অনেক দিন ধরেই একটা রব উঠেছে সাহিত্য সমাজে তার নাম “বাজার চলতি খাই” এই কথা নিয়ে বেজায় বিষণ্ণ সাহিত্য রাজ্যের রাজা শ্রী উপন্যাস দেব।
তিনি ঠিক করলেন একটা সভা ডাকবেন এবং সেখানে এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। সভা ডাকা হল, সেখানে উপস্থিত ছিলেন সাহিত্য রাজ্যের মাথা রা –
কবিতা রানী, প্রবন্ধ নিবন্ধ কুমারেরা, ছোটগল্প সেন, রসিক রম্য পাত্রমিত্র, ভৌতিকপুরের বিদ্বজনেরা সবাই ছিলেন আর ছিল আজকের দিনের খুবই পরিচিত সদস্যরা অণুগল্প দেবী, অণুকবিতা কুমারী প্রমুখেরা।
উপন্যাস দেব সবার উদ্দেশ্য বলতে শুরু করলেন – সবাই কে আজকের সভাতে নমস্কার এবং আসার জন্য ধন্যবাদ। আমদের রাজ্য বেশ কিছু দিন ধরে একটা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে তা নিয়েই আলোচনা সভা। আপনাদের বিভিন্ন মতামত জানাটা খুব আবশ্যক। রানী কবিতাশ্বরী আপনি আগে বলুন।
-ধন্যবাদ মহারাজ। দেখুন আগের যুগে কবিরা আমাদের ভীষণ মান দিত তাদের দিন রাত আমাকে ছাড়া কাটতো না। কিন্তু যবে থেকে এই হতচ্ছারী অণুকবিতা এসেছে এখন আমার কদর অনেক কমেছে।
-কেমন কমেছে শুনি।
-আগে কবির শয়নে স্বপনে আমি থাকতাম আর তখন ঝর্ণার ধারার মত আমি বয়ে যেতাম কবির কলম থেকে কোনো সীমা বাধা ছিলনা। কিন্তু আজকাল লাইন মেপে মেপে সব কাজ হয় এটাই বলে নতূন ঢঙ। এখন বাজারে অণু কেই সবাই প্রাধান্য দেয় আমি কেঁদে মরি হায়।
-এতো সত্যি চিন্তা. তা আর বলতে এই বলে প্রবন্ধ কুমার ও বলেন=
-হ্যাঁ, মহারাজ উনি তো কবিতা দেবী ওনাকে ছোট করছে। তাতো আছেই। আপনি জানেন আজকার আমাকেও শব্দসীমার বেড়ি পড়িয়ে রাখে প্রবন্ধকাররা।
– কি বলছেন মশাই?
– আজ্ঞে! মহারাজ আর কি বলি। ভাবুন বরি ঠাকুর আমাকে কত কত পৃষ্ঠার ময়দানে বিচারণ করিয়েছেন। সেখানে আজকের চিনেপুঁটি প্রাবন্ধিকগুলো আমাকে ১/২ পৃ. আটকে রাখে দম বন্ধ লাগে জানেন কিন্তু ঐ সে একটা কথা “বাজার চলতি খাই”।
-আর কার কার দুঃখ আছে শুনি।
-আজ্ঞে মহারাজ আমি। অতি দুখী।
-কেন? ছোটগল্প সেন আপনার তো কদর লেখকদের কাছে বরাবরই। আপনি ও এমন বলছেন কেন?
-বলি কি আর সাধে মহারাজ! আমাকেও শব্দের কারাগারে আটকে এখন ঐ বেয়াদব অণুগল্প বেজায় বেড়েছে জানেন।
-কিরকম শুনি।
-আর কি শোনাই। এখন লেখকরা কম কথাই সব কইতে চায়। আরে কম কথা বলে কি ২ পৃষ্ঠা হইতে আমি পারি না আপনি বলেন? কিন্তু না শব্দ সীমারে একদম কষাইয়া আমারে আটক রেখেছে আর এই বেয়াদব অণু টারে ছেড়েছে।
ছোটগল্পের কথা শুনে রম্য সেন ভৌতিক মশাই সবাই তাদের দুঃখ এক এক করে বলল উপন্যাস দেব কে। ভৌতিক দেব বলল
-মহারাজ ভয় দেখানোর আগেই আমাকে ভয় দেখায় জানেন।
রম্য সেন ও তাই বলল
-মহারাজ হাসি আর আসে না তাও দাঁতকপাটি বার করে রাখতে হয় এই রচনাকার গুলোর জ্বালায়।
সবাই এক সাথে বলল
-মহারাজ বিচার করেন, বিচার আর সয় না যে।
সব শুনে রাজা উপন্যাস দেব কিছু বলবেন তখনি সাহিত্য রাজ্যের বুদ্ধি মন্ত্রী সমালোচক সেন বললেন-
-মহারাজ আজ্ঞা দেন তো একটা কথা বলব?
-হুম বলল।
আপনি রবি ঠাকুরের ‘কালের যাত্রা’ পড়েছেন তো?
-হুম কেন?
– ওখানে কবি সবাই কে একবার করে সুযোগ দেওয়ার কথা বলেছেন। সবাই শিখরে উঠতে চায়। সর্বোচ্চর স্বাদ সবাই চায় মহারাজ। এত দিন এরা পেয়েছে এবার ‘অণু’ দের পালা পাবার। পেতেদিন সময় হোক সব বদলাবে শুরু থেকেই হবে আবার শেষ। এখন শেষ থেকে শুরুর পালা এসেছে মহারাজ, অনেকক্ষণ চুপ থেকে শেষে বলল উপন্যাস দেব।
-আজকের আলোচনা এখানেই শেষ হল। বিদায় সকলকে।