প্রেমিকের হাত ধরে বাড়ি থেকে পালাতে যাচ্ছি আমি।মায়ের আলমারি থেকে টাকা-পয়সা, স্বর্ণ-অলংকার যা যা ছিল সব ব্যাগে করে নিয়ে এসেছি অরণ্যের সাথে পালিয়ে যাবো বলে। প্রায় বিশ মিনিট ধরে অপেক্ষা করছি আমি অরণ্যের জন্য। কিন্ত অরণ্যের যেন আসার কোনো খবরই নেই! বারেবার ফোন দিচ্ছি, অথচ ছেলেটা ধরছেই না! হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ অনুভব হলো।পেছন ফিরে তাকাতেই দেখি অরণ্য দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাকে দেখেই যেন রাগটা আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো আমার।
– কী অরণ্য? এতোক্ষণ লাগে আসতে? তুমি জানো কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি তোমার জন্য?
– স্যরি স্যরি বাবা… আসলে রাস্তায় যা জ্যাম ছিল না!তাই আসতে দেরী হলো লক্ষী’টা!
– আমার আগে কিন্ত তোমার আসার কথা ছিল। জানো না কতটা ভয় পাচ্ছি আমি?
– আচ্ছা বাবা… বললাম তো সর্যি! এখন বাদ দাও তো এসব কথা।টাকা- পয়সা এনেছো তো সাথে করে?
– হুম, এনেছি।প্রায় বিশ হাজারের মত টাকা আছে আর মায়ের সব গয়না নিয়ে এসেছি।
– ভেরি গুড! এবার চলো তাড়াতাড়ি।
এই বলে অরণ্য আমার হাত ধরে রেল স্টেশনের দিকে পা বাড়ালো। ট্রেনে করে অনেকটা পথ আসার পর, একটা স্টেশনে নেমে পড়লাম আমরা। অরণ্য আমায় একটা হোটেলে নিয়ে আসলো। একটা রুম বুক করলো সেখানে এক রাত কাটানোর জন্য। পরদিন ই নাকি সে তার বাড়ীতে আমাকে নিয়ে যাবে। রুমে ঢুকেই অরণ্য আমায় বললো,
– অদ্রি তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো। আমি বরং বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসছি।
– আচ্ছা অরণ্য। কিন্ত তাড়াতাড়ি এসো তুমি। এই বলে আমি ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে গেলাম। প্রায় আধা ঘন্টা পর ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই দেখি আমার ব্যাগের সবকিছু এলোমেলো! একি আমার টাকা-পয়সা,গয়না কিছুই তো ব্যাগে নেই! এদিকে রুমের দরজা বাইরে থেকে লক করে গেছে অরণ্য।
মাথায় হাত দিয়ে ফ্লোরে বসে কাঁদছি এমন সময় দরজা খুলেরুমে প্রবেশ করলো দুই-তিনজন যুবক। কিছু বলার আগেই ওরা তিনজন আমাকে শক্ত করে চেপে ধরলো।তাদের কাছ থেকে জানতে পারলাম অরণ্য আমাকে আজকের রাতের জন্য বিক্রি করে গিয়েছে। তাদের বলে গিয়েছে, কাজ শেষ হলেই যেন ওরা আমায় কিছু টাকা হাতে দিয়ে বের করে দেয় এখান থেকে। মধ্যরাত এখন। বসে আছি রেল স্টেশনের ব্রেঞ্চে। দূর থেকে কিছু লোলুপ দৃষ্টি তাকিয়ে আছে আমার দিকে, যেন সুযোগ পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়বে আমার উপর! আমি চুপচাপ গিয়ে দাঁড়ালাম রেল লাইনের উপর।দূর থেকে একটাট্রেন আসছে। আর মাত্র কয়েক সেকেন্ডের অপেক্ষা! তারপর ট্রেনে নিচে পিষে মরবো আমি। ” অদ্রি!…এই অদ্রি! উঠ না মা।এতো বেলা হয়ে গেলো এখনও ঘুম থেকে উঠছে না মেয়েটা! ” মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙলো আমার। তারমানে এতোক্ষণ আমি স্বপ্ন দেখছিলাম? কী ভয়াবহ একটা স্বপ্ন!
– কিরে এতো ঘামছিস কেন? কি হয়েছে অদ্রি?
– না…য়া.. তো মা। কিছুই হয় নি আমার।
– আচ্ছা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয় তুই।
টেবিলে নাস্তা রেডি করে দিচ্ছি। হঠাৎ মোবাইলের স্কিনের দিকে তাকাতেই দেখি অরণ্যের অনেকগুলো কল ও মেসেজ! মেসেজ ওপেন করে হুট করে মনে পড়লো, আজ না আমার ও অরণ্যের পালানোর কথা ছিল ভোর পাঁচটায়! কিন্ত এখন তো বাজে বেলা বারো’টা! স্বপ্নের কথা মনে পড়তেই উপলব্ধি হলো, আমি কত বড় ভুল করতে যাচ্ছিলাম! সাথেসাথে ই অরণ্যকে ফোন দিলাম আমি।
– অদ্রি কোথায় ছিলে তুমি? ভুলে গিয়েছিলে আজ আমাদের পালানোর কথা ছিল?
– অরণ্য শুনো, আমাদের পালানোর প্ল্যান এখন ক্যান্সেল।
– ক্যান্সেল মানে?
– মানে শুনো, মা-বাবাকে কষ্ট দিয়ে আমরা কখন ই সুখী হতে পারবো না আমরা!
– কী বলছো এসব? আর কী হয়েছে তোমার? বলো তো অদ্রি!
– আমার কিছুই হয়নি। আমি যা বলছি ঠিকই বলছি। আমাদের মা-বাবাকে কষ্ট দিয়ে তাদের অভিশাপ নিয়ে নতুন জীবন শুরু করা অসম্ভব অরণ্য ।তাই আমরা সঠিক সময়ের অপেক্ষা করবো।
– কিন্ত অদ্রি, তোমার মা-বাবা যে আমায় মেনে নিবেন না।
– আমরা আমাদের মা-বাবাকে জানিয়েছি এখনো?জানাই নি তো! তাই না? তাহলে কীভাবে শিউর হলে, যে ওরা মেনে নিবে না? আর মেনে না নিলেও নিজেকে তাদের যোগ্য করে তুলো তুমি। যতদিন লাগে অপেক্ষা করবো আমি।
– আচ্ছা তুমি যা বলো তাই হবে। এই বলে ফোনটা রেখে ব্যাগ থেকে জামা-কাপড় সব আলমারিতে রেখে দিলাম। মায়ের গয়না ও টাকাগুলোও লুকিয়ে মা যেখানে রেখেছিল ঠিক সেখানেই রেখে আসলাম।
গল্পের বিষয়:
গল্প