কাল আমাদের মনের বসন্তের চার বছর হবে। হ্যাঁ তাইতো চার বছর আগে অমিত সিন্দুর দিয়ে আমার সিঁথি রাঙিয়ে দিয়ে বলেছিল এই দোলে আমার মনের রঙে তোমাকে রাঙিয়ে দিলাম। এই সব ভাবছিল ছন্দা ওর বাড়ির বারান্দার কোনায় রাখা পুরোনো আরাম কেদারায় বসে আর তাকিয়ে ছিলো বাড়ির পাশের লাল পলাশ গাছটার দিকে।
মনের রং সিঁথির রং আর পলাশের রং আজ ছন্দার কাছে সব একাকার হয়ে গিয়েছে। এই চারটে বছর অমিত ওর সাথে ওর বাপের বাড়ীতেই থাকে। ওর বাবা মা ওদের বিয়েটাকে মেনে নিয়েছিলো। তাই ছন্দা আর অমিতের কোন অসুবিধা হয়েনি। অমিত বাড়ীর একমাত্র সন্তান হবার জন্য আর বাড়ীর অমতে বিয়ে করার জন্য ওর বাবা মা আজও ওদের মেনে নিতে পারেনি। এই কষ্টটা ছন্দাকে খুবই মানষিক যন্ত্রনা দেয়। ছন্দা ভাবতে থাকে কবে ওকে অমিত ওর বাড়ীতে নিয়ে যাবে। ভাবতে ভাবতে কখন যেন সন্ধ্যা ঘনিয়ে গিয়েছে তার খেয়ালও নেই ছন্দার। হঠাৎ সম্বিত ফিরে পায় যখন অমিত ওর মাথার চুলে বিলি কেটে দেয়।
অমিত ছন্দাকে ও ভাবে এক মনে বসে থাকতে দেখে একটু অবাক হয়, তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে গেয়ে ওঠে “হোলির রঙ লাগে আজি গোপনে” ছন্দা ঘুরে অমিত কে দেখে অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকে। মুখ ভর্তি আবির প্রসন্ন মুখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। আর ঠোঁটের কোনে হাল্কা হাসির রেশ।
অমিত ছন্দাকে বলে কাল তোমাকে আমাদের বাড়ী নিয়ে যাব, দেখা যাক না কি হয়। তুমি তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিও। আমরা আবির আর মিস্টি নিয়ে গিয়ে মা বাবাকে প্রনাম করে আসব। আমি তোমার মনের অবস্থা বুঝতে পারছি বলেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
ছন্দা যেন নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছেনা। এক ঝটকায় উঠে দাঁড়িয়ে অমিতকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে সত্যিই নিয়ে যাবে ও বাড়ীতে। অমিত মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।
পরদিন সকালে অমিত ছন্দাকে নিয়ে ওর বাড়ীতে যায়। কলিং বেল টা বাজাতে কোনো সারা পায় না ওরা। আবার বাজাবার পর অমিতের মা দরজা খোলে। মা কে দেখে অমিত জড়িয়ে ধরে। চার বছর পর ছেলেকে দেখে অমিতের মা চোখের জল আর ধরে রাখতে পারেনা। মা ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে আদর করে। তাই দেখে ছন্দার চোখের জল ও বাধ মানে না। নিজেকে সামলে নিয়ে আবির অমিতের মায়ের পায়ে দিয়ে প্রণাম করে। অমিতের মা আচমকা এহেন আচরনে একটু ঘাবরে যায়, তখন অমিত ছন্দার সাথে ওর মায়ের পরিচয় করিয়ে দেয়। মা ছন্দার হাত থেকে আবির নিয়ে অমিত আর ছন্দাকে রাঙিয়ে দেয় তারপর পুত্র আর পুত্রবধুকে ঘরে নেয়।
অমিতের বাবা তখন ছিলেন বাথরুমে তাই এতক্ষণ ঘটে যাওয়া ঘটনাটা জানতে পারেন নি। তাই যখন বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে পুত্র আর পুত্রবধুকে দেখে রেগে গেলেও অমিতের মা সামলে নিয়ে অমিতের বাবাকে রাজি করান আর তারপর নতুন বউকে বাড়ীতে মেনে নেন। ছন্দা পেল অনেক দিনের না পাওয়া শ্বশুর আর শ্বাশুড়ী কে। আর অমিতের মা-বাবা পেল এক মেয়েকে। সবাই খুব খুশি হল।
এরমধ্যে অমিতের মা ছন্দাকে ভেতরের ঘরে নিয়ে গিয়ে ছন্দার বাবা-মা আর ছোটো ভাইকে নিমন্ত্রন করে। কিছুক্ষন পর ছন্দার বাবা-মা ভাই চলে আসে অমিতের বাড়ীতে আর সেখানেই বসন্ত উৎসবকে সাথে নিয়ে ঘটে রঙের আর পরিবারের মিলন উৎসব।