অন্য জীবন

অন্য জীবন

দিয়া আজ বাড়ী ছেড়ে চলে এসেছে। তার এই জীবন আর ভালো লাগছিল না। স্বামী, শাশুড়ির এত গঞ্জনা আর সহ্য করতে পারছিল না। সে বাপের বাড়িতে ও ফিরে যেতে চায় না। দিয়া মা, বাবা কে এসব কথা জানিয়ে ছিল, কিন্তু তাদের একটাই কথা,একটু মানিয়ে নে, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। তার যে কি অপরাধ সে নিজের ও জানে না।

দিয়ার বিয়ে হয়েছে আজ ১০ বছর। ওদের কোনো সন্তান হয় নি। অনেক ডাক্তার, বৈদ্য  দেখিয়েছে কিন্তু কোনো কিছু তেই কিছু ফল হয় না। এই নিয়েই সংসারে নেমে আসে চরম অশান্তি। শাশুড়ি মা নিয়মিত দিয়া কেই দোষারোপ করেন। এত দিন সব সহ্য করে এসেছে, কিন্তু আজ অশান্তি এক চরম পর্যায়ের পৌঁছে গিয়েছে, শাশুড়ি মা গায়ে হাত তুলেছে। স্বামী ও বাড়ীতে ছিল না, যদি ও সে তার  মাকেই সমর্থন করে। এমন ঘটনা দিয়া একেবারেই মেনে নিতে পারছিল না। তাই সে বাড়ী ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বাড়ী থেকে বেরিয়ে আসার আগে শাশুড়ি কে বলে এসেছে,  আজ আমার সন্তান হয়নি বলে আমাকে এত অপমান করছেন তো, একদিন আমি  শত সন্তানের জননী হবো। এ কথা শুনে শাশুড়ি বললেন, ওসব কাহিনীততে হয় বাস্তবে নয়।

দিয়া বাড়ী থেকে বেরিয়ে তো এসেছে কিন্তু কি করবে, কোথায় যাবে, কিছুই ভাবতে পারছে না। দিয়ার মাথায় এখন একটাই কথা ভেসে আসছে,কি করে এই অপমানের জবাব দেওয়া যায়। তখন মনে পরল সায়ন এর কথা। সায়ন, দিয়ার school friend। অনেক দিন কোনো যোগাযোগ ছিল না। এই আগের বার পূজোর সময় দিয়া বাপের বাড়িতে গিয়ে ছিল, তখনই সায়নের সাথে দেখা হয়, সায়নরা দেশের বাড়িতে এসেছিল।সায়ন বলেছিল ও ডাক্তারের পাশাপাশি NGO তে দেখা শোনা করে। দিয়া ভাবল, যদি ওর নাম্বার টা নিয়ে রাখতাম। সে তাড়াতাড়ি ফেসবুক অন করে সায়ন এর ফেসবুক আইডি সার্চ করে এবং ফোন নাম্বার টা পেয়ে যায়। দিয়া তখনই  সায়ন কে ফোন লাগায়, ফোন টা রিং হয়ে কেটে যায়। দিয়া আবার ফোন লাগায়, এবার ফোন টা রিসিভ করে,

সায়ন : হ্যালো,কে বলছেন?

দিয়া : আমি দিয়া বলছি। তোর মনে আছে, তোর সাথে পূজোর সময় স্কুল মাঠে দেখা হয়েছিল।

সায়ন : আরে দিয়া তো, হ্যাঁ বল, কি হয়েছে?  হঠাৎ আমাকে মনে পড়ল।

দিয়া : তুই বলেছিলি না, তুই একটা আশ্রমের দেখা শোনা করিস।

সায়ন: হ্যাঁ, তো কি হয়েছে?

দিয়া : তুই কি ওখানে আমাকে একটা কাজ জুটিয়ে দিতে পারিস। আমার পড়াশোনা তো জানিস, উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়ার আগেই বাবা মা বিয়ে দিয়ে দিলো, উচ্চ মাধ্যমিক টাও দিতে দিল না।

সায়ন : কেন? তোর শ্বশুর বাড়ির অবস্থা শুনেছি খারাপ না। তাহলে তুই কাজ করবি কেন?

দিয়া: সব কথা পরে বলবো, তুই কি কাজ টা দিতে পারবি বল?

সায়ন : হ্যাঁ। কিন্তু তোর Husband! সে কিছু বলবে না।

দিয়া : বললাম তো সব বলব। কাজ টা আমার এখনই দরকার।

সায়ন: ঠিক আছে, তাহলে তুই চলে আয়। তোকে ঠিকানা টা Send করছি।

দিয়া : OK, ঠিক আছে।

সায়ন: OK, Bye।

দিয়া আশ্রম এবং আশ্রমের বাচ্চাদের আপন করে নিয়েছে। দিয়া এখন আশ্রমের নয়নের মনি। সায়ন প্রতি সপ্তাহে আসে বাচ্চাদের দেখে, ঔষধ দেয়। দিয়ার স্বামী অনেক বার এসেছে দিয়াকে বাড়ী ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, কিন্তু সে চায় না ফিরে যেতে। দিয়ার বাবা মা ও অনেক বুঝিয়েছে, তাদের ও সে ফিরিয়ে দিয়েছে।

এই আশ্রমে দিয়া ১০ বছর হল এসেছে। এখন প্রায় ১০০ বেশী ছেলে-মেয়ের সে মা। আশ্রমের নাম এখন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এই আশ্রম সুন্দর ভাবে পরিচালনা করার জন্য, একটি সংস্থা ওদের আশ্রমকে অর্থ প্রদান করতে চায় এবং দিয়া কে তার কাজের জন্য প্রশংসা পত্র দিতে চায়। এই অনুষ্ঠানে দিয়া একজনকে ব্যক্তিগত ভাবে আমন্ত্রন করেছে।

অনুষ্ঠান মঞ্চে সবাই কে প্রণাম জানিয়ে, দিয়া বলতে শুরু করে – প্রথমে ধন্যবাদ জানাই সায়ন বসু কে, যিনি আমাকে এখানে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছেন। ধন্যবাদ আরও একজন কে, যার জন্য আমি এখানে এসেছি। তিনি হলেন অনুপমা রায়, আর আমি ওনার হাত থেকে এই পত্র টা নিতে চাই। আমি অনুরোধ করবো উনি যেন এটা করেন। অনুষ্ঠান শেষে দিয়া শাশুড়ি মা কে প্রণাম করে বললেন, আপনার জন্য এখানে পৌঁছাতে পেরেছি। আজ আমি শত সন্তানের জননী হয়েছি।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত