মা আমার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখছেন। মেয়ে শিক্ষিত হওয়া চলবে না কারণ শিক্ষিত মেয়েদের পেটে অনেক প্যাচ থাকে যার ফলে সংসারে অশান্তি হয়। তাই মেয়ে এসএসসি ফেল হলেও চলবে কিন্তু ইন্টার পাশ হওয়া চলবে না। বড়লোক পরিবারের মেয়ে হলে চলবে না কারণ বড় লোকের মেয়েরা সংসারের কোন কাজকর্ম করে না। তাছাড়া বিয়ের পর এইসব বড়লোকের মেয়েরা শ্বাশুড়ির কাঁধে পা তুলে খায় তাই মেয়ে হতে হবে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। মেয়ে খুব বেশি সুন্দরী হওয়া চলবে না কারণ সুন্দরী মেয়েরা স্বামীকে রূপের জাদুতে বশ করে ফেলে। যার ফলে ছেলে শুধু বউয়ের কথায় উঠে-বসে আর মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়। এইসব থিওরি মা আমাকে ২ঘন্টা ধরে বুঝালেন। মা’র এইসব কথা শুনে প্রচন্ডরকম মাথা ব্যথা শুরু হয়ে গেলো। আমি নিজের মাথার চুল নিজে টানতে টানতে বললাম,
–মা, তুমি যে মেয়েকে বিয়ে করতে বলবে আমি চোখ বন্ধ করে সেই মেয়েকেই বিয়ে করবো। এখন মা আমি ঘুমাতে গেলাম সকালে আমার অফিস আছে মা মুচিকে হেসে আমায় বললো,
-আচ্ছা যা তাহলে ঘুমে যখন চোখটা লেগে আসছে তখনি আমার ফোনের স্কিনের আলোটা জ্বলে উঠলো। ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে দেখি রফিক ভাইয়ের নাম ভাসছে। আমি ঘুম ঘুম চোখে ফোনটা রিসিভ করে কথা বলতে লাগলাম পরদিন সকালে আমি একমনে খবরের কাগজ পড়ছি আর নাস্তা করছি। হঠাৎ আমি একটা খবর দেখে চিৎকার করে বললাম, সর্বনাশ! আমার চিৎকার শুনে মা রান্নাঘর থেকে দৌড়ে এসে বললো,
– কি হয়েছে? আমি মাকে বললাম,
— পুত্রবধূর ভুল-বাল ঔষধ খাওয়ানোর ফলে শ্বাশুড়ির মৃত্যু মা পাশের চেয়ারে বসতে বসতে অবাক হয়ে বললো,
– মানে! আমি তখন নিউজটা পড়তে শুরু করলাম,
— নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কান্দিউড়া গ্রামের সালমা বেগম তার একমাত্র ছেলেকে পাশের গ্রামের হাসেম বেপারির মেজো কন্যার সাথে বিয়ে করান। গতকাল দুপুরে সালমা বেগম হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলে ছেলের বউ উনাকে নিয়ে হাসপাতালে যান। হাসপাতালে চিকিৎসারত ডাক্তার কিছু ঔষধ দিয়ে সালমার পুত্রবধূকে বললেন, সঠিক ভাবে নিয়মিত ঔষধ গুলো খাওয়াতে। পুত্রবধূ কম শিক্ষিত থাকার কারণে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের লেখা বুঝতে না পেরে শ্বাশুড়িকে ভূল-বাল ঔষধ খাওয়ান। যার ফলে শ্বাশুড়ির মৃত্যু হয় মা অবাক হয়ে বললো,
– ছেলে কোথায় ছিলো? আমি তখন বললাম,
— হয়তো বাহিরে ছিলো। পুরুষ মানুষতো আর সারাক্ষণ বাসায় থাকে না আমার কথা শুনে মা কপালে হাত দিয়ে কি যেন ভাবতে লাগলেন। আমি তখন বললাম,
— মা আমি আসি। আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে। আর পত্রিকাটা নিয়ে যায়। আমার অফিসের কলিগ রফিক ভাইকে খবরটা দেখাতে হবে সন্ধ্যায় অফিস থেকে বাসায় ফিরে ফ্রেস হয়ে বিশ্রাম নিচ্ছি। এমন সময় মা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
– মেয়ে শিক্ষিত হলে সমস্যা নেই। সব শিক্ষিত মেয়েতো আর খারাপ না। তাছাড়া মা শিক্ষিত নাহলে ছেলে মেয়ে মানুষ করতে পারবে না। আমি তোর জন্য শিক্ষিত নিন্ম-মধ্যবিত্ত শ্যামলা একটা মেয়ে খুঁজে বের করবো। আমি মুচকি হেসে বললাম,
— ঠিক আছে মা। আমি তোমার পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করবো তখন তখন বিড়বিড় করে বললো,
– মেয়ে ইংলিশে অনার্স করলে ভালো হয়। তাহলে ডাক্তারের লেখা সহজে বুঝতে পারবে আমি তখন বললাম,
— বিড়বিড় করে কি বলছো মা? আমি বললো,
– না কিছু না পরদিন সকালে নাস্তা করার সময় পত্রিকা দেখে আবার চিৎকার করে বললাম,
— সর্বনাশ! হাত থেকে চায়ের কাপটা ফেলে দিয়ে মা বললো,
– কি হয়ছে? আমি বললাম,
— টাকার অভাবে মার চোখের সামনে একমাত্র ছেলের মৃত্যু মা অবাক হয়ে বললো
– মানে! আমি পত্রিকা পড়া শুরু করলাম,
— ময়মনসিংহ সদরের বাসিন্দা রোকসানা আক্তার স্বামী মারা যাবার পর ব্যাংকের সমস্ত টাকা খরচ করে ছেলেকে মানুষ করেন। ছেলে চাকরি পাবার কয়েকমাস পর একটা নিম্ন পরিবারে ছেলেকে বিয়ে করান। বিয়ের কিছুদিন পর রোকসানা আক্তার জানতে পারেন ছেলের ব্রেইন টিউমার হয়েছে। আর চিকিৎসার জন্য ১৪লাখ টাকা লাগবে। রোকসানা আক্তারের কাছে শুধু ২ লাখ টাকা ছিলো। আর ছেলের শ্বশুরবাড়ির লোক গরীব ছিলো তাই মাত্র ৫০ হাজার টাকা দিতে পেরেছিলো। সময় মত রোকসানা আক্তার টাকা জোগাড় করতে না পারায় চোখের সামনে ছেলের মৃত্যু হলো মা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আর আমি ঠান্ডা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললাম,
— মা আমি আসি। অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে। আর খবরের কাগজটা নিয়ে গেলাম। রফিক ভাইকে এই সাংঘাতিক খবরটা দেখাতে হবে রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছি। এমন সময় মা পাশে বসে বললো,
-তোকে আমি উচ্চ বংশীয় পরিবারে বিয়ে করাবো। আমার একমাত্র ছেলেকে কোনো ফকিন্নি পরিবারে বিয়ে করাতে পারবো না আমি অবাক হয়ে মাকে বললাম,
— তুমি না বললে বড়লোকের মেয়েরা কোনো কাজ করে না তাছাড়া কোনো রান্না-বান্নাও পারে না মা কিছুটা রেগে বললো,
– কাজ না করলে কাজের মেয়ে কাজ করবে আর রান্না না পারলে আমি শিখিয়ে দিবো তারপর মা বিড়বিড় করে বললো,
– কোন বিপদ আপন হলে হাতের তুড়িতে যেন ১০-১২ লাখ টাকা দিতে পারে এমন পরিবারে তোকে বিয়ে করাবো আমি মার কাঁধে হাত দিয়ে বললাম,
— বিড়বিড় করে কি বলছো মা? আমি কিছু না বলে আনমনে চুপচাপ চলে গেলো পরদিন সকালে আবার খবরে কাগজ দেখে চিৎকার করে উঠলাম। মা চমকে গিয়ে পাশে থাকা গ্লাসের সবটুকু পানি খেয়ে আমায় বললো,
– আজকের খবরে আবার কি লিখেছে? আমি নিউজটা একদমে পড়তে লাগলাম,
— ঢাকার উত্তরাতে বসবাস করা শাহানাজ পারভিন তার একমাত্র ছেলেকে বিয়ে করান অসুন্দরী এক মেয়েকে। বিয়ের পর থেকেই ছেলে তার বউকে সহ্য করতে পারতো না। আস্তে আস্তে সেই ছেলে পাশের ফ্ল্যাটের সুন্দরী ভাবী নাবিলার সাথে পরকীয়া শুরু করে দেয়। পরে যখন বিষয়টা নাবিলার স্বামী রাশেদ জানতে পারে তখন রাশেদ নাবিলা আর শাহানাজ পারভিনের ছেলে রায়হানকে জবাই করে মেরে ফেলে এমন সময় মা আমার হাত ধরে বললো,
– থাক বাবা, আর পড়তে হবে না। তোকে আমি পাশের ফ্ল্যাটের সজিবের বউয়ের চেয়েও সুন্দরী মেয়ের সাথে বিয়ে করাবো আমি অবাক হয়ে বললাম,
— কিন্তু মা! মা রাগী চোখে বললো,
– কোন কিন্তু না। আমি এমন একটা বউ চাই যার রূপের আলোতে আমার ঘর আলো হয়ে থাকবে আমি পত্রিকাটা ব্যাগে ঢুকিয়ে মাকে বললাম,
— মা আমি যায়। আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে। আর এই গুরুত্বপূর্ণ সংবাদটা রফিক ভাইকে দেখাতে হবে রিকশায় বসে থেকে রফিক ভাইকে ডেকে বললাম,
— ভার্সিটিতে যাবেন বুঝি? আসেন আপনাকে ভার্সিটি নামিয়ে দেই। তা আপনার বাবার কালো মুড়ির টিনটা হাসপাতালে ভর্তি নাকি? রিকশায় বসে শ্রাবণী রাগে লাল হয়ে বললো,
– আরেক বার রফিক ভাই বলে ডাকলে ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দিবো। আর শুনো আর যদি কখনো আমাদের গাড়িটাকে মুড়ির টিন বলেছো তাহলে তোমার খবর আছে। আমার বাবা চাইলে এই মুহুর্তে তিনটা গাড়ি কিনতে পারে কিন্তু এই গাড়িটা দাদার স্মৃতি বলে বাবা গাড়িটা পাল্টায় না আমি মুচকি হেসে বললাম,
— কচু কিনবে নতুন গাড়ি। কিপটা বলে কথা শ্রাবণী আরো রেগে গিয়ে বললো,
– একদম আমার বাবাকে কিপটা বলবে না। তুমি কি? তুমি একনাম্বারের মিথ্যাবাদী। প্রতিদিন সকালে নিজের মাকে উল্টো পাল্টা খবর শুনাও। আর ৪ বছর ধরে প্রেম করো অথচ এখনো মায়ের ভয়ে নিজের প্রমিকার নাম রফিক ভাই লিখে সেইভ করে রাখো শ্রাবণীর কথা শুনে আমি মন খারাপ করে বললাম,
— একেই বলে, যার জন্য চুরি করি সেই বলে চোর শ্রাবণী আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
– কালকের খবরের কাগজে কি লিখা থাকবে? আমি ওর হাতটা শক্ত করে ধরে বললাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংলিশে অনার্স করছে তৃতীয় বর্ষের ছাত্রীর জন্য সুযোগ্য পাত্র চাই
গল্পের বিষয়:
গল্প