‘মাঝরাতে এই নটি মেয়ে আমার বাড়িতে কি করে?’ আমজাদ সাহেব বিরক্তিতে নাক-মুখ কুঁচকালেন। ‘এই দুলাল এরে এখনি যাইতে বল।’
-রমিলা আপনি যান তো।কাকা ক্ষেপে আছেন। উল্টাপাল্টা কিছু করার আগে ভালোই-ভালোই বিদায় হোন।
দুলালের কথা শুনে আমজাদ সাহেব বিরক্ত স্বরে বললেন, ‘বাজারের মেয়েদের আবার সম্মান!ওরে আপনি-আপনি করতেছস কেন? তাড়াতাড়ি বিদায় কর।’ রমিলা এবার নড়েচড়ে বসে। অনেকক্ষণ হল এই বাড়িতে এসেছে। বড় আসা নিয়ে এসেছিল সে। সবাই বলে, আমাজাদ সাহেব নাকি কাউকে খালি হাতে ফেরান না। কিন্তু এখানে এসে দেখে উনি রগচটা মানুষ।তাকে কোন কথা বলার সুযোগ’ই দিচ্ছে না।
রমিলা কাতর কণ্ঠে বলল, ‘আমার কথাটা একটু শোনেন।তারপর আপনি যা বললেন তাই আমি করব।’ আমজাদ সা্হেব রাগে গজগজ করতে বললেন, ‘আমি দুই বার হজ করে আসছি, এত রাইতে আমার বাড়িতে এক বাজারের মেয়ে এসে হাজির! ছিঃ ছিঃ আমার মান ইজ্জতের ব্যাপারস্যাপার। আমি তোর কোন কথা শুনবো না।তুই তাড়াতাড়ি আমার বাড়ি ছাড়।’ আমজাদ সাহেব দেখলেন রমিলা এখনো বেহায়ার মত দাঁড়িয়েই আছে। তিনি আড় চোখে বাড়ির দিকে তাকালেন, দেখলেন বাড়ির অন্য কেউ সজাগ হয়ে গেছে কিনা। বাড়িতে বড় মেয়ের জামাই আসছে গতকাল। কি এক মসিবত। কেউ সজাগ হয়ে গেলেই ঝামেলায় পড়ে যাবেন। আমাজাদ সাহেব পাঞ্জাবীর পকেট থেকে তাড়াহুড়ো করে একটা একশ টাকার নোট বের করলেন। রমিলার দিকে টাকাটা বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘যা এইটা নিয়া বিদায় হ। ইজ্জত সম্মান আর কিছুই রাখলি না আমার।’
– টাকা লাগবো না আমার। আমি টাকার জন্য আসি নাই। আপনি দয়ালু মানুষ তাই একটা অন্য একটা সাহায্যের জন্য আসছিলাম। ‘
আমাজাদ সাহেব ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন। বুঝতে পারছেন, এই মেয়ে কঠিন জিনিস সহজে হাল ছাড়বে না।
নটি মেয়েছেলে দের সাহায্য করতে তিনি রাজিও না। এলাকায় মেম্বার চেয়ারম্যান আছে ওদের কাছে যাক। এদের অন্য কোন সাহায্য করতে গিয়ে এই শেষ বয়সে কলঙ্কের দাগ লাগাতে চান না। গলার স্বর নরম করে বললেন, ‘তুমি পাড়া থেকে এত রাতে আমার বাড়িতে কি জন্যে আসছ জানি না, আর জানতেও চাই না। তোমারে শেষ অনুরোধ করলাম, তুমি চলে যাও।টাকা যখন তোমার লাগবোই না,আমি অন্য সাহায্য করতেও পারব না।’ আমাজাদ সাহেব লক্ষ্য করলেন রমিলা চোখ পানিতে টলমল করছে।সেদিকে তিনি ভ্রুক্ষেপ না করে দুলালের দিকে তাকালেন। দুলাল রমিলার কাছে গিয়ে বলল, ‘আসো বইন তোমারে খাল পাড় করে দিয়ে আসি।’
-একা যখন আসতে পারছি, একাই যাইতে পারব।কারো আসতে হইব না।’ রমিলা ওঠে দাঁড়ায়। দু’কদম এগিয়ে গিয়ে আবার পিছন ফিরে তাকাল। তখনি আমজাদ সাহেব মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলেন। রমিলা আঁচল দিয়ে চোখ মুছে হাঁটতে-হাঁটতে অন্ধকারে মিলিয়ে যায়। আমজাদ সাহেব বারান্দায় কোণে চেয়ারে বসে আছেন।সিগারেটে লম্বা লম্বা টান দিচ্ছেন।আজ রাতে যে ঘুম আসবে না তিনি ভালোভাবেই বুঝতে পারছেন।
মাঝরাতে দুলালের ফিসফিস ডাকে ঘুম ভাঙে তার।তখন ঘড়ির তাকিয়ে দেখলেন রাত দুটো’র মত বাজে। ইচ্ছে হয়েছিল দুলালের গাল গিয়ে চড় থাপ্পড় বসিয়ে দিবেন।পরক্ষনেই মনে পড়ে দুলাল এ বাড়িতে বিশ্বস্ত কাজের লোক। কোন কারণ ছাড়া কখনো একটা কথাও বলে না। নিশ্চয়ই কোন জরুরি কাজে… কিন্তু এভাবে ফিসফিস করে ডাকার
মানে কি? দরজা খুলতেই দুলাল বলল, রমিলা আপনারে খুঁজে। কি জানি দরকার আপনার লগে। নাম শুনেই মাথা বিগড়ে যায় তাঁর । তিনি বললেন, নটি রমিলা…এত রাইতে আমার কাছে? আমজাদ সাহেব আরেকটা সিগারেট ধরালেন। হার্টে অসুখ; পর-পর দুটো সিগারেট এখন আর ধরান না। তবু তিনি টানছেন। চোখ বন্ধ করতেই রমিলার আবছা মুখটা ভেসে ওঠে। ভাবছেন, কি মায়াময় চেহারা মেয়েটার। কিন্তু থাকে পাড়াতে। ওই ব্যবসার সাথে-সাথে যাত্রাপালাও করে বেড়ায়। এজন্য সবার কাছে পরিচিত নাম রমিলা। কিন্তু কিছুতেই ভেবে পাচ্ছেন না, তাঁর কাছে কি প্রয়োজনে এসেছিল,তাও আবার এত রাতে? ‘বাবা চেয়ারে বসে ঘুমাচ্ছ কেন? ভিতরে গিয়ে ঘুমাও।’ আমজাদ সাহেব চোখ খুলে দেখলেন তার মেয়ে আমেনা দাঁড়িয়ে আছে।
-বাবা তোমার জামাই কোথায়? এতক্ষণ কার সাথে কথা বলছিলে? আমজাদ সাহেব চমকে ওঠেন মেয়ের কথা শুনে। আতঙ্কিত গলায় বললেন, ‘আনিস তোর ঘরে নাই?’
-অ্যাঁ? আমাকে বলল, বাবা কার সাথে যেন হুমকি ধামকি পাড়ছে,গিয়ে একটু দেখে আসি। কেন এখানে আসে নাই?
আমজাদ সাহেবের ঘামতে শুরু করলেন।বুঝতে পারছেন পেশার বেড়ে গেছে। অসহায় চোখে মেয়ে দিকে তাকালেন। ‘কি হল বাবা কথা বলছ না যে?’
মেয়েকে কি বলবেন বুঝতে পারছেন না। দুলাল কেও আশেপাশে কোথাও দেখছেন না। ঘুমিয়ে পড়ল নাকি? তার সাথে দেখা না করে ঘুমিয়ে যাওয়ার তো কথা না হঠাৎ দেখলেন দুলাল বাইরে থেকে এদিকে এগিয়ে আসছে। ‘কাকা সর্বনাশ…’ আমেনা কে দেখে কথা মুখের ভিতর আটকে যায় দুলালের। আমেনা জিজ্ঞেস করল, ‘কি হল দুলাল ভাই এভাবে হাপাচ্ছেন কেন?’ আমজাদ সাহেব চেয়ার ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালেন। ‘দুলাল আয় তো আমার সাথে।’ আমেনা চিৎকার দিয়ে ওঠল, ”কি হইছে আমি শুনতে পারিনা?’ আমেনার কথা অগ্রাহ্য করে দুলাল কে নিয়ে বাড়ির বাহিরে আসলেন আমজাদ সাহেব। চাপা স্বরে বললেন, ”কি হইছে বল?’ দুলালের আমাতা-আমতা ভঙ্গি দেখে আবার রাগ মাথা চড়া দিয়ে উঠল আমজাদ সাহেবের। তিনি দুলালের শার্টের কালার চেপে ধরলেন। ‘চাচা রমিলা বের হওয়ার কিছুক্ষণ পর আমি তার পিছু নেই। খালের পাড়ে গিয়ে দেখি কার সাথে যেন কথা বলছে। আর একটু এগিয়ে দেখি লোকটা আমাদের জামাই বাবু।’
টর্চ লাইট নিয়ে কিছুক্ষণ এগুতেই আমজাদ সাহেব দেখেলেন, আনিস হেঁটে-হেঁটে বাড়ির দিকে আসছে। কাছে আসতেই তিনি বললেন, ‘জামাই বাবা বাড়ি চল। এত রাতে একা বের হওয়া ঠিক না।’ আনিস কথার উত্তর না দিয়ে দুলালের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আপনি বাড়ি যান।আমি বাবাকে নিয়ে একটু পর আসছি।’ দুলাল চলে যেতেই শ্বশুরের সামনে এসে দাঁড়ায় আনিস। ‘বাবা আপনি নীরাঞ্জনা দেবী কে চিনেন?” গলার স্বর খানিক টা নিচু করে বলল আনিস। নীরাঞ্জনা ? সহসা কিছু বলতে পারলেন না আমজাদ সাহেব। তিনি অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে জামাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন। হঠাৎ স্মৃতির ঝটকানি’তে চলে গেলেন যেন ২৫ বছর আগের অতীতে। রেল স্টেশন, পুলিস, ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইকবাল… এই নীরাঞ্জনা কে তিনি দিনের পর দিন খুঁজেছিলেন। অলি-গলি সব জায়গায়,মেয়েটি যেন একদম হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছিল। ‘বাবা কি হল?’ আনিসের কণ্ঠে বিস্ময়। আমজাদ সাহেব ভারাক্রান্ত মনে বললেন, ‘হ্যা চিনি সে কোথায়?’
– রমিলার জন্মের সময় নাকি মারা যায়।
-নীলাঞ্জনা দেবীর মেয়ে রমিলা…
কথা শেষ করার আগেই আমজাদ সাহেব চুপ হয়ে গেলেন। রমিলার সাথে খারাপ ব্যবহারের অনুশোচনায় এখন তাকে পুড়ে-পুড়ে খাচ্ছ, লক্ষ্য করলেন অজান্তেই চোখে জল এসে গেছে। তিনি বিষণ্ণ মনে বাড়ির দিকে হাঁটা ধরলেন।
রমিলা খালের পাড় দিয়ে হাঁটছে। ঘোলাটে জোছনায় কেমন যেন বিষাদের গন্ধ লেগে আছে। জোনাকিপোকা দের মনে হচ্ছে যেন আগুনের ফুলকি। যে আগুনের ফুলকি তার মনের ভিতর টিপ টিপ করে জ্বলছে। যারা পাড়াতে থাকে তাদের কোন পরিচয় থাকে না।তারও নেই। পাড়ার বয়োজ্যেষ্ঠ এক পিশির কাছে সে মায়ের পরিচয় জানতে চাইত।কিন্তু পিশি মায়ের কথা বলতেই চুপসে যেত। একদিন জোরজবরদস্তি করার পর পিশি বলতে বাধ্য হয়েছিল, “শোন রমিলা তোর মাকে আমরা রেল স্টেশনে পাই।একা-একা কাঁদছিল। তারপর আমরা ওকে এখানে নিয়ে আসি।এর বেশি কিছু জানিনা। ক’দিন পর বুঝতে পারি তোর মায়ের পেটে বাচ্চা। তোর মাকে জিজ্ঞেস করলেও কিছু বলত না।শুধু কাঁদত।” পিসির কথা শুনে রমিলাও কাঁদছিল। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে পিসি বলল, ‘তোর মায়ের কিছু জিনিস পত্র আছে।সে গুলো নিজের কাছে রাখতে পারিস।’
পিসির কথা শুনে পাগলের মত ছুটে গিয়েছিল সে পিসির পিছু-পিছু । পিশি তাকে একটা ট্রাঙ্ক ধরিয়ে দেয়।নিজের ঘরে এসে সেই ট্রাঙ্ক খুলে সে দেখতে পায়, তার মায়ের দুটো শাড়ি, হাতে সেলাই করা বাচ্চাদের জামা, কিছু উপন্যাসের বই,আর একটা ডায়েরী। রমিলা উত্তেজনায় সেই ডায়েরী খুলে,কিন্তু কিছুই লেখা নেই।অনেক পাতা ছেঁড়া। হয়তো লিখে ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। তবু সে আগ্রহ নিয়ে প্রত্যাকটা পাতা উল্টাছিল। হঠাৎ সে থমকে যায়। পাতার ফাঁকে একটি ফটো। সেখানে দুটো যুবকের ছবি। পিসির কাছে আবার ছুটে যায়।কিন্তু পিসি সাতদিন পর ডেকে নিয়ে বলল, সাথের লোকটা-কে তা শনাক্ত করা যায়নি, কিন্তু এই লোকটার নাম আমজাদ চৌধুরী।
ফজরের আজানের সাথে রমিলা নিজের আঙ্গিনায় পা রাখে। সে চুপিচুপি নিজের ঘরে এসে ঢুকে। দরজা লাগিয়ে বিছানায় বসতেই চোখ যায় টিনের ট্রাঙ্কের দিকে। প্রায় ২৫টি বছর ধরে সে এখানে আছে।এ পাড়ার কোন মেয়েকে কোন গল্প-উপন্যাস পড়তে দেখেনি। কিন্তু তার মায়ের ট্রাঙ্কে ইংলিশ নোবেল ও আছে। রমিলা চোখ মুছে, বুঝতে পারে তার মা কোন সাধারণ মেয়ে না…কিন্তু কিভাবে এখানে এলো, কি তার পরিচর? দরজার খটখট শব্দে চমকে ওঠে রমিলা। ভাবছে,এত রাতে তো কেউ আসার কথা না। ধুরু ধুরু বুকে দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, মনে খানিকটা বিস্ময়! কে এল এই শেষ রাতে দরজা খুলেই দেখতে পেল, দুলাল দাঁড়িয়ে আছে। তাঁকে অবাক করে দুলাল বলল, ‘আমজাদ সাহেব তোমাকে যেতে বলেছে। তুমি আসো আমার সাথে।’ রমিলা হ্যা না কিছু বলেলি।সাথে সাথে বের হয়ে আসল।
বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর বুঝতে পারল, এটা আমজাদ সাহেবের বাড়ি যাওয়ার রাস্তা না। এ পথ সরাসরি গেছে রেল ষ্টেশনের দিকে। আতঙ্কিত গলায় রমিলা বলল, ‘কই নিয়া যাও আমারে?’ দুলাল রহস্যময় একটা হাসি বলল, ‘ভয় পেয়ো না, আসো।’ আমজাদ সাহেব ট্রেনের দুটো টিকেট কিনেছেন।শুধু এই টুকু জানেন, আজ তার অনেক দায়িত্ব। ২৫বছর আগে যে কাজটা সঠিক ভাবে করতে পারেননি, যার যন্ত্রণায় এতদিন পুড়ে পুড়ে ছাই হয়েছেন, আজ সময় এসেছে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার। এরশাদের স্বৈরাচারী শাসন চলছিল তখন। ছাত্রদের আন্দলনে উত্তাল ঢাকা শহর।শ’য়ে শ’য়ে ছাত্র গ্রেপ্তার হচ্ছিল। তিনি নিজেও আত্মগোপনে আছেন। হঠাৎ একদিন ইকবাল এসে বলল, ‘দোস্ত কি হয় বলা যায় না। আমার কিছু হলে নীরাঞ্জনা কে ওর বাড়ি পৌঁছে দিছ।’ নিজের জাত-ধর্ম পরিবার ছেড়ে ইকবাল কে ভালবেসে বিয়ে করেছিল নীরাঞ্জনা। ওরা দু’জন লালবাগে ছোট্ট একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকত।
সেদিন ইকবালের কথা যে এভাবে সত্যি হয়ে যাবে ভাবতেও পারেননি। ইকবাল গুম হয়ে যাওয়ার, দু’দিন ড্রেনে ওর লাশ পাওয়া যায়। ইকবাল মারা যাওয়ার পর নিজেও ভয় পেয়ে যান, পালাতে চাইলেন। তখনি মনে পড়ে নীরাঞ্জনার কথা। ছুটে যান লালবাগের বাসায়।কিন্তু নীরাঞ্জনা বেঁকে বসল। বলল, বাবা-মা’র কাছে যাওয়ার মুখ নেই।কিছুতেই সেখানে যাবে না। বাধ্য হয়ে নীরাঞ্জনাকে সাথে নিলেন।নীরাঞ্জনা তখন চার মাসের অন্তসত্তা। কমলাপুর রেল স্টেশনে বসিয়ে রেখে টিকেট কাটতে যান। তখনি পুলিশ তার শার্টের কালার চেপে ধরে পাঁচদিন পর জেল থেকে ছাড়া পান।জেল থেকে ছাড়া অনেক খুঁজেছেন। একটা সময় বুঝতে পারেন নীরাঞ্জনা হারিয়ে গেছে।
তারপর অনেক গুলো বছর কেটে যায়, আস্তে আস্তে নীরাঞ্জনাকে খুঁজাও বন্ধ করে দিলেন। নীরাঞ্জনার বাবা-মা অনেক বার ছুটে এসেছিল তাঁর কাছে। কিন্তু তিনি তাদের মেয়ের কোন হদিস দিতে পারেননি। গত দুই মাস আগে আমেনার বিয়ের কাজে ঢাকা গিয়েছিলেন। নীরাঞ্জনার বৃদ্ধ বাবা-মা জীবিত আছেন, মেয়ের শোকে যেন পাথর হয়ে গিয়েছেন তারা।। তাদের বাসা থেকে ফেরার সময় নীরাঞ্জনার বাবা বললেন,’ আমার এই বিশাল সয়সম্পত্তি কি হবে তা চিন্তা করি না, কিন্তু জেদি মেয়েটার জন্য আফসোস হয়, বেঁচে আছে না মরে গেছে, তা জেনে মরে গেলেও শান্তি পেতাম’ কিন্তু আমজাদ সাহেব আজ নিজেই জানতে পারলেন তাঁরই মফস্বল শহরের নিষিদ্ধ পল্লিতে ঠাঁই হয়েছিল নীরাঞ্জনার।সেই অভাগিনীর মেয়েটা এই রমিলা…
ভোরের আলো ফোটার সাথে-সাথে ট্রেন চলতে শুরু করল। আমজাদ সাহেবের কাছ থেকে ঘটনা শোনার পর, রমিলা সেই কখন থেকে কেঁদেই চলছে। তিনি রমিলার মাথায় কমল হাত রাখলেন। দৃঢ় গলায় বললেন, ‘ কেঁদনা মা। যা হওয়ার তো হয়েই গেছে। এখন তোমার সামনে সুন্দর ভবিষৎ।জীবনটা নতুন করে সাজাতে পারবে তুমি।’ রমিলা বেশ কিছুক্ষণ পর চোখ মুছে হাতের মধ্যে থাকা ছবিটা দেখিয়ে বলল, ‘এটাকি আমার বাবা?’ তিনি তার পাশে থাকা প্রাণপ্রিয় বন্ধু ইকবাল কে চিনতে পারেন। মৃদু হেসে বললেন, ‘হ্যাঁ এটাই তোমার বাবা।’
-আমার মায়ের কোন ফটো আছে?’ রমিলার কন্ঠে যেন আকুলতা। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে। আমজাদ সাহেব রমিলার উৎকন্ঠা বুঝতে পারলেন। সেখানে রয়েছে ওর মাকে তীব্র আকাঙ্ক্ষা। তিনি মুচকি হেসে জবাব দিলেন, ‘নানা নানীর কাছে যাও তখনি না-হয় উত্তর পেয়ে যাবে।’ রমিলা উদাসী চোখে ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।আমজাদ সাহেব ভোরের সোনালি আলোয় রমিলার মায়াময় মুখখানা দেখে চমকে ওঠেন। তিনি অপার বিস্ময়ে তাকিয়ে আছেন, রমিলা আর নীরাঞ্জনাকে পার্থক্য করতে পারছেন না। মা-মেয়ের মুখখানা যেন একই সূত্রে গাঁথা।
গল্পের বিষয়:
গল্প