-বাবা,তোমার একজন মেয়ে কলিগ এসেছিলো বাসায়।
-কখন?
-আজ সন্ধ্যায়।
-পরিচয় দিয়েছে?
-দিয়েছে।বললাম না তোমার কলিগ! আফসান শাহিদ ক্লান্ত শরীরে সোফায় শরীরকে এলিয়ে দিলেন।মেয়েকে কাছে ডেকে গাল টিপে দিলেন।
-আমি ক্লান্ত দেখছিস।এখনো মজা করলি তুই?
-বাবা,জেনি অস্টিন তার মেয়েকে বলতো আমি যখন রেগে থাকবো তখন তুই আমাকে বিরক্ত করবি।
-তাই নাকি?কেন বলতো।
-কেন বলবে!যাতে উনি ওনার ধৈর্য পরীক্ষা করতে পারেন। মেয়ের উপরে রেগে যান কি না সেটা দেখতে চাইতেন।
-আচ্ছা।উনি একথা আসলে কেন বলতো আমি জানি,সেটা তোকে বলছি।তার আগে তুই এক গ্লাস ঠান্ডা পানি নিয়ে আয়। রায়া’র বাবা পানি খেয়ে হাতের তালুর উল্টো পিঠ দিয়ে মুখ মুছলেন।
-কাপড় চেঞ্জ করবে না,বাবা?
-হু করবো।পরে।তোর আম্মু কোথায়?দেখছি না যে!
-আম্মু মার্কেটে গিয়েছে।রাতে মামার বাসায় যেতে হবে।
-আজ রাতে?
-হ্যাঁ।
-কেন রে?
-মামার ছেলের আজকে জন্মদিন।গিফট কিনতে গিয়েছে।
-তোর আম্মু কেন গেলো।আমাকে ফোন করলে আমিই নিয়ে আসতাম!
-আমি বলেছিলাম।আম্মুই তোমাকে বিরক্ত করতে চাইল না।
-তোর আম্মু এখনো আমাকে আগের মতোই যত্ন করে। তাই না?
-আমি হওয়ার আগে আম্মু তোমাকে কেমন যত্ন করতো সেটা তো আমি দেখি নাই।কি করে বলবো তাহলে!
-বুদ্ধি হওয়ার পর যা দেখেছিস সেই বিবেচনায় বল।
-বাবা,তুমি রাতে মামাদের বাসায় যাবে তো?
-না রে!আমি খুব ক্লান্ত আজ।
-তাহলে আমিও যাবো না।আম্মু একা যাবে।
-তোর আম্মু একা যাবে না।
-তাহলে চলো না!একসঙ্গে যাই।
-আচ্ছা তোর আম্মু বাসায় আসুক আগে। রায়া কফি বানিয়ে নিয়ে এসে বাবাকে দিলো।ডাইনিং রুমে হালকা আলো জ্বলছে।বাবার মাথা ধরেছে এজন্য সে একটা বাতি জ্বালিয়ে রেখে বাকি সবগুলো নিভিয়ে দিয়েছে।
-কফিতে এত চিনি দিয়েছিস কেন?
-ইচ্ছে করে দিয়েছি।অল্প চিনি দিয়ে কফি খেতে আমার ভালো লাগে না।
-আমারটাতে কম দিলে হতো না?
-না,হতো না।আমিও যেভাবে খাবো তুমিও তেমনি খাবে।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
-বাবা,আমার এখন একটা দুষ্টুমি করতে ইচ্ছে করছে।
-হুম।দুষ্টুমি কর।আমার আপত্তি নেই।
আমি এখন ক্লান্ত,জেনি অস্টিনের মতো নিজের ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে।কিন্তু এমন কিছু করিস না যে তোর আম্মু এসে রাগ করে। রায়া বইয়ের আলমারি থেকে একটা মাঝারি আকৃতির বই বের করে আনলো।বইয়ের প্রচ্ছদে গোধূলি বেলার ছবি আঁকা,আর একপাশে বিরাট একটা গাছের ছবি।
-বাবা,এই বইটা ছিঁড়ে ফেলবো এখন।
-আচ্ছা ছিঁড়ে ফেল।
-বইটা পড়েছো তুমি?
-নাহ্।
-তাহলে মানা করবে না আমাকে?
-এখন মানা করতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
সত্যি বলতে তুই এখন একটা বই ছিঁড়বি সেই দৃশ্যও দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে। রায়া একটা একটা করে খুব যত্ন করে বইয়ের সবগুলো পাতা ছিঁড়ে ফেললো।রায়ার বাবা কফির মগ ঠোঁটের নিচে ধরে রেখেছেন কিন্তু কফি খাচ্ছেন না।রায়ার বই ছেঁড়ার দৃশ্য দেখছেন।
-বাবা,বইটা ভালো না।আজকে বিকালে তোমার কলিগ আসার ঘন্টা খানেক আগে এটা পড়ে শেষ করেছি।
-বইটা ভালো হলে ছিঁড়ে ফেলতে কষ্ট হতো তোর?
-হুম কষ্ট হতো।লেখকের কুৎসিত মানসিকতার পরিচয় দেয় এই বইটা।
-বইটার প্রচ্ছদ দেখে ভালো লেগেছিল আমার।”নিয়তির গর্ভে” নামটাও খারাপ লাগেনি এজন্যই কিনেছিলাম।এই বইয়ের লেখক অনেক প্রবীণ।প্রবীণ একজন লেখক এই নামে মন্দ বই লিখবে তা আমি ভাবিনি।
-বাবা তুমি কি সামান্য বিরক্ত হচ্ছো?
-হুম সামান্য হচ্ছি।
কিন্ত জেনি অস্টিনের মতো আমাকে ধৈর্য রাখতে হবে।কিন্তু এই বিরক্তির মাঝে দারুণ এক আনন্দও হচ্ছে। মাঝেমাঝে বিরক্ত করবে এরকম কিছু কাছের মানুষ না থাকলে জীবন পানসে হয়ে যায়। আজ থেকে এক বছর আগে এক সন্ধ্যায় রায়া তার বাবার সঙ্গে এভাবে গল্প করছিলো।রায়া’র বাবার কোনো মেয়ে কলিগ সেদিন সন্ধ্যায় তাদের বাসায় আসেনি।কারণ আফসান শাহিদের অফিসে তার উর্ধ্বতন কোনো মেয়ে মাত্র একজন,কোম্পানির এমডির মেয়ে।এমডির মেয়ে নিজে থেকে রায়াদের বাসায় আসতে পারে না।আর কয়েকজন অধস্তন মেয়ে কর্মকর্তা আছে,তারা শাহিদ সাহেবকে না জানিয়ে তার বাসায় আসার সাহস তাদের নেই।রায়া মজা করেছিলো। আরেকটা মিথ্যাও বলেছিলো সে।বলেছিলো জেনি অস্টিন নাকি যখন ক্লান্ত থাকতো তখন তার মেয়েকে বিরক্ত করার অনুমতি দিতো সে।সেটাও সম্ভব না।
কারণ জেনি অস্টিন কোনোদিন বিয়েই করেনি,মেয়ে আসবে কিভাবে।সে জীবনে অনেকগুলো রোমান্টিক উপন্যাস লিখেছে।মাঝে মাঝে তার অনেক পাঠক পাঠিকা সন্দেহ করে যে,জেনি অস্টিন ব্যক্তিজীবনে প্রেমের সম্পর্কে হয়তো বিশ্বাসই করতো না,নিজেকে অন্য ছেলের কাছে নত করা সে পছন্দ করতো না অথচ গোটাকয়েক প্রেমের উপন্যাস সে লিখেছে।সেই বইগুলো পড়লে মনেই হবে না যে,এইসব বইয়ের লেখিকা সারাজীবন অবিবাহিতা ছিলেন।তার অবিবাহিতা থাকার পেছনে ব্যক্তি স্বাধীনতা বা নারী স্বাধীনতা যতটুকু কাজ করেছিলো তারচেয়ে বেশি কাজ করেছিলো পুরুষ বিদ্বেষ। শাহিদ সাহেব অফিসে বসে এক বছর আগের এক সন্ধ্যায় নিজের মেয়ের সঙ্গে করা এইসব কথোপকথন চিন্তা করছিলেন,চিন্তা করতে করতে জেনি অস্টিনের লাইফ ফিলোসোফিতে ঢুকে পড়লেন।মানুষের মস্তিষ্ক কি অদ্ভুত!সে যা চিন্তা করতে চায় সবসময় তা পারে না।হুট করেই অন্য চিন্তায় ঢুকে পড়ে। অফিসের ক্লার্ক অফিস থেকে বের হওয়ার সময় শাহিদ সাহেবের রুমে আলো জ্বলতে দেখে উঁকি মারলো।
-স্যার,অফিসের সময় তো শেষ হয়ে গিয়েছে।
-তুমি যাও।আমি একটু পর বের হবো।
এরপরপও সেখানেই অনেকক্ষণ বসে রইলেন।দশ মিনিটে একটা ইমেইল লিখে এমডিকে সেন্ড করলেন।এক সপ্তাহ ছুটি প্রয়োজন,রায়া আর মায়াকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে হবে। অপ্রয়োজনে ছুটি শাহিদ সাহেব তেমন নেয় না।নিশ্চয় আজ রাতেই ইমেইলের রিপ্লাই আসবে।এমডি বোধহয় ইমেইল খুলেই ল্যাপটপ নিয়ে বসে ছিলেন।তিন মিনিট পর কল আসলো। শাহিদ সাহেব ব্যাগ নিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন,কল দেখে তিনি আবার নিজের চেয়ারে বসে পড়লেন।
-হ্যালো,আসসালামু আলাইকুম স্যার।
-ওয়ালাইকুমুসসালাম।শাহিদ তুমি কোথায়?
-স্যার,আমি অফিসে।
-এখন অফিসে?
-স্যার অফিস শেষ হয়ে গেছে।আমি ইচ্ছে করে বসে আছি। ভালো লাগছে এভাবে বসে থাকতে।
-তোমার ইমেইল দেখেছি।তুমি আগামীকাল থেকেই ছুটি নিতে পারো।
-থ্যাঙ্কিউ স্যার।
-শাহিদ তুমি কি অসুস্থ?
-স্যার আমি সুস্থ।হটাৎ আজকে অফিস শেষে মনে হলো রায়া আর ওর আম্মুকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাবো।
-রায়া তোমার মেয়ের নাম?
-জ্বী স্যার।
-সুন্দর তো নামটা।তাহলে এ সপ্তাহ টা ঘুরে এসো।আগামী সপ্তাহে নীলার সঙ্গে তোমাকে ব্যাংকক যেতে হবে।
আমাদের কোম্পানির দুইটা বায়ার্স পাটি সিঙ্গাপুর আর হংকং থেকে ব্যাংককে আসবে।নীলা এর আগে এধরনের মিটিংয়ে দেশের বাইরে যায়নি কখনো।তাই তোমাকে যেতে হবে।
-স্যার আমি?
-তুমি কোম্পানির হেড অব মার্কেটিং।বায়ার্স পার্টির সঙ্গে ডিল করতে তোমার চেয়ে আর কে ভালো পারবে?
-অনেক ধন্যবাদ স্যার।
-শাহিদ তুমি রিফ্রেশমেন্টের জন্য কোথায় যাবে ঠিক করলে?
-এখনো ঠিক করিনি স্যার।মেয়ে যেখানে যেতে চায় সেখানেই।
-তোমার মেয়ে রায়ার পাসপোর্ট করা আছে?
-জ্বী স্যার।
-তাহলে ফ্যামিলিসহ তাজমহল টা দেখে এসো।
আমি ম্যানেজারকে ফোন করে বলে দিচ্ছি।দিল্লির ফ্লাইটে তিনটা টিকিট কেটে তোমাকে পাঠিয়ে দেবে।তোমার মেয়ে তাজমহল দেখে খুশি হবে নিশ্চয়। শাহিদ সাহেব খুব বেশি খুশি হতে পারলেন না।কারো থেকে কখনো কোনো গিফট তিনি আশা করেন না।বিশেষত তার কাছে মনে হয় দুধে জ্বাল দিলে যেমন দুধের উপরে একটা স্বর পড়ে,কারো থেকে দামি কোনো উপহার পেলে শাহিদ সাহেবের কাছে মনে হয় সেই ব্যক্তির সঙ্গে তার সম্পর্কেও একটা কৃত্রিম আন্তরিকতার পর্দা পড়ে যায়। রাতে বিছানায় গিয়ে তিনি শুয়ে পড়লেন।দেরি করলেন না।গায়ে সামান্য তাপ অনুভূত হচ্ছে।
-তোমার কি শরীর খারাপ করছে?
-না আমি ঠিক আছি।মায়া,রায়া কোথায়?অফিস থেকে এসে ওকে দেখলাম না তো!
-ও আটটার দিকেই খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়েছে।
-আটটার দিকে?
-হ্যাঁ।আমি তখন ঘুমাতে না করেছিলাম কিন্তু ও ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে শুয়ে পড়লো।
-ওইটুকু মেয়ে ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েছে কেন?ওর শরীরের জন্য খুবই হার্মফুল।
-তুমি একটু উঠে বসবে?একটু কথা বলতে হবে। শাহিদ সাহেব ধপ করে উঠে বসলেন।মুখে সামান্য অস্থিরতা।মায়া টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে দিলো।
-কি হয়েছে বলো তো!
-গত সপ্তাহে আমি পায়েস রান্না করে ওর রুমে নিয়ে গেছি।
দেখি লাইট বন্ধ করে থম ধরে বসে আছে।লাইট জ্বালিয়ে আমি পায়েসের বাটি টেবিলের উপর রাখতে গিয়ে দেখলাম নিচে কাঁচের গেলাস পড়ে ভেঙে আছে।রায়ার কাছে গিয়ে বসে বললাম কি হয়েছে তোর।ও কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল।এরপর আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। অনেকক্ষণ ধরে কাঁদল।আমি ওকে কাঁদতে দিলাম।মিনিট দশেক আমার বুকের সঙ্গে জাপটে থেকে মাথা তুলে লাল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো আম্মু আমাকে বিয়ে দিয়ে দাও।
-বিয়ে!সতের বছর বয়স ওর।
-হ্যাঁ।
-রায়াকে যদিও আমার সন্দেহ হয় না তবুও জিজ্ঞাসা করছি।মায়া,ও কি কাউকে পছন্দ করে?মানে কোনো ছেলে।
-না।সেসব ওর মধ্যে নেই।
-তাহলে?
-ও আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু বলতে পারছে না।
আমার বান্ধবী তমা।ওকে একদিন বাসায় ডাকলাম আমি।তমার সঙ্গে রায়ার খুব ভাব।তমাকে সবকিছু বলে বললাম ওকে লেকে নিয়ে যা।গিয়ে সারা বিকাল ঘুরাঘুরি কর।এটা ওটা জিজ্ঞেস কর।তোকে কিছু বলে কি না একটু চেষ্টা কর তো।
-ওকে কিছু বলেছে?
-হুম।
-কি বললো?
-তমা বললো রায়ার প্রতিদিন রাতে রাত যখন অর্ধেক পাড় হয় তখন শরীরের উষ্ণতা বাড়তে থাকে।শরীর নাকি খুব অস্থির হয়ে যায়।আর তখন ঘুমের ট্যাবলেট না খেলে শান্ত হয় না।
-উষ্ণতা বলতে?
-তমাকে তা জিজ্ঞেস করলাম।তমা বললো রায়া এখন কিশোরী। এটা যৌবনের উষ্ণতা।তবে রায়ার ক্ষেত্রে উষ্ণতার বহিঃপ্রকাশ টা খুব ব্যতিক্রমভাবে হয়েছে।
-তোমার বান্ধবী তমা গাইনি ডাক্তার না?
-হ্যাঁ।
-ও কি সাজেশন করলো?
-তমা বললো এটা শুধু গাইনি সমস্যা না।মানসিক সমস্যাও জড়িত।আগে একজন সাইকিয়াট্রিস্টের সঙ্গে কনসাল্ট না করে কোনো গাউনি ট্রিটমেন্ট দেওয়া ঠিক হবে না।
-তাহলে আগামীকালই এ্যাপোয়েন্টমেন্ট নিই কোনো সাইকিয়াট্রিস্টের?
-তমা আজকে বিকালে নিয়ে গেছিলো একজনের কাছে।
-এতকিছু হচ্ছে আমাকে কিছুই তো বলো নাই তুমি!এটা কেমন কথা!
-আজকে রাতেই বলতাম।বিকালে তমা আমাদের বাসায় রায়াকে নিতে আসলো।
-কি বললো দেখে।
-সাইকিয়াট্রিস্ট বলছেন ওর একটা রোগ হয়েছে।লেমিনিন সেক্সুয়া।এখনো সিরিয়াস না,মাইনর।এটা লাখে দুই তিনটা মেয়ের হয়।কারো ক্ষেত্রে অল্প হয় কারো কারো বেলায় প্রকট হয়।
-কি সাজেশন করলেন উনি?
-দুইটা স্টেপ নেওয়া যাবে।একটা হচ্ছে ডাক্তারি ট্রিটমেন্ট।
মেডি সিন নিতে হবে।তবে মেডিসিনে কিছুদিনের মধ্যে সেরে উঠলেও দীর্ঘমেয়াদে সাইড ইফেক্ট থাকতে পারে।তাতে শরীর ভেঙে পড়বে।আর অন্যটা হচ্ছে দ্রুত বিয়ে দেওয়া। বিয়ে দিলে শারীরিক উষ্ণতাকে স্যাটিসফাই করবে।ধীরে ধীরে কন্ডিশন নরমাল হবে।
-তাহলে কি করা যায় এখন?
-সাইকিয়াট্রিস্ট বললেন রিস্ক কম বেশি দুটোতেই আছে।
দুটোই যৌনস্বাস্থ্যে প্রভাব রাখতে পারে।আমার মাথায় কিছুই কাজ করছে না এখন। শাহিদ সাহেব ঘর থেকে বের হয়ে আসলেন।সোফায় বসে মুখে হাত দিলেন।কতদিন চোখ দিয়ে পানি বের হয়নি।শেষ তিনি কেঁদেছেন রায়ার নয় বছর বসয়ে যখন জ্বর হয়েছিলো।একশ চার তাপাত্রার জ্বরে তিনদিনেই রায়া শুকিয়ে কাট হয়ে গিয়েছিলো। সেই জ্বরের পরে শরীর ভালে হতে রায়ার অনেকদিন সময় লেগেছে।এখনো স্বাস্থ্য খুব বেশি না,কাবু।শরীরে মাংস খুব বেশি নেই।কিন্ত এমনিতে সুস্থ,চোখে মুখের লাবন্যতা শরীরের কাবু হওয়াকে ঢেকে দেয়।
হটাৎ করে রায়াকে দেখলে কেউ তার শরীরে মাংস কম সেটা লক্ষ্য করবে না। মুগ্ধতা ছড়ানো চাহনির দিকেই সবার নজর আটকাবে। মায়াও এসে শাহিদ সাহেবের পাশে এসে বসলো।দুজনের কেউ কোনো কথা বলছে না।কিন্তু দু’জনেরই মন অস্থির,মনের মধ্যে তোলপাড় চলছে। শাহিদ সাহেবের স্পষ্ট মনে আছে চার বছর আগে যখন তার মা মারা গেলো তখন তিনি কষ্ট পেয়েছিলেন,কিন্তু আজকের মতো ভেতরটা একরম দুমড়ে মুচড়ে যায় নি সেদিন।তার বৃদ্ধা মা তার কাছে ছিলো একজন কাছের মানুষ,বলতে হলে দুনিয়ায় সবচেয়ে কাছের মানুষ।কিন্তু রায়াকে তিনি কাছের মানুষ মনে করেন না।তার নিজের অস্তিত্বের অংশ বলে মনে হয়।এবারে মায়ার সামনে তিনি শব্দ করেই কান্না করে দিলেন।মায়ার সামনে তিনি কাঁদতে চান না কিন্তু চোখের পানি তার অনুমতির অপেক্ষা না করেই ঠেলে বেড়িয়ে আসছে।
-মায়া,রায়া কি রুমের দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়েছে?
-না,খোলা আছে। শাহিদ সাহেব উঠে দাঁড়ালেন।রায়ার দিকে পা বাড়ালেন।
-বেশি শব্দ ক’রো না যেন!
শাহিদ সাহেব মেয়ের ঘরে ঢুকে বাতি জ্বালালেন।রায়ার বোধহয় শীত লাগছে,জড়োসড়ো হয়ে ঘুমিয়েছে।চাদর টেনে দিলেন মেয়ের শরীরের অর্ধেক অবধি।চুলগুলোর কারণে মুখ দেখা যাচ্ছে না।মেয়ের মুখের চুলগুলো টেনে কানে এপাশে দিয়ে দিলেন।সঙ্গে সঙ্গে ফর্সা মুখটা দেখে তিনি আনন্দ অনুভূব করলেন।রায়ার খুব বড় কিছু হয়নি।হয়তো ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু নিজের ভেতরটা এত অসহায় লাগছে কেন।মাথার কাছে বসে রায়ার মাথায় হাত বুলালেন।খানিকক্ষণ মেয়ের চুলের মধ্যে হাত রেখে নাড়াচাড়া করলেন।রায়া চোখ তুলে তাকালো।
-বাবা,তুমি?
-তাজমহল দেখতে যাবি?
গল্পের বিষয়:
গল্প