সিগনেচার

সিগনেচার
ছোট বোন পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো- “লাভ ইউ ভাইয়া!” আমি বেডরুমের স্টাডি টেবিলে বসে চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখছিলাম। এমতাবস্থায় থতমত খেয়ে উল্টো ঘুরে দেখি- আমার একমাত্র ছোট বোন স্বর্ণা এখনো স্কুল ড্রেস পরিহিত অবস্থায়, এমনকি স্কুল ব্যাগটাও কাঁধে ঝোলানো! তার মানে ওই স্কুল থেকে এসেই সরাসরি আমার বেডরুমে ঢুকেছে! ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম, কিছু একটার আবদার বা এই জাতীয় কিছু নাচানাচি করছে। তাছাড়া ফেসবুকিং করে, এই রকম ভালোবাসার মানেটাও এতদিনে বুঝে গেছি! সেজন্য আমি বললামঃ
— শোন স্বর্ণা, আমিও তোকে অনেক ভালোবাসি! তবে এই মুহূর্তে আমার পকেটে কোন ভালোবাসাই অবশিষ্ট নেই যে তোকে দিব!” আমার এমন কথা শুনে, স্বর্ণা কিছুটা অবাক হয়ে বললঃ
— নীলয় ভাইয়া এসব কি বলিস?!
— কেন আমি তো ঠিকই বলেছি। নিশ্চয়ই তোর টাকা লাগবে সেজন্য এসেছিস? এবার স্বর্ণা অবাক হওয়া থেকে কিছুটা আহত হয়ে বললঃ
— আরে না ভাইয়া, তুই যে কি বলিস! আমার কিচ্ছু চাই না, আমিতো তোকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসি। আমার এই ভালবাসার মধ্যে তুই অন্য কিছু খুঁজতে আসিস না!” আমিতো মনে মনে আনন্দে আত্মহারা, খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে, আমার বোন আমাকে এতো ভালবাসে। তাহলে এতদিন সবাই- “লাভ ইউ ভাইয়া” এই টপিক নিয়ে ট্রল করতো, এসব মিথ্যা- ভুয়া। এবার আমি স্বর্ণাকে কাছে টেনে বুকে নিয়ে বললামঃ
— তুই তো আমার বোন নারে, আমার কলিজা! তখন স্বর্ণা আমার বুকে মাথা রেখেই বলল,
— ভাইয়া একটা কথা বলবো, তুই রাখবি? সেসময় আমিতো আবেগে আপ্লুত ছিলাম, তাই কোন কিছু না ভেবেই বললামঃ
— হ্যাঁ বল- বল, কেন নয়? তোর মত এমন মিষ্টি বোনের কোন কথা/আবদার না রেখে পারি!? আমার কথা শুনে, স্বর্ণা তাঁর স্কুল ব্যাগ থেকে মাসিক পরীক্ষার রেজাল্ট শীট বের করলো। অতঃপর কলমসহ আমার সামনে এগিয়ে দিয়ে, চাতুরী হাসিতে বললঃ
— ভাইয়া এখানে তোর একটা সাইন লাগবে! আমি রেজাল্ট শীট এর দিকে তাকিয়ে দেখি- এটাতো রেজাল্টশীট নয়, যেনো ইসরাইল ফিলিস্তিনের যুদ্ধক্ষেত্র! এতক্ষণে আমি বুঝে গেলাম, ওর নিঃস্বার্থ ভালোবাসার পেছনের সকল ইতিহাস। কেননা ওর এই রেজাল্ট শীটে আব্বুর সাইন করাতে গেলে– “ওর রেজাল্ট শীটের মতো, ওর পিঠের অবস্থাও রণক্ষেত্র হয়ে যাবে! তখন পিঠের ছাল একটাও থাকবে না, সেটা জেনেই আমার কাছে এসেছে!” এদিকে আমারও পকেট ফাঁকা, সেজন্য ওর নিঃস্বার্থ ভালোবাসার মধ্যে আমি একটু স্বার্থ খুঁজতে গেলাম! তখন আমিও এক চোখ টিপে বললামঃ
— এটা জানি, তুই আমাকে অনেক ভালোবাসিস আর সেই ভালোবাসার দাবিতে বলছি– “তোর এখানে সাইন করে দিবো কোন সমস্যা নাই! তবে তুই তো অলরেডি জানিস আমার পকেট একদম ফাঁকা, তাই তুই একটু ভালোবাসা দিয়ে পকেটটা পুরো করে দে! তোর সেই ভালোবাসা নিয়ে সন্ধ্যায় বাহিরে যেয়ে একটু আড্ডা দিয়ে আসি, আর সাথে ফাস্টফুড ও আমার কথা শুনে, ওই 30 সেকেন্ড আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলো! তারপর মাথাটা নিচু করে বললোঃ “ভাইয়া শেষ পর্যন্ত তুইও!”
— কিচ্ছু করার নাই রে বুনু! ফাঁকা পকেট আর ক্ষুধার্ত পেট মানুষকে দানব বানিয়ে দেয়! সেখানে আমি তো অসহায়ের মতোই বলছি, “আমাকে কিছু ভালোবাসা দে!” অতঃপর স্বর্ণার প্রস্থান! কিছুক্ষণ পর দেখি হাতে পাঁচশত টাকার একটা চকচকে নোট! ওই কাচুমাচু মুখ করে, আমার দিকে সেটা বাড়িয়ে দিয়ে বললোঃ
— এই নে কিন্তু শর্ত হলো, এখান থেকে চারশত টাকা আমাকে ফেরত দিবি! এখন ভাংতি নাই বলে তোকে পাঁচই দিলাম। আমি টাকাটা পকেটে ভরে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললামঃ
— স্বর্ণা বোন আমার, তোর এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা কখনোই টাকা দিয়ে শোধ হবেনা! মানে এই টাকার বাকিটা ওই আর কখনোই ফেরত পাবে না! সেটাতো এখন আর খুলে বলতে পারি না, জাস্ট একটু ইঙ্গিত দিয়ে বুঝিয়ে দিলাম! তবে হ্যাঁ, বেঁচে থাকুক ভাই বোনের এমন ভালোবাসা আজীবন!
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত