বদলে যাওয়া আমি

বদলে যাওয়া আমি
পার্কে দাঁড়িয়ে ১ঘণ্টা যাবত ঝগড়া করছি আমার সো কলড্ বফ আবিরের সাথে। ঝগড়ার মূল কেন্দ্র আমি কেনো ওকে না বলে ওর ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলেছি। ঝগড়ার এক পর্যায়ে সে বলেই বসলো,
-” তোমার সাথে আমার রিলেশন রাখা আর সম্ভব হচ্ছে না! ভেবেছিলাম তুমি আলাদা, কিন্তু তুমিও আর ১০টা মেয়ের মতোই!”
-“হ, যাহ যাহ! তোরে কি আমি বলছিলাম নাকি যে আমি আলাদা! আর শোন তোর মতো মিনি বিলাই এর সাথে আমারো রিলেশন রাখার ইচ্ছা নাই! যাহ যাহ, দূর হ!”
-” পরে পস্তাবা তুমি দেইখো!”
-” পস্তামু তাও তোর মতো বাটপারের লিগা! হাহাহা!”
-” কি বাটপারি করছি আমি হ্যা?”
-” ওরে ছিটার! ওরে বাটপার! আমার ঘরে ৩ডা সতীন কেডা উঠাইছে! দেইক্ষা নিস তুই এইবার ও পরীক্ষায় ডাব্বা মারবি!”
তাহেরী আংকেলের ভাষণ এবং একটি চটকানা উপহার দিয়ে ব্রেক-আপ প্রাইজ নিয়ে বাসায় চলে আসলাম সেইদিনের মতো। এসে ব্রেক-আপের শোকে ২ঘণ্টা কান্না করার পর সিদ্ধান্ত নিলাম আমি বদলে যাবো! তারপর দেখিয়ে দিব ওই বাটপার কে যে আমি আসলেই আলাদা! পরদিন থেকেই তোড়জোড় শুরু হয়ে গেলো আমার বদলানোর। নাস্তার টেবিলে খাবার সামনে নিয়ে বসে আছি।
-“কিরে খাচ্ছিস না কেনো?” (আম্মু)
-“আম্মু আমি বদলে গেছি! আমাকে ছুরি দেও, আমি চামচ আর হাত দিয়ে খাই না।” আম্মু থতমত খেয়ে আমার মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে। এমন ভাবে তাঁকিয়ে আছে মনে হচ্ছে আমি কোনো আসামী! শেষমেশ আমাকেই যেয়ে ছুরি আনতে হলো, উফফফ! আমি ছুরি দিয়ে ভাত মাখিয়ে খাচ্ছি একদম কচ্ছপের গতিতে এদিকে সবাই আমার দিকে হা করে তাঁকিয়ে আছে।
-“তোমার কি শরীর খারাপ আম্মু? কি হয়েছে তোমার আমাকে বলো? তুমি ছুরি দিয়ে খাচ্ছ কেনো?” (বাবা)
-” উফফ বাবা! তোমরা কি বুঝতে পারছো না যে আমি বদলে গেছি! হাত আর চামচ দিয়ে অন্যরা খায়। আমি আনকমন!” বাবা ড্যাবড্যাব চোখ করে বাংলা ৫এর মতোন মুখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে চলে গেলাম। পরেরদিন কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে রুম থেকে বের হওয়ার পর দেখলাম আম্মু তাঁকিয়ে আছে! যেনো পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্যের দিকে তাঁকিয়ে আছে।
-” আম্মু, আমাকে আলাদা লাগছে না বলো? একদম আনকমন তাইনা?”
-” মা তোর কি হইছে মা? তুই এরকম করতেছিস কেনো? আ-আর তুই কি এইভাবে বাইরে যাবি নাকি?”
-” কেনো আম্মু? কি সমস্যা এতে? আমাকে তো সুন্দরই লাগছে! আচ্ছা বাই, আমার লেট হয়ে যাচ্ছে!”
-” ওগো আমার মেয়েটার কি হলো গোওওও! ও কি পাগল হয়ে গেছে নাকি?” এই বলে আম্মু কান্না করছে। আমি গাঁয়ে না লাগিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ালাম রিকশার জন্য। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি গর্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছি!
“ইয়েস, আমি পেরেছি! আমি পেরেছি নিজেকে বদলাতে! আমি আর বাকি ১০টা মেয়ের মতো নই। ওই আবিরকে আমি দেখিয়ে দিব এইবার, হুহহহহ!” রাস্তার মানুষজন কৌতুহলের চোখে তাকিয়ে আছে! তারা অত্যাশ্চর্যের চরম সীমায় পৌছে গেছে! এ কোন প্রাণী এলো তাদের এলাকায়! জামা-কাঁপড় সব উল্টা করে পড়েছে আবার চশমাটাও উল্টো! আমি বেশ আনন্দের সাথে কলেজে গেলাম! এইখানেও সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি মনে মনে “বসেন, বসেন” গানে নাঁচা শুরু করে দিলাম। “ইয়েস আমি পেরেছিইই!”
এরকমভাবে ৩,৪দিন যাওয়ার পর আমি এখন আবিরের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। হা করে তাঁকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি অনেকটা ভাব দেখিয়ে বললাম “দেখ, আমি বদলে গেছি! আমি আর অন্যদের মতো না, হুহহ!”
অতঃপর এখন আমি পাবনা মেন্টাল হসপিটালের গাড়িতে বসে আছি। তাতে আমার কি! আমি তো নিজেকে বদলাতে সফল, হুহহ!
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত