কদিন ধরে তাতান এর খুব মজা, স্কুল যেতে হচ্ছেনা ,পড়াশোনার চাপ নেই ,সারাদিন বই না খুললেও মামনি বকাবকি করছেনা ,শুধু খেলা আর খেলা ,আর এত আনন্দের মধ্যে যেটা সবচেয়ে উপরি পাওনা সেটা হল মামনি ,বাবাই ,দাদাই সবাই বাড়িতে কেউ বাড়ির বাইরে যাচ্ছেনা। মামনি ভালো ভালো রান্না করছে আর সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া হচ্ছে ,এত আনন্দ বোধহয় তাতান কোনোদিন পায়নি ,তবে এর মধ্যেও যে friend-দেড় জন্য দুঃখ হচ্ছেনা তা নয় ,কতদিন দেবাংশু ,অর্ক দেড় সঙ্গে দেখা হচ্চেনা -স্কুল যে বন্ধ |
এই কদিন ধরে তাতান একটা জিনিস লক্ষ্য করছে -ব্যালকনির পিছনের দিকে গাছ গুলো অতিরিক্ত দূষনে কেমন যেন মরে গেছিলো ,সেগুলোতে অনেক পাতা গজিয়েছে ,কাল বিকেলও দাদাই -এর সঙ্গে ছাদে গিয়ে লক্ষ্য করেছে গাছে গাছে পাখি-দের কিচির-মিচির যেন আগের থেকে বেড়ে গেছে ,ব্যালকনিতেও পাখিরা উঁকি-ঝুঁকি মারছে ,খুব মজা হচ্ছে তাতানের।
Covid-19 বা coron virus টা সারা পৃথিবীকে গ্রাস করেছে ,লক্ষাধিক মানুষ মারা গেছে ,কলকারখানা বন্ধ মানুষের অন্নাভাব ,মানুষের তৈরী সভ্যতায় আজ মানুষ নিজেই বিপন্ন ,মুক্তির উপায় খোঁজার প্রচেষ্টায় রত মানুষ |এতদিন যাবৎ মানুষ যে প্রকৃতির উপর অত্যাচার করছে ,প্রকৃতি আজ তার প্রতিশোধ নিচ্ছে ,কাল বিকেলে দাদাই ওকে এই কথা গুলোই বোঝাচ্ছিলো ,মানুষের তৈরী একটা virus আজ মানব সভ্যতাকে ধ্বংস করতে উদ্ধত ,তাই সব দেশের সরকার এই lockdown -এর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ,এই lockdown এর জন্য মানুষ বাড়ি থেকে বাইরে বেরোচ্ছেনা ,গাড়ি -ঘোড়া চলছেনা ,কলকারখানা বন্ধ ,বাবাই বলছিলো এর ফলে মানুষের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে ,মানুষ খেতে পাচ্ছেনা ,সেই জন্যই তো গত রবিবার ওদের পাড়ায় গরিব মানুষদের চাল -আলু -ডাল বিতরণ করা হচ্ছিল ,দেখেছে তাতান। বাবাই তখন বাজারে যাচ্ছিলো ;তাতান বায়না ধরে বেরোবে ,বাবাই তো নিয়ে যাবেনা –তারপর অনেক কান্না কাটি করায় বাবাই রাজি হয় -তবে শুধু পাড়ার পার্ক-এর সামনে দিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে চলে আসবে ,তাতেই রাজি তাতান ,মুখে মাস্ক পরে বেরিয়েছিল কি মজাই যে হচ্ছিল ,তখনি তাতান দেখেছিল ক্লাব ঘরের সামনে অনেক লোকের লাইন ,বাবাইকে জিজ্ঞাসা করতে বাবাই বলেছিলো -ওখানে চাল আলু দেওয়া হচ্ছে ,তাতানেরও খুব ইচ্ছা করছিল একটু দিতে কিন্তু হলনা ,পার্ক অবধি গিয়েই বাড়ি চলে এসেছিল |
বিকেল বেলা দুধ বিস্কুট খাবার পরই হটাৎ মামনি বলল -‘ তাতান -এর স্কুল থেকে হোমওয়ার্ক দিয়েছে করে ফেল ,’-ইস এখন তো দাদানের সঙ্গে লুডো খেলার কথা ,ঝটপট হোমওয়ার্ক গুলো করে নিয়েই ছুটলো Drawing room -এ গিয়ে দেখলো বাবাই বেশ চিন্তিত ,প্রধান মন্ত্রী ঘোষণা করেছেন lock-down-এর সময় সীমা বাড়বে ,ঠাম্মা আর মামনিকে বলতে শুনলাম -lockdown যে বাড়বে সেটা তো জানাই ছিল ,socialdistance না থাকলে virus -কে নির্মূল করা যাবে কিকরে ?lockdown তো উঠে গেলেই মানুষ ভিড় করে বাইরে বেরোবে আর তখন তো সংক্রমণ আরো ছড়াবে | বাবাই বলল -‘কিন্তু economic দিকটাও তো ভাবতে হবে ,কত ছোট ছোট কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লক্ষাধিক মানুষ বেকার হয়ে পরবে ,আর কতদিনই বা মানুষ জমানো টাকাতে খেতে পারে? ত্রাণ সামগ্রী ও তো সব জায়গায় সমানভাবে যাচ্ছেনা। মানুষের অবস্থা খুব খারাপ। বাবাইকে এত চিন্তায় দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেলো, খেলার ইচ্ছাই চলে গেলো, দাদাই ঘরে বসে গল্পের বই পড়ছিলো ,তাতান গিয়ে বসলো দাদাই এর পাশে |’ কি হয়েছে তাতান বাবু মুখটা শুকনো কেন ?
‘ আমাদের সামনে খুব বিপদ তাইনা দাদাই ?
‘ কে বলল দাদুভাই আমাদের সামনে খুব বিপদ
‘এই যে এক্ষুনি বাবাই বলছিলো ;মানুষ খেতে পাচ্ছেনা ,চাকরি নেই ,অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে ‘হা দাদুভাই ,সে তো মানুষ একটু অসুবিধায় পড়েছে। কিন্তু তুমি বলতো দাদুভাই তোমার ভালো লাগছেনা ??
আমার তো খুব ভালো লাগছে ,স্কুল নেই একটু আধটু হোমওয়ার্ক করতে হয় তবে অনেক কম। সবাই বাড়িতে আছে ,কতদিন আমরা একসাথে থাকিনা বলো। বাবাই মামনি অফিসে বেরিয়ে যায় ,আমি স্কুল-এ চলে যাই ,তুমিও যাও তোমার socialwork করতে। বাবাই বাড়ি ফিরতে ফিরতে তো কতদিন আমি ঘুমিয়েই পড়ি ,এখন কি সুন্দর সবাই একসাথে। ‘একদম ঠিক দাদুভাই ব্যস্ততার মধ্যে আমরা আমাদের প্রিয়জনদের, পরিবার কে সময় দিতে ভুলে গেছি ‘ ‘আর দেখছো দাদাই রাস্তায় গাড়ির আওয়াজই নেই, ধোয়া ধুলো নেই, ব্যালকুনিতে কত্ত পাখি আসছে ,আমার খুব ভালো লাগছে ‘ |
‘তুমি কি জানো দাদুভাই ,বাতাসে অক্সিজেনের পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে ,বায়ু দূষণ কমছে ‘‘দাদাই দিল্লির রাস্তায় ময়ূর হেটে বেড়াচ্ছিল সেদিন computer এ দেখলাম ‘ একদম ঠিক ,যমুনার জল দূষণ মুক্ত হচ্ছে,গঙ্গার জলেও দূষণ কমছে ,প্রকৃতি আবার তার আসল চেহারায় ফিরে আসছে। মানুষ অনেকদিন ধরে প্রকৃতির উপর অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে ,প্রকৃতি তার প্রতিশোধ নেবেনা ? ‘আজ দেখো জন্তু জানোয়ার রাস্তায় স্বাধীন ভাবে ঘুরছে আর মানুষ খাঁচা বন্ধী’ ‘কি দাদুভাই তাই না ‘? হা দাদাই আমরা যেমন ওদের ZOO তে দেখতে যাই ওরাও রাস্তা থেকে আমাদের দেখবে ‘হা—হা—হা —একদম ঠিক বলেছো দাদুভাই কিন্তু lockdown উঠে গেলে তো আবার সেই আগের মতোই সব হয়েযাবে তাইনা দাদাই ?
হুম –সে তো ঠিকই কিন্তু মানুষকেও ভাবতে হবে প্রকৃতি কে রুষ্ট করে কিছু করাই উচিত নয়। মানুষকে এমন ভাবে চলতে হবে যাতে প্রকৃতির ক্ষতি না হয়। প্রকৃতি বাঁচলে তবেই তো মানুষ বাঁচবে দাদাই lockdown উঠলে আমরা আরো ফুল গাছ কিনবো আর আমার বন্ধুদের বলবো ওদের বাড়িতেও অনেক অনেক গাছ লাগাতে একদম ঠিক বলছো দাদুভাই তোমার এই ছয় বছরের বুদ্ধিতে তুমি যা বুঝতে পেরেছো, এই বুদ্ধিমান মানুষ যে কেন তা বুঝছে না সেটাই ভাবনা |