আমি সুন্দর করে সেজেগুজে চোখে স্নানগ্লাস পরে শারুখান হয়ে এক বিয়ে বাড়িতে যাচ্ছি।তবে বিয়ের দাওয়াত খেতে নয়।বউ চুরি করতে। বউ চুরি করার অভিজ্ঞতা আমার কুড়ি বছরের।ইতিপূর্বে আমার বাপ-দাদাসহ চৌদ্দপুরুষ বউ চুরি করেছেন।আমিও আমার বংশের ঐতিহ্য বহাল রাখতে বিয়ের আসর থেকে বউ চুরি করে আসছি। আমি যে শুধু বউ চুরি করি তা না।বিয়ে বাড়িতে গিয়ে পেট ভরে খেয়ে-দেয়ে বউ চুরি করি। কিছুক্ষণ পূর্বে এক বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা হলো প্রায় ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তার গার্লফ্রেন্ডকে বিয়ের আসর থেকে চুরি করে এনে দিতে হবে। সে অনুযায়ী বিয়ে বাড়িতে যাচ্ছি। বিয়ে বাড়ির কাছাকাছি তিন রাস্তার মোড়ে এসে দুপাশে দুইটা বিশাল বিয়ের গেট দেখে মনে খটকা বাঁধলো।যে এই গ্রামে দুজনে বিয়ে হচ্ছে নাতো? শুনেছি মেয়ের বাবা আস্ত এক বড়লোক।টাকা পয়সার কোনো প্রকার অভাব নেই।সেজন্য হয়তো দুইটা রাস্তাতেই গেট সাজিয়েছে।এটা ভেবে ডান পাশের রাস্তা দিয়ে আবার হাঁটা শুরু করলাম।
একটু পর বিয়ে বাড়িতে এসেই আমি বিড়ালদের মতো চোখ করে এদিক সেদিক দেখার চেষ্টা করছিলাম যে বর এসেছে কি-না।কারণ বর থাকাকালীন বউ চুরি করতে অনেক ধকলে পড়তে হয়।ধরা খাওয়ার আশংকা থাকে।
হঠাৎ পিছনে কারও হাতের স্পর্শ পেয়ে আমি ভড়কে গেলাম। “বাবাজী এদিক সেদিক চোরের মতো কি দেখতেছ?” গম্ভীর কণ্ঠে এক বৃদ্ধলোক বললেন। আমি কাচুমাচু হয়ে বললাম, “ইয়ে মানে আংকেল, বর এসেছে কি-না তা দেখছিলাম আর কি।” “বাবাজী বর এখনো আসে নাই।” কথাটা শুনেই তো আমি বেজায় খুশি হলাম।ইচ্ছা করেছিলো সবার সামনে লুঙ্গি ডান্স করি কিন্তু প্যান্ট পরনে থাকায় তা আর হয়ে উঠলো না। খুশিতে নাচতে নাচতে সামনের দিকে পদার্পণ করলাম। সামনে গিয়ে দেখি মেয়ে পক্ষের জন্য খাবারের আয়োজন করেছে।সবাই খাবারের জন্য হুড়মুড় করে প্যান্ডেলের মধ্যে প্রবেশ করতেছে।
আমিও যে দুপুর থেকে কিছুই খায়নি।ক্ষুধায় পেট গরুর মতো হাম্বা হাম্বা করে ডাকতেছে।তাই খাবারের জন্য যেই প্যান্ডেলের মধ্যে ঢুকতে যাবো ঠিক তখনই ঘটলো এক বিপত্তিকর ঘটনা। আমাকে পেছন থেকে কে যেন এক ধাক্কা দিল আর আমি সেই ধাক্কা খেয়ে নিজের ভারসাম্য রক্ষা করতে না পেরে ঢলে পড়লাম এক রূপবতী কিশোরী গায়ে। রূপবতী কিশোরী মেয়েটি রেগেমেগে আগুন হয়ে আমার গালে ঠাস করে একটা চড় লাগিয়ে দিয়ে চেচিয়ে বলল, “মেয়ে দেখলেই স্পর্শ করতে মন চায় তাই না।” মেয়েটির চড় খেয়ে আমার ৩২ টা দাঁতের জায়গায় ৩৪টা দাঁত নড়ে উঠলো।এখন আমি মাংস চিববো কি করে? এটা ভেবে এক পুকুর ডিপ্রেশনে হাবুডুবু খেতে লাগলাম। শুনেছি মেয়েদের হাত বিড়ালের মতো তুলতুলে নরম হয়।এযে দেখছি পুরোই লোহার হাত।এখনও আন্দাজ করতে পারছি না এটা আদৌও মেয়ে ছিলা নাকি স্টিলম্যান ছিল।
আমি মনযোগ সহকারে মুরগির ঠ্যাং চিবনোর চেষ্টা করছি।কিন্ত সেই কিশোরী মেয়েটির চর খেয়ে ভালো ভাবে মাংস চিবতে পারছি না।মাংস চিবোতে চিবোতে দাঁতের ব্যাথায় উহ!আহ! করে শব্দ করছি।আর চারপাশের মানুষজন খাওয়া ছেড়ে আমার দিকে ভুত দেখার মত তাকিয়ে রয়েছে। একটু পর মাংস নিয়ে পুনরায় এক ভদ্রলোকের আগমন ঘটলো।আমার প্লেটে মাংস দেওয়ার সময় বলল, “বাবাজী আপনে কোন পক্ষের লোক? ” কথাটা শুনামাত্র খাবার আমার নাকেমুখে উঠলো। কি বলবো কিছুই ভেবে পাচ্ছিলাম না।যদি বলি আমি মেয়ে পক্ষের,তখন তো খুব সমস্যায় পড়ে যাব।এদিকে আবার বরপক্ষ আসেনি যে বরপক্ষ বলিয়ে চালিয়ে দিব। এসব ভাবতে ভাবতে পানি খেয়ে শান্ত হয়ে বললাম, “আমি ড্রাইভার।মেয়ে পক্ষের লোকজন গাড়িতে নিয়ে এসেছি।” কথা বলেই যেন আমি হাফ ছেড়ে বাচলাম।
বাহবা এরপর পেট ভরে খেয়ে-দেয়ে বয়লার মুরগী হয়ে একপা দুপা করে মেয়ের রুমের দিকে গেলাম।সেখানে গিয়ে দেখি রুম ভর্তি মানুষজন।এমতাবস্থায় খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম।এতো মানুষজনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বউ চুরি করি কিভাবে? মাথা চুলকাইতে চুলকাইতে পাটলুর মতো একটা বুদ্ধি পেলাম। একটু জোরে চিল্লাইয়া বললাম, “বর এসেছে বর এসেছে।” আমার কথা শুনে রুমের মধ্যে থাকা সবাই বর দেখতে গদগদ বেরিয়ে পরলো। আমিও এই সুযোগে সোজা মেয়ের রুমে প্রবেশ করলাম। মেয়ের রুমে প্রবেশ করে দেখি মেয়ে ছোট্ট বাচ্চাদের মতো হু হু করে কাঁদছে।আমাকে দেখা মাত্রই আমার নিকট ছুটে এসে আমার হাতে ধরে অনুনয় করে বলল, “দয়া করে আমাকে এখান থেকে পালিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। আপনি যা চাইবেন আমি তাই দিব প্লিজ প্লিজ। এতো দেখছি মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। আমি আদুরে কন্ঠে বললাম,” তাড়াতাড়ি করে বোরখা আর নাকাব পরে আসুন।”
মুহূর্তেই মেয়েটি বোরখা আর নাকাব পরে আসলো। এবার মেয়েটিকে নিয়ে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে তার বয়ফ্রেন্ডের কাছে চলে আসলাম। ছেলেটা তার গার্লফ্রেন্ডকে আমার সাথে দেখতে পেয়ে ইতিমধ্যে নাগিন ড্যান্স দেওয়া শুরু করলো। আমি ছেলেটির কাছে গিয়ে বললাম, “এখন আমার অবশিষ্ট ৫০০০ হাজার টাকা দিন।” সে খুশিতে মানিব্যাগ থেকে ৫ হাজার টাকা বের করে দিল।আমিও তা ছ্যাপ দিয়ে খুঁটে খুঁটে গুনে নিলাম। এবার মেয়েটি মুখ থেকে নাকাব খুলতেই তাকে দেখে ছেলেটা ধপাস করে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।ছেলেটার হাসিমাখা মুখটা কাউয়ার মতো কালা হয়ে গেল। আমি কঞ্চিৎ অবাক হয়ে বিস্ময়ের সরে বললাম, “আপনার কি হলো ভাই?” ছেলেটা এবার আমতা আমতা করে বলল,”এ কাকে নিয়ে এসেছেন এতো আমার গার্লফ্রেন্ড না।আর আপনি আমার টাকা ফেরত দিন।” কতটা শুনে আমার মাথায় বিমান ভেঙে পড়লো।আমার বউ চুরি করার কুড়ি বছরের অভিজ্ঞতায় এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি।
আমি এবার উচ্চ স্বরে ছেলেটাকে বললাম, “এই নালু বউচোর একবার কারও থেকে টাকা নিলে দ্বিতীয়বার সেই টাকা আর ফেরত দেয় না।” কথাটা বলে যেই ওখান থেকে কেটে পড়বো তখনই মেয়েটি আমার শার্ট ধরে ভ্রুকুচকে হুংকার দিয়ে বলল, “এই বেটা কই যাচ্ছিস? তাড়াতাড়ি প্যান্টের পকেট থেকে সব টাকা বের কর।তা-না হলে লোকজন জড় করে বলবো, তুই আমাকে বিয়ের আসর থাকে চুরি করে এনেছিস।তারপর তোর অবস্থা কেমন হবে সেটা তো ভালো করে বুঝতেই পারছিস।”
মেয়েটির কথা শুনে আমার কলিজা শুকিয়ে শুটকি মাছে পরিনত হলো।পুরো শরীর থুরথুর করে কাঁপতে শুরু করলো। এতো দেখছি চোরের উপর বাটপারি। জীবন বাঁচাতে পকেট থেকে সব টাকা বের করে মেয়েটিকে দিলাম।পরক্ষণে মেয়েটি টাকা নিয়ে ওখান থেকে কেটে পড়লো। আমি এবার ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলাম,”ভাইরে ভাই, আমার বউ চুরি করার কুড়ি বছরের অভিজ্ঞতায় এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি।”
গল্পের বিষয়:
গল্প