জামিল বসে আছে তো বসেই আছে। উঠবার নাম নাই। সে এসেছিল তার পরিচিত এক বড় ভাই নাসিরের অফিসে। নাসির একটা রেপুটেড কোম্পানিতে ভাল বেতনে চাকরি করে। কয়েকদিন আগে নাসিরের সাথে দেখা। নাসির বলল, ‘আর কতকাল বেকার থাকবি? একদিন অফিসে আয় দেখি কিছু করা যায় কীনা।’
কয়েকদিন থেকেই নাসিরের ফোন অফ। জামিল আজ মতিঝিলে এসেছিল জরুরি এক কাজে। ভাবলো এদিকেই যখন এসেছি নাসির ভাইয়ের অফিসে একবার ঢু মেরে যাই। কিন্তু পিয়নের কথা শুনে থ। গত পরশু নাকি নাসির ভাইয়ের নিজেরই চাকরি চলে গেছে। জামিলের একটা দীর্ঘশ্বাস পরল। অবশ্য এতে সে মন খারাপ করে না। কারন জীবনে তার কোন কিছুই সহজে ব্যাটে-বলে হয় না। জামিলের ধারনা মানুষের পুরো জীবনটা একটা প্যাকেজে বাধা। প্যাকেজ যেভাবে ঠিক করা আছে মানুষের জীবন ঠিক সেভাবেই কাটবে। সো নো টেনশন নাসির ভাই নাই। তারপরও জামিল তার অফিসে সুপার গ্লু লাগিয়ে বসে আছে। কারন? কারন তার সামনে রিসেপশনে বসা অসম্ভব সুন্দরী মেয়েটি। ফ্যানের বাতাশে ওর সিল্কি চুল ওড়ছে।
কপালের ছোট কালো টিপে ওকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে। যদিও টিপটি কপালের ঠিক মাঝ বরাবর হয়নি। বা’দিকে একটু বেশি সরে গেছে।সবচে সুন্দর ওর কাজল কালো মায়াবী চোখ। চোখ দুটি জলে ভেজা । হটাত দেখলে মনে হয় কান্না করছে। আসলে ঠিক তা না। ওর চোখের বৈশিষ্ট্যটাই এরকম। অনেকটা লিকুইড আইজ। জামিলের একবার মনে হল শুধু ওর চোখের দিকে তাকিয়ে এক জীবন পার করে দেয়া যায়। জামিলের একটা সমস্যা আছে–খুব সাধারণ মেয়েকেও মাঝে মাঝে খুব অসাধারণ লাগে। ভিতরে একটা সফট কর্নার কাজ করে। মেয়েদের কথা সে সহজে ফেলতে পারেনা। এটা কি তার জেনেটিক্যাল প্রবলেম কীনা সে বুঝতে পারেনা। একবার হয়েছে পাবলিক বাসে করে সে ফার্মগেট যাচ্ছে। বাসে প্রচন্ড ঠাসাঠাসি । হটাত একটা মেয়ে বলল, ভাইয়া আমার মাথাটা প্রচণ্ড ঘুরাচ্ছে।এক মিনিট বসতে দেয়া যায় কী? ‘অবশ্যই অবশ্যই’ বলে জামিল নিজের সিট ছেড়ে দিল।
সেই মেয়ে এক মিনিট মাথা ঝুকে বসে থাকল। কিছুক্ষণ পর খেয়াল করল সেই মেয়ে মোবাইলের ক্যামেরায় নিজের মেকআপ নিয়ে ব্যস্থ। আরেকবার হয়েছে কি জামিল রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। হটাত খেয়াল করল খুব সুন্দরী একটা মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে সিএনজি খোজ করছে। কিন্তু পাচ্ছেনা। হটাত জামিলের কি হল সেও মেয়েটিকে পেছন পেছন অনুসরণ করতে লাগল। মেয়েটি কান্না থামিয়ে বলল, “আপনি আমার পেছন পেছন আসছেন কেন?” জামিল বলল, “আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আপনি বড় ধরনের কোন বিপদে পড়েছেন।” “হ্যা সত্যি বিপদে পড়েছি। আমার বাবার হার্টের সমস্যা। হটাত প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়েছে। ডাক্তার বলেছে এখনি হৃদরোগ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। অথচ কোন কিছুই পাচ্ছি না।”
“আপনি দাড়ান। আমি দেখছি–“বলেই জামিল একটা সিএনজি চালকের হাতে পায়ে ধরে পাঁচ মিনিটে একটা সিএনজি ম্যানেজ করে ফেলল। মেয়েটি জামিলকে ধন্যবাদ জানিয়ে দ্রুত বিদায় নিল। জামিলের মনে হল অন্য সময় হলে হয়তো এটা নাটকীয় দিকে মোড় নিতে পারত। কিন্তু তার ক্ষেত্রে কিছুই হল না। জামিলের একবার মনে হল এটাই বোধ হয় পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট্ট লাভ স্টোরি! জামিল পত্রিকা পড়ার ভান করে ট্যারা চোখে রিসেপশনের মেয়েটিকে দেখছে। এই পর্যন্ত দু’বার ওর সাথে চোখাচোখি হয়েছে। জামিল ঠিক করেছে আরেকবার চোখাচোখি হলেই সে উঠে পরবে। কিন্তু মেয়েটা আর তাকাচ্ছে না। মাথা নিচু করে কি কাজে ব্যস্থ। জামিলের বিরক্তি লাগছে।
হটাত মধ্যবয়সী পিয়নটি এসে বলল, “আপনি এহনো বইসা আছেন? আপনাকেত বলছি নাসির সাহেব নেই। তারপরেও বইসা আছেন রেগে গেলে জামিলের তোতলামির অভ্যাস। “ব..ব..বসে আছি তো আপনার স..স সমস্যাটা কী? আমি..আমি কি আপ..নার কোলে ব..বসে আছি?” রিসিপশনের মেয়েটি হটাত উঠে দাড়াল। তার চেহারায় প্রচন্ড বিরক্তি। জামিলকে বলল, “অদ্ভুত কথা বলছেন তো ! এটা অফিস। অযথা সিনক্রিয়েট করছেন কেন ? ” জামিল একটু ধাতস্থ হয়ে বলল, “অবশ্যই অবশ্যই..এটা অফিস। সিনক্রিয়েট করা মোটেই ঠিক না। আপনি যদি আরো আগেই এই কথাটা বলতেন তাহলে কিন্তু এই সিনক্রিয়েটটা হতো না।” “মানে কী?” জামিল মনে মনে ভাবল মেয়েটিকে একবার চমকে দিলে কেমন হয়? মানুষকে চমকে দেয়ার মধ্যে এক ধরনের আনন্দ আছে।
“সমস্যা কি আপনার বলবেন তো?” আবার মেয়েটি শুধায়। “সমস্যা আমার না আপনার। আপনার উচিত কালারফুল একটা গগলস পরা, মানে সানগ্লাস পড়া। জানিনা এ পর্যন্ত আপনি কতজনকে খুন করেছেন। কারন যে আপনার চোখে তাকাবে সে নিশ্চিত খুন হয়ে যাবে। কারন আপনি একজন সাইলেন্ট কিলার। নীরব ঘাতক। মেয়েটা তাৎক্ষণিক কিছু বুঝতে না পেরে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। জামিল মৃদু হেসে খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে অফিস থেকে বেরিয়ে আসলো..
গল্পের বিষয়:
গল্প