অফিসে যখন ঢুকতে যাবো তখন খেয়াল করলাম রাস্তার পাশে অনেক মহিলারা ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি বিষয়টা জানার জন্য একটু দাঁড়ালাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম টিশার্ট পরা শ্যাম বর্ণের একটা মেয়ে মাইক্রোফোন হাতে দিয়ে চিৎকার করে বলছে, আমরা মেয়েরা সম অধিকার চাই। এদেশের মেয়েরা কোনো দিক থেকেই পুরুষের চেয়ে পিছিয়ে নয়। পুরুষরা যে যে কাজগুলো করতে পারে আজ নারীরাও সেই কাজ গুলো করতে পারে। তাহলে কেন নারীরা সম অধিকার পাবে না? একজন পুরুষ যদি চায়ের দোকান থেকে সিগারেট কিনতে পারে একটা নারীও আজ সেটা কিনার অধিকার রাখে। একজন পুরুষ যদি ফার্মেসি থেকে কনডম কিনতে পারে তাহলে একজন নারীও ফার্মেসি থেকে কনডম কিনার অধিকার রাখে আমি মেয়েটার কথাগুলো শুনে মুচকি হেসে ভাবতে লাগলাম, আমরা দিনকে দিন যত শিক্ষিত হচ্ছি আমাদের চিন্তাভাবনা ততটাই নিম্নমানের হচ্ছে হঠাৎ খেয়াল করলাম অফিসের গেইটের দারোয়ান মতি মাথা চুলকাতে চুলকাতে আমার কাছে এসে বললো,
– স্যার, একটা জিনিস তো বুঝলাম না আমি বললাম,
— কি? মতি তখন অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– স্যার, আজকাল মেয়েরা সিগারেট খায় সেটা আমি নিজ চোখে দেখেছি।
সেই অনুয়ায়ী মেয়েরা দোকানে গিয়ে সিগারেট কিনতেই পারে। কিন্তু ওরা ফার্মেসি থেকে কনডম কিনে করবেটা কি? এটা কি ওদের কোন কাজে লাগবে? আমি বহু কষ্টে হাসিটা চেপে রেখে চোখে মুখে রাগী রাগী একাটা ভাব এনে দারোয়ান মতি মিয়াকে ধমক দিয়ে বললাম,
— কি কাজে লাগবে সেটা তোমার জানতে হবে না। চুপচাপ নিজের কাজে মন দাও। আর এতই যদি জানার ইচ্ছে থাকে তাহলে মেয়েটার বক্তব্য শেষ হলে মেয়েটার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করো অফিস শেষ করে বাসায় ফেরার জন্য বাসে উঠলাম। বাস ভর্তি মানুষ শুধু মহিলা আসনের একটা সিট খালি আছে। তাই বাধ্য হয়ে মহিলা আসনের সিটে বসলাম। শরীরটা খুব ক্লান্ত লাগছিলো তাই কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম নিজেও জানি না। হঠাৎ চিৎকার চেঁচামেচির শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেলো। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি আজ সকালে বক্তব্য দেওয়া সেই মেয়েটা আমার দিকে রাগী রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। আমি বললাম,
— কি হয়েছে? মেয়েটা তখন বললো,
– আপনি মহিলাদের সিটে বসে আছেন কেন? জানেন না এটা মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত সিট? আমি তখন মুচকি হেসে মেয়েটাকে বললাম,
— দেখেন আমি সচেতন পুরুষ। আমি মেয়েদের সম অধিকারের পক্ষে। একজন পুরুষ যদি বাসের ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে ঠেলাঠেলি সহ্য করে মানুষের ঘামের গন্ধ শুকে গন্তব্যে যেতে পারে তাহলে মেয়েরা কেন পারবে না? মেয়েরা তো আজ পুরুষের সমপক্ষ মেয়েটি আমার কথাশুনে কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলো না শুধু চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো আর আমি একমনে ফোট টিপতে লাগলাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম বোরকা পরা একটা মেয়ে বাসে উঠলো। আমি তাড়াতাড়ি সিট থেকে উঠে বললাম,
–বোন আপনি এইখানে বসেন দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি তখন রেগে গিয়ে আমায় বললো,
– আমি বলা শর্তেও আপনি সিট ছাড়লেন না। আর এই মেয়েকে দেখে নিজ থেকে সিট ছেড়ে দিলেন? আমি তখন আবারও হেসে বললাম,
— উনি প্রকৃত নারী আর একজন প্রকৃত পুরুষের কাছে একজন প্রকৃত নারীর সম্মান অনেক। আগে পশ্চিমা সংস্কৃতি ভুলে একজন প্রকৃত নারী হয়ে উঠুন বিশ্বাস করুন সবাই না হলেও অনেকেই আপনাকে সম্মান করবে।কারণ দেশে এখনো অনেক ভালো মানুষ আছে। ইসলাম নারীকে অনেক সম্মান দিয়েছে। এরচেয়ে বেশি চাইতে যাবেন না সন্ধ্যার দিকে আমার বন্ধু রাকিব ফোন দিলো। আমি ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলতেই রাকিব বললো,
– এই মুহুর্তে একটু আমার বাসায় আসতে পরবি? আমি ভয় পেয়ে বললাম,
— আংকেল আন্টি ঠিক আছে তো? রাকিব কোন উত্তর না দিয়ে শুধু বললো,
– আগে বাসায় আয় পরে সব বলছি তোকে রাকিবের বাসায় এসে দেখি রাকিব আর রাকিবের বোন শিমু সোফায় বসে আছে। আমি সোফায় বসতে বসতে রাকিবকে বললাম,
— হঠাৎ ডাকলি যে রাকিব একবার শিমুর দিকে তাকালো তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– নিয়ম অনুয়ায়ী শিমুকে সম্পত্তি ভাগ করে দেওয়ার পরেও শিমু আরো সম্পত্তি দাবি করছে। ও চাইছে সব সম্পত্তি সমান ভাবে ভাগ করতে। যদি ভাগ না করে দেই তাহলে নাকি আমার নামে মামলা করবে এমন সময় শিমু চিৎকার করে বললো,
~সমান সম্পত্তি না দিলে অবশ্যই মামলা করবো।তুমি যেমন বাবার ছেলে আমিও তেমনি বাবার মেয়ে। আমার বিয়ে হয়ে গেছে দেখি কি আমার অধিকার হারিয়ে গেছে না কি? আমি রাকিবকে তখন বললাম,
— শিমু তো ঠিকিই বলেছে। সম্পত্তি সমান ভাবে ভাগ করা উচিৎ শিমু আমার কথা শুনে মুচকি হেসে বললো,
~যাক ভাই আপনিতো বুঝতে পেরেছেন৷ এখন আপনি আমার বন্ধুকে বুঝান আমিও তখন মুচকি হেসে শিমুকে বললাম,
— হ্যাঁ অবশ্যই, এখনি বুঝিয়ে বলছি আমি তখন রাকিবের দিকে তাকিয়ে বললাম,
— আংকেলের তো ব্রেইন টিউমার হয়েছিলো। অপারেশন আর সব ডাক্তার দেখিয়ে তোর কত টাকার মত খরচ হয়েছে রে? রাকিব বললো,
– ২৪ লাখ টাকার মত আমি আবারও রাকিবকে বললাম,
— এখন প্রতিমাসে আংকেল আন্টির পিছনে ঔষধ কিনা বাজার করা সহ যাবতীয় কত টাকা খরচ হয়? রাকিব একটু চিন্তা করে বললো,
— প্রায় ২০ হাজার টাকার মত খরচ হয় এইবার আমি শিমুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
— তুমি ১২ লাখ টাকা রাকিবকে দিবে আর সাথে এখন থেকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে দিবে। আংকেল আন্টি শুধু রাকিবের বাবা মা না। তোমারও বাবা মা। শুধু যে বাবার সম্পত্তি ছেলে মেয়ের মাঝে সমানভাবে ভাগ হবে তা তো না। ছেলে মেয়ে উভয়কেই সমানভাবে বাবা মার দ্বায়িত্ব নিতে হবে। শিমু মাথা নিচু করে বললো,
– আমি নিয়ম অনুযায়ী যেটুকু সম্পত্তি পেয়েছি আমি তাতেই সন্তুষ্ট। আমার সমপরিমাণ সম্পত্তি চাই না আমি বাসা থেকে যখন বের হবো তখন শিমুকে বললাম,
— কুরআনে কোন ভুল নেই। কুরআনে স্পষ্ট করে লেখা আছে ছেলে মেয়ের মাঝে সম্পত্তি কিভাবে ভাগ হবে। শুধু মাঝে মাঝে আমরা শয়তানের ধোকায় পরে পুরুষের সাথে নারীর প্রতিপক্ষতা তৈরি করে ফেলি| আমার কলিগ মনির সাহেব যখন অফিস থেকে বিদায় নিচ্ছে তখন আমি মনির সাহেবকে বললাম,
— আপনি হুট করে চাকরিটা ছেড়ে দিচ্ছেন কেন? মনির সাহেব মাথাটা নিচু করে বললো,
– কিছু করার নেই ভাই। আপনি তো জানেন আমার মার জরায়ুতে ক্যান্সার হয়েছে। তাছাড়া আমার ১ বছরের একটা বাচ্চা আছে। আমি আর আপনার ভাবী দুইজনেই চাকরি করি। আর আজকাল তো কাজের মেয়ে পাওয়া যে কতটা কষ্টের তা তো আপনি জেনেন। তাই আপনার ভাবীকে বলেছিলাম চাকরিটা ছেড়ে দিতে কিন্তু আপনার ভাবী চাকরি ছাড়বে না। তাই বাধ্য হয়ে আমিই চাকরিটা ছেড়ে দিলাম। আমি মনির সাহেবকে বললাম,
–আমি একটু ভাবীর সাথে কথা বলে দেখবো? মনির সাহেব সতেজহীন হাসি হেসে বললো,
– কোন লাভ হবে না ভাই। আমি অনেক বুঝিয়েছি। আচ্ছা তবুও যদি আপনি চান তাহলে কথা বলে দেখতে পারেন ভাবী আমাকে দেখেই বলতে লাগলেন,
~পিয়াস ভাই, একটা রিকোয়েস্ট করছি আমায় কিছু বুঝাতে আসবেন না। আমি এত কষ্ট করে পড়াশোনা করেছি সংসারের কাজ করার জন্য না। সব জায়গায় শুধু মেয়েরা কেন সেক্রিফাইজ করবে? আমি ভাবীকে শান্ত করে বললাম,
— ভাবী আমি আপনাকে কোন কিছু বুঝাতে আসি নি। শুধু কয়েকটা কথা বলবো। একটা বাচ্চার সবচেয়ে কাছের মানুষ হলো তার মা। একজন বাবা হাজার চেষ্টা করলেও মার মত সন্তানকে বুঝবে না। একটা বাচ্চার বাবার থেকেও বেশি প্রয়োজন তার মাকে। বাবা না থাকলে মা তার সন্তানকে ভালোভাবে মানুষ করতে পারে কিন্তু মা না থাকলে কোন বাবা তার সন্তানকে সঠিকভাবে মানুষ করতে পারে না। তাছাড়া আপনার শ্বাশুড়ির জরায়ুতে ক্যান্সার। উনি যতটা সহজভাবে আপনাকে উনার সমস্যার কথা বলতে পারবে উনি উনার ছেলেটা সেটা বলতে পারবে না। একজন মেয়ে একটা সংসার যেভাবে ঘুচিয়ে রাখতে পারে একজন পুরুষ হাজার চেষ্টা করলেও সেটা পারবে না।
বিয়ের পর একটা মেয়ের কাছে সবচেয়ে দামী হলো তার সংসার। আর সেই সংসারের জন্য একটা মেয়ে যে কোন ধরনের সেক্রিফাইজ করতে পারে আমার কথা শুনে ভাবী চুপ করে রইলো। আমি সোফা থেকে উঠতে উঠতে ভাবীকে বললাম,
–কর্মজীবী নারীদের আমি অবশ্যই স্যালুট জানাই। কিন্তু একজন নারীর ক্ষেত্রে সংসারের থেকে তার কর্মস্থল কখনোই বড় হতে পারে না অফিসে ঢুকার সময় খেয়াল করলাম গেইটের সামনে দারোয়ান মতি মিয়া নেই। আমি কর্মচারীকে জিজ্ঞেস করলাম মতি কোথায়? সে উত্তর দিলো মতি হাসপাতালে ভর্তি। কাল কে বা কারা যেন মতিকে খুব মেরেছে আমি কিছু ফলমূল নিয়ে হাসপাতালে গেলাম মতিকে দেখতে। মতি আমাকে দেখেই হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
-সবাই শুধু গরীবের উপর অত্যাচার করতে পারে? আমি অবাক হয়ে বললাম,
— কেন, কি হয়েছে? মতি তখন বললো,
– আপনিই তো বলেছিলেন কনডম দিয়ে মেয়েরা কি করে সেটা ঐ আপার থেকে জানতে। তো গতকাল সন্ধ্যায় বাজারে বক্তৃতা দেওয়া আপাকে দেখে মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলাম, আপা আপনারা মেয়েরা কনডম দিয়ে কি করেন? এটা শুনার পর ঐ আপা আর আরো কিছু লোক মিলে আমাকে ইচ্ছামত মারলো। আমি বহু কষ্টে নিজের হাসিটা আটকে রেখে মতিকে বললাম,
— চিন্তা করিস না মতি। সব ঠিক হয়ে যাবে…
গল্পের বিষয়:
গল্প