কলেজের রাস্তার মোড়ে আসলে ই খেয়াল করেছি একজন বোরখা পরা আন্টি আমার পিছু নেন। প্রথম দু-একদিন পাত্তা দেই নি। কিন্তু রোজ রোজ এক ই ঘটনা ঘটলে সেটা তো আর এড়িয়ে যেতে পারিনা। কিন্তু কি বলব! বয়সে বড় একজন মানুষ কিভাবে কিছু বলা যায় তাই ভাবছি আর রাস্তা দিয়ে হাটছি। হটাত ফোনে কল আসলো আমার। বাবা ফোন দিয়েছেন দেখে রাস্তার এক সাইডে দাড়িয়ে কথা বলতে বলতে ঘাড় ফিরিয়ে দেখলাম ওই আন্টিটিও মোবাইল হাতে নিয়ে দাড়িয়ে মনে হচ্ছে কাকে জানি ফোন করছেন। আমি বাবার সাথে কথা শেষ করে ই আবার তাড়াতারি করে কলেজ এর ভিতর ঢুকে গেলাম। পরদিন ঠিক টাইমে কলেজের জন্য রওনা দিয়ে কলেজের রাস্তায় ঢুকতে ই আমার সামনে খাম্বার মত দাড়িয়ে রইলেন ওই আন্টি। উনার চাহনি অনেকটা সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে এমনকি আমার কাধে ঝুলানো ব্যাগটাও নেড়েচেরে দেখে কোনো কিছু না বলে আবার আপন মনে চলে গেলেন।
আমি অনেকটা অবাক হয়ে দশ মিনিট সেই জায়গায় দাড়িয়ে ছিলাম। কোনো কিছুর সাথে কোনো কিছু ই মিলাতে পারছি না। এমন আচরণ করার কি কারন। বান্ধবীদের সাথে শেয়ার করে ওই আন্টিকে কেউ চিনে কিনা তা এমন প্রশ্ন করাতে ই ওরা মজা শুরু করে দিল। ওদের বলা টা ই ভুল হয়েছে আমার। যত সময় থাকবে এখন এটা নিয়ে আমাকে পঁচাইতে থাকবে। ওদের কিছু বলার নেই সব একেকটা পাগল। পরদিন বাসায় মেহমান থাকার কারণে কাজের চাপ একটু বেশি ই ছিল ভাবীর উপর ঠিক টাইমে রান্না করে ভাইয়াকে টিফিন দিতে পারেনি। ভাইয়াকে বলে দিয়েছে দুপুরের আগে অফিসে টিফিন পৌছে যাবে। আজ বাসায় কাজ থাকায় কলেজ যাইনি। ভাবী রান্না শেষ করে টিফিন প্যাক করে আমার সামনে এনে দিয়ে বলল ভাইয়ার অফিসে দিয়ে আসতে। বাসায় মেহমান এদের রেখে ভাবী বাসার বাইরে গেলে কেমন জানি দেখায়। ভালো ই হল ভাইয়ার অফিস আমার কলেজের দিকে ই।
এসাইনমেন্টের একটু কাজ বাকি। আজ না যাওয়ায় এক দিন পিছিয়ে যেত। যেহেতু বের হচ্ছি ওটা আসার সময় সেরে আসব। নাঈমাকে কল দিয়ে বললাম ১:৩০ পর্যন্ত আমার জন্য অপেক্ষা করতে। আমি আসছি। ফোন রেখে রেডি হয়ে ভাইয়ার অফিসে টিফিন দিয়ে বের হতে ই দেখি সেই আন্টি..! আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছেন। যেন মনে হচ্ছে আমাকে এক্ষুণি গিলে খাবেন। কিন্তু কি মনে করে আবার হাসলেন যেন। আমি একটু তাকিয়ে আবার নিজের রাস্তায় চলে আসলাম। কলেজের কাজ শেষে বাসায় ফিরলাম। খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবার সাথে গল্পগুজবে মেতে উঠলাম। অনেক দিন পর সবাই একসাথে মিলিত হয়েছে। পরদিন ই কলেজ যাওয়ার সময় আমার এক কাজিন বলে উঠল আমার কলেজ দেখবে তার নাকি অনেক ইচ্ছা আমার কলেজ দেখার। তারা ঢাকায় থাকে।
কাজিনের আবদার তো আর ফেলতে পারিনা! নিয়ে গেলাম সাথে। কলেজ ঘুরিয়ে আসার সময় একটা ফাস্ট ফুডের দোকানে ঢুকলাম। ওমা,,, ওখানেও ঢুকেও দেখি সেই আন্টি আমাকে দেখে মনে হল ৪২০ ভোল্টের শক খেলেন! কি ব্যাপার ঠিক বুজলাম না। আমার কাজিন সাথে থাকায় বিষয়টা এড়িয়ে চললাম। কিন্তু আমি এড়িয়ে চললেও ওই আন্টি এড়িয়ে যাওয়ার পাত্রী নন। ঠিক পরদিন আর আমার পিছু না নিয়ে একদম আমার কলেজ গেটের সামনে দাড়িয়ে ছিলেন। আমি ঢুকার সময় ই হাত আগলে কোনো বাহানা ছাড়া ই বললেন, এই মেয়ে তুমি আমার ছেলের পিছু নিয়েছ কেন.??? প্রশ্নটা শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম মনে হল.! আমি কোনো ছেলের পিছু নিয়েছি। কোন ছেলে! কোথাকার ছেলে! কার ছেলে..! আমার কথা শুনে ই বললেন দেখো তোমরা এখনকার যুগের মেয়ে যা করবা যা বলবা সরাসরি বলবা এভাবে পিছু নেওয়া তাও কোনো ছেলের নিজে একটা মেয়ে হয়ে। ব্যাপারটা কেমন খারাপ দেখায় না..!?
— মানে কি? কি বলছেন এসব উনি। যা মন চায় তাই বলে যাচ্ছেন। আমি ছেলের পিছু নিয়েছি! আর কোনো কাজ নেই আমার? আমিও বললাম আন্টি দেখেন আপনি ভুল করছেন আমি কারো পিছু নিব কেন? আমার এসব করার দরকার কি?
— হ্যা, সেটা তো আমিও বলছি। এসব করার দরকার কি। আমি দেখেছি রোজ তুমি আমার ছেলেকে ফলো করো। আমার ছেলে বের হওয়ার ঠিক পাঁচ মিনিট পর তুমিও বের হও আর পিছন পিছন আসো। আর আমি শুনেছি আমার ছেলে কাকে জানি বলছে এরকম উজ্জ্বল শ্যামলা, লম্বা চুল, হাইটও বেশ ভালো, ভীষন মায়াবী চেহারার একটা মেয়ে পর পিছু নেয় প্রতিদিন। আমি শুনেছি। আর তোমাকে ওই দিন আমার ছেলের অফিসের ওখানে দেখে তো পুরো শিওর হয়ে গেছি তুমি ই।
— জ্বি, হ্যালো আন্টি ওই অফিসে আমার ভাইয়াও জব করে।
— আচ্ছা তাহলে ওই ফাস্ট ফুডের দোকানে কি করছিলে? আমাদের মানে আমাকে আর আমার ছেলেকে দেখে ই তো সেখানে গিয়ে ছিল। বল..
— মানে কি এসবের। আপনি কি বলছেন? আর আপনার ছেলেকে আমি তো চিনি ই না।
— দেখো মেয়ে এত ন্যাকা সেঁজো না।
আমি সব খবর রাখি আমার ছেলের। সেই ক্লাস ওয়ানের হোমওয়ার্ক থেকে শুরু করে এখন অফিসের কলিগ কার সাথে উঠাবসা করে সব খবর রাখি। বুচ্ছো..! ও ফোনে তার বন্ধুর সাথে তোমার কথা ই বলে। এমনকি তোমার ব্যাগ কি রঙে সেটাও বলেছে।
পছন্দ করো এত প্যাচাইতেছ কেন সেটা ই তো বুঝতেছি না। শোন সব শেষে বলছি ভদ্র ঘরের মেয়ে মনে হচ্ছে দেখে। আর এভাবে পিছু নিয়ো না। কেমন। বলে ই একটু হাসি মুখ দেখিয়ে হন হন করে চলে গেলেন। আমি হা করে বরফের মত জমে রইলাম মনে হল। ভীষন রাগ হলো। কি সব যা তা বলছেন। আমি উনার ছেলের পিছু নিয়েছি! কত ছেলে আমার পিছে পরে আছে আর আমি কোথাকার কোন ছেলের পিছু নিয়েছি। অনেক রাগ হচ্ছে ওই আন্টিট কথাগুলো মনে করে। আজব আমি তো উনার ছেলেকে চিনি ই না। রাগ করে এই এক সপ্তাহ কলেজ গেলাম না। যতবার কলেজ যাওয়ার কথা মনে হয় তখন ই ওইসব মনে পড়ে রাগ হয় প্রচুর। বিকেলে এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে ছিলাম। সন্ধ্যায় ভাবীর ডাকে উঠলাম। কোনো কিছু না বলে ই একটা শাড়ি হাতে দিয়ে বললেন তৈরি হয়ে নিতে।
— মানে কি? হুট করে।
— জ্বি জনাবা। হুট করে ই। যদিও ওরা বলেছে তোকে নাকি ওদের দেখা আছে তারপরও কথা পাকা করে ফেলতে চায় বলে তোকে আবার দেখতে পায়।
— আমাকে কিছু না বলে কথা পাকা! বলি হচ্ছে টা কি ভাবী..! রাগে আমার গা জ্বলতে লাগল। হুট করে এসব।
— এত রাগ দেখিও না। যা করার নিজে ই তো করেছো। এখন সব ন্যাকামি..! আসো শাড়িটা পড়িয়ে দেই। সবাই কিসব বলছে এগুলো। কয়দিন আগে ওই আন্টি যা নয় তা বলে গেল আজ আমার ঘরের মানুষও এসব বলছে।
কিন্তু এখন কিছু বলার উপায় নেই। বাবা ঘরে। রেডি হয়ে পাশের রুমে যাওয়ার সময় ই শুনলাম,
_- ভাই সাহেব, মেয়ে আমার ছেলেকে পছন্দ করেছে। আমাদের আপত্তি নেই। আপনার মেয়েও আমাদের পছন্দ হয়েছে। সবকিছু ই তো বললাম আমাদের। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওই আন্টি! আমার বাসায়। আর সবচেয়ে অবাক হলাম পাশে বসা ছেলেকে দেখে। মানে এই ছেলে উনার। ব্যাটা বজ্জাত! প্রায় এক বছর আগে প্রপোজ করছিল। কেমন হ্যাবলাকান্তের মত আমি রিজেক্ট করে দিয়েছি। আজ সে আমার সামনে বসা.! আর আমার দিকে তাকিয়ে ভিলেন মার্কা হাসি দিচ্ছে। অন্যদিকে সবাই ওই আন্টির কথা শুনে আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। রাগে দুঃখে কি বলব বুঝতেছি না। ছেলে ভালো পরিবার ভালো না করার উপায় নেই। আলাদা কথা বলতে দেওয়া হল।
— কি কেমন লাগল..? আমাকে রিজেক্ট করা..! বুঝো এখন বিয়ে তো করবে ই আর সবাই জানবে তুমি আমার পিছু নিয়েছিলে। কি কেমন লাগে..! তবে সত্যি সত্যি তোমাকে পছন্দ করে ফেলেছি। আর কাউকে ভাবতে পারিনা। তাই আমার একমাত্র মাকে উল্টাপাল্টা শুনিয়েছি ইচ্ছা করে। তোমাকে তো আসতে ই হবে মেয়ে আমার কাছে ই! বলে হুহুহু করে হেসে উঠল। আর আমি কিনা এই বজ্জাত টাকে হ্যাবলা ভেবে ছিলাম। অবশেষে বিয়েটা হয়ে ই গেল, আমার আর শেষ রক্ষা হল না। সে তো মজা নিতে ই থাকে। তবে হ্যাবলা হ্যাবলা ই রোজ রোজ আমার ব্রাশ দিয়ে সে ব্রাশ করে। আমি আলাদা দেখতে ব্রাশ আনলে সেটা ফেলে দিয়ে একই রকমের ব্রাশ আনবে আর বলবে আর এমন করবে না। কিন্তু ঠিক ই আমারটা দিয়ে করবে। ওরটা ইচ্ছে করে ভেঙ্গে ফেলে। প্রতিদিন রান্না করি।
শাশুড়ি মায়ের সামনে বলবে রান্না পারিনা হেনতেন কতকিছু। আমি শুধু রাগে ফুলতে থাকি। ইচ্ছে করে সকালে ওর কাপে চিনি না দিয়ে দুকাপ লবন দিয়েছি। বাকি দুটো ঠিক আছে। কিন্তু আমার চা মুখে দিতে ই মনে হল পুরো মুখ থেকে গলা তেতো হয়ে গেছে। সে এদিকে তাকিয়ে আছে। আমি কান্না কান্না সুরে মাকে বললাম, মা দেখেন আপনার ছেলে শুধু এরকম ওরকম করে। আম্মাজান বিরাট একটা হাসি দিয়ে বললেন,,, তুমি না পিছু নিয়ে পছন্দ করে বিয়ে করেছো এই হাবলাকে..! নাও এখন সামলাও!! নিজের শাশুড়ি আম্মা এমন কথা বলেন…!
গল্পের বিষয়:
গল্প