রক্তেমাখা দেহটা বারবার লাফিয়ে উঠছে। হাত বাড়িয়ে ডাকছে- ওকে ছেড়ে দিন, ওকে ছেড়ে দিন। কার আকুতি কে শোনে? পাষাণ হৃদয়ে তালাবন্ধ বহু আগে। তারপরও বারবার হাক ডেকে বলেই চলছে – ওকে ছেড়ে দিন। ওকে ওমন করে মারবেন না। ওর কোন দোষ নেই। মারতে হয় আমাকে মারুন। যত ইচ্ছে মারুন। কিন্তু দয়া করে ওকে…… (হাউমাউ করে কান্নার শব্দ)।
হাত দুটো লাফাতে লাফাতে ঝোপঝাড়ের কাছে পরে রয়েছে। আর রক্ত গুলো শিরশির করে দৌড়াচ্ছে। বৃষ্টির মতো আশপাশটা ভিজিয়ে দিচ্ছে। শুকনো ঘাসগুলো রক্তজলে স্নান করে নিয়েছে ততক্ষণে। উঁচুনিচু জায়গাগুলো তখন সমান্তরাল। রক্তের চাপে বুদবুদ ফেনা ফুটছে বারেবারে।
চোখদুটো অপলক দৃষ্টিতে তখনও তাকিয়ে রয়েছে। চুলগুলো রক্তে ভিজে গাল বরাবর চুইয়ে চুইয়ে রক্তগঙ্গা হয়ে গেছে। কানের লতিকাটুকু সুঁই সুতোর মতো বেঁধে আছে। আর ঠোঁট দুটো ফেটে ফুটে হলুদ হয়ে গেছে। নাক দুটোয় রক্ত জমাট বেঁধে বন্ধ হয়ে গেছে।
শার্টের পকেটে রাখা শ’খানেক টাকা এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে আছে। বিশ টাকার নোটটি ধস্তাধস্তিতে কয়েক ভাগ হয়ে গেছে। আর পাঁচ টাকার কয়েনটি চাঁদের আলোয় এখনো জ্বলজ্বল করছে।
জিন্স প্যান্টটি দেহের কাছেই পরে আছে। পরনে শুধু…..। একদম বিভৎস। মুখমণ্ডল ফুলেফেঁপে উঠেছে। মাছি গুলো বনবন করে কান, নাক অবধি থেকে শুরু করে পুরুষাঙ্গের……।
শরীরটা ঝিনঝিন করে উঠতেই ঘুম ভেঙে গেলো সেজনুর। শীতের রাতেও পুরো শরীর ঘেমে অস্হির। দীর্ঘশ্বাস নিতেও বেশ কষ্ট হচ্ছে তার। টেবিল থেকে বাম হাত দিয়ে মোবাইলটা নিতে যাবে তখনই হাতের ছোঁয়ায় পানি রাখা গ্লাসটা ফ্লোরে পরে ভেঙে যায়। আর সেজনু চিৎকার করে ওঠে। এতো চিৎকারের শব্দে অন্য রুম থেকে তখনো কেউ আসেনি। হঠাৎ মনে পড়লো সেজনু ছাড়া বাসায় আর কেউ নেই।
লাইট জ্বালিয়েই মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে মোবাইলটা বন্ধ। চালু করতে গিয়ে দেখে চার্জ নেই। চার্জার লাগিয়ে অন করতেই একগাদা এসএমএস, কমেন্টস, মেসেজ এসে ভরপুর। ইমো, ভাইবার, হটসঅ্যাপে অসংখ্য কল আর মেসেজ।
সেজনু বারবার কল দিচ্ছে তো দিচ্ছেই। কিন্তু কিছুতেই সংযোগ নিচ্ছে না।
ওপাশের মোবাইলটা বারবার বলছে – দুঃখিত, কাঙ্ক্ষিত নাম্বারটিতে এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সিগারেটের ধোঁয়ায় রুম ভরে গেছে। নিশ্বাসটুকু নিতেও হাঁপিয়ে উঠছে ক্ষণেক্ষণে। চিন্তায় চিন্তায় মাথা ঠিক ভাবে কাজ করছে না। আগে তো কোনদিন কখনো এমন হয়নি। কোনদিন কোনরূপ ঝগড়াঝাটি হলেও মোবাইল বন্ধ থাকতো না। কিন্তু আজ….।
এসএমএস, ফেসবুক মেসেঞ্জার, ইমো, ভাইবার, হটসঅ্যাপের সবগুলো মেসেজ পড়তে শুরু করলো সেজনু।
প্লিজ – একবার ফোনটি ধরো।
একবার ধরো, প্লিজ।
ধরোনা প্লিজ।
————-
(এভাবে অসংখ্য বার)। আর কল লাগে! ৭৭ বার মিসডকল উঠে আছে।
ফজরের আযান হয়ে গেলো। হঠাৎই টুংটাং শব্দে মোবাইলে একটি মেসেজ আসলো – আর কোনদিন আমার খবর নিও না। আজ থেকে আমি তোমার সবচেয়ে পর।
সিমটি আজ অবধি বন্ধ। সেদিন হঠাৎই সে কবুল বলে অন্যকারো হয়ে যায়। আর আমার সম্পর্কটা ভেসে ভেসে ঢেউ খেলে অসহ্য যন্ত্রণায়।
ইনজেকশন বাম হাতে পুষ করতেই মনে পরে গেল চিমটি কাঁটার শব্দ। এক নিমেষেই হারিয়ে গেলাম বছর খানেক আগের স্মৃতির পাতায়। নার্স এসে এক্সকিউজ মি ভাইয়া বলে ডাকতেই মুখপানে চেয়ে রইলাম বেশ কিছুক্ষণ। ডাকটা যেন আত্মার ডাক। সুঁই দিয়ে ছিদ্র করে বুকের ভিতর আটকানো। শার্ট বোতামের অঙ্গাঅঙ্গী প্রেম। প্রেম বুঝি এরকমই। বুকের ভেতর যখন-তখন ঘন্টা বাজায়। আর স্মৃতিগুলো এলোমেলোভাবে নিঃশব্দে নিঃশেষ করে ফেলে।