বাবা মার একমাত্র মেয়েকে বিয়ে করেছি। ভেবেছিলাম একমাত্র মেয়েকে বিয়ে করলে জামাই আদর পাবো আর সাথে সমস্ত সম্পত্তি। কিন্তু বিয়ের পর বুঝতে পেরেছি আমি কত বড় ভুল করেছি। ১২ মাসের মধ্যে ১১ মাসেই শ্বশুর শ্বাশুড়ি আমাদের বাসায় থাকেন। তাদের না কি মেয়েকে ছাড়া একদম ভালো লাগে না। যে এক মাস শ্বশুর শাশুড়ি আমাদের সাথে থাকেন না সেই একমাস আমি শান্তিতে ঘুমাতে পারি না। রাত ১ টার সময় শ্বাশুড়ি ফোন দিয়ে বলবে, “জামাই তোমার শ্বশুরের পেঠে খুব গ্যাস হচ্ছে তুমি একপাতা গ্যাসের ট্যাবলেট নিয়ে তাড়াতাড়ি আমাদের বাসায় আসো তো।” যখন অফিসে থাকবো তখন শ্বশুর ফোন দিয়ে বলবে, “বাবা তোমার শ্বাশুড়ি প্রেসারটা বেড়ে গেছে। তুমি তাড়াতাড়ি একটা ডাক্তার নিয়ে আসো তো।” আর আমার ও তখন বাধ্য ছেলের মত কাজ গুলো করতে হয়। জামাই বলে কথা কিছু তো বলাও যায় না…
আমাদের ছোট ২ রুম বিশিষ্ট একটা ফ্ল্যাট। তার উপর একটা রুম খুব ছোট। শ্বশুর শ্বাশুড়ি আসলে উনারা আমাদের রুমে থাকেন আর আমাদের থাকতে হয় ছোট রুমটাতে আজ অনেকদিন হলো শ্বশুর শ্বাশুড়ি এসেছেন কিন্তু যাবার নাম নেই। শ্বশুর শ্বাশুড়ি আসলে এই এক সমস্যা শ্রাবণী( আমার বউ) আমার সাথে ঘুমায় না। ও বাবা মার সাথে ঘুমাই।এমন কি আমাকে তেমন একটা সময় ও দেয় না সারাক্ষণ বাবা মাকে নিয়েই পড়ে থাকে। বাবা মা কি খাবে না খাবে এইসব নিয়ে ওর চিন্তার শেষ নেই।যেখানে আমার অফিসের কলিগরা সপ্তাহে একদিন বাজার করে সেখানে আমার প্রতিদিন অফিস শেষে বাজার করতে হয়। আমার পরবর্তী প্রজন্মের জন্য টাকা কি জমা করবো, সব টাকা শ্বশুর শাশুড়ির পিছনেই খরচ হয়ে যায় অফিস থেকে বাসায় এসে দেখি শ্বশুর টিভি দেখছে। আমি শ্বশুরের পাশে বসে শ্বশুরকে বললাম,
— বাবা, আমার এক অফিসের কগিলের শ্বশুর শ্বাশুড়ি মেয়ে জামাইয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলো ২ দিনের জন্য। ২ দিন পর উনারা বাসায় গিয়ে দেখে চোরে সব কিছু চুরি করে নিয়ে গেছে। এমনকি ফ্রিজটা পর্যন্ত চুরি করে নিয়ে গেছে। আমার আপনাদের বাসার জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে। আপনাদের এত দামী দামী জিনিস যদি চুরি হয়ে যায়…
শ্বশুর আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
~ জামাই বাবা, তুমি চিন্তা করো না। ওরা নিশ্চয়ই চায়না লক ব্যবহার করেছিলো তাই চোরে সহজে লক ভেঙে চুরি করেছে। আমি জাপানি লক ব্যবহার করি তাছাড়া অনেকগুলো লক লাগিয়েছি। চোরের ক্ষমতা নেই এই লক ভেঙে চুরি করার শ্বশুরের কথা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। উনাকে যে Indirectly বাসা থেকে যেতে বলছি উনি কি সেটা বুঝেন না পরদিন দেখি শ্বশুর বেলকনিতে বসে খবরের কাগছ পড়ছে। আমি শ্বশুরের পাশে বসে বললাম,
–বাবা, আমার এক বন্ধু আমার পরে বিয়ে করে বাচ্চার বাবা হয়ে গেছে। আপনাদের কি ইচ্ছে করে না নাতি নাতনির মুখ দেখতে? শ্বশুর মুখে আনন্দের হাসি ফুটিয়ে বললেন,
~ হ্যাঁ জামাই বাবা, খুব ইচ্ছে করে নাতি নাতনির মুখ দেখতে। কবে যে নানা হবো.. আমি তখন মুখটা গোমড়া করে বিড়বিড় করে বললাম,
— সারাবছর যদি মেয়ের জামাই বাড়ি পরে থাকেন আর মেয়েকে সাথে নিয়ে ঘুমান তাহলে নাতি নাতনি হবে কিভাবে? নাতি নাতনি কি আকাশ থেকে পরবে? শ্বশুর কিছুটা অবাক হয়ে আমায় বললো,
~ জামাই বাবা, বিড়বিড় করে কি বলছো? আমি শ্বশুরের দিকে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললাম,
— বাবা, নাতি নাতনির মুখ দেখতে চাইলে আপনাদের তো একটু সেক্রিফাইজ করতে হবে। একটু তো সুযোগ দিতে হবে..
শ্বশুর আমার কথা শুনে হা করে তাকিয়ে রইলো আর আমি চুপচাপ উনার সামনে থেকে চলে আসলাম কয়েকদিন হলো জানতে পেরেছি শ্রাবণী প্রেগন্যান্ট। একদিন দুপুরে আমি অফিসে কাজ করছি এমন সময় শ্রাবণী ফোন দিয়ে বললো, এখনি খাসির গোশত কিনে নিয়ে যেতে আমার শ্বশুরের না কি খেতে ইচ্ছে হচ্ছে। মনে একরাশ বিরক্ত নিয়ে বাজার থেকে খাসির গোশত কিনে আনলাম আমি ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছি আর আমার শ্বশুর ডাইনিং টেবিলে বসে খাসির গোশত দিয়ে ভাত খাচ্ছে। এমন সময় খেয়াল করলাম সময় টিভিতে একজন লোককে দেখাচ্ছে। সে নাকি মাঝে মাঝেই কুকুরের গোশতকে খাসির গোশত বলে বিক্রি করে।খবরে লোকটাকে দেখে কেমন জানি চেনা চেনা মনে হচ্ছে। হায় আল্লাহ! এই তো সেই লোক যার থেকে আমি আজ সকালে খাসির গোশত কিনে এনেছি।তারমানে আমি শ্বশুরের দিকে তাকাতেই শ্বশুর মিষ্টি হেসে বললো,
— জামাই বাবা, আজ খাসীর গোশতটা খুব ভালো হয়েছে। তবে গোশততে অনেক চর্বি শ্বশুরের কথা শুনে আমি ওয়াক ওয়াক করতে করতে বাথরুমে চলে গেলাম। শ্রাবণী আমার চোখে মুখে পানি দিতে দিতে বললো,
– মা হবো আমি আর বমি করছো তুমি? আমি হাঁপাতে হাঁপাতে বললাম,
— তাতে কি? আমিও তো বাবা হবো তাই আমিও বমি করছি। আর শোন এই খাসির তরকারি তুমি খেয়েছো?
– না, বাবা বাদে কেউ খায় নি
— এই তরকারি এখনি ফেলে দাও। আমায় একজন পীরবাবা এইমাত্র ফোন করে বললো, গর্ভবতী মেয়েদের বাসায় খাসির গোশত রান্না করলে অমঙ্গল হয় শ্রাবণী অবাক হয়ে বললো,
– তোমায় আবার কোন পীরবাবা ফোন দিয়েছিলো? আমি রাগে বললাম,
— আমায় ল্যাংটাবাবা ফোন করেছিলো। এখন যাও যা বলছি তাই করো
এর মাঝে অনেকগুলো দিন চলে গেলো। হাসপাতালের বেডে শ্রাবণী শুয়ে ঘুমিয়ে আছে আর আমার কোলে সদ্য জন্ম নেওয়া আমার মেয়ে। নিজের মেয়ের দিকে তাকিয়ে আমার মনের ভিতর কেমন জানি একটা ভালো লাগার অনুভূতি হচ্ছে। এমন সময় আমার কাঁধে হাত রেখে আমার শ্বশুর আমার পাশে বসলেন।তারপর আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন,
~জামাই বাবা, তুমি আমার মত অভাগা হও না যে। তুমি আরেকটা সন্তান নিও। তা না হলে আমার মত তোমাকেও নিজের মেয়ের জামাইয়ের অপমান সহ্য করতে হবে। শুধু মা বাবাই বুঝে তার একমাত্র মেয়েটাকে বিয়ে দিলে তাদের কতটা কষ্ট হয়। তারা কতটা অসহায় হয়ে পরে মেয়েটাকে ছাড়া।তুমি মাঝে মাঝেই আমাকে অনেক কথা ইশারা ইঙ্গিতে বুঝাতে। আমি সব কিছুই বুঝতাম কিন্তু না বুঝার অভিনয় করতাম। কারণ আমি আমার মেয়েটাকে বাদে থাকতে পারবো না। তুমি এখন আমার কষ্টটা বুঝবে না, বুঝবে তখন যখন তুমি তোমার নিজের মেয়েটাকে বিয়ে দিবে। জামাই বাবা, তোমরা বাদে আমাদের আর কেউ নেই। তাই মাঝে মাঝে আমার মেয়েটা আর নাতনিটাকে নিয়ে আমাদের বাসায় বেড়াতে এসো। আমরা ২ জন বয়স্ক মানুষ সবসময় তোমাদের পথ চেয়ে থাকবো শ্বশুর কথাগুলো বলে চুপচাপ চলে গেলো আর আমার চোখের এক ফোঁটা জল আমার মেয়ের গালে পরলো….
গল্পের বিষয়:
গল্প