দুই বাবার মধ্যে কথা হচ্ছিল। একজন রিকশা চালক আর একজন কোটিপতি। কথা হচ্ছিল সেটি বললেও হয়তো ভুল হবে। কোটিপতিরা তো সহজে আর রিকশায় ওঠে না। আর গরীবদেরকে তারা সহ্যই করতে পারে না। বিশেষ করে যারা অটোরিকশা কিংবা ভ্যানগাড়ি অথবা রিকশা চালায়।
হঠাৎই করেই মফিজ সাহেবের কোটি টাকার গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। মোবাইলে চার্জও নেই যে কল দিয়ে বাসা থেকে অন্য একটি গাড়ি নিয়ে আসবে। আবার হেঁটে গেলেও মানসম্মান ধুয়েমুছে যাবে। আশেপাশের সবাই বলাবলি করবে মফিজ সাহেব হেঁটে হেঁটে বাসায় যাচ্ছে। নানান চিন্তায় মাথা কাজ করছে না মফিজ সাহেবের। হঠাৎই রিকশার টুংটাং শব্দ।
স্যার, একটু সাইড দ্যান। আমি পাশ হয়ে চলে যাচ্ছি।
মফিজ সাহেব বলে উঠলো – এই রিকশা যাবে?
রিকশাচালক বললো – জ্বি স্যার, যাবো।
মফিজ সাহেব রিকশায় উঠে বসতে চাইলে রিকশাচালক বলে উঠলো – স্যার একটু দেরি করুন। আমি কাভারটি মুছে দেই তারপরে বসুন।
মফিজ সাহেব উঠে বসলো। রিকশা চলছে তো চলছে। কোনরকম কথা নেই। হঠাৎই মফিজ সাহেব রিকশাচালককে জিজ্ঞেস করলো – তুমি কি আমাকে চেনো?
রিকশাচালক বললো – জ্বি স্যার, আমি আপনাকে চিনি।
মফিজ সাহেব – কিভাবে চেনো?
রিকশাচালক বললো – স্যার, আপনার বাসাতো বারিধারা ৮ নং রোডের ১০ নম্বর হাউস।
মফিজ সাহেব – বাহ! বেশ ভালো তো। কিভাবে জানো যে আমি ওই বাসাতেই থাকি?
রিকশাচালক বললো – স্যার, আমি রিকশা চালাই। ভাড়ার কারণে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রোডে যেতে হয়। আর ৮ নং রোডে সকাল ৮ টার মধ্যে গেলে আপনার দেখা পাওয়া যায়। আপনি তখন ধবধবে সাদা এক বিদেশি কুকুর নিয়ে হাটতে বের হন।
মফিজ সাহেব এইবার একটু চুপ হয়ে গেলেন। কেমন যেন একটা থতমত অবস্থা। চেহারাটায় মরীচিকা পড়ার মতো। বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মফিজ সাহেব জিজ্ঞেস করলেন – তোমার ছেলেমেয়ে কয়জন?
রিকশাচালক বললো – স্যার, আল্লায় একটা পোলা দিছে। ১৪ বছরের চেয়ে একটু বেশি বয়স হবে আর কি, স্যার।
মফিজ সাহেব – হুমম। তা ছেলে কি করে?
রিকশাচালক বললো – স্যার, মাদ্রাসায় দিছি। মরার পরে তাও আমার জানাজা তো করতে পারবে।
মফিজ সাহেব একদম চুপ হয়ে গেলেন। বাকরুদ্ধ যাকে বলে। নিমেষেই মুখটা চুপসে গেলো। মিষ্টি মিষ্টি যেটুকু হাসি ছিলো সেটুকুও কারাগারের চার দেয়ালের মতো বন্দী হয়ে রইলো।
রিকশাচালক আবার বললো – স্যার, মাদ্রাসায় না দিয়েই বা কি হবে? কোটিপতি বাবার মাদকাসক্ত সন্তানের চেয়ে দিনমজুর বাবার হাফেজী ছেলে অনেক ভালো।
এতোক্ষণ যেটুকুও শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার শব্দ পাওয়া যাচ্ছিলো সেটুকুও যেন হাওয়ায় মিলে উড়ে চলে গেছে। মফিজ সাহেব একদম নিঃস্তব্ধ। বলার মতো ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। কারণ তার ছেলেটা তো……….।
রিকশা থেকে নেমেই মানিব্যাগ থেকে একটা পাঁচশত টাকার নোট হাতে ধরিয়ে দিয়ে মফিজ সাহেব বললো – ফেরত দিতে হবে না। তুমি রেখে দাও।
রিকশাচালক বললো – বেয়াদবি মাফ করবেন স্যার। আপনি আমাকে ৩০ টাকা দিলেই বেশি খুশি হতাম।