ঘোলা জল

ঘোলা জল
মিথিলার বয়ফ্রেন্ডের সাথে তোলা ছবিতে আমি কিছুক্ষন আগে যখন মন্তব্য করলাম “তোমাদের খুব মানিয়েছে” তার কয়েক মিনিট পরেই আমার মন্তব্যের রিপ্লে দিয়েছে “আমাদের জন্য দোয়া করবে কেমন?” আমার আর কিছু লিখতে ইচ্ছে করে না। নিজের ভালোবাসার মানুষটা এই শহরের বিষণ্ন ধুলোয় আমায় ছেড়ে যখন নতুন গল্প লিখতে শুরু করে তখন আমার শহরটা ঝিম মেরে যায়। এসব মনে করতেই আমার ভিতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে। সন্ধ্যার আলোর মাঝে দেয়ালের সাথে পিঠ লাগিয়ে চুপ করে গুটি মেরে বসে থাকি। খানিকবাদে আলোটা নিভিয়ে দেই। সন্ধ্যার আলোটা জানালায় বেদ করে আমার দেয়ালে ছড়িয়ে যায়। দেয়ালে ছড়িয়ে পড়া আলোর মাঝে আমার ছায়াটাকে স্পর্শ করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু কেন যেন আমি পারি না। আমি অনুধাবন করি আসলেই মিথিলা কি আমার ছিল?
বিছানার উপরে রাখা ফোনটা এই নিয়ে কয়েকবার বেজেই চলেছে। সেদিকে আমার একেবারেই খেয়াল নেই। মাঝে মাঝে জানালার বাহিরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আমার স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু কখনোই আমার স্বপ্ন দেখা হয় না। ফোনটা আবার বাজতে শুরু করে। আমি আস্তে আস্তে গিয়ে অচেতন মনে ফোনটা রিসিভ করে চুপ করে থাকি। ওপাশ থেকেও কোন সাড়া শব্দ আসে না। একটু একটু করে নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পেলাম। নিশ্বাসের শব্দ শুনে বুঝতে পেরে আমার ভিতরটা আবার ধক করে ওঠে। আমি তাকে বললাম “কিছু বলবে?” সে তারপরও চুপ করে থাকে। আমিও আবার চুপ করে থাকি। যেন চারপাশটা ঘুমিয়ে গেছে। সে ইতস্তত করে বললো “কেমন আছো?” শব্দটা শুনেই আমার শরীর দিয়ে শীতল কিছু একটা বয়ে যায়। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। আমার নিশব্দ কান্না তাকে শুনতে দেই না। চোখের জল মুছে তাকে বললাম “ভালো আছি। আমি মানুষটা সব সময় ভালো থাকি।” সে বলে “অনেক অভিমান নিয়ে কথা বলছো। আমার কথা কি তোমার মনে পড়ে?” আমি কি বলবো বুঝতে পারি না। আমার মনে পড়ে সে দিন গুলোর কথা ।
আমি চুপ করে সে দিন গুলোর ভালোবাসাকে অনুভব করি। একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললাম “অভিমান এই জিনিসটা আমার ভিতরে কাজ করে না। মা বাবার কথা মনে পড়ে। ছোট ভাইটার কথা মনে পড়ে। ছোট ভাইটা দু দিন হলো চিঠি লিখেছে। আমি এখনও খুলে দেখিনি। কতদিন হলো আমার শহরে যাওয়া হয় না। তাদের দেখি না।” সে চুপ করে থাকে। কি বলবে হয়তো ভেবে পাচ্ছে না বা আর কি বলা যায় তা হয়তো গুছিয়ে নিচ্ছে। আমি তার চুপ থাকা শুনে বললাম “বেদনার রং নীল হয় কেন? নীল রংটা আমার পছন্দের না। শেষ বিকেলের গাঢ় নীল রংটাকে আকাশের মেঘ গুলো যখন ঢেকে দেয় তখন আমার মাঝে এক বিষণ্নতা ছুয়ে যায়। যে রংকে অন্য রং আড়াল করতে পারে সে রং কে আমার পছন্দ হয়না।” আমার এই কথা শুনে সে বলে “তুমি অনেক সুন্দর করে কথা বলতে পারো। জানো তুমি মানুষটা খুব ভালো। একটা কাজ করতে পারবে? জানি কাজটা খুব কঠিন। আমি চাই কাজটা তুমি করো।”
আমি জানালার কাছে যাই। সন্ধ্যার আকাশটাকে দেখি। তাকে বললাম “কি কাজ” সে কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলে “আমাকে বন্ধুত্তের তালিকা থেকে মুছে দাও। আমি চাই না তোমার কষ্ট হোক। এই যে আমার ছবিতে তুমি দিনের পর দিন মন্তব্য করে যাচ্ছো আমি জানি এতে তুমি কষ্ট পাও।আর তোমার মন্তব্যের ব্যাপারটা সাদমান পছন্দ করে না।” আমি চুপ করে থাকি। আকাশের কালো আবছায়া ছড়িয়ে পড়ার সময়টাকে আমার কেন যেন খুব বেমানান লাগে। একবার বলতে চেয়েছিলাম জীবন থেকেই তো সরে গেলাম আর এই টুকু কাজ করতে পারবো না? কিন্তু এটা আমি না বলে খুব স্বাভাবিক ভাবে বললাম “আচ্ছা ঠিক আছে।” তারপর সে বললো “আমি তোমায় আর ফোন দিব না কেমন? অনেক ভালো থেকো।” আমি আচ্ছা রাখি বলে ফোনটা রেখে দিয়ে আবার কান্না করতে থাকি।
অন্ধকার ঘরে সন্ধ্যার আলোর মাঝে আমি যখন একলা হয়ে বসে থাকি তার একটু পরেই আদনান ভাই রুমের ভিতর প্রবেশ করে আলো জ্বালিয়ে বলে “অন্ধকার ঘরে কি করিস তুই?” আমি আদনান ভাই এর দিকে তাকাই। আমার তাকানো দেখে আদনান ভাই কাছে এসে আমার চোখ গুলোর দিকে তাকিয়ে বলে “কিরে তোর এই অবস্থা কেন? মিথিলার কথা আবার মনে পড়েছে?”
আমি মাথা দিয়ে না সূচক ইশারা দিয়ে বলি “ও ফোন করেছিল। এতোদিন তো ওর সাথে কথা হতো না। যখন ইচ্ছা করতো ওর সাথে কথা বলার বা ওর কথা মনে পড়তো তখন না চাইতেও ওর আইডিতে ঢুকে ছবি গুলো দেখতাম। নতুন ছবি আপলোড করলে মন্তব্য করতাম। কিন্তু এখন আর সেটাও হবে না। ও বন্ধুত্তের তালিকা থেকে মুছে দিতে বলেছে। সাদমান ব্যাপারটা পছন্দ করে না। কিন্তু আমি ওকে ব্লক করে দিয়েছি। ভালো হয়েছে না?” আমার কথা শুনে আদনান ভাই সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট ধরিয়ে দু তিনটা ফু দিয়ে আমাকে বলে “সালার ভালোবাসা ভালোবাসা খেলাটা জীবনটা হেইল করে দিছে। এই ভালোবাসা ছাড়া আর কিছু বুঝস না?” আমি কিছু বলি না। আদনান ভাই রুম থেকে চলে যায়। এই মানুষটাও এক সময় একজনকে ভালোবাসতো তা আমি খুব ভালো করেই জানি। কিন্তু কাউকে কিছু বলে না। বুঝতে দেয়না।
মিথিলার সাথে আমার পরিচয় ভার্সিটিতে। কি মিষ্টি করে কথা বলে মেয়েটা। ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার প্রায় কয়েকমাস ওকে দেখতাম ও একা একা বসে থাকতো ক্যাম্পাসে। আমার মনে হতো সব সময় মেয়েটার মন খারাপ থাকে। একদিন ওর কাছে গিয়ে আমি বললাম “তোমার কি মন খারাপ?” সে আমার দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে না সূচক ইশারা দেয়। আমি বললাম “একটু বসি?” সে চুপ করে হ্যাঁ সূচক ইশারা দিয়ে বসতে বলে। ঐদিন তার সাথে আমি অনেক কথা বলেছিলাম। তাকে জিজ্ঞেস করি এইভাবে বসে থাকো কেন? সে এই ব্যাপারে কিছু বলে না। আমি তাকে আমার সম্পর্কে বলি। এই যে এই শহরে আমি একা থাকি। পড়ালেখার পাশে কয়েকটা টিউশনি করি। আমার গ্রামের কথা বলি। গ্রামের সবুজ ধান ক্ষেত, বিলে মাছ ধরা, বাঁশের সাঁকোতে হাটার কথা। চাঁদনি রাতে বাড়ির উঠানে বসে ভৌতিক গল্প করার কথা বলি। এরপর থেকেই সে প্রতিনিয়ত আমার সাথে কথা বলতো। হাটতো। ঘুরতো। যতক্ষন আমার সাথে থাকতো আমি চেষ্টা করতাম তাকে প্রফুল্লতার মাঝে রাখতে। কিন্তু কখনও বুঝতে পারতাম না তার বিষণ্নতার কারণ।
মিথিলার মাঝে যে নিরবতার আভাস বিরাজ করতো আমি সেটা একটা সময় তেমন আর দেখতে পেতাম না। আমি তাকে ইতস্তত হয়ে একবছর পর একদিন জানাই “জানো মিথিলা যতদিন তোমার সাথে আমার সময় অতিক্রম হচ্ছে আমার কেন যেন খুব ভালো লাগে।” সে একটা হাসি দেয়। তার হাসির মাঝে কি যেন একটা ছিল। সে আমাকে বলে “জানো জাহেদ এই ব্যস্ত শহরে মানুষের মন কখন বিষণ্ন হয়? এই যে তুমি আমাকে প্রায় বলো আমার মন খারাপ কিনা। আমি তখন তোমাকে কিছু বলি না। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে পৃথিবীর তৈরি করা নিয়ম আর সময়কে অবজ্ঞা করে একেবারেই হারিয়ে যাই। কিন্তু জানো পৃথিবীর এই তৈরি করা সময় আমাকে তার মাঝে আটকে রাখে। সাদমানকে আমার ভালো লাগে।
ছেলেটাকে কেন যেন আমার খুব ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। এই ইচ্ছেটা যখন তার কাছে নিয়ে গেলাম সে আমার ইচ্ছাকে ফিরিয়ে দেয়। আমার খুব কষ্ট হয়। আমি মানুষটা দেখতে কি খুব খারাপ?” আমি চুপ করে ছিলাম। আমার চুপ থাকা দেখে সে আবার বলেছিল “আমার সাথে সময় অতিক্রম করতে তোমার কেন ভালো লাগে? আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছো? এমনটা কখনো করবে না কেমন? আমি মানুষটার ভিতর অনেক কষ্ট।” আমি এই কথার কি উত্তর দিব ভেবে পাইনি। একবার বলতে চেয়েছিলাম “তোমার হাজার হাজার কষ্ট গুলোকে আমার মাঝে ভাগ করে নিতে পারবো মেয়ে। কিন্তু কথাটা বলার এই অধিকার রাখি না আমি। এরপর অনেকটা দিন কেটে গেছে। অদ্ভুত সেই কাটিয়ে দেওয়ার দিনে আমার ঘুমন্তবোধে অজান্তেই মিথিলা হাজির হয়। আমার সেই ঘুমে একা একা তাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করি।
যে ভাবার মাঝে বৃষ্টি কিংবা ধমকা বাতাস আমাকে বেধে রাখতে পারেনা। একদিন ক্লাস শেষ করে আমি যখন মিথিলার কাছে গেলাম সে আমাকে দেখে বলেছিলে “দেরি করলে যে?” আমি তাকে বলি “ক্লাস শেষ করেই সোজা এখানে চলে আসছি। ক্লাস করোনি কেন? সে অনেকক্ষন চুপ করে ছিল। আমি তার চুপ থাকার কারণ বুঝতে পারি না। তারপর ইতস্তত হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বলে “আমাকে কেন যেন কেউ ভালোবাসে না। ভালোবাসার অধিকার কি আমার নেই?” তারপর সে আবার চুপ করে থাকে। আমিও নিশ্চুপ হয়ে তার মায়ামায়া চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকি। তার এই কথা শুনে আমার ভিতর জুরে নীল আলো ছড়িয়ে যায়। আমি তাকে বললাম “তোমার আকাশে আমি যদি কাক হয়ে ঘুরে বেড়াই তুমি কি খুব বিরক্ত হবে?” সে অনেকটা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।
আমার এই কথার ধরন নিশ্চয় মিথিলা বুঝতে পেরেছিল। আমি আকাশের দিকে তাকাই। বিকেল বেলার আকাশটা থমথমে ছিল। এই থম থম আভাসটা জানান দিচ্ছিল এক বর্ষন মুখর বিকেল। সে আমাকে তার আকাশে কাক হয়ে ঘুরার অনুমতি না দিলেও আমি তার চোখ দেখে বুঝতে পেরেছিলাম তার আকাশটা আমার। তারপর থেকেই ওকে আমি আমার সমস্থ কিছু দিয়ে ভালোবাসতে শুরু করলাম। আমার পথ চলা থেকে শুরু করে ঘুমানোর আগ পর্য্নত আমার ছায়ার মাঝে তাকে অনুভব করতাম। কিন্তু এই ভালোবাসাটা কেন যেন আমার জন্য ছিল না। কত সুর এসেও আমার থেকে হারিয়ে যেতে শুরু করলো। কোন এক ক্লান্ত দুপুরে সে অদ্ভুত মায়া মায়া চোখ নিয়ে বললো “গতকাল সাদমান আমাকে প্রপোজ করেছে। আমার না অনেক কষ্ট হয়েছিল। আমি তাকে কিছু বলিনি।
ভালোবাসা এমন কেন বলো তো? তাকে আমার কি বলা উচিৎ?” আমি চুপ করে থাকি। আমার বেলা শেষে আকাশটার নীল রংটাকে কালো মেঘে ঢেকে দেয়। আমার প্রশান্ত কল্পনার চোখে যন্ত্রনার শব্দ বাসা বাধে। এক একটা শব্দ আমার চোখ থেকে জল বের করে নিয়ে আসতে চায়। আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না। তার চোখের মাঝে সাদমানের প্রতি অগাঢ় ভালোবাসা আমি খুঁজে পাচ্ছিলাম। তারপর আমি তাকে বললাম “তোমাকে একটা কথা বলি?” সে মাথা দিয়ে হ্যাঁ সূচক ইশারা দেয়। আমি খুব গম্ভীর হয়ে বললাম “তুমি যখন সব সময় বিষণ্ন হয়ে থাকতে আমার কেন যেন খুব খারাপ লাগতো। আমার প্রিয় বন্ধুটা আমার চোখের সামনে এইভাবে ঘোরাঘুরি করতো আমাকেও যেন একটা বিষণ্নতা ছুয়ে যেত। কিন্তু তুমি যখন হঠাৎ একদিন বললে তোমাকে কেউ ভালোবাসতে চায় না তখন আমি তোমাকে ভালোবাসার কথা বলি।
কিন্তু বিশ্বাস করো তোমাকে আমি বন্ধু ভাবা ছাড়া একটুও ভালোবাসিনি। কিভাবে ভালোবাসতে হয় আমি জানি না। তোমার মনটাকে বিষণ্ণতা গ্রাস করে ফেলুক আমি চাইতাম না। তাই আমি কিছু না ভেবে তোমাকে এই বিষণ্ন থেকে ভালো রাখার জন্য একটা ভালোবাসার নিছক অভিনয় করেছি মাত্র। তার জন্য আমি দুঃখিত।” তারপর মিথিলা আমার সাথে খুব রাগ দেখিয়ে চলে গিয়েছিল। যাওয়ার সময় বলেছিল “তোমরা ছেলেরা এমন কেন? সবকটা স্বার্থপর” প্রিয় মিথিলা আমি ছেলেটা কেমন জানি না। তবে আমি ছেলেটা আসলেই স্বার্থপর। স্বার্থপর না হলে এমন কাজ কেউ করে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে অন্যের হাতে দিয়ে দিতে? আমার জীবনের সব আলপনার মাঝে ভালোবাসার ছোয়া কখনও কি একটুও খুঁজে পাওনি তা জানতে খুব ইচ্ছে করে।
সন্ধ্যার টিউশনি শেষে খোলা চোখে আমি যখন চারপাশটায় তাকাই একটা ভয় এসে আমার মনে জমা হয়। এই সময়টাতে আমার মায়ের কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে বাবা আর ছোট ভাইটার কথা। কত দিন মায়ের মুখটা দেখি না। আমি যখন ছোট ছিলাম মা প্রায় নানু বাড়ি বেড়াতে যেত। কিন্তু আমি মাকে একা ছাড়তাম না। আমার ভয় করতো। আমি মায়ের সাথে চলে যেতাম। কিন্তু আজ এই শহরটায় আমি অনেক অনেক মাস মাকে ছেড়ে দিন পার করছি। মা তুমি কি জানো তোমার ছেলে কত বড় হয়ে গেছে? তোমার ছেলে কতটা স্বার্থপর হয়েছে? তোমার এই ছেলেটা আজ সবাই কে ছেড়ে একা একা থাকতে পারে। বাবা কাজের তাগিদে প্রায় এই শহর থেকে ঐ শহর চলে যেত। বাবা ছোট খাটো কাপড়ের ব্যবসা করতো। কিন্তু গত চার পাঁচ বছর ধরে বাবার ব্যবসাটা আর নেই। এখন নিজেদের জমি জমা দেখে আর একেক মৌসুমে যা পারে তা চাষ করে।
বাসায় এসে দেখি আদনান ভাই সিগারেট ফুকিয়ে ফুকিয়ে টানছে আর পায়চারি করছে। কেমন একটা অস্থিরতা তার চেহারায়। আমি আদনান ভাইকে বললাম “তোমার কি কিছু হয়েছে?” আদনান ভাই আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে সিগারেট আবার ফুকতে থাকে। তারপর বললো “ইচ্ছা করে কুত্তার বাচ্চারে খাইয়া ফেলি। অফিস থেকে আসার সময় আজ এতা বছর পর নাদিয়ার সাথে আমার দেখা হয়েছে। মেয়েটা একদম ভালো নেইরে অনেক শুকিয়ে গেছে। কেমন আছি, কি করি এখন, টুকটাক কথা আমাকে জিজ্ঞেস করে। হঠাৎ ওর হাতে আমি দাগের চিহ্ন দেখে যখন জিজ্ঞেস করলাম এটা কিসের দাগ? ও লুকাতে চেষ্টা করলো। বললো কিছু না। ও মিথ্যা বললে আমি কেমন করে বুঝে ফেলতে পারি জানিস। তারপর আবার বলাতে ও বললো প্রায় ওর স্বামী ওরে মার ধর করে। আমি তখন চুপ করে ছিলাম কিছু বলতে পারি নাই। আমার ভিতরটা তখন পুড়ে যাচ্ছিলরে।
ওর তিন বছরের বাচ্চাটাকে যখন আমি কোলে নিলাম আমার ভিতর কি যেন একটা বয়ে গেছে। চাকরি বহুত খারাপ জিনিসরে। এটা মানুষকে বদলে দিতে পারে। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে। যেদিন ওর বিয়ে হয় ঠিক সাত দিন পর আমার চাকরিটা হয়। কপালটা দেখছিস? তখন আমি ওরে বলতে পারি নাই “চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো?” আদনান ভাই এই কথা বলে আবার সিগারেট ফুকিয়ে ফুকিয়ে টানতে থাকে। আমি একটা অদ্ভুত বিষণ্ন মন নিয়ে নিজের রুমে আসি। জানালাটা খুলে দেই। দক্ষিনের হাওয়াটা মাঝে মাঝে আমার খুব ভালো লাগে। ছোট ভাই ফরহাদের চিঠিটা এখনও পড়া হয়নি। মিথিলা সাদমানের কাছে যেদিন চলে গেলো তার কয়েকদিন পর থেকেই আমি কত কাগজ নষ্ট করেছি লিখে লিখে। এই পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাব। ক্লাসে মিথিলাকে দেখেও না দেখার ভান করে থাকি এখন আমি। আমি বিছানায় শুয়ে বালিশের নিচ থেকে ছোট ভাইয়ের চিঠিটা খুললাম। গোটা গোটা অক্ষরে কয়েক লাইন বিশিষ্ট চিঠি। আমার ভাইটা ক্লাস ছয় এ পড়ে এখন।
প্রিয় ভাইয়া,
প্রথমে ভালোবাসা নিও। কেমন আছো? তোমার শহরটা কি অনেক বড়? তোমার শহরে কি অনেক অনেক মানুষ? সে সব মানুষের সাথে মিশে আমাদের ভুলেই গেছো। তোমার শহরটায় একদিন নিয়ে যাবে? ঐ শহরের ভোরের কাক দেখবো, দেখবো তোমার ব্যস্ত শহরের মানুষ গুলোকে। কয়েকদিন পরেই ঈদ। কবে আসবা? কত কিছু ভেবে রেখেছি। তোমার সাথে ঘুরবো, পুকুরে গোসল করবো, দুই ভাই মিলে মাছ ধরবো। তুমি আমি আর বাবা মিলে ঈদের নামাজ পড়বো। রাত্রে বেলা তোমায় জড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকবো। চিঠি লিখতে আমার ভালো লাগে না। আজকাল কেউ চিঠি লিখে? আমি জেনিয়া আপুকে এটা বুঝাতে পারি না। কিন্তু জেনিয়া আপু জোর করে আমাকে দিয়ে লিখিয়েছে। চিঠি লেখার মধ্যে নাকি একটা অনুভুতি আছে। এসব অনুভুতি আমি বুঝিনা। আম্মা প্রায় রাত্রে বেলা ঘুমের মাঝে চিৎকার দিয়ে ওঠে তোমার জন্য। বলে আমার ছেলেটা ভালো নেই। ভাইয়া তুমি কি অনেক ভয় পাও?
আমার কেন যেন খুব কান্না আসে। ভিতরটা ধক করে ওঠে। চিঠিটা আমার আর পড়তে ইচ্ছে করে না। আমি ভিজা ভিজা চোখে জানালার কাছে যাই। দক্ষিনের হাওয়াটা এসে আমাকে ছুয়ে দেয়। এমন শীতল হাওয়াটা আমার খুব পরিচিত মনে হয়। শেষ বিকেলের সময় এমন শীতল হাওয়া আমাকে বহুবার ছুয়ে দিয়েছে। আমি তখন হাই স্কুলে পড়ি। স্বপ্নের রং কিংবা কাব্যর ভাষা আমি তখন বুঝতাম না। স্কুল শেষে নৌকা করে অনেক দুর পর্যন্ত চলে যেতাম জেনিয়ার সাথে। আমি মাঝি হতাম। ও নদীর পানিতে হাত দিয়ে কি যেন আঁকাআঁকি করতো। একদিন আামকে বললো “আমারে নিবা মাঝি তোমার লগে?” আমি একটা অদ্ভুত হাসি দেই। তারে বলি “কপিলা জীবনটা এতো সহজ নারে” আমরা দুজনেই হাসতে থাকি। কত দুষ্টামি করতাম। আমাদের মাথার উপর থেমে থাকা আকাশটার মাঝে মেঘেরা উড়ে যেত। আমি সেই দিন গুলোর কথা ভাবি। এই শহরের বেড়াজালে থাকতে আমার সেই ফেলে আসার সময় গুলোর জন্য কষ্ট হয়।
পুরানো ক্যানভাসে তার সাথে কত স্মৃতি রয়েছে আমার। এই সময় গুলো আজ মনের ভিতর উকি দিতেও কেন যেন উকি দেয় না। একবার স্কুলের টিফিন ছুটিতে তার সাথে সিনেমা দেখতে চলে গিয়েছিলাম সেদিন বাড়ি ফিরে মেয়েটা আমার জন্য কি মার টাই না খেয়েছিল। তারপর দিন স্কুল শেষে আমাকে কি সুন্দর করে বলেছিল ” মাঝি আজ যাইবানা” আমি চুপ করেছিলাম। যেন গতকাল তার সাথে কিছুই ঘটেনি। তখন মনে হয় আমার সেই সময়ের আঁকা অনুভুতির আলপনা গুলো বাতাসে উড়ে বেড়াতো।
ইদানিং আকাশ থেকে কিছুক্ষন পর পর বৃষ্টিরা নেমে আসে। এই বৃষ্টিকে বরণ করতে মাঝে মাঝে আমার খুব ইচ্ছে হয়। কিন্তু আমি পারি না। বৃষ্টির ফোটা গুলা বাসের জানালার কাচের মধ্যে জমা হয়ে বেয়ে বেয়ে নিচে পড়ে যায়। গত পরশু টিউশনিতে ছাত্রের মাকে যখন বললাম ঈদে বাড়িতে যাব তখন তিনি মাথা নেড়ে শুধু বললো আচ্ছা ঠিক আছে। তার কিছুক্ষন পর বেতন সহ আমাকে দেড় হাজার টাকা বেশি দিয়ে বলে “সাবধানে যাবেন বাড়িতে কেমন?” আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক ইশারা দেই। আমার ছাত্র আরাফ ক্লাস ফোরে পড়ে। আমি আরাফকে দুইশ টাকা দিয়ে বলি “ঈদে কিছু কিনে খাবা। এসে আবার আমরা পড়ালেখা শুরু করে দিব ঠিকাছে?” আমার ছাত্র খুশি হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে “স্যার তাড়াতাড়ি চলে আসবেন।” আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি বৃষ্টিটা এবার কমে গেছে। ইদানিং বৃষ্টিকে বুঝা যায় না। এই বৃষ্টির মাঝে আমার কল্পনা গুলো চোখের সামনে ভাসতে থাকে। কিন্তু আমি এই গুলা মনে করতে চাই না। মনে করলেই ভিতরটা ধক করে ওঠে।
বাড়িতে পা রাখতেই আম্মা আমাকে দেখে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে। আমার মুখে হাত বুলিয়ে গম্ভীর মুখে বলে “তোর মুখটা এমন ক্যান? ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করিস না?” আমি আম্মাকে বলি “তোমার হাতের রান্না খাওয়া হয়না যে তাই” তারপর বাড়ির ভিতরে যাই। আমার আসার খবর পেয়ে আব্বা বাড়িতে আসে। আব্বারে সালাম করে বলি “ফরহাদ কোথায় ওর দেখি না যে?” আব্বা বলে “কোথায় আবার সারাদিন তো খালি খেলা আর খেলা। আমার কথা কি শুনে? তোর মা প্রশ্রয় দিয়ে ফেলছে বেশি।” আম্মা বলে উঠলো “এখন ছেলের কাছে আমায় নিয়ে নালিশ করা হচ্ছে? যখন শাসন করি তখন তো আপনিই বাধা দেন।
প্রশ্রয় আমি দেই নাকি আপনি দেন হ্যাঁ?” আমি কিছু বলি না। আব্বা চুপ হয়ে যায়। এর একটু পর ফরহাদ বাসায় এসে হাপাতে হাপাতে বলে “কখন আসছো” আমি বলি কিছুক্ষন আগে তু্ই আব্বার কথা শুনিস না ক্যান?” ফরহাদ যেন আমার কথা এই কান দিয়ে শুনে ঐ কান দিয়ে ফেলে দিল এমন একটা অবস্থা। আমি দরজার ওপাশে কার যেন ছায়া দেখতে পাই। ব্যাগ থেকে আম্মার জন্য কিনা শাড়ি, বাবার জন্য পাঞ্জাবী আর ফরহাদের জন্য শার্ট প্যান্ট বুঝিয়ে দেই। আম্মা আমাকে বলে “এইগুলা আনতে গেলি ক্যান? অযথা খরচ করিস” আম্মার এই কথা শুনে আব্বা বলে “তোমার ছেলে বড় হয়ে গেছে এটা আমাদের বুঝাতে হবে না? নিজের রোজগারের টাকা দিয়ে না কিনলে কি করে বুঝাবে তোমার ছেলে বড় হয়েছে? তোমার ছেলেরে বলে দাও আমি এখনও বেঁচে আছি।” আব্বার কথা শুনে আমি কি বলবো বুঝতে পারি না। ফরহাদ পোশাক পেয়ে সাথে সাথেই পড়ে দেখে তাকে কেমন দেখায়।
আমি দরজার ওপাশে ছায়ার কাছে যাই। গিয়ে তাকাতেই দেখি জেনিয়াকে। পিছনে দু হাতে ভর দিয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি চুপ করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকি। সে ও আামার দিকে চুপ করে তাকিয়ে থাকে। একটা বাতাস এসে তার চুল এলোমেলো করে দেয়। অদ্ভুত ভঙ্গিতে চুল কানে গুজে নেয়। তার চুপ থাকা দেখে আমি খুব শান্ত ভাবে বললাম “কেমন আছো?” সে মাথা দিয়ে হ্যাঁ সূচক ইশারা দিয়ে বুঝায় ভালো আছে। ওর চোখের মাঝে মেঘের আবছায়া ফুটে ওঠে। আমার এই ছোট্ট ঘরে তার চোখে ফুটে ওঠা মেঘের আবছায়া ছড়িয়ে যায়। কয়েক মুহুর্ত সে আমার দিকে তার অদ্ভুত মায়ামায়া চোখে তাকিয়ে ইতস্তত হয়ে বলে “আমার জন্য কি এনেছো?” আমি কিছু বলি না। আম্মা ভিতর থেকে বলতে থাকে “কার সাথে কথা বলিস?” আম্মার আওয়াজ শুনে জেনিয়া ভিতরে ঢুকে বলে “আমি খালা। তোমার ছেলে তো আমাকে ভুলেই গিয়েছে। আমার জন্য তো কিছুই আনেনি। তোমার ছেলেকে বলে দাও তার সাথে আমার কোন কথা নাই।” আম্মা আর আব্বা হাসতে থাকে। আমি এই হাসির কারণ বুঝতে পারি না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য আমিও এই হাসির আকস্মিকতায় ভ্যাবচেকা খেয়ে হাসতে থাকি।
ভোরের আলোড়ন দু নয়নে ভেসে ওঠতেই একটা শীতল হাওয়া শরীরকে ছুয়ে যায়। রাতের আলো শেষে এই ভোরের আলোটা একটা নতুন দিনের জানান দেয়। এই সময়টায় আকাশের মেঘেরা শান্ত হয়ে থাকে। আর এই নতুন দিনটা ঈদ। অধীর অপেক্ষার শেষে আমার ভাই এর ইচ্ছা পূরণ হয়। আমরা বাবা, ভাই তিন জনে মিলে ঈদের নামাজ একসাথে পড়ে মায়ের হাতের রান্না করা সেমাই খাই। আমি অনুধাবন করি পৃথিবীর মধ্যে এই সময়টা খুব দামী খুব। মিথিলার সাথে পার করা সময় গুলো হুট করে আমার খুব মনে পড়ে। মিথিলার কথা মনে পড়লে আমার চোখে কেন যেন জল চলে আসে। আম্মা আমার চোখে জল দেখে বলে “কিরে কি হইছে তোর? চোখে জল ক্যান?” আম্মারে কি বলবো বুঝতে পারি না। আমি আম্মারে জড়িয়ে ধরে বললাম “এই সময়টা আমি কখনও হারাতে চাইনা মা। আমি হাজার হাজার বছর কাটাতে চাই তোমাদের সাথে।” আম্মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে “জাহেদ এর বাবা আমি কি ঘুমের মাঝে এমনিই চিৎকার দিয়ে ওঠি? আপনারে বলছি না আমার ছেলেটা ভালো নেই। আমার ছেলেটা আমাকে ছাড়া কখনও একা থাকেনি। আমার ছেলেটার ভয় করে” আমি চুপ করে আম্মাকে জড়িয়ে ধরে রাখি।
বিকেলের এই শান্ত রৌদ্রে জেনিয়ার সাথে আমি এখন নৌকাতে বসে নৌকা চালাচ্ছি। সে আগের মতই নদীর পানিতে আঁকাআঁকি করে। আমি তাকে বলি “কি আঁকো?” সে আমাকে বলে “বলবো না। তুমি মাঝি খুব খারাপ।” আমি কিছু বলতে গিয়েও যেন বলতে পারি না। আকাশের মেঘ গুলো আমাদের মাথার উপর দিয়ে সেই আগের ন্যায় উড়ে যায়। সে আমাকে বলে “মাঝি তোমাকে ভিজিয়ে দেই?” আমি তাকে না সূচক ইশারা দেওয়া সত্ত্বেও সে আমাকে ভিজিয়ে হাসতে থাকে। আামার শরীরে পানি ছড়িয়ে পড়া মুছতে মুছতে তাকে বলি “আমি মাঝি না। আমাকে মাঝি বলবা না।” সে আবার হাসতে থাকে। তার এই হাসি আর বিকেলের রুপালি রোদে চারপাশটা একটা অন্য রকম আভা ছড়িয়ে যায়। হঠাৎ সে একটু গম্ভীর হয়ে বললো “মাঝি আমাকে ছাড়া থাকতে তোমার খারাপ লাগে না?” আমি ওর দিকে অদ্ভুত চোখে তাকাই। তার এই আবেগ মাখানো কথার কিছু একটা লুকিয়ে থাকে। আমি সেই আগের মত হাসি না দিয়ে তার এই কথা অনুধাবন করে বুঝার চেষ্টা করি। কিন্তু আমি কেন যেন পারি না। সে আবার বললো “ভয় পেয়েছো? ভয় পেয়ো না। দাঁড়াও তোমাকে গান শুনাই ভয় কেটে যাবে। শুনবে?” আমি চুপ করে থাকি। কিছু বলি না। সে পানির মধ্যে হাত ডুবিয়ে গাইতে থাকে।
“ভাবতেই পারো আলোর শেষে সন্ধ্যা কেন মুচকি হেসে সুদূরে যায় নিয়ে চলে তোমার কথা আমায় বলে ভাবতেই পারো আমরা দূরে যেমন আছি বহুকাল ধরে তবুও আজ মেঘের দেশে শুধুই আমায় মনে পড়ে আজ তোমার মেঘে মেঘে রংধনু আজ তোমার মেঘে মেঘে রং আজ তুমি মেঘে মেঘে যেমন ইচ্ছে তেমন ভালবাসা নিয়ে আসি আজ আমি মেঘে মেঘে সারাক্ষণ আমি নৌকা চালানো বন্ধ করে জেনিয়ার দিকে উদ্ভেগপূর্ণের সহিত তাকিয়ে থাকি। সে আামকে পানি দিয়ে আবার ভিজিয়ে বলে “কি দেখো হ্যাঁ? চোখ নামাও, এমন ভাবে তাকাবানা বলে দিলাম।” আমি কি বলবো বুঝতে পারি না। এই সময়টায় আমি থমকে যাই। থমকে যায় আমার মনের ভিতরের শহরটা।
আমি জেনিয়াকে আবার অনুধাবন করি, তার আকাশটা কত শান্ত। তার শান্ত আকাশটায় কেন যেন আমার ছায়া দেখতে পাই। সে হঠাৎ আকাশের দিকে তাকিয়ে একটু গম্ভীর হয়ে আমাকে বলে “আমার জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত মাঝি হয়ে থাকবে? আমি এমন রুপালি বিকেলটা সব সময়ের জন্য নিজের করে নিতে চাই” আমি চুপ করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকি। তার এমন কথায় আমার এক চোখে বেদনা আর এক চোখে নতুন স্বপ্ন দেখতে পাই। সেই নতুন স্বপ্ন দিয়ে কি আমার অন্য চোখের বেদনার ঘোলা জল মুছে দিতে পারবো? আমি সেই সময়টার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। আমি আবার নৌকা চালাই তার দিকে তাকিয়ে। কেন যেন ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে একটা অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে…
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত