! বাঁচা গেল। নেহের অভিমান। সে মসে করিয়াছিল, সবনাশের উপর বঝি আর-একটা কিছু সবনাশ ঘটিয়াছে। কিছু গরতের সংকটের সময়েও এই-সকল তুচ্ছ বিষয়ে কণপাত করিতে হয়। সংসার এ দিকে সাঁকেও নাড়াইবে অথচ সেই সাঁকোর উপর দিয়া তাহার শাকের অাঁটিগুলো পার করিবার জন্য তাগিদ করিতেও ছাড়িবে না। অন্য সময় হইলে ভূপতি অমলকে পরিহাস করিত, কিন্তু আজ তাহার সে প্রফুল্লতা ছিল না। সে বলিল, “পাগল হয়েছ নাকি।” অমল আবার জিজ্ঞাসা করিল, “বোঠান কিছু বলেন নি ?” ভূপতি। তোমাকে ভালোবাসেন বলে যদি কিছ বলে থাকেন তাতে রাগ করবার ৮ কোনো কারণ নেই। অমল। কাজকমের চেষ্টায় এখন আমার অনায় যাওয়া উচিত। ভূপতি ধমক দিয়া কহিল, “অমল, তুমি কী ছেলেমানষি করছ তার ঠিক নেই। এখন পড়াশনো করো, কাজকম পরে হবে।” .. অমল বিমষ্মখে চলিয়া আসিল, ভূপতি তাহার কাগজের গ্রাহকদের মল্যপ্রাপ্তির তালিকার সহিত তিন বৎসরের জমাখরচের হিসাব মিলাইতে বসিয়া গেল । দশম পরিচ্ছেদ অমল স্থির করিল, বউঠানের সঙ্গে মোকাবিলা করিতে হইবে, এ কথাটার শেষ না করিয়া ছাড়া হইবে না। বোঠানকে যে-সকল শম্ভ শক্ত কথা শনাইবে মনে মনে তাহা আবান্তি কাঁৱতে লাগিল। Y- মন্দা চলিয়া গেলে চার সংকল্প করিল, অমলকে সে নিজে হইতে ডাকিয়া পাঠাইয়া তাহার রোষশান্তি করবে। কিন্তু একটা লেখার উপলক্ষ করিয়া ডাকিতে হইবে। অমলেরই একটা লেখার অনুকরণ করিয়া ‘অমাবস্যার অালো প্রামে সে একটা । প্রবন্ধ ফাঁদিয়াছে। চার এটুকু বঝিয়াছে যে, তাহার স্বাধীন ছাঁসের লেখা অমল পছন্দ করে না । . . . 遜 రీ’; Sqb গল্পগুচ্ছ অতলপশা অন্ধকারের মধ্যে ষোলোকলা চাঁদের সমস্ত আলোক স্তরে স্তরে আবদ্ধ হইয়া আছে, তাহার এক রশিমও হারাইয়া যায় নাই ; তাই পণিমার উজ্জলতা অপেক্ষা অমাবস্যার কালিমা পরিপণতর- ইত্যাদি। অমল নিজের সকল লেখাই সকলের কাছে প্রকাশ করে এবং চার তাহা করে না-পর্ণিমা-অমাবস্যার তুলনার মধ্যে কি সেই কথাটার আভাস আছে। ر এ দিকে এই পরিবারের তৃতীয় ব্যক্তি ভূপতি কোনো আসন্ন ঋণের তাগিদ হইতে মন্তিলাভের জন্য তাহার পরম বন্ধ মতিলালের কাছে গিয়াছিল। মতিলালকে সংকটের সময় ভূপতি কয়েক হাজার টাকা ধার দিয়াছিল—সেদিন অত্যন্ত বিব্রত হইয়া সেই টাকাটা চাহিতে গিয়াছিল। মতিলাল নানের পর গা খালিয়া পাখার হাওয়া লাগাইতেছিল এবং একটা কাঠের বাক্সর উপর কাগজ মেলিয়া অতি ছোটো অক্ষরে সহস্র দরগানাম লিখিতেছিল। ভূপতিকে দেখিয়া অত্যন্ত হাদ্যতার পারে কহিল, “এসো এসো— আজকাল তো তোমার দেখাই পাবার জো নেই।” কথা বলছ। এর মধ্যে তোমার কাছ থেকে কিছ নিয়েছি নাকি।” ভূপতি সাল-তারিখ সমরণ করাইয়া দিলে মতিলাল কহিল, “ওঃ, সেটা তো অনেকদিন হল তামাদি হয়ে গেছে।” ভূপতির চক্ষে তাহার চতুদিকের চেহারা সমস্ত যেন বদল হইয়া গেল। সংসারের যে অংশ হইতে মুখোশ খসিয়া পড়িল সে দিকটা দেখিয়া আতকে ভূপতির শরীর কণ্টকিত হইয়া উঠিল। হঠাৎ বন্যা আসিয়া পড়িলে ভীত ব্যক্তি যেখানে সকলের চেয়ে উচ্চ চড়া দেখে সেইখানে যেমন ছটিয়া যায়, সংশয়াকান্ত বহিঃসংসার হইতে ভূপতি তেমনি বেগে অন্তঃপরে প্রবেশ করিল ; মনে মনে কহিল, আর যাই হোক, চার তো আমাকে বঞ্চনা করিবে না।’ t চার তখন খাটে বসিয়া কোলের উপর বালিশ এবং বালিশের উপর খাতা রাখিয়া ক:কিয়া পড়িয়া একমনে লিখিতেছিল। ভূপতি যখন নিতান্ত তাহার পাশে আসিয়া দড়িাইল তখনই তাহার চেতনা হইল, তাড়াতাড়ি তাহার খাতাটা পায়ের নীচে চাপিয়া বসিল । । — মনে যখন বেদনা থাকে তখন অলপ আঘাতেই গরে্তর ব্যথা বোধ হয়। চার এমন অনাবশ্যক সত্বরতার সহিত তাহার লেখা গোপন করিল দেখিয়া ভূপতির মনে शाछठा । ভূপতি ধীরে ধীরে খাটের উপর চারীর পাশে বসিল। চার তাহার রচনাল্লোতে অনপেক্ষিত বাধা পাইয়া এবং ভূপতির কাছে হঠাৎ খাতা লুকাইবার ব্যস্ততায় অপ্রতিভ হইয়া কোনো কথাই জোগাইয়া উঠিতে পারিল না। সেদিন ভূপতির নিজের কিছু দিবার বা কহিবার ছিল না। সে রিক্তহস্তে চারর নিকটে প্রাথী হইয়া আসিয়াছিল। চারার কাছ হইতে আশংকাধর্মী ভালোবাসার একটা-কোনো প্রশন, একটা-কিছ জাদর পাইলেই তাহার ক্ষত-যন্ত্রণায় ঔষধ পড়িত। কিন্তু হ্যাদে লক্ষী হৈল লক্ষীছাড়া, এক মহত্যের প্রয়োজনে প্রতিভাণ্ডারের চাৰি চায় যেন কোনোখানে খাজিয়া পাইল না। উভয়ের সকঠিন মৌনে ঘরের নীরবতা अठान्ठ निर्मावप्ल शईय़ा आनिज । । नष्प्लेनौफु Sꬃእ খানিকক্ষণ নিতান্ত চুপচাপ থাকিয়া ভূপতি নিশ্বাস ফেলিয়া খাট ছাড়িয়া উঠিল এবং ধীরে ধীরে বাহিরে চলিয়া আসিল। সেই সময় অমল বিস্তর শক্ত শক্ত কথা মনের মধ্যে বোঝাই করিয়া লইয়া চারর ঘরে দুতপদে আসিতেছিল, পথের মধ্যে অমল ভূপতির অত্যন্ত শাক বিবর্ণ মাখ দেখিয়া উদবিগ্ন হইয়া থামিল, জিজ্ঞাসা করিল, “দাদা, তোমার অসংখ করেছে ?” অমলের লিখে স্বর শনিবামার হঠাৎ ভূপতির সমস্ত হদয় তাহার অঙ্গরাখি লইয়া বকের মধ্যে যেন ফলিয়া উঠিল। কিছুক্ষণ কোনো কথা বাহির হইল না। সবলে আত্মসম্বরণ করিয়া ভূপতি আদ্র বরে কহিল, “কিছ হয় নি, অমল। এবারে কাগজে তোমার কোনো লেখা বেরোচ্ছে কি।” অমল শস্ত শক্ত কথা যাহা সঞ্চয় করিয়াছিল তাহা কোথায় গেল। তাড়াতাড়ি চারার ঘরে আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “বউঠান, দাদার কী হয়েছে বলো দেখি।” চার কহিল, “কই, তা তো কিছু বঝতে পারলাম না। অন্য কাগজে বোধ হয় ওঁর কাগজকে গাল দিয়ে থাকবে।” अभळ भाथा माफ़िठन । না ডাকিতেই অমল আসিল এবং সহজভাবে কথাবাত আরম্ভ করিয়া দিল দেখিয়া চার অত্যন্ত আরাম পাইল। একেবারেই লেখার কথা পাড়িল-কাঁহল, “আজ আমি ‘অমাবস্যার আলো’ বলে একটা লেখা লিখছিলাম; আর-একটা হলেই তিনি সেটা দেখে ফেলেছিলেন।” – চার নিশ্চয় সিথর করিয়াছিল, তাহার নতন লেখাটা দেখিবার জন্য অমল পীড়াপীড়ি করিবে। সেই অভিপ্রায়ে খাতাখানা একটা নাড়াচাড়াও করিল। কিন্তু, অমল একবার তাঁরদটিতে কিছুক্ষণ চারার মাখের দিকে চাহিল—কী বঞ্চিল, কী ভাবিল, জানি না। চকিত হইয়া উঠিয়া পড়িল । পবীতপথে চলিতে চলিতে হঠাৎ এক সময়ে মেঘের কুয়াশা কাটিবামাত্র পথিক যেন চমকিয়া দেখিল, সে সহপ্ল হস্ত গভীর গহবরের মধ্যে পা বাড়াইতে যাইতেছিল। অমল কোনো কথা না বলিয়া একেবারে धन्न छ्ट्रेरठ वाश्म्नि श्रॅग्ना tगल । চার অমলের এই অভূতপবে ব্যবহারের কোনো তাৎপৰ বকিতে পারিল না। একাদশ পরিচ্ছেদ পরদিন ভূপতি আবার অসময়ে শয়নঘরে আসিয়া চারকে ডাকাইয়া আনাইল। কহিল, “চার অমলের বেশ একটি ভালো বিবাহের প্রস্তাব এসেছে।” চার অন্যমনস্ক ছিল। কহিল, “ভালো কী এসেছে।” ভূপতি। বিয়ের সকখ। . চার। কেন, আমাকে কি পছন্দ হল না। . . . . ভূপতি উচ্চৈঃস্বরে হাসিয়া উঠিল। কহিল, “তোমাকে পছন্দ হল কি না সে কথা ७थन७ अभजळक छिखाना कब्रा इञ्च नि । र्यामट्टे-वा शरव्र थारक, आधद्र र७ा ४को यशक्नोथाळ नाव आप्श्, न अभि झन कब्र शर्काइ ट्न ” ई. झाग्रए। आ, कौ वकइ छाप्न ठिक नहे। छूभ हर्ष क्लाज, हङाझाग्नुशम्लग्न झम्क्न्थ 8too গল্পগুচ্ছ এসেছে।-চারার মখে লাল হইয়া উঠিল। ভূপতি। তা হলে কি ছটে তোমাকে খবর দিতে আসতুম। বকশিশ পাবার তো आणा झिल ना ॥ – চার। অমলের সম্বশ্ব এসেছে ? বেশ তো। তা হলে আর দেরি কেন। ভূপতি। বর্ধমানের উকিল রঘুনাথবাব তাঁর মেয়ের সঙ্গে বিবাহ দিয়ে অমলকে বিলেত পাঠাতে চান। চার বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “বিলেত ?” ভূপতি। হা, বিলেত। ‘ চার। অমল বিলেত যাবে? বেশ মজা তো। বেশ হয়েছে, ভালোই হয়েছে। তা তুমি তাকে একবার বলে দেখো। ভূপতি। আমি বলবার আগে তুমি তাকে একবার ডেকে বকিয়ে বললে ভালো হয় না ? চার। আমি তিন হাজার বার বলেছি। সে আমার কথা রাখে না। আমি তাকে বলতে পারব না । ভূপতি। তোমার কি মনে হয়, সে করবে না ? চার। আরও তো অনেকবার চেষ্টা দেখা গেছে, কোনোমতে তো রাজি হয় নি। ভূপতি। কিন্তু এবারকার এ প্রস্তাবটা তার পক্ষে ছাড়া উচিত হবে না। আমার অনেক দেনা হয়ে গেছে, অমলকে আমি তো আর সেরকম করে আশ্রয় দিতে পারব না। ভূপতি অমলকে ডাকিয়া পাঠাইল। অমল আসিলে তাহাকে বলিল, “বধমানের উকিল রঘুনাথবাবর মেয়ের সঙ্গে তোমার বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। তাঁর ইচ্ছে, বিবাহ দিয়ে তোমাকে বিলেত পাঠিয়ে দেবেন। তোমার কী মত।” অমল কহিল, “তোমার যদি অনুমতি থাকে, আমার এতে কোনো অমত নেই।” অমলের কথা শুনিয়া উভয়ে আশ্চর্য হইয়া গেল। সে যে বলিবামারই রাজি হইবে, এ কেহ মনে করে নাই। চার তীরস্বরে ঠাট্টা করিয়া কহিল, “দাদার অনুমতি থাকিলেই উনি মত দেবেন। কী আমার কথার বাধ্য ছোটো ভাই! দাদার পরে ভঙ্কি এতদিন কোথায় ছিল, ঠাকুরপো।” * , अप्रज ऊंख्न्न ना निम्ना ७कप्टेथान शाभदाच्न झझ कब्रिल । -x – অমলের নিরক্তরে চার্য যেন তাহাকে চেতাইয়া তুলিবার জন্য বিগণতর কাজের সঙ্গে বলিল, “তার চেয়ে বলো-না কেন, নিজের ইচ্ছে গেছে। এতদিন ভাগ করে থাকবার কী দরকার ছিল যে বিয়ে করতে চাও না। পেটে খিদে মুখে লাজ!” ভূপতি উপহাস করিয়া কহিল, “অমল তোমার খাতিরেই এতদিন খিদে চেপে রেখেছিল, পাছে ভাজের কথা শুনে তোমার হিংসে হয়।” । काब्रट् ७ई कथाम्न जाज शईमा फँठिंब्रा रकजांश्ल कब्रिग्ना बलिष्ठ लाभिश, “श्रिटन ! ठा बझे-कि ! कथंथरना आभाब्र श्रिप्श शम्न मा । eब्रक काङ्ग बणा ठाभाब्र छब्रि अनाङ्ग ।” · ভূপতি। ঐ দেখো। নিজের পীকে ঠাষ্ট্রও করতে পারব না! छान्नद । ना, eग्नकभ ॐाझे श्रीमान्न झालना लीtण मा । ভূপতি। আচ্ছা, গরতের অপরাধ করেছি। মাপ করো। স্থা হোক, বিয়ের প্রস্তাবটা नष्प्लेनौफ़ – Յյֆ তা হলে সিন্ধর ; अभल कश्लि, “शाँ।” চার্য। মেয়েটি ভালো কি মন্দ তাও বুঝি একবার দেখতে যাবারও তর সইল না। তোমার বে এমন দশা হয়ে এসেছে তা তো একটা আভাসেও প্রকাশ কর নি। ভূপতি। অমল, মেয়ে দেখতে চাও তো তার বন্দোবস্ত করি। খবর নিয়েছি, प्रक्टर्बाप्ने नयिन्मन्नौ । অমল। না, দেখবার দরকার দেখি নে । চার্য। ওর কথা শোন কেন। সে কি হয়। কনে না দেখে বিয়ে হবে ? ও না । দেখতে চায় আমরা তো দেখে নেব । অমল। না দাদা, ঐ নিয়ে মিথ্যে দেরি করবার দরকার দেখি নে । চায়। কাজ নেই বাপ-দেরি হলে বুক ফেটে যাবে। তুমি টোপর মাথায় দিয়ে এখনি বেরিয়ে পড়ো। কী জানি, তোমার সাত রাজার ধন মানিকটিকে যদি আর কেউ কেড়ে নিয়ে যায়! অমলকে চার কোনো ঠাট্রাতেই কিছুমাত্র বিচলিত করিতে পারিল না। চার। বিলেত পালাবার জন্যে তোমার মনটা বঝি দৌড়চ্ছে? কেন, এখানে আমরা তোমাকে মারছিলাম না ধরছিলাম ? হ্যাট কোট পরে সাহেব না সাজলে এখনকার ছেলেদের মন ওঠে না। ঠাকুরপো, বিলেত থেকে ফিরে এসে আমাদের মতো কালা আদমিদের চিনতে পারবে তো ? অমল কহিল, “তা হলে আর বিলেত যাওয়া কী করতে।” ভূপতি হাসিয়া কহিল, “কালো রপে ভোলবার জন্যেই তো সাত সমদ্র পেরোনো। তা ভয় কী চার্য, আমরা রইলাম, কালোর ভক্তের অভাব হবে না।” ভূপতি খুশি হইয়া তখনই বর্ধমানে চিঠি লিখিয়া পাঠাইল। বিবাহের দিন স্থির হইয়া গেল। – স্বাদশ পরিচ্ছেদ ইতিমধ্যে কাগজখানা তুলিয়া দিতে হইল। ভূপতি খরচ আর জোগাইয়া উঠিতে পারিল না। লোকসাধারণ-নামক একটা বিপলে নিমাম পদার্থের যে সাধনায় ভূপতি দীর্ঘকাল দিনরাতি একান্তমনে নিযুক্ত ছিল সেটা একম হতে বিসঙ্গীন দিতে হইল। ভূপতির জীবনের সমস্ত চেষ্টা যে অভ্যন্ত পথে গত বারো বৎসর অবিচ্ছেদে চলিয়া আসিতেছে সেটা হঠাৎ এক জায়গায় ষেন জলের মাঝখানে আসিয়া পড়িল। ইছার জন্য ভূপতি কিছুমাত্র প্রস্তুত ছিল না। অকস্মাৎ-বাধাপ্রাপ্ত তাহার এতদিনকার সমস্ত উদ্যমকে সে কোথায় ফিরাইয়া লইয়া যাইবে। তাহারা ৰেন উপস্বাসী অনাথ শিশসন্তানদের মতো ভূপতির মাখের দিকে চাহিল, ভূপতি তাহাদিগকে আপন অন্ত পরে করুণাময়ী নারী তখন কী ভাবিতেছিল। সে মনে মনে বলতেছিল, এ কীষ্টাশ্চৰ, অমলের । বিবাহ হইবে সে তো খব ভালোই। কিন্তু এতকাল পরে আমঞ্চে ছাড়িয়া পরের ‘ घाख्न क्बािश् कब्रम्ला क्शिाउ अिलम्रा वाद्देश्य, देशएउ अशब्र भष्म अकपिख अक्झेर्पानद्र 8వ গল্পগুচ্ছ জন্য বিধাও জন্মিল না ? এতদিন ধরিয়া তাহাকে যে আমরা এত যত্ন করিয়া রাখলাম, আর যেমনি বিদায় লইবার একটুখানি ফাঁক পাইল অমনি কোমর বধিয়া প্রস্তুত হইল, যেন এতদিন সংযোগের অপেক্ষা করিতেছিল। অথচ মাখে কতই মিষ্ট, কতই ভালোবাসা। মানবকে চিনিবার জো নাই। কে জানিত, যে লোক এত লিখিতে পারে তাহার হাদয় কিছুমাত্র নাই।’ ; নিজের হদয়প্রাচুর্যের সহিত তুলনা করিয়া চার অমলের শান্য হাদয়কে অত্যন্ত অবজ্ঞা করিতে অনেক চেষ্টা করিল, কিন্তু পারিল না। ভিতরে ভিতরে নিয়ত একটা বেদনার উদবেগ তপত শালের মতো তাহার অভিমানকে ঠেলিয়া ঠেলিয়া তুলিতে লাগিল, অমল আজ বাদে কাল চলিয়া যাইবে, তব এ কয়দিন তাহার দেখা নাই। আমাদের মধ্যে যে পরপর একটা মনান্তর হইয়াছে সেটা মিটাইয়া লইবার আর অবসরও হইল না।’ চার প্রতিক্ষণে মনে করে, অমল আপনি আসিবে—তাহাদের এতদিনকার খেলাধুলা এমন করিয়া ভাঙিবে না, কিন্তু অমল আর আসেই না। অবশেষে যখন যাত্রার দিন অত্যন্ত নিকটবতী হইয়া আসিল তখন চার নিজেই অমলকে ডাকিয়া পাঠাইল । অমল বলিল, “আর-একট পরে যাচ্ছি।” চার তাহাদের সেই বারান্দার চৌকিটাতে গিয়া বসিল। সকালবেলা হইতে ঘন মেঘ করিয়া গমট হইয়া আছে—চার তাহার খোলা চুল এলো করিয়া মাথায় জড়াইয়া একটা হাতপাখা লইয়া ক্লান্ত দেহে অলপ অরুপ বাতাস করিতে লাগিল। x অত্যন্ত দেরি হইল। ক্লমে তাহার হাতপাখা আর চলিল না। রাগ দুঃখ অধৈৰ্য তাহার বকের ভিতরে ফটিয়া উঠিল। মনে মনে বলিল, নাই আসিল অমল, তাতেই বা কাঁ। কিন্তু তব পদশব্দ মাত্রেই তাহার মন বারের দিকে ছটিয়া যাইতে লাগিল। দরে গিজায় এগারোটা বাজিয়া গেল। স্নানান্তে এখনি ভূপতি থাইতে আসিবে। এখনও আধ ঘণ্টা সময় আছে, এখনও অমল যদি আসে। যেমন করিয়া হোক, তাহাদের কয়দিনকার নীরব ঝগড়া আজ মিটাইয়া ফেলিতেই হইবে- অমলকে এমনভাবে বিদায় দেওয়া যাইতে পারে না। এই সমবয়সি দেওর-ভাজের মধ্যে যে চিরন্তন মধরে সম্মবন্ধটকুে আছে– অনেক ভাব, আড়ি, অনেক নেহের দৌরাত্ম্য, অনেক বিশ্লখ সখালোচনায় বিজড়িত একটি চিরচ্ছায়াময় লতাবিতান-অমল সে কি আজ ধলায় লটাইয়া দিয়া বহুদিনের জন্য বহন্দরে চলিয়া যাইবে। একট পরিতাপ হইবে না? তাহার তলে কি শেষ জলও সিঞ্চন করিয়া যাইবে না- তাহাদের অনেকদিনের দেওয়ভাজ-সম্বন্ধের শেষ আশ্রজেল ! আধঘণ্টা প্রায় অতীত হয়। এলো খোঁপা খলিয়া খানিকটা চুলের গাছ চায় দ্রুতবেগে আঙলে জড়াইতে এবং খলিতে লাগিল। অশ্র সবরণ করা আর যায় না। চাকর আসিয়া কহিল, “মঠাকরুন, বাবর জন্যে ভাব বের করে দিতে হবে।” চার অচল হইতে-ভাঁড়ারের চাবি খলিয়া কন করিয়া চাকরের পায়ের কাছে ফেলিয়া দিল— সে আশ্চর্য হইয়া চাবি লইয়া চলিয়া গেল । চারর বকের কাছ হইতে কী-একটা ঠেলিয়া কণ্ঠের কাছে উঠিয়া আসিতে त्नान्निन्न ! – * , যথাসময়ে ভূপতি সহাস্যমন্খে খাইতে আসিল। চার পাখা-হাতে আহায়প্ৰামে नेमौछु 8も○ উপস্থিত হইয়া দেখিল, অমল ভূপতির সঙ্গে আসিয়াছে। চায় তাহার মাখের দিকে 5ाश्लि ना ।’ অমল জিজ্ঞাসা করিল, “বোঠান, আমাকে ডাকছ ?” চার কহিল, “না, এখন আর দরকার নেই।” অমল । তা হলে আমি যাই, আমার আবার অনেক গোছাবার আছে। চার তখন দীপ্তচক্ষে একবার অমলের মুখের দিকে চাহিল; কহিল, “বাও ।” অমল চারার মাখের দিকে একবার চাহিয়া চলিয়া গেল। আহারান্তে ভূপতি কিছুক্ষণ চারার কাছে বসিয়া থাকে। আজ দেনাপাওনাহিসাবপত্রের হাঙ্গামে ভূপতি অত্যন্ত ব্যস্ত, তাই আজ অন্তঃপারে বেশিক্ষণ থাকিতে পরিবে না বলিয়া কিছু ক্ষম হইয়া কহিল, “আজ আর আমি বেশিক্ষণ বসত্ত্বে পারছি নে— আজ অনেক ঝঞ্জাট ।” wمس চার বলিল, “তা যাও-না।” ভূপতি ভাবিল, চার অভিমান করিল। বলিল, “তাই বলে যে এখনই যেতে হবে তা নয়; একটা জিরিয়ে যেতে হবে।” বলিয়া বসিল। দেখিল চার বিমৰ্ষ হইয়া আছে। ভূপতি অনুতপ্ত চিত্তে অনেকক্ষণ বসিয়া রহিল, কিন্তু কোনোমতেই কথা জমাইতে পারিল না। অনেকক্ষণ কথোপকথনের ব্যথা চেষ্টা করিয়া ভূপতি কহিল, “অমল তো কাল চলে যাচ্ছে, কিছুদিন তোমার বোধ হয় খুব একলা বোধ হবে।” काब्रः ठाशव्र काट्ना ७ख्द्र ना निम्ना बन कौ-अको आनिष्ठ क्लो कर्गब्रग्ना अन; ঘরে চলিয়া গেল। ভূপতি কিয়ৎক্ষণ অপেক্ষা করিয়া বাহিরে প্রস্থান করিল। চার আজ আমলের মাখের দিকে চাহিয়া লক্ষ করিয়াছিল, অমল এই কয়দিনেই অত্যন্ত রোগা হইয়া গেছে–তাহার মুখে তরণেতার সেই ক্ষতি একেবারেই নাই । ইহাতে চার সখেও পাইল বেদনাও বোধ করিল। আসন্ন বিচ্ছেদই যে অমলকে ক্লিষ্ট করিতেছে, চারার তাহাতে সন্দেহ রহিল না; কিন্তু তব অমলের এমন ব্যবহার কেন। কেন সে দরে দরে পালাইয়া বেড়াইতেছে। বিদায়কালকে কেন সে ইচ্ছাপবে’ক এমন বিরোধতিৰ করিয়া তুলিতেছে। বিছানায় শাইয়া ভাবিতে ভাবিতে সে হঠাৎ চমকিয়া উঠিয়া বসিল। হঠাৎ মন্দার কথা মনে পড়িল। যদি এমন হয়, অমল মন্দাকে ভালোবাসে । মন্দা চলিয়া গেছে বলিয়াই যদি অমল এমন করিয়া—ছি! অমলের মন কি এমন হইবে। এত ক্ষয় ? এমন কলষিত ? বিবাহিত রমণীর প্রতি তাহার মন যাইবে ? অসম্ভব। সন্দেহকে একান্ত চেষ্টায় দরে করিয়া দিতে চাহিল কিন্তু সন্দেহ তাহাকে সবলে দংশন করিয়া ब्रश्छि । ** &、 . अर्धान कब्रम्रा बनाङ्गकाज आनिल। त्यर्थ ब्रिष्काब्र श्हेल मा। अभण आीनब्रा কম্পিতকণ্ঠে কহিল, “বেঠান, আমার যাবার সময় হয়েছে। তুমি এখন থেকে দাদাকে দেখো। তাঁর বড়ো সংকটের অবস্থা–তুমি ছাড়া তাঁর আর সাম্বলায় কোনো পথ নেই।” – 党 : श्रमण हुनउिब्र विवश च्णान अब एकभिग्ना नश्वान श्वाब्रा उाशञ्चमशfउद्र कथा জানিতে পারিয়াছিল। ভূপতি যে কিরুপ নিঃশব্দে আপন খেদেশীয় সহিত একলা 8&B গল্পগুচ্ছ পালিত আত্মীয়স্বজনদিগকে এই প্রলয়সংকটে বিচলিত হইতে দেয় নাই, ইহা সে চিন্তা করিয়া চুপ করিয়া রহিল। তার পরে সে চারার কথা ভাবিল, নিজের কথা ভাবিল, কর্ণমল লোহিত হইয়া উঠিল, সবেগে বলিল, চুলোয় যাক আষাঢ়ের চাঁদ আর অমাবস্যার অালো। আমি ব্যারিস্টার হয়ে এসে দাদাকে যদি সাহায্য করতে পারি তবেই আমি প্রযেমানুষ।” গত রাগ্নি সমস্ত রাত জাগিয়া চার ভাবিয়া রাখিয়াছিল, অমলকে বিদায়কালে কী কথা বলিবে—সহাস্য অভিমান এবং প্রফুল্ল ঔদাসীন্যের বারা মাজিয়া মাজিয়া সেই কথাগুলিকে সে মনে মনে উজল ও শাণিত করিয়া তুলিয়াছিল। কিন্তু বিদায় দিবার সময় চারার মুখে কোনো কথাই বাহির হইল না। সে কেবল বলিল, “চিঠি লিখবে তো, অমল ?” – অমল ভূমিতে মাথা রাখিয়া প্রণাম করিল, চার ছটিয়া শয়নঘরে গিয়া বার বন্ধ कर्गब्रम्ना झिठन । রয়োদশ পরিচ্ছেদ ভূপতি বধমানে গিয়া অমলের বিবাহ-অন্তে তাহাকে বিলাতে রওনা করিয়া ঘরে ফিরিয়া আসিল । – নানা দিক হইতে ঘা খাইয়া বিশ্বাসপরায়ণ ভূপতির মনে বহিঃসংসারের প্রতি একটা বৈরাগ্যের ভাব আসিয়াছিল। সভাসমিতি মেলামেশা কিছই তাহার ভালো লাগিত না। মনে হইল, “এই-সব লইয়া আমি এতদিন কেবল নিজেকেই ফকি দিলাম— জীবনের সখের দিন ব্যথা বহিয়া গেল এবং সারভাগ আবজানাকুণ্ডে ফেলিলাম।” ভূপতি মনে মনে কহিল, ‘ষাক, কাগজটা গেল, ভালোই হইল। মন্তিলাভ করিলাম। সন্ধ্যার সময় অাঁধারের সত্রপাত দেখিলেই পাখি যেমন করিয়া নীড়ে ফিরিয়া আসে, ভূপতি সেইরাপ তাহার দীর্ঘদিনের সঞ্চরণক্ষেত্র পরিত্যাগ করিয়া অন্তঃপারে চারার কাছে চলিয়া আসিল। মনে মনে পিথর করিল, বাস, এখন আর কোথাও নয়; এইখানেই আমার পিথতি । যে কাগজের জাহাজটা লইয়া সমস্ত দিন খেলা করিতাম সেটা ডুবিল, এখন ঘরে চলি। * বোধ করি ভূপতির একটা সাধারণ সংস্কার ছিল— শ্মীর উপর অধিকার কাহাকেও অজ’ন করিতে হয় না, সী ধ্ৰুবতারার মতো নিজের আলো নিজেই জালাইয়া রাখে—হাওয়ায় নেবে না, তেলের অপেক্ষা রাখে না। বাহিরে যখন ভাঙচুর আরম্ভ হইল তখন অন্তঃপারে কোনো খিলানে ফাটল ধরিয়াছে কি না তাহা একবার পরখ করিয়া দেখার কথাও ভূপতির মনে স্থান পায় নাই। ভূপতি সন্ধ্যার সময় বধমান হইতে ধড়ি ফিরিয়া আসিল। তাড়াতাড়ি মাখহাত ধইয়া সকাল-সকাল খাইল। অমলের বিবাহ ও বিলাতযাত্রার আদ্যোপাত বিবরণ শনিবার জন্য স্বভাবতই চার একান্ত উৎসকে হইয়া আছে স্থির করিয়া ভূপতি আজ किश्धभाष्ठ विलम्व कब्रिज ना । छुनठि एनादान्न थळा विक्षनाग्न णिज्ञा भएऐल्ला भट्झगदक्लिन्न সদীর্ঘ নল টানিতে লাগিল। চার এখনও অনুপস্থিত,রোধ করি গহকাৰ করিতেছে। मणोनौक – & sve তামাক পড়িয়া শ্ৰান্ত ভূপতির ঘাম আসিতে লাগিল। ক্ষণে ক্ষণে ঘমের ঘোর ভাঙিয়া চমকিয়া জাগিয়া উঠিয়া সে ভাবিতে লাগিল, এখনও চায় আসিতেছে না কেন । অবশেষে ভূপতি থাকিতে না পারিয়া চারকে ডাকিয়া পাঠাইল। ভূপতি জিজ্ঞাসা করিল, “চার আজ যে এত দেরি করলে ?” চার তাহার জবাবদিহি না করিয়া কহিল, “হা, আজ দেরি হয়ে গেল।” চারীর আগ্রহপণ প্রশ্নের জন্য ভূপতি অপেক্ষা করিয়া রহিল; চার কোনো প্রশ্ন করিল না। ইহাতে ভূপতি কিছু ক্ষণ হইল। তবে কি চার অমলকে ভালোবাসে না। অমল যতদিন উপস্থিত ছিল ততদিন চার তাহাকে লইয়া আমোদ আহমাদ করিল, আর যেই চুলিয়া গেল অমনি তাহার সম্বন্ধে উদাসীন ! এইরুপ বিসদৃশ ব্যবহারে ভূপতির মনে খটকা লাগিল; সে ভাবিতে লাগিল, তবে কী চারীর হৃদয়ের গভীরতা নাই। কেবল সে আমোদ করিতেই জানে, ভালোবাসিতে পারে না ? মেয়েমানবের পক্ষে এরপ নিরাসক্ত ভাব তো ভালো নয়। – + চার ও অমলের সখিত্বে ভূপতি আনন্দ বোধ করিত। এই দুজনের ছেলেমানৰি আড়ি ও ভাব, খেলা ও মন্ত্রণা তাহার কাছে সমিস্ট কৌতুকাবহ ছিল; অমলকে চার সবাদ্য যে যত্ন-আদর করিত তাহাতে চারীর সকোমল হদয়ালতার পরিচয় পাইয়া ভূপতি মনে মনে খুশি হইত। আজ আশ্চর্য হইয়া তাৰিতে লাগিল, সে সমস্তই কি ভাসা-ভাসা, হৃদয়ের মধ্যে তাহার কোনো ভিত্তি ছিল না ? ভূপতি ভাবিল, চারার হাদয় যদি না থাকে তবে কোথায় ভূপতি আশ্রয় পাইবে। অল্পে অপে পরীক্ষা করিবার জন্য ভূপতি কথা পাড়িল, “চার, তুমি ভালো ছিলে তো ? তোমার শরীর খারাপ নেই ?” চার সংক্ষেপে উত্তর করিল, “ভালোই আছি।” ভূপতি। অমলের তো বিয়ে চুকে গেল। * * এই বলিয়া ভূপতি চুপ করিল। চার তৎকালোচিত একটা-কোনো সংগত কথা বলিতে অনেক চেষ্টা করিল, কোনো কথাই বাহির হইল না; সে আড়স্ট হইয়া রহিল। ভূপতি স্বভাবতই কখনও কিছু লক্ষ্য করিয়া দেখে না, কিন্তু অমলের বিদায়লোক তাহার নিজের মনে লাগিয়া আছে বলিয়াই চারার ঔদাসীন্য তাহাকে আঘাত করিল। তাহার ইচ্ছা ছিল, সমবেদনায় ব্যথিত চারর সঙ্গে অমলের কথা আলোচনা করিয়া সে হৃদয়ভার লাঘব করিবে। ভূপতি। মেয়েটিকে দেখতে বেশ —চার, ঘামোচ্ছ ? छान्नद कश्लि, “ना ।” ভূপতি। বেচারা অমল একলা চলে গেল। যখন তাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিলাম, সে ছেলেমানষের মতো কাঁদতে লাগল—দেখে এই বড়োবয়সে আমি আর চোখের জল রাখতে পারলাম না। গাড়িতে দুজন সাহেব ছিল, সম্বর কান্না দেখে ठाशञ्च भद्र शठे९ उाफ़ाठाफ़ि दिशना शक्लिन्ना छजिब्रा शब्न । फूनीक ऽकिठ श्रेञ्चा জিজ্ঞাসা করিল, “চার, অসুখ করেছে ?” । o శా శా * శాe * శా శా * : గాగా sve গল্পগুচ্ছ শনিতে পাইয়া প্রস্তপদে গিয়া দেখিল, চার মাটিতে পড়িয়া উপড় হইয়া কান্না রোধ করিবার চেষ্টা করিতেছে। * .. এরুপ দ্রুত শোকোচ্ছাস দেখিয়া ভূপতি আশ্চর্য হইয়া গেল। ভাবিল, চারকে কী ভুল বকিয়াছিলাম। চারর স্বভাব এতই চাপা যে, আমার কাছেও হাদয়ের কোনো বেদনা প্রকাশ করিতে চাহে না। যাহাদের প্রকৃতি এইরুপ তাহাদের ভালোবাসা সংগভীর এবং তাহাদের বেদনাও অত্যন্ত বেশি। চারার প্রেম সাধারণ সীলোকদের ন্যায় বাহির হইতে তেমন পরিদশ্যমান নহে, ভূপতি তাহা মনে মনে ঠাহর করিয়া দেখিল। ভূপতি চারার ভালোবাসার উচ্ছাস কখনও দেখে নাই ; আজ বিশেষ করিয়া ব্যঝিল, তাহার কারণ অন্তরের দিকেই চারীর ভালোবাসার গোপন প্রসার। ভূপতি নিজেও বাহিরে প্রকাশ করিতে অপট; চারীর প্রকৃতিতেও হদয়াবেগের সগভীর অন্তঃশীলতার পরিচয় পাইয়া সে একটা তৃপ্তি অনুভব করিল। ভূপতি তখন চারীর পাশে বসিয়া কোনো কথা না বলিয়া ধীরে ধীরে তাহার গারে হাত বলাইয়া দিতে লাগিল। কী করিয়া সাত্বনা করিতে হয় ভূপতির তাহা জানা ছিল না— ইহা সে বঝিল না, শোককে যখন কেহ অন্ধকারে কণ্ঠ চাপিয়া হত্যা করিতে চাহে তখন সাক্ষী বসিয়া থাকিলে ভালো লাগে না। চতুদশ পরিচ্ছেদ ভূপতি যখন তাহার খবরের কাগজ হইতে অবসর লইল তখন নিজের ভবিষ্যতের একটা ছবি নিজের মনের মধ্যে অকিয়া লইয়াছিল। প্রতিজ্ঞা করিয়াছিল, কোনোপ্রকার দয়াশা-দুশ্চেষ্টায় যাইবে না, চারকে লইয়া পড়াশনা ভালোবাসা এবং প্রতিদিনের ছোটোখাটো গাহপথ্য কতব্য পালন করিয়া চলিবে। মনে করিয়াছিল, যে-সকল ঘোরো সখ সবচেয়ে সলভ অথচ সন্দর, সবদাই নাড়াচাড়ার যোগ্য অথচ পবিত্র নিমল, সেই সহজলভ্য সখগুলির বারা তাহার জীবনের গহকোণটিতে সন্ধ্যাপ্রদীপ জনলাইয়া নিভৃত শান্তির অবতারণা করিবে। হাসি গল্প পরিহাস, পরপরের মনোরঞ্জনের জন্য প্রত্যহ ছোটোখাটো আয়োজন, ইহাতে অধিক চেষ্টা আবশ্যক হয় না অথচ সুখ অপযাপ্ত হইয়া উঠে। – কার্যকালে দেখিল, সহজ সুখ সহজ নহে। যাহা মল্য দিয়া কিনিতে হয় না তাহা যদি আপনি হাতের কাছে না পাওয়া যায় তবে জার কোনোমতেই কোথাও খাজিয়া পাইবার উপায় থাকে না। ভূপতি কোনোমতেই চারীর সঙ্গে বেশ করিয়া জমাইয়া লইতে পারিল না। ইহাতে সে নিজেকেই দোষ দিল। ভাবিল, “বারো বৎসর কেবল খবরের কাগজ লিখিয়া, সীর সঙ্গে কী করিয়া গল্প করিতে হয় সে বিদ্যা একেবারে খোয়াইয়াছি। সন্ধ্যাদাপ জনলিতেই ভূপতি আগ্রহের সহিত ঘরে বায়—সে দই-একটা কথা বলে, চার দইএকটা কথা বলে, তার পরে কী বলিবে ভূপত্তি কোনোমতেই ভাবিয়া পায় না। নিজের এই অক্ষমতায় পাঁর কাছে সে লজা বোধ করিতে থাকে। পাঁকে লইয়া গপ করা द्वन ४ठऐ नएज भट्टन कब्रव्राझिण चषष्ठ भएराग्न निकले ईश प्र७हे भख । नछान्थान यकृठां कल्ला ईशब्र छान्न नश्ज ! シ নষ্টনীড় 8ba যে সন্ধ্যাবেলাকে ভূপতি হাস্যে কৌতুকে প্রণয়ে আদরে রমণীয় করিয়া তুলিবে কল্পনা করিয়াছিল সেই সন্ধ্যাবেলা কাটানো তাঁহাদের পক্ষে সমস্যার স্বরপে হইয়া উঠিল। কিছুক্ষণ চেষ্টাপণ মেনের পর ভূপতি মনে করে উঠিয়া যাই –কিন্তু উঠিয়া গেলে চার কী মনে করিবে এই ভাবিয়া উঠিতেও পারে না। বলে, “চার, তাস খেলবে?” চার অন্য কোনো গতি না দেখিয়া বলে, “আচ্ছা।” বলিয়া অনিচ্ছাক্লমে তাস পাড়িয়া আনে, নিতান্ত ভুল করিয়া অনায়াসেই হারিয়া যায়– সে খেলায় কোনো সােথ থাকে না । * ভূপতি অনেক ভাবিয়া একদিন চারকে জিজ্ঞাসা করিল, “চার, মন্দাকে আনিয়া নিলে হয় না ? তুমি নিতান্ত একলা পড়েছ।” চার মন্দার নাম শুনিয়াই জনলিয়া উঠিল। বলিল, “না, মন্দাকে আমার দরকার নেই।” ভূপতি হাসিল। মনে মনে খুশি হইল। সাধনীরা যেখানে সতীধমের কিছমাত্র ব্যতিক্ৰম দেখে সেখানে ধৈর্য রাখিতে পারে না। বিদ্বেষের প্রথম ধাক্কা সামলাইয়া চার ভাবিল, মন্দা থাকিলে সে হয়তো ভূপতিকে অনেকটা আমোদে রাখিতে পারবে। ভূপতি তাহার নিকট হইতে যে মনের সখ চায় সে তাহা কোনোমতে দিতে পারিতেছে না, ইহা চার অনুভব করিয়া পীড়া বোধ করিতেছিল। ভূপতি জগৎসংসারের আর-সমস্ত ছাড়িয়া একমাত্র চারর নিকট হইতেই তাহার জীবনের সমস্ত আনন্দ আকষণ করিয়া লইতে চেষ্টা করিতেছে, এই একাগ্ন চেন্টা দেখিয়া ও নিজের অন্তরের দৈন্য উপলব্ধি করিয়া চার ভীত হইয়া পড়িয়ছিল। এমন করিয়া কতদিন কিরাপে চলিবে। ভূপতি আর-কিছু অবলম্বন করে না কেন। আর-একটা খবরের কাগজ চালায় না কেন। ভূপতির চিত্তরঞ্জন করিবার অভ্যাস এ পর্যন্ত চারকে কখনও করিতে হয় নাই; ভূপতি তাহার কাছে কোনো সেবা দাবি করে নাই, কোনো সখি প্রার্থনা করে নাই, চারকে সে সবাতোভাবে নিজের প্রয়োজনীয় করিয়া তোলে নাই; আজ হঠাৎ তাহার জীবনের সমস্ত প্রয়োজন চারর নিকট চাহিয়া বসাতে সে কোথাও কিছ যেন খাজিয়া পাইতেছে না। ভূপতির কী চাই, কী হইলে সে তৃপ্ত হয়, তাহা চার ঠিকমত জানে না এবং জানিলেও তাহা চারীর পক্ষে সহজে আয়ত্তগম্য নহে । ভূপতি যদি আপে আপে অগ্রসর হইত তবে চারীর পক্ষে হয়তো এত কঠিন হইত না; কিন্তু হঠাৎ এক রাত্রে দেউলিয়া হইয়া রিক্ত ভিক্ষাপাত্র পাতিয়া বসাতে সে যেন বিব্রত হইয়াছে। : r চার কহিল, “আচ্ছা, মন্দাকে আনিয়ে নাও, সে থাকলে তোমার দেখাশুনোর অনেক সবিধে হতে পারবে।” ভূপতি হাসিয়া কহিল, “আমার দেখাশুনো ! কিছু দরকার নেই।” ভূপতি ক্ষয় হইয়া ভাবিল, আমি বড়ো নীরস লোক, চারকে কিছুতেই আমি সখী করিতে পারিতেছি না।’ uई छविग्ना एम मार्गश्छा लईझा नज़िल । दन्थ:ब्रा कथमस याफ़ि आौनरल यिन्भिक হইয়া দেখিত, ভূপতি টেনিসন, বাইরন, বঙ্কিমের গল্প, এই সমস্ত লইয়া আছে। ভূপতির এই অকাল-কাব্যানরোগ দেখিয়া বন্ধবোধবেরা অত্যন্ত ঠাট্টা-ৰিপে কারস্তে, Syy গল্পগুচ্ছ লাগিল। ভূপতি হাসিয়া কহিল, “ভাই, বাঁশের ফলও ধরে, কিন্তু কখন ধরে তার ঠিক নেই।” – একদিন সন্ধাবেলায় শোবার ঘরে বড়ো বাতি জালাইয়া ভূপতি প্রথমে লজায় একটা ইতস্তত করিল ; পরে কহিল, “একটা কিছু পড়ে শোনাব ?” छाद्मः बृंगश्क्, “ंशानां७-ना ।” ভূপতি। কী শোনাব। চার্য। তোমার যা ইচ্ছে। ভূপতি চারার অধিক আগ্রহ না দেখিয়া একট দমিল। তব সাহস করিয়া কহিল, “টেনিসন থেকে একটা-কিছু তজমা করে তোমাকে শোনাই।” চার কহিল, “শোনাও।” সমস্তই মাটি হইল। সংকোচ ও নিরুৎসাহে ভূপতির পড়া বাধিয়া যাইতে লাগিল, ঠিকমত বাংলা প্রতিশব্দ জোগাইল না। চায়ার শন্য দটি দেখিয়া বোঝা গেল, সে মন দিতেছে না। সেই দীপালোকিত ছোটো ঘরটি, সেই সন্ধ্যাবেলাকার নিভৃত অবকাশটুকু তেমন করিয়া ভরিয়া উঠিল না। ভূপতি আরও দই-একবার এই ভ্ৰম করিয়া অবশেষে সন্ত্রীর সহিত সাহিত্যচর্চার চেষ্টা পরিত্যাগ করিল। পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ যেমন গম্ভীরতর আঘাতে নায় অবশ হইয়া যায় এবং প্রথমটা বেদনা টের পাওয়া যায় না, সেইরূপ বিচ্ছেদের আরম্ভকালে অমলের অভাব, চার ভালো করিয়া যেন উপলব্ধি করিতে পারে নাই। অবশেষে যতই দিন যাইতে লাগিল ততই অমলের অভাবে সাংসারিক শান্যতার পরিমাপ কুমাগতই যেন বাড়িতে লাগিল। এই ভীষণ আবিষ্কারে চার হতবন্ধি হইয়া গেছে। নিকুঞ্জবন হইতে বাহির হইয়া সে হঠাৎ এ কোন মরভূমির মধ্যে আসিয়া পড়িয়াছে—দিনের পর দিন যাইতেছে, মর্যপ্রান্তর ক্ৰমাগতই বাড়িয়া চলিয়াছে। এ মরুভূমির কথা সে কিছুই জানিত না। ঘুম থেকে উঠিয়াই হঠাৎ বকের মধ্যে ধক করিয়া উঠে—মনে পড়ে, অমল নাই। সকালে যখন সে বারান্দায় পান সাজিতে বসে ক্ষণে ক্ষণে কেবলই মনে হয়, অমল পশ্চাৎ হইতে আসিবে না। এক-এক সময় অন্যমনস্ক হইয়া বেশি পান সাজিয়া ফেলে, সহসা মনে পড়ে, রেশি পান খাইবার লোক নাই। যখনই ভাঁড়ারঘরে পদপিণ করে মনে উদয় হয়, অমলের জন্য জলখাবার দিতে হইবে না। মনের অধৈযে অস্তঃপরের সীমান্তে আসিয়া তাহাকে স্মরণ করাইয় দেয়, অমল কলেজ হইতে আসিবে না। কোনো-একটা নতন বই, মতন লেখা, নড়ন খবর, নতন কৌতুক প্রত্যাশা করিবার নাই ; কাহারও জন্য কোনো মেলাই করিবার, কোনো লেখা লিখিবার কোনো শৌখিন छिनिन किनिब्रा ब्राषबाब्र बाई। ? • , निरजब्र अनश क्कै ७ झाक्षस्था झाइ बिल बन्धठ। अनार्दनमात्र आँकक्षाध भौकटन छाबाग्न सप्न शंदेल । मिरज कदजई थथ्म कर्मकरछ जाशिल, ‘कन । अठ कन्छे मको मौक्नु – 8勒翰 रुक्न श्देठ्ठछ। अबण चाभाइ अउद्दे कौ प्य ठाशब्र जना अऊ पाथ छात्र कब्रिन । त्राभाद्र कौ श्ल, ७ठनिन नहब्र आभाग्न ४ कौ श्ल। मानौ छाकद्र ब्राम्ठाग्न ऋैभछुग्नशुलाe निर्माणझन्छ एऐझा झर्गब्रट्ठेक्क, आधाग्न ७मन श्हेल एकन ! छनवाम शीद्ध, আমাকে এমন বিপদে কেন ফেলিলে।’ কেবলই প্রশন করে এবং আশ্চম হয়, কিন্তু দুঃখের কোনো উপশম হয় না। অমলের সমতিতে তাহার অন্তর-বাহির এমনি পরিব্যাপ্ত যে, কোথাও সে পালাইবার সন্ধান পায় না । – ভূপতি কোথায় অমলের সমতির আক্রমণ হইতে তাহাকে রক্ষা করিবে, তাহা মা করিয়া সেই বিচ্ছেদব্যথিত স্নেহশীল মড়ে কেবলই অমলের কথাই মনে করাইয়া দেয়। অবশেষে চার একেবারে হাল ছাড়িয়া দিল, নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করার ক্ষান্ত হইল ; হার মানিয়া নিজের অবস্থাকে অবিরোধে গ্রহণ করিল। অমলের স্মতিকে যত্নপবেক হাদয়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করিয়া লইল । ক্লমে এমনি হইয়া উঠিল, একাগ্নচিত্তে অমলের ধ্যান তাহার গোপন গবের বিষয় হইল—সেই সমতিই যেন তাহার জীবনের শ্রেষ্ঠ গৌরব। গহকায্যের অবকাশে একটা সময় সে নিদিষ্ট করিয়া লইল । সেই সময় নিজনে গহবার রদ্ধ করিয়া তন্ন তন্ন করিয়া অমলের সহিত তাহার নিজ জীবনের প্রত্যেক ঘটনা চিন্তা করিত। উপড়ে হইয়া পড়িয়া বালিশের উপর মাখ রাখিয়া বারবার করিয়া বলিত, অমল, অমল, অমল!’ সমুদ্র পার হইয়া যেন শব্দ আসিত, “বোঠান, কী কোঠান।” চার সিন্ত চক্ষ মল্লিত করিয়া বলিত, “অমল, তুমি রাগ করিয়া চলিয়া গেলে কেন। আমি তো কোনো দোষ করি নাই। তুমি যদি ভালোমখে বিদায় লইয়া যাইতে তাহা হইলে বোধ হয় আমি এত দুঃখ পাইতাম না। অমল সম্মখে থাকিলে তোমাকে আমি একদিনও ভুলি নাই। একদিনও না, একদণ্ডও না। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ পদাৰ্থ সমস্ত তুমিই ফটাইয়াছ, আমার জীবনের সারভাগ দিয়া প্রতিদিন তোমার পজা করিব।” এইরপে চার তাহার সমস্ত ঘরকন্না, তাহার সমস্ত কতব্যের অন্তঃস্তরের मच्छिठ ७कप्ने प्रशान्न भाष्कङ्ग भीष्मज्ञ निक्लीप कर्गब्रम्ना ब्राथिल । एनथाप्टन ठाशग्न भ्यान्नौ বা পথিবীর আর-কাহারও কোনো অধিকার রহিল না। সেই স্থানটুকু যেমন গোপমতম, তেমনি গভীরতম, তেমনি প্রিয়তম। তাহারই বারে সে সংসারের সমস্ত ছদ্মবেশ পরিত্যাগ করিয়া নিজের অমাবত জায় বরপে প্রবেশ করে এবং সেখান হইতে বাহির হইয়া মুখোশখানা আবার মখে দিয়া পথিবীর হাসালাপ ও ক্লিয়াকমের अथ्र्गकृभव्र भरथा आजिब्रा सेन्।चिठ इन्न। . * t ७कथकाव्र शान्ठिलाछ कब्रिन ७वर अकनिष्ठं इद्देब्रा ब्वाश्रौष्क औख*७ वक्र कब्रिट्ठ
- 8&o * গল্পগুচ্ছ
লাগিল। ভূপতি যখন নিদ্রিত থাকিত চার তখন ধীরে ধীয়ে তাহার পায়ের কাছে মাথা রাখিয়া পায়ের ধলা সীমতে তুলিয়া লইত। সেবাশ্যশ্রষায় গহকমে স্বামীর লেশমাত্র ইচ্ছা সে অসম্পণে রাখিত না। আশ্রিত প্রতিপালিত ব্যক্তিদের প্রতি কোনোপ্রকার অযত্নে ভূপতি দঃখিত হইত জানিয়া চার তাহাদের প্রতি আতিথ্যে তিলমাত্র কটি ঘটিতে দিত না। এইরূপে সমস্ত কাজকর্ম সারিয়া ভূপতির উচ্ছিষ্ট প্রসাদ খাইয়া চারর দিন শেষ হইয়া যাইত। এই সেবা যত্নে ভগ্নী ভূপতি যেন নবযৌবন ফিরিয়া পাইল। স্মীর সহিত পবে যেন তাহার নববিবাহ হয় নাই, এতদিন পরে যেন হইল। সাজসজায় হাস্যে পরিহাসে বিকশিত হইয়া সংসারের সমস্ত দভাবনাকে ভূপতি মনের এক পাশে ঠেলিয়া রাখিয়া দিল। রোগ-আরামের পর যেমন ক্ষুধা বাড়িয়া উঠে, শরীরে ভোগশক্তির বিকাশকে সচেতনভাবে অনুভব করা যায়, ভূপতির মনে এতকাল পরে সেইরাপ একটা অপব এবং প্রবল ভাবাবেশের সঞ্চার হইল। বন্ধ দিগকে, এমন-কি, চারকে লুকাইয়া ভূপতি কেবল কবিতা পড়িতে লাগিল। মনে মনে কহিল, কাগজখানা গিয়া এবং অনেক দুঃখ পাইয়া এতদিন পরে আমি আমার স্মীকে আবিষ্কার করিতে •ार्गब्रम्नाष्ट्रि !’ ভূপতি চারকে বলিল, “চার, তুমি আজকাল লেখা একেবারেই ছেড়ে দিয়েছ কেন।” চার বলিল, “ভারি তো আমার লেখা!” ভূপতি। সত্যি কথা বলছি, তোমার মতো অমন বাংলা এখনকার লেখকদের মধ্যে আমি তো আর কারও দেখি নি। বিশ্ববধাতে যা লিখেছিল আমারও ঠিক তাই মত। চার। আঃ, থামো । } – ভূপতি “এই দেখো-না” বলিয়া একখণ্ড সরোরাহ বাহির করিয়া চার ও অমলের ভাষার তুলনা করিতে আরম্ভ করিল। চার আরক্তমখে ভূপতির হাত হইতে কাগজ কাড়িয়া লইয়া অঞ্চলের মধ্যে আচ্ছাদন করিয়া রাখিল । ভূপতি মনে মনে ভবিল, লেখার সঙ্গী একজন না থাকিলে লেখা বাহির হয় না; রোসো, আমাকে লেখাটা অভ্যাস করিতে হইবে, তাহা হইলে ক্লমে চাররও লেখার উৎসাহ সঞ্চার করিতে পারিব।” ভূপতি অত্যন্ত গোপনে খাতা লইয়া লেখা অভ্যাস করিতে আরম্ভ করিল। অভিধান দেখিয়া পনঃপন কাটিয়া, বারবার কপি করিয়া ভূপতির বেকার অবস্থার দিনগুলি কাটিতে লাগিল। এত কন্টে, এত চেষ্টায় তাহাকে লিখিতে হইতেছে যে, সেই বহন্দুখের রচনাগুলির প্রতি ক্ৰমে তাহার বিশ্বাস ও মমতা জন্মিল। ” gং অবশেষে একদিন তাহার লেখা আর-একজনকে দিয়া নকল করাইয়া ভূপতি স্মীকে দিল। কহিল, “আমার এক বধ নতুন লিখতে আরম্ভ করেছে। আমি তো কৰি নে, তুমি একবার পড়ে দেখো দেখি তোমার কেমন লাগে।” খাতাখানা চারীর হাতে দিয়া সাধনসে ভূপতি বাহিরে চলিয়া গেল। সরল ভূপতির এই ছলনাটকু চারর বৰিতে বাকি রহিল না। . . পড়িল; লেখার ছাঁদ এবং বিষয় দেখিয়া একটুখানি হাসিল। হায়! চার তাহার স্বামীকে ভক্তি করিবার জন্য এত আয়োজন করিতেছে, সে কেন এমন ছেলেমানষি করিয়া পজায় অধ্য ছড়াইয়া ফেলিতেছে। চারার কাছে বাহবা আদায় করিবার জন্য मष्प्लेमौछु 83షి তাহার এত চেণ্টা কেন। সে যদি কিছুই না করিত, চারার মনোযোগ আক্ষষণের জন্য সবদাই তাহার যদি প্রয়াস না থাকিত, তবে স্বামীর পজা চারীর পক্ষে সহজসাধ্য হইত। চারীর একান্ত ইচ্ছা, ভূপতি কোনো অংশেই নিজেকে চারীর অপেক্ষা ছোটো না করিয়া ফেলে। চার খাতাখানা মুড়িয়া বালিশে হেলান দিয়া দরের দিকে চাহিয়া অনেকক্ষণ ধরিয়া ভাবিতে লাগিল। অমল ও তাহাকে নতন লেখা পড়িলার জন্য আনিয়া দিত। সন্ধ্যাবেলায় উৎসকে ভূপতি শয়নগহের সম্মুখবতী বারান্দায় ফলের টবপর্যবেক্ষণে নিযুক্ত হইল, কোনো কথা জিজ্ঞাসা করিতে সাহস করিল না। চার আপনি বলিল, “এ কি তোমার বন্ধর প্রথম লেখা।” ভূপতি কহিল, “হাঁ।” চার্য। এত চমৎকার হয়েছে—প্রথম লেখা বলে মনেই হয় না। ভূপতি অত্যন্ত খুশি হইয়া ভাবিতে লাগিল, বেনামি লেখাটায় নিজের নামজারি করা যায় কী উপায়ে । ভূপতির খাতা ভয়ংকর দ্রুতগতিতে পণ্য হইয়া উঠিতে লাগিল। নাম প্রকাশ হইতেও বিলম্বব হইল না। সপ্তদশ পরিচ্ছেদ বিলাত হইতে চিঠি আসিবার দিন কবে, এ খবর চার সবদাই রাখিত। প্রথমে এডেন হইতে ভূপতির নামে একখানা চিঠি আসিল, তাহাতে অমল বউঠানকে প্রণাম নিবেদন করিয়াছে; সুয়েজ হইতেও ভূপতির চিঠি আসিল, বউঠান তাহার মধ্যেও প্রণাম পাইল। মালটা হইতে চিঠি পাওয়া গেল, তাহাতেও পুনশ্চ-নিবেদনে বউঠানের প্রণাম ठामिठन् ! . চার অমলের একখানা চিঠিও পাইল না। ভূপতির চিঠিগুলি চাহিয়া লইয়া উলটিয়া পালটিয়া বারবার করিয়া পড়িয়া দেখিল— প্রণামজ্ঞাপন ছাড়া আর কোথাও তাহার সবথে আভাসমারও নাই। ,’ চার এই কয়দিন যে-একটি শান্ত বিবাদের চন্দ্রাতপছায়ার আশ্রয় লইয়াছিল অমলের এই উপেক্ষায় তাহা ছিন্ন হইয়া গেল। অন্তরের মধ্যে তাহার হৎপিণ্ডটা লইয়া আবার যেন ছোড়াছে’ড়ি আরম্ভ হইল। তাহার সংসারের কতব্যস্থিতির মধ্যে আবার ভূমিকম্পের আন্দোলন জাগিয়া উঠিল। এখন ভূপতি এক-একদিন অধরাত্রে উঠিয়া দেখে, চার বিছানার নাই। খাজিয়া খাজিয়া দেখে, চার দক্ষিণের ঘরের জানালায় বসিয়া আছে। তাহাকে দেখিয়া চার তাড়াতাড়ি উঠিয়া বলে, “ঘরে আজ ষে গরম, তাই একটা বাতাসে এসেছি।” ভূপতি উদবিগ্ন হইয়া বিছানায় পাখা-টানার বন্দোবস্ত করিয়া দিল, এবং চায়র স্বাস্থ্যভঙ্গ আশঙ্কা করিয়া সবাদাই তাহার প্রতি দটি রাখিল । চার হাসিয়া বলিত, “श्राभि ट्वभ आहि, छूभि एकन भिशर्भािइ बान्ठ श७ ।” ७हे शनिप्लेक्नु भट्रेणैोईझा छूजिष्ठ অমল বিলাতে পেছিল। চার স্থির করিয়াছিল, পথে তাহাকে স্বতন্ম চিঠি নন্টনীড় 3為豊 আজ একবার তার খবর নিয়ে আসতে পার ?” ভূপতি। কেন। কোনো অসুখ করেছে নাকি । চার । না, অসুখ না, জানই তো তুমি গেলে তারা কত খুশি হয়। ভূপতি চারীর অনুরোধে গাড়ি চড়িয়া হাবড়া-স্টেশন-অভিমুখে ছটিল। পথে এক সার গোরুর গাড়ি আসিয়া তাহার গাড়ি আটক করিল। এমন সময় পরিচিত টেলিগ্রাফের হরকরা ভূপতিকে দেখিয়া তাহার হাতে একখানা টেলিগ্রাফ লইয়া দিল। বিলাতের টেলিগ্রাম দেখিয়া ভূপতি ভারি ভয় পাইল। ভাবিল, অমলের হয়তো অসুখ করিয়াছে। ভয়ে ভয়ে খলিয়া দেখিল টেলিগ্রামে লেখা আছে, “আমি ভালো আছি ।” ইহার অর্থ কী। পরীক্ষা করিয়া দেখিল, ইহা প্রী-পেড় টেলিগ্রামের উত্তর । হাওড়া যাওয়া হইল না। গাড়ি ফিরাইয়া ভূপতি বাড়ি আসিয়া সন্ত্রীর হাতে টেলিগ্রাম দিল। ভূপতির হাতে টেলিগ্রাম দেখিয়া চারীর মুখ পাংশ বর্ণ হইয়া গেল । ভূপতি কহিল, “আমি এর মানে কিছই বুঝতে পারছি নে।” অনুসন্ধানে ভূপতি মানে বুঝিল। চার নিজের গহনা বন্ধক রাখিয়া টাকা ধার করিয়া টেলিগ্রাফ পাঠাইয়াছিল। ভূপতি ভাবিল, এত করিবার তো দরকার ছিল না। আমাকে একটা অনুরোধ করিয়া ধরিলেই তো আমি টেলিগ্রাফ করিয়া দিতাম, চাকরকে দিয়া গোপনে বাজারে গহনা বন্ধক দিতে পাঠানো- এ তো ভালো হয় নাই । থাকিয়া থাকিয়া ভূপতির মনে কেবলই এই প্রশন হইতে লাগিল, চার কেন এত বাড়াবাড়ি করিল। একটা অস্পষ্ট সন্দেহ অলক্ষ্যভাবে তাহাকে বিদ্ধ করিতে লাগিল । সে সন্দেহটাকে ভূপতি প্রত্যক্ষভাবে দেখিতে চাহিল না, ভুলিয়া থাকিতে চেষ্টা করিল, কিন্তু বেদনা কোনোমতে ছাড়িল না। উনবিংশ পরিচ্ছেদ অমলের শরীর ভালো আছে, তব সে চিঠি লেখে না! একেবারে এমন নিদারণ ছাড়াছাড়ি হইল কী করিয়া। একবার মুখোমুখি এই প্রশনটার জবাব লইয়া আসিতে ইচ্ছা হয়, কিন্তু মধ্যে সমদ্ৰ— পার হইবার কোনো পথ নাই। নিষ্ঠর বিচ্ছেদ, নিরপোয় বিচ্ছেদ, সকল প্রশন সকল প্রতিকারের অতীত বিচ্ছেদ । চার্য আপনাকে আর খাড়া রাখিতে পারে না। কাজকম পড়িয়া থাকে, সকল বিষয়েই ভুল হয়, চাকরবাকর চুরি করে; লোকে তাহার দীনভাব লক্ষ্য করিয়া নানাপ্রকার কানাকানি করিতে থাকে, কিছুতেই তার চেতনামার নাই। এমনি হইল, হঠাৎ চার চমকিয়া উঠিত, কথা কহিতে কহিতে তাহাকে কাঁদবার জন্য উঠিয়া যাইতে হইত, অমলের নাম শনিবামাত্র তাহার মুখ বিবণ হইয়া যাইত। অবশেষে ভূপতিও সমস্ত দেখিল, এবং ষাহা মহাতের জন্য ভাবে নাই তাহাe ভাবিল—সংসার একেবারে তাহার কাছে বন্ধ শতক জীণ হইয়া গেল। মাঝে যে কয়দিন আনন্দের উন্মেষে ভূপতি অন্ধ হইয়াছিল সেই কয়দিনের প্রমাতি তাহাকে লন্জা দিতে লাগিল। যে অনভিজ্ঞ বানর জহর চেনে না তাহাকে ৰংটা ৩২ 838 গল্পগুচ্ছ পাথর দিয়া কি এমনি করিয়াই ঠকাইতে হয়। . চারার যে-সকল কথায় আদরে ব্যবহারে ভূপতি ভুলিয়াছিল সেগলা মনে আসিয়া তাহাকে মড়, মড়, মড় বলিয়া বেত মারতে লাগিল। অবশেষে তাহার বহন কষ্টের, বহ যত্নের রচনাগুলির কথা যখন মনে উদয় হইল তখন ভূপতি ধরণীকে বিধা হইতে বলিল। অংকুশতাড়িতের মতো চারার কাছে দ্রতপদে গিয়া ভূপতি কহিল, “আমার সেই লেখাগুলো কোথায়।” চার কহিল, “আমার কাছেই আছে।” ভূপতি কহিল, “সেগুলো দাও।” চার তখন ভূপতির জন্য ডিমের কচুরি ভাজিতেছিল; কহিল, “তোমার কি এখনই চাই ।” ভূপতি কহিল, “হাঁ, এখনই চাই।” চার কড়া নামাইয়া রাখিয়া আলমারি হইতে খাতা ও কাগজগুলি বাহির করিয়া আনিল । – ভূপতি অধীরভাবে তাহার হাত হইতে সমস্ত টানিয়া লইয়া খাতাপত্র একেবারে উনানের মধ্যে ফেলিয়া দিল । – চার ব্যস্ত হইয়া সেগলা বাহির করিবার চেষ্টা করিয়া কহিল, “এ কী করলে।” ভূপতি তাহার হাত চাপিয়া ধরিয়া গজন করিয়া বলিল, “থাক।” চার বিস্মিত হইয়া দড়িাইয়া রহিল। সমস্ত লেখা নিঃশেষে পড়িয়া ভস্ম হইয়া গেল । চার বঝিল। দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিল। কচুরি ভাজা অসমাপ্ত রাখিয়া ধীরে ধীরে অন্যত্র চলিয়া গেল। চারার সম্মখে খাতা নট করিবার সংকল্প ভূপতির ছিল না। কিন্তু ঠিক সামনেই আগনটা জনলিতেছিল, দেখিয়া কেমন যেন তাহার খন চাপিয়া উঠিল। ভূপতি আত্মসম্বরণ করিতে না পারিয়া প্রবঞ্চিত নিবোধের সমস্ত চেষ্টা বঞ্চনাকারিণীর সম্মুখেই আগনে ফেলিয়া দিল। – সমস্ত ছাই হইয়া গেলে ভূপতির আকস্মিক উন্দামতা যখন শান্ত হইয়া আসিল তখন চার্য আপন অপরাধের বোঝা বহন করিয়া যেরপে গভীর বিষাদে নীরব নতমখে চলিয়া গেল তাহা ভূপতির মনে জাগিয়া উঠিল—সম্মুখে চাহিয়া দেখিল, ভূপতি বিশেষ করিয়া ভালোবাসে বলিয়াই চার বহতে যত্ন করিয়া খাবার তৈরি করিতেছিল। ভূপতি বারান্দার রেলিঙের উপর ভর দিয়া দাঁড়াইল। মনে মনে ভাবিতে লাগিল তাহার জন্য চারর এই যে-সকল অশ্রান্ত চেষ্টা, এই যে-সমস্ত প্রাণপণ বণ্টনা, ইহা । অপেক্ষা সকরণ ব্যাপার জগৎসংসারে আর কী আছে। এই সমস্ত বঞ্চনা এ তো ছলনাকারিণীর হেয় ছলনামাত্র নহে; এই ছলনাগলির জন্য ক্ষতহদয়ের ক্ষতযন্ত্রণা চতুগণে বাড়ইয়া অভাগিনীকে প্রতিদিন প্রতিম হতে হৎপিণ্ড হইতে রক্ত নিপেষণ করিয়া বাহির করিতে হইয়াছে। ভূপতি মনে মনে কহিল, ‘হায় অবলা, হায় দুঃখিনী! দরকার ছিল না, আমার এ-সব কিছুই দরকার ছিল না। এতকাল আমি তো ভালোবাসা না পাইয়াও পাই নাই বলিয়া জানিতেও পারি নাই-আমার তো কেবল প্রফে দেখিয়া কাগজ লিখিয়াই চলিয়া গিয়াছিল; আমার জন্য এত করিবার কোনো দরকার ছিল না।’ नश्रेनौछु Bఫి & তখন আপনার জীবনকে চারীর জীবন হইতে দরে সরাইয়া লইয়া-ডাক্তার যেমন সাংঘাতিক ব্যাধিগ্রস্ত রোগীকে দেখে, ভূপতি তেমনি করিয়া নিঃসম্পক লোকের মতো চারকে দরে হইতে দেখিল। ঐ একটি ক্ষীণশক্তি নারীর হদয় কী প্রবল সংসারের স্বারা চারি দিকে আক্লান্ত হইয়াছে। এমন লোক নাই যাহার কাছে সকল কথা ব্যন্ত করিতে পারে, এমন কথা নহে যাহা ব্যস্ত করা যায়, এমন সথান নাই যেখানে সমস্ত হৃদয় উদঘাটিত করিয়া দিয়া সে হাহাকার করিয়া উঠিতে পারে— অথচ এই অপ্রকাশ্য অপরিহার্য অপ্রতিবিধেয় প্রত্যহপঞ্জীভূত দুঃখভার বহন করিয়া নিতান্ত সহজ সম্পন্ন করিতে হইতেছে। ভূপতি তাহার শয়নগহে গিয়া দেখিল, জানালার গরাদে ধরিয়া অশ্রহীন অনিমেষ দটিতে চার বাহিরের দিকে চাহিয়া আছে। ভূপতি আস্তে আস্তে তাহার কাছে আসিয়া দাঁড়াইল—কিছ বলিল না, তাহার মাথার উপরে হাত রাখিল। বিংশ পরিচ্ছেদ বন্ধরা ভূপতিকে জিজ্ঞাসা করিল, “ব্যাপারখানা কী। এত ব্যস্ত কেন।” ভূপতি কহিল, “খবরের কাগজ—” বন্ধ। আবার খবরের কাগজ ? ভিটেমাটি খবরের কাগজে মড়ে গঙ্গার জলে ফেলতে হবে নাকি । • ভূপতি। না, আর নিজে কাগজ করছি নে। বন্ধ। তবে ? ভূপতি। মৈশরে একটা কাগজ বের হবে, আমাকে তার সম্পাদক করেছে। বন্ধ। বাড়িঘর ছেড়ে একেবারে মৈশরে যাবে? চারকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছ ? ভূপতি। না, মামারা এখানে এসে থাকবেন। বন্ধ। সম্পাদক নেশা তোমার আর কিছুতেই ছটল না! ভূপতি। মানুষের যা-হোক-একটা-কিছু নেশা চাই। বিদায়কালে চার জিজ্ঞাসা করিল, “কবে আসবে।” ভূপতি কহিল, “তোমার যদি একলা বোধ হয়, আমাকে লিখো, আমি চলে আসব।” বলিয়া বিদায় লইয়া ভূপতি যখন বারের কাছ পৰ্যন্ত আসিয়া পেশছিল তখন হঠাৎ চার ছয়টিয়া আসিয়া তাহার হাত চাপিয়া ধরিল, কহিল, “আমাকে সঙ্গে নিয়ে যাও । আমাকে এখানে ফেলে রেখে যেয়ো না।” ভূপতি থমকিয়া দাঁড়াইয়া চারার মাখের দিকে চাহিয়া রহিল। মাটি শিথিল হইয়া ভূপতির হাত হইতে চারীর হাত খালিয়া আসিল। ভূপতি চাররে নিকট হইতে সরিয়া বারান্দায় আসিয়া দাঁড়াইল । – ভূপতি বঝিল, অমলের বিচ্ছেদসমতি যে বাড়িকে বেষ্টন করিয়া জুলিতেছে, চার দাবানলগ্রস্ত হরিণীর মতো সে বাড়ি পরিত্যাগ করিয়া পালাইতে চায় –কিন্তু, আমার কথা সে একবার ভাবিয়া দেখিল না ? আমি কোথায় পালাইব। যে শী হাদয়ের ‘ 8აყ গল্পগুচ্ছ মধ্যে নিয়ত অন্যকে ধ্যান করিতেছে, বিদেশে গিয়াও তাহাকে ভুলিতে সময় পাইব না ? ‘ নিজন বন্ধহীন প্রবাসে প্রত্যহ তাহাকে সঙ্গদান করিতে হইবে ? সমস্ত দিন পরিশ্রম করিয়া সন্ধ্যায় যখন ঘরে ফিরিব তখন নিস্তৰখ শোকপরায়ণা নারীকে লইয়া সেই সন্ধ্যা কী ভয়ানক হইয়া উঠিবে। যাহার অন্তরের মধ্যে মতভার, তাহাকে বক্ষের কাছে ধরিয়া রাখা, সে আমি কতদিন পারিব। আরও কত বৎসর প্রত্যহ আমাকে এমনি করিয়া বাঁচিতে হইবে । ষে আশ্রয় চণ হইয়া ভাঙিয়া গেছে তাহার ভাঙা ইটকাঠগলা ফেলিয়া যাইতে পারিব না, কাঁধে করিয়া বহিয়া বেড়াইতে হইবে ? ভূপতি চারকে আসিয়া কহিল, “না, সে আমি পারিব না।” মহাতের মধ্যে সমস্ত রক্ত নামিয়া গিয়া চারার মাখ কাগজের মতো শাক সাদা হইয়া গেল, চার মঠা করিয়া খাট চাপিয়া ধরিল। তৎক্ষণাৎ ভূপতি কহিল, “চলো, চার, আমার সঙ্গেই চলো।” চার বলিল, “না, থাক।” বৈশাখ-অগ্রহায়ণ ১৩০৮