– ভাবি আপনার মেয়ে তো মাশাআল্লাহ সুন্দর হয়েছে আগের থেকে। তবে স্বাস্থ্য টা একটু কমলে পারফেক্ট।
– কি যে বলেন না ভাবি! ও তো আরো শুকাই গেছে। কিচ্ছু খায়না। কথা টা শুনে সালমা বেগম হা হয়ে তাকিয়ে আছে। আর মনে মনে বলছে না খাইলে এমন হাতি হয় কেম্নে?
– ভাবি অনেকে আছে গ্রোথ ভালো হয়, না খাইলেও মাশাআল্লাহ মোটা তাজা থাকে।
– হ্যা ভাবি। আমার মেয়ে তো তাই ই! কিছু খেতে চায় না। এই দেখেন না আজকে মুরগি রান্না করছি, ছোট মাছ রান্না করছি, দুপুর গড়িয়ে গেলো মাত্র দু’বার ভাত খাইলো। কথা টা শুনে সালমা বেগম মনে হয় এখন আকাশ থেকে পড়ার অবস্থা। কৌতুহলী বসত বলে ফেললেন
– কি বলেন ভাবি তাই নাকি? মুরগি ও খায়না?
– হ্যা খায় তবে তেমন না। এই ধরেন, মুরগির রানের পিচ, বুকের অংশ, মাথা টা, পাখা টা এই টুকুই খায়। আর মুরগির গ্রিল, ফ্রাই চিকেন এই টুকুই। আর গরুর মাংশের ভুনা, এই ধরেন মাত্র এক কেজি একাই খাইতে পারে। সালমা বেগম চোখ বড় বড় তাকিয়ে দেখছে আর মনে মনে বলতেছে আস্ত মুরগি টাই তো মেয়ে খায়।
– তোহ ভাবি আর কি খায়না?
– কোনো মাছ ই খেতে চায় না। খাবে শুধু চিংড়ি, ইলিশ, রুই, পাবদা, পাঙ্গাশ, তেলাপিয়া, টেংরা, বোয়াল, শিং মাছ।
এবার তো সালমা বেগম সোফা থেকে পড়ে যাওয়ার অবস্থা। সে মনে মনে ভাবছে এমন পেটুক ও আছে। তাও মা বলছে হাতি টা কিছুই নাকি খায় না। জাহানারা বেগম আবার বলা শুরু করলো
-তেমন ফল ও খেতে চায় না।
এই ধরেন আপেল, কলা, কমলা, আম, লিচু, কাঁঠাল, পেয়ারা,পেঁপে, আঙ্গুর, ডালিম এই ফল কটাই খায়।
আর বাহিরে থাকলে তো বার্গার, পিৎজা, স্যান্ডউইচ, ফুচকা, চটপটি এগুলোই একটু খায়। এতো কম খাইলে বাড়বে কিভাবে বলেন ভাবি। তার মধ্যে আরেক সমস্যায় আছি ভাবি। মেয়ে তো দুধই খেতে চায়না। প্রতিদিন মাত্র দুই গ্লাস দুধ খায়। এরই মধ্যে উনার মেয়ে একটা বড় বাটি ভর্তি হালিম খাইতে খাইতে এসে বলতে লাগলো
– মা আমার জন্য এতো কম রাখছো কেন? তুমি তো জানো এ টুকু খেয়ে আমার কিছুই হয়না। জাহানারা বেগম মুখে হাসি হাসি মুখ করে সালমা বেগমকে বললেন,
– দেখছেন ভাবি মেয়ে খাইতেই চায় না তাই কম রাখছি। কথা টা শুনে সালমা বেগম এবার উঠে দাঁড়ালো।
– ভাবি চলে যাচ্ছেন যে।
– ভাবি আমার এবার যেতে হবে।
– কেন ভাবি এখুনি যাবেন যে।
– না ভাবি আপনার মেয়েকে দেখে আমার মেয়েটার কথা মনে পড়লো। কতদিন হলো মেয়ে টা না খেয়ে আছে। এখানে না আসলে তো বুঝতেই পারতাম না।
– কি বলেন ভাবি? আমার মেয়ের মতো নাকি?
– না ভাবি আপনার মেয়ে যদি এতকিছু খেয়েও কম খায় তাহলে তো আমার মেয়ে দীর্ঘদিন যাবত উপোশ আছে।
এবার জাহানারা বেগম মুখ ভেংচি কেটে ভিতরে ঢুকলো। আর মনে মনে বলল মেয়েটাকে আমার নজর দিয়ে গেলো। এবার নিশ্চয় শুকাই যাবে। এই ভেবে দৌড়ে গেলো মেয়েকে আরো দু বাটি হালিম দিতে।
গল্পের বিষয়:
গল্প